এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শর্টকাট লংরুট

    Avishek Mazumder লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৩ মে ২০১৫ | ২৪২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Avishek Mazumder | ১৩ মে ২০১৫ ২২:১৪676090
  • ট্রেনটা বেশ ফাঁকা, বছরের এই সময়টায় হয়তো এই লাইনের ট্রেনগুলো এমন ফাঁকাই থাকে; বোধহয়। ভরা বর্ষায় কোলকাতা ফিরছি এই বছর দশেকে এমনটা আগে হয়নি। একটা সময় ভালোলাগতো এসব এখন আর না; জমা জল, সুবুজ চোয়ানো ঝোপঝাড়, কাঁদা, ব্যাঙের ডাক এখন আর লাগে না। এখন নব্বইয়ের দশকের কোলকাতাও বদলেছে, আমরাও বদলেছি। এদিক ওদিক থেকে যা কানে আসে অনেক শান্ত হয়েছে শহরটা, সদ্য বিয়ে করে ছেলেরা যেমন পালটে যায়। ক্ষ্যাপাচোদা কবিদের ভিড় নেই, হিপ্পিরা প্রান্তিক, হুলিগানস গুলোও এক ছাতার তলায় এসেছে, মাঝ বয়সি আঁতেল রয়েছে কিছু যদিও সেগুলো বিপদসীমার বাইরে থেকে নাচানাচি করে তাই বিপদজনক নয়। এসব ভাবতে ভাবতেই বেশ চলছিল। বিজয়ওয়ারা থেকে এক ছোকরা উঠেছে ট্রেনে। গাল ভরতি দাড়ি, গায়ের রঙ তামাটে দেখে ঠিক বাঙালি বাঙালি লাগছেনা। যদিও সেটা বিচার্য নয় যেটা ঘটনা ছেলেটা কেব্লার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আগেরবার পুজোর দেশটায় মুখগুজে চোখটা বোধহয় লেগে এসেছিল। ‘অনির্বাণ দা ভালো আছো?’
    এখানে আমাকে সবাই ভট্টাচার্য বাবু বলেই ডাকে, অপরিচিত কণ্ঠে নামটা শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। দেখলাম সেই ছেলেটাই ডাকছে। তোমাকেতো ঠিক চিনলাম না...
    -আপনিই অনির্বাণ ভট্টাচার্য তো? মানে কবিতা লিখতেন
    একটা বই রায়েদের দিয়ে ছাপিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু সেসব তো অনেকে আগের কথা। ওসব তো আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি। এত দিন পরে এই ছেলে এসব জিজ্ঞেস করছে কেন, ওর মতলবটা কী? আমি হয়তো না বলে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে এসব এড়িয়ে যেতে পারতাম কিন্তু ওই যে... হ্যাঁ তুমি কে হে? আমাকে চিনলেই বা কী করে? কবিতা তবিতার বই সে সব তো অনেক আগে কথা।
    -না আসলে ওই ছাপাখানার সাথে আমার একটা সম্পর্ক...
    তা কী করা হয়, তা চেহারা ছবি দেখে অন্তত মনে হচ্ছেনা খুব একটা কিছু করা হয়।
    -ওই এখানে একটা কারখানায় কাজ করি। ওখানেতো কাজের যা হাল। আচ্ছা টিটি তিকিত নিয়ে চলে গেছে না, তাহলে বোধহয় রাতে আর আসবেনা। একটু হবে নাকি দাদা ছোট করে?
    এই হচ্ছে এদের সমস্যা, চেনা নেই যানা নেই মদ খাওয়া চাই। যদিও কতদিন আগে শেষ এভাবে মদ খেয়েছিলাম মনে নেই। খেলে কিছুই আসা যাবে না। মালটা আমার নাম জানে ঠিকই, জানে কবিতা লিখতাম ওই পর্যন্তই। কালাঙ্গুটে একটা হোটেল খুলেছি ও জানে না। আমার সুটকেসে হাজার ষাটেক টাকা আছে ও জানে না। আর দু ঢোক মদ খেয়ে লোড়কে পড়ার লোক আমি নই। মাঠে ঘাটে একটা সময় কীভাবে কাটিয়েছি এই পুচকে ছোরা জানেনা। রাতের কোলকাতার রাস্তার ভাগাভাগি এ জানেনা। একটা রাতে একসাথে বসে মাল খেলে কিছুই যায় আসবেনা। দাও বোতলে মেশাতে হবে না মিশিয়েই রেখেছ? ছেলেটা কিছু না বলে কিছুটা বোতলের জল জানলা দিয়ে ফেলে দিয়ে মদ ঢেলে বোতলটা আমার হাতে দিল। এক ঢোক এক ঢোক করে বোতলটা শেষ করলাম দুজনে। জানলা দিয়ে হাওয়া ঢুকছে ফাঁকা কামড়ায়, মাথাটা একটু ধরেছে, শরীরটা ঘামিয়েছে আমি ছেলেতাকে বললাম চল সিগারেট টেনে আসি। বেশ হু হু করে দৌড়ে যাচ্ছে ট্রেনটা। দরজার পাদানিতে পা রেখে দুজন বসে সিগারেট খাচ্ছি কাউন্টারে। হঠাৎ।
    -অনির্বাণ দা আপনার গৌরাঙ্গ সেনগুপ্তের কথা মনে আছে।
    আমার হয়তো সত্যি নেশা হয়েছে। ভুল কিছু শুনছি হয়তো। আমি কোনো কথা বললামনা। ছেলেটা বলে চলল।
    -গৌরাঙ্গ সেনগুপ্ত মানে আপনি শেষ দিকে যে জোনটায় ছিলেন তার স্কোয়াড লিডারের নামটা আপনি এত সহজে ভুলে যাওয়ার লোক তো আপনি নয়। বুধবার যে ওখানে মিটিংটা হবে সেটা তো জানতাম চারজন। আমি, আপনি, তপন হালদার আর গৌরাঙ্গ সেনগুপ্ত। সেখেনে মিটিং হল, পুলিশ এল গুলি চলল আর আমি আপনি কীকরে বেঁচে গেলাম বলুনতো? আরে বলাই হয়নি আমি রক্তিম, গৌরাঙ্গ সেনগুপ্তের ছেলে যদিও সেটা আমার পরিচয় নয়। আমিতো তখন সবে দশ কি নয় নেহাত দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বাবা আর আপনার কথা শুনে ফেলেছিলাম বলে জানতাম মিটিংটার কথা। আপনার কেসটা ঠিক কি ছিল আজ না হয় বলেই দিন। আমি কাউকে বলবনা। এই যে আমি এখানে এখন আপনার সাথে এটা নিছক কোনো ঘটনা নয় কিন্তু। আমি একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজেই এখানে আপনার সাথে...
    দুদিনের ছোকরা বড্ড বেশিই বুঝে গেছ, কী বলছ যা ইচ্ছে বানিয়ে বানিয়ে।
    -না না দল আমাকে এক্সপেল করবে না। কী করবো বলুন ফান্ডের জন্য কিছুতো লাগে। বিশ্বাস করুন এটা প্রতিহিংসা নয়। আপনি আমার শুধু শত্রু হতেই পারতেন কিন্তু তা তো নয় আপনি যে আবার শ্রেণী শত্রুও বটে। কী আর করি...
    গল্পটা আরো একটু খানিক চলবে। ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কোন প্রমান খুঁজে পাওয়া যাবেনা বা সেটা সময় সাপেক্ষ। আমার সিটের নিচে রাখা সুটকেসটাও নেই। আজ টিটি ওঠেনি, আমার ট্রেনে ওঠার প্রমাণটাও নেই বললেই চলে।
  • শঙ্খ | ১৩ মে ২০১৫ ২৩:৪২676091
  • বাঃ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন