এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কলরবকথা

    হোককলরব লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৯৪৩ বার পঠিত
  • যাদবপুর, হয়েছে টা কী
    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    মিডিয়ায় কোনো খবর নেই, কারণ ভোরবেলায় ঘটেছে ঘটনাটি। যাদবপুরের কিছু ছেলেমেয়েকে লিখতে বলেছিলাম, তারা স্বভাবতই আন্দোলনে ব্যস্ত। ওদিকে লোকজন জানতে চাইছেন, হয়েছে টা কি। মূলত আন্দোলনকারীদের ফেসবুক পাতা থেকে তথ্যগুলি তুলে দিলাম। ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে, থাকলে শুধরে দেবেন। সংশোধন বা নতুন কোনো খবর থাকলে মন্তব্য করবেন। সবকিছু এক জায়গায় থাক। আর অন্য কাউকে জানাতে হলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আমি ব্লগে এইসব লিখিনা, কিন্তু কী করা যাবে, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি।

    আগস্ট ২৮ -- যাদবপুরের উৎসব 'সংস্কৃতি ' চলাকালীন ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী কিছু ছাত্রের হাতে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। 'ইউথ কি আওয়াজ' এ সৃষ্টি দত্ত চৌধুরির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযোগকারিণী বাথরুমের অভাবে ছেলেদের হস্টেলে ঢুকেছিলেন, তাঁর এক 'বহিরাগত' পুরুষবন্ধুর সঙ্গে। বেরোনোর সময় হস্টেলের একদল ছেলে কটুক্তি করে। বচসা হয়, এবং, টেনে নিয়ে যাওয়া হয় হস্টেলের ভিতরে। পুরুষবন্ধুকে মারা হয়। মেয়েটিকে মারধন ও নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।

    আগস্ট ২৯ -- মেয়েটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। ভিসির সঙ্গে মিটিং হলে তিনি জানান, বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হলে ১৫ দিন সময় লাগবে। ততদিন নিরাপত্তাজনিত কারণে যেন মেয়েটি কলেজ থেকে দূরে থাকেন।

    সেপ্টেম্বর ১ -- ছাত্রীটি যাদবপুর থানায় এফ-আই-আর করেন।

    সেপ্টেম্বর ৩ -- ছাত্র-ছাত্রীরা একটি সাধারণসভা করে ডিন অফ স্টুডেন্টের কাছে একটি ডেপুটেশন দেয়। সেখানে একটি "নিরপেক্ষ" তদন্ত কমিটির দাবী করা হয়। তদন্ত কমিটির মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন মানবাধিকার কর্মী থাকবেন, এরকম সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়। সাতদিনের মধ্যে এই অনুযায়ী কাজ করে সকলকে অবহিত করারও দাবী জানানো হয়।

    সেপ্টেম্বর ৫ -- ছাত্রছাত্রীরা যাদবপুর থানা পর্যন্ত একতি মিছিল করে। মেয়েটি ইতিমধ্যেই হামলাকারী বলে অভিযুক্তদের একজনকে চিহ্নিত করেন। পুলিশ জানায় ব্যবস্থা নিতে আরও কিছু সময় লাগবে।

    সেপ্টেম্বর ৮ -- এ-আই-পি-ডাব্লিউ-এ ও সাধারণ ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিদল প্রো-ভিসি কাছে যান। কিন্তু কোনো খবর পান না। একটি মিছিল হয় ক্যাম্পাসে। আইসিসি (ইনটারনাল কমপ্লেন কমিটি) থেকে কলা বিভাগ ছাত্র সংসদের প্রতিইধি পদত্যাগ করেন। আইসিসি সদস্যদের আটকে রাখা হয়।

    সেপ্টেম্বর ৯ -- বাংলা সংবাদপত্র 'এই সময়' এ আইসিসির একজন সদস্যের বয়ান প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। ছাত্রছাত্রীরা একটি সাধারণ সভা ডাকে। যেহেতু ঘটনাটা পুরোটাই সিসিটিভির আওতায় ঘটেছে, তাই সিসিটিভির ফুটেজ দেখিয়ে অভিযোগের প্রমাণ দাবী করা হয়।

    সেপ্টেম্বর ১০ -- অরবিন্দ ভবনের সামনে ধর্ণা শুরু হয়।

    সেপ্টেম্বর ১৬-- রাত ১০ টা -- পুলিশ, র‌্যাফ, এবং শাসকদলের লোকজন জড়ো হয় ক্যাম্পাসে। বড়ো গন্ডগোলের আশঙ্কায় ছাত্রছাত্রীরা ফেসবুকে সকলকে জড়ো হবার আহ্বান জানান। পুলিশকে জানানো হয় ভিসি একটি বিবৃতি দিলেই তাঁরা এলাকা ছাড়বেন। পুলিশ ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যায়।

    সেপ্টেম্বর ১৬-- রাত ১১ টা -- প্রেসিডেন্সির একটি দল যাদবপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ছাত্ররা জানান, সংঘর্ষ শুধু সময়ের অপেক্ষা। পুলিশ শুধু প্রেসের এলাকা ছাড়ার অপেক্ষা করছে।

    -------------------

    সেপ্টেম্বর ১৭-- ভোর ২ টো -- পুলিশ সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে ক্যাম্পাসে আবার প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পরেই আক্রমন শুরু হয়। লাঠি চলে। মারধোর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় কিছু ছাত্রকে। গ্রেপ্তারও হন কিছু ছাত্র। সঠিক সংখ্যা বলা মুশকিল। ছাত্রদের পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, ৩৬ জন হাসপাতালে।, ৪০ জন গ্রেপ্তার।

    সেপ্টেম্বর ১৭-- ভোর ৪ টে -- ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বয়কটের ডাক দিয়েছেন। খুব সম্ভবত ভিসির পদত্যাগও দাবী করেছেন।

    হ্যাঁ, এটা খুবই ছোটো এবং খাপছাড়া বিবরণী হল। মূল সূত্র ছাত্রদের এই পাতাটিঃ https://www.facebook.com/studentsagainstcampusviolence

    এখানে নজর রাখুন।

    প্রকাশঃ 17 September 2014 09:50:30 IST
    মানুষ হওয়ার এই মিছিল
    শাশ্বত ব্যানার্জি
    (২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪)

    সমস্ত জটিলতা, বিতর্ক ও বিশ্লেষণ সরিয়ে রেখে একটা কথা বলাই যায় – যাদবপুরকে কেন্দ্র করে একটা বন্ধুত্বের ঢেউ উঠেছে। রাজ্য-দেশ-সীমান্ত দল-মত সব কিছু ঢেকে গেছে সহমর্মিতায়, রাগে।

    দেশ-দেশান্তর থেকে গলা মেলাচ্ছেন মানুষ। উদ্বিগ্ন হচ্ছেন লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে-যাওয়া ভাইবোনেদের স্বাস্থ্যচিন্তায়। আশঙ্কা করছেন প্রশাসনিক প্রতিহিংসার পরবর্তী প্রকাশ নিয়ে। সকলেরই খুব আন্তরিক আশা – যেন ভুল পথে না চলে যায় এই জাগরণ। যেন ‘ব্যবহৃত’ না হয়ে পড়ে এই সম্মিলিত আবেগ।

    আজ যেন নতুন করে মানুষ হওয়ার পাঠ নিচ্ছি আমরা সবাই!

    শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর বর্বর আক্রমণ কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না। সেই আন্দোলনের কারণ বা পদ্ধতির প্রতি কারোর সমর্থন নাও থাকতে পারে। কিছুদিন আগে যাদবপুর ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনা সম্পর্কে অনেকরকম কথা শোনা যাচ্ছে। তার কিছু সত্য, কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিকৃত। সত্য উদ্‌ঘাটনের স্বার্থেই দ্রুত যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার, এবং সেই দাবী নিয়েই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের প্রতি কারোর সহমর্মিতা রয়েছে কি না, তার চেয়েও এই মুহূর্তে বড়ো হয়ে উঠেছে – কীভাবে তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা হল।

    রাতের অন্ধকারে সেই নৃশংসতার ফুটেজ সকলের সামনে এসে যাওয়ায় – মানুষ রেগে গেছে। এই রাগ কোনো রাজনৈতিক রাগ নয়। কোনো স্বার্থান্বেষী দেখনদারী নয়। এই রাগ মুক্তিকামী মানুষের নিহিত স্লোগান।

    যাদবপুরের এই ছাত্র-আন্দোলনের ওপর রাজনৈতিক রঙ লাগানো হচ্ছে খুব চতুরভাবে। দুটি বক্তব্য শোনা যাচ্ছে প্রায়ই –

    ১। যে মেয়েটির শ্লীলতাহানি হয়েছিল, সে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক বলে, আন্দোলনের ছলে অন্যায়কারীদের আড়াল করা হচ্ছে।

    ২। এখন সমস্ত মনোযোগ আসল ঘটনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপাচার্য ও অন্যান্যদের অপসারণের দাবীতে আন্দোলনের দিকে। এবং যেহেতু পুলিশ আর উপাচার্য (এবং আক্রমণকারী গুন্ডারা; অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা বাদে বাকি সবাই) সরকারপক্ষের, তাই এই আন্দোলন হয়ে উঠেছে সরকার-বিরোধী। শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ কই?

    প্রথম অভিযোগের বিষয়ে ওই ছাত্রীর মত জানা গেছে কি না আমার জানা নেই। কিন্তু তার বাবার বক্তব্য শুনলাম। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন – যত দিন গেছে ততই অসহযোগী ও নিশ্চেষ্ট হয়ে উঠেছেন বর্তমান উপাচার্য। তার ওপর কোনো ভরসা নেই আর।

    কই কোথাও তো তিনি বলেননি, প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে আন্দোলন করছে তার মেয়ের সহপাঠীরা?

    এরপর কী বলবেন, মেয়ের ইজ্জতকে তুচ্ছ করে দল বদলেছেন তার বাবা? কোথা থেকে কোন দল?

    কলকাতার রাস্তায় ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা-করা মহামিছিল দেখে, পরের দিনই নিগৃহীতার বাড়িতে ছুটলেন শিক্ষামন্ত্রী। এতদিন সচেষ্ট হননি কেন?

    ভারতবর্ষের অন্যতম নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুর। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন, বাংলা তথা ভারতবর্ষের সমাজ-গঠনে নিরন্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন তারা। তাদেরই একজনের ক্যাম্পাসের ভেতর শ্লীলতাহানি হলে কেন ভ্রুক্ষেপ করবেন না আপনি, ‘পরিবর্তিত’ বাংলার শিক্ষামন্ত্রী? সর্বদা লোকচক্ষুর নজরে-থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক পড়ুয়ার এই নিরাপত্তাহীনতা থাকলে, রাজ্যের প্রত্যন্ত কলেজগুলির কী অবস্থা? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন আন্তরিকতাসহ উদ্যোগী হলে এই পরিস্থিতি কি তৈরি হত? এমনকী শ্লীলতাহানির অভিযোগটিও সত্য না মিথ্যা (এমন কিছু কথাও ভাসছে বাতাসে) তা জানার জন্য তো তদন্ত প্রয়োজন।

    লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরাই বা কেন মনোযোগ পাবে না আপনার?

    দ্বিতীয় অভিযোগ প্রসঙ্গে বলি। একেকটি আন্দোলনের মূলত দু-ধরণের দাবী থাকতে পারে – একটি তাৎক্ষণিক, অন্যটি সামগ্রিক। এই দুটি দাবী হতেই পারে পরস্পরের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পর্কিত।

    যেভাবে কারোর সঙ্গে আলোচনা না করে পুলিশ (ও বহিরাগত গুন্ডা) ডেকে বর্তমান উপাচার্য এই আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করলেন, তা থেকে উনি কী ধরনের মানষিকতা পোষণ করেন – তা স্পষ্ট।
    আপাদমস্তক মিথ্যাবাদী, ভণ্ড একটা লোক দিনের আলোয় দলদাসত্ব করে। তার পদত্যাগ এই মুহূর্তের সবচাইতে বড়ো দাবী। শুধু যাদবপুরের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী নয় – গোটা ভারতবর্ষ ওনার অপসারণ চাইছে। যেতে ওনাকে হবেই।

    এই যে দাবী তা উঠে এসেছে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি থেকে। মধ্যরাতে পুলিশের লাঠি ও বুটের ডগা থেকে। এই দাবী তাৎক্ষণিক। কাল উনি সরে গেলে এ চাওয়া আর থাকবে না।

    কিন্তু এর সঙ্গে আসল ঘটনাকে আড়াল করার প্রসঙ্গ আসছে কেন?

    যে উপাচার্য যে ছাত্রদের মানুষ বলে ভাবেন না, তার কাছে এক নির্যাতিতা ছাত্রীর যন্ত্রণা মূল্যহীন হবে এ তো স্বাভাবিক। উনি তদন্ত-কমিটির কার্যকলাপ ও ভবিষ্যত দিক নিয়ে একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট দিতে চাননি। নিজের আরামকেদারা ছেড়ে বাইরে এসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি; তার নাকি dignity তে বাঁধে। উনি করাবেন ছাত্রস্বার্থে যথাযথ তদন্ত?

    শ্লীলতাহানির ঘটনা সম্পর্কে ওনার তৎপরতা কতদূর ছিল, তা তো ঘটনার অগ্রগতিতেই স্পষ্ট।

    এই লোকটা সরে গেলে নতুন যিনি আসবেন, তিনি নিশ্চয়ই যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। অর্থাৎ সুষ্ঠ তদন্তকমিটি গঠন ও নিরপেক্ষ তদন্তের যে সামগ্রিক দাবী তার সঙ্গে এই বিন্দুতে জুড়ে আছে বর্তমান উপাচার্যের অপসারণ।

    ভবিষ্যতে যথাযথ তদন্তের কাজে যদি বাঁধা দেয় আজকের আন্দোলনকারীরা, কিংবা তদন্তে বেরিয়ে আসে অন্য অপ্রকাশিত কোনো হীন অভিপ্রায় ছিল তাদের, তখন যথার্থই বলা যাবে তারা ক্ষুদ্রস্বার্থে আড়াল করতে চাইছে প্রকৃত দোষীদের। তখন আওয়াজ উঠবে বর্তমানের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে; তার আগে নয়।

    এছাড়াও তাদের সাম্প্রতিক জেনারেল বডি মিটিং-এ আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বলেছে (লিখিত স্টেটমেন্ট রয়েছে) – শ্লীলতাহানীর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের লক্ষ্য তাদের সমস্ত দাবী অটুট থাকছে।

    এর পর আর কী করার? নবান্ন-এর দেওয়ালে বড়ো বড়ো করে লিখে দিয়ে আসতে হবে নাকি?

    ....................................

    কোনো বিরোধী আন্দোলন যদি তার স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ারে কেবলই টেনে নিতে থাকে আরও আরও বেশি মানুষ, তখন ঈর্ষায়, ভয়ে, নিজেদের প্রকৃত রূপ প্রকাশিত হয়ে-পড়ার আশঙ্কায় নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার শুরু করে শাসককূল। তাদের অপপ্রচার যত বেশি চোখে পড়বে, বুঝে নিতে হবে নিজের জোর বাড়াচ্ছে দলতন্ত্রের আওতার বাইরে থাকা গণআন্দোলন।

    এই অপপ্রচারের কিছু নমুনা ও নিজের মতো করে তার উত্তর দিই –

    অপপ্রচার ১। আন্দোলনকারীরা নাকি শিক্ষকের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখায়নি।

    আহা রে, বেচারা শিক্ষক! তা শিক্ষক কে? যিনি অন্যায় জেদ ধরে আরামে বসে থাকেন গেট-টানা ঘরের ভেতর আর বাইরে রাত-জেগে গলা ফাটিয়ে মরে তারই সন্তানসম ছাত্র-ছাত্রীরা? কী শেখার আছে ওনার থেকে যে ওই উপাচার্যকে শিক্ষক হিসেবে মানতে হবে? একটু দেখি –

    ক) নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনার তদন্ত যত রকম ভাবে দেরী করানো যায়, তিনি করেছেন। যা শুনলাম, প্রথমেই তো নাকি বলেছিলেন, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ১৫ দিন সময় লাগবে। ইনি শিক্ষক? – ছিঃ।

    খ) আন্দোলন ভাঙতে উনি পুলিশ ডাকলেন। কার সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত? ওইসময়ের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা কি একমাত্র ওনারই ছিল? নাকি অন্য কারোর দেখাদেখি একটু একানয়ক হওয়ার সাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল?

    গ) অভিযোগ – প্রাণের হুমকি দিয়েছিল ছাত্ররা; ছিনতাই করার চেষ্টা করেছিল উপাচার্যকে।

    ওনার সঙ্গে আটকে ছিলেন যারা, তাদের একজনও একবারও কোথাও প্রাণভয়ের কথা বলেছেন? বরং ঘটনার পরে একদিন সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন কর্মস্থলে। ঢুকতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিলেন ওখানেই। পরে আন্দোলনকারীরা আলোচনার ভিত্তিতে ওদের ভেতরে যেতে দেয়। ওনারাই বলুন, অতক্ষন তো বসেছিলেন অরবিন্দ ভবনের সামনে, একটা কেশাগ্রও স্পর্শ করেছে কেউ?
    ছাত্রছাত্রীরা কী অমানুষ না দলের গুন্ডা যে খুন করবে?

    তাছাড়া ঘটনার দিন রাত্রে, পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে গেট বন্ধ। বাইরে গিটার, ভায়োলিন, স্যাক্সোফোন হাতে গান-বাজনা করছে ছেলেমেয়েরা। কোথায় প্রাণনাশের হুমকি, কোথায় তান্ডবচিহ্ন? (তবে ওনার রকমসকম দেখে মনে হচ্ছে তারুণ্যের গানে ওনার হৃদকম্পজনিত মৃত্যু হলেও হতে পারে; একেই কি প্রাণনাশের হুমকি বলছেন উপাচার্য !!)

    ঘ) বলছেন, নাকি বহিরাগতরা ঢুকেছিল ক্যাম্পাসে। গদিমোড়া চেয়ারে বসে ওনার দোসররা তো আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে বলছে – ভয়ানক সব অস্ত্র নাকি ঢুকে পড়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে!

    শুনলাম উপাচার্য হুমকি দিয়েছিলেন আগেই যে বাইরের লোক এনে আন্দোলন ভেঙে দেবেন। উনি নিজের মনে ভাবুন, ‘বহিরাগত’ কারা?

    ওই বিশ্ববিদ্যালয়, ওই ক্যাম্পাস, প্রত্যেকটা ইঁট-বালি-ধুলোকণা ওখানকার পড়ুয়াদের। ঘটনার দিন অনেকক্ষণ ধরেই বাইরে জড়ো হয়েছিল শাসকের গুন্ডাদল। ক্রমাগত হুমকি দিয়েছে তারা – রাত নামলে দেখে নেবে। পুলিশের তো উচিত ছিল আগে গিয়ে ওইগুলোকে তাড়ানো। তা না করে ওদের সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ছাত্রদের ওপর।

    অসহায় হয়ে ছাত্ররা ডেকেছিল বন্ধুদের। সেই ডাক শুনে যারা মানুষ, তারা যাবে না? বেশ করেছে গেছে। যারা গেছেন তারা দিনের আলোয় দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেছে্ন – বন্ধুর পাশে বন্ধু হয়ে গেছি, প্রেমিকার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেমিক।

    কিন্তু পুলিশের সঙ্গে ঢুকল যারা, তারা এসে বলুন সবার সামনে কেন গিয়েছিলেন ওইখানে ওই সময়ে? পুলিশ স্বীকার করুক তবে, আমরাও বিপন্নতাবোধে ডেকেছিলাম গেঞ্জি-পরা ‘বহিরাগত’ সঙ্গীদের।
    এই অন্যায় তক্‌মার বিরুদ্ধে কেউ কিন্তু বলছে না সিঙ্গুরের ঘটনার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভায় ঢুকে চিৎকার করাটা অন্যায় হয়েছিল। বলছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুকে বাঁচাতে যাওয়া প্রেসিডেন্সির বন্ধু যদি ‘বহিরাগত’ হয়, তাহলে সিঙ্গুরে, নন্দীগ্রামে কী ছিলেন ততকালীন বিরোধীনেত্রী? কীই বা ছিলেন ‘স্বজন’-এরা, কীই বা ছিলেন মেধা পাটেকর?

    মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসবে এইটা স্বাভাবিক। ওইসব ‘বহিরাগত’-টত বলে কোনো লাভ নেই। আসল কথা হল তাদের ভূমিকা কী ছিল ওই মুহূর্তে।

    একটাও ছবি দেখান কেউ যেখানে সেইদিন যাদবপুরে যাওয়া ভিন-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-ছাত্র-গবেষকেরা কোনোরকম অস্থিরতা তৈরি করেছে?

    পুলিশ যদি বুটের বাড়ি মারে, আমরা কী বুক পেতে দেবো? আত্মরক্ষার অধিকার সবচাইতে মৌলিক অধিকার। হাত-পা ছুঁড়ে, আক্রান্ত বন্ধুর শরীর আগলে তাই করেছে ছাত্রছাত্রীরা। নিজেদের গা বাঁচাতে পালিয়ে যায়নি। দূর থেকে বসে টিভিতে যুদ্ধ দেখে মজা নেয়নি।

    অস্ত্র যদি থাকত তবে ওই দানবগুলোর অন্তত একফোঁটা রক্তও ঝরত? কই, দেখান?

    নাকি ওখানে সেদিন সন্ধ্যায় ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রের ডেমো দেখিয়ে তুলে রেখেছিল ছেলেমেয়েরা?

    ঙ) ছাত্ররা নাকি আলো ভেঙে দিয়েছে।

    কত বড়ো নির্বোধ হলে এই কথা বলা যায়! আলো ভেঙে কী সুবিধাটা পেল ওরা? অন্ধকারে ভয়ংকর সব অস্ত্রহাতে কটা পুলিশকে আহত করল?

    বরং সবাই জানে এখন সব ফোনে ক্যামেরা থাকে। অত্যাচারের ছবি ছড়িয়ে গেলে সমস্ত সহানুভূতি চলে যাবে আন্দোলনকারীরের দিকে। এবং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে ঠিক এমনটাই হয়েছে।

    একটি ছাত্র সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে নিজের মোবাইলের ঘটনার সময়কার ভিডিও চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমস্ত আলো প্রায় একই সঙ্গে নিভে যাচ্ছে, এবং এইসব আলোর নিয়ন্ত্রণ বন্ধ গেটের ওইপারে, অর্থাৎ উপাচার্যের কোর্টে!!

    এছাড়া, পরের দিন ওইসব আলো ক্যামেরায় ধরে এনেছেন সাংবাদিকরা। সবকটাই অক্ষত।
    তবে কী গুন্ডাদের হাত ধরে বাড়ি পৌঁছিয়েই অভূতপূর্ব তৎপরতায় লোক লাগিয়ে আলোগুলো বদলে দিলেন উপাচার্য? আহা কী কাজপাগল লোক গো !!

    ছ) মাওবাদী – এ প্রসঙ্গে কথা না বাড়ানোই ভালো। একথা এত্ত বার এত্ত বার বলা হয়েছে এত্তদিন ধরে, যে আজকাল ঘোড়াও হাসছে। শুনলেই হাসছে।

    উপাচার্যের গুণকীর্তন অনেকদূর গড়িয়ে গেল। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ওনার শিক্ষকত্বের ছিটেফোঁটাও কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কোথাও? তারপর তো সম্মান।

    প্রকৃত একজন শিক্ষকের কথা বলি। সৌমিত্র বসু। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই দর্শনের শিক্ষক। সাম্প্রতিক পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। স্পষ্ট বলেছেন – এই নির্মম পদক্ষেপ মানা যায় না কিছুতেই।

    উনিও আটকা পড়েছিলেন ঘেরাও-এ। পুলিশ বার করে নিয়ে আসে তাকে। তখন ভেবেছিলেন, ছাত্রদের কোনোভাবে সরিয়ে দিয়েছে তারা। কিন্তু পরে এই ঘটনা জানতে পেরেই তিনি পদত্যাগ করেন। প্রতিবাদ করেন। সর্বসমক্ষে তিনি জানিয়েছেন – ভুল হয়েছিল তার। বলেছেন, বিবেকের দংশনের কথা।

    শিক্ষক হতে গেলে, অনেক জ্ঞানের চাইতেও এই ‘বিবেক’ থাকাটা বহুগুণ আবশ্যক। প্রণাম শিক্ষক সৌমিত্র বসু।

    তুলনায় বড়ো একটা কিছু আসে যায় না। কোনো অন্যায় দেখিয়ে আরেক অন্যায়কে বিশ্লেষণ বা সমর্থন করা যায় না। তবু নিছক তথ্যে-প্রদর্শনের খাতিরেই যারা ‘শিক্ষক’দের প্রতি সম্মান নিয়ে চিন্তায় ফেসবুক ফাটিয়ে ফেলছেন, তাদের দু-একটা ঘটনা বলি।

    কলেজের অধ্যক্ষের বাড়ি ঘিরে ফেলে, তাকে বাইরে ডেকে, আঙুল তুলে হুমকি দেওয়াটা কী ধরণের সম্মানজ্ঞাপন? প্রশাসন নেই? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেই? কলেজে বসে ভদ্রভাবে কথা বলা যায় না? বেশি দিন নয়, কাল-পরশুর ঘটনা। স্থান জলপাইগুড়ি (আনন্দচন্দ্র কলেজ)।

    কিছু মাস আগে টিভিতে একটা ছবি দেখেছিলাম। এক কলেজের অধ্যক্ষের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন এক ছাত্র। - এই সম্মান শিক্ষকের প্রতি !! কিছুদিনের মধ্যেই আবার এইসব ‘দুষ্টু’ ছাত্রদের প্রতি এসে পৌঁছেছে উপরতলার আশীর্বাণী – ছোটো, সামান্য ঘটনামাত্র। নিছক দুষ্টুমি বই আর কিছু না!

    এছাড়া আরও আছে। শিক্ষিকার মুখে জলের জগ ছুঁড়ে ছিলেন এক ‘তাজা নেতা’। তিনি আবার নতুন শিক্ষামন্ত্রীর প্রথম দিনে ঘরে গিয়ে চেয়ার দখল করে বসেছিলেন আপ্রাণ গম্ভীর-করে-তোলা মুখে (ঘরের বাকি সবাই যখন দাঁড়িয়ে!!)। অবশ্য উনি নিজেই বলেছিলেন যে শিষ্য হয়ে গুরুর উন্নতির আনন্দে আটখানা হয়ে চলে গিয়েছিলেন ওইখানে !!

    কিছুদিন আগেও তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের একটি সম্মেলনে মাননীয়া কৃষ্ণকলি বসু ভয়াবহ টুকলির প্রতিবাদে এক অধ্যক্ষের পদত্যাগ-করাকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলেছেন। যারা টুকলি করেছিল, সেইসব দুষ্টুদের প্রতি তার, তার দলের সর্বাধিনায়িকার কী বক্তব্য?

    এইসব কীর্তির পরেও যারা ‘শিক্ষকের সম্মান’ শব্দটা মুখে আনে, তাদের মানষিক সুস্থতার অবিলম্বে সি বি আই তদন্ত হওয়া উচিত (‘সিট’ হলে চলবে না!)।

    অপপ্রচার ২। আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা নাকি অশালীন পোশাক ও ভঙ্গিমায় ছিল ওইখানে।
    এই অশালীনতা মাপকাঠি কী – এইটা একটা বড়ো বিষয়। আমাদের দেশে তরুণ প্রজন্মের পোশাক-আশাকের ধরন এখনও অনেকটাই অর্থনৈতিক শ্রেণী ও সবচাইতে কাছের বড়ো শহর থেকে তার আবাসস্থলের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রে মানসিকতা ও রুচির বিশ্বায়ন এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, অন্তত ভারতবর্ষে।

    তাছাড়া যারা এইসব বলছেন, তাদের অনেকেই নিশ্চয়ই মানেন একটি মেয়ে ছোটো জামাকাপড় পরলেই তাকে ধর্ষণের অধিকার জন্মায় না।

    তাহলে যেখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রসঙ্গ উঠছে, সেখানে ছোটো জামাকাপড়, বন্ধুর গলায় বান্ধবীর হাত – এইসব তুচ্ছ কথা কী আনা উচিত?

    ভালোবেসে পিছন থেকে বন্ধুর গলাটা জড়িয়ে ধরা পাপ আর হাত-পা ধরে মাটির ওপর ছেঁচড়ে ছাত্র টেনে নিয়ে যাওয়া ‘সংবেদনশীলতা’?

    আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যারা এইসব সংস্কৃতি আর শালীনতার কথা পাড়ছেন, তাদের মনে করিয়ে দিই একের পর এক কলেছে প্রতিষ্ঠা দিবস ও আরও নানাবিধ উপলক্ষে তাদের কর্মীদের উন্মত্ত নাচ – কোথাও নিজেরাই, কোথাও বা শিল্পী ভাড়া করে। সমস্ত কিছুর ভিডিও আছে। চাইলেই দেখতে পারেন রাতের মেহফিলে কেমন বাদশাহী মেজাজে টাকা ওড়াচ্ছেন একজন কিংবা রবীন্দ্রভাররী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বছরের সেরা ছাত্র’ কেমন জামা খুলে সুন্দর নাচ দেখাচ্ছে (আবার দেওয়াল থেকে কে যেন চেয়ে চেয়ে দেখছে সেই নাচ!)

    এছাড়া ফেসবুক খুললেই দেখা যাচ্ছে # হোককলরবের পালটা দিতে # হোক_ক্যালানি! বাহ্‌ সংস্কৃতি!

    অপপ্রচার ৩। কথা উঠছে, যাদবপুরের ক্যাম্পাসের মাদক-দ্রব্যের ব্যবহার রুখতে খুবই তৎপর বর্তমান উপাচার্য তথা কর্তৃপক্ষ। তাই তার বিরুদ্ধে এই ছদ্ম-আন্দোলন। এই আন্দোলন নাকি আসলে ‘নৈরাজ্য, অপসংস্কৃতি ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার’এর পক্ষে যাদবপুরের একাংশ ছাত্রছাত্রীর তৎপরতা।

    নানান সময়ে নানান জায়গায় ছাত্ররা অনেক অন্যায় দাবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন, যেমন ফেল-করা ছাত্রদের পাশ-করানোর দাবীতে, টুকলির অধিকারকে স্বীকৃতি-প্রদানের দাবীতে। এইসব আন্দোলনকে কোনোভাবেই সমর্থন করেন না শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যদি নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহার হয়ে থাকে, তাকে বন্ধ করাটা একদিনের প্রক্রিয়া নয়। সব ছাত্রই তো আর মারণ-নেশায় মজে নেই। যারা নেই, তাদেরকে পাশে পেতে হবে কর্তৃপক্ষের। ধৈর্য-সহকারে এগোতে হবে। কঠোরতা প্রয়োজন, কিন্তু প্রথম পর্যায়েই তা যদি হয়ে ওঠে অমানবিক, তাহলে তা ফলপ্রসূ হবে না কিছুতেই।

    যদি উপাচার্য মাদক-বিরোধীতার খুব তৎপর মুখ হন, তাহলে এই ইস্যুতে একাংশ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষেরাই এসে দাঁড়াবেন ওনার পাশে। কই তারা? যিনি ছাত্রী-নিগ্রহের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে সময় চান, তিনি পড়ুয়াদের নৈতিকতার উন্নয়নে ব্রতী হবেন, বিশ্বাস করতে বেশ কষ্টই হয়।

    আমাদের রাজ্যেরই আরেক উৎকৃষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বেসু। একসময় তার ক্যাম্পাসের অশান্তির খবর প্রায় রোজই দেখা যেত সংবাদপত্রের পাতায়। কিন্তু কিছুকাল যাবৎ এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সমস্ত অস্থিরতা কাটিয়ে ক্যাম্পাসের শান্তির বাতাবরণ নজর কেড়েছে সকলেরই। কই ছাত্রছাত্রীরা নৈরাজ্যের পক্ষ নিয়ে এর প্রতিবাদ করছে না তো? উপাচার্যকে হেনস্থা করছে না তো। বরং যতটুকু জানি, সেই উপাচার্য অত্যন্ত আদর ও সম্মান পেয়ে থাকেন শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী ও অন্যান্য শিক্ষাকর্মীদের থেকে।

    মিথ্যাকথা বলে, এর-ঘাড়ে-ওকে চাপিয়ে পরিস্থিতি গুলিয়ে দিয়ে কোনো লাভ আছে কি?

    আবার বলি, এই মুহূর্তে এই আন্দোলন এই উপাচার্যকে অপসারণের ও পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদ। তাকে সমর্থন করেই এই লেখা।

    মাদকদ্রব্য-বিরোধী প্রচেষ্টা ও মানবিক পদক্ষেপের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে আমার।

    অপপ্রচার ৪। অসীম চট্টোপাধ্যায় যেহেতু গেছেন যাদবপুরে, প্রতিবাদ করেছেন, এর অর্থ হল ভেতরে ভেতরে নকশাল ক্রিয়াশীলতা শুরু হয়ে গেছে। কেন গেলেন অসীম? উনি তো ছাত্র নন। অর্থাৎ বহিরাহত।

    যারা বলছেন এ কথা, তারা ভুলে যাচ্ছেন কেন, একদিন এই অসীমবাবুই নির্বাচন লড়েছিলেন তৃণমূলের সমর্থনে, বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। পরে ভুল বুঝতে পেরেছেন নিজের। বহুদিন ধরেই উনি বাংলার একজন প্রতিবাদী মুখ। গুণী মানুষ। বিদগ্ধ বিশ্লেষক ও প্রাবন্ধিক। সারদা কেলেঙ্কারীতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনের হয়েও উনি লড়ছেন।

    এখানেও ওই একই কথা। মানুষ বিপদে পড়লে আরেকজন মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম আর্তের পাশে এসে দাঁড়ানো। মানবিকতা যুক্ত হওয়ার কথা বলে, আর ক্ষুদ্র কায়েমী শক্তি, অত্যাচারী শাসককূল সবর্শক্তি দিয়ে চারিয়ে দিতে চায় বিভাজন।

    নন্দীগ্রাম কান্ডের পর নোয়াম চমস্কির বার্তা নিয়ে হেঁটেছিলেন মানুষজন। শারীরিকভাবে চমস্কি না থাকলেও, বাংলায় এসে পৌঁছেছিল তার গভীর উদ্বেগ। এই উদ্বেগটুকুই একজন মানুষের মানুষ হয়ে থাকা। একে রাজনৈতিক কুৎসায় রাঙিয়ে ছোটো করা অন্যায়।

    ....................................

    অনেকেই ভাবছেন মাত্র তিন বছর আগেই ‘পরিবর্তন’এর আকাঙ্খায় এক বিপুল ঢেউ এসে ধুয়ে মুছে দিয়ে গেল দীর্ঘ চৌত্রিশ বছরের একছত্র শাসন। মানুষের গভীর প্রত্যাশায় ভর করে, স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের মাধ্যমে মসনদে এল নতুন সরকার।

    কয়েকটা দিন যেতে না যেতেই এই তার রূপ! তবে এর পরে কী? এর পরেও আবার কীসের পরিবর্তন? আবার সিপিএম? নাকি বিজেপি?

    অর্থাৎ আজকের প্রতিবাদের অভিমুখ ঠিক কী?

    আমাদের সমস্যা হল, আমরা সমাজের সমস্ত বৈশিষ্ট্য-ব্যাখার জন্য রাজনীতির পথে ভাবতে চাই। সব উন্নয়নের প্রত্যাশা সঁপে দিই রাজনীতির কাছে। আর ব্যর্থতার দায়ভার চাপাই রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকদের ওপর।

    কিন্তু সমাজের সব গুণগত উন্নয়ন রাজনীতি-নির্ভর নয়। তাই এইবারের পরিবর্তনটিকে খুঁজতে গেলে শুধুই সিপিএমের বদলে তৃণমূল বা তৃণমূলের বদলে অন্য কেউ – এই দিকে তাকালে হবে না।

    আমরা আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও ব্যাপ্ত জগতের সঙ্গে জুড়ে আছি সত্যের মাধ্যমে। সত্যের যথার্থ অনুভবই আমাদের ন্যায়ের পথে চালিত করে। সেই অনুভবের নিরিখে যে প্রতিক্রিয়া, ঔচিত্যের সংজ্ঞা মেনে চলে সে-ই।

    চারপাশে ঘটে চলা নিরন্তর প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ গড়ে উঠা সামাজিক সত্যগুলিকে আমরা অনুভব করি বিভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা। যেমন খুব দূরের কোনো অঞ্চলে কোনো অশান্তি ঘটলে তার খবর আমরা পাই লোকমুখে, মিডিয়ার মাধ্যমে। এখন সব মাধ্যম-বাহিত খবরেই কিছু না বিকৃতি ঢুকে পড়ে। আর আমরাও আমাদের ভেতর পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাবে গেঁথে যাওয়া কিছু বিশ্বাস, কিছু মানসিকতার দ্বারা চালিত হয়ে আমাদের পছন্দমতো মাধ্যমদ্বারা বাহিত খবরটিকে গ্রহণ করি। এতে সত্যের যথার্থ অনুধাবন হয় না।

    সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে দিনের বেশির ভাগ সময় যে চ্যানেল চলে, একজন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে হয়ত সে চ্যানেল খোলাই হয় না। পাড়ায় পাড়ায় এক অদ্ভুত পরিচয়ে চিহ্নিত করা হয় মানুষজনকে – ও তৃণমূল, ও সিপিএম, ও বিজেপি, ও কংগ্রেস। এবং ‘বিরোধী’ মত মানেই তা অবান্তর ও অভিসন্ধিমূলক।

    অর্থাৎ একধরণের অন্ধত্ব এসে ঘিরে নেয় আমাদের সত্য অনুধাবনের প্রক্রিয়াটিকে। আমরা একপক্ষের কথাই কেবল গ্রহণ করি, মেনে চলি। সেই মতো কাজ করি। এর থেকেই আসে প্রশ্নহীন আনুগত্য; যা থেকে জন্ম নেয় নিরঙ্কুশ দলতন্ত্র।

    যাদবপুরে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে এই যে একের পর এক মিছিল, তাদের ভেতর রাজনৈতিক অভিসন্ধি কেন খুঁজতে চাইছেন টিএমসিপি তথা তৃণমূল সমর্থকেরা? কারণ তারা ভয় পাচ্ছেন যে এই প্রতিরোধ আসলে তাদের দলের বিরুদ্ধে। এবং স্বাভাবিকভাবেই তা নিশ্চয়ই সিপিএম-এর সমর্থনে।
    কেন তারা ভাবতে পারছেন না কোথাও ভুল হয়েছে তাদের সরকারের? কেন ভাবতে পারছেন না, অন্ধ আনুগত্য নয়, ইস্যু-ভিত্তিক সমর্থনের কথা?

    যে দল যে ইস্যুতে সঠিক, যুক্তিযুক্ত অবস্থান নেবে, সেই ইস্যুতে আমি সেই নির্দিষ্ট দলটিকে সমর্থন করব। সমর্থন করব ভালো কাজকে, সামগ্রিকভাবে দিনের পর দিনে চোখ বন্ধ করে কোনো একটি দলকে নয়।

    এই আন্দোলন শ্লীলতাহানীর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবী তুললে – সমর্থন। পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধতা করলে – সমর্থন। দোষীদের আড়াল করলে – প্রতিবাদ। গোপনে মাদক-ব্যবহার চালু রাখতে চাইলে – প্রতিবাদ।

    বর্তমান সরকার ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে কন্যাসন্তান-বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইলে – সমর্থন।

    সারদা কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যুক্ত কাউকে আড়াল করতে চাইলে – প্রতিবাদ।

    আমার মনে হয়, বর্তমান পরিস্থিতি এক সুদীর্ঘ অন্ধত্ব বিনাশের ইঙ্গিত দেয়, অন্তত আংশিক হলেও। যাদবপুরের ছবি ছড়িয়ে গেছে দুনিয়াজুড়ে। আর মধ্যে কোনো উদ্দেশপ্রবণ বিকৃতি নেই। প্রায় নিজের চোখেই সব দেখে যন্ত্রণায় রাগে জ্বলে উঠছেন সকলে।

    আন্দোলনকারীরা কেউ কিছু ভুলছেন না ২০০৫-এর ১১ই জুন কী করেছিল তৎকালীন বামপন্থী সরকার। কেউ ভুলছে না নন্দীগ্রাম। তাই এই মিছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম-এর, একথা বলা অমূলক।

    সাম্প্রতিক বর্বরতার প্রতিবাদের সামিল হয়ে আসলে সংকীর্ণতা থেকে এক উদার প্রাঙ্গণে পা রাখছেন বহু মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রযুবকেরা, যাদের মনোভঙ্গী ও সক্রিয়তাই একটি সমাজের দিক নির্দেশ করে। এতে করে পরের নির্বাচনে কারা জিতবে এই প্রশ্নের সমাধান হয় না। কিন্তু অশান্তি-উদ্ভূত আলোড়নের ফলে, উত্থিত নানান প্রশ্ন ও গণ-আলোচনার ফলে যে মন্থন, যে যুক্তি-বিনিময়, তার দ্বারা আমাদের সমাজ-মানসিকতা ও বোধের পরাধীনতা ঘুচে উন্নতি হয় অনেকটাই। এ-ই হল নতুন পরিবর্তন।

    এই আন্দোলন আসলে বার্তা দেয় – ভবিষ্যতের কোনো শাসক, কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর যদি হিংস্র অত্যাচার নামিয়ে আনে, তার প্রতিবাদ দবে। দলমত-নির্বিশেষে গর্জে উঠবে ছাত্রদল। গর্জে উঠবে সমাজ।

    ২০শে সেপ্টেম্বরের মিছিলে আসা জন্য কোনো প্রলোভন ছিল না। ছিল না কোনো চোখ-রাঙানি। তবু বাংলার প্রত্যন্ত কোণ থেকে মানুষ এসে ভরিয়ে তুলেছে বাংলার রাজপথ। স্থানীয় রাজনৈতিক গুন্ডাদের শাসন মানেনি, বৃষ্টি মানেনি। কেউ কাজ কামাই করেছে। কেউ ক্লাস করেনি। অসুস্থ কোনো মানুষ একদিন পিছিয়ে দিয়েছে ডাক্তার দেখানো। কেন?

    কারণ তারা অনুভব করেছে ‘হয় সিপিএম নয় তৃণমূল নয় বিজেপি নয় কংগ্রেস’ – এই অতিসরলীকরণ আর নয়। এতে করে পিছিয়ে পড়তে হয়। মাথা উঁচু করে চলতে গেলে, স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখতে হলে দলের বজ্রমুঠি থেকে বেরোতেই হবে।

    শাসক চায় প্রতিরোধহীন এক্তিয়ার। ২০০৫-এ তাই মধ্যরাত্রে পুলিশের গুন্ডামি দেখেছে যাদবপুর। ২০১৪-এও তাই।

    আসলে কোনো নির্দিষ্ট আন্দোলন নয়। শাসকের লক্ষ্য হচ্ছে ওই বিরোধী স্বর। ছাত্রসমাজের প্রতিস্পর্ধা।
    আর নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েম করতে করতে, অন্ধ হতে হতে তারা খেয়াল করে না কোথায় পা রাখছে তারা।

    যাদবপুরের মাটি এখন আকীর্ণ অঙ্গার। কোনো অন্যায়কারীর একবিন্দু জমি নেই সেখানে।

    আসুন, যে যেখানে আছি সেখান থেকে বুক দিয়ে রক্ষা করি এই দুর্দম আন্দোলন, যা পুলিশের বুট ও লাঠির মুখ থেকে বিচ্ছুরিত করে নির্ভীক আলো, রোদবৃষ্টি হুমকি কিছুতে দমে না। ক্রমশ বেড়ে ওঠে। আর বেড়েই চলে ...

    প্রকাশঃ 22 September 2014 10:30:25 IST

    বাকিটা সবাই জানে...
    ফরিদা

    এক ছিল রাণী, তার মালখানায় মাল ছিল, ঘেউখানায় ভুকুল ছিল। তার শিক্ষামন্ত্রী ছিল ব্যর্থ। রাণীমাকে তার ভাইপোরা দিদি বলে ডাকতো।

    রাণী একদিন খেয়াল করলেন তার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু স্কুল কলেজে পড়াশোনা হচ্ছে। রাণী দেখলেন বিপদ – কত চেষ্টা করে জেলায় জেলায় প্রচুর চেষ্টায় ডকে তুলে দিলেন লাখ লাখ কলেজ আর তারই নাকের ডগায় এ হেন বিষফোঁড়া? অ্যাঁ - লোকে বলবে কি? তার অকুতোভয় সৈনিক আরাষণ্ড – জলের জগ নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবাদী শিক্ষিকার দিকে। তার প্রিয় যুব সেনাপতি বঙ্কুদেশ একা অসীমসাহসে মাত্র পঞ্চাশ সহযোদ্ধা নিয়ে শতবর্ষ পুরনো ল্যাবোরটরির যন্ত্রপাতি কুশলতার সঙ্গে ধুলো করে দিয়েছেন।

    আর তার নিজের খাসতালুকে বিশ্ববিদ্যালয়? পড়াশুনো? মামার বাড়ির আবদার? খবরদার...।

    রাণী দুঃখে থাকেন, তেলা মাথায় তেল দিতে এলে কুপরিবহণ মন্ত্রী বদনের বদনায় লাথ মারেন। বদন হাসপাতালে।

    দুঃখ কি তার একটা? ওদিকে এক কর্মবীর বাঙালি ব্যবসায়ী, মারো দাঁ কোম্পানি বানিয়ে করে খাচ্ছিল, মাস গেলে মোটা টাকা আসত , সইল না। তারা মাসোহারা বন্ধ করেছে, শুধু তাই নয় – পরশ্রীকাতর কিছু লোক তার পিছনে পড়েছে। আরে বাবা, না হয় সে লোকের থেকে টাকা নিয়েই তো দেবে নাকি? নোট তো আর ছাপেনি। আর দিয়েছে কাকে – রাণীকে আর তার সাঙ্গোপাঙ্গোকে – এরাই তো দেখবে যাতে দেশে আর কোনো গরীব না থাকে – সবাই যেন ভোট ফুরোলেই ফুরিয়ে যায়। আর গরীবের কথা তো টাটকা বলে কিছু হয় না – বাসী হলে তাও বা মুখে দেওয়া যায়।

    যাক সে কথা, রাণী কিছু কবিতা লিখলেন – সবাই কত কিনল বাহবা দিল – নোবেল ওলা রা দেখলই না। রাণী ছবি আঁকলেন – কত লোক কাড়াকাড়ি মারামারি করে ওজন করে টাকা দিয়ে কিনে নিল – তাই নিয়েও কথা চলছে।

    রাণীর মন খারাপের কারণ কি একটা?

    কিন্তু একদিন একটা উপায় হল।

    সেদিন রাণী ঘাসফুলের গোড়ায় সার টার দিচ্ছিলেন। বলতে নেই শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে সেই ফুল এখন মহীরুহ। তখন রাণীর চটির ফিতে ছিঁড়ে গেল হঠাৎ। রাণী নিচু হয়ে চটি তুলতে গেলেন দেখলেন কী যেন একটা কিলবিল করছে পায়ের কাছে। পিছিয়ে গেলেন তিনি – এ কী? সাপ নাকি? নাকি ম্যাও?
    তখন হঠাৎ শুনলেন সেই কিলবিলে প্রাণীটা কিচকিচ করে বল্ল – আমি ছবিজিত। আমাকে দয়া করুন।

    রাণী বললেন – ওখানে কি করছ?
    ছবি – আমি ওখানেই থাকি
    রাণী – কেন?
    ছবি – আজ্ঞে কাজকামে জুত নাই, শরীলে বল নাই, পেটে তেমন বিদ্যা নাই, চুরিতেও বুদ্ধি নাই – লোকে বল্ল কেন্নো হয়ে রাণীর পায়ে ঘুরলে হিল্লে হবে। তাই এক বছর ধরে ছিচরণে পড়ে আছি।
    রাণী – কি কাণ্ড – খাও কি?
    ছবি – আজ্ঞে, পায়ের ধুলো –
    রাণী – আহা বাছা রে – চাকরি করবি?
    ছবি – যা কাজ বলবেন। আপনার চটি পালিশের কাজ হলে তো খুব ভালো।
    রাণী – আরে তা নয় তার জন্য অন্য লোক আছে, তুই , তুই বরং, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবি?
    ছবি – শিশি? আলমারিতে থাকতে হবে?
    রাণী – ওই হল – আসবি যাবি চেয়ারে বসবি, পয়সাও পাবি
    ছবি – কিন্তু্‌, আমি, মানে...।
    রাণী – মানে কি? শিগগির বল
    ছবি – আমি বসব বা দাঁড়াবো কি করে – আমার তো শিরদাঁড়া নেই।
    রাণী – সে আমি জানি – সে আমি দেখেই বুঝেছি, সেইজন্যই তো চাকরি দিলাম তোকে। এই দেখছিস এত বড় ঘাসফুল – সোজা দাঁড়িয়ে আছে – কি করে বল? বল
    ছবি – আমি কি ওসব জানি, জানলে তো লোকে শিক্ষিত বলবে
    রাণী – কাঠি, কাঠি দিয়েই সিধে থাকে সব। মারোদাঁ থেকে ভাইপো - সবাই এই কাঠিতেই সোজা। তোকেও দেব, কদিনে দেখবি দু পায়ে গটগট করে হাঁটবি। কিন্তু আমার সামনে এলেই কাঠি কিন্তু দড়ি হয়ে নেতিয়ে যাবে, মনে রাখিস।

    ছবিজিত তো হাতে চাঁদ পেল। মিনমিন করে বল্ল – কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজটা কি?
    রাণী – কাজ করার হলে কি তোকে রাখি – কিছু করবি না, তাহলেই হবে। কাজ করলেই চাকরি নট কিন্তু।

    ছবিজিত পরের দিন থেকেই বহাল – আসে, চেয়ারে বসে, চা খায়, বাড়ি যায়। পেন্সিলে মাঝে মাঝে ঘাসফুল আঁকে। কাটাকুটি খেলে নিজে নিজে। যেদিন জেতে খুব খুশি হয়, আর হেরে গেলে দুঃখে এক ঘন্টা চা খায় খায় না।

    এইসব দিব্যি চলছিল। একদিন পর পর তিন দান হেরে গিয়ে মেজাজ খারাপ। কদিন আগেই এক উটকো উৎপাত গেছে, ছেলেপিলে কে কাকে কী যেন করেছে, একে ওকে বলে সে আপদ বিদায় করেছে সে। আবার কদিন পরে বেয়ারা ফের এসে বল্ল ছাত্ররা দেখা করতে এসেছে।

    ছবিজিত রেগে কাঁই। মামার বাড়ি, আমার কাজ নাই বুঝি? দিন রাত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে? ইল্লি আর কি। আমার শালা মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল অবস্থা, নিজের কাছে নিজেই কাটাকুটি খেলায় হারছি - শেষবার তো কাটা নিয়েও হেরেছি – এখন উনি এলেন – ছাত্তররা দেখা করতে এসেছে – কি করব – তোপ ফেলব নাকি?

    আবার খেলায় ডুবে গেল সে। আবার হারছে। চা পর্যন্ত খাচ্ছে না। চুল খাড়া – গোঁফগুলো ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে।

    রাত হল। ছবিজিত বল্ল - নাঃ বাড়ি যাই। মাত্র এক বছরের চেষ্টায় কাটাকুটি খেলাটা রপ্ত হয়েছে বলে ভেবেছিল আবার সব হাতের বাইরে যেতে চলেছে।

    আরে বাইরে ষাঁড়ের মতো চেঁচায় কে? গভীর মনোযোগে সে কাটাকুটি খেলছিল বলে শুনতে পায় নি, উঁকি মেরে দেখে তাজ্জব ব্যাপার।

    গভীর রাত হয়ে গেছে আর ছেলেপিলেদের যেন বাড়ি ঘর দোর বলে আর কিছু নেই দরজা জুড়ে বসে ছেলেপিলে গান গায়...

    গান... ছবিজিতের কাঠি শিরদাঁড়াতেও ভয়ের স্রোত খেলে গেল। সে ঠিক জানে – ফার্স্টবুকে পড়েছিল – গান মানে বন্দুক...। কাঁপতে কাঁপতে ফোন করল সে নগরপালকে…….

    প্রকাশঃ 22 September 2014 22:53:47 IST #

    কাচুমাচু রায়ের নির্ভীক কলাম
    ন্যাড়া
    -------------------------------------------

    ইস্ট জর্জিয়া ও যাদবপুর

    - কাচুমাচু রায়
    ---------------------------

    ঊনিশশো বিরাশি সাল। আমি তখন মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে
    পিএইচডি করি। ইস্ট জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ডাকসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়,
    যাদবপুর-টুরের মতন হেজিপেজি নয়। যারা জানেন না, তাদের জানাই আমাদের মাননীয়া
    মুখ্যমন্ত্রীর পিএইচডি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। (সেই সঙ্গে তাদের এই প্রশ্নও করি,
    জানেন না কেন? এরকম উচ্চশিক্ষিত, বিদ্বৎমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী সারা ভারতে আজ অব্দি
    আসেনি।) সেখানেও ঠিক এরকম একটা পরিস্থিতি হয়েছিল। এরকম মানে কীরকম? আজ এই যাদবপুরের
    যে তিলকে তাল করা হচ্ছে, যেখানে বাংলার যাবতীয় ফোপরদালাল - শঙ্খ ঘোষ
    (দালাল-চূড়ামণি) থেকে শুরু করে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (গা-দেখানে ঢালানি) সব এক
    হয়েছে।

    ওইসময়ে ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটিতে কর্তৃপক্ষ এমন একজনকে ভিসি করে আনলেন, যে যার
    যোগ্যতা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নই করা চলেনা। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাব্লিক দেশের
    (সত্যি ঐ নামে দেশ আছে - বিশ্বাস না হয় এইখানে দেখুন -
    http://www.capitalfm.co.ke/campus/best-and-worst-educational-systems-i
    nfographic
    /) প্রথম পঞ্চাশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন। এছাড়া
    কলেজ পত্রিকায় ওনার তিনটি কবিতা, দুটি গল্প এবং সবথেকে বড় কথা একটি টেকনিকাল
    প্রবন্ধ ছাপা হয় "The method and procedure of wearing an automatic quartz watch
    with steel band". এরকম এক সম্মানীয় ব্যক্তি ভিসি হয়ে আসার পরে ইউনিভার্সিটি
    ক্যাম্পাসে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়। একটি ছেলে ক্যাম্পাসের মধ্যে খুন হয়। উনি
    বলেছিলেন আগামী ছমাসের মধ্যেই উনি পুলিশে খবর দেবেন। খুবই যুক্তিপূর্ণ কথা। ভিসি
    কাজের মানুষ। খুন তো মানুষই হয়। তাছাড়া ভিসি তো আর খুন করেন নি, করানও নি যে ওনাকে
    সব কাজ ফেলে তক্ষুণই পুলিশে ছুটতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রীর
    সে কথা পছন্দ হল না। তারা ভিসিকে ঘেরাও করে বসল। ভিসি তখন কী করলেন? ভিসি তখন
    পুলিশকে বললেন তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে। সংবেধশীল পুলিশ এসে শ্রদ্ধার সঙ্গে
    ছাত্রছাত্রীদের পাশ কাটিয়ে ভিসিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পারে জানা ছাত্রছাত্রীরা
    ভিসিকে খুন ল্করার চক্রান্ত করেছিল। তারা মারত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। একটি
    ছেলের কাছে একটি ধারাল পেন্সিল কাটার ছুরি পাওয়া যায়। দুটি মেয়ের কাছ থেকে কিছু
    সেফটিপিনও উদ্ধার করা হয়।

    এই ঘটনার উল্লেখ আমি কেন করলাম? করলাম এই কারণে যে, ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির
    মতন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এমনটা ঘটতে পারে, তাহলে
    যাদবপুরের মতন গায়ে-মানে-না-আপনি-মোড়ল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি যা করেছেন, ঠিক করেছেন।
    তাছাড়া বারবার দেখা গেছে যাদবপুরের ছেলেরা মদ-গাজা খায়। এইসব নেশাড়ুদের পুলিশ
    বাটাম মারবে না তো কি ভ্যাট সিক্সটিনাইন খাওয়াবে? তার ওপর মেয়েগুলোর পোষাক দেখলে
    আমারই হাত-সুড়সুড় করে ওঠে, মাননীয় পুলিশ বন্ধুরা যে কীভাবে ওই পরিমাণ সংযম সেদিন
    দেখালেন বুঝে উঠতে পারছি না।

    কাজেই বন্ধুবর। আমাদের সঙ্গে থাকুন। দিকে দিকে দালালরা জেগে উঠেছে - মানুষ যাদের
    আস্তাকুড় ছুড়ে ফেলে দিয়েছে সেই সিপিয়েমের দালাল, শত্রুর দালাল। কিন্তু চিন্তা
    করবেন না, এই দালালদের অপচেষ্টাকে রুখতে পারার শক্তি আমাদের আছে - আমাদের সঙ্গে
    সারদা আছে, চিটফান্ড আছে, জামাত আছে। সবার ওপরে আছে ইস্ট জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির
    একমাত্র পিএইচডি। প্রণাম ওনাকে।

    _____________________________________________________________
    কাচুমাচু রায় স্বনামধন্য ব্যক্তি। বাংলা যাবতীয় সংবাদপত্র থেকে শুরু করে যাবতীয়
    পত্রিকায় ওনার চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। চিঠির সংখ্যা লক্ষাধিক। বাংলায় কাচুমাচু রায়ের
    থেকে বেশি চিঠি কেউ লেখেননি। দীর্ঘদিন উনি পঞ্জিকা (গুপ্ত প্রেস ও বেণীমাধ
    শীল দুইই) ও টেলিফোন ডিরেক্টরিতেও পত্রাঘাত করেন। সে চিঠিগুলি প্রকাশিত হলে ওনার
    চিঠির সংখ্যা আরও বেশি হত।

    কাচুমাচু রায় বাংলা ভাষায় স্বকীয়তা ছাপ রাখতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার বর্জন করেছেন।

    প্রকাশঃ 22 September 2014 12:32:31 IST
    IN PROTEST: A JADAVPUR TEACHER SPEAKS OUT
    Posted by
    Rimi B Chatterjee
    | Sep 22, 2014

    There is a lot of misinformation flying around about the current protests at Jadavpur University (JU). I am currently a teacher in the university and I wish to clarify a few things.
    First, this is a non-partisan, apolitical protest. We, the students and teachers, have a single agenda: to get justice for those who have been wronged and restore peace and goodwill. None of us wish to leave our teaching and academic duties and none of us have anything to gain from this protest. But we will not stand by and watch as our students are victimised and terrorised. What we want most of all is for normalcy to be restored as soon as possible, but we have not seen the authorities do anything to restore that normalcy; we have rather watched them make the situation worse, and this has saddened and disappointed us.
    A problem that could have been solved with a few words of peace and kindness has been allowed to snowball to a point where students no longer have any confidence in the goodwill of the administration, and it hurts me very deeply to see my beloved JU turned into a battleground. This is not how it’s supposed to be. Having said that, I feel we would be betraying our students if we did not add our voices to their protest and if we did not do everything in our power to champion the innocent.
    I was reluctant at first to have anything to do with the protesters because I have seen the worst of student violence and I know that protests are often manipulated by political activists for their own selfish reasons, thus putting students at risk. But not this time. The students have won me over by their commitment to doing what is right and their willingness to show patience under provocation. They have not forgotten the original reason why they protested: one of their number filed a complaint after allegedly being molested by a group of male students in the JU Men’s Hostel, but the authorities failed to respond satisfactorily to the complaint. The reason these male students gave for molesting her is that she and her boyfriend were found in an “objectionable position” on the last day of a college fest. The students perceived that the right of a female student to wear what she wants, and love whom and how she wants was under attack from people who saw themselves as moral policemen, and they were justifiably angry. This is why there has been a high turnout of women students in the protest.
    I wish to make it clear once and for all that we at Jadavpur University condemn the victimising of any student for whatever reason. If those boys had a complaint about the female student’s behaviour, they could have made it to duly-constituted authorities, rather than taking the law into their own hands. We cannot support a lynch-mob mentality in an institute of learning. The subsequent history of the female student’s complaint exposed the fractures in the University administration. The students were at first polite and peaceful, they organised several deputations to the Vice Chancellor, which I witnessed, where they put their prayer for justice to him in a civilised way. All they wanted was to be heard, but the Vice Chancellor brushed them aside with no consideration for their feelings. We no longer live in a world where it is acceptable to do that.
    There has been a lot of controversy over the events of the night of September 16. The question everybody is asking is whether the students who were protesting were in effect gheraoing the Vice Chancellor, i.e. whether they intended to prevent his leaving the administrative block indefinitely. The students say they were not. I was not present, so I do not know, but even if they were, it was morally wrong of the Vice Chancellor to call the police and precipitate a violent attack on peaceful protesters. As the head of the university he is their protector, but he treated them like enemies. He violated their trust. Many of the students had gone there directly from class, and had laptops and tablets with them, that were lost and broken in the melee. One of them was carrying a violin. If they had been intending violence, would they have risked their valuable possessions like that? What would have happened if the Vice Chancellor had promised them prompt action on the complaint and placated their anger? The students assure me that they would have gone home, and I believe them. But he did nothing of the sort.
    This has inexpressibly saddened me. How can I face my students in the classroom knowing that we have failed them so drastically? As the executive head of the university, the Vice Chancellor should set an example for all of us as to how we should treat our charges. We don’t just teach them by lecturing them; we ought to practice what we preach. I am a teacher of humanities, and as such I discuss texts that deal with what it means to be human. This is not human. I hope and pray that we can find an early resolution to this conflict so that we can all go back to our normal lives.
    But till then, I am afraid that we must protest. Students have been provoked, victimised, injured and insulted and I feel their pain. They sent the Vice Chancellor 40 red roses and a get-well card, even as some of them were lying hurt in hospital. How can these students be viewed as troublemakers? They wanted so badly to be listened to, and this is the answer they got. I am sorry that I have to say these words. I want nothing more than to be able to get back to teaching, but with most of my colleagues I am afraid I must declare that this is currently not possible. I appeal to those in charge of this mess to give us peace and understanding. Do not hurt more young people. Do not insult them and misunderstand them. They are your children, as they are mine.


    যাদবপুর- একটি ব্যক্তিগত গল্প
    I

    কলেজ স্ট্রীটের পাশে বসে আছে ছেলেধরা বুড়ো।
    পুরোনো অভ্যাসবশে দুচোখ এখনও খুঁজে ফেরে
    যেসব ধমনী ছিল এ পথের সহজ তুলনা
    ঈশান নৈঋত বায়ু কখনো বা অগ্নিকোণ থেকে
    যেসব ধমনী ছুঁয়ে পৃথিবীও পেত উত্থান
    রূপের ঝলক লেগে সে কি এত মিথ্যে হয়ে গেল?
    উপমার মৃত্যু হল এই নবদুর্বাদল দেশে?
    বুড়ো তাই গান গায়, থেকে থেকে বলে "আয় আয়"
    লোকেরা পাগল ভাবে লোকেরা মাতাল ভাবে তাকে
    ঢিল ছুঁড়ে দেখে তার গায়ে কোনো সাড় আছে কি না
    সে তবু গলায় আনে নাটুকে আবেগ, হাঁকে "এই
    শিশুঘাতী নারীঘাতী কুৎসিত বীভৎসা পরে যেন-"
    আর সেই মুহূর্তেই বৃষ্টি নেমে আসে তার স্বরে
    চোখের কুয়াশা ঠেলে দেখে তার চারপাশে সব
    যে যার দিনের মতো ঝাঁপ ফেলে চলে গেছে ঘরে
    পুরোনো অভ্যাসে শুধু বুড়োর পাঁজরে লাগে টান-
    যদিও বধির , তবু ধ্বনিরও তো ছিল কিছু দেনা
    সবই কি মিটিয়ে দিয়ে গেল তবে রণবীর সেনা?
    ( ছেলেধরা বুড়ো-শঙ্খ ঘোষ)

    ----

    আমাদের মত বুড়োটে আর ন্যাকাচৈতন কিছু লোকের বেশ একটা বদ অভ্যেসই আছে সব কিছুতেই শঙ্খ ঘোষকে টেনে আনা। কেননা কোনকালে কোথায় যেন আগুন জ্বলেছিল, আর আমরা তাতে হাত-পা সেঁকে ভেবেছিলাম এই সেই চিরপ্রণম্য অগ্নি, আমরাই তাকে মশালে মশালে বয়ে নিয়ে যাচ্ছি দেবী হেরার মন্দির থেকে কাছে -দূরে, ঘাটে-আঘাটায়। সেই সব সময়ে আমরা শঙ্খ ঘোষ পড়তাম খুব, মিছিলে-ময়দানে আমাদের মুখে শঙ্খ ঘোষের কবিতার খই ফুটত। তারপর তো যথারীতি আমাদের যার যার বিপ্লবের ব্যক্তিগত যাত্রাপালা শেষ হলে দাঁতে নিমপাতা কেটে লোহা ছুঁয়ে ঘরে ঢুকে বাধ্য ছেলের মত পড়তে বসলাম।

    আমাদের সেইসব আগুনটাগুন কবে নিভে গেছে; সেসব কথা নতুন করে মুখ ফুটে বলতেও অসম্ভব ইয়ে লাগে। তবে বলবার কথা এই যে আগুনের সেই জ্বলুনির মত ঈষৎভাবে পেছনে লেগে আছেন শঙ্খ ঘোষ। তাই কারণে হোক, অকারণে হোক, মুখ খুললেই ফস করে বেরিয়ে পড়েন শঙ্খ ঘোষ। আর তাছাড়া একদিক থেকে বেদম সুবিধে করে দিয়ে গেছেন ভদ্রলোক। ভাবা প্র্যাকটিস না করার এমন সহজ সব ছুতো রেখে গেছেন যে মহায়কে প্রণাম করতে ইচ্ছে যায়। এই যেমন এক্ষুনি ঝড়াকসে একপিস শঙ্খবাবু নামিয়ে দিলাম, তাতে কত কথাই ওঁর মুখ দিয়ে বলে ফেলা গেল-নিজের তো পেটে বোমা মারলেও এসব কথা এমনি করে বেরোতো না।

    ----

    কেউ যেন বলেছিল। যত খচ্চরই হই না কেন, যতই গাছ-হারামজাদা হই, দিনের শেষে গামছায় মুখ মুছতে মুছতে হঠাৎ করে বাথরুমের জানালায় আগুনের আভা দেখে চমক একদিন না একদিন লাগবেই। কেননা, আগুন তো আবার একদিন না একদিন লাগবেই।আর তাছাড়া, "যতই খারাপ ছেলে হই না কেন"-নিরঞ্জন রায় মেঘে ঢাকা তারায় যেমন বলেন-"আমার তো একটা আদর্শ আছে!" যা শুনে ঐ বুক -মুচড়োনো ব্যথার মধ্যেও কুলকুলিয়ে একটা হাসি পায়। কালো রংয়ের হাসি।

    ভাবি , বুড়োর খপ্পরে একদিন আমরাও পড়েছিলাম। তারপর মতের অমিলে-স্বভাববশে বুড়োকে রাস্তার মোড়ে ফেলে চলেও এলাম। কিন্তু এখনো তার জন্য মনের কোণে একটু একটু কষ্ট হয়। লোকেরা পাগল ভাবে তাকে, লোকে ঢিল ছোঁড়ে তার দিকে। বুড়ো, তখন একটু মন কেমন করে তোমার জন্য। তোমাকে মনের মধ্যে নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে আমিও কিছুটা বুড়ো হয়ে উঠেছি। শুধু গান গাই না,গলায় আনি না কোনো নাটুকে আবেগ। স্বাভাবিক থাকি, লোকে যাকে স্বাভাবিক বলে থাকে। খাই দাই, চকচকে ব্লেডে দাড়ি কামাই, কাজ করি, ঘুমোই। ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাই।
    হাসি পাচ্ছে? আপনারাও হাসুন। কুলকুলিয়ে কালো রংয়ের হাসি। আমিও আপনাদের হাসিতে যোগ দেবো, অপ্রস্তুত। বোকার মত।
    -----
    আগস্ট মাসের শেষদিকে "সংস্কৃতি" চলাকালীন যখন মেয়েটির প্রতি ঐ অত্যাচার চলেছিল, তখন আমরা অনেকেই কিছুই জানতে পারিনি। যাদবপুরের ভেতরকার লোকজন ছাড়া। তারপর, এখন রেট্রোসপেক্টিভলি দেখছি, একটার পর একটা ঘটনা ঘটে চলে। ভিসি কিছুই করেন না। পুলিশ কিছু করে না। এই আজকে, অর্চনাদি'র সঙ্গে দেখা হল, লিবারেশন দিতে এসেছিলেন, বললেন- আঈআ যাদবপুর থানায় একটি ডেপুটেশন দিয়েছিল। পরে টাইমলাইন খতিয়ে দেখলাম, ঠিক। আর কোনো গণসংগঠন নড়েচড়ে বসে নি। এই ছেলেমেয়েরাই পুরো সেপ্টেম্বর মাসটা জুড়ে (মানে আজ অবধি) ধর্না-প্রতিবাদ চালিয়ে গেছে। খবরের কাগজে কোথাও হয়তো কোণেখাঁজে কিছু বেড়িয়ে থাকবে, লোকে সেসব চেয়েও দেখে নি। ষোলো রাতে জানতে পারি, কিছু একটা ঘটছে। কিছু একটা বড়সড় ঘটতে চলেছে। তারপর সতেরো সকালে কাগজ খুলে যথারীতি কিছু নেই, থাকা সম্ভব নয়, অত রাতের ব্যাপার। গুরুচণ্ডালীতেই জানতে পারলাম। সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে এসে ফুটেজ দেখা। রক্তমাখা মুখে ছেলেটি বেরিয়ে আসছে। কার হাত ভেঙ্গে গেছে, কার কলারবোন। মেয়েদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফর্দাফাই। মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেছে, তার চোখেমুখে জলের ছিটে দিচ্ছে বন্ধুরা। সপাটে কিল-চড়-ঘুষি চালাচ্ছে, ছেলেমেয়েদের ধরে ধরে পোকামাকড়ের মত ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে "রাজকুমার" ও তার কম্যান্ডোবাহিনী। হয়তো লাঠি চলেছিল। হয়তো চলেনি। তার দরকারও পড়ে না।

    নেট খুলে দেখি অজস্র , অজস্র প্রতিবাদী, রাগী গলা। রাগ গরগর করে , নিষ্ফল রাগ, শেকলে বাঁধা রাগ ল্যাজ আছড়ায় মনের ভেতরে। এর কী প্রতিবিধান হবে এই দানবের রাজত্বে? কত কী-ই তো ঘটে যায়, কামদুনি ঝিমিয়ে আসে, অনুব্রত-মনিরুল বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাপস পালের কুটোটি কেউ নাড়তে পারে না। উল্টে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বকা খেয়ে যান। পারুই-মামলা মাথা কুটে মরে আদালতে- আদালতে। বছর ঘুরে যায়, সারদা'র সুরাহা হয় না।

    ----

    সম্প্রতি যে বইটি পড়ছি , সেটির নাম অ্যান্টহিলস অফ সাভানা। চিনুয়া আচেবের বই। একটি কাল্পনিক আফ্রিকান দেশে একনায়কের পায়ের তলায় মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে ও মরে যায়, তাই নিয়ে বই। বইটার একটা গল্প, একটি আফ্রিকান লোককথা মনে পড়ে যায়।খরায় জরোজরো আবাজন প্রদেশ থেকে জনজাতিদের একটি প্রতিনিধি দল রাজধানী বাসায় এসেছে হিজ এক্সেলেন্সী'র সঙ্গে দেখা করতে। প্রতিনিধি দলের সেই সর্দারের মুখে গল্পটি শুনছে আবাজনের ভূমিপুত্র , রাগী এক পত্রিকা-সম্পাদক ইকেম ওসোদি।

    এক ছিল চিতাবাঘ। আর এক ছিল কচ্ছপ। চিতাবাঘের অনেকদিনের সাধ, সে কচ্ছপের মাংস খেয়ে মুখ বদলায়। কিন্তু কচ্ছপকে বাগে পাওয়া যাচ্ছে না কোনোমতেই। একদিন চিতা চড়তে বেড়িয়েছে; রাস্তার ওপরেই দেখে গুটগুট করে হাঁটছে কচ্ছপ। "এইবারে বাগে পেয়েছি তোকে ! আজ আমার হাতে তোর নিশ্চিত মরণ !"-বলল চিতা।
    কচ্ছপ দেখে, শিয়রে শমন। আজ আর নিস্তার নেই। মরার আগে চিতার কাছে একটি শেষ আর্জি জানায় সে।
    -"নে, শেষ প্রার্থনা-টার্থনা যা করবার, তাড়াতাড়ি সেরে নে। আমি আবার খিদে সইতে পারি না একদম!" চিতা বলে।
    কচ্ছপ কিন্তু প্রার্থনার ধারকাছ দিয়েও যায় না। রাস্তার পাশের জমিতে সে চার হাত-পা দিয়ে দ্রুত বালি খুঁড়তে থাকে, খুঁড়তেই থাকে। আরে, করছিসটা কী ! হতভম্ব চিতা বলে।

    কচ্ছপ উত্তর দেয় ঃ"এউসে এভেন অফ্তের ঈ অম দেঅদ ঈ ৌল্দ ন্ত অন্যোনে পস্সিঙ্গ ব্য থিস স্পোত তো সয়, য়েস, অ ফেল্লো অন্দ হিস মত্চ স্ত্রুগ্গ্লেদ হেরে"।

    জাত পেসিমিস্ট তো ! এই গল্পটাই মনে পড়ে।

    ---
    কিন্তু আমার বুড়োহাবড়া সিনিক পেসিমিজম এর পরের ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এই নতুন গল্পের খরগোশরা চিতা ও খরগোশের ঐ পুরনো গপ্পোকথাটি পড়ে নি বলেই মনে হয়। পড়লেও তারা তাতে বিশ্বাস করেনি একদমই। কেননা, এই ছেলেমেয়েগুলো, এই সোনার টুকরো ছেলেমেয়েগুলো, রাস্তার পাশে নেমে যায় না, হাত -পা দিয়ে বালি খুঁড়ে তোলে না। তারা, বিপুল দাসের সেই কবিতার প্রাণীটির মত মার খায়, আপাদমস্তক মার। এমন মার , যাতে ওদের মারের পালা শেষ হলে তাদের দেখায় ঠিক যেন ডোরাকাটা বাঘের মত। বাঘের মত তারা ঘুরে দাঁড়ায়, রাস্তায় নামে ঠিক তেমন গর্বিত পায়ে। তাদের গর্জন তারা ছুঁড়ে দেয় পৃথিবী বরাবর।
    ----
    কুড়ি তারিখের ঐ মিছিলে আমি কিছুতেই গিয়ে উঠতে পারিনি, হাজার চেষ্টা সত্বেও। নানাধরণের কমিটমেন্ট থাকে, এই বয়সে সেসব এড়িয়ে যাওয়া যায় না সব সময়। কিন্তু দুপুরবেলা বেরোনোর আগে টিভিতে চোখ রাখতে ভুলি নি। অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে সেদিন সকাল থেকে, তার আগের কদিন ছিল রোদ্দুরজ্বলা। সেই বৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে ছেলেমেয়েগুলো হাঁটছে নির্ভয়। তাদের সর্বাঙ্গ দিয়ে টুপিয়ে জল পড়ছে, তাদের পোষাক ভিজে সপসপে। প্ল্যাকার্ডগুলো , ব্যানারগুলোর লেখা একটু একটু জলে ধুয়ে গেছে। থোড়াই কেয়ার তাতে। বুক ফুলিয়ে তারা শ্লোগান দিচ্ছে, গলার শিরা ছিঁড়ে গাইছে গান। লাঠির মুখে তাদের গীটার ও স্যাক্সোফোন বেজেছে, সেই গান তারা আর বন্ধ করবে না। অনেক ছেলেমেয়ে হয়তো এই প্রথম মিছিলে হাঁটল, আগেরদিন অবধি হয়তো তারা মিছিলের নাম শুনলে মুখ বেঁকিয়ে চলে যেত। স্বতঃস্ফুর্ততা তবে একেই বলে? নন্দীগ্রাম বাদ দিলে এমন কোনো র্যালি আমার চল্লিশোর্ধ জীবনে আর কখনো দেখেছি কি? আর মূলতঃ ছাত্রছাত্রীদের র্যালি? এমন একটাও দেখেছি? ভারী কোনো নাম নেই, বড় কেষ্টবিষ্টু নেই(কয়েকটি মান্য ব্যতিক্রম ছাড়া) , লোকে যাঁদের বুদ্ধিজীবী কিম্বা বিদ্বজ্জন বলে থাকেন নিজের নিজের অভিরুচি অনুসারে। অজস্র, অজস্র শ্লোগানের ঢেউ, একটা আরেকটার ওপর আছড়ে পড়ছে, ভাঙ্গছে, ফেনিয়ে উঠছে, মিশে যাচ্ছে আশ্লেষে। একটি ৪০৭-এ করে একদল ছেলে -হোক হোক হোক কলরব ! বলতে বলতে চলে গেল। হাজার কণ্ঠে হোককলরব গর্জে উঠল। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। বলতে লজ্জা নেই।

    আর কী অভিনব সব শ্লোগান! পুলিশ তোমায় জাপটে ধরে/ গান শোনাবো বিশ্রী সুরে !! নন্দীগ্রাম মিছিলের সেইসব পোস্টারের কথা মনে পড়ে যায়- পুঁজির ঘোড়া খেপেছে/ বুদ্ধ তাতে চেপেছে/ অলরাইট ভেরি গুড/ আমরাও প্রস্তুত । খ্যাক খ্যাক করে হাসি পায়। কালোটালো নয়, পরিষ্কার সাদা রংয়ের ঝকঝকে হাসি। মনের ময়লা কেটে যায়। এরা মিছিল করছে, গাইছে (নেচেছিলও নাকি?) পাক্কা কার্নিভালের মেজাজে। শোকযাত্রা তো নয় ! আর , যেমন কিছুদিন আগে লিখেছিলাম-হাসি-গান-উল্লাসে শাসকের গা পুড়ে যায়, মোমের পুতুলের মত। যেমন ইরানে, তেমনি পশ্চিম বঙ্গে। এরা সব আজকের নন্দিনী আর রঞ্জন , রাজাকে গান শোনাতে এসেছে-পৌষের গান ! "না না গান নয়, গান নয়" বলতে রাজা পালিয়ে যাচ্ছেন কান চেপে ( এই নিয়েও চমৎকার প্যারডি হয়েছে, হোকঘেউঘেউ পশ্য)।

    সন্ধে সাতটা। তখনো অন্ধকারের মধ্যে মেয়ো রোড জুড়ে ছেলেমেয়েরা বসে আছে। তালি দিচ্ছে, গান গাইছে। আটজনের প্রতিনিধি দল গেছে রাজ্যপালের সাথে দেখা করতে। আমাদের তুমুল হৈ-হল্লা চলছে-চলবে। বহু, বহুদিন বাদে প্রাণ খুলে হাসি।বলি- বুড়ো, তোমার পাশে আজ অনেক ছেলেমেয়ে।তারা সবাই এই 'শিশুঘাতী নারীঘাতী কুৎসিত বীভত্সা'কে ধিক্কার জানাতে এসেছে। নতুন নতুন ছেলেমেয়ে সব। আহ, কতদিন বাদে কমরেড শব্দটা কেউ গর্বের সঙ্গে চীৎকার করে বলছে। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে-প্রতিশোধে কমরেড / গড়ে তোলো তোলো তোলো ব্যারিকেড!
    ----

    মাঝেমধ্যেই আটষট্টির দুনিয়া-কাঁপানো পারীর ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে এর তুলনা এসে পড়ছে। হয়তো এখনই ফার-ফেচড সেসব তুলনা। কিন্তু বহুদিনের বন্ধ্যা মাটিতে নতুন জল এসে পড়লে মানুষের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশীই হয়। পারীর ছেলেমেয়েরা দুনিয়াটাকেই বদলে দিতে চেয়েছিল। গোটা দুনিয়া জুড়ে, ফ্রান্স জুড়ে তো বটেই,তারা একটা শক ওয়েভ পৌঁছে দিয়েছিল। ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে পড়েছিল। কম্যুনিষ্টরা তাদের "বড়লোকের লাল্টু ছেলেমেয়ে" বলে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করেছিল। বলেছিল ড্যাডি ডাকলেই সুড়সুড় করে সরে পড়ে যে যার বাবার ফ্যাক্টরির মালিক হয়ে শ্রমিক শোষণ শুরু করে দেবে। তারপর নেহাতই ব্যাজার মুখে, বাধ্য হয়ে পরিস্থিতি মেপে আন্দোলনকে সমর্থন করেছিল। শ্রমিকরা সরকারী শ্রমিক সংগঠনগুলির দর-কষাকষির রাজনীতি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। মজুরিবৃদ্ধি নয়, তারা দখল করতে চেয়েছিল গোটা কারখানাটাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখনো অত দূর হাঁটে নি। হাঁটবে কিনা, ভবিষ্যতই বলবে। না হাঁটলেও কোনো অভিযোগ নেই। ওরা যথাসাধ্য করেছে। এবার দায়িত্বটা আমাদের-আমাদের রাজনীতিকদের, আমাদের সাধারণ মানুষদের, আপনার-আমার। আমাদের মধ্যে যাঁরা গান-গল্প-কবিতা লেখেন-ছবি আঁকেন। যাঁরা কারখানার মানুষদের মধ্যে কাজ করেন, যাঁরা গ্রামের মানুষদের মধ্যে কাজ করেন। আর ছাত্রছাত্রীরা যদি সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে বেড়িয়ে এসে বড় পৃথিবীটায় মেশেন , তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এঁদের মধ্যে অনেকেই তা করেন, আমি জানি। আমরা যখন রাজনীতি-রাজনীতি খেলা করতাম, তখন কী-ই বা করেছি। কিন্তু এই অরুমিতা-কস্তুরী (কস্তুরী অবশ্য ছাত্রী নয় আর), এরা যে কোনো সংগঠনের সম্পদ।

    কিন্তু দুই আন্দোলনের মধ্যে মিলটা এই স্বতঃস্ফুর্ততায়। সহমর্মিতায়। যে , আমাদের বন্ধু মলেস্টেড হয়েছে, আমাদের বন্ধুরাই মার খেয়েছে, আমরা আর ব্যাকট্র্যাক করবো না। পুলিশ মারবে? কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দেবে? থানায় ডায়েরি করে ভিসা নিয়ে ঝামেলা করবে ? করুক ! আমি ফিরছি না। যে ইস্পাত এই কুড়ি-পঁচিশ বয়সই দেখাতে পারে।

    আর একটা মিল হয়তো এদের আর্বানিটিতে। ছোটখাটো পোষাকের মেয়েরা পিঠে-পিঠ ঠেকিয়ে লড়ছে, কোনো কনভেনশন্যাল মিছিলে যাদের কখনো দেখা যাবে না। এবং তাই নিয়ে এদের কোনো পাপবোধও নেই, ভাগ্যিস !

    ও হ্যাঁ, আর একটা অ্যানেকডোটাল মিল খুঁজে পেলাম। কোহন বেন্ডিটকে যখন দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে "অ-ফরাসী" বলে," জার্মান জ্যু" বলে, তখন মিছিলে শ্লোগান উঠছে- আমরা সবাই জার্মান জ্যু। মিল পাচ্ছেন? আমরা সবাই বহিরাগত !
    -----
    এখনো অবধি এই ছেলেমেয়েরা চমৎকার ঠাণ্ডা মাথার পরিচয় দিয়েছে। হিংসায় বিশ্বাসী নয় তারা, জানিয়েছে। মেয়েটির বাবার সম্বন্ধে কেউ যেন কোনো অসম্মানজনক মন্তব্য না করে, তার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। রাজ্যপালের কথায় সাড়া দিয়ে অবস্থান থেকে সরে এসেছে।বলেছে- এ অরে জুস্ত সোিঅল অ্তিভিস্ত্স ্হো অরে ফিঘ্তিঙ্গ হেরে ফোর অ িদের অইম। আমি সিনিক নই। আমি এদের বিশ্বাস করতে চাই। বিশ্বাস করতে চাই একটা নতুন সামাজিক-সাংস্কৃতি-রাজনৈতিক আন্দোলনের শুরু হবে এদের হাত ধরে। যে আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখিই দাঁড়াবে না, লিঙ্গবৈষম্য-পিতৃতন্ত্রর বিরুদ্ধেও দাঁড়াবে। নারী আন্দোলন-পরিবেশ আন্দোলন এদের থেকে প্রেরণা পাবে।সরবোন এসে দাঁড়াবে যাদবপুরের পাশে।ভবিষ্যতে কী হবে, তা ভবিষ্যতই বলবে। এরা সব নষ্ট হয়ে যাবে, ভিসির পদত্যাগ অবধি এদের দৌড়, এই ভেবে আমি এখনি নাক কোঁচকাবো না। যদি তাও হয়, তাহলেও নাক কোঁচকাবো না।কিন্তু ভুল করুক, ঠিক করুক, আমি চাইবো-যা করবার এই ছাত্ররাই করুক। কোনো রাজনৈতিক দল যেন এদের ছাঁচে ফেলবার চেষ্টা না করে। আমি , হ্যাঁ, ঘোষিতভাবে স্বতঃস্ফুর্ততায় বিশ্বাস রাখলাম।

    চন্দন সেনের প্রতি আমার গভীর প্রণয় আছে, এমন অপবাদ আমাকে যারা চেনে কেউ দেবে না। কিন্তু সেদিন চন্দন সেনের একটা কথা আমার খুব ভালো লেগে গেল, সত্যি, সময় কী অদ্ভুত ! যে, আমরা বুড়োরা যদি এই ছেলেমেয়েদের সামনে -পেছনে ব্যারিকেড করে না দাঁড়াই, তাহলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।

    আমাদের দরকার একজন জাঁ পল সার্ত্রর। পারীর রাজপথে যিনি নিষিদ্ধ সোস্যালিস্ট পত্রিকা বিলি করে বেড়াবেন। রেনল্ট কারখানার গেটে হাতে মাইক নিয়ে ব্ক্তৃতা দেবেন।
    --
    আবার সেই পেসিমিস্ট মোডে ফিরে যাই। পেসিমিস্ট বলেই এই মুহূর্তের ছোট ছোট জয়গুলো আমাকে এখন আনন্দ দেয় বেশ। অনেক বড় বড় পরাজয়ের পাশে এই ছোট জয়গুলোও আছে-নবারুণ বলেছিলেন। এই আন্দোলন সফল যদি নাও হয়, তবু সে মরুপথে তার ধারা হারাবে না। ফল্গুনদী হয়ে সে বেঁচে থাকবে কারো কারো মনে। ছাইচাপা হয়ে থাকবে আগুন। তারপর আবার একদিন দপ করে সে জ্বলে উঠবে কখন, কোথায়, রাষ্ট্রের সে কথা জানতে ঢের বাকি আছে এখনো। আমার পরিচিত এক ডাক্তার, আমার থেকে সিনিয়র অনেকই। তাঁকে দক্ষিণপন্থী বলে জানতাম। হোককলরব শুরু হওয়ার পর থেকে ফেসবুকের পোস্টে পোস্টে তাঁর সমর্থন যেন উপচে পড়তে থাকল। স্মৃতিআক্রান্ত তিনি মনে করলেন তাঁর ছাত্রবেলার কথা। এ বি জে ডি এফ আন্দোলনে তাঁর গলা মেলানোর কথা। আজ অনেকদিন বাদে সেই প্রথম মিছিল প্রথম প্রেমিকার সিপিয়া টোনে রাঙানো ছবির মত ফিরে এসেছে তাঁর কাছে। এই ছেলেমেয়েরাও এই মিছিলের কথা মনে রাখবে হয়তো আজীবন, পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন। নন্দীগ্রামের মিছিল যেমন একটু হলেও বদলে দিয়েছিল আমাদের অনেককেই। ফুলেশ্বরে ভিখারী পাসোয়ানের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর লিবারেশনের ডাকে আমার সেই প্রথম মিছিল -আজো মনের মধ্যে টাটকা। তারপরে তো কত মিছিলে হাঁটলাম, সব কি মনে পড়ে ! মনে থেকে যায় শুধু আইসার দিল্লী র্যা লির সময় চন্দ্রশেখরের হাসিমুখ। তার কিছুদিন পরেই চন্দ্রশেখর খুন হবেন সিওয়ানে।

    ----

    শেষ করি তাহলে আবার একটু শঙ্খ ঘোষ দিয়ে? ( ওঃ, শঙ্খবাবু, এত যে ধার জমিয়ে তুলছেন, শুধবো কবে!)

    আমাদের ইতিহাস নেই
    অথবা এমনই ইতিহাস
    আমাদের চোখমুখ ঢাকা
    আমরা ভিখারী বারোমাস
    পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে
    পৃথিবী হয়তো গেছে মরে
    আমাদের কথা কে বা জানে
    আমরা ফিরেছি দোরে-দোরে।
    কিছুই কোথাও যদি নেই
    তবু তো কজন আছি বাকি
    আয় আরো হাতে হাত রেখে
    আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।
    (আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি)

    প্রকাশঃ 26 September 2014 02:55:26 IST #

    Name: sayantani
    Date:19 Sep 2014 -- 12:44 AM

    বেশ ক'দিন ধরেই ছেলেমেয়েগুলো অরবিন্দ ভবন এর সামনে চাতাল এ বসে গান গাইছিল, বক্তৃতা করছিল, নিজেদের মধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা করছিল- কিন্তু কোনো মারামারি নজর এ পড়ে নি l কাল ও ওখান দিয়ে এলাম, তখনও e .c meeting শেষ হয়েনি, ছেলেমেয়েগুলো অপেক্ষা করছিল জানার জন্য যে মিটিং এ কী সিদ্ধান্ত হয় l ওদের দাবি ছিল খুবই সাধারণ, যে ঘটনাটি ২৮ এ ক্যাম্পাস এ ওদের ই এক সহপাঠীর সাথে ঘটেছে তার একটা নিরপেক্ষ তদন্ত, এবং আগের তদন্ত কমিটি বাতিল। কিন্তু তখন বোধয় ওরা জানত না, কালকের রাত টা কতোটা বিভীষিকা নিয়ে ওদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে চলেছে। সত্যি বলতে কি, আমরা কেউই ভাবতে পারিনি ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতটা কী ভয়াবহ হতে চলেছে। তখন রাত সাড়ে ৯টা হবে, হঠাত এক বন্ধুর ফোন, এখনি যেতে হবে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি, সেখানে স্টুডেন্টরা হয়ত আক্রান্ত হতে পারে আজ রাতে, কিছু পার্টির গুন্ডার হাতে ।... কী সাংঘাতিক! ওখানে যে ওরা নিরস্ত্র, আর এত রাতে সাহায্য পাব কারুর? যে সমস্ত অধ্যাপক ওদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তারা প্রায় সকালেই দেশ এর বাইরে।.. কিন্তু ওদিকে ছেলেমেয়েগুলো তো কিছুই জানবে না, অতর্কিতে শ্বাপদের আক্রমণে বিপর্যস্ত হব়ে!! চেনা মুখগুলো মনে পড়ে গেল, আমার প্রাক্তন ছাত্র, আমার তুত ভাই, বন্ধুর বোন, মুখ চেনা ডিপার্টমেন্ট এর সেই মেয়েটি।... ওদেরই ফোন করলাম, কিছু ভেবে না পেয়ে। ওপার থেকে অপার কনফিডেন্স এর সাথে উত্তর এলো, "জানি তো, এখানে ওই পার্টির গুন্ডারা অনেকক্ষণ থেকে ঘুরছে, মিডিয়া আছে বলে কিছু করতে পারছেনা। চিন্তা কোর না, আমরা ঠিক আছি!পুলিশ ও আছে! এখানে ঘেরাও চলছে, আমরা কথা বলতে চাই authority র সঙ্গে "l কিন্তু নিশ্চিন্ত ঠিক হতে পারলাম না l বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম, অনেকেই মিডিয়া ইত্যাদির দ্বারস্থ হতে বললেন, সে চেষ্টাও করা গেল... যদিও অনেকেই ব্যাপারটা গুজব কিনা সেই নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতেও ছাড়লেন না l ইতিমধ্যে শুনলাম juta, v. c র সাথে কথা বলছে, আর ছেলেমেয়েরা সে রাতের মত v . c র আশ্বাস পেলে ঘেরাও তুলে নিতে রাজি। আশা হলো যে এবার হয়ত কিছু সমাধান হবে... অন্তত রাত টুকু তো কাটুক। শোনা গেল আজ রাতে হয়ত ঝামেলা হবে না, যা হবার কাল. একটু আস্বস্ত হলাম, তবুও কেন জানি ঠিক বিশ্বাস হলো না. রাত তখন ২.১৫. আমাদের সবার আশংকা কে সত্যি প্রমান করে একের পর এক আপডেট আসতে থাকলো facebook এ.... করুণ আবেদন, কেউ কিছু করুন, ওরা V .C কে বের করে নিয়ে গেল, এবার আক্রমণ করবে। বলতে বলতেই আলো বন্ধ করে ঝাপিয়ে পড়ল দুর্বৃত্তর দল l বার বার আবেদন আসতে লাগলো, হেল্প , মেয়েদের মারছে ছেলেরা, মলেস্ট করছে! এরই মধ্যে এক ছাত্রের মেসেজ " জোর করে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ "! দেশ বিদেশ থেকে বন্ধু, ছাত্র দের মেসেজ কী খবর, কী হলো? নতুন কিছু জানলে? তুমি কোথায়? ঠিক আছো তো?? বিশ্বাস করুন এরকম হেল্পলেস কখনও মনে হয়নি নিজেকে, চারদিকে আর্তনাদ আর আমরা কেউ কিছু করতে পারছি না, অপেক্ষা করছি কখন সকাল হবে.....আর এর মধ্যে আহত, এবং অপসৃত দের আর্তনাদ গুমরে মরছে facebook এর দেয়াল এ দেয়ালে।..

    সকাল হলো, গেলাম ইউনিভার্সিটি চত্বরে l .. বেশি দেরী হযে গেল না তো? একটি ছেলেকে কাল ventilation এ দেওয়া হযেছিল। কেমন আছে সে? আর আমার যে ছাত্রকে কাল আহত অবস্থায় পুলিশ ভ্যান এ তুলল তার কী হলো?? বন্ধুর বোন, মেয়েটা বড্ড ছোটো যে... পৌঁছে গেলাম ভাবতে ভাবতে l দেখলাম যেন রণক্ষেত্র J . U চত্বর। কাল কী ঝড় বযে গেছে বোঝা যাচ্ছে, কিছু ছেলে মেয়ে আছে, কেউ কেঁদে ফেলছে বলতে গিয়ে, কেউ চোয়াল শক্ত করে বলছে, কাল ওরা আমার জামার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল l আমার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, ভাবি, এদের মত মনের জোর আর শিরদাড়া কি পাব আমরা? কখনো???...প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।
    ওদের মুখেই খবর পেলাম বিকেলে মহামিছিল, অরবিন্দ ভবন থেকে গোলপার্ক অবধি। সোশ্যাল মিডিয়া র কল্যানে, 'গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটী গেল ক্রমে।.' বিকেল এর মধ্যে অনেকেই জানালেন যে তারা মিছিল এ যোগ দেবেন। বিকেলে গিয়ে দেখি সত্যি ই অনেক লোক. কাল রাত থেকে পুলিশ এর লক আপ এ থাকা পরিচিত প্রেসিডেন্সি র ছাত্র থেকে আমার বিভাগ এর ছাত্র ও, স্কুল এর বন্ধু থেকে বন্ধুর বান্ধবী।সেই মেয়েটিও ছিল কাল রাতে যার পা মাড়িয়ে দিয়েছে বুট পরা কিছু পা... পা এ ক্রেপ ব্যাণ্ডেজ বেধেই সে হাটবে! আর সেই মেযেও যাকে কাল রাতে ফোন এ না পেয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিল তার বাড়ির লোক! সারা রাত জাগা ক্লান্ত কিছু সারির মাঝে মাঝেই বসে ফুটপাথ এ.. আবার অদম্য জেদ নিয়ে উঠে দাডাছে , গলা মেলছে সহপাঠীদের সঙ্গে। আজ সকালে ই দিল্লি থেকে বা ড়ি ফেরা ছেলেটিও ছুটে এসেছে, বন্ধুরা আক্রান্ত, আক্রান্ত তার দ্বিতীয় বাড়ি, তার কি বিশ্রাম এর সময় আছে! পুঞ্জিভূত রাগ উগরে দিছে সে, কি করে ওরা এরকম করলো!!!দেখে ভালো লাগলো।.. যে ছেলেগুলো তখন হাসপাতালে তাদের এত জন শুভাকাংখী!! তারপর যাত্রা শুরু হলো, স্লোগানে , ব্যানার এ , ছাত্রদের প্রতিজ্ঞা বদ্ধ মুষ্টি তে , গর্জে ওঠা আবেগ এ রাস্তা মুখরিত। রাস্তার পাশে পুলিশ দেখলেই তারা আরো উল্লাসিত হয়ে স্লোগান এর মাত্রা দিছে বাড়িয়ে। সকল যে সব চোখে জল ছিল এই মিছিলের সাফল্যে সেসব চোখে আবার আশা,দেখলে কে বলবে, এদের মধ্যে অনেকেই ৩/৪ দিন বাড়ি যায়নি, ঘুমিয়েছে ক্যাম্পাস এর সিডি তে!! চারপাশের যানবাহন গুলো থেকে জোড়া জোড়া চোখ এদের দেখছে, কেউ মুগ্ধ, কেউ বিস্মিত। অনেকদিন পর এরকম স্ভ্তস্ফুর্ত একটা মিছিল এ হেটে আমার ও বেশ লাগছিল । প্রায় হাজার ৩/৪ লোক পা মিলিয়েছিল তাই, মিছিল এর একপ্রান্ত যখন ঢাকুরিয়া এ, তার শেষ অংশ তখন ও যাদবপুর থানা তেই... এভাবেই পুরো পথ টা গান স্লোগান এ মাতিয়ে যাদবপুর এর ছেলেমেয়েরা এসে পৌছালো তাদের ইউনিভার্সিটি তে... আজকের মত যাত্রা শেষ, কাল থেকে আবার নতুন লড়াই, নতুন উদ্যম এ. ফিনিক্স পাখির মত এই আন্দোলন আবার জেগে উঠেছে, এবার দেখা যাক অথরিটি কতদিন বুঝতে পারে যে আন্দোলন কে নির্মূল করতে গিয়ে তারা আসলে এই আন্দোলন কে নতুন জীবনীশক্তি দিয়ে দিয়েছে! আজকের যে আবেগ সেটা কালকে কতটা বাস্তাব্য়িত হবে তা জানা নেই বটে, কিন্তু, আজকের এই মিছিল যেন গত ক'দিনের সমস্ত অবজ্ঞা ও অপমান এর জবাব। কাল যারা অসহায় ভাবে অন্যের কাছে সাহায্য চাইছিল আজ তারা নিজেদের শক্তির পরিচয় পেয়েছে।.. কাল যারা ভয় দেখাচ্ছিল আজ ভয় পাবার পালা তাদের।....কতৃপক্ষ তৈরী তো এদের মোকাবিলার জন্য?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৯৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | 111.59.25.100 (*) | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৭72104
  • জয়ললিতার গ্রেপ্তারের ফলে আজ ব্যাঙ্গালোরের নানান জায়গায় ১৪৪ ধারা জারী হয়েছে। গতকাল রাতে, আজকে যাদবপুরকান্ডের বিরোধীতায় মিছিলের সংগঠক শুভম রথ ফোনে জানালে যে আজকের মিছিল বাতিল করা হলো।
  • মনে হচ্ছে | 165.136.80.163 (*) | ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৩২72105
  • এটাকে আবার ওপরে তোলার সময় হয়েছে। অনেকেরই অনেক কিছু মনে পড়ছে না, অনেক দিন হয়ে গেল তো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন