এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ইন্দুবালা ভাতের হোটেল-৬

    Kallol Lahiri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৮ জুলাই ২০১৯ | ৪১৩৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল

    কোলাপোতা গ্রামটার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কপোতাক্ষ। এছাড়া চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খাল বিল পুকুর। সবুজ জংলা ঝোপের পাশে সন্ধ্যামণি ফুল। হেলেঞ্চার লতা। উঠোনের কোন ঘেঁষে কাঠ চাঁপা। পঞ্চমুখী জবা। সদরের মুখটায় শিউলি। সাদা আঁচলের মতো পড়ে থাকে ফুলগুলো। উঠোনের মাঝখানে বড় তুলসী মঞ্চ। অষ্টপ্রহরের সময় ঘুরে ঘুরে কীর্তন হয় সেখানে। বাড়ির পেছনে আছে নারকেল গাছ বেয়ে ওঠা চুইঝাল। রান্নায় এতোটুকু ঝালের দরকার হলে মা টুক করে গিয়ে ছোট্ট ডাঁটি পেড়ে নিয়ে আসে। একটু ছেঁচে ফেলে দেয় ঝোলের মধ্যে। নারকেল গাছটা সোজা রেখে এগিয়ে গেলে পুঁইয়ের মাচা। তার ডগা গুলো বর্ষার জল পেয়ে যেন আকাশের দিকে মুখ করে আছে আরও বৃষ্টির আকাঙ্খায়। পুঁই মাচাকে বাঁদিকে রেখে কয়েক পা হাঁটলেই কলকাতা থেকে আনা দাদুর ডালিম গাছ। তার পাশেই ঠাম্মার নিজের হাতে আদর করে বসানো গন্ধরাজ লেবু। কালনার আতা। এইরকম সাজানো গোছানো বাড়ি এই গ্রামের অনেকেরই আছে। অবস্থা সম্পন্ন গেরস্থ হিন্দু বাড়ির ঘর দোর সাজানো এক রকমের। আবার অভিজাত মুসলিম বাড়ির অন্দরের সাজ ভিন্ন ধরনের। ইন্দুবালার মনে আছে মনিরুলের বাড়ির পেছন দিকে একটা বড় পুকুর ছিল। তার পেছনে বাঁশ ঝাড়। তারপর আদিগন্ত ধান ক্ষেত। গ্রামের অনেকের বাড়িতেই বড় করে কাটানো পুকুর কিম্বা ডোবা ছিল। আর সেগুলিতে ছিল বিস্তর মাছ। গেরস্থালির জলটুকু ওই পুকুর বা ডোবা গুলোই মিটিয়ে দিত। তখন আর টিউবওয়েল কোথায়? সেই হাতে চাপা কল আসতে অনেক দেরী হয়েছে। ইন্দুবালার তখন সবে বিয়ের কথা চলছে।

    গ্রামে প্রায় সবার বাড়িতে থাকলেও ইন্দুবালাদের বাড়িতে কোন পুকুর বা ডোবা ছিল না। কেন ছিল না সেটা নিয়ে একটা গল্প সে ছোট্ট থেকে শুনে আসছে। কিন্তু সেই গল্পে প্রবেশ করার আগে এই মুহূর্তে ইন্দুবালা কি করছে সেটা জেনে নেওয়াটা আখ্যানের ক্ষেত্রে জরুরী। বর্ষা এবার দেরীতে শুধু নয় আষাঢ় পার করেও দেখা দিচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে সবার নাজেহাল দশা যখন মধ্য সত্তরের ইন্দুবালার অবস্থা কি হতে পারে তা তিনি যেন নিজেই বুঝে নিতে চাইছিলেন বিকেলের দিকে মেঝের ওপর শুয়ে। কিছুক্ষণ আগে শেষ খদ্দের ভাত খেয়ে চলে গেছে। যা বাকি ছিল হাড়ি চেঁচে পুছে খাওয়ানো হয়েছে বাজারের ভিখারিদের। এমনকি কালু, ভুলু, নেলু বাজারের যে হরেক নামের বিড়াল এবং কুকুর আছে তাদেরও পাতের উচ্ছ্বিষ্টাংশ এক জায়গায় জড়ো করে ধনঞ্জয় খাওয়ায়। লছমী নিজে হাতে শুরু করেছিল। সেই প্রথা আজও দিব্য বহাল আছে। সবই ঠিক ছিল। এর সাথে যদি বাড়ির সঙ্গে একটা পুকুর থাকতো। তাহলে বেচারা ধনঞ্জয়কে কর্পোরেশানের ছিরছিরে জল পড়া কলে ওই অতক্ষণ ধরে বাসন মাজতে হতো না। আজ অনেক ভোরে প্রচন্ড গরমে ঘুম ভাঙার পরেই কেমন যেন বোসদের পুকুরটার কথা মনে পড়ছে তাঁর। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষকে। এমনকি শাশুড়ি যে পালা পার্বণে গঙ্গার স্নানে নিয়ে যেত তাও। সক্কাল হতে না হতে আজ নিজে থেকেই কেমন যেন ডুব দিয়ে স্নান করার বাসনা মনের মধ্যে জাগছিল ইন্দুবালার। কত দিন গভীর গহন জলে ডুব দেননি তিনি। এই সময় তো কপোতাক্ষের একূল-ওকূল ভাসে। গভীর রাতে জলের আওয়াজ যেন দোর পর্যন্ত এসে কলকল করে কত কথা শুনিয়ে যায়। বোসদের পুকুরের জল আরও ঘন সবুজ রঙ নিয়ে ভারী হয়ে ওঠে। পাশের ঝোপ থেকে অনবরত ডেকে চলে ঝিল্লি। ভিজে গায়ে বাড়ি ফিরতে স্যাঁত স্যাঁত করে ওঠে গা। ইন্দুবালার হঠাৎ আজ কেমন যেন ইচ্ছে হল অমন বৃষ্টিভেজা ঝোপে ঢাকা মাটির রাস্তা দিয়ে স্নান করে ফিরতে। কিন্তু সে পথ কোথায় পাবেন তিনি ছেনু মিত্তির লেনে? আজ অনেক সকালে ঘুম ভেঙে তাই নীচে চলে এসেছিলেন।

    ধনঞ্জয়...ও ধনঞ্জয়...। ওঠ না বাবা। আমাকে একটু গঙ্গা স্নান করিয়ে এনে দে।

    ধনঞ্জয় চোখ কচলায়। ধড়মড় করে উঠে বসে। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে মা? রোজ রাতে ঘিষঘিষে গা গরম থাকে তোমার। ডাক্তারের ওষুধ খাচ্ছো। তার ওপর তোমাকে নিয়ে গঙ্গা স্নানে গিয়ে আমার নিজের গঙ্গাপ্রাপ্তি হোক তাই না? তোমার ছেলেরা এসে আমাকে দুরমুশ করুক। হবেক নাই।

    ধনঞ্জয় বেশ গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে। যত বয়স বাড়ছে, চুল যত পাকা হচ্ছে তত মুখের বুলি ফুটছে। রেগে যান ইন্দুবালা। যেতে হবে না। তোকে আজ কোন কাজ করতে হবে না ধনা। আমি নিজেই আজ সব কিছু করবো। ধনঞ্জয় বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে বলে করো। ইন্দুবালা সত্যি সত্যি বাসি কাপড় ছেড়ে বাজারের থলে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অনেক দিন পরে তিনি নিজে বাজারে যাচ্ছেন। একবার নিজে মনে করে দেখে নেন ব্লাউজের ফাঁকে টাকার ব্যাগটা নিয়েছেন কিনা। অনেক সকালে মেসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিংশুক হীনযান ও মহাযানের তার্কিক পয়েন্ট গুলো মিলিয়ে দেখছিল। বৌদ্ধ শ্রমণদের মতো ‘উষাকালীন মেঘমালা’ দেখার জন্য সে বেশ কয়েকদিন ট্রাই করেছে। কিন্তু মোবাইলে এলার্ম বেজে গেছে তার মতো করে। আর কিংশুক নিজে পাশ ফিরে শুয়ে অকাতরে ঘুমিয়ে ভাত খাওয়ার সময়ে উঠেছে। আজ কি কুক্ষণে যে এতোটা গরম পড়েছে আর ঘুম ভেঙেছে সে বুঝতে পারছিল না। যাইহোক উঠেই যখন পড়েছে তখন সে ইতিহাসের চ্যাপ্টার গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলো। সামনেই বিএ ফাইনাল। নালন্দা থেকে হস্তিনাপুর হয়ে তিব্বতে যাওয়ার আগে সে দেখলো ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের দরজা খুলে স্বয়ং ইন্দুবালা বেরিয়ে পড়লেন। হীনযান মহাযান মধ্যপথে রইলো। কিংশুক চিৎকার করলো, ও দিদা? এতো সকালে কোথায় যাচ্ছো? ইন্দুবালা হাতের ব্যাগখানা উঁচু করে দেখালেন। কিংশুক হুড়মুড় করে নেমে এলো সিঁড়ি দিয়ে জামার বোতাম আটকাতে আটকাতে। চলো আমিও যাবো। ইন্দুবালা অবাক হয়ে তাকান কিংশুকের দিকে। তুই যাবি কেন? ভোররাত থেকে তো দেখলাম পড়াশুনো করছিস। ঘরের আলো জ্বলছিল যে। কিংশুক বলে ধুর পড়ছিলাম কোথায়? বেজায় গরমে ঘুম আসে নাকি? তারচেয়ে বরং এটাই ভালো হলো তোমার সাথে বাজার করতে যাবো। দাও দেখিনি ব্যাগ দুটো। ইন্দুবালার হাত থেকে কিংশুক ব্যাগ দুটো নিয়ে নেয়। ছেলেটাকে ভালো লাগে ইন্দুবালার। সময় নেই অসময় নেই মেসের বারান্দা থেকে দিদা বলে হাঁক দেয়। ওদের ঘরটা ইন্দুবালার ঘরের ঠিক সামনে। রাস্তার উলটো দিকে। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুম না এলে ইন্দুবালা সেলাই ফোড়াই করেন। কিংশুক চিৎকার করে ওপারের জানলা দিয়ে। এবার তো ঘুমোও। তোমার চোখ খারাপ হলে আমাদের উপোষ করে থাকতে হবে। তোমার ধনার যা রান্নার হাত। নীচ থেকে ধনঞ্জয় কাঁইমাই করে শাপশাপান্তর করে। তার যত অভিযোগ ইন্দুবালাকে। তারজন্যেই ওই গাল টিপলে দুধ বেরোনো ছেলে গুলো তাকে হতচ্ছেদ্দা করে। যদিও খেতে না এলে ধনঞ্জয়ই ওদের ডেকে নিয়ে আসে। আদর করে বসিয়ে খাওয়ায়। শরীর খারাপ হলে সাতবার গিয়ে খবর নিয়ে আসে। ছেলেরাও ভালোবাসে তাকে খুব। জর্দাটা, বিড়িটা হয়ে যায় ওই ছেলেগুলোর কল্যাণেই।

    আজ কি বাজার করবে দিদা?

    কেন? হোটলের বোর্ড দেখিসনি?

    দেখেছি তো। ভাত, সোনা মুগের ডাল, মোচার ঘন্ট, মাছ...। ওই দেখো...কোন মাছ লেখোনি কিন্তু।

    ইন্দুবালার সামনে দিয়ে তখন মাথা ভর্তি কলমি শাক নিয়ে যাচ্ছে একটা বউ। ইন্দুবালা থমকে দাঁড়ান। ও বউ শুনছো...। বউটা ঘুরে তাকায়। কলমি শাক কোথায় পেলে? তোমার বাড়ির? বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছো? বউটা হাসে। মেয়ের বাড়ি গেছিলাম...। আমার তো আর পুকুর নেই...। ওর শাউড়ির বড় একটা পুকুর ছেল। তা সেই পুকুরের...। ইন্দুবালা বলে ছিল কেন বলছো? এখন আর নেই? বউটার মাথা থেকে কিংশুক শাকের বোঝাটা নামাতে সাহায্য করে। হাঁপ ছাড়ে বউটা। ডোবা হয়ে গেছে মা। এবার হয়তো ফ্ল্যালাট উঠবে। তা মেয়ে বললো নিয়ে যাও। যে কদিন আছে। ইন্দুবালা কলমি শাকের আঁটি তোলেন। সবুজ কচি মাথা গুলো সবাই যেন তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকের কাছে নিয়ে এসে শোকেন। কিংশুক জানতে চায় এইভাবে বুঝি শাক চেনে? গন্ধ শুকে? হাসে বউটা। না গো না। মা আমার পুকুর চিনছে গো...। ইন্দুবালার সামনে ভেসে ওঠে বর্ষার জলে থইথই উঠোন। ভাই বোনে মিলে নাচানাচি। আমাদের কেন পুকুর নেই ঠাম্মা? ততক্ষণে ঠাম্মার কলমি শাক বাছা শেষ। বারণ ছিল যে বংশে। কেন বারণ তার বিস্তারিত গল্পে এবার আসা যাক। কারণ ইন্দুবালার বাজার করতে সময় লাগে ঢের।

    ইন্দুবালার দাদুর দাদু যখন কলকাতার পাট চুকিয়ে খুলনার কোলাপোতায় পিতৃস্বত্ত্ব রক্ষার জন্য থাকতে শুরু করলেন তখন বর্ষাকাল। চারিদিকে উপছাপা হয়ে আছে নদীগুলো। খাল গুলো। বিল গুলো। বাড়ির মধ্যে চারিদিকে থই থই করছে জল। কোনটা পুকুর আর কোনটা উঠোন তা ঠাহর করা বেশ মুশকিল হচ্ছে। হামেশাই শোনা যাচ্ছে গ্রামে সাপে কেটে মৃত্যুর খবর। এদিকে যাকে বিয়ে করে এনেছে বিশ্বম্ভর সে এক্কেবারে শহুরে মেয়ে। খাস নবদ্বীপের। সেই মেয়ে এই অজ গাঁয়ের চারিদিকে জল, সাপে কাটা এইসব দেখে প্রথম দিনই তো পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেছে। তার সৎ মা যে তার সাথে এই অবিচার করবে কোনদিন সে ভাবতে পারেনি। ভালো পাত্রের কি আকাল পড়েছিল জ্যোৎস্নাময়ীর জন্যে? কত কত সম্বন্ধ এসেছিল বর্ধমান, রাজশাহী, হাতিমপুর থেকে। ময়মনসিঙ্ঘের এক জমিদারও এসেছিলেন। বাবা বুড়োর সাথে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে সেই সম্বন্ধও নাকচ হল। শেষকালে মেয়েকে গৌরীদান করবেন নাকি? যারা আসে তারা নাকচ হয়। এদিকে সৎমা রাগে শুধু ফুলে ফুলে ওঠে। তারই বয়সী এক মেয়ে বাড়িতে থাকবে ঘাড়ের ওপর? এখন চুপ করে আছে, পরে এই মেয়ে যে ফোঁস করবে না তা কে বলতে পারে? জ্যোৎস্নাময়ীরও বয়ে গিয়েছিল সেই মেয়েটিকে মা বলতে। দুজনের মুখ দেখা দেখি বন্ধ ছিল। জ্যোৎস্নাময়ী থাকতো দোতলায় তার মায়ের দিকে। আর নতুন মা তার নতুন দাস-দাসী নিয়ে এক তলায়। ওপর নীচ করায় বাবার অসুবিধে হতো। হাঁপের টান ধরতো। হাঁপাতে হাঁপাতে জ্যোৎস্নাময়ীর বাবা তার মেয়ের বয়সী নতুন বউকে বোঝাতো ওই তো বয়েস মেয়েটার। ওকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিই কী করে? আর দিলেও সুপাত্রের হাতে দিতে হবে তো? বুড়ো স্বামীর এই দ্বিচারিতা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল নতুন মাকে। মুখঝামটা দিতো যখন তখন। মেয়েকে বিয়ে দেবেন না দোজবুড়োর সাথে অথচ নিজে বিয়ে করে এনেছেন মেয়ের বয়সী একটা মানুষকে। বাড়িতে যখন অশান্তি চরমে ঠিক সেই সময়ে শহরে কলেরার জন্য ভলেন্টিয়ার হয়ে এলো একদল যুবক কলকাতা থেকে। তারা গান্ধীজীর স্বদেশী ভাবনায় অনুপ্রাণিত। বিবেকানন্দের সেবা তাদের বুকে। রবীন্দ্রগানের কলি তাদের লব্জ। একদল উঠতি যুবকদের মধ্যে যে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার তাকে বেশ পছন্দ হয়ে গেল জ্যোৎস্নাময়ীর বাবার। বেশ গোল গোল চোখ। চওড়া ছাতি। বুকের পাটা আছে বলেই না কলেরা রোগী দেখতে আসে। তিন কুলে একমাত্র খুলনায় পিতা ছাড়া আর কেউ নেই। ঝাড়া ঝাপটা হাত পা। কথায় বার্তায় নম্র, শান্ত, সদালাপী। সর্বোপরি কর্মোঠ। এমন একটা ছেলেকেই যেন মনে মনে খুঁজছিলেন তিনি। দেরী করলেন না জ্যোৎস্নাময়ীর বাবা। কথা চললো তাড়াতাড়ি খুলনা আর নবদ্বীপের মধ্যে। পাকা কথা হয়ে গেলে আশ্বাস দিলেন বাবা মেয়েকে। ভয় পাস না মা। এই জামাই আমার সোনার জামাই হবে দেখে নিস। কলকাতায় কত বড় একটা মেসে থাকে। দেখবি তোকে নিয়ে গিয়ে কেমন টেরাম লাইনের পাশের বাড়িতে রাখে।

    জ্যোৎস্নাময়ী কোনদিন টেরাম দেখেনি। শুনেছে দুটো লিকলিকে লাইনের ওপর দিয়ে সেই টেরাম কলকাতা শহরে চক্কর মারে। সাহেব সুবোরা সেই টেরামে ওঠে। যে যার জায়গায় চলে যায়। ঠুং ঠুং করে কাচের চুড়ির মতো আওয়াজ হয় টেরামে। জ্যোৎস্নাময়ী তো সেই টেরাম লাইনের পাশের বাড়িতে থাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইল। এদিকে তার বিয়ে হয়ে গেল বেশ ঘটা করে বোশেখের কোন এক শুভ দিনে। ফুলশয্যার খাটে শুতে এসে জানতে পারল বিশ্বম্ভরের পরিকল্পনা। বিয়ে করে সে আপাতত বউকে রেখে যাচ্ছে বাপের বাড়ি। এই কদিন জ্যোৎস্নাময়ী একটু মানিয়ে গুছিয়ে এখানে থাকুক। কারণ মাত্র কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় যাওয়া মানে খরচ। একেই নতুন বউ তার ওপরে বাড়ি ভাড়া করা, সংসার নতুন করে পাতানো খুবই ঝামেলার হবে। আর তো এক মাসের মধ্যে কলকাতার পাট চুকিয়ে বিশ্বম্ভর চলে যাবে খুলনা। সেখানে তার বাবা মৃত্যু শয্যায়। ছেলেকে পাশে পেলে তিনি খুশি হবেন। ছেলের বউয়ের সেবা পাবেন। এগুলোর সাথে বাড়ির জমি জায়গাও দেখা শোনা করা যাবে। আর ডাক্তারি প্র্যাকটিসটা ঠিক ভাবে চালালে তো আর কথাই নেই। পিল পিল করে লোকজন লাইন দিয়ে দাঁড়াবে দরজার সামনে। যদিও কোন দিন তেমন রোগীর ভিড় হয়নি বিশ্বম্ভরের। তবে স্বদেশী করা এক ডাক্তারকে চিনে নিতে অসুবিধে হয়নি আশেপাশের গাঁয়ের মানুষদের। যতটা না আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ডাক্তারী করতেন বিশ্বম্ভর তার থেকে বেশী সাহায্য হতো গরীব গুর্বো মানুষ গুলোর। কিন্তু সেসব তো আরও পরের কথা। আপাতত তার সামনে যে নতুন বউটি বসে আছে। একবারের অনুরোধেই খুলে ফেলেছে মাথার ঘোমটা। সেই মেয়েটা কি ভাবছে বোঝার চেষ্টা করছে বিশ্বম্ভর। যদিও এই মুহূর্তে মেয়েটির টানা দুটো চোখ ভরে উঠেছে জলে। আর ভরবে নাই বা কেন? খুলনা জায়গাটা কেমন তার আগে ঠিক ধারণা ছিল না জ্যোৎস্নাময়ীর। ততদিনে তো সে স্বপ্নটা দেখে রেখেছে টেরাম লাইনের পাশে বাসার। খোলা ছাদে রান্নাঘর। একটু দূরে কালীঘাটের মায়ের মন্দির। প্রতি অমাবস্যায় মায়ের মুখ দর্শন। পালা পাব্বনে গঙ্গায় স্নান। রথের মেলা। চড়কে জেলে পাড়ার সঙ। মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে জ্যোৎস্নাময়ীর। কাজেই ফুলশয্যায় স্বামীর গায়ের ঘেমো গন্ধের সাথে খাটের রজনীগন্ধা কেমন যেন গুলিয়ে ওঠে। মাঝরাতে দোর খুলে মেয়ে গিয়ে শোয় তার পুতুল ঘরে। নিজের মা থাকলে এমনটি কক্ষোনো করতো না। দিতো অমন ছেলের মুখে নুড়ো জ্বেলে। বিয়ের আগে এক কথা। বিয়ের পরে অন্য? মা মরা মেয়ে বলে তার কোন দাম নেই গো? কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল জ্যোৎস্নাময়ী। ভোর রাতে গা শিরশির করে উঠলে দেখেছিল ওই অতোবড় পুরুষমানুষটা তাকে জড়িয়ে ধরে নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে পুতুল ঘরে। কখন উঠে এসেছে খাট থেকে জানেও না সে। ভোরের আলো এসে পড়েছে বিশ্বম্ভরের মুখে। কি সুন্দর লাগছে। জ্যোৎস্নাময়ীর খুব ইচ্ছে করছিল লোকটাকে ভালোবাসতে। হালকা আলোয় ঠোঁটের ওপর, চোখের পাতায় চুমু খেতে। জ্যোৎস্নাময়ী পারেনি। তখনও মনের মধ্যে কলকাতায় না থাকতে পারার শোক উথালা পাথাল করছিল।

    বিশ্বম্ভরের বাবা মারা গেলেন বিয়ের কিছু কালের মধ্যে। ছেলে শ্রাদ্ধ শান্তি করলো বউকে ছাড়াই। জেদ করে থাকলো জ্যোৎস্নাময়ী নবদ্বীপে। একটা চিঠি পাঠালেই তাকে যেতে হবে নাকি? স্বামী হয়েছে তাহলে কিসের জন্য? নিজে এসে নিয়ে যেতে পারে না? জ্যোৎস্নাময়ী বাড়িতেই তার না দেখা শ্বশুরের জন্য ঘাট করলো। নখ কাটলো বাড়ির মধ্যে পাঁচিল ঘেরা পুকুর ঘাটে বসে। পুরোহিত এসে জল দেওয়ালো শ্বশুরকে। ব্রাহ্মণ খেলো। নিয়মভঙ্গের দিন অশৌচ কাটাতে জলঙ্গীতে গেলো বাড়ির পালকি জ্যোৎস্নাময়ীকে স্নান করাতে। বর্ষার জলঙ্গী তখন ফুলে ফেপে উঠেছে। পালকি শুদ্ধু জ্যোৎস্নাময়ীকে জলে চোবানো হল। এমন শীতল জলে এর আগে কোনদিন সে স্নান করেনি। আর এইভাবে পালকির ঘেরাটোপের মধ্যেও না। তার যেন মনে হল জলঙ্গীর জলরাশির প্রবল চাপে এক অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে পালকিটা। চোখ খোলার চেষ্টা করলো জ্যোৎস্নাময়ী। আর ঠিক তখনি যেন সে দেখতে পেলো বিশ্বম্ভরের শান্ত মুখটা। শিরশির করে ওঠে গা জ্যোৎস্নাময়ীর। এমন শিরশির করেছিল সেই ভোর রাতেও। যখন দুটো শক্ত হাত তাকে পরম মমতায়, ভালোবাসায় জড়িয়ে শুয়ে ছিল পুতুল ঘরে। একটা দেহের ওম যেন আরও একটা দেহে স্পর্শ করছিল। ঘাড়ের কাছে ঘন নিশ্বাসের হলকা লাগছিল যেন জ্যোৎস্নাময়ীর। আর ঠিক সেই সময়ে সারা গা বেয়ে যেন কিসব উঠতে থাকে তার। চিড়বিড় করতে থাকে তারা গোটা গা জুড়ে। কারা যেন আঙুল বোলাচ্ছে তার গায়ে। প্রচন্ড ভয়ে পালকির ভেতরের অন্ধকারে জলের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে যেন তার। চিৎকার কর ওঠে জ্যোৎস্নাময়ী। পালকির বেহারারা বুঝতে পারে পূণ্যস্নান হয়েছে বটে মেয়ের। তারা আবার ডাক ছাড়তে ছাড়তে ঘাট পেরোয়, মাঠ পেরোয়। আর এদিকে দিনের আলোতে জ্যোৎস্নাময়ী দেখে তার পালকির মেঝেতে, কাপড়ের কোচড়ে, শাড়ির আঁচলে জাপটে জড়িয়ে আছে চিংড়ি মাছের ঝাঁক। কোনটা নড়ছে। কোনটা অল্প জলেই পালকির কাঠের মেঝেতে খাবি খাচ্ছে। ভয়টা কেটে যাচ্ছে জ্যোৎস্নাময়ীর। তাহলে এরাই এতোক্ষণ গায়ের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। চিড়বিড় করছিল? কি যেন এক অনাবিল আনন্দে মন ভরে উঠছে তার। কুড়িয়ে বাড়িয়ে আঁচল ভর্তি করছে সে। একটাও চিংড়ি যেন নষ্ট না হয়।

    বাড়ি ফিরে দাসীর হাতে আঁচল ভরা চিংড়ি দিয়ে জ্যোৎস্নাময়ী হুমুক দেয়, ওপরে মায়ের ঘরের আমিষের রান্নাঘরটার দোর খোল। পরিষ্কার কর। আমি রান্না করবো। দাসী যেন আকাশ থেকে পড়ে। বলে কি মেয়েটা। আজ শ্বশুরের তেল ছোঁওয়ানি। বাইরে থেকে বামুনরা এসে বসে আছে। মেয়ে পায়ে তেল ছুঁইয়ে গেছে জলঙ্গীতে ডুব দিতে। ফিরে এসে পাতায় তুলে দেবে ইলিশ মাছ ভাপা। গরম ভাত। মাছের ডিমের বড়া। এই যে এতো রান্না করলো ঠাকুর। বিরক্ত হয় জ্যোৎস্নাময়ী। উনুনটা নিকো দেখি। আমি চট করে কাপড়টা ছেড়ে আসি। দাসীর মুখে আর কথা সরে না। যে মেয়ে খায় না দায় না। বাড়ির কারো সাথে কথাটি বলে না সেই মেয়ে উনুন নিকানোর কথা বলছে কেন? আঁচল ভর্তি চিংড়ি মাছও বা কোথায় পেলো? দাসী সময় নষ্ট করে না। রান্নাঘর পরিষ্কার করে। উনুন ধরিয়ে বসে থাকে। জ্যোৎস্নাময়ী নতুন একটা তাঁতের শাড়ি ভেঙে। আলতা পরে। কপালে সিঁদুর দিয়ে রান্না ঘরে ঢোকে। দাসীর মনে হয় যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা এসে ঢুকলেন রান্নাঘরে। তার যেন গড় হয়ে পেন্নাম করতে ইচ্ছে হয়।

    এই রান্নাঘর ব্যবহার হয় না মোটেই। জ্যোৎস্নাময়ীর মায়ের রান্নাঘর। মা মারা যাবার পর এই রান্নাঘরের পাট উঠছে বাড়িতে নতুন মা আসার পর থেকে। তাও সেটা বছর তিন তো হলোই। তাই জিনিসপত্র বাড়ন্ত থাকে। এই অবেলায় কোথায় বা আর কিছু খুঁজতে যাবে সে? চট করে তাকিয়ে নেয় চারপাশটা। কি আছে আর কি নেই এর হিসেবটা পরিষ্কার হয়ে যায় নিজের কাছে। দাসী সেই কচি চিংড়ি গুলোতে ততক্ষণে মাখিয়ে রেখেছে নুন, হলুদ। জ্যোৎস্নাময়ী লোহার কড়াই উনুনের আঁচে বসায়। অল্প তেলে চিংড়ি গুলোকে ছেড়ে দেয়। এপিঠ ওপিঠ ভাজা হয়ে গেলে কাঁচা লঙ্কা আর কালো জিরের ফোড়ন দিয়ে জল ঢালে। জলঙ্গীর কচি চিংড়ির গা থেকে বেরোতে থাকে মিষ্টি জলের রস। গোটা বাড়ি কালো জিরের ফোড়ন, কাঁচা লঙ্কা আর হলুদের সুবাসে ভরে যায়। জ্যোৎস্নাময়ীর বাবা ব্রাহ্মণ বিদায় দিয়ে সবে ছোট পক্ষের রান্নাঘরের পিড়েতে বসতে যাচ্ছিলেন দুপুরের আহার সারতে। কিন্তু তা আর হল না। পঞ্চ দেবতাকে স্মরণ করে প্রথম গ্রাস মুখে নেওয়ার আগেই উঠে এলেন দোতলায় অনেক দিনের বন্ধ রান্নাঘরের সামনে। জ্যোৎস্নাময়ী আন্দাজ করেছিল এমনটাই হবে। আসন পেতে জলের গ্লাস নিয়ে অপেক্ষা করছিল। সেদিন তার বাবা, মায়ের রান্নাঘরে কতদিন পরে খেতে বসলো। মনে পড়লো বড় বউয়ের কথা। তার হাতের চিংড়ির হলুদ গালা ঝোলের সুবাস। হাপুস হুপুস করে বাবা ভাত খায়। ঝোলের কাঁচা লঙ্কা ডলে। চোখ দিয়ে জল পড়ে তাঁর। সেটা বড় বউয়ের স্মৃতিতে নাকি অনেক দিন পরে পুরনো রান্না খাওয়ার আনন্দে বোঝা যায় না ঠিক। খাওয়া শেষ হলে পান এগিয়ে দেয় জ্যোৎস্নাময়ী। বাবা মেয়েকে আশীর্বাদ করেন। কি চাস মা। একবার মুখ ফুটে বল। সারা বাড়ি কানাকানি হয়। এই বুঝি মেয়ে তার নিজের নামে সব সম্পত্তি চেয়ে নিল। খাওয়া ছেড়ে অন্দরের দোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকে ছোট মা ভয়ে ভয়ে। জ্যোৎস্নাময়ী অস্ফুটে তার বাবাকে বলে, একবার চিঠি লিখুন। তিনি যেন আমাকে এসে নিয়ে যান। কথা গুলো বলেই জ্যোৎস্নাময়ী লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় ঝোলের চিংড়ি গুলোর মতোই। মেয়ে বাড়ি লিখিয়ে নিলো না। জমি জমা সম্পত্তি কিচ্ছুটা না। এমনকি সখের পুতুল গুলোও না। শুধু গরুর গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে এলো মায়ের রান্নাঘর। ডেয়ো, ঢাকনা, খুন্তি। আর সেই আমিষের বড় লোহার কড়াইটা। বিশ্বম্ভর বাধা দেয়নি। সে জানতো নতুন সংসার করতে তার সবটাই লাগবে। কোন কিছুই ফেলা যাবে না।

    কলমী শাক কিন্তু বোর্ডে লেখা ছিল না দিদা। অনেক গুলো কলমীশাকের আঁটি বাজারের ব্যাগে ভর্তি হবার পর কিংশুক বলে। লেখা ছিল না তো ছিল না। খাবি। সঙ্গে একটু করে না হয় কাসুন্দি দেবো। ইন্দুবালা এগিয়ে যান তড়বড় করে মাছের বাজারটার দিকে। এই যে ধনা...ওই চিংড়ি গুলো কি তোর বিক্রি হয়ে গেছে? ধনা অনেক দিন পরে দেখলো ইন্দুবালাকে। সেকি গো দিদা? তুমি আজ বাজারে? ধনঞ্জয়দার কি হলো আজ? ইন্দুবালা চিংড়ি গুলো হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বলেন কিচ্ছু হয়নি তার। কি আবার হবে? কেন আমি এসেছি ভালো লাগছে না তোর? ধনা চা আনতে পাঠায়। নিয়ে যাও দিদা সবটা। ভেড়ির নয়কো। ইন্দুবালা চেনেন। কোনটা ভেড়ির চিংড়ি। আর কোনটা নদীর। সক্কাল বেলা একটা বড় গামছা নিয়ে ভাই বোনে চুপি চুপি চলে যেতেন কপোতাক্ষের ঘাটে। ততক্ষণে জড়ো হয়েছে গ্রামের অন্যসব ছেলে মেয়েরাও। ওদিকে আকাশ আসছে কালো হয়ে। ফুঁসে ফুঁসে উঠছে সেই কবেকার দাঁড়াও পথিকবরের নদী। গামছা জলে ফেললেই উঠছে ঝাঁকের চিংড়ি গুলো। হাতে করে একটা চিংড়ি তুলে মুখের সামনে ধরেন কিংশুকের ইন্দুবালা। কেমন এখনও নড়ছে দেখেছিস? কিংশুক দুপা পিছিয়ে আসে। এমনিতে সে বড় পেটুক। খাবার পেলে সে আর কিছু চায় না। কিন্তু এইসব শাক সবজী মাছ সে বরাবর দেখে এসেছে মরা। জ্যান্ত জিনিস যে এমন হতে পারে সেই অভিজ্ঞতা তার এই ছাত্র জীবনের বাইরে। এই ছোট চিংড়ি দিয়ে বুঝি মালাইকারী হবে? ইন্দুবালা বলে তোর মন্ডু। কেমন হলুদ গালা ঝোল করে দেবো দেখিস। কিংশুক মাথা নাড়ে। ঠিক হচ্ছে না কিন্তু দিদা। বোর্ডে এইসবের কথা লেখা ছিল না মোটেই। ইন্দুবালা বলে কেন মাছের কথা লেখা ছিল না? এই তো হয়ে গেল। চিংড়ি মাছ নিয়ে নিলাম। কিংশুক মাথা চুলকোয়। চিংড়ি আবার মাছ কোথায়? বইতে লেখা আছে ওগুলো জলের পোকা। অনেক দিন পরে যেন ইন্দুবালা একটু হা হা করে হাসেন। বাজারের লোকজন পাশে জড়ো হয়। কী হয়েছে মা হাসো কেন? ইন্দুবালা মাথা নাড়েন। কিচ্ছু না। নাতির কথায় মজা নিচ্ছিলাম। তোমরা তাড়াতাড়ি খেতে এসো সবাই। ফেরার পথে একবার ইন্দুবালা দাঁড়িয়েছিলেন কাশী মুদির দোকানে কালো জিরে কিনতে। বোর্ডটা কিংশুককে দিয়ে মুছিয়ে লেখালেন ভাত, কলমিশাক, চিংড়িমাছের হলুদ গালা ঝোল, বেগুনের টক। অনেক দিন পর বাজার করে এসে প্রসন্ন চিত্তে স্নান করতে গেলেন ইন্দুবালা কর্পোরেশানের তোলা জলে। গায়ে জল পড়তেই পুকুরের ভাবনাটা আবার মাথায় চাগাড় দিতে শুরু করলো। বাড়ির পেছনের বাগানটার মতো এই বাড়িতেও যদি একটা পুকুর থাকতো? এই একটা ব্যাপার শাশুড়িকে বলার পর মুখ ঝামটা খেতে হয়নি। বাড়ির সেই সময়কার আত্মীয়রা মস্করা করতে এলে মুখের ওপর বলে দিয়েছেন ঠিকই তো বলেছে বউ পুকুর থাকলে কত সুবিধে হতো বল দেখি। নিজের জল বলেও তো কিছু একটা থাকতো। তা ও বউ তোমাদের গ্রামের বাড়িতে কি পুকুর আছে? উত্তর দিতে পারতেন না ইন্দুবালা। তিনি জানেন নেই বললেই তার শাশুড়ি মস্করা করতে ছাড়বেন না। আর মিথ্যে কথাও এই বুড়ো মানুষটাকে বলা যায় না। সন্ধ্যে দেবার অছিলায় উঠে পড়তেন তিনি। কথা আর এগিয়ে যাওয়ার পথ পেতো না।

    জ্যোৎস্নাময়ীর কোন ছবি ইন্দুবালা দেখেননি। একমাত্র ফ্রেমে উঁইয়ে কাটা আলতা রাঙানো পায়ের দুটো ছাপ ছাড়া। ঠাম্মা সেখানেই চন্দন দিতো। সন্ধ্যে দেখাতো। তার শাশুড়ি শিখিয়ে দিয়েছিল নাকি এইসব। আর মাঝে মাঝে সেই লোহার কড়াই সিন্ধুক থেকে বেরোলে গল্প হতো জ্যোৎস্নাময়ীর। কই রে ইন্দু নিয়ে আয় হলুদের কৌটোটা। ঠাম্মা হাঁক পাড়ে। বেলা যে অনেক হলো। ভাইকে পাঠায় পাশে ভবেশদের বাড়িতে কাঁচা লঙ্কা আনতে। ইন্দুবালারা গামছা দিয়ে যে চিংড়ি ধরেছে সেগুলো দিয়ে আজ ঠাম্মা রান্না করছে চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল। কিন্তু এই গল্পের সাথে বাড়িতে পুকুর না থাকার কি সম্পর্ক? প্রশ্ন করে ইন্দুবালা। দাও দেখি আমি একটু নাড়ি ঝোলটাকে। ইন্দুবালা ঠাম্মার হাত থেকে খুন্তিটা নিয়ে নাড়তে থাকে এদিক থেকে ওদিকে ঝোলটাকে। চিংড়ি গুলো সেই হলুদ ছোপা ঝোলে কেমন যেন ডুব সাঁতার দিতে দিতে ভেসে ওঠে। ওই দেখো না শেফালীরা কি সুন্দর বাড়ির পুকুরেই জারিয়ে রাখে মশারির জালে চিংড়ি গুলো। মনিরুল তো আরও বুদ্ধি করে পাটকাঠি দিয়ে সরজাল করে। অল্প অল্প করে পুকুরের মধ্যেই জমায় মাছ গুলো। তারপর একদিন চিংড়ি খাওয়ার উৎসব হয়। আর তুমি কিনা মাটির হাড়িতে জারিয়ে রাখতে বলো চিংড়ি গুলোকে? ওই টুকু হাড়িতে আর কতটুকুই বা ধরে? একদম ভালো লাগে না ইন্দুবালার। বোসদের মতো যদি তাদেরও একটা পুকুর থাকতো। নয়তো শেফালীদের মতো অন্তত একটা ডোবা। কি মজাই হতো তাহলে? টগবগ করে ফুটতে থাকা ঝোলে আরও দুটো লংকা দিয়ে ঢাকনা দেয় ঠাম্মা। পুকুর নেই বলে তার নাতনির বড় দুঃখ। তারও যে ছিল না তেমটা তো নয়। পুকুর হলো গেরস্থের লক্ষ্মী। মাছটা, শাকটা, জলটা তা থেকে যেমন পাওয়া যায় ঠিক তেমনই চাপড়া ষষ্ঠীতে কাঁঠাল পাতায় সিন্নি ভাসাতে। ইতু পুজোয় ঘট বিসর্জন দিতে। বাস্তু পুজোয় জল পুজো করতে। বিয়েতে জল সইতে একটা নিজের পুকুর থাকবে না তাও কী করে হয়? কিন্তু ওই যে অদৃষ্ট। যাও তোমার কাছে আর কোন গল্প শুনবো না। চিৎকার করে ইন্দুবালা। তার ভাইও ঠাম্মার আঁচল ধরে বলে, দিদি কাঁদছে ঠাম্মা। বলো না পুকুরের গল্পটা।

    জ্যোৎস্নাময়ীও কাঁদতো সারাক্ষণ। এই নদী নালার দেশে বর্ষাকালে সংসার পাততে এসে চোখের জলে নাকের জলে হচ্ছিল সে। নবদ্বীপে ছিল বাবার পাকা বাড়ি। লোহার ঘোরানো সিঁড়ি। আর খুলনার অজ গাঁ কোলাপোতাতে শ্বশুরের মাটির বাড়ি। মাটির দাওয়া। উঠোন ভর্তি পাশের বাড়ির পুকুরের জল। সাপে কামড়ানোর সব ভয়ানক গল্প। লম্ফ জেলে কোন রকমে রান্না করে জ্যোৎস্নাময়ী। সন্ধ্যে হতে না হতেই বেড়ার দিকে উঠোনের শেষভাগে কাদের যেন চোখ জ্বল জ্বল করে ওঠে। ওরা কি সব ভূত প্রেত? পাশের বাড়ির বিধবা বউ রাধারানী এসে বলে যায়, মোটেই না। ওগুলো সব শেয়াল। সন্ধ্যে হতেই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। সাবধানে থেকো বউ ওরা পারলে মানুষ তুলে নিয়ে যায়। আঁতকে ওঠে জ্যোৎস্নাময়ী। বিশ্বম্ভর অনেক রাতে রোগী দেখে একা একা বাড়ি ফেরে। তাঁর যদি কিছু হয়ে যায়? শেয়ালে যদি ধরে। সাপে যদি কাটে। চিন্তায় চিন্তায় কেমন যেন শুকিয়ে যেতে থাকে জ্যোৎস্নাময়ী। এইদিকে বর্ষা গিয়ে শরৎ আসে। শরৎ গিয়ে হেমন্ত। শরীর ঠিক হয় না তার। গাঁয়ের লোক বলে হাওয়া লেগেছে বউয়ের। পীরের কাছে যাও। বিশালক্ষ্মী তলায় মাঝে মাঝে আসে কত পীর। কত সাধু সন্ন্যাসী। এদের একটুও বিশ্বাস করে না বিশ্বম্ভর। যত বুজরুকি। কিন্তু জ্যোৎস্নাময়ীর মন চায় একবার অন্তত যাক সে। এতোদিনে পেটেও তো এলো না কোন সন্তান। কেন? কোন কারণে? এরমধ্যে গ্রামে এলো এক জল বাবা। কতশত পাহাড় ডিঙিয়ে। অনেক মন্ত্র তন্ত্র পড়ে। সে নাকি জলে মুখের ছায়া দেখে সব বলে দিতে পারে। রাধারানীই দিলো খবরটা ইন্দুবালাকে। তাজ্জব সব কথা বলে নাকি লোকটা। দরকার পড়লে বাঘে গরুতেও এক ঘাটে জল খাওয়াতে পারে। একদিন বিশ্বম্ভর যখন সদরে গেছে ওষুধ কিনতে জ্যোৎস্নাময়ী পাশের বাড়ির রাধারানীর সাথে বেরিয়ে পড়লো। বিশালক্ষ্মী তলায় সেদিন ভিড় ছিল কম। বেদীর ওপর বসে এক ভিন দেশের সাধু। তিনি অনেকক্ষণ ধরে জ্যোৎস্নাময়ীকে দেখলেন। পেতলের সরার মধ্যে জল নিয়ে এগিয়ে পিছিয়ে মুখাবয়ব দেখলেন। আর তাকে চমকে দিয়ে নানা রকমের কথা বলতে শুরু করলেন। যেমন তার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল বাড়ির মধ্যে পুকুর পাড়ে বজ্রাঘাতে। দিনটা ছিল সোমবার। এটা একমাত্র জ্যোৎস্নাময়ী ছাড়া এই গ্রামের কারোর জানার কথা নয়। এমনকি বিশ্বম্ভরকেও সে কোনদিন গল্প করেনি। সাধু ভুরু নাচিয়ে বলে নদীতে স্নান করার সময় গায়ে উঠেছিল চিংড়ি। আঁতকে ওঠে জ্যোৎস্নাময়ী। সব সত্যি যে। সাধু জানতে চায়, বল কি দিবি? নিদান বলে দেবো। সব বিপদ কেটে যাবে। জ্যোৎস্নাময়ী হাতের বালা খুলে দিয়েছিল। সাধু খুশি হয়ে বলেছিল তোর বাড়ির চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে উপছায়া। পাপ। বাড়িতে একটা নতুন প্রানের সঞ্চার কর যাতে অন্য নতুন প্রাণ আসতে পারে। এই নতুন প্রাণটা কি হতে পারে সেটা বুঝতে পারে না জ্যোৎস্নাময়ী। স্বামীকেও বলা যায় না। যদি শোনেন সাধু সন্তের কাছে যেতে শুরু করেছে তার বউ তাহলে বাড়িতে কুরুক্ষেত্র হয়ে যাবে। রাধারানী একদিন দুপুরে পান খেতে এসে বুদ্ধি দেয়। যদি বউ বাড়িতে একটা নতুন ডোবা করিস। সেটাও তো একটা নতুন কিছু করা হয়। বুদ্ধিটা ফেলতে পারে না জ্যোৎস্নাময়ী। স্বামীকে বলে। অন্যের পুকুরে যেতে তার বড় সমস্যা। কেমন লজ্জা লজ্জা করে। নিজের বাড়িতে যদি একটা পুকুর থাকতো। নিদেন পক্ষে একটা ডোবা। বিশ্বম্ভর রাজী হয়ে যায়। তারও অনেক দিনের শখ নিজের বাড়িতে একটা পুকু্রের। জলাশয় শুভর প্রতীক। কল্যাণকর। পুকুর কাটানোর দিনক্ষণ দেখা হয়। সে মহা ঝক্কির ব্যাপার। এতোসব জানতো না জ্যোৎস্নাময়ী। ভূমিকে পুজো করে। পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ নিয়ে প্রথম মাটি কাটা হয়। এক দিনেই অনেকটা মাটি গোল করে কেটে ফেলে লোকজন। বাড়ির চারপাশটা যেন মেলার মতো মনে হয়। সেদিন হঠাৎ রাতে বৃষ্টি নামে। কড়কড় করে বাজ পড়ে। আর সে কি ঝড়। অনেক ভোরে জ্যোৎস্নাময়ীর ঘুম ভেঙে যায়। পাশ ফিরে দেখে বিশ্বম্ভর অকাতরে ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ যেন তার মনে হয় জলের কল কল আওয়াজ। প্রথম দিনের পুকুর কাটাতেই ভর্তি হয়ে গেল নাকি? জল দেখতে উঠে পড়ে জ্যোৎস্নাময়ী। আধ খোড়া পুকুরের সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়। কোথায় জল? শুকনো খটখটে মাটি। আর সেই হাঁ করা বিশাল মাটির গর্তে পড়ে আছে সাদা থান পড়া পাশের বাড়ির বিধবা রাধারাণী। যার মুখের এক দিকটা খুবলে নিয়ে গেছে শেয়াল। বাতাস ভারী হতে থাকে। ফিসফিস করে যেন কারা কথা বলে চারপাশে। পেছন ফিরতেই জ্যোৎস্নাময়ী দেখতে পায় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কবেকার মরে যাওয়া তার মৃত মা। জানতিস না খুকু পুকুর ঘাটে বজ্রাঘাতে মরণ হয়েছিল আমার। আঁতকে ওঠে জ্যোৎস্নাময়ী। চোখ মেলে দেখে ঘুমোচ্ছিল সে। পাশে বিশ্বম্ভর নেই। বিভৎস স্বপ্নের রেশ নিয়ে দালানে এসে বুঝতে পারে কাজ বন্ধ রেখেছে মাটি কাটাইয়ের লোকেরা। পাশের বাড়ি থেকে কান্নার সুর ভেসে আসছে। বিধবা রাধারানী ভোরবেলায় মারা গেছে ভেদ বমিতে। পুকুর কাটানো বন্ধ করে দিল বিশ্বম্ভরের গাঁয়ের লোকজন। বাধা পড়েছে কাজে। মাটি কাটার লোকগুলোও ফিরে গেল। তারও অনেক পরে বাড়ির পুব দিকে বিশ্বম্ভর একটা কুয়ো খনন করেছিল। ততদিনে অবশ্য তার ছেলে মেয়েতে সংসার ভরে উঠেছে। এই গ্রামে সেই প্রথম কুয়ো। যে কুয়োতে ইন্দুবালার ভাই একটা কচ্ছপ পুষেছিল। নাম রেখেছিল কুমড়ো। ওপর থেকে মুড়ি দিলে কুমড়ো ভেসে উঠতো। ছোট্ট হাঁ করে জলে ভেজা মুড়ি গুলো গিলে গিলে খেতো। ঠাম্মার কুর্মো অবতারের গল্প হয়তো মনে ছিল তার। সবাই আজ একটু তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসে। বাবা, ইন্দু, ভাই। মাকেও বসে যেতে বলে ঠাম্মা। গরম ভাতের সাথে আজ যে শুধু চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল সেই কবেকার গল্প হয়ে যাওয়া জ্যোৎস্নাময়ীর লোহার কড়ায়।

    লোহার কড়াই ইন্দুবালার হোটেলেও আছে। কিন্তু জ্যোৎস্নাময়ীর মায়ের কড়াইয়ের মতো নয়। তিনি যদি তার মায়ের সব বাসন গুলো নিয়ে আসতে পারেন তাহলে ইন্দুবালাই বা পারবেন না কেন? লছমী তার চোখ গোল্লা পাকিয়ে বলেছিল হাঁ ঠিকই তো লিয়ে আসলি না কেনো ওইগুলা? ইন্দুবালা হাসেন। তখন কী করে জানবেন এই এত্তোবড় হোটেল হবে তার? লছমী বলে এক মাছওয়ালী বন্ধু হবে। তিন তিনটে ছেলে মেয়ে নিয়ে অকালে বিধবা হবেন? আর কোথাও কোনদিন যাওয়ার জায়গা থাকবে না। এমনকি বাপের বাড়িও না। থম মেরে বসে থাকেন ইন্দুবালা। কিন্তু আজ লছমীও বা কোথায়? কেউ কোত্থাও নেই। আর যখনই মনে হয় কেউ নেই তখন যেন আর শরীর চলে না ইন্দুবালার। কিন্তু ইন্দুবালার ওপর ওয়ালা একজন আছেন। তিনি বাতাসের সাথে ভেসে ভেসে বেড়ান। গরম তেলের ওপর কালো জিরের ফোড়ন পড়তেই চড়বড় করে ওঠেন তিনি। রান্নার নানা রকমের সুবাস পাঠিয়ে লোক জড়ো করেন। ইন্দুবালার তখন আর একা থাকা হয় না। কিংশুক হোস্টেল উজিয়ে ছেলে মেয়ের দলকে তো নিয়ে এসেছেই। চিংড়ি মাছের হলুদ গালা ঝোল খেতে সেই কতদূর থেকে ডাক্তার হোস্টেলের ছেলে মেয়ে গুলোও এসেছে। তাদের মধ্যে কলমিশাক বিক্রি করা বউটাও ছিল। কাসুন্দি দিয়ে কলমি শাক মাখার সময় ইন্দুবালা তার চোখে জল দেখেছেন। আহা...ওরও বড় পুকুরের শখ ছিল গো ঠিক ইন্দুবালার মতোই। ওর যেন একটা বড় পুকুর হয় এই মনস্কামনা করার সাথে সাথেই মেঘ ডেকে উঠলো। মুষল ধারায় বৃষ্টি নামলো। রেডিওতে এক ছোকরা জকি দু কলি গান শুনিয়ে বললো অবশেষে বর্ষা নামলো শহরে। ইন্দুবালা বিকেলের উঠোনে ঠায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজলেন। মনে হল তাঁর সাথে যেন ভিজছে গ্রামের ভিটেখানাও। ভিজছে পুইয়ের মাঁচা, ডালিম গাছ, গন্ধরাজ লেবু, কালনার আতা, নারকেল গাছে জড়িয়ে ওঠা চুইঝাল। এখনও সেখানে জল থৈ থৈ করে কিনা কে জানে? গামছা দিয়ে কেউ কি আর চিংড়ি মাছ ধরে? তার হলুদ গালা ঝোল হয়? বৃষ্টির জলে ডুব দিতে থাকেন ইন্দুবালা অনবরত। মনে মনে প্রার্থনা করেন এই ডুবের যেন শেষ না হয় ঠাকুর। কোন দিন শেষ না হয়। (ক্রমশ)

    ঋণ-
    ঠাম্মা, মনি, দিদা, রাঙা, বড়মা আর মা। এছাড়াও বাংলার সেইসব অসংখ্য মানুষদের যাঁদের হাতে এখনও প্রতিপালিত হয় আমাদের খাওয়া দাওয়া। জিভে জল পড়ার ইতিহাস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৮ জুলাই ২০১৯ | ৪১৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 236712.158.455612.36 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৩50806
  • অপূর্ব লেখা। আহা পুকুর নিয়ে আমারো অমন ইচ্ছে ছিল ছোটবেলায়।

    কিন্তু চিংড়ি অতক্ষণ ধরে ঝোলে ফোটালে শক্ত রাবারি টাইপ হয়ে যাবে না?
  • Ela | 236712.158.782323.11 (*) | ২০ জুলাই ২০১৯ ০১:৩৫50807
  • বেশিক্ষণ ফুটবে না তো। এই রান্নাটা ৪-৫ মিনিটে হয়ে যায়। অল্প তেলে ফোড়ন দিয়ে নুন-হলুদ মাখানো মাছগুলো দিয়ে দিতে হয়। আর অল্প একটু জল কারণ মাছ থেকেই জল বেরোবে।

    চটজলদি হয়ে যায় আর খেতেও দারুণ বলে স্কুল-কলেজ জীবনে এইটা আর গরম ভাত আমার প্রায় স্টেপল ডায়েট ছিল। কাচকি মাছ দিয়েও ভাল হয়।
  • Ela | 236712.158.782323.11 (*) | ২০ জুলাই ২০১৯ ০১:৪১50808
  • ইন ফ্যাক্ট মাছ ভাজতেও হয় না, কারণ চিংড়ি মাছ ভাজলেও ঐ শক্ত আর রাবারি হয়ে যায়। জাস্ট একটু সাতলে (ফোন থেকে চন্দ্রবিন্দু দিতে পারি না) নিয়ে অল্প জল ছিটিয়ে ঢাকা দিয়ে দিলেই হবে। মিনিট চারেক পরে ঢাকা খুলে গরম ভাতে হালুম-হুলুম ঃ)
  • | 236712.158.455612.210 (*) | ২০ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৬50809
  • হ্যাঁ অল্প সময় হলে তো ঠিকই আছে।
    লেখা পড়ে মনে হচ্ছে অনেকপক্ষণ রান্না করা হচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন