এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siddhartha basu | 212.78.235.186 | ২৮ জুন ২০১৫ ১৩:১৭681522
  • একটা মাখোমাখো লেখা

    প্রনয়্কালে সুচীছিদ্রে ধারণ কর প্রাণবায়ু
    উমা তোমার পাগলা রাজার অক্ষয় হোক পরমায়ু

    কামভাবে যে শক্তি কোমরের নীচের অংশে জেগে ওঠে,তাকে সংবৃত করে উর্ধস্রোতা করতে হয়;তবেই সেই যৌনশক্তি সুষুম্না বেয়ে মস্তিষ্কের বিদ্যুদাধারে পৌছে ওজঃশক্তিতে পরিনত হয়| শক্তির উত্স তবে মূলাধারচক্র(sacral plexus),যা শারীরবিদ্যাঅধিগত জ্ঞান অনুসারে পায়ের পিছনদিকে ও শ্রোণী অংশে স্নায়ু সরবরাহ করে মাত্র|বিবেকানন্দ স্বয়ং তাঁর অলৌকিক স্মৃতিশক্তি ও মেধার কারণ হিসেবে এই কামভাব সংবরণ করে তাকে আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিনত করার ক্ষমতাকেই চিন্হিত করে গেছেন,এবং বলেছেন যার সব কাম্ভাব্তুকু আফ্ধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্তর ঘটে গেছে সে হলো সিদ্ধ পুরুষ (নারীর ক্ষেত্রেও এই মূলাধারচক্র থেকে মস্তিস্ক হয়ে মহাশূণ্যগামী যৌনশক্তির ব্যবস্থাপত্র ধরহ,শুক্রের স্থানে ডিম্ব কোষ কেবল)| অর্থাত কামভাব সংবরণ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সাধন্মার্গের সবখোল চাবিকাঠি|

    মৈথুন বা শরীরমিলনের আগে অনেকক্ষণ ধরে চলে দুটো মানুষের পরস্পর কাছে আসার প্রস্তুতি,যাকে আমরা বলতে পারি শরীরে শরীরে পরিচয়:ভবিষ্যত উত্তেজনার প্রারম্ভিক আলাপ বা আদর-সোহাগ: যে সময়ে ‘দেহ থেকে নানা রসের ক্ষরণ হওয়াও স্বাভাবিক’(ঋষি অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এই পর্যায়কে বলা যাক ‘লীলাবিলাস’(অনির্বান,ঐ)| এরপর বাস্তবিক মিলন বা মৈথুন যাকে বলা হচ্ছে ‘সম্প্রয়োগ’(অনির্বান,ঐ)|এখন এটা মোটামুটি সকলেরই জানা যে মৈথুনের চূড়ান্ত সুখানুভব বা ‘অর্গাজম’ হওয়ার পর স্নায়ু-পেশীতন্ত্রে এক সাময়িক অবসাদের ভাব আসে,বিমিশ্র পরিতৃপ্তির খাদসহ| শরীর-মনের এই আপাত অসাড় ভাবকে তুলনা করা হচ্ছে ভাবসমাধির সঙ্গে|অনির্বান বলছেন এই ‘ভাবসমাধি’র বোধের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের spiritual expansion এর বোধ,যাকে ‘সম্প্রয়োগে’র আগে অর্থাত লীলাবিলাসের মধ্যেই সম্ভব করতে হবে|অর্থাত ‘প্রিয়জনকে কাছে পেলে প্রথম চেতনা’ যে ‘উদ্দীপিত ও বিস্ফারিত হয়’ সেই ‘spiritual expansion’ এর ভাবকে ‘প্রথম থেকেই ধরে রাখতে হবে’ ‘sex centre-এ উত্তেজনা অনুভব করে নীচের দিকে নেমে’ যেতে না দিয়ে|এ অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে ক্রমে ক্রমে ‘আর কায়িক মিলনের দরকার হয় না,সামান্য একটু স্পর্শেই চেতনা অমনি উজিয়ে যায়—যেমন রামকৃষ্ণদেবের যেত সারদাদেবিকে ছুঁয়ে’,বলছেন অনির্বান| আবার ‘কায়িক স্থুল মিলনেও একটা অভূতপূর্ব আনন্দের তরঙ্গ জাগে—যা নাকি সাধারণ লোক কল্পনাই করতেই পারে না| এই অবস্থায় গর্ভাধান করলে যে সন্তান হয়,তন্ত্রে তাকে “যোগিনিভূ” সন্তান বলে বর্ণনা করা হয়েছে|কেউ কেউ বলেন christ ও কৃষ্ণের জন্ম এইভাবে হয়েছিল’|অর্থাত বলা যেতে পারে ভাবসমাধি হলো নিশ্চেষ্টতার সেই পর্যায়(spiritual expansion?)যা অরগাজমের পুর্বসূরিতাকে অস্বীকার করে|

    এরপর পাচ্ছি ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’| ধারাকে ঊর্ধস্রোত করার বিষয়ে আরো পাচ্ছি: ‘যতদুর সম্ভব,চিত্তকে যোনিমন্ডলে না রেখে নারীর হৃদয়ে ও মুখে রাখবে| মুখে যে সৌন্দর্য তা প্রেমময়,হৃদয়ে মিশ্র,আর যোনিতে কামময়| অর্থাত ধারা ক্রমে নীচের দিকে নেমে এসেছে|যথাসম্ভব এই নীচের দিকে আসাটা রোধ করতে হবে|যাকে ভালোবেসে তার দেহকে গ্রহণ করবে,তার মুখের বা হৃদয়ের ধ্যান করবে;এমনকি যৌন মিলনের সময়ও একথা ভুলবে না| মোট কথা sex-union-রূপ যে একটা জান্তব ব্যাপার আছে,ভাবনার দ্বারা তাকে এমনভাবে sublimate করতে হবে যাতে যৌন মিলনের আত্যন্তিক কোনো প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না|’
    ওপরের লেখাপত্রগুলোর একটা বোধগম্য মানে এই হতে পারে যে প্রেমপূর্ণ যৌনতা,যা কিনা জান্তব অবিমিশ্র যৌনতা থেকে অনেক বেশি মানবিক,তাতে আনন্দ বা পরিতৃপ্তি বেশি| ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যত্যয় হলেও মোটের ওপর এটা সত্যি| আর সংযমের যে একটা স্ফূর্তি আছে সেটাও অস্বীকার করার নয়:সেটা শুধু যৌনতা বা কামেই কেন, খাওয়া পরা পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি যে কোনো রকম ভোগবাসনার ক্ষেত্রেই সত্যি| সংযত জীবন যাপন করতে পারলে এক ধরনের শান্তি পাওয়া যায়,আর তা শুধু আধ্যাত্মিক নয় যে কোনো মানবিক আদর্শ অনুসারেই নীতিমাফিকও বটে| কিন্তু অরগাজমের পরের স্থিতিশীলতা যদি ভাব্সমাধির সঙ্গে তুল্যমূল্য হয়,তবে বলতে হয় যে ভাবসমাধি একটা মস্ত নিষ্ক্রিয়তার অবস্থামাত্র,যেখানে পরিতৃপ্তি ও উদ্যমহীনতাজনিত অবসাদ কাজ করে,যা আবার খুব দীর্ঘসুত্রিও নয় বটে| অর্থাত এই অবস্থা কেটে আবার উদ্যম ও সক্রিয়তার দশা ফিরে আসতে অল্প-বিস্তর বিলম্বই হয় মাত্র| কিন্তু এর সাথে spiritual expansion-এর আদপেই কোনো সম্পর্ক আছে কি?
    প্রেম-সোহাগ পর্যায়ের মধ্যেই(লীলাবিলাস)এই অবসাদঘন দশা খুঁজে নিতে পারলে শরীরী মিলনের আর প্রয়োজন হবে না স্বাভাবিকভাবেই;কিন্তু তাতে সুবিধেটা কোথায়?
    শরীর দিয়ে শরীর চাওয়ার মধ্যে কোনরকমের পাশবিকতা আছে নাকি? যৌনতা মানুষের প্রবৃত্তিসন্জাত| ঠিক যেমন আত্মরক্ষা| কিন্তু মানুষ শুধু প্রবৃত্তির ফাঁসে আটকে না থেকে প্রনয়-বিরহের আলোছায়ার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে,যা তার যৌনতাকে জান্তবতা থেকে অনেক স্বাতন্ত্রে স্থাপন করেছে,ঠিক| কিন্তু যৌন ক্রিয়া (সম্প্রয়োগ) সম্পূর্ণ বিযুক্ত করে প্রনয়্লীলা(লীলাবিলাস)একটা সময়ের পর suppression-এর জন্ম দেয়,sublimation নয়|মানুষ তার বেঁচে থাকাকে নানান রঙে-রসে সাজিয়ে সুন্দর করতে চেয়েছে চিরকাল,কিন্তু সেটা বেঁচে থাকার মূল সুরটুকু থেকে বিচ্যুত হয়ে নয়| সবরমতী আশ্রমে গান্ধীজির শয্যাসঙ্গিনীদের কথা মনে পড়ে| sex শুধু procreative নয় মানুষের কাছে,প্রথমত এবং প্রধানত recreative;কিন্তু সামান্য একটু স্পর্শেই যদি চেতনা উজিয়ে যায় এবং আক্ষরিক অরগাজমের আর কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে সেই recreative জায়গাটাও আর বেঁচে থাকে কি? অর্গাজম-পরবর্তী নিঃসাড় দশা পাওয়ার জন্যই কি অর্গাজম? শরীরী মিলনটা কিছুই নয়? এইখানেই চলে আসে ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথাঃ’ বা ভুক্তবৈরাগ্যের যুক্তি: ত্যাগের দ্বারা ভোগ: ‘ভোগকে allow করছি,কিন্তু লক্ষ্য, যাতে বৈরাগ্যের মাঝে সে হারিয়ে যায়| তারপর যে ভোগ আসে তাকে আমি seek করি না,accept করি মাত্র’(অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এ বড় চমত্কার,ভোগ করা চলবে,কিন্তু বৈরাগ্যও বজায় থাকবে;পথটা কী? যেসব আসন ও মুদ্রার কথা বলা হয় তার কোনটাতে ‘গুহ্যদেশ আকুঞ্চিত করে শ্বাস ত্যাগ করলে শুক্রবহা নাড়ি দৃঢ় হওয়ায় ধারনাশক্তি বাড়ে’,কোনটাতে বা ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’(পূর্বোল্লেখিত)| অতএব শরীরী ভোগ চলতে পারে এবার,ত্যাগের দ্বারা accept করে,seek করাকে ছেঁটে ফেলে|

    পুরুষ ও নারীর যৌন উত্তেজনার ও তার প্রশমনের কিছু পার্থক্য বর্তমান বটে| কিন্তু এ বাবদে মেয়েদের clitoral sex-এর সর্বজনিনতার প্রসঙ্গ তুলে এনে যে kinsey রিপোর্ট এর কথা বলা হয়েছে(‘৮৬% মেয়েই যোনিতে কোনো রমণসুখ অনুভব করে না’) সেটা অনেকদিন হলো নাকচ হয়ে গেছে: clitoral orgasm ও vaginal orgasm
    দুয়েরই অস্তিত্ব এবং প্রায়শই সহাবস্থান স্বীকৃত| এমতাবস্থায় ‘পুরুষের penetration ও discharge একটা biological ব্যাপার মাত্র—যার উদ্দেশ্য procreation’ যা পুরুষের ক্ষেত্রে মিলনসুখের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে,কিন্তু মেয়েতে যে দুটো আলাদা: ‘যৌনসুখে মেয়েরা procreationএর কথা ভাবেই না’ ‘তার যৌন আনন্দের মধ্যে কোনো procreative urge নাই,ওটা purely psychological’ এর মত বিবৃতি আজ অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে| বরং সংবরণের মাধ্যমে যৌন ক্রিয়ার একটা ব্যবহারিক তাত্পর্য্য সহজেই স্বীকার করা যায় যার সঙ্গে পুরুষের উত্তেজনার ও তার প্রশমনের steep curve এবং মেয়েদের দীর্ঘায়িত প্রস্তুতির পর orgasm এর একটা মানবিক সামঞ্জস্য টানা যেতে পারে,আধুনিক স্নায়ুশারীরবৃত্ত ও popular যৌনাচার প্রচারক দু-দলই যাতে একমত হবেন|

    এবারে আসা যাক কিছু সাধারণ আলোচনায়| প্রথম থেকেই এই কাম-সংযম ও বীর্যধারণ,বিন্দুধারণ ও সৌর্যবরণ,orgasm পরবর্তী নিষ্ক্রিয়তার ও ভাবসমাধি এবং সর্বোপরি সংযমের শক্তির ঊর্ধস্রোতা হয়ে ভ্রু-মধ্য ও মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার এই আশ্চর্য প্রকল্পের কোনো আধুনিক বা অনাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না| সংযম এমনিতে খুবই মানবিক,বিশেষত আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের জন্য সবচাইতে দরকারি আসনই বলা চলে| কিন্তু তার কারণ স্বতন্ত্র : নিড আর গ্রীড এর পার্থক্য করার কথা আজকের দিনের অনেক যোগ্য ও অপারগ বিপ্লব্মনস্কও বলে থাকেন;কিন্তু সেখানে ওসব ঊর্ধস্রোতা ওজঃশক্তি কিম্বা neon rod সদৃশ মেরুদন্ডের গল্প থাকে না| ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ গানের উল্লেখ করে লীলাবিলাসের ধারণাকে validate করার প্রচেষ্টা যথাযথ’এবং সত্যি তো মানুষ কেবল এবং কেবলমাত্র শরীরী মিলন নিয়ে যৌনতার দুনিয়া গড়ে না,গড়ে নি| একটু ছোঁয়া,বা গলার স্বর,এমনকি সুর,বা আরো বিমূর্ত কোনো ভাবের মধ্যেও সে যৌনতা খুঁজে পায়| তা নইলে এত প্রনয়-বিরহ-মিলন-বিচ্ছেদ এর আলোছায়া ফুটতে আমরা দেখতে পেতাম না| কিন্তু ‘সম্প্রয়োগ’ বা মিলন বিহীন ‘লীলাবিলাস’ বা প্রেম এর স্ফূর্তি যা কিনা মানুষকে ‘দিব্যোন্মাদ’ করে,তার ওপর জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সন্তানকামনা জাগলে তখন ‘ত্যাগের দ্বারা ভোগ’ করে ‘দিব্যসম্প্রয়োগ’ করে নিলেই চলবে,‘যোগিনীভূ’ সন্তান জন্মে যাবে তাতেই: christ বা কৃষ্ণের মত—এ বড়ই স্বেচ্ছাচারিতা নয় কি? অর্থাত আমি সবই করতে পারব,কিন্তু তার মধ্যেই আর পাঁচজন সাধকেতর মনুষ্যকুলের চাইতে ঢের স্বতন্র হয়ে বসে থাকব সব কিছুর সঙ্গেই একটা করে ‘দিব্য’ জুড়েদিয়ে| এ বড়ই দিব্য ব্যবস্থা বটে|
    আর বাস্তবিক,এমত ধারণা বা বিশ্বাসসমূহের বিশিস্তদের মধ্যে যাদের আমরা চোখে দেখতে পাই,তাদের কাউকেই তো এ সব ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথা’ করতে চোখে পড়ে না| হতে পারে আমি বিপ্লবে বিশ্বাস করি কিন্তু বিপ্লবীর আচরণ আমার সাধ্যে কুলোয় না| কিন্তু ‘বিপ্লবীর’ মত আচরণে এরকম কোনো আষাড়েপনা নেই যে কেউ ইচ্ছে করলে সেসব করে দেখতে পারবে না| করেছে এমন লোকের দৃষ্টান্তও কিছু বিরল নয়,আর সে সব পারা অত্যন্ত কঠিন তাতে সন্দেহ না থাকলেও সেগুলো পালন করা ultra-feasible কোনো বোধের অগম্য ব্যবস্থা নয়| কিন্তু sacral plexus থেকে যৌন সংযমের শক্তিকে মেরুদন্ডের মধ্যে দিয়ে মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যগামী করার কোনো বস্তুগত feasibiliটি নেই| শুধুমাত্রই ‘বিশ্বাসে মিলে...’| অথচ প্রশ্ন করলেই শুনতে হবে: ‘আপনি কি করে দেখেছেন?’ ঠিক যেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ যে মেরুপ্রদেশে কম আর নিরক্ষে বেশি সেকি আপনি মেপে দেখেছেন? কিম্বা এভারেস্ট এর চেয়ে উঁচু চূড়া নেই একই আপনি জরিপ করেছেন? বা e=mc২ এ সুত্র আপনি মিলিয়েছেন কি? মহাবিশ্বের যেকোনো দুটো বস্তু তাদের কেন্দ্রসংযোজি সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে একই আপনার নিজের চোখে দেখা? মুরগি বা ডিম কেউই যে কারুর আগে আসেনি সেকি আপনার হাতে-কলমে করে দেখা? শুনলেই বোঝা যাবে যুক্তির রাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনাকে নস্যাত করার চেষ্টাতেই এসব প্রশ্ন| সমাধান শুধু ভাবসমাধিতে| যেখানে কোনো প্রশ্ন জাগে না| সে আইকন বিবেকানন্দ কি অনাবিষ্কৃত অনির্বান যেই হন না কেন|

    একটা মাখোমাখো লেখা

    প্রনয়্কালে সুচীছিদ্রে ধারণ কর প্রাণবায়ু
    উমা তোমার পাগলা রাজার অক্ষয় হোক পরমায়ু

    কামভাবে যে শক্তি কোমরের নীচের অংশে জেগে ওঠে,তাকে সংবৃত করে উর্ধস্রোতা করতে হয়;তবেই সেই যৌনশক্তি সুষুম্না বেয়ে মস্তিষ্কের বিদ্যুদাধারে পৌছে ওজঃশক্তিতে পরিনত হয়| শক্তির উত্স তবে মূলাধারচক্র(sacral plexus),যা শারীরবিদ্যাঅধিগত জ্ঞান অনুসারে পায়ের পিছনদিকে ও শ্রোণী অংশে স্নায়ু সরবরাহ করে মাত্র|বিবেকানন্দ স্বয়ং তাঁর অলৌকিক স্মৃতিশক্তি ও মেধার কারণ হিসেবে এই কামভাব সংবরণ করে তাকে আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিনত করার ক্ষমতাকেই চিন্হিত করে গেছেন,এবং বলেছেন যার সব কাম্ভাব্তুকু আফ্ধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্তর ঘটে গেছে সে হলো সিদ্ধ পুরুষ (নারীর ক্ষেত্রেও এই মূলাধারচক্র থেকে মস্তিস্ক হয়ে মহাশূণ্যগামী যৌনশক্তির ব্যবস্থাপত্র ধরহ,শুক্রের স্থানে ডিম্ব কোষ কেবল)| অর্থাত কামভাব সংবরণ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সাধন্মার্গের সবখোল চাবিকাঠি|

    মৈথুন বা শরীরমিলনের আগে অনেকক্ষণ ধরে চলে দুটো মানুষের পরস্পর কাছে আসার প্রস্তুতি,যাকে আমরা বলতে পারি শরীরে শরীরে পরিচয়:ভবিষ্যত উত্তেজনার প্রারম্ভিক আলাপ বা আদর-সোহাগ: যে সময়ে ‘দেহ থেকে নানা রসের ক্ষরণ হওয়াও স্বাভাবিক’(ঋষি অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এই পর্যায়কে বলা যাক ‘লীলাবিলাস’(অনির্বান,ঐ)| এরপর বাস্তবিক মিলন বা মৈথুন যাকে বলা হচ্ছে ‘সম্প্রয়োগ’(অনির্বান,ঐ)|এখন এটা মোটামুটি সকলেরই জানা যে মৈথুনের চূড়ান্ত সুখানুভব বা ‘অর্গাজম’ হওয়ার পর স্নায়ু-পেশীতন্ত্রে এক সাময়িক অবসাদের ভাব আসে,বিমিশ্র পরিতৃপ্তির খাদসহ| শরীর-মনের এই আপাত অসাড় ভাবকে তুলনা করা হচ্ছে ভাবসমাধির সঙ্গে|অনির্বান বলছেন এই ‘ভাবসমাধি’র বোধের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের spiritual expansion এর বোধ,যাকে ‘সম্প্রয়োগে’র আগে অর্থাত লীলাবিলাসের মধ্যেই সম্ভব করতে হবে|অর্থাত ‘প্রিয়জনকে কাছে পেলে প্রথম চেতনা’ যে ‘উদ্দীপিত ও বিস্ফারিত হয়’ সেই ‘spiritual expansion’ এর ভাবকে ‘প্রথম থেকেই ধরে রাখতে হবে’ ‘sex centre-এ উত্তেজনা অনুভব করে নীচের দিকে নেমে’ যেতে না দিয়ে|এ অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে ক্রমে ক্রমে ‘আর কায়িক মিলনের দরকার হয় না,সামান্য একটু স্পর্শেই চেতনা অমনি উজিয়ে যায়—যেমন রামকৃষ্ণদেবের যেত সারদাদেবিকে ছুঁয়ে’,বলছেন অনির্বান| আবার ‘কায়িক স্থুল মিলনেও একটা অভূতপূর্ব আনন্দের তরঙ্গ জাগে—যা নাকি সাধারণ লোক কল্পনাই করতেই পারে না| এই অবস্থায় গর্ভাধান করলে যে সন্তান হয়,তন্ত্রে তাকে “যোগিনিভূ” সন্তান বলে বর্ণনা করা হয়েছে|কেউ কেউ বলেন christ ও কৃষ্ণের জন্ম এইভাবে হয়েছিল’|অর্থাত বলা যেতে পারে ভাবসমাধি হলো নিশ্চেষ্টতার সেই পর্যায়(spiritual expansion?)যা অরগাজমের পুর্বসূরিতাকে অস্বীকার করে|

    এরপর পাচ্ছি ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’| ধারাকে ঊর্ধস্রোত করার বিষয়ে আরো পাচ্ছি: ‘যতদুর সম্ভব,চিত্তকে যোনিমন্ডলে না রেখে নারীর হৃদয়ে ও মুখে রাখবে| মুখে যে সৌন্দর্য তা প্রেমময়,হৃদয়ে মিশ্র,আর যোনিতে কামময়| অর্থাত ধারা ক্রমে নীচের দিকে নেমে এসেছে|যথাসম্ভব এই নীচের দিকে আসাটা রোধ করতে হবে|যাকে ভালোবেসে তার দেহকে গ্রহণ করবে,তার মুখের বা হৃদয়ের ধ্যান করবে;এমনকি যৌন মিলনের সময়ও একথা ভুলবে না| মোট কথা sex-union-রূপ যে একটা জান্তব ব্যাপার আছে,ভাবনার দ্বারা তাকে এমনভাবে sublimate করতে হবে যাতে যৌন মিলনের আত্যন্তিক কোনো প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না|’
    ওপরের লেখাপত্রগুলোর একটা বোধগম্য মানে এই হতে পারে যে প্রেমপূর্ণ যৌনতা,যা কিনা জান্তব অবিমিশ্র যৌনতা থেকে অনেক বেশি মানবিক,তাতে আনন্দ বা পরিতৃপ্তি বেশি| ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যত্যয় হলেও মোটের ওপর এটা সত্যি| আর সংযমের যে একটা স্ফূর্তি আছে সেটাও অস্বীকার করার নয়:সেটা শুধু যৌনতা বা কামেই কেন, খাওয়া পরা পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি যে কোনো রকম ভোগবাসনার ক্ষেত্রেই সত্যি| সংযত জীবন যাপন করতে পারলে এক ধরনের শান্তি পাওয়া যায়,আর তা শুধু আধ্যাত্মিক নয় যে কোনো মানবিক আদর্শ অনুসারেই নীতিমাফিকও বটে| কিন্তু অরগাজমের পরের স্থিতিশীলতা যদি ভাব্সমাধির সঙ্গে তুল্যমূল্য হয়,তবে বলতে হয় যে ভাবসমাধি একটা মস্ত নিষ্ক্রিয়তার অবস্থামাত্র,যেখানে পরিতৃপ্তি ও উদ্যমহীনতাজনিত অবসাদ কাজ করে,যা আবার খুব দীর্ঘসুত্রিও নয় বটে| অর্থাত এই অবস্থা কেটে আবার উদ্যম ও সক্রিয়তার দশা ফিরে আসতে অল্প-বিস্তর বিলম্বই হয় মাত্র| কিন্তু এর সাথে spiritual expansion-এর আদপেই কোনো সম্পর্ক আছে কি?
    প্রেম-সোহাগ পর্যায়ের মধ্যেই(লীলাবিলাস)এই অবসাদঘন দশা খুঁজে নিতে পারলে শরীরী মিলনের আর প্রয়োজন হবে না স্বাভাবিকভাবেই;কিন্তু তাতে সুবিধেটা কোথায়?
    শরীর দিয়ে শরীর চাওয়ার মধ্যে কোনরকমের পাশবিকতা আছে নাকি? যৌনতা মানুষের প্রবৃত্তিসন্জাত| ঠিক যেমন আত্মরক্ষা| কিন্তু মানুষ শুধু প্রবৃত্তির ফাঁসে আটকে না থেকে প্রনয়-বিরহের আলোছায়ার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে,যা তার যৌনতাকে জান্তবতা থেকে অনেক স্বাতন্ত্রে স্থাপন করেছে,ঠিক| কিন্তু যৌন ক্রিয়া (সম্প্রয়োগ) সম্পূর্ণ বিযুক্ত করে প্রনয়্লীলা(লীলাবিলাস)একটা সময়ের পর suppression-এর জন্ম দেয়,sublimation নয়|মানুষ তার বেঁচে থাকাকে নানান রঙে-রসে সাজিয়ে সুন্দর করতে চেয়েছে চিরকাল,কিন্তু সেটা বেঁচে থাকার মূল সুরটুকু থেকে বিচ্যুত হয়ে নয়| সবরমতী আশ্রমে গান্ধীজির শয্যাসঙ্গিনীদের কথা মনে পড়ে| sex শুধু procreative নয় মানুষের কাছে,প্রথমত এবং প্রধানত recreative;কিন্তু সামান্য একটু স্পর্শেই যদি চেতনা উজিয়ে যায় এবং আক্ষরিক অরগাজমের আর কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে সেই recreative জায়গাটাও আর বেঁচে থাকে কি? অর্গাজম-পরবর্তী নিঃসাড় দশা পাওয়ার জন্যই কি অর্গাজম? শরীরী মিলনটা কিছুই নয়? এইখানেই চলে আসে ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথাঃ’ বা ভুক্তবৈরাগ্যের যুক্তি: ত্যাগের দ্বারা ভোগ: ‘ভোগকে allow করছি,কিন্তু লক্ষ্য, যাতে বৈরাগ্যের মাঝে সে হারিয়ে যায়| তারপর যে ভোগ আসে তাকে আমি seek করি না,accept করি মাত্র’(অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এ বড় চমত্কার,ভোগ করা চলবে,কিন্তু বৈরাগ্যও বজায় থাকবে;পথটা কী? যেসব আসন ও মুদ্রার কথা বলা হয় তার কোনটাতে ‘গুহ্যদেশ আকুঞ্চিত করে শ্বাস ত্যাগ করলে শুক্রবহা নাড়ি দৃঢ় হওয়ায় ধারনাশক্তি বাড়ে’,কোনটাতে বা ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’(পূর্বোল্লেখিত)| অতএব শরীরী ভোগ চলতে পারে এবার,ত্যাগের দ্বারা accept করে,seek করাকে ছেঁটে ফেলে|

    পুরুষ ও নারীর যৌন উত্তেজনার ও তার প্রশমনের কিছু পার্থক্য বর্তমান বটে| কিন্তু এ বাবদে মেয়েদের clitoral sex-এর সর্বজনিনতার প্রসঙ্গ তুলে এনে যে kinsey রিপোর্ট এর কথা বলা হয়েছে(‘৮৬% মেয়েই যোনিতে কোনো রমণসুখ অনুভব করে না’) সেটা অনেকদিন হলো নাকচ হয়ে গেছে: clitoral orgasm ও vaginal orgasm
    দুয়েরই অস্তিত্ব এবং প্রায়শই সহাবস্থান স্বীকৃত| এমতাবস্থায় ‘পুরুষের penetration ও discharge একটা biological ব্যাপার মাত্র—যার উদ্দেশ্য procreation’ যা পুরুষের ক্ষেত্রে মিলনসুখের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে,কিন্তু মেয়েতে যে দুটো আলাদা: ‘যৌনসুখে মেয়েরা procreationএর কথা ভাবেই না’ ‘তার যৌন আনন্দের মধ্যে কোনো procreative urge নাই,ওটা purely psychological’ এর মত বিবৃতি আজ অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে| বরং সংবরণের মাধ্যমে যৌন ক্রিয়ার একটা ব্যবহারিক তাত্পর্য্য সহজেই স্বীকার করা যায় যার সঙ্গে পুরুষের উত্তেজনার ও তার প্রশমনের steep curve এবং মেয়েদের দীর্ঘায়িত প্রস্তুতির পর orgasm এর একটা মানবিক সামঞ্জস্য টানা যেতে পারে,আধুনিক স্নায়ুশারীরবৃত্ত ও popular যৌনাচার প্রচারক দু-দলই যাতে একমত হবেন|

    এবারে আসা যাক কিছু সাধারণ আলোচনায়| প্রথম থেকেই এই কাম-সংযম ও বীর্যধারণ,বিন্দুধারণ ও সৌর্যবরণ,orgasm পরবর্তী নিষ্ক্রিয়তার ও ভাবসমাধি এবং সর্বোপরি সংযমের শক্তির ঊর্ধস্রোতা হয়ে ভ্রু-মধ্য ও মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার এই আশ্চর্য প্রকল্পের কোনো আধুনিক বা অনাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না| সংযম এমনিতে খুবই মানবিক,বিশেষত আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের জন্য সবচাইতে দরকারি আসনই বলা চলে| কিন্তু তার কারণ স্বতন্ত্র : নিড আর গ্রীড এর পার্থক্য করার কথা আজকের দিনের অনেক যোগ্য ও অপারগ বিপ্লব্মনস্কও বলে থাকেন;কিন্তু সেখানে ওসব ঊর্ধস্রোতা ওজঃশক্তি কিম্বা neon rod সদৃশ মেরুদন্ডের গল্প থাকে না| ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ গানের উল্লেখ করে লীলাবিলাসের ধারণাকে validate করার প্রচেষ্টা যথাযথ’এবং সত্যি তো মানুষ কেবল এবং কেবলমাত্র শরীরী মিলন নিয়ে যৌনতার দুনিয়া গড়ে না,গড়ে নি| একটু ছোঁয়া,বা গলার স্বর,এমনকি সুর,বা আরো বিমূর্ত কোনো ভাবের মধ্যেও সে যৌনতা খুঁজে পায়| তা নইলে এত প্রনয়-বিরহ-মিলন-বিচ্ছেদ এর আলোছায়া ফুটতে আমরা দেখতে পেতাম না| কিন্তু ‘সম্প্রয়োগ’ বা মিলন বিহীন ‘লীলাবিলাস’ বা প্রেম এর স্ফূর্তি যা কিনা মানুষকে ‘দিব্যোন্মাদ’ করে,তার ওপর জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সন্তানকামনা জাগলে তখন ‘ত্যাগের দ্বারা ভোগ’ করে ‘দিব্যসম্প্রয়োগ’ করে নিলেই চলবে,‘যোগিনীভূ’ সন্তান জন্মে যাবে তাতেই: christ বা কৃষ্ণের মত—এ বড়ই স্বেচ্ছাচারিতা নয় কি? অর্থাত আমি সবই করতে পারব,কিন্তু তার মধ্যেই আর পাঁচজন সাধকেতর মনুষ্যকুলের চাইতে ঢের স্বতন্র হয়ে বসে থাকব সব কিছুর সঙ্গেই একটা করে ‘দিব্য’ জুড়েদিয়ে| এ বড়ই দিব্য ব্যবস্থা বটে|
    আর বাস্তবিক,এমত ধারণা বা বিশ্বাসসমূহের বিশিস্তদের মধ্যে যাদের আমরা চোখে দেখতে পাই,তাদের কাউকেই তো এ সব ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথা’ করতে চোখে পড়ে না| হতে পারে আমি বিপ্লবে বিশ্বাস করি কিন্তু বিপ্লবীর আচরণ আমার সাধ্যে কুলোয় না| কিন্তু ‘বিপ্লবীর’ মত আচরণে এরকম কোনো আষাড়েপনা নেই যে কেউ ইচ্ছে করলে সেসব করে দেখতে পারবে না| করেছে এমন লোকের দৃষ্টান্তও কিছু বিরল নয়,আর সে সব পারা অত্যন্ত কঠিন তাতে সন্দেহ না থাকলেও সেগুলো পালন করা ultra-feasible কোনো বোধের অগম্য ব্যবস্থা নয়| কিন্তু sacral plexus থেকে যৌন সংযমের শক্তিকে মেরুদন্ডের মধ্যে দিয়ে মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যগামী করার কোনো বস্তুগত feasibiliটি নেই| শুধুমাত্রই ‘বিশ্বাসে মিলে...’| অথচ প্রশ্ন করলেই শুনতে হবে: ‘আপনি কি করে দেখেছেন?’ ঠিক যেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ যে মেরুপ্রদেশে কম আর নিরক্ষে বেশি সেকি আপনি মেপে দেখেছেন? কিম্বা এভারেস্ট এর চেয়ে উঁচু চূড়া নেই একই আপনি জরিপ করেছেন? বা e=mc২ এ সুত্র আপনি মিলিয়েছেন কি? মহাবিশ্বের যেকোনো দুটো বস্তু তাদের কেন্দ্রসংযোজি সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে একই আপনার নিজের চোখে দেখা? মুরগি বা ডিম কেউই যে কারুর আগে আসেনি সেকি আপনার হাতে-কলমে করে দেখা? শুনলেই বোঝা যাবে যুক্তির রাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনাকে নস্যাত করার চেষ্টাতেই এসব প্রশ্ন| সমাধান শুধু ভাবসমাধিতে| যেখানে কোনো প্রশ্ন জাগে না| সে আইকন বিবেকানন্দ কি অনাবিষ্কৃত অনির্বান যেই হন না কেন|

    একটা মাখোমাখো লেখা

    প্রনয়্কালে সুচীছিদ্রে ধারণ কর প্রাণবায়ু
    উমা তোমার পাগলা রাজার অক্ষয় হোক পরমায়ু

    কামভাবে যে শক্তি কোমরের নীচের অংশে জেগে ওঠে,তাকে সংবৃত করে উর্ধস্রোতা করতে হয়;তবেই সেই যৌনশক্তি সুষুম্না বেয়ে মস্তিষ্কের বিদ্যুদাধারে পৌছে ওজঃশক্তিতে পরিনত হয়| শক্তির উত্স তবে মূলাধারচক্র(sacral plexus),যা শারীরবিদ্যাঅধিগত জ্ঞান অনুসারে পায়ের পিছনদিকে ও শ্রোণী অংশে স্নায়ু সরবরাহ করে মাত্র|বিবেকানন্দ স্বয়ং তাঁর অলৌকিক স্মৃতিশক্তি ও মেধার কারণ হিসেবে এই কামভাব সংবরণ করে তাকে আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিনত করার ক্ষমতাকেই চিন্হিত করে গেছেন,এবং বলেছেন যার সব কাম্ভাব্তুকু আফ্ধ্যাত্মিক শক্তিতে রূপান্তর ঘটে গেছে সে হলো সিদ্ধ পুরুষ (নারীর ক্ষেত্রেও এই মূলাধারচক্র থেকে মস্তিস্ক হয়ে মহাশূণ্যগামী যৌনশক্তির ব্যবস্থাপত্র ধরহ,শুক্রের স্থানে ডিম্ব কোষ কেবল)| অর্থাত কামভাব সংবরণ করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সাধন্মার্গের সবখোল চাবিকাঠি|

    মৈথুন বা শরীরমিলনের আগে অনেকক্ষণ ধরে চলে দুটো মানুষের পরস্পর কাছে আসার প্রস্তুতি,যাকে আমরা বলতে পারি শরীরে শরীরে পরিচয়:ভবিষ্যত উত্তেজনার প্রারম্ভিক আলাপ বা আদর-সোহাগ: যে সময়ে ‘দেহ থেকে নানা রসের ক্ষরণ হওয়াও স্বাভাবিক’(ঋষি অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এই পর্যায়কে বলা যাক ‘লীলাবিলাস’(অনির্বান,ঐ)| এরপর বাস্তবিক মিলন বা মৈথুন যাকে বলা হচ্ছে ‘সম্প্রয়োগ’(অনির্বান,ঐ)|এখন এটা মোটামুটি সকলেরই জানা যে মৈথুনের চূড়ান্ত সুখানুভব বা ‘অর্গাজম’ হওয়ার পর স্নায়ু-পেশীতন্ত্রে এক সাময়িক অবসাদের ভাব আসে,বিমিশ্র পরিতৃপ্তির খাদসহ| শরীর-মনের এই আপাত অসাড় ভাবকে তুলনা করা হচ্ছে ভাবসমাধির সঙ্গে|অনির্বান বলছেন এই ‘ভাবসমাধি’র বোধের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের spiritual expansion এর বোধ,যাকে ‘সম্প্রয়োগে’র আগে অর্থাত লীলাবিলাসের মধ্যেই সম্ভব করতে হবে|অর্থাত ‘প্রিয়জনকে কাছে পেলে প্রথম চেতনা’ যে ‘উদ্দীপিত ও বিস্ফারিত হয়’ সেই ‘spiritual expansion’ এর ভাবকে ‘প্রথম থেকেই ধরে রাখতে হবে’ ‘sex centre-এ উত্তেজনা অনুভব করে নীচের দিকে নেমে’ যেতে না দিয়ে|এ অভ্যেস গড়ে তুলতে পারলে ক্রমে ক্রমে ‘আর কায়িক মিলনের দরকার হয় না,সামান্য একটু স্পর্শেই চেতনা অমনি উজিয়ে যায়—যেমন রামকৃষ্ণদেবের যেত সারদাদেবিকে ছুঁয়ে’,বলছেন অনির্বান| আবার ‘কায়িক স্থুল মিলনেও একটা অভূতপূর্ব আনন্দের তরঙ্গ জাগে—যা নাকি সাধারণ লোক কল্পনাই করতেই পারে না| এই অবস্থায় গর্ভাধান করলে যে সন্তান হয়,তন্ত্রে তাকে “যোগিনিভূ” সন্তান বলে বর্ণনা করা হয়েছে|কেউ কেউ বলেন christ ও কৃষ্ণের জন্ম এইভাবে হয়েছিল’|অর্থাত বলা যেতে পারে ভাবসমাধি হলো নিশ্চেষ্টতার সেই পর্যায়(spiritual expansion?)যা অরগাজমের পুর্বসূরিতাকে অস্বীকার করে|

    এরপর পাচ্ছি ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’| ধারাকে ঊর্ধস্রোত করার বিষয়ে আরো পাচ্ছি: ‘যতদুর সম্ভব,চিত্তকে যোনিমন্ডলে না রেখে নারীর হৃদয়ে ও মুখে রাখবে| মুখে যে সৌন্দর্য তা প্রেমময়,হৃদয়ে মিশ্র,আর যোনিতে কামময়| অর্থাত ধারা ক্রমে নীচের দিকে নেমে এসেছে|যথাসম্ভব এই নীচের দিকে আসাটা রোধ করতে হবে|যাকে ভালোবেসে তার দেহকে গ্রহণ করবে,তার মুখের বা হৃদয়ের ধ্যান করবে;এমনকি যৌন মিলনের সময়ও একথা ভুলবে না| মোট কথা sex-union-রূপ যে একটা জান্তব ব্যাপার আছে,ভাবনার দ্বারা তাকে এমনভাবে sublimate করতে হবে যাতে যৌন মিলনের আত্যন্তিক কোনো প্রয়োজনীয়তাই থাকবে না|’
    ওপরের লেখাপত্রগুলোর একটা বোধগম্য মানে এই হতে পারে যে প্রেমপূর্ণ যৌনতা,যা কিনা জান্তব অবিমিশ্র যৌনতা থেকে অনেক বেশি মানবিক,তাতে আনন্দ বা পরিতৃপ্তি বেশি| ক্ষেত্রবিশেষে এর ব্যত্যয় হলেও মোটের ওপর এটা সত্যি| আর সংযমের যে একটা স্ফূর্তি আছে সেটাও অস্বীকার করার নয়:সেটা শুধু যৌনতা বা কামেই কেন, খাওয়া পরা পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি যে কোনো রকম ভোগবাসনার ক্ষেত্রেই সত্যি| সংযত জীবন যাপন করতে পারলে এক ধরনের শান্তি পাওয়া যায়,আর তা শুধু আধ্যাত্মিক নয় যে কোনো মানবিক আদর্শ অনুসারেই নীতিমাফিকও বটে| কিন্তু অরগাজমের পরের স্থিতিশীলতা যদি ভাব্সমাধির সঙ্গে তুল্যমূল্য হয়,তবে বলতে হয় যে ভাবসমাধি একটা মস্ত নিষ্ক্রিয়তার অবস্থামাত্র,যেখানে পরিতৃপ্তি ও উদ্যমহীনতাজনিত অবসাদ কাজ করে,যা আবার খুব দীর্ঘসুত্রিও নয় বটে| অর্থাত এই অবস্থা কেটে আবার উদ্যম ও সক্রিয়তার দশা ফিরে আসতে অল্প-বিস্তর বিলম্বই হয় মাত্র| কিন্তু এর সাথে spiritual expansion-এর আদপেই কোনো সম্পর্ক আছে কি?
    প্রেম-সোহাগ পর্যায়ের মধ্যেই(লীলাবিলাস)এই অবসাদঘন দশা খুঁজে নিতে পারলে শরীরী মিলনের আর প্রয়োজন হবে না স্বাভাবিকভাবেই;কিন্তু তাতে সুবিধেটা কোথায়?
    শরীর দিয়ে শরীর চাওয়ার মধ্যে কোনরকমের পাশবিকতা আছে নাকি? যৌনতা মানুষের প্রবৃত্তিসন্জাত| ঠিক যেমন আত্মরক্ষা| কিন্তু মানুষ শুধু প্রবৃত্তির ফাঁসে আটকে না থেকে প্রনয়-বিরহের আলোছায়ার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে,যা তার যৌনতাকে জান্তবতা থেকে অনেক স্বাতন্ত্রে স্থাপন করেছে,ঠিক| কিন্তু যৌন ক্রিয়া (সম্প্রয়োগ) সম্পূর্ণ বিযুক্ত করে প্রনয়্লীলা(লীলাবিলাস)একটা সময়ের পর suppression-এর জন্ম দেয়,sublimation নয়|মানুষ তার বেঁচে থাকাকে নানান রঙে-রসে সাজিয়ে সুন্দর করতে চেয়েছে চিরকাল,কিন্তু সেটা বেঁচে থাকার মূল সুরটুকু থেকে বিচ্যুত হয়ে নয়| সবরমতী আশ্রমে গান্ধীজির শয্যাসঙ্গিনীদের কথা মনে পড়ে| sex শুধু procreative নয় মানুষের কাছে,প্রথমত এবং প্রধানত recreative;কিন্তু সামান্য একটু স্পর্শেই যদি চেতনা উজিয়ে যায় এবং আক্ষরিক অরগাজমের আর কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে সেই recreative জায়গাটাও আর বেঁচে থাকে কি? অর্গাজম-পরবর্তী নিঃসাড় দশা পাওয়ার জন্যই কি অর্গাজম? শরীরী মিলনটা কিছুই নয়? এইখানেই চলে আসে ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথাঃ’ বা ভুক্তবৈরাগ্যের যুক্তি: ত্যাগের দ্বারা ভোগ: ‘ভোগকে allow করছি,কিন্তু লক্ষ্য, যাতে বৈরাগ্যের মাঝে সে হারিয়ে যায়| তারপর যে ভোগ আসে তাকে আমি seek করি না,accept করি মাত্র’(অনির্বান,উত্তরায়ণ)| এ বড় চমত্কার,ভোগ করা চলবে,কিন্তু বৈরাগ্যও বজায় থাকবে;পথটা কী? যেসব আসন ও মুদ্রার কথা বলা হয় তার কোনটাতে ‘গুহ্যদেশ আকুঞ্চিত করে শ্বাস ত্যাগ করলে শুক্রবহা নাড়ি দৃঢ় হওয়ায় ধারনাশক্তি বাড়ে’,কোনটাতে বা ‘আসনে সোজা হয়ে বসে মেরুদন্ডটা একটা neon rod এর মত বিদ্যুদ্দীপ্তিতে পূর্ণ –এইরকম ভাবনা করতে করতে চেতনা ঊর্ধস্রোতা হয়ে যায়| তখন মহাশুন্যে তা মিলিয়ে যায় উজানপথে|...’ক্রমে ‘passion রুপান্তরিত হয় love-এ,তরঙ্গ ওঠে ঐ সুষুম্নার ভিতর দিয়ে’(পূর্বোল্লেখিত)| অতএব শরীরী ভোগ চলতে পারে এবার,ত্যাগের দ্বারা accept করে,seek করাকে ছেঁটে ফেলে|

    পুরুষ ও নারীর যৌন উত্তেজনার ও তার প্রশমনের কিছু পার্থক্য বর্তমান বটে| কিন্তু এ বাবদে মেয়েদের clitoral sex-এর সর্বজনিনতার প্রসঙ্গ তুলে এনে যে kinsey রিপোর্ট এর কথা বলা হয়েছে(‘৮৬% মেয়েই যোনিতে কোনো রমণসুখ অনুভব করে না’) সেটা অনেকদিন হলো নাকচ হয়ে গেছে: clitoral orgasm ও vaginal orgasm
    দুয়েরই অস্তিত্ব এবং প্রায়শই সহাবস্থান স্বীকৃত| এমতাবস্থায় ‘পুরুষের penetration ও discharge একটা biological ব্যাপার মাত্র—যার উদ্দেশ্য procreation’ যা পুরুষের ক্ষেত্রে মিলনসুখের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে,কিন্তু মেয়েতে যে দুটো আলাদা: ‘যৌনসুখে মেয়েরা procreationএর কথা ভাবেই না’ ‘তার যৌন আনন্দের মধ্যে কোনো procreative urge নাই,ওটা purely psychological’ এর মত বিবৃতি আজ অর্থহীনতায় পর্যবসিত হয়েছে| বরং সংবরণের মাধ্যমে যৌন ক্রিয়ার একটা ব্যবহারিক তাত্পর্য্য সহজেই স্বীকার করা যায় যার সঙ্গে পুরুষের উত্তেজনার ও তার প্রশমনের steep curve এবং মেয়েদের দীর্ঘায়িত প্রস্তুতির পর orgasm এর একটা মানবিক সামঞ্জস্য টানা যেতে পারে,আধুনিক স্নায়ুশারীরবৃত্ত ও popular যৌনাচার প্রচারক দু-দলই যাতে একমত হবেন|

    এবারে আসা যাক কিছু সাধারণ আলোচনায়| প্রথম থেকেই এই কাম-সংযম ও বীর্যধারণ,বিন্দুধারণ ও সৌর্যবরণ,orgasm পরবর্তী নিষ্ক্রিয়তার ও ভাবসমাধি এবং সর্বোপরি সংযমের শক্তির ঊর্ধস্রোতা হয়ে ভ্রু-মধ্য ও মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার এই আশ্চর্য প্রকল্পের কোনো আধুনিক বা অনাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না| সংযম এমনিতে খুবই মানবিক,বিশেষত আমাদের মত মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের জন্য সবচাইতে দরকারি আসনই বলা চলে| কিন্তু তার কারণ স্বতন্ত্র : নিড আর গ্রীড এর পার্থক্য করার কথা আজকের দিনের অনেক যোগ্য ও অপারগ বিপ্লব্মনস্কও বলে থাকেন;কিন্তু সেখানে ওসব ঊর্ধস্রোতা ওজঃশক্তি কিম্বা neon rod সদৃশ মেরুদন্ডের গল্প থাকে না| ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ গানের উল্লেখ করে লীলাবিলাসের ধারণাকে validate করার প্রচেষ্টা যথাযথ’এবং সত্যি তো মানুষ কেবল এবং কেবলমাত্র শরীরী মিলন নিয়ে যৌনতার দুনিয়া গড়ে না,গড়ে নি| একটু ছোঁয়া,বা গলার স্বর,এমনকি সুর,বা আরো বিমূর্ত কোনো ভাবের মধ্যেও সে যৌনতা খুঁজে পায়| তা নইলে এত প্রনয়-বিরহ-মিলন-বিচ্ছেদ এর আলোছায়া ফুটতে আমরা দেখতে পেতাম না| কিন্তু ‘সম্প্রয়োগ’ বা মিলন বিহীন ‘লীলাবিলাস’ বা প্রেম এর স্ফূর্তি যা কিনা মানুষকে ‘দিব্যোন্মাদ’ করে,তার ওপর জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সন্তানকামনা জাগলে তখন ‘ত্যাগের দ্বারা ভোগ’ করে ‘দিব্যসম্প্রয়োগ’ করে নিলেই চলবে,‘যোগিনীভূ’ সন্তান জন্মে যাবে তাতেই: christ বা কৃষ্ণের মত—এ বড়ই স্বেচ্ছাচারিতা নয় কি? অর্থাত আমি সবই করতে পারব,কিন্তু তার মধ্যেই আর পাঁচজন সাধকেতর মনুষ্যকুলের চাইতে ঢের স্বতন্র হয়ে বসে থাকব সব কিছুর সঙ্গেই একটা করে ‘দিব্য’ জুড়েদিয়ে| এ বড়ই দিব্য ব্যবস্থা বটে|
    আর বাস্তবিক,এমত ধারণা বা বিশ্বাসসমূহের বিশিস্তদের মধ্যে যাদের আমরা চোখে দেখতে পাই,তাদের কাউকেই তো এ সব ‘ত্যক্তেন ভুন্জিথা’ করতে চোখে পড়ে না| হতে পারে আমি বিপ্লবে বিশ্বাস করি কিন্তু বিপ্লবীর আচরণ আমার সাধ্যে কুলোয় না| কিন্তু ‘বিপ্লবীর’ মত আচরণে এরকম কোনো আষাড়েপনা নেই যে কেউ ইচ্ছে করলে সেসব করে দেখতে পারবে না| করেছে এমন লোকের দৃষ্টান্তও কিছু বিরল নয়,আর সে সব পারা অত্যন্ত কঠিন তাতে সন্দেহ না থাকলেও সেগুলো পালন করা ultra-feasible কোনো বোধের অগম্য ব্যবস্থা নয়| কিন্তু sacral plexus থেকে যৌন সংযমের শক্তিকে মেরুদন্ডের মধ্যে দিয়ে মূর্ধা হয়ে মহাশূন্যগামী করার কোনো বস্তুগত feasibiliটি নেই| শুধুমাত্রই ‘বিশ্বাসে মিলে...’| অথচ প্রশ্ন করলেই শুনতে হবে: ‘আপনি কি করে দেখেছেন?’ ঠিক যেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ যে মেরুপ্রদেশে কম আর নিরক্ষে বেশি সেকি আপনি মেপে দেখেছেন? কিম্বা এভারেস্ট এর চেয়ে উঁচু চূড়া নেই একই আপনি জরিপ করেছেন? বা e=mc২ এ সুত্র আপনি মিলিয়েছেন কি? মহাবিশ্বের যেকোনো দুটো বস্তু তাদের কেন্দ্রসংযোজি সরলরেখা বরাবর পরস্পরকে আকর্ষণ করে একই আপনার নিজের চোখে দেখা? মুরগি বা ডিম কেউই যে কারুর আগে আসেনি সেকি আপনার হাতে-কলমে করে দেখা? শুনলেই বোঝা যাবে যুক্তির রাস্তায় হাঁটার সম্ভাবনাকে নস্যাত করার চেষ্টাতেই এসব প্রশ্ন| সমাধান শুধু ভাবসমাধিতে| যেখানে কোনো প্রশ্ন জাগে না| সে আইকন বিবেকানন্দ কি অনাবিষ্কৃত অনির্বান যেই হন না কেন|
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন