এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জলের আয়না

    Ishani
    অন্যান্য | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৪১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishani | 116.216.162.144 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:৩১648307
  • প্রথমেই একটি অকপট স্বীকারোক্তি | এটি সেই অর্থে কোনো ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয় | বরং ভ্রমণ -অনুভব হয়ত বা |

    জলের আয়না
    .................................

    গৌরচন্দ্রিকা পর্ব
    ..........................

    এই " নীলু"-র সঙ্গে অল্পবয়স থেকে ঘুরে বেরিয়ে আমার একটা বিশ্রী অভ্যেস হয়েছে | খালি খালি মনে হয় "দিকশূন্যপুর " চলে যাই | " দিকশূন্যপুর " মানেই সেই অমোঘ হাতছানি | নিরুদ্দেশের | জলে জঙ্গলে পাখিতে নির্জনতায় একাকার | মনে মনে তাই যখন তখন আমার তাই ওই উড়াল ডানায় ভর .....চল দিকশূন্যপুর !

    " বালি " যাবার ইচ্ছে তো সেই কবে থেকেই | লোকের মুখে শুনে , ছবি দেখে | দিকশূন্যপুর না হয় নাই হোক , অচিনপুর তো বটে !

    বালি...কিছু কথা
    ..........................

    ইন্দোনেশিয়া | বালি | লেসার সুন্ডা দ্বীপপুঞ্জের একেবারে পশ্চিমপ্রান্তে এই বালি | জাভা আর লোম্বকের মাঝে | রাজধানী ডেনপাসার...দ্বীপের দক্ষিণ দিকে এই দ্বীপের আশেপাশে আরও দু' চারটি ছোট ছোট দ্বীপ ,ছড়িয়ে ছিটিয়ে ...যা " বালি"-রই অন্তর্ভূক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় |

    ২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যা ৩, ৮৯১,৪২৮ | ইন্দোনেশিয়ার যত হিন্দুধর্মালন্বী , বেশিরভাগই বালির বাসিন্দা | ২০০০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বালির ৯২.২৯% বাসিন্দার বালিনিজ হিন্দুধর্ম আর অবশিষ্টাংশ বেশিরভাগ মুসলমান |

    এই দ্বীপ চারুকলা , শিল্পকলার পীঠস্থান | নৃত্য , সঙ্গীত , ভাস্কর্য , চিত্রকলা, চর্মজশিল্প , ধাতুশিল্প ইত্যাদি | আহা, শুনেছি বালি নাকি পর্যটকদের স্বর্গ ! আমার কী আর কপালে আছে অত সুখ ! মনে মনে সেই কবে থেকে তো এঁচে রেখেছি.." যাবই , আমি যাবই , ..ওই সমুদ্দুরে যাবই ..." আমার এই বালি নিয়ে কত যে অলস দুপুর , কত যে বিনিদ্র রাত কেটেছে !

    ইতিহাসের পাতা থেকে
    ...................................

    যে কোনো জায়গায় যাবার আগে আমার মনে হয় , তার ইতিহাস খানিক খানিক জেনে রাখা দরকার |
    খ্রীষ্টপূর্ব ২০০০ সাল আন্দাজ কিছু অস্ট্রেলেশিয়ান মানুষ তাইওয়ান থেকে প্রথম পা রাখে বালির মাটিতে | তাই আজও ভাষা আর সংস্কৃতির নিরিখে বালির অধিবাসীরা ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জ , মালয়েশিয়া , ফিলিপিনস আর ওশিয়ানিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত | বালিদ্বীপের পশ্চিমে সেকিক গ্রামের কাছে সেই সময়ের পাথরের তৈরী হাতিয়ারের হদিশ মিলেছে |

    প্রাচীন বালিতে হিন্দু শ্রেণীবিভাগ ছিল ন'টি ... পাশুপত , ভৈরব , শিবসিদ্ধান্ত , বৈষ্ণব, বোধ , ব্রহ্ম , রেসি, সোরা আর গাণপত্য | প্রত্যেক শ্রেণীর নিজস্ব বিগ্রহ আছে |

    বালির সংস্কৃতি একেবারেই অভিনব আর অনন্য | সবাই বলেন , বালির অধিবাসীরা আত্মতৃপ্তির শীর্ষে পৌঁছে গেছে | এদের মধ্যে কোনো অভাববোধ নেই , অসন্তোষ নেই | শুনেছি এখানে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় , " বল তো , স্বর্গ জায়গাটা কেমন ?" সে নাকি নির্দ্বিধায় উত্তর দেয় , " কেন ? ঠিক আমাদের বালির মতো |" এখানে রোজের জীবনে অহেতুক চোখরাঙানি নেই , দুশ্চিন্তা নেই |আহা , " আমার এই দেশেতেই জন্ম যেন, এই দেশেতেই মরি ..." শুধু নয় , পুনর্জন্ম যদি থেকে থাকে, তাও যেন হয় এইখানেই | একেই বুঝি অক্ষয় স্বর্গবাস বলে ?

    এর মানে কিন্তু এই নয় , যে বালির অধিবাসীরা পরিবর্তনের বিপক্ষে | যদি বা পরিবর্তন কিছু ঘটেও , এরা তার সঙ্গে সুন্দর আর সুষমভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে জানে | ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে | বালিতে হিন্দুধর্ম প্রচার পাওয়ার আগে প্রচলিত ছিল সর্বপ্রাণবাদ | হিন্দু ধর্ম আসার পর এরা সুন্দরভাবে নিজেদের মতো করে তা গ্রহণ করল , মিশিয়ে নিল নিজেদের জীবনধারার সঙ্গে | সেইজন্যই বালিতে যে হিন্দু ধর্মের রীতি নীতি আচার আচরণ আমরা দেখি , তা পুরোপুরি ভারতবর্ষের মতো নয় |

    বালির সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে ভারতীয় , চৈনিক আর বিশেষভাবে হিন্দু সংস্কৃতি দ্বারা | "বালিদ্বীপ " নামটি পাওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায় উত্কীর্ণ শিলালিপি থেকে | এর মধ্যে আছে ৯১৪ খ্রীষ্টাব্দে শ্রী কেশরী বর্মদেবের আমলে খোদাই করা ব্ল্যানজং স্তম্ভ | এই সময়েই প্রথম জলসেচ পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানচাষ করা শুরু হয় | এই পদ্ধতিটির নাম " সুবাক ''| আজও সেই আমলের বেশ কিছু সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয় ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায় | পূর্ব জাভায় ছিল হিন্দু মজোপাহিত সাম্রাজ্য ( ১২৯৩-১৫২০ খ্রীষ্টাব্দ )| এরাই ১৩৪৩ -এ জাভায় বালিনিজ উপনিবেশ তৈরী করে | যখন এই সাম্রাজ্যের পতন হল , তখন বহু বিদ্বজ্জন , পুরোহিত, শিল্পী ও সংগীতজ্ঞ জাভা থেকে বালিতে চলে আসেন | সেও তো হল অনেক দিন.. পঞ্চদশ শতকের কথা |

    বালির অধিবাসীরা প্রথম বহির্বিশ্বের ( বা আরও সংকীর্ণভাবে বলতে গেলে প্রতীচ্যের) সংস্পর্শে আসে সম্ভবত ১৫৮৫ সালে , যখন একটি পর্তুগীজ জাহাজ বালির বুকিত উপদ্বীপে কিছু পর্তুগীজকে নামিয়ে দেয় | ১৫৯৭ সালে পর্তুগীজ পর্যটক কর্নেলিস ডি হুটম্যান বালিতে আসেন আর তারপরেই ১৬০২ সালে স্থাপিত হয় ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি | আর সেই সূচনা | তারপর আড়াই শতক ধরে ঔপনিবেশিক শাসন ও নিয়ন্ত্রণের জমি তৈরী করা শুরু এবং দু'শ পঞ্চাশ বছর পর ১৮৪০ সালে ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে পুরোপুরি ডাচ নিয়ন্ত্রণ চালু হয়ে যায় | রাজনীতিতে , অর্থনীতিতে এরা সুকৌশলে বিভিন্ন স্থানীয় দলের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করল ১৮৯০ সালের শেষাশেষি এবং এর অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ফয়দা তুলে নিল এই ডাচ সম্প্রদায় | নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে স্থলে জলে ছড়িয়ে পড়ে ডাচেরা ...নিজেদের ঔপনিবেশিক স্বার্থ নিয়ে ; সানুর অঞ্চলে...১৯০৬ সালে. প্রবলভাবে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে বালির রাজন্যবর্গ এবং তাদের অনুগত প্রজারা ..তারা আত্মসমর্পণ বা বশ্যতা স্বীকারে অনিচ্ছুক .এভাবেই এদের আক্রমণ আর জবরদখলের প্রতিবাদে ১০০০ বালির অধিবাসী হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করে !

    এরপর ডাচ গভর্ণরেরা বালিতে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু করে দেন বটে , কিন্তু ধর্ম আর সংস্কৃতিতে বিশেষ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না | বালিতে ডাচ শাসন তেমনভাবে তাই প্রকট হয়নি , যতটা হয়েছে জাভা আর মালুকুতে | ১৯৩০-এ নৃতত্ত্ববিদ মার্গারেট মিড ও গ্রেগরী বেটসন , শিল্পী মিগ্যুয়েল কোভারুবিয়াস আর ওয়াল্টার স্পাইস , সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ কলিন ম্যাকপীবালিকে প্রতীচ্যের আলোয় প্রকাশ করেন এই বলে , " এ এক আশ্চর্য মোহময় দ্বীপ.. যেখানে নন্দনতত্ত্ব আছে শান্তির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে..প্রকৃতির একান্ত সাহচর্যে | " এবার শুরু হয়ে যায় প্রতীচ্যের ভ্রমণবিলাসীদের আনাগোনা |

    ১৯৪২ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বালি দখল করে | কিন্তু জাপান আবার যখন ১৯৪৫ সালে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় , তখন ডাচরা ফিরে আসে ইন্দোনেশিয়ায় আর সেই সঙ্গে বালিতেও | পুন:প্রতিষ্ঠা হয় সেই একই যুদ্ধপূর্ব ঔপনিবেশিক শাসন |

    ২০শে নভেম্বর , ১৯৪৬ | মারগার যুদ্ধে জাপানী অস্ত্রশস্ত্রে শিক্ষিত বালির সামরিক বাহিনী প্রবল পরাক্রমে ডাচদের মোকাবিলা করে , কিন্তু সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত হয় | এইভাবে চলে আরও ৩ বছর | অবশেষে ২৯ শে ডিসেম্বর ১৯৪৯-এ বালিকে ঘোষণা করা হয় স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসেবে |

    স্বাধীনতার যুদ্ধের গল্প সব জায়গাতেই প্রায় এক | তিমিমাছেরা তো চিরকালই.... | আমার মন ভারী হয়ে ওঠে | কিন্তু আবার নড়েচড়েও বসি | শুধু ইতিহাস জানলেই হবে ? ভূগোল জানতে হবে না ?

    বালিবৃত্তান্ত
    ...................

    বালিদ্বীপ জাভা থেকে ৩.২ কিলোমিটার পূবদিকে | দু'টির মধ্যে বিভাজন বলতে বালি প্রণালী | পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রশস্ততা ১৫৩ কিলোমিটার আর উত্তর দক্ষিণে ১১২ কিলোমিটার | ক্ষেত্রফল ৫,৬৩২ বর্গ কিলোমিটার | বালির পর্বতমালার শৃঙ্গগুলির বেশ | কয়েকটির উচ্চতা ৩০০০ মিটারের বেশি | সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট আগুং ( ৩০৩১ মিটার)..এটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি | এই আগ্নেয়গিরি - সমৃদ্ধ প্রকৃতির জন্য বালির উর্বরতা আর পর্বতশ্রেণীর কারণে যে বৃষ্টিপাতের আধিক্য , সেই কারণে শস্যের ফলনও পর্যাপ্ত | পর্বত শ্রেণীর দক্ষিণদিক ঢালু , সেখানে ধানের চাষ হয় | পাহাড়ের উত্তরদিকের ঢাল অপেক্ষাকৃত খাড়াইভাবে নেমে গেছে সমুদ্রে | এখানে কফি চাষ হয় | আছে আয়ুং নদী..দৈর্ঘ্যে ৭৫ কিলোমিটার |

    এসব তো গেল নীরস কচকচি | এবার চমকপ্রদ কথা...যা আমাকে উতল করে তুলেছে | দ্বীপের চারিপাশে প্রবাল পাহাড় | দক্ষিণের সমুদ্রতটে সাদা বালি , উত্তরে আর পশ্চিমে কালো |

    রাজধানী ডেনপাসার ছাড়াও আছে সমুদ্রতটের সেরা রিসর্ট কুটা , সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল উবুদ , পুরনো ঔপনিবেশিক রাজধানী সিঙ্গারাজা.... এ সবই তো দেখতে হবে আমায় |

    আর শুধু কী এই ! এছাড়া সমুদ্র আছে , আছে নীলচে সবুজ জল , অগুন্তি চেনা অচেনা পাখপাখালি , লাল নীল সবুজ হলুদ মাছ , পোকামাকড় আর গাছ , ফুল , পাতা | এখানে মাটির রং আলাদা , গন্ধ আলাদা ,...আকাশেরও | আমাকে যে ছুঁয়ে দেখতেই হবে !

    প্রথম আঁধার..প্রথম রাত
    ...................................

    পাহাড় , বনজঙ্গল আর সমুদ্র.... আমাকে যদি বেছে নিতে বলা হয়, আমি সমুদ্রকেই বেছে নেব | মনে মনে তাই নিয়েছি এতদিন | পাহাড় আমাকে টানে ঠিকই , কিন্তু কোথায় যেন সেই টানে একটা হীনমন্যতা , একটা অসহায়তাও মিশে থাকে | বন অন্যরকম..খালি মনে হয় , ইচ্ছে করে হারিয়ে গেলে বেশ হয় ! আর সমুদ্র ? আমার কাছে এক বিচিত্র বাঙ্ময় নির্জনতা | সামনে দাঁড়ালে মনে হ য়, আমার আর অন্য সঙ্গীর প্রয়োজন নেই... আমি একলাই বেশ থেকে যেতে পারি | চারিদিকে জল...আমাকে ডাকছে...পায়ে পায়ে চলে যাই ভেতরে , আরও আরও ভেতরে.... সোনালি রুপোলি মাছ , প্রবালদ্বীপ , ডুবোপাহাড় ...কি জানি , হয়ত মত্স্যকন্যাও !
    অত জল দেখলেই খুব সাধ জাগে আত্মহননের | নিজের অস্তিত্ব অসহ্য লাগে তখন | অত লোনা জল দেখলে ইচ্ছে হয় তাতে আরও কয়েক বিন্দু মিশিয়ে দিই..চোখের জল | আমারও না হয় সামান্য অবদান রয়ে যাক এই নি:সীম উদ্দাম বিষণ্নতায় !

    এই আকর্ষণ এতই তীব্র , এতই অমোঘ, যে আমাকে হাতছানি দেয় বারবার \ আমিও নেই -আঁকড়া হয়ে আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গীটিকে বলি , "চলো না, আমরা জলে যাই | "
    সে বেচারী নিতান্তই অ-কবি এবং বেরসিক | ভেবেছিল "পাগলি" -র বোধ হয় সাঁতার শেখার মন | তারপর আমার উলুঝুলু মন খারাপের চেনা গন্ধটা ( ভাতের হাঁড়ির তলা ধরে যাবার মতো ) নাকে আসতে হাল ছেড়ে দেওয়া গলায় বলল , " কোথায়"? আমি সঙ্গে সঙ্গে মন খারাপের চাদরটা এক ঝটকায় গা থেকে নামিয়ে মন ভালোর আগুনআঁচে হাত পা সেঁকতে সেঁকতে বললাম , " বালি "| " হঠাত বালি কেন ? এত জায়গা থাকতে ?'' " শুনেছি অনেক অনেক জল..নীলচে সবুজ জল.. এমন রং , যে আকাশেও জলের ছায়া পড়ে |"

    শুরু হয়ে গেল তোড়জোড় | সত্যি বলতে কী ,একটু আধটু বাগড়া যে দেয়নি , তা নয় | তবে আমি আবার সেই ছোট্টবেলা থেকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলে একেবার সিদ্ধহস্ত ! নীরব অসহযোগ , তির্যক চাউনি , বঙ্কিম বাক্যবাণ... অব্যর্থ অস্ত্র. শত্রু ঘায়েল হবেই !

    সে কী উত্তেজনা আমার ! জল আর জল..উফ, আনন্দে মরে যেতেও এত সুখ !

    সিঙ্গাপুর হয়ে বালি | চ্যাংঘি বিমানবন্দরের ঠমকঠামক -এর বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন , কারণ গয়নাগাঁটি পরা গৌরচন্দ্রিকা আমার দু' চক্ষের বিষ !

    ডেনপাসার-এ বালির বিমানবন্দর | খেলনার মতো | পৌঁছলাম যখন , রাত অনেকটাই | ও মা ,এখানকার মেয়েগুলো কী মিষ্টি দেখতে ! এক্কেবারে তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা , আর সব্বাই দেখনহাসি | মনে হয়, এক্ষুণি ছেলের বউ করি ! আর কী যে সুন্দর পোশাক ওদের ! কী জানি বাবা , কেমন করে পরেছে ! আমার তো মেখলা -চাদর প্রথমবার পরতে গিয়ে যা ল্যাজে-গোবরে অবস্থা !

    ট্যাক্সি ছুটছে..আমিও ছুটছি..মনে মনে | ইস, রাতে সমুদ্র দেখা যাবে ? থাকার কথা বালি হায়াতে | অঞ্চলটির নাম সানুর | পাঁচ তারা | চুলোয় যাক ! আমার এই বালির নিমেঘ অন্ধকার আকাশে তখন ঝকঝকে তারারা বিছিয়ে দিয়েছে জরির জাজিম |

    হোটেলের প্রবেশদ্বার থেকে অভ্যর্থনাকক্ষ বেশ অনেকটাই | এক্কেবারে " তুমি যে গিয়াছে বকুল বিছানো পথে..." আমি তো মোহিত | মিষ্টি সরবত, কাঁঠালিচাঁপা ফুলের মালা , ছবি তোলা...উফ, সেই বিয়ের সময় ছাড়া আমায় নিয়ে এত আহ্লাদ আর কেউ করেইনি ! প্রায় ঠাকুরপুজো মার্কা অভ্যর্থনার পর আমাদের তো পৌঁছে দিল ঘরে | আমার সঙ্গীটি বেজায় খুঁতখুঁতে | সে আগে বাথরুম দেখবে | বেসিন , কমোড ঝকঝক করছে কি না , চাদর বালিশে কোথাও দাগ নেই তো ? কম্বল এক্কেবারে পরিপাটি করে ভাঁজ করা ? তোয়ালে সব আলাদা আলাদা ? গা মোছার , হাত মোছার , একটা আবার বাথটাবের থেকে বেরিয়ে পায়ের নীচে রাখতে হবে , যাতে মেঝেতে জল জল না হয় | বাবা রে বাবা ....এরা পারেও বটে ! ওই দ্যাখো , আবার দেখছে বাথরোব দিল কি না , ঘরে পরার চটি... দূর ছাই , একটু বারান্দায় যাব , ছিটকিনিটা খুলছেই না ! আমি প্রায় হাত ধরে ঝুলে পড়েছি ততক্ষণে ...দরজাটা খুলে দেবার জন্য |

    আমাকে পাগল ছাগল কী যে ভাবে কে জানে ! বলল , " এই অন্ধকারে আবার বারান্দায় গিয়ে কী দেখবে ?" আচ্ছা লোক তো ! তোমার কপাল ভালো , যে এই ঝুপসি অন্ধকারে আমি ছুট্টে সমুদ্রে চলে যেতে চাইছি না !
    দোতলার ঝুলবারান্দায় কী সুন্দর গোল গোল বেতের চেয়ার ! দূরে অন্ধকার সমুদ্র , ঢেউ দেখা যায় না..শুধুই শব্দ | শুধু মাথায় জরির ফিতের আভাস আর অন্ধকার.. আবার কী? আলোকেও কি দেখা যায় ? আমরা আলোকিত বস্তুকে দেখেই উল্লসিত হয়ে ভাবি , আলো ছুঁতে পেরেছি ! আর এই গোত্রের মানুষগুলো জানলই না , অন্ধকারকেও দেখা যায় , অন্ধকারকেই দেখা যায় ! অন্ধকারকে চিনতে , জানতে বুঝতে আলো লাগে না ! অন্ধকার স্বয়ংসম্পূর্ণ | অন্ধকার মোহময় |

    আমি ডুবে গেলাম | অন্ধকারে | একা একা | আমি এই মুহূর্তে " একলা " নই | " একলা " যে বড় নি:সঙ্গ অনুভব ! আমি " একা"| একা থাকতেই ভালোবাসি | এই শব্দটি মিশে আছে আমার অস্তিত্বে | পরিপূর্ণতা নিয়ে | দৃশ্যমানতা আর অদৃশ্য রোমাঞ্চ বুকে করে | চেতনে অবচেতনে | এই বাঁচা বড় যন্ত্রণার , আবার বড় সুখেরও |

    অহনার আলো ...প্রথম দিন
    ...................................

    এই যে ভ্রমণবৃত্তান্ত..প্রথমেই একটা কথা বলে রাখি.. আমি যতটা সম্ভব বিদেশী ভাষা ব্যবহার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব | কেমন জানি পর পর লাগে . একটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি...একে তো চিরকালই আমার হাঁ-করা স্বভাব , আবার কাল রাতে অমন মন ভোলানো অন্ধকারের শোভা.. এই যে বালিতে আমাদের অস্থায়ী আবাস..এটির তিনটি ভাগ | আমি বাংলা নামেই বলি...বাগানবিলাস , কাঁঠালিচাঁপা আর জবা | আমি তো নাম শুনেই অর্ধেক কাত ! আঙুল মটকাচ্ছি ,ইশ ,আমি ওই দ্বিতীয়টাতে ঘর পাই যদি ! যাক বাবা , কোন অর্বাচীন বলে , ঈশ্বর নেই ! দোতলায় ঘর ,সমুদ্র হই হই করে ডাকছে আমাদের | আজ সকালে লিখতে গিয়েই মনে পড়ল...এই কথাগুলো বলাই হয়নি কাল রাতে !

    এই মুহূর্তে সকাল হল | না: , বরং বলা ভালো, ভোর .

    “খড়ের গাদায় সূচের মত হারিয়ে যাওয়া
    আমার মুখে
    ভোর পড়েনি বলে তোমার দু:খ হয় কি ?”

    গুটিগুটি পায়ে নিচে নামি | কাল রাতের অন্ধকারে দেখতে পাইনি , চারদিকে শুধু গাছ , লতা আর ফুল | যে অংশের যা নাম , সেই ফুলের বাহারে সাজানো | এ ছাড়াও অজস্র নাম না জানা গাছ গাছালি , অচেনা পোকামাকড় , পাতার আড়ালে মুখ লুকিয়ে রাখা পাখিরা | আর একটু মেঘলাটে আকাশ..একটু যেন মন খারাপের আভাস | আমাকে বলছে , "এতদিনে এলে ?" আমি ফিসফিসিয়ে বললাম , " এলাম তো...এই যে আমি..".

    সমুদ্র | একা | নিঝুম নির্জন | কেউই নেই | চটি খুলে সন্তর্পণে প্রথম ছুঁলাম আমার বালিকে | একটু ভিজে ভিজে..ঠান্ডা ঠান্ডা | এবার পা ডুবিয়ে হাঁটা..জলের দিকে | এখন ভাঁটার টান | সমুদ্র শান্ত | সবজেটে জল , একটু দূরে আমাদের ঘর যেদিকে...অনেক গাছ ...ঘন সবুজ , ছায়া ছায়া | সাদা বালি আর খুব আবছা নীল আকাশ | হঠাত আমাকে চমকে দিয়ে টিপটিপিয়ে বৃষ্টি নামল | তারপর ঝিরঝির করে | সমুদ্রে বৃষ্টি অন্যরকম | এত জল...আরও জল | আমি ভিজে যাচ্ছি... আমার পায়ে খুব আলতো ঢেউয়ের স্পর্শ..আমার মাথা মুখ বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি | সমুদ্রের ওপর হালকা মসলিনের মত বৃষ্টির পর্দা | দূরের ঢেউ এখন আর তেমন স্পষ্ট নয় | জলের রং পাল্টে ধুসর ঘোলাটে | এবার বৃষ্টি বাড়ছে...ঘরে যেতে হবে |

    ঝুলবারান্দায় আমি. চা নিয়ে বসে | একাই | এই সব সময়ে একাই থাকতে হয় | কথা বলতে ইচ্ছে করে না | বৃষ্টি পড়ছে এখনও , তবে থেমে যাবে একটু পরে | থামতে তো হবেই | আমি বেরোব যে ! একটা খুদে কাঠবিড়ালি গাছ বেয়ে নেমে এসেছে আমার কাছে , কালো চকচকে পুঁতির মত চোখ | আলো স্পষ্ট হচ্ছে এবার...রংমিলান্তি প্রকৃতি | আজ আমরা যাব উবুদ |

    প্রাতরাশ খাওয়া এখানেই | অজস্র খাবার , স্তূপ করে রাখা , যেমন ইচ্ছে যত খুশি | আমার এমনিতেই খিদে বোধ কম , আর এমন প্রকৃতির কোল ঘেঁষে বসা ! খেয়ে কেউ সময় নষ্ট করে ? আমি কোনমতে খাওয়া শেষ করি | বাইরে গাড়ি অপেক্ষা করছে | উবুদ |.

    এখানকার চিত্রকলা মূলত: ধর্মীয় আর পুরাণকথা বা উপকথা নির্ভর | এর সঙ্গে খানিক মিশেছে পাশ্চাত্য ও আধুনিক কারিকুরি | সব মিলিয়ে এক অন্য রকম চিত্রকলা , যা স্বকীয় স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল আর পরিষ্কারভাবে নিজস্ব রীতির ধারক ও বাহক | বালির নাচ ,গান , নাটক ...সবেতেই এদের নিজস্বতার স্পর্শ যেমন আছে , তেমন বহির্বিশ্বের ছাপও পরিস্ফুট | তবে ধর্মীয় প্রভাব অপেক্ষাকৃত প্রকট ; দেবদেবীকে স্তুতি ও সন্তুষ্টিবিধান এদের শিল্পসংস্কৃতিতে মিশে গিয়েছে | কাঠ আর পাথরের ভাস্কর্য , সোনা রুপোর কাজ , রঙিন ক্যানভাস ...সবকিছু বালির নিজস্ব শিল্পসম্পদ | বাটিক শিল্পে অবশ্য বালি ঋণী জাভার কাছে |

    গাড়ি ছুটছে | আমি একবার এ জানলা দিয়ে , একবার ও জানলা | একদিকে তাকালে মনে হয় অন্য দিকে যেন কত সুন্দর দৃশ্য দেখাই হল না. ! উবুদ হস্তশিল্প কেন্দ্র | যেহেতু বালির অর্থনীতি বেশিটাই ভ্রমণার্থীনির্ভর , তাই হস্তশিল্প রমরমিয়ে চলছে | পাথরের ভাস্কর্য বাটুবুলানে , সেলুকে সোনা রুপোর কাজ , কাঠের কাজ দেখতে মাস , ছবি চাইলে পেনগোসেকান আর গিয়ান্যারে বাটিকের কাজ | চোখ জুড়িয়ে যায় , অবাকও লাগে | আমরা দেখছি , সবাই হাসিমুখে দেখাচ্ছে..বোঝাচ্ছে | পাথরের কাজ দেখে খুব অবাক হইনি | আমাদের দেশেও তো আছে... তবে কী বিরাট বিরাট মূর্তি...ছেনি বাটালি দিয়ে..টুকটুক করে...নিখুঁত দক্ষতায় | চোখের সামনে দেখলে তারিফ না করে পারা যায় ? এই মূর্তি দিয়ে রাস্তার মাঝেমধ্যেই সাজানো..কাল রাতে বিমানবন্দর থেকে আসার সময়েও চোখে পড়েছে..আর চেনা মূর্তিও..রামায়ণ মহাভারতের চরিত্ররা | এখানে বেশিরভাগ বাসিন্দাই হিন্দু | কিছু বৌদ্ধ , মুসলমান আর খ্রিস্টধর্মী সংখ্যালঘু | সোনা রুপোর কাজও সুন্দর..তবে ওই সাজিয়ে রাখা গয়নাগাঁটি দেখতে গেলে আমার পি. সি. চন্দ্র বেঁচে থাক ! আমি গেলাম যেখানে চোখে ঠুলি পরে শিল্পীরা কাজ করছে , তাই দেখতে ! আমার সঙ্গী কলার তুলে ঘুরছে...দ্যাখো..কাকে সঙ্গে করে এনেছি...আমার পকেট নিরাপদ | আমি মোহিত | কী সুন্দর যে নকশা তুলছে ! ওড়িশার ফিলিগ্রী দেখেছি, কিন্তু এ ভাবে চোখের সামনে তো বানাতে দেখিনি ! কাঠের কাজের শোভাই বা কত ! দু'রকম কাঠ | একটা সাদাটে..একটু নরম | অন্যটি কালো বা ঘন বাদামী এবনি | ভারী এবং দামীও অনেক বেশি | এ ছাড়া কিছু চন্দনকাঠ | ওতে আমার উত্সাহ নেই | ও তো আমাদের দেশেই আছে | নানান মূর্তি..দেবদেবী থেকে স্থানীয় জেলেবুড়ো .. হাতে ছিপ বা খেপলা জাল | ইশ..খেপলা জালের জালিকাজটাও কী নিখুঁত ! প্রায় দেড়হাত উঁচু সরস্বতী ..রাজহাঁসের পিঠে ,জনকদুহিতা সীতা , শিব, গণেশ | দেখি আর মোহিত হই. সুন্দরী নারী...কতই না বিভঙ্গ ! নিজের দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করে না ! কী যে হীনমন্যতা !

    এরপর ছবি | আমাকে খুব একটা টানে না | আমার দেশের ছবিই ভালো | আমার অবন ঠাকুর , নন্দলাল ,যামিনী রায় , রবি বর্মা , রামকিঙ্কর , হেমেন মজুমদার , বিকাশ ভটচাজ , যোগেন চৌধুরী , গণেশ পাইন , ইউসুফ আরাক্কাল...বেঁচে থাক !

    গাড়ির চালক নিয়ে গেল দোকানে | দুপুরের খাবার খেতে হবে তো ! স্থানীয় খাবার | ঠিকঠাক..ওই যেমন হয় , আমার মনেও নেই কী খেয়েছিলাম | তবে এরা ভাত খায় , আমাদেরই মতো..একটু চিটচিটে শুধু | আর আমিষ |

    বাটিক শিল্প | চোখ জুড়িয়ে গেল | সুতিতে , রেশমে...ঝাঁকে ঝাঁকে রঙিন ফুল আর প্রজাপতি যেন ! কত রঙের যে বৈচিত্র্য | সামনে করে দেখাচ্ছে | আমাদের দেশেও আছে , কিন্তু এদের যে কী যত্ন করে করা, কী যে মমতায় হাত বোলানোর মতো করে ! আমি নতুন করে আপ্লুত হলাম | ফুল, প্রজাপতির নকশা , কিছু পুতুল ছবিও আছে \ প্রচুর কারিগর , প্রচুর ক্রেতা , বিভিন্ন দাম..সকলেরই সাধ্যের মধ্যে কিছু না কিছু পাওয়াই যাবে ! আমিও..তাই...টুকিটাকি...এই নেশাটি আছে আমার | যেখানে যাই, সেখানকার কিছু না কিছু কুটিরশিল্প সংগ্রহের | গালিগালাজও খাই কম নয়..কিন্তু কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলো !

    উবুদে আছে বাঁদরের বসতি | সংরক্ষিত অরণ্য এলাকা | স্থানীয় মতে পবিত্রও বটে | ৪ টি প্রজাতির বাঁদর...পুরুষ , মহিলা , শিশু নিয়ে জমজমাট সংসার | প্রতি মাসে এখানে প্রায় ১০,০০০ পর্যটকের আনাগোনা | এই বনে প্রায় ২৭ একর জমি জুড়ে অন্তত ১১৫ টি প্রজাতির গাছ | এই বনে আছে পুরা ডালেম এগুং পাডা টেগাল মন্দির , একটি " হোলি স্প্রিং " স্নান করার মন্দির এবং আরও একটি মন্দির..যেখানে শবদাহ সংক্রান্ত পূজার্চনা করা হয় | স্থানীয় গ্রামবাসীরাই এই বনের দেখাশুনা করে |

    এখানেই বিকেল গড়িয়ে এল | একটু ক্লান্ত লাগছে | মন চাইলেও শরীর বইছে না | আজ বরং হোটেলেই ফিরি | ওখানেই সূর্যাস্ত দেখব...আর রাত নামাও |

    “ঠিক জানি এক রাত্রিবেলা দেখা হবেই...

    কিন্তু আমি অবিন্যস্ত..
    মৃত্যু , না কি বসন্ত কাল ?”

    বসন্ত কাল ? ও মা, তার মানেই যে রঙের ছড়াছড়ি ! রঙবাহার দেখব না ? একটু ক্লান্ত লাগছে বটে..কিন্তু বালির নাচ-গান ? কী যে মনকাড়া সুর !ওই বিমানবন্দরে বাজছিল যে...শুনেছি...হোটেলে ফেরার আগে..একটুক্ষণ কোথাও....

    হিন্দুশাস্ত্রে নৃত্য তো চতু:ষষ্টি কলার অন্যতম | নারীকে দেখা হয় "প্রকৃতি" হিসেবে বা "জননী" হিসেবে | সেই রামায়ণ , মহাভারত , পুরাণ , দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন | এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই | বিশেষ করে "রংদা " আর " বারং " -এর যুদ্ধ.."কু" এবং "সু". রংদা হলো অশুভশক্তির বাহক..ওই পিশাচ বা ডাইনি আর বারং হলো সিংহ বা ড্রাগন |

    বালির নৃত্যশিল্পীরা তালিম পেতে থাকে প্রায় মাতৃগর্ভ থেকেই | মাতৃগর্ভের অন্ধকারে থাকাকালীন অজাত শিশুরা শোনে সঙ্গীত , বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার | আর হাঁটতে শেখার আগেই তাদের হাতের মুদ্রায় নৃত্য বিভঙ্গ | মাত্র ৭ বছর বয়স থেকেই এরা শিক্ষানবিশী শুরু করে দেয় | এদের নৃত্যে ব্যবহৃত যাবতীয় হাত ও পায়ের ভঙ্গি , মুদ্রা ..তালে তালে ওঠানামা করে "গামেলান"-এর সঙ্গে | এটি বিশেষ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের সমাহার এবং জাভা ও বালি-র বিশেষত্ব |

    বাজনার তাল ও লয়ের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে মুখ , চোখ, হাত , পা, নিতম্ব ইত্যাদির বিভঙ্গ ও অভিব্যক্তি শিক্ষা দেওয়া হয় | প্রতিটি মুদ্রায় কী যে আলংকারিক সৌন্দর্য আর শিল্পসুষমা !

    আমরা মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখেছি এই নাচ... যেন এক ঝাঁক রঙিন প্রজাপতি ! চোখের সামনে হাজার ফুলের মেলা , রামধনু রং বিছানো | দু' একটি শ্যামাঙ্গী ক্ষীণকটি সুন্দরীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসার সে কী দুর্জয় লোভ আমার ! কিন্তু ভাগ্যে থাকলে তো ! ওটি কী আর সহজ ! অগত্যা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো.. ওই একই ধরনের সাজপোশাক পরা নৃত্যরতা উচ্ছল গুটিকয় পুতুলমেয়ে আমার..তাই সই !

    রাতের সমুদ্র এখন.... ঢেউ ভাঙছে........ অনেক অনেক দূরে | ঢেউয়ের মাথায় সাদা আলো | ফসফরাস | আমি ভাবছিলাম জ্যোত্স্না | আহা , এভাবেই কি চন্দ্রাহত হতে সাধ জাগে ? আজ বুঝি পূর্ণিমা ? রাত ১১ টায় আসবে ভরা জোয়ার | আমি কি হেঁটে যাব ?....সমুদ্রে ?

    “আসলে এই ভিড়ের মধ্যে অচিন পাখি খাঁচায় থাকে

    টোপ গেলে না .........”

    অস্তিত্বে কোমল গান্ধার ... দ্বিতীয় দিন
    ..................................................

    আজ সকাল থেকেই আমাদের তুমুল হই হল্লা | সাজ সাজ রব | আজ যে যাব অনেকটা পথ | আগ্নেয়গিরি দেখতে | আমি আগে কখনো দেখিনি | কোনো দিন যে দেখব , তাও ভাবিনি | জীবন্ত | ১৮০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৪ বার সে জেগে উঠেছে | কিন্টামানি | এক বিশাল হ্রদের ওই ভেতরে | বালির বৃহত্তম হ্রদ..বাটুর |

    প্রাতরাশ খেয়ে আমরা গাড়িতে | আমি আগেই আমার সঙ্গীটিকে বলে দিয়েছিলাম , " তুমি মন দিয়ে ছবি তুলবে , আমি মন ভরে দেখব | কোনো কথা নয় | আমার সাথী আজ শুধুই নির্জনতা | নির্জনতার এক বিচিত্র বাঙ্ময় উপস্থিতি আছে..পাহাড়ী রাস্তায় বোঝা যায়...ঠিক যেমন সমুদ্রের আছে নির্জন বাঙ্ময়তা | চেনা গাছ , অচেনাও অনেক, চেনা আকাশ , আবার কী ভীষণ অচেনা ! এই সব সময়ে আমার কেমন নিজের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকতে ইচ্ছে করে | তখন শুধু বলতে ইচ্ছে হয়...

    " ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
    লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝরে যায়--
    হাসি , জ্যোত্স্না, ব্যথা, স্মৃতি অবশিষ্ট কিছুই থাকে না.
    এ আমার অভিজ্ঞতা. পারাবতগুলি জ্যোত্স্নায়
    কখনো ওড়ে না ; তবু ভালোবাসা দিতে পারি আমি...."

    চুপচাপ এভাবেই পার হই নির্জন পথ | অনেক গাড়ির ভিড় | কিন্টামানি | আমি তো চিরকেলে আদেখলা | প্রায় ছুট্টে যাই ভেতরে | এটা একটা বড়সড় খাবার জায়গা | বাটুর হ্রদের কোলে | কপাল ভালো হলে বাইরের বারান্দায় জায়গা পাওয়া যাবে | ওখানে বসে খাও , আর দুরে দেখো আগ্নেয়গিরি | আমার কপাল ভালো | একটি বালিনীজ তরুণী এক গাল হেসে আমাকে বসিয়ে দিল চমত্কার একটি জায়গা বেছে | আমি তো খুব উল্লসিত | এখন খাবার আনতেও উঠছি না !

    সঙ্গীটি দেখছি হঠাত ওই পরিবেশে কেমন ভেবলে গেছে | সুযোগ বুঝে হুকুম করলাম , " যাও , আমার জন্য খাবার নিয়ে এস"| আর কী স্থানমাহাত্ম্য , সুরসুর করে চলেও গেল ! আমার চোখ ওই মাঝ হ্রদে | নীলচে ধূসর পাহাড় , মেঘের হালকা আলোয়ান জড়িয়ে কেমন গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে | নীলচে সবুজ জলে আবছা ছায়া | আমি যাব না ? জল পেরিয়ে ? ওই ঘুমিয়ে থাকা আগুন ছুঁতে ? ও কি কথা বলছে আমার সঙ্গে ? চুপ করে আছে কেন ? আমি ফিসফিস করে বলছিলাম ,

    " তুমি যদি কথা বলো , তোমার কথায় আশাবরী
    সাহানা , ভৈরোঁর সুরে দোল খায় দিবস- শর্বরী ."

    আমি যে কী খেলাম..জানি না | শুধু জানি , কথা বলছিলাম না..আমার মনে বিছিয়েছিল এক বিষণ্নতা | এক ধরনের বিপন্নতাও বটে | আমার যে ফিরতেই ইচ্ছে করছে না | জীবন জুড়েই এই অহর্নিশ দ্বন্দ্ব ...

    এভাবেই অনেক অনেকক্ষণ...

    এবার ফেরার পালা. আমি অস্ফুটে বললাম পাহাড়কে , " যাই?"

    " যাবার সময়
    পার হয়ে যাচ্ছিলাম
    একটি দুটি করে সব ক'টি সিঁড়ি ...
    হঠাত ফিরে তাকালাম..
    .দেখলাম , চোখের জলে ভেজা তোমার চোখ "

    আমার মন ভালো নেই | আমার কিচ্ছুই ভালো লাগছে না..আমার চোখ উপচে জল...টুপটাপ টুপটাপ |
    " এ কী ! কান্নাকাটির কী হল ? বাড়ির জন্য মন কেমন করছে তো?"
    হা ঈশ্বর ! আমি আড়াল করে চোখ মুছে নিলাম ! শুধু দৈনন্দিনতার ঘেরাটোপেই কেটে গেল নিশ্চিন্ত নিরাপদ জীবন | সেই অনুরণন আর ধরাই দিল না আমার কাছে !

    জিম্বারণ যাবার আগে আমরা যাব টানাহ লট | এই শব্দটির অর্থ " সমুদ্র স্থল ''| এটি টাবানানে | ডেনপাসার বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার | সমুদ্রের ধারে বিশাল এক পাথরের ওপর মন্দির | সমানে ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাথরের গায়ে | জলের ঘর্ষণে পাথরের আকার বদলাচ্ছে একটু একটু করে |

    এই মন্দির নাকি পঞ্চদশ শতাব্দীর পুরোহিত নিরর্থ স্থাপন করেন | তিনি যখন দক্ষিণ উপকূল ধরে প্রবজ্যায় গিয়েছিলেন , তখন এই সুন্দর জায়গাটিতে বিশ্রাম নিতে থামেন | কিছু ধীবর তাঁকে দেখে উপঢৌকন নিয়ে আসে | নিরর্থ এই সমুদ্রবিধৌত অঞ্চলে সেই রাতটি কাটান | পরে তিনি ধীবরদের বলেন , পাথরের ওপর মন্দির নির্মাণ করে বালির সমুদ্রদেবতার উপাসনা করতে |

    এ এক আশ্চর্য মন্দির | বালির উপকূলে ৭ টি সমুদ্রমন্দিরের অন্যতম | প্রতিটি মন্দির পরের মন্দিরের থেকে এমন দৃষ্টিসীমার মধ্যে তৈরী, যাতে দক্ষিণ পশ্চিম তট ধরে ঠিক যেন শিকলের মতোই গাঁথা রয়েছে পরপর | এই মন্দিরের স্থাপত্যে হিন্দু প্রভাব স্পষ্ট |

    স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস , পাথুরে দ্বীপের পাহারায় আছে বিষধর সামুদ্রিক সাপেরা | এরাই মন্দিরকে রক্ষা করছে অশুভ শক্তির কবল থেকে , আক্রমণকারীদের থেকে | শোনা যায় , এক বিশাল সাপ নাকি এই মন্দিরটির প্রধান রক্ষক |

    টানাহ লট | আমি জানতামই না..পৃথিবীতে এমন সুন্দর জায়গাও থাকতে পারে ! আকাশে , সমুদ্রে , নিস্তব্ধতায় মাখামাখি হয়ে যেতে যেতে আনন্দে , রোমাঞ্চে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল |

    এবার জিম্বারণ সমুদ্র সৈকত | সূর্যাস্তের শোভা |

    আমি দাঁড়িয়েছিলাম জলের কোল ঘেঁষে | যখনই সাগরে যাই , মনে মনে একটা খেলা খেলি ঢেউয়ের সঙ্গে | ঢেউ আসছে…. হই হই রই রই করে | আমি স্থির | ও আমায় ছুঁতে পারবে , না পারবে না ? নিজেই বাজি রাখি নিজের সঙ্গে | কখনো জিতি , কখনো গো-হারান হেরেও যাই | এখানে কিন্তু হেরেই বেশি মজা !
    ধূসর নীল মেঘগুলো কি যে সুন্দর রুপোলি জরির ফিতে দেওয়া শাড়িতে সেজেছিল ! সূর্যের আলো শেষ বিকেলে মেঘেদের পরিয়ে দিল সোনার গয়না ,তারপর লাল কনে চন্দন | আমার মনে হচ্ছিল আমি ওই সমুদ্রের মধ্যে হেঁটে চলে যাই | তা হলেই ঠিক মেঘবালিকাদের ছুঁতে পারব | ওরা লুকোচুরি খেলছিল আমার সঙ্গে | সুখ যেন রেণু রেণু হয়ে ঝরে পড়ছিল আমার মনের ভেতর | আর দু:খও | আমার আকাশ স্পর্শ করার সাধ জাগছিল ...

    যখন তখন আকাশ ছোঁয়া নিজের মতো
    ইচ্ছেমতো ভোরের আলো কিংবা আঁধার
    বুকের ভেতর ফুলকি আর দহন ক্ষত
    যখন তখন আকাশ ছোঁয়া নিজের মতো.....

    আমি স্পর্শ করছিলাম মনে মনে | জলকে , আকাশকে , এমনকি একা একা দাঁড়িয়ে থাকা একটি নিষ্পত্র গাছকেও | সমুদ্র আর আকাশের প্রেক্ষাপটে | অমন একা একটা গাছ , তাও আবার সাগর সৈকতে..আমি কিন্তু সত্যিই আগে দেখিনি !

    আমি ছুঁয়ে থাকছিলাম আমার অদেখা প্রেমকে | ওই সূর্যাস্তের রংবাহারে |

    " দেখা হলো,কিন্তু যেন জলের ভেতরে
    দেখা হলো ; তুমি স্থির ভাসলে অকূলে;
    আমি স্পর্শপ্রিয় , তাই আস্তে ধ'রে..ধ'রে.. ধ'রে
    বুঝতে চাইলাম প্রেম ওষ্ঠে, স্তনে, ব্যগ্র বাহুমূলে.

    তবু কি স্পষ্ট কিছু দেখা গেল ! কখনো এভাবে
    তোমাকে আলাদা করে দেখা যায় ? শুধু ' চলো , চলো '
    শব্দ হ'ল , বিদ্যুতবাহিনী জল ছড়াল স্বভাবে ,
    শুধু জোনাকির ফুল ফুটে ঝরে গেল ."

    প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে..এনে দেবে শঙ্খের সাগর...তৃতীয় দিন
    ...............................................................................

    আজ সকালে প্রথমে টেগুনুগান , ঝর্ণা দেখতে | উল্লেখযোগ্য কিছু নয় ,ভালোই | মানে ওই আর কী !আমি দেশের ঝর্ণা দেখেছি...হুড্রু, জোনা, উশ্রী , দশম , কেম্পটি | ঝিরঝিরে জল থেকে তুমুল বর্ষায় | আবার বিদেশেও | ইউরোপে ত্রামেলবাখ ,রাইন ....যে যার নিজের ধরনে ভয়ঙ্কর সুন্দর | সেই তুলনায় এর তো শৈশবদশাই কাটেনি !

    আমাদের চালকটির বিপুল উত্সাহ. নিয়ে গেল টেগালালাং | এটি ধাপে ধাপে ধান চাষের জায়গা | এ আবার দেখার কী আছে? আমাদের দেশের ঝুম চাষ দেখে এস ! আমি উশখুশ করছি | কারণ এবার মনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছেপোকা বলছে ," ও মন , বেড়াতে যাবি ? চল...নাসাডুয়া "|

    নাসাডুয়া একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল | দেখেই মালুম হয় | এখানে একটি হায়াত আছে | গ্র্যান্ড হায়াত | বালি হায়াত যেমন এক্কেবারে প্রকৃতির কোল ঘেঁষা ছেলে , এটি একটু ডাকাবুকো | মায়ের আঁচল ধরে টেনে এনেছে বাইরে | তৈরী করেছে মাপসই বাগানে কৃত্রিম ঝিল | একেবারই অন্যরকম | সমুদ্র আছে ;কিন্তু মানুষ তাতে কারিকুরি করেছে অনেকটাই |

    বসেছিলাম একটা কাঠের বেঞ্চিতে | আমার সামনে একটা কৃত্রিম ঝিল | তাতে সাদা আর লাল শাপলা , সবজেটে জলে ঘন আগুন রঙা আর চকচকে রুপোলি মাছ খেলা করছে ,শাপলার ওপর কেমন ছোট্ট ছোট্ট সবুজ হলুদ টিপ পোকা ...তাদের গায়ে আবার কালো ছিটছিট | ঝিল পেরিয়ে একটা ছোট্ট সবুজ ঘাস বন , তাতে ফুলে ফুলে সাদা দুটো ঝাঁপালো গুলঞ্চ | আরও দূরে ভিজে বালি আর সবজেটে নীল সমুদ্র | ঢেউ ভাঙছে | আমি একটু পরে হেঁটে গেলাম সমুদ্রে | পায়ের পাতা ডুবিয়ে দিলাম জলে | পা ভিজছে ....চোখ ভিজছে.... মনও .......

    আমি একবার যাচ্ছি সমুদ্রপারে , পরক্ষণেই ঝিলের ধারে | প্রথমটি আমার প্রেমিক...ডাকাতিয়া বাঁশি | দ্বিতীয়টি আটপৌরে সাদামাটা ঘরের মানুষ | আমি যে কাউকেই ছাড়তে পারছি না ! কিন্তু একজনকে যে বেছে নিতেই হবে !

    " ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে
    তেমনি করে তোমায় আমি জানি .....

    কেমন করে বোঝাই আমি আমার ব্যাকুলতা .
    বাতি দিয়ে কি হয় বিদ্যুতের ব্যাখ্যা ?
    সাগরের অর্থ মেলে সরোবরে ?"

    আমি উত্তর পেয়ে গিয়েছি | তাই বেছে নিলাম |

    আজ আর সন্ধেটা কাটাব না এদিক ওদিক |আজ শুধু বসে থাকব আমার ঝুলবারান্দাটিতে | আজ শুধুই অন্ধকারের আলো দেখা , যে আঁধার আলোর অধিক | আজ একা একা আমার অন্তহীন অন্তরঙ্গ কথোপকথন ..সাগর , তোমার সঙ্গে |

    মেঘেরা যেমন চাঁদের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে
    তোমাকেই যদি ছুঁয়ে থাকা যেত আলোয় অন্ধকারে

    যতবার ভাবি , মুখে বলে দেব ভুলে যাই বারেবারে
    তোমাকেই যদি ছুঁয়ে থাকা যেত আলোয় অন্ধকারে

    তোমাকেই যেন রেখে দিতে পারি গোপন হৃদমাঝারে
    তোমাকেই যেন ছুঁয়ে থাকি আমি আলোয় অন্ধকারে

    তুমি আমার আকাশ ..আমার দুরন্ত স্রোতে কম্পমান এবং ইতি...
    .......................................................................................

    আজ ভোরবেলা ঘুম ভাঙল ঘড়ির ঘন্টির বিশ্রী শব্দে | ছুটি ফুরোবার সতর্কস্বর | "বালি "-র নীল সবুজ সমুদ্রে শেষ বারের মতো সূর্য উঠতে দেখলাম | আমার মন খারাপ দেখি ঢেউ আর বালি আর আকাশ আর সূর্য সক্কলের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে | কাউকেই আর রোজকার মতো খুশি খুশি লাগছিল না ! অত ভোরবেলা পাখিগুলো ডাকছিল না টি টি করে , ঝিরঝির বৃষ্টি ছিল না , গাছের পাতাগুলো দুলছিল না | শুধু আমি আর আমার একলা মন হালকা কুয়াশার মতো চাপা কষ্টের রেশমি চাদর গায়ে জড়িয়ে চুপটি করে বসেছিলাম আর অনেক দূরে ছাই রং আকাশে ছিল মরা চাঁদের আবছা আভাস !

    " মননের আলো ঢেলে , স্বপ্নিল ভাষা দিয়ে
    তোমাকে আকাশের নীলে নীল করে
    বেঁধে রাখি , রাত্রি দিন তোমার নামে ঘুমাই
    জেগে উঠি , অন্তহীন ডেকে যাই
    দূর থেকে দূরান্তে, অন্তরীক্ষে , শূন্যের বিষে,
    স্বপ্ন বিভাষে , একা, একাই ."

    ইতির পরে পুনশ্চ
    ..................................

    আজ সকালটা সিঙ্গাপুরে মেঘলা | অল্প অল্প আলসেমির রোদ্দুর মাখানো | ব্যস্ততা কম আজ যে রবিবার ! প্রকৃতি এখানে বেশিটাই শুধু আকাশে আর সমুদ্রে | "বালি " র মতো আমার চারিপাশে মাখামাখি করে নেই | তাই মনখারাপের কুয়াশাও অনেক হালকা |

    একটু টানাপোড়েনে আছি...ছবি দেব , না কি দেব না ? ছবি তো ভেসে ওঠে , রয়েও যায় মনে | তা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে অন্যরকম | আমি আমার চোখ দিয়ে দেখেছি | শরীরের চোখ যতটা উপভোগ করেছে , মনের চোখ অনুভব করেছে তার বহু বহু গুণ বেশি !

    আমি তাই প্রকৃতিকে স্পর্শ করে বলি ,

    " যত দূরে থাকো , যতো বড় হও পাহাড় , পাখি বা তুমি---
    জেনেছ কি সব ঠিক ?"
    আমার চোখেই সুন্দর তুমি...
    '' নিখুঁত অলৌকিক .."

    উদ্ধৃত অংশ-কবিতাগুচ্ছের জন্য কৃতজ্ঞতা :
    .............................. .......................................

    ১ . " খড়ের গাদায় সূচের মতো" / তারামণির হার : ৪৯ / হিন্দোল ভট্টাচার্য

    ২. " ঠিক জানি এক রাত্রিবেলা দেখা হবেই " / তারামণির হার : ৪৯ / হিন্দোল ভট্টাচার্য

    ৩ . "আসলে এই ভিড়ের মধ্যে অচিন পাখি খাঁচায় থাকে "/ তারামণির হার : ৪৯/ হিন্দোল ভট্টাচার্য

    ৪ . " ভালোবাসা দিতে পারি , তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম ?" / ভালোবাসা দিতে পারি / বিনয় মজুমদার

    ৫. " তুমি যদি কথা বলো , তোমার কথায় আশাবরী" / তুমি যদি কথা বলো / কৃষ্ণ ধর

    ৬ . " যাবার সময় পার হয়ে যাচ্ছিলাম "/ তোমার মুখ / বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    ৭. " দেখা হলো , কিন্তু যেন জলের ভেতরে " / একটি প্রেমের কবিতা / প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত

    ৮ . " ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে "/ ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে / প্রেমেন্দ্র মিত্র

    ৯ . " মননের আলো ঢেলে , স্বপ্নিল ভাষা দিয়ে "/ প্রেম পদাবলি ( ৪ ) / আবদুস শুকুর খান

    ১০ . " যত দূরে থাকো , যত বড় হও " / ঠিক / মঞ্জুষ দাশগুপ্ত
  • Suhasini | 212.62.70.2 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:৫১648308
  • ভালো লাগলো।
  • কল্লোল | 125.242.190.37 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:০৭648309
  • খুব ভাল। একটা ভ্রমণ প্রতিক্রিয়া।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন