এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেঁচে আছিঃ প্রেমে-অপ্রেমে

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০১ অক্টোবর ২০১৪ | ২১৪২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 113.242.197.138 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৫৩651176
  • ২)
    " আলোছায়া দোলা"
    -------------------
    এটা কি পুরনো ডকুমেন্টারি ? ফিল্মস ডিভিশনের? আর খুব বাজে প্রিন্ট? নইলে সব ধোঁয়া ধোঁয়া ঝাপসা ঝাপসা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কেন? ঠিক যেন টিবি রোগীর বুকের এক্স-রে প্লেট!
    ক্লোজ আপে রেলস্টেশনের সাইন বোর্ড-- কোরবা।
    ক্যামেরা প্যান করে বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাজারটাকে ধরছে।
    একটা সোনাচাঁদির দোকান।
    কেমিক্যাল ব্যালান সের ক্লোজ আপ। একদিকে চিমটে দিয়ে তোলা ছোট্ট ছোট্ট বাটখারা। আর একদিকে সোনার গয়না-- কানে পরার ঢার, গলার মটরমালা, নাকছাবি। আবার রূপোর নাগমুহুরি, করধন, তোড়া এইসব। ক্যামেরা জুম ইন করে দাঁড়িপাল্লার কাঁটাটাকে ধরেছে। রোদ্দূর পড়ে চকচক করছে। পাল্লা উঠছে নামছে। কোন ডায়লগ নেই ,সব বোবা। কিন্তু সাউন্ড ট্র্যাকে কেউ একঘেয়ে সুরে বলে চলেছেঃ
    - খরিদ-বিক্রি, নাফা-ঘাটা, বাট্টা- মিলাবট।
    ক্যামেরা এবার গেছে পাশের মানিকপুর কলিয়ারির গেটে। লাইন দিয়ে ময়লা জামা হেলমেট মাথায় মজদুররা টিপ ছাপ দিয়ে মুন্সীজির কাছ থেকে পেমেন্ট নিচ্ছে।
    সাউন্ডট্র্যাকে সেই একঘেয়ে বিরক্তিকর কন্ঠস্বরঃ
    -- রোজি-হপ্তা, কামাই-কাটৌতি, ওভারটাইম-মেডিকেল, শিফ্ট-সাইরেন।
    সীতামন্ডির কাছে পশুমেলা। লং-শটে অগুনতি গোরুমোষ।পাইকার ক্রেতা । ক্যামেরা কাছে আসে। একজন পাইকার গোরুর মুখ হাঁ করিয়ে তার নীচের পাটির দাঁত গোনাচ্ছে। আর একজন লেজ তুলে মোষের পেছনে কাঁটা লাগানো খেঁটের খোঁচা দিচ্ছে। একজন জার্সি গরুর দুধেভরা থন দেখাচ্ছে।
    সাউন্ড ট্র্যাকে সেইঃ মোল-ভাও, নাফা-নুকসান, নগদ-উধারি।
    ক্যামেরা পবন টকিজের সামনে দিয়ে ঘুরে পাশের গলিতে।
    রং মেখে কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে। দালাল ও গ্রাহক। মেয়েটি আঁচল ফেলে দিচ্ছে। একজন ওর হাত মুচড়ে দিল। অন্য মেয়েটির পাছায় চাপড় মেরে একজন গ্রাহক হেসে চলে গেল।
    ঃ খরিদ-বিক্রি, নাফা-নুকসান, মোল-ভাও, উতার-চড়াও।
    এবার হসদেও নদীর পাড়। নদীতে জল কম, লোক হেঁটে পার হচ্ছে। ওপারে মন্দিরের চুড়ো, এপারে রেললাইনের ধারে গির্জাঘর।
    সাউন্ড ট্র্যাকেঃ সিনার-ব্লেসিং, লস -প্রফিট, কনফেশন- ব্লেসিং।
    এই বার ক্যামেরা এগিয়ে চলেছে শহরের একটু বাইরে নতুন গড়ে ওঠা পাড়াটায়।
    একটা পার্কের সামনে একটা সাদা বাড়ি। বাউন্ডারি ওয়ালে ফুলের টব। লোহার গেটে বোগেন্ভিলিয়া।
    দরজায় নেমপ্লেটে কোন নাম লেখা।
    ক্যামেরা জুম ইন করে, বড় ক্লোজ আপ।
    হ্যাঁ , পড়তে পারছি--
    সমীর কুমার বিশ্বাস,
    ডায়রেক্টর, পিপলস্‌ হেল্থ মুভমেন্ট।

    ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। কারেন্ট চলে গেছে। ঘেমে একসা।
  • 4z | 208.231.20.20 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৮651177
  • তারপর??
  • Abhishek | 132.163.6.101 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৩৫651178
  • অপেখই রৈলম
  • Nina | 83.193.157.237 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:৫৩651179
  • তারপর??!!
  • ranjan roy | 24.99.48.179 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:৪৬651180
  • গা ম্যাজ ম্যাজ করছে। শরীরটা জুত লাগছে না। এক কাপ চা পেলে ভাল হত।
    কিন্তু এঁটো বাসন ডাঁই হয়ে আছে। রান্নাঘরের প্ল্যাটফর্মটা নোংরা।
    কিন্তু কাজের মেয়েটি এখনো আসে নি। মানে, আসার সময় হয় নি। কেউ বাউন্ডারি ওয়ালের গেটটায় ঠনঠন আওয়াজ করছে। আচ্ছা, কারেন্ট নেই, তাই কলিং বেল বাজছে না। হয়ত ডেয়ারির দুধের প্যাকেট নিয়ে এসেছে। যাই, গেট-টেট খুলি গে'।
    আর চায়ের বাসন ধুয়ে নিয়ে জল চড়াই। সকালবেলা আদা দিয়ে কড়া করে এককাপ কড়িমিঠি চা খেলে চাঙ্গা হয়ে উঠব।
    উঃ, কী বিচ্ছিরি একটা স্বপ্ন দেখলাম। আর গোটা বাড়ি ফাঁকা।সমীরদা গেছে দিল্লি, ওদের ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির কোয়াটার্লি রিভিউ মিটিংয়ে। ওর ফেরার প্লেন আজ সন্ধ্যের দিকে। রায়পুরের মানা এয়ারপোর্টে নেমে অফিসের কারে বিলাসপুর হয়ে কোরবা। ২২৫ কিলোমিটার। পাক্কা ছ'ঘন্টা নেবে। কাল রোববার। সমীরদার জান্যে চিকেন কারি বানাতে হবে। সে সকালবেলায় নিজেই বাজারে গিয়ে দেখে নেবে খন।
    আচ্ছা, আপনাদের এই বকবকানি ভাল লাগছে না, তাই না? কেন লাগবে? আপনারা সব দিব্য খেয়ে পরে আছেন, আর এই সমীর বলে ছেলেটা প্রথম জীবন কষ্ট করেছে, কখনও আধপেটা কখনও না খেয়ে থেকেছে-- কী না বিপ্লব করবে! আর আজ ওর মাথার ওপর ছাদ জুটেছে, পরণে ভদ্র কাপড়, দুবেলা পেটভরে খেতে পাচ্ছে, অন্যদেরও খাওয়াচ্ছে-- এ আপনাদের ভাল লাগছে না?
    এই যে ও আজকাল প্লেনে করে দিল্লি যায়, অফিসিয়াল কাজে-- তাতে কার কি ? তো আপনাদের কোথায় খুজলি হচ্ছে বলুন তো?
    না কি ও একবার বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে পথে নেমেছে বলে ওর ঘরে ফেরার রাস্তা বন্ধ?
    আরে, প্রথম জীবনে স্বপ্ন তো অনেকেই দেখে, বহুত উঁচা উঁচা স্বপ্ন! বড়ী বড়ী খোয়াব।
    বেশ, যে ছেলেটা ফিল্ম বানাবে বলে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিল বা যে মেয়েটি হিরোইন হবার স্বপ্ন দেখে পালিয়েছিল, তারা স্বপ্নভঙ্গ হলে ঘরে ফিরতে পারবে না?
    যে প্রেমিকের স্তোকবাক্যে ভুলে গাঁ ছেড়ে হয়ে কামঠিপুরা, জিবি রোড, বুধবার পেঠ বা সোনাগাছিতে পাচার হতে হতে বেঁচে গেল তার আর আগের জীবনে ফেরার হক নেই!
    আপনারা মাইরি কম তালিবানি বা খপ-পঞ্চায়েতি ন'ন।
    ও হো! বুঝেছি, বুঝেছি। সেই সিধুদার আর তার ন্যাকা বৌয়ের আর্গুমেন্ট!
    শুনুন, আমাদের এক সিম্প্যথাইজার। বাঙালী, গা গরম করা বিপ্লবী কবিতা লেখে। পাবলিক সেক্টরে ছোটমতো অফিসার।
    সেবার বিলাসপুরে আমি সমীরদার সঙ্গে ওদের বাড়িতে গেছি। তখন দুবেলা খাওয়া জোটে না। ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখে ভদ্রলোক ভেতরে গেল।এক গেলাস জলও দিয়ে যায় নি।
    আমাদের চাহিদা ছিল সামান্য। পার্টির পত্রিকা নিন, দামটা দিন। কিছু পুরনো জামাপ্যান্ট বা সোয়েটার পারলে দিন। লেভি দিন।
    আর দুমুঠো চাল ও দু-একটা আলুবেগুন দিলে ঘরে ফিরে সেদ্ধ ভাত বসিয়ে দেব।
    তো সিধুদা যে ভেতরে গেছে তো আর আসে না। আমরা ভেতর থেকে উত্তেজিত কথা বার্তা শুনতে পাচ্ছি।
    এমন সময় বৌদি বেরিয়ে এসে আমাদের রুঢ় ভাবে বললেন-- এখন বাঈ ঘরটা মুছবে, আপনারা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। অগত্যা।
    একটু পরে সিধুদা এসে গুনে দুটো আলু আর একটা লম্বামত বেগুন দিল। আর একটা প্যাকেটে কিছু চাল।
    সমীরদা বলল- -- কমরেড, এসব তো হবে 'খন। আমি তো আপনার কাছে পার্টির নতুন খসড়া নিয়ে এসেছি, সামনে কংগ্রেস। কিছু আলোচনা করতে চাইছিলাম।
    --- দেখ সমীর, তোমার বৌদি তোমাদের এ'বাড়ি আসা পছন্দ করছেন না। আমিও বলি, এখন তো বিপ্লবের কোন সম্ভাবনাই দেখতে পাচ্ছি না। তাই এখন খসড়া প্রস্তাব বা পার্টির কাগজ কিছুতেই আমার উৎসাহ নেই। ওসব আর দিও না।ভবিষ্যতে যখন ডাক আসবে--।

    এর দু'বছর পরে সমীরদা কোরবার হেল্থ মিশনে টেরিটোরি ম্যানেজার হয়ে হিরো-হোন্ডা বাইকে দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে লাগল। তখন একদিন সিধুদার বাড়িতে গিয়ে হাজির। ওর জামাকাপড়, বাইক ও চালচলনে পরিবর্তন দেখে দাদা-বৌদির কি রাগ!
    সমীরদাকে ঝেড়ে কাপড় পরিয়ে দিল।
    -- তোমার লজ্জা করে না! একদিন বিপ্লবের নাম করে ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলে। কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছিলে। আর আজ? সাম্রাজ্যবাদী আম্রিকার ফান্ডেড মিশনের এনজিওর ছত্রচায়ায় প্রাক্তন বিপ্লবী আরামের জীবন যাপন করছে! তুমি রেনেগেড! বিপ্লব হয়ে গেছে? দম বেরিয়ে গেল? দেশে কোতি কোটি মানুষ না খেয়ে রয়েছে আর তুমি?
    -- দাদা, শুনুন শুনুন। কোন আরামের হারামী জীবন নয়। খাটিয়ে মুখে রক্ত তুলে দেয়। আর এই চাকরি কয়দিন থাকবে জানি না। আমার আর লতার শরীর ভেঙে গেছে। হ্যাঁ, আমরা মিশনের হাসপাতালে ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছি, এইটুকুই।

    তা আপনাদের ভাবভঙ্গি দেখছি সেই সিধু-দম্পতির মতই। কি আর বলব! ভগবান আপ কা ভলা করেঁ।
    আর এটাও শুনে রাখুন-- " সুবহ কী ভুলা অগর শাম কো ঘর লৌট আতে তো উসে ভুলা নহীঁ কহতে!"
  • se | 188.83.87.102 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩২651181
  • পড়্ছি
  • ranjan roy | 113.242.196.80 | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৮651182
  • ৩)
    "জানি জানি এই অলাতচক্রে চংক্রমণ,
    সোৎপ্রাশ পাশে বলি নাকো তাই কোন কথা,
    জিজীবিষা প্রজাপতির বিভ্রমণ"।
    -----------------------------------------
    সমীরদার অবস্থা এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। ছোট শহরে শুধু নয়, একটা বড় এলাকায় ওকে এখন অনেক লোকজন চেনে। ওর বামপন্থী ঝোঁকও মিডিয়া বোঝে। তাই কোন বিশেষ ঘটনা হলেই ওর বাইট নেয়।
    --- আপনি একজন বিশিষ্ট সামাজিক কার্যকর্তা। বর্তমান ব্যব্স্থায় শ্রমিকদের দুরবস্থা, কর্পোরেট হাউস গুলোর শ্রমবিরোধী নীতি ও শাসকদের বড় বড় প্রতিশ্রুতির আড়ালে পুঁজির স্বার্থরক্ষার বিরুদ্ধে আপনি বেশ সরব। এই যে আদিবাসী কন্যা ছাত্রাবাসে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ভদ্রলোকটির বিরুদ্ধে যৌনশোষণের ঘটনা সামনে এসেছে -- এটা আপনি কী ভাবে দেখছেন?
    --- এর জন্যে দায়ী ভুমন্ডলীকরণ ও সরকারের আর্থিক উদারীকরণের নীতি।
    -- বুঝলাম না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদিবাসী মেয়েদের রেপ হওয়ার সঙ্গে গ্লোবালাইজেশন ও লিবারেলাইজেশনের কী সম্পর্ক? বিশেষ করে ধর্ষক লোকটি যখন নিজেও আদিবাসী এবং ছোট স্তরের সরকারী কর্মচারী, কোন কার্পোরেট প্রভু নয়?
    --- আপনাদের পক্ষে বোঝা একটু চাপ, সেটা জানি। আগেও বলেছি যে এই উদারীকরণ ও প্রাইভেটাইজেশনের দর্শন হচ্ছে মুনাফার নাংগা নাচ। যার যত পুঁজি সে তত শ্রদ্ধেয়, তত সামাজিক ক্ষমতার অধিকারী। সরকার তো এদেরই পৃষ্ঠপোষক।
    এরা আদিবাসী মেয়েদের দেখে উপভোগের সামগ্রী হিসেবে, মানুষ হিসেবে নয়। আর ভারতবর্ষে ক্লাসিকাল পুঁজিবাদের বিকাশ হয় নি, এই দো-আঁশলা ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের মূল্যবোধে ফিউডাল মূল্যবোধ মিলে মিশে আছে। সরকারী আমলা সে যত ছোট পদেই থাকুক, নিজেকে এই ক্ষমতার এই দর্শনের একজন ভোটারি মনে করে। বিপদ সেখানেই,
    -- ধন্যবাদ। আমরা একজন ডেডিকেটেড সামাজিক কার্যকর্তা ও চিন্তাবিদ শ্রীমান সমীর সেনের মূল্যবান অভিমত শুনলাম। আশা করি, সরকার বাহাদুর এর থেকে শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের সুরক্ষার জন্যে কিছু স্টেপ নেবে।

    পরের দিন যখন এই সাক্ষাতকারটি টেলিকাস্ট হয় তখন বাড়িতে জনাকয়েক প্রতিবেশীর জন্যে চা বানাতে হল। ওরা সমীরদাকে কংগ্রাটস্‌ বলে চা খেয়ে হাত মিলিয়ে চলে গেল।
    সমীরদা আমার দিকে দেখছিল। আমি কিছুই বলছিলাম না। রেডিও মির্চি অন করে দিলাম,
    -- কী বল লতা? ঠিক বলিনি?
    আবার সেই উৎকট হাসির রোগ। হাসতে হাসতে মুখে আঁচল চাপা দিই। সমীরদা বিরক্ত। কী হল?
    --- না , বলছিলাম কি যখন প্রকাশ্য রাজসভায় একগাদা ব্যাটাছেলের সামনে দ্রৌপদীর কাপড় খুলে নেওয়া হল সেটা তো দ্বাপর যুগ। তখন কর্পোরেটই কে? আর আর্থিক উদারীকরণই বা কোথায়?
    ও খচে বোম।
    --দুটোর মধ্যে কোন তুলনা হয় না। কোন কমন ফ্যাক্টর নেই। আর দ্রৌপদীরটা রেপ নয়।
    আমার হাসি বন্ধ হয় না।
    -- কী যে বল সমীরদা! ওটা রেপ নয়? আরে বর্মা কমিশনের রিপোর্টের সামারি তো তুমিই আমাকে পড়িয়েছিলে। আর কমন ফ্যাক্টরগুলো দেখতে পাচ্ছ না? বড়সড় দুটো আছে যে!
    দুটো কেসেই যার কাপড় কেড়ে নেওয়া হয় সে নারী, আর যারা দলবেঁধে কেড়ে নেয় তারা পুরুষ।
  • ranjan roy | 24.99.122.157 | ০২ মার্চ ২০১৫ ১৫:০০651183
  • নাঃ, আমার হাসির রোগটা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কী করি বলুন তো!
    এক সন্ধ্যেয় সমীরদা কোরবা আর বিলাসপুরের কিছু বাম-বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে একটা গণ কনভেনশনের মত কিছু একটা করল।কোলকাতা থেকে কেউ এসে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। অল্পবয়সী ভদ্রলোকটি বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারেন। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছে।
    -- এই ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের ঢেউ আজ নতুন নয়।ভারতে এর প্রণেতা হলেন মনমোহন সিং। এঁদের উন্নয়নের মডেলে গরীব মানুষ, প্রান্তিক সমাজের লোকজন কোথাও নেই। তাহলে এই লোকগুলো যাবে কোথায়? মরে যাবে? না, ঠিক তাও নয়। এদের অনেকেই যে শাসক শ্রেণীকে ক্ষমতায় আনার জন্যে ভোট দেয়।
    তবে? এরা বাঁচবে, বেঁচে থাকবে উন্নয়নের এঁটো-কাঁটা খেয়ে। একটু খুলে বলি।
    এদের উন্নয়ন মডেলটির নাম--ট্রিকল ডাউন এফেক্ট। চুঁইয়ে পড়া উন্নয়ন। গালভারি নাম। এর আসল মানে হল -- উন্নয়নের ল্যাংড়া আম ধনীরা চুষে খাবে , সেই খাওয়ার সময় যতটুকু রস কনুই বেয়ে গড়িয়ে পড়বে তাই ফোঁটা ফোঁটা করে খেয়ে গরীবেরা পরের দিন খাটতে যাওয়ার মত এনার্জি পাবে।
    তাই গরীবদের জন্যে আলাদা করে ভাবার দরকার নেই। চাই গ্রাম উচ্ছেদ করে মেগাসিটি, মল, মাল্টিস্টোরিজ। আমোদগেঁড়েদের জন্যে মাল্টিপ্লেক্স, দামী টিকিট ও ফাস্ট ফুডের প্যাকেজ। ছোট ছোট সিনেমাহল বন্ধ হয়ে যাক।
    কিন্তু এতেও ভবি ভোলে না। তখন গরীবদের স্বপ্ন দেখাতে হয়। আইটির স্বপ্ন। জমি জিরেত বন্ধক দিয়ে ছেলেকে করাও আইটির কোর্স, শহরের কোন দোকানে। ব্যস্‌, আর ভাবতে হবে না-- ছেলে ইঞ্জিনিয়ারদের সমান মাইনের চাকরি পাবে।
    কিন্তু শেষে কী হয়? ছেলে হয় কম্পিউটার ক্লার্ক। এক-আধজন নয়, গন্ডায় গন্ডায়। পাঁচ-ছ'হাজার মাইনেতে সেজে গুজে এসি রুমে বসে টাইপ করে আর কি!
    আর চাই মোবাইল ফোন, ভাল জুতো, পিটার ইংল্যান্ড, ডানহিল আরও সব ব্র্যান্ডের শার্ট। ফেস বুক, চ্যাটিং, সেলফি! লাইক দেয়া-নেয়া। সে ছেলে বাবা-মার জন্যে সংসারে টাকা দেবে!
    প্রবল হাততালি!
    কিন্তু ছোট্ট হলে জনা-ষাটের জমায়েতে একটা বিবাদী স্বর বেজে ওঠে। আমার পেট মুচড়ে কুলকুলিয়ে হাসি ওঠে। চাপতে চাই, পারি না। কেমন করে যেন ফিক-ফিক নয় বিকট হা-হা হাসিতে সভা স্তব্ধ হয়ে যায়।
    ছোটবেলায় আমাদের মাইনিং শহরের বেঙ্গলি ক্লাবের আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় শোনা একটি লাইন মনের স্ক্রীনে ভেসে ওঠে।
    "সভা হল নিঃস্তব্ধ,
    বন্দার দেহ ছিঁড়িল ঘাতক সাঁড়াশি করিয়া দগ্ধ"।
    ডায়াস থেকে সমীরদার চাউনি গরম সাঁড়াশির মতই আমার দিকে এগিয়ে আসে।
    আমি নিজেই বুঝতে পারি না, এটা কী হল, কী করে হল!
    মঞ্চ থেকে বয়স্ক সভাপতি আমাকে রাগত ভাবে জিজ্ঞেস করেন--- কমরেড, আপনার হাসির কারণটি জানতে পারি কি!
    উনি আমাকে চেনেন না, কিন্তু এই হলের অনেকে আমাকে চেনে কমরেড সমীরের লড়াকু জীবনসঙ্গী হিসেবে।
    ভ্যাবাচাকা খেয়ে উঠে দাঁড়াই।
    -- আমরা অপেক্ষা করছি,; আমরা সবার মত নিয়েই আগামী কাজের পথ বা দিশানির্দেশ ঠিক করতে চাই।
    -- না, মানে আসলে আমার মনে হয়--
    --কী মনে হয়?
    --- মনে হয় আমাদের কথনী অউর করনী , মানে মুখের কথার ও কাজের মধ্যে যে ফারাক আছে তা কমিয়ে আনা উচিত।
    -- যেমন ?
    -- যেমন মঞ্চে নেতৃস্থানীয় কেউ কেউ ওই সব গ্র্যাভিয়েরা, পিটার ইংল্যান্ড বা ডানহিলের দামী জামা পরেন। এটা ঠিক না। লিডাররা তো রোল মডেল হবেন।
    --- আপনি কী করে জানলেন? কী করে এত নিশ্চিত?
    -- আমার স্বামীকে ওইসব শার্ট, আড়াই হাজার তিন হাজার দিয়ে আমিইতো কিনে দিই।
    -- কে আপনার স্বামী?
    আমি উত্তর না দিয়ে শরীরটা ভাল লাগছে না বলে বাইরে বেরিয়ে যাই।
  • ranjan roy | 24.99.109.165 | ০২ মার্চ ২০১৫ ১৫:৩১651184
  • আমার বেয়াড়া হাসির রোগ অনেকবার সমীরদাকে বিপদে ফেলে, দু-একবার ওকে ক্ষমা চাইতে হয়।
    আস্তে আস্তে আমার বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়।
    কিন্তু খালি বাড়ি। ফাঁকা ফাঁকা। অস্থির অস্থির লাগে। কহাঁতক টিভি সিরিয়াল দেখা যায়!
    শেষে বলি-- তুমি তো এখন ডিরেক্টর, আমাকে তোমার অর্গানাইজেশনে কোন ছোটমোটো কাজে লাগিয়ে দাও না! খালি রান্না করা আর ঘর গোছান-- ভাল লাগে না।
    --- তা হয় না, লতা। একই সংস্থায় স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-বোন কাজ করলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। কিছু না হলেও দুষ্টু লোকে খুঁত ধরতে স্বজন-পোষণের অভিযোগ করতে পারে। খামোকা আ বৈল, মুঝে মার (আয় রে বলদ আয়, দে ঢুঁসো পাছায়) করতে যাব কেন?
    --- তা হলে অন্য কোথাও, ধর কোন বাচ্চাদের স্কুলে লাগিয়ে দাও। তুমি তো জান আমি বাচ্চাদের কত যত্ন নিয়ে পড়াতাম। আর কোরবায় এত স্কুল! মিশনেরই তো গোটা চার।

    সমীরদা কথা রেখেছিল। একটা ভাল স্কুলে লাগিয়ে দিল। কিন্তু আমারই কপাল খারাপ। টিকতে পারলাম না।
    সেদিন শরীরটা খারাপ ছিল। তাই সমীরদা ওর গাড়ি করে আমাকে নিয়ে যেতে এল।
    পরের দিন দু-একজন টিচার বলল-- তোমার বড় ছেলে বেশ হ্যান্ডসাম। নিশ্চয়ই অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে। একটু খেয়াল রেখো।
    --- বড় ছেলে? তাকে কোথায় পেলে?
    -- বাঃ! কাল তোমাকে নিতে এসেছিল না, গাড়ি নিয়ে?
    -- ধ্যেৎ, কি যে বল ন্যান্সি? ও তো আমার হাজব্যান্ড।
    এবাঅর ব্রিজেট ফুট কাটেঃ
    -- হাজব্যান্ড? রিয়েলি? তাহলে বোধহয় তোমার চেয়ে ছোট। সো হোয়াট? অমন কত হয়, আমাদের সমাজে এটা কোন ব্যাপার নয়।
    রাগে সর্বশরীর জ্বলে যায়।
    -- শোন, তোমরা দু'জন চোখের পাওয়ার চেক করাও। ক্রিশ্চানদের সমাঅজে কী হয় জানিনা, জানতেও চই না। আমাদের ওর'ম বিয়ে হয় নি। ও আমার থেকে বড়।
    স্কুল পাল্টালাম; এবার একটু দূরে। বড় স্কুল।
  • ranjan roy | 24.99.158.1 | ০৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৮651186
  • নতুন স্কুলে খুব খাটতে লাগলাম।মিশনারি স্কুলের দিনগুলোতে শেখা কার্সিভ রাইটিং ছোট বাচ্চাদের যত্ন করে শেখাতে লাগলাম। নার্সারি রাইমগুলো অ্যাকশন করে বাচ্চাদের শেখানোয় কিছু গার্জেন হেডমিস্ট্রেসের কাছে আমার প্রশংসা করলেন। মনে হল বহুদিন পরে লতা আবার শান্তিলতা হয়ে যাচ্ছে।
    রাত্তিরে ঘুম ভালো হয়। সমীরদার জন্যে মনের কোণে এক অদ্ভূত মায়া জন্মায়।
    কিন্তু কিছুদিন ধরে একটা ইচ্ছে, একটা ছটফটানি কুরে কুরে খাচ্ছিল। একদিন সাহস করে বলে ফেললাম।
    --- আমাকে একজন ভাল গাইনির কাছে নিয়ে যাবে? দেখ না গো, যদি কোন ভরসা পাওয়া যায়! আগের ডাক্তারের ভুল হয়েছে বলছি না। তবু একটা সেকন্ড ওপিনিয়ন নিতে ক্ষতি কি?
    সমীরদা কেমন একরকম করে তাকাল। কিছু বলল না।
    তবে পরের সপ্তাহেই পরপর দুজন গাইনির কাছে নিয়ে গেল।
    এবার সব কিন্তু-পরন্তু-অধিকন্তুর হাত থেকে রেহাই পেলাম। হ্যাঁ, ভগবান বলে যদি কেউ থাকেন তিনি আমায় মা হবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন।
    যাকগে, কিন্তু তাতে কি হয়েছে? যেমন করে না পড়েও নার্স হয়েছিলাম তেমনি করে মা হতে পারব কি না! যদি মিশনের অনাথ কোন বাচ্চাকে গোদ বা দত্তক নেওয়া যায়! কথাটা মনে ধরল।
    কিন্তু সমীরদা গা করল না। উল্টে বোঝাল যে কোন বাচ্চাকে দত্তক নেওয়ার অনেক আইনি ঝামেলা আছে। তাকে প্রতিপালন করার ক্ষমতা আছে তা আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হবে। আর আমাদের মত বিপ্লবীদের স্থায়ী আয় থাকতে পারে না। তাই ওসব ঝামেলিতে না যাওয়াই ভাল।
    ভাব হয়ে গেল স্কুলের একজন আয়া-বাঈ মিসেস নন্দের সঙ্গে। ও হল যুথিকা। অনাথ আদিবাসী মেয়েটি আশ্রমেই বড় হয়েছে। ব্যাপটাইজ করে ক্রিশ্চান হয়েছে। আর মিশন থেকেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে আর এক অনাথ মিঃ উইলিয়ম নন্দের সঙ্গে। উইলিয়মও আদিবাসী। বয়স্ক ভদ্রলোক। মিশনের জীপ চালান। দুজনের বয়সের মধ্যে বিশবছরের তফাত।
    আমার থেকে বছর ছয়েকের বড় যুথিকা নন্দ বড় যত্নের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করে। কাঁদলে কোলে নিয়ে ভোলায়, পড়ে গেলে তক্ষুণি ডেটল বেঞ্জিন লাগিয়ে দেয়। টিফিনের সময় কাউকে কাউকে হাতে ধরে খাইয়ে দেয়।
    স্কুলের অন্য ক্রিশ্চান টিচাররা যুথিকাকার সঙ্গে অত্যন্ত ঠান্ডা ব্যবহার করেন। একদিন আমার কলিগ রোজি ম্যামকে জিজ্ঞেস করায় ঠোঁট উল্টে বলল-- ওর কথা? ও হল বাস্টার্ড। কেউ কাঁথায় মুড়ে মিশন হাসপাতালের গ্যারেজের পাশে ছেড়ে গেছল।
    আমার মাথা গরম হয়ে যায়।
    -- সে তো প্রভু যীশু ও কুমারী মা মেরির সন্তান; গোয়ালে গাধার বাচ্চার পাশে জন্মেছিলেন। বাস্টার্ড আবার কি?
    পরের দিন মাদার সুপিরিয়রের কামরায় ডাক পড়ল।
    --- শুনুন ম্যাডাম সেন, আপনি ঠিক বলেছেন-- বাস্টার্ড আবার কি! সবই মানবসন্তান। কিন্তু আপনি হিন্দুঘরের মহিলা হয়ে আমাদের থিওলজি নিয়ে লেকচার না দিলেই ভাল, মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে পারে।
    বিরক্ত মুখে নিজের ক্লাসে ফিরে যেতে যেতে স্কুলজীবনের চুটকি মনে পড়ল।মিস-আন্ডার-স্ট্যান্ডিং মানে -- কুমারী মেয়ে, নীচে দাঁড়িয়ে।
  • ranjan roy | 160.129.102.85 | ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৬:৫২651187
  • ৪)
    "বাবুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস বাপু রে!"

    নতুন বছরের শুরু। কয়েকজন টিচার ছেড়ে চলে গেছে, কিছু নতুন এসেছে। দুয়েকজন চার্চের অন্য স্কুল থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। একজন এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিল।
    --- চিনতে পারছেন না? আমি ন্যান্সি। আগের স্কুলে একসাথে কাজ করেছেন।
    হরি হরি! চুলের স্টাইল বদলেছে, চোখে উঠেছে চশমা। কিন্তু আগের রাগ বোধহয় যায় নি। হাতটা ধরেও তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলাম। ও বুঝতে পারল।
    --আরে, সেই ঘটনাটা? ওসব ভুলে যাও। গুস্‌সা থুক দো! রাগ বেশি হলে বাড়ি গিয়ে রাত্তিরে দুটো চাপাটি বেশি খেয়ে নিও।
    আমি হেসে ফেলি। আমাদের স্টাফ রুমে ন্যান্সি বেশ পপুলার। দুটো কারণ। এক, তিন বছর আগে ও এখানেই ছিল। অনেকে চেনে। দুই, ওর যত নন-ভেজ গল্প। আমার রুচিতে অধিকাংশ বেশ সেক্সিস্ট, আর সমের্র্দা হলে বলত --পলিটিক্যালি ইনকরেক্ট!

    ওর প্রশ্নঃ এই যে পন্ডিতজীরা নিজেদের মূলুক ছেড়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে পূজো-আচ্চা করে বছর দু'বছর পরে ওদের গাঁয়ে ফিরে বৌয়ের কোলে নতুন বাচ্চা দেখতে পায়, সে নিয়ে কোন কোশ্চেন করে না কেন?
    রোজির উত্তরঃ ওরা জানে যে ওদের পাঠানো চিঠিতেই কাজ হয়ে গেছে। ওরা সব লেটার কে বচ্চে!
    --- গুড্‌! সেই কবে শিখিয়ে গিয়েছিলাম, মনে আছে দেখছি। ডিস্টিংশন।
    আচ্ছা, ব্রাহ্মণদের এত সব পদবীর উৎস কী? যেমন, দ্বিবেদী, ত্রিবেদী, চতুর্বেদী?
    পারলি না তো?
    শোন, যার দুটো বাপ সে দ্বিবেদী বা দুবে; অমনি ত্রিবেদী, চতুর্বেদী।

    এস্থার শুধোয়ঃ তাহলে মিশ্র কী হবে?
    -- ওয়ার্ক আউট ইয়োরসেল্ফ ডিয়ার। হিন্ট্স তো দেওয়াই আছে।
    সবাই হেসে ওঠে।
    আমার কানে ধরা পড়ে উচ্চবর্ণের প্রতি চাপা ঘৃণা। এরা সব সো- কল্ড অস্পৃশ্যদের থেকে কনভার্ট হওয়া ক্রিশ্চান।
    কিন্তু স্টাফরুমের একমাত্র ব্রাহ্মণ টিচার মিসেস শকুন্তলা দীক্ষিত রাগতস্বরে বলেন-- ন্যান্সি, কিছু মনে কর না। তোমার পুয়োর জোকস্‌ গুলো সব হিন্দুদের নিয়ে। কেন বলত?
    ন্যান্সি মুচকি হাসে। তির ঠিক জায়গায় লেগেছে। এবার ওর গলায় একটা রিকনসিলিয়েশনের সুর।
    --- আরে রেগে যাবেন না শকুনদিদি! আমার কোন বায়াস নেই। এটা শুনুন।
    একদিন চার্চের শুনশান ঘরে টেকো ফাদার স্ক্রিপচার নিয়ে কথা বলতে বলতে ইয়ং নান এর হাঁটুতে আলতো করে হাত রাখলেন।
    নান চেঁচিয়ে উঠলো-- রেফার page 18 psalm-4।
    ফাদার ঘাবড়ে গিয়ে হাত সরিয়ে আবার আধ্যাত্মিক আলোচনায় ডুবে গেলেন। কিন্তু নানের সুন্দর চোখ আর প্রোভোকেটিভ ঠোঁট ! ফাদার আবার নান এর হাঁটু ছুলেন, অত আলতো নয়।
    এবারও সেই চিৎকারঃ রেফার page 18 psalm-4।
    ফাদার ঘাবড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি হাতের সুসমাচারের বইটির ১৮ নম্বর পাতা খুলে ৪ নম্বর স্তোত্রটি পড়তে লাগলেন।
    তাতে লেখাঃ নির্ভয় হও পুত্র। দ্রুত নিজের লক্ষ্যে অগ্রসর হও। স্বর্গের দ্বার অব্শ্য খুলিবে।
  • ranjan roy | 229.64.69.165 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ০১:০১651188
  • মুশকিল হল ফোর্থ ক্লাস স্টাফ যুথিকা নন্দের সঙ্গে আমার দোস্তি অন্য টিচারেরা ভাল চোখে দেখছে না। বিশেষ করে রোজি। আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল যে পায়ের জুতো সে ব্র্যান্ডেড হলেও মাথায় তুলতে নেই, পায়েই পরতে হয়। তুমি ভুল করছ শান্তিলতা ম্যাম।
    আমি কিছু বলি না। শুধু লাঞ্চের সময় আমার বক্স নিয়ে বারান্দার কোণে যেখানে একটা টেবিল লাগিয়ে যুথিকা আর অন্য আয়ারা খায় সেখানে গিয়ে বসলাম। যুথিকা খুব খুশি। কিন্তু বাকি তিনজন আয়াবাঈ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। পরে জেনেছিলাম -- ওরা আমাকে প্রিন্সিপালের স্পাই ভেবেছিল।
    শেষে আমি আবার লাঞ্চের সময় টিচারদের সঙ্গেই বসতে লাগলাম আর ন্যান্সির পিজেগুলো শুনে মুচকি হেসে চুপ করে আস্তে আস্তে খাওয়ার অভ্যেস করলাম।
    একদিন ন্যন্সি আকবর-বীরবলের চুল ডাই করা নিয়ে চুটকুলা শোনাল। আমার অনেক বার শোনা, হাসি পায় নি। এতে ন্যান্সি খেরে গেল। বলল-- মিসেস সেন এর হ্যান্ডসাম হাজব্যান্ড নাকি বয়সে বড়। হবেও বা, কিন্তু নিশ্চয়ই চুলে গোদরেজ বা গার্নিয়ের এর ডাই লাগায়, নইলে অমন নটিবয় লুক কি করে হয়?
    আমি চটে গিয়ে বললাম-- ব্যক্তিগত কমেন্ট করা কি অ্যাভয়েড করা যায় না?
    ও দমে না গিয়ে আরও এনকারেজড্‌ হয়ে বলল-- আরে তুমিও কিছু একটা কর, নইলে অমন চুলবুলে হাজব্যান্ডকে ধরে রাখতে পারবে না। তোমার ইস্যু নেই, বয়্স তিরিশের নীচে। কোথায় চাবুকের মত ফিগার হবে, তা না ঢেপসি হয়ে যাচ্ছ। ব্যাপারটা কী? আর পুরুষমানুষদের বেশি বিশ্বাস কর না। ওরা আলাদা স্পিসিজ।
    শেকসপীয়রের নাটকের ওই গানটা শোন নি? গতবার স্কুলের ফাংশনে হয়েছিল?
    Cry no more, maidens, cry no more!
    Men are always deceiver.
    One foot in the sea, one foot on the shore,
    To one thing constant, Never."

    না, ওদের সাধ্য নেই যুথিকার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়। আমরা দুজন দিনের শুরুতে আর সেকন্ড ব্রেক এর সময় একসঙ্গে চা খেতাম। কখনও ও ফ্লাস্কে করে নিয়ে আসত, কখনও আমি।
    আমরা কথা বলতাম না হেন বিষয় নেই। আমরা মনে রাখতাম না যে একজন প্রাইমারি সেকশনের টিচার, তার স্বামীকে শহরে তো বটেই, চ্যানেলের সৌজন্যে অনেকে চেনে; আর অন্যজন মিশনের অরফ্যান, চাকরিতে আয়াবাঈ।
    দুজনের মধ্যে আর একটা কমন ফ্যাক্টর। আমরা দুজনেই ছোট বাচ্চা খুব ভালবাসি। কিন্তু আমাদের একজনেরও নিজেদের কোন বালগোপাল নেই। কেন নেই? যীশুর কৃপা থেকে কেন বঞ্চিত হলাম আমরা?
    আস্তে আস্তে তাও জানা হয়। আমি বলি আমার মিসক্যারেজ ও অপারেশনের কথা। ও বলে ওর অনেক বয়স্ক হাজব্যান্ডের অক্ষমতার কথা। মোমবাতি জ্বেলে কি ডাক্তার দেখিয়ে কোন লাভ হয় নি।
  • ranjan roy | 229.64.69.165 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ০১:২২651189
  • এইভাবেই দিন যায়। আমি মেনে নিয়েছি যে আমি হব অফলা বৃক্ষ, এই আমার নিয়তি।
    যুথিকা মেনে নিতে পারছে না। দত্তক নেওয়ার মত সামর্থ্য নেই। ওর ক্ষমতা আছে মা হওয়ার। কিন্তু উইলসন নন্দ? ওর হাজব্যান্ড? ডাক্তারেরা নিশ্চিত যে ওর কেসটা চিকিৎসার বাইরে। বেচারি সেটা মেনে মরমে মরে থাকে। অল্পবয়সী বউ যুথিকাকে খুশি করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। যুথিকা কেঁদে ফেলে। ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চায়। ফাদারকে লুকিয়ে গতবছর রায়পুর শহরের মীরা দাতারের দরবারে গিয়েছিল--কালী নজর উতারনে কে লিয়ে। আবার লুতরা-শরীফে গিয়ে দরগায় চাদর চড়িয়ে এসেছে। সন্তান কামনায় নিয়মিত মেরীমাতার সামনে মোমবাতি জ্বালায়। তারপর কাঁদে। আমি মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দেই।
    একদিন লাঞ্চের সময় ন্যান্সির ওই ইউপি ব্রাহ্মণদের পদবী নিয়ে পিজেটা রিপিট হচ্ছিল আর সবাই হি-হি করছিল, আমি অন্যমনস্ক ছিলাম। তখনই আইডিয়াটা মাথায় এল। পরের দিন চায়ে চুমুক দিতে দিতে যুথিকাকে বললাম-- শোন, একটা আইডিয়া মাথায় এসেছে। ভাল করে শোন। তোর শরীরে কোন দোষ নেই, স্বামী অক্ষম। গড্স্‌ হ্যান্ড, কিছু করার নেই। তেমনি আমি অক্ষম, অ্যাক্সিডেন্টের ফলে, স্বামী পূর্ণ সক্ষম। শিওর শট টাইপ, দু-দুবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলাম।
    এখন যদি ক্রস-মাল্টিপ্লিকেশন করি?
    -- মানে?
    --আরে হিন্দুদের মহাভারতের গল্প,-- আমার স্বামী আর তোর চেষ্টায় তোদের ঘরে বেবি হতে পারে।
    ফর্সা মেয়েটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। কী যা তা!
    -- যা তা নয়! প্র্যাকটিক্যাল। ধর তুই আমাদের বাড়িতে সাতদিনের জন্যে এলি। আমার ঘরে হেল্প করার বাহানায়। একসপ্তাহের জন্যে। আমাদের কোয়ার্টারে এক্স্ট্রা ঘর আছে তো। রাত্তিরে মশারির মধ্যে ওর বিছানায় শুলি। এই আর কি!
    -- মাথা খারাপ! উনি রাজি হবেন না।আর তুমি তখন কী করবে? ফলটা আমাদের দুজনের জন্যে খুব খারাপ হবে।
    --- না রে! সমীরদাকে রাজি করানো আমার বাঁয়া হাতকা খেল। তুই উইলসনজীকে রাজি করা। তোর ঘর বাচ্চার কিলকারিতে ভরে উঠবে। আমার উপর ভরসা রাখ।
  • ranjan roy | 24.96.126.56 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ১০:৪৮651190
  • ৫)
    "নিশার স্বপনসুখে সুখী যে, কী সুখ তার? জাগে সে কাঁদিতে।"
    ===================================

    উইলসন সহজে রাজি হয়ে গেলেন।বললেন--মিসেস সেন আমাদের ভালো চান। উনি যেমন বলছেন সেটা মেনে চল।
    কিন্তু সমীরদাকে রাজি করানো! বেশ টেড়ি ক্ষীর দেখা গেল।
    প্রথমে চোখ গোল গোল করে অনেকক্ষণ আমাকে দেখল।উঠে গিয়ে এক গেলাস জল গড়িয়ে খেল। তারপর ঢোঁক গিলে বলল-- তুমি বলছ কী লতা? আমি কি সরকারী খামারের ষাঁড়?
    আমি হাল ছাড়িনি। আবার বোঝালাম।
    --- শোন লতা! তুমি ইমোশনাল ডিসিশন নিচ্ছ আর আগে আমার সঙ্গে ডিসকাস না করে এখন আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছ।
    -- এ ভাবে কেন কথা বলছ! এসব ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে হয় না। আর রাগ করছ কেন? আমাদের অন্য কোন অপশন আছে কি? দত্তক নিতে বললাম, তো তুমি আইনি ফ্যাকড়া তুললে।
    -- ফ্যাকড়া আবার কি? ওটা তো ফ্যাক্ট।
    --এটাও তো ফ্যাক্ট যে আমি যখন তোমার জীবনে এসেছিলাম তখন একজন সুস্থ স্বাভাবিক অল্পবয়েসি মেয়ে ছিলাম। আজ আমি দুবার অ্যাবর্শন হয়ে এক অক্ষম মেয়েছেলে। মোটা হয়ে যাচ্ছি। কুড়িতেই বুড়ি দেখাচ্ছি। এ নিয়ে অনেক টিপ্পনি শুনতে হয়। এর জন্যে দায়ী কে?
    সমীরদা মাথা নিচু করে, মুখের চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ। আমার এতটুকু দয়া হয় না।
    কবাডি খেলায় বিপক্ষের দান দিতে আসা ছেলেটির দম ফুরিয়ে গেছে। মাটিতে শুয়ে একটু একটু করে চড়াইয়ের দাগ ছুঁতে চাইছে। সে সুযোগ ওকে দেব কেন?
    --- মিসেস নন্দ একজন ওয়ার্কিং ক্লাসের মহিলা। অনাথ। মিশন জোড়াতালি দিয়ে একটা বয়সে অনেক বড় অক্ষম লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। তোমাকে সারোগেট ফাদার হতে বলেছি। এটা উইন উইন গেম। তোমার বিপ্লবী ক্যারেকটারে কোন দাগ লাগবে না। এমনকি দুটো বাচ্চা হলে দ্বিতীয়টি আমরা নেব। তোমারই বাচ্চা। কোন ঝামেলা হবে না, আমি ম্যানেজ করে নেব। পুরো প্ল্যান ছকে রেখেছি।
    তুমি এখন ফালতু ন্যাকামি কর না।
  • ranjan roy | 24.96.126.56 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ১১:১৯651191
  • আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।
    এ জীবনে অনেক সহ্য করেছি। অনেক কম্প্রোমাইজ করেছি। বাবা-মা, পাড়া-প্রতিবেশি, সমীরদা, শ্বশুরবাড়ি, পার্টি-বিপ্লব -- কী নয়!
    আমার জীবন সবাই ঠিক করে দেয়, বিছানা গোছানোর মত করে গুছিয়ে দেয়। এতদিন দিয়েছে, আর না।
    আমি সবার দাবাখেলায় বোড়ে হয়ে থেকেছি। কখনো দু'ঘর, কখনো একঘর -- যে যেমন চেয়েছে,নড়া ধরে এখান থেকে ওখান। আর না। নো মোর লতা, নো মোর!
    এবারের খেলাটার নিয়ম আমিই ঠিক করেছি। প্লেয়ারদের আমিই সিলেক্ট করেছি। আমি এখন গেমমেকার। কী আনন্দ।

    এক সোমবারে স্কুলে আমার শরীর খারাপ হল। ফাদারের পারমিশন নিয়ে উইলসন ড্রাইভার আমাকে ও যুথিকাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেল। কাল থেকে একসপ্তাহ ও এখানেই থাকবে, আমাকে হেল্প করবে আর রোজ আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে। সমীরদা ওর অফিসের গাড়িতে করে পৌঁছে দেবে।

    সন্ধ্যেয় সমীরদা একটু তাড়াতাড়ি ফিরে এল। খাওয়ার সময় ওরা দুজন বেশ আড়ষ্ট, কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। আমি একটু হাসানোর চেষ্টা করছিলাম। ওদের সহজ করতে চাইছিলাম। সব্জির বাটিগুলো একেক বার ওদের একেক জনকে এগিয়ে দিতে বলছিলাম। কিন্তু ওরা সহজ হতে পারে নি।
    ভেতরের ঘরে ওদের জন্যে বিছানা করে মশারি খাটিয়ে দিয়েছি। সমীরদাকে বলেছি-- তুমি আগে গিয়ে শুয়ে পড়। ও আমার সঙ্গে হাত লাগিয়ে ঘরের কাজ পুরো করে তারপর শুতে যাবে।
    সমীরদা বলল-- আমি পারব না। দেয়ালের দিকে কাত হয়ে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে যত তাড়াতাড়ি পারি ঘুমিয়ে পড়ব।
    --ইঃ, ঘুমিয়ে পড়বে? তোমাকে যেন চিনি না! আচ্ছা, আচ্ছা, তাই কর। ওই না হয় তোমাকে জাগিয়ে দেবে।

    হ্যাঁ, সবকিছু আমার হিসেব মতই হচ্ছে। মিসেস নন্দকে ঠিক সময়ে ঠেলে ঠুলে ওই ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। একটা নীল আলো জ্বলছে। একটু পরে ছিটকিনি লাগানোর আওয়াজ পেলাম।
    ব্যস্‌, আমি নিশ্চিন্ত।
    এ ঘরে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।এবার আয় ঘুম আয়! ভেড়া গুনছি। একটা ভেড়া খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে গেল, দুটো ভেড়া মুক্তি পেল।--। Ram & Ewe। র‌্যাম তো বুঝলাম, কিন্তু দি আদার? ইউএর বাংলা কী হবে? মাদি ভেড়া? এখনও ঘুম এল না?
    আসবে কী করে? গরম গরম চোখের জলে গাল ভেসে যাচ্ছে।
  • | 34.96.239.132 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ১৯:০৪651192
  • অসাধারণ। ন্যাকামি কিংবা চটচটে আবেগবিহীন ঝরঝরে লেখা। লতা মেয়েটির সংগে আমার চেনা এক মহিলার অনেক মিল।
  • ranjan roy | 24.99.153.248 | ০৫ মার্চ ২০১৫ ২৩:৪২651193
  • না; আসলে ওরকম কিছুই ঘটেনি। আমি গুছিয়ে প্ল্যান করেছিলাম। খুব খারাপ ছিল না। কারো পক্ষেই এমব্যারাসিং কিছু হত না।
    যা ঘটেছিল তা হল সন্ধ্যে থেকে আমার ঘরে আমি আর মিসেস নন্দ বিকেল থেকেই বার দুই চা খেয়ে সমীরদার অপেক্ষা করছিলাম।
    কিন্তু সমীরদা এল না।
    অপেক্ষা করতে করতে রাত্তিরে খাওয়ার সময় হয়ে গেল -- ও আর এল না। দশটার সময় পিপল্স' হেল্থ এর সিকিউরিটি এসে একটা চিরকুট দিয়ে গেল। সমীরদা লিখেছে -সো সরি! আর্জেন্ট কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে, ফিরতে দু'একদিন লাগবে।
    যুথিকা নন্দের চেহারা এতটুকু হয়ে গেল।
    রাত্তিরে আমরা পাশাপাশি শুলাম। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। যুথিকা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফোঁপাচ্ছে। আমি সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলাম না।
    দু'দিন হয়ে গেল, সমীরদা ফিরল না।
    তৃতীয় দিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় যুথিকা ওর কাপড়ে ঠাসা এয়ার ব্যাগটা গাড়ির পেছনে তুলে দিল। আমরা সেদিন স্কুলে একসঙ্গে চা খেতে ভুলে গেলাম। বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখি সমীরদা। মুখে একটা চোর-চোর হাসি।
    কোন কথা না বলে চায়ের কাপ ধরে দিলাম, সঙ্গে চিঁড়ে ভাজা।কোন প্রশ্ন নয়।
    -- বুঝলে লতা, আসলে এমন একটা ব্যাপার হল-
    আমি মনে মনে অডিও অফ করে দিই। খানিকক্ষণ আগড়ম বাগড়ম বকে ও একটু কাছ ঘেঁষে এল।
    --- রাগ করেছ লতা? তোমার রাগ হওয়ারই কথা। কিন্তু কি করব?

    আমি একমনে তরকারি কাটতে থাকি। ছুরিটা ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে, আর একটা দাঁতওলা লম্বাটে ছুরি কিনতে হবে।
    হটাৎ সমীরদা উঠে এসে আমার হাত ধরে।
    -- এমনি করে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন? আমি এমন কি অপরাধ করেছি?
    -- হাত ছেড়ে দাও। তুমি মিথ্যে কথাটাও ভাল করে বলতে পার না। কোথাও যাও নি। দশ কিলোমিটার দুরের সরকারি গেস্ট হাউসে দুদিন কাটিয়েছ আর তোমার স্পাইয়ের থ্রু খবর নিয়েছ যে যুথিকা বেচারি ফিরে গেছে কি না! ও গেছে কি লাফাতে লাফাতে হাজির হয়েছ?
    নিজেদের কী ভাব তোমরা, ভগবান?
    -- স্বীকার করছি , ব্যাপারটা ইমোশনালি বেশ ইয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু উল্টোটা একবার ভেবে দেখ। যদি তোমার কথামত চলে ওর পেটে আমার সন্তান আসত, তারপর? আমি কি বাচ্চাটার প্রতি, তারপর বাচ্চার মায়ের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তাম না? হয়ত কিছুদিন পরে লুকিয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। তাতে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে কত সমস্যা হত ভেবে দেখেছ? তোমার প্রতি অন্যায় হত না?
    -- বাজে কথা; তুমি হচ্ছ একনম্বরের কাওয়ার্ড। লুকোবে কেন? আমাকে জানিয়েই দেখা করতে। বরং ওদের সঙ্গে দেখা না করলেই অন্যায় হত।
    আমি যার সঙ্গে ঘর ছেড়েছিলাম সে সমীর সেন তুমি নও। তুমি এখন এই ছোট্ট শহরে পিগমি সেলিব্রিটি! এতে তোমার ইগোতে সুড়সুড়ি লাগে। ভালো খাওয়া দাওয়া, ভালো জামাকাপড় আর এসি গাড়ি। তুমি এগুলোতে বাঁধা পড়ে গেছ।
    ড্রাইভারের বউ, অরফ্যানেজ থেকেতুলে আনা যুথিকার শরীর আছে, মন নেই। কী বল! ওকে যে অপমানটা করলে তার জন্যে একটুও অনুতাপ হচ্ছে না?
    --- না, হচ্ছে না। আমি তো ওকে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলিনি, প্রপোজ করিনি। কোন আশা দিইনি। ওকে তো চিনতামই না। ও কি ভাবছে ছোটজাতের মেয়ে বলে আমি ওকে ছুঁইনি?
    আমি আস্তে আস্তে মাথা নাড়ি।
    -- হ্যাঁ, তাই মনে করেছে। আজ থেকে স্কুলে একসঙ্গে চা খাওয়া বন্ধ করেছে। এবার তুমি খুশি তো, কমরেড সমীর?
    রাগে কাঁপতে কাঁপতে সমীরদা আমার দুই কাঁধ খিমচে ধরে। প্রাণপণে ঝাঁকাতে থাকে।
    --- সব তোমার জন্যে হল, লতা। তুমিই এর জন্যে দায়ী। তুমিই ওর মনে একটা অসম্ভব আশা জাগিয়ে তুলেছিলে। আমি তোমার কথায় রাজি হয়েছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম। পারি নি। তো? এই মিসক্যারেজ অফ জাস্টিসের দায় তোমাকেই নিতে হবে। তুমি নিজেও বাচ্চা-বাচ্চা করে পাগল হয়ে উঠেছিলে।
    -- চমৎকার! আমার দু-দুটো মিসক্যারেজের দায় কে নেবে কমরেড সমীর? দু-দুটো অপারেশন? বাচ্চাদানি বের করে নেওয়া? সেলফিশ নার্সিসিস্ট পিগ!
    অন্ধ আক্রোশে ও আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাথা ঠুকে যায় মেজেতে। আমার হাতের তরকারি কাটার ভোঁতা ছুরিটা ঝিলিক দেয়। একটা চিৎকার। ওর চাপরাশি দৌড়ে ঘরে ঢুকছে। আর কিছু মনে নেই।
  • ranjan roy | 24.99.227.206 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ০৯:৪১651194
  • ৬)
    "ও আমার দরদী! আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না"।
    -----------------------------------------------------------
    চাকরিটা চলে গেছে। যাওয়ারই কথা। আমি নাকি সমীরদাকে ছুরি হাতে তাড়া করেছিলাম! এরপর আর ছোট ছোট বাচ্চার দায়িত্ব ? না , ঠিকই হয়েছে।
    আমার সত্যি কিছু মনে নেই। সব আবছা, আবছা। তবে সমীরদার বাঁ গালে একটা আধ ইঞ্চি কাটা দাগ, সেটা মিলিয়ে যাবে না। বলতে নেই, ওই দাগটা না সমীরদার সেক্স অ্যাপিল বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার খুব ইচ্ছে করে ওই দাগটায় চুমু খাই। সাপের মত জিভ দিয়ে চেটে দিই।
    কিন্তু আমরা যে এখন আলাদা শুই, দুজনে দুই ঘরে।

    একদিন রাত্তিরে ঘুম আসছিল না। উঠে চলে গিয়েছিলাম ওর কাছে, ওর বিছানায়। নাক ডাকছিল--ফুরর ফুরর! গায়ে হাত দিতেই চমকে কে -কে করে চেঁচিয়ে উঠেছিল। আমি মুখে হাত চাপা দিতেই এক ঝটকায় হাত সরিয়ে লাফিয়ে উঠে লাইটের সুইচ টিপে দিল।
    -- তুমি! কী ক্কী মনে করে? কী চাই?
    ওর চোখে আতংক, ওর চোখে ভয়।
    আমি মাপা পায়ে নিজের বিছানায় ফিরে এলাম।
    আর কখনও যাইনি। উপায়ও ছিল না। সেদিন থেকে ও রোজ শোয়ার আগে ঘরের ভেতর থেকে ছিটকিনি তুলে দেয়।

    তবে ওর অনেক দয়া। মানতেই হবে। আমাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কোরবাতেও সাইকিয়াট্রিস্ট আছে জানতাম না। ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল চেম্বার। আমরা গল্প করি, কথা বলি। অনেক কথা। কফি খাই। উনি কিছু ওষুধ লিখে দেন, চলে আসি।
    উনি বলেছেন রাগ চেপে না রাখতে। কিন্তু আমার চেঁচাতে লজ্জা করে। তবে কোন কোন দিন মাথার ঠিক থাকে না। সেদিন ওর বাপান্ত করে ছাড়ি। ভাল হয়েছে আমার কোন সন্তান নেই। ওর সামনে ওর বাপকে তুলোধোনা করতে আমার রুচিতে বাঁধত।
    এই তো সেদিন। আমার ঘরে সেই ডনের স্ত্রীর দেওয়া বালগোপালের মূর্তির পূজোর আসন পাতা দেখে ও ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল। আমার মটকা গরম হয়ে গেল।
    -- কী হল? অমন করে তাকাচ্ছ কেন?
    -- এসব কী? আমার ঘরে --!
    আর বলতে দিইনি।
    -- তোমার ঘর ওপাশে , এটা আমার ঘর। এখানে আমার পছন্দের জিনিস থাকবে।
    ও দুম দুম করে পা ফেলে চলে গেল। আমার বয়েই গেছে।
    পরের দিন ড্রইং রুমের দুটো দেওয়াল নতুন করে সাজালাম। ওর পছন্দের যত ঠাকুরের ছবি সব একদিকের দেওয়ালে-- মার্ক্স, লেনিন, স্তালিন, মাও, সুকান্ত, মানিক । অন্য দিকে মাকালী আর রাধাকৃষ্ণ।
    বড় আনন্দ হল। বেশ হয়েছে। দুই হাতে তালি বাজিয়ে নাচতে আর গাইতে লাগলাম-- " স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী। ট্যাংটা-ট্যাটাং-ট্যাটাং- ট্যাটাং,
    ট্যাটাং-ট্যাটাং- ট্যাটাং।"
  • ranjan roy | 24.96.115.186 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১০:৪৫651195
  • সমীরদা বাড়ি ফিরল। আর অবাক হয়ে চারদিকের দেয়ালে চোখ বুলিয়ে সোফায় বসে পড়ল। দুহাতের ভেতর চেপে ধরা মাথা। এই প্রথম আমার ওকে দেখে কোন কষ্ট হচ্ছে না।
    হ্যাঁ, এবার সব কিছু আমার প্ল্যান মাফিক হচ্ছে। এখন থেকে চলবে আমার মর্জিমাফিক। জে বাৎ!

    ম্যায়নে উনকো ঠেট হিন্দি মেঁ সমঝা দিয়া ।
    প্রতিমাসে আমার হাতে গুণে গুণে খরচার টাকা তুলে দেবে।একটা ট্রানজিস্টার কিনেছি, ফিলিপ্সের। রোজ সকালে এফ এম ব্যান্ডে ভজন চলবে। সে 'মেরো তো গিরিধারি গোপাল' হোক বা 'হরি হ্যায় হাজার হাতওয়ালা'ই হোক।
    তোমাদের কোন পার্টি-টার্টির মিটিংয়ে আমাকে যেতে বাধ্য করবে না। নইলে সেখানে কী বলে বসব তার দায় আমার নয়।

    সমীরদা বিড় বিড় করতে লাগল।
    -- ভুল করেছি, খুব বড় ভুল। বয়স কম ছিল। প্রেম এক জিনিস আর বিয়ে করা আর এক।
    -- এই তো! ময়না বাঁধাবুলি ছেড়ে নিজের মত ভাবতে শিখেছে। চিন্তা কর না। তোমার দেবতারাও তাই। দাড়িওলা হোক, কি মাকুন্দ! সব মেয়েদের কমোডিটি দেখে।
    সমীরদা রাগে বাক্যিহারা! ঢোক গিলে টিলে তারপর খুব ঠান্ডা গলায় বলল-- গালাগাল না দিয়ে প্রমাণ করতে পারবে?
    আমি হেসে ফেলি।
    -- কী ধরণের প্রমাণ পেলে তুমি মানবে সেটা আগে স্পষ্ট কর।
    সমীরদা আবার বিড়বিড় করছে।
    -- শোন, বই কিছু আমিও পড়েছি। তোমার কাছেই। কিন্তু তোমরা পড় ভক্তের দৃষ্টিতে, তাই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে প্রমাণ-- দেখতে পাও না।
    -- যেমন?
    --- যেমন, মার্কস দেবতা সুখে দুঃখে জড়িয়ে থাকা অতগুলো সন্তানের মা জেনি বুড়ি হলে পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া আর এক মহিলার সঙ্গে লুকোচুরি প্রেম করেছিলেন। তাকে একটি বাচ্চাও উপহার দিয়েছিলেন।
    এংগেলস দেবতা বৌ মারা যাওয়ার ছ'মাসের মধ্যে শালীকে বিয়ে করলেন। তুমি এমন পারবে? যদি আগে থেকেই শ্যালিকার সাথে ইন্টুমিন্টু না থাকে? স্তালিন দেবতা আন্ডারগ্রাউন্ড লাইফে আশ্রয়দাতা শ্রমিক কমরেডের মেয়েকে বিয়ে করলেন। সে বিয়ে কতটা প্রেমের তাগিদে আর কতটা বাধ্য হয়ে তা তাঁর মেয়ের লেখা থেকে আর বউয়ের আত্মহত্যার থেকে সহজেই বোঝা যায়। মাওদেবতার কথা আলাদা করে বলার দরকার নেই, সেটা তুমিও মানবে।
    কথা শেষ হওয়ার আগেই সমীরদা ঘর ছেড়ে চলে গেছে।
  • ranjan roy | 24.96.115.186 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১১:৫৯651197
  • উপসংহার
    ------------------
    "শেষ নাহি যে, শেষ কথা কে বলবে"
    --------------------------------------
    এইভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন।
    ফিরে এসেছি সেই বাঁধা গতে,বৌ ঘর সামলাবে আর পতিদেবতা বাইরে যাবে, রোজগারপাতি করে আনবে।
    শুধু ঘরের দেওয়ালে ছুঁচের কাজ করা ফ্রেমে বাঁধানো 'পতি পরম গুরু' লেখাটা টাঙানো বাকি।
    সমীরদা আছে নিজের তালে। এনজিও চাকরির ফাঁকে ফাঁকে সমাজ বদলানোর ছেলেখেলাও চলছে। ভাল চাকরি করছে বলে অপরাধবোধে ভোগে আর পার্টির ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো চালু নেতারা ওর ব্যথার জায়গায় চাপ দিয়ে ওর থেকে মোটা টাকা লেভি নেয়।
    সে যাকগে, ওর পাঁঠা ও যেখান থেকে ইচ্ছে কাটুক গে, আমার কি!
    ঘর চালাই আমি, আমার ইচ্ছে মত। মানে, আমিও ওর থেকে লেভি আদায় করি। কেন করব না? খালি বারোভূতে লুটেপুটে খাবে আর আমি আঙুল চাটব?
    মোটে দুটো মানুষের রান্না আর চা-জলখাবার তো!
    আমার দুবার হাত নাড়া দিলেই হয়ে যায়। তারপর টিভিতে সিনেমা দেখি। গান শুনি। আর নানান রকমের বই পড়ি।
    একদিন সুযোগ পেয়ে ঝেড়ে দিলাম ওকে।
    -- এটা শোনঃ
    " স্বপ্ন দেখতাম সমাজ বদলে দেব। অনেক দিন গেল। সমাজ ওর নিজের গতিতে চলল। ভাবলাম আমার পাড়াটাকে বদলে দেব। লেগে রইলাম। বছর বছর কেটে গেল। পাড়া আমার কথামত না বদলে অন্য রাস্তা ধরল। শেষে ভাবলাম-- আমার পরিবারকে বদলে দেব। কোথায় কি? ছ্লেমেয়েগুলো আমার কথা বুঝতেই চাইল না। গিন্নি নিজের গোঁ ধরে রইলেন।
    এখন ভাবি, যদি এতসব না করে গোড়ায় নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করতাম, তাহলে হয়্ত একদিন পরিবার আমার কথা শুনত। আর সেই দেখে হয়ত পাড়া। আর কে জানে, এইভাবেই হয়ত সমাজটাও বদলে যেতে পারত।"
    এটা বলে আমি আবার আগের মত হা-হা করে হেসে উঠি। ও কোন কথা বলে না, বসে থাকে, খবরের কাগজটা তুলে নেয়।

    আজ রাত্তিরে ঘুম আসছে না। ওষুধটা দুদিন খাওয়া হয় নি। ক্লান্ত লাগছে। আলো নিভিয়ে জানলার কাছে বসে আছি। চোতমাসের রাত। দখিনের হাওয়া দিচ্ছে। রাস্তায় মাঝে মাঝে কুকুর ডেকে উথছে। ওদেরও ঘুম নেই?
    এমন সময় মানিকদা এলেন।
    সেই আগের মত। পাজামা-পাঞ্জাবী, কাঁধে ঝোলা, চোখে চশমা।
    ---কেমন আছ গো লতা?
    আমি লাফিয়ে উঠি, মানিকদা!
    আলো জ্বেলে দিই। তারপরই চেঁচাই,-- অ্যাই, বিড়ি খাচ্ছেন কেন? ফেলে দিন, ফেলে দিন বলছি।
    মানিকদা হাসেন।
    -- ও বাবা! তুমি দেখছি হেল্থ-ফ্রিক হয়ে গেছ। ঠিক আছে, ফেলে দিচ্ছি।
    আমি লজ্জা পাই।
    -- ঠিক তা নয়। আসলে এ বাড়িতে কেউ এখন বিড়ি খায় না।
    উনি চোখ নাচিয়ে জানতে চান--কী খায়?
    --- গোল্ডফ্লেক বা ট্রিপল ফাইভ।
    দুজনেই একসঙ্গে হেসে উঠি।
    -- আচ্ছা, তোমার প্রবলেমটা কী বলত?
    -- যাই হোক, তাতে আপনার কী? তারচেয়ে আপনি কী মতলবে এসেছেন সেটা বললে ভাল হয় না? পুলিশের তাড়া? শেল্টার?
    --- সবসময় তোমার কাছে কেউ কোন না কোন মতলবেই আসে?
    -- আসে তো! বিশেষ করে পুরুষরা। ওরা মেয়েদের চায় নিজেদের প্রয়োজনে। মেয়েদের দিকটা কখনো বুঝতে চায় না। বোঝার দরকারই ফিল করে না। সবকটা শভিনিস্ট পিগ। কেউ মেনিমুখো, কেউ হুলো। এদের সঙ্গে প্রেম? বিসমিল্লায় গলদ! হয় না, হতে পারে না। হলেও টেকে না। দো দিন কা মেহমান!
    --- আচ্ছা, আমি তবে কী?মেনিমুখো না হুলো?
    আমি হেসে উঠি। হাসতে থাকি।
    --- আপনি হলেন বুদ্ধুরাম। অন্যেরা কেড়ে নিতে চায়, অধিকার জতাতে হ্যায়। আপনি চাইতেই জানেন না।
    --- চাইলে কী হত?
    -- চেয়ে দেখতেন!
    -- যদি বলি আজ চাইতেই এসেছি।
    --- অনেক দেরি করে ফেলেছেন যে! আজ আপনি কি করে চাইবেন? আপনি তো একদশক আগে শ্মশানের পোড়া কাঠ হয়ে দেওয়াললিখন হয়ে গেছেন। রেনেগেডদের আপনার দল ক্ষমা করে না যে!
    মানিকদা হাসছেন।
    --- তাহলে আমি এলাম কী করে?
    --এসেছেন দুদিন ওষুধ না খাওয়ায়। আমার ডাক্তার বলেছেন-- যখনি আমি এখানে বসে বসে অনেক দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারব, ওদের দেখতে পারব, তখনই বুঝতে হবে ডোজ কম হয়েছে। এবার ট্যাবলেটটি খেতে হবে। ডবল ডোজ।
    কিন্তু ওষুধ খেলেই তো আপনি চলে যাবেন, তাই ইচ্ছে করছে না।
  • ranjan roy | 24.96.115.186 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১২:২২651198
  • -- বেশ , তাহলে একটু পরেই খেয়ো।
    --- আমার এই জ্বালাপোড়া কী করে যাবে বলতে পারেন, মানিকদা? মরলে?
    -- ও তো শর্টকাট। ডাক্তার কী বলেছে?
    -- বলেছে রাগ চেপে না রাখতে, ঝগড়া করতে। কিন্তু তা কি সব সময় করা যায়, আপনিই বলুন। ও যে পাল্টা ঝগড়া করে না, গাল দিলেও না। আমাকে রোগী ভেবে দয়া করে। কিন্তু আমি রোগী নই। শুধু ওই জ্বালাপোড়াটা!
    -- আছে, পথ আছে।
    -- জানতাম, আপনি বাতলাবেন। কী সেই টোটকা?
    -- রাগ চেপে রেখো না, লেখো।
    -- আমি ? লিখব? এসব কী বলছেন? আমি তো লিখতে জানি না।
    -- তুমি তোমার মত করে লিখবে। তোমার কথা লিখবে। ময়নার বুলি নয়। তোমার রাগ, তোমার অভিমান, তোমার ভালবাসা-- সব লিখবে। যেমন করে ভাব, তেমন করেই লিখবে।
    -- আর ঘৃণার কথা তো বললেন না? আমার বুকে যে একবুক ঘৃণা।
    --- ভালবাসা বলেছি না? ওর মধ্যেই ঘৃণার কথা রয়েছে। দুটো যে সিক্কার দুই পিঠ।

    আমি টেনে নেই প্রিন্টারের নিচে রাখা A-4 পেপার। টেবিলটা পরিষ্কার করি। একগ্লাস জল দিয়ে দুটো ট্যাবলেট গিলে ফেলি। কগজ-পেন নিয়ে এমনভাবে বসি, যেন প্ল্যানচেটে বসেছি।
    শুরু হয় শান্তিলতার কথা।
    প্রথমেই বড় বড় করে লিখি-- "ঘৃণার ম্যানিফেস্টো"।
    -- আমি ঘৃণা করি সেইসব লোককে যারা নিজের মত করে অন্যের জীবন ঢেলে সাজাতে চায়।
    -- আমি ঘৃণা করি সেইসব লোককে যারা ভাবে মেয়েদের জীবনে তাদের অধিকার অনায়াস, অর্জন করার দরকার নেই।
    -- আমি ঘৃণা করি তাদের যারা সঙ্গমের সময় পুরুষ ওপরে নারী নিচে থাকার বিধান দিয়েছে।
    --- আমি ঘৃণা করি--------।
    এইসময় একটা দমকা হাওয়ায় কিছু কাগজ ছড়িয়ে পড়ে। একটা শিট উড়তে উড়তে জানলা দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি ধরতে চেষ্টা করি।
    মানিকদা বাধা দেন।
    -- আটকাতে যেও না লতা। বরং পাতাগুলোকে ছড়িয়ে পড়তে দাও। উড়তে উড়তে ওরা চলে যাবে কোন মেয়ের রান্নাঘরে, কুয়োর পাড়ে, ক্ষেতখামারে, কোন স্কুলপড়ুয়ার ব্যাগে, সেঁটে যাবে বিউটি পার্লারের দরজায়, কারখানার গেটে-- কে বলতে পারে! তুমি শুধু লিখে যাও।
    মানিকদা অনেকক্ষণ চলে গেছেন।
    মাথাটা বেশ হালকা লাগছে। আমি লিখছি, লিখে যাচ্ছি।
    ভোরের মোরগ ডেকে উঠল। আমার কলম থামে নি।
    ---------------------------------------( সমাপ্ত)
  • | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১২:৩৫651199
  • হুঁ ঠিকাছে।

    এইবার আরেকবার গোড়া থেকে পড়তে হবে।
  • kiki | 53.230.133.81 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১৬:২৩651200
  • ধ্যুৎ! রঞ্জনদা, শেষটা ডোবালেন। এই না বললেন লতা গল্প বলবে। সেই যে মাঝে সাঝেই আপনি বলতে শুরু করলেন। শেষেও আপনিই বললেন। বৌদিকে জিগিয়ে দেখুন দিকি, ঐ মিথোরাস গপ্পের মত কোন মেয়ে আদেও নিয়োগ প্রথা সমর্থন করবে কিনা। একদম নয়।

    আপনাকে পানিশমেন্ট দেওয়া হইলো, শিগ্গিরি আরেকটা ভালো গল্প লেখার........................
  • সিকি | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১৬:২৮651201
  • এইবারে একটু গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ডটাও ...
  • 4z | 80.24.55.239 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ১৬:৪৩651202
  • শেষটা কি একটু তাড়াহুড়ো করে হল না?
  • ranjan roy | 24.99.43.29 | ০৬ মার্চ ২০১৫ ২৩:৫১651203
  • কিকি,
    পানিশমেন্ট মেনে নিলাম।ঃ))))
    কিন্তু ওই নিয়োগপ্রথার গল্পটা? একেবারে ২৪ ক্যারাট সত্যি।এখানে লেখা যাবে না। শুধু ফোনে বলতে পারি, যদি একান্তই জানতে চাও।
    ৮৫৮৩০৪১৩৯৫।
    মেয়েটি সাধারণ হয়েও ব্যতিক্রমী। ওর কাছে লোকের কষ্ট/যন্ত্রণা দূর করা এত বেশি জরুরি যে বাকি সব সেকেন্ডারি।
    হ্যাঁ, লেখার ব্যাপারে হয়ত ক্র্যাফটের দিক থেকে কাঁচা রয়ে গেছে, ঠিকমত পাকেনি আর কি! ধরে নাও হাত মকশ করছি।ঃ))

    4Z ,
    এখন আমারও তাই মনে হচ্ছে। মাঝখানে মনে হচ্ছিল বোধহয় চুইংগাম হয়ে যাচ্ছে; তাই। আসলে আমি ব্যাপারটাকে সামলাতে পারি নি।ঃ((((
    বুড়ো বয়সে লেখা শুরু করেছি। গল্প অনেক জমে আছে। কিন্তু ক্র্যাফটের দিকটা কাঁচা। ফির কভি!
  • 4z | 208.231.20.20 | ০৭ মার্চ ২০১৫ ০১:২৫651204
  • রঞ্জনদা, চুইংগামই বটে। পাঠককে টইটার সঙ্গে চিপকে রেখেছিল একেবারে।

    আমার যেটা মনে হল, লতার আরও অনেক কিছু বলার ছিল কিন্তু রঞ্জনদা থামিয়ে দিল।
  • ranjan roy | 24.99.200.126 | ০৭ মার্চ ২০১৫ ০৭:৪০651205
  • @4Z,
    বলার ছিল তো বটেই। আমার মনে হল একসাথে বা একই লেখায় সবকিছু হুড়মুড় করে ঢুকিয়ে দেব? বরং এখানে একটা condensed form এ শেষ করা যাক। যেখানে 'আরও বলার ছিল' -- এই ইশারা টুকু থাকবে ব্যস্‌। কিন্তু সেটা হ্যান্ডল করার মত শৈল্পিক দক্ষতা আমার নেই , দেখলাম। হয়ত আস্তে আস্তে এমনই করেই হবে।ঃ)))
  • kiki | 53.230.133.69 | ০৭ মার্চ ২০১৫ ১৯:২৬651206
  • ওকে রঞ্জনদা, ফোন করে নেবো। অনেক গল্প হবে তখন। ঃ)

    নতুন গল্পটা তাড়াতাড়ি শুরু করবেন। আর একটা মজার গল্প হওয়া চাই। চারিদিকের আবহাওয়ায় মন ভীষন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে। আর আমি এত অন্ধকারে ভালো থাকি না।স্বার্থপরের মতই বললাম।

    প্রসঙ্গতঃ, আপনার আর সে-র লেখা পড়তেই ইদানিং টইয়ে আসছিলাম, আর আপনি কিছু মনে করবেন না জেনেই দুড়ুম করে বলে গেসলুম।ঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন