এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • বাউলাঙ্গ

    Rana
    গান | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১৪১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Rana | 127.194.193.231 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:১৪630948
  • মাস খানেক আগে একটা লিটল ম্যাগের জন্য লিখেছিলাম. গুরুতে তুলব তুলব করে হয়ে ওঠে নি. যদিও আগে এখানে মোটে দু এক বারই (সুদূর অতীত না ঘাঁটলে) লিখেছি, তবু এই পোস্টের মূল কারণ, কয়েকজন মানুষের মতামত জেনে যদি আরেকটু সমৃদ্ধ হওয়া যায় -

    -------------------------------------------------------------------------

    লিখতে বসলেই আজ কাল মাথা ঝিমঝিম করে। অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ। উপরন্তু আজকাল কম্পিউটারের চাবি টিপতে টিপতে এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে, খাতা কলম দেখলেই হাত টনটন করতে থাকে। তবে এ শুধু আমার সমস্যা মনে হয় নয়। যুগ যুগ ধরে এই সমস্যা যে বহমান, তার জ্বলন্ত প্রমাণ – মহাভারত। এই ইয়াব্বড় কেতাবখানা, ব্যাসদেব গণেশ ঠাকুরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে চালিয়ে দিলেন। সিদ্ধিদাতাও যে খুব একটা রাজী ছিলেন, তাও নয়। গাঁইগুঁই করেছিলেন, শর্তও রেখেছিলেন – ‘একবারও বলা থামিলে আর লিখিব না’। কিন্তু ব্যাসদেবের অসাধারন ম্যানেজমেন্ট স্কিল, সাফল্যের সাথে সব দাবী দাওয়া মিটিয়ে কাজ হাসিল করে নিয়েছিল।
    প্রথমেই বলে রাখা ভালো, আমার জ্ঞানবুদ্ধির দৌড় অত্যন্ত সীমিত এবং গুরু গম্ভীর প্রাবন্ধিকের মত প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা আমার পক্ষে না করাই ভালো। একথা যেমন নিজের ভালো পাগলে বোঝে, তেমনি আমার মেনে নিতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠা নেই। এ লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। কেউ যদি এ লেখা পড়ে, তার সারমর্ম উদ্ধার করতে পারেন, অথবা একমত হন, সেই কৃতিত্ব একান্তই তাঁর। দ্বিতীয়ত, যেহেতু বিষয় রবীন্দ্রনাথ, এবং গত একশ বছর যাবৎ বাঙ্গালী ভদ্রলোক ওঁনাকে নিয়ে “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে” এত লাউ ছেঁচকি, আলু পোস্ত, বসরাই কাবাব, সোহন হালুয়া - রেঁধে ফেলেছে যে, আমি তাতে আর দু-এক ফোঁটা চোনা ফেললে বিন্দুমাত্র ক্ষতি বৃদ্ধি হবে না।
    বিষয় যেহেতু রবীন্দ্রনাথের গানে বাউল গানের প্রভাব, তাহলে সবার আগে দেখে নেওয়া ভালো রবীন্দ্রনাথ তাঁর সারা জীবনে কয়টি বাউল গান লিখেছেন। এবং চটজলদি সঠিক জবাব হল একটিও নয়। এই উত্তর নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশই নেই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর দীর্ঘ জীবনে একটিও বাউল গান লেখেন নি। সে আজকাল লোকে যতই রবি বাউল, রবি বাউল বলুক, অথবা দোতারা – খমক বাজিয়ে, পায়ে ঘুঙুর পরে নেচে নেচে “ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি” গেয়ে থাকুক। রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গান (বাউল গান নয়), মূল বাউল গানকে ভেঙে, তাঁর নিজের প্রকাশে তৈরী। সেই গানের সুরের গড়ন, গীতলিপির আকার, বহিঃপ্রকৃতি বাউল গানের মত হলেও, মূল বাউল গানের প্রতিপাদ্য বা মতাদর্শ থেকে তা বহু যোজন দূরে।
    লাগাম আনলে যেমন ঘোড়া দেখাতে হয়, তেমনি উপরের অনুচ্ছেদের আলটপকা মন্তব্যটির পক্ষে দু একটি উদাহরণ দেখানো অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটা হ য ব র ল এর গেছোদাদার মতো। প্রথমেই দেখতে হবে, বাউল কি? তারপরে বাউল গানই বা কি? বাউলরা গান কেনই বা গায়? গান না গাইলে তাদের কি কিছু ক্ষতি বৃদ্ধি হত? এর পরে – রবীন্দ্রনাথ কোথায় বাউল গান শুনলেন? তাঁর উপরে বাউল প্রভাব কি? প্রভাবই যদি হল, তাহলে তাঁর গান বাউল গান নয় কেন? উপরন্তু ভদ্রলোক সারাজীবন বাউল গানের জন্য বেশ কিছু কাজ করে গেছেন, যা কিছুটা তাঁর নিজের এ বিষয়ে কিছুটা অমনোযোগ, সংরক্ষণের অভাব এবং রবীন্দ্রগবেষকদের আলোচনার প্রচলিত বিষয় না হওয়াতে কিছুটা পিছনের সারিতে চলে গেছে। রবীন্দ্রনাথের কাছে বাউল সাধনার এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের কিছু অমূল্য সম্পদ ছিল, যা আজকের দিনে গবেষকদের কাছে কোহিনুর স্বরূপ এবং সংগ্রাহকদের কাছে দুর্মূল্য। দুঃখের বিষয়, রবীন্দ্রনাথ নিজে তার গুরুত্ব বিচার করে তার সংরক্ষণে যত্নশীল হননি। এ প্রসঙ্গে পরে বিশদে আসব।
    ‘বাউল’ শব্দটিকে মোটামুটি বিভিন্ন গৌণধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের, তা সে যে মতপন্থীই হোন না কেন, এক কথায় প্রকাশের মত বলা চলে। এই ফর্দটি খুব একটা ছোট নয়। নবদ্বীপচন্দ্র গোস্বামী বিদ্যারত্নের বৈষ্ণব ব্রতদিন নির্ণয় গ্রন্থে কেবলমাত্র বৈষ্ণব ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গৌণধর্মগুলির নাম পাওয়া যায়। সাধ্বীনিপন্থী, খুশিবিশ্বাসী, রাধাশ্যামী, জগবন্ধু-ভজনীয়া, রৈদাসী, সেনপন্থী, রামসনেহী, কর্তাভজা, সাহেবধনী, বলরামভজা (বলরামী?-বারখেদা কুমিল্লা), রূপ কবিরাজি, রামবল্লভী, হজরতী, গোবরাই, পাগলনাথী, তিলকদাসী, দর্পনারায়ণী, রাধাবল্লভী, চরণদাসী, হরিশ্চন্দ্রী, মাধ্বী, চুহড়পন্থী, কুড়াপন্থী, জগমোহনী, গুরুদাসী, বৈষ্ণবী রামপ্রসাদী, চামারবৈষ্ণব, হরিব্যাসী, নস্করী, পল্টুদাসী, আপাপন্থী, দরিয়াদাসী, বুনিয়াদদাসী, কুলিগায়েন, নরেশপন্থী, বেউড়দাসী, ফকিরদাসী, মুলুকদাসী। লক্ষ্যণীয় যে, এই নামগুলি কিন্তু কেবলমাত্র বৈষ্ণব মত ভেঙে বের হয়ে আসা গৌণধর্মগুলির নাম। এছাড়াও মুসলমান ধর্ম ভেঙে তৈরী হওয়া গৌণধর্মস্বরূপ আউল, ফকির, চিস্তিয়া, লালনশাহী, পাঞ্জুশাহী ইত্যাদি, কালাচাঁদী, কিশোরীভজনা, দরবেশ, প্রমুখ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে আমরা সাধারণত একত্রে নির্দেশ করি বাউল হিসাবে। মূল বাউল শব্দটির উৎস বৌদ্ধ বা হিন্দু বা আরবী না উর্দু তা সঠিক করে বলা কঠিন। গবেষক শক্তিনাথ ঝা তাঁর ‘বস্তুবাদী বাউল’ বইটিতে বাউল শব্দের একাধিক সম্ভাব্য ব্যূৎপত্তিগত বিস্তার দেখিয়েছেন। কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠিত ধর্মের শাখা হিসাবে বাউল মতকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা মোটেই শ্রেয় নয়, কেননা প্রাতিটি গৌণধর্ম মূল ধর্মের নিগঢ় থেকে ভেঙে বেরিয়ে নিজস্ব একটি সীমানা তৈরী করে। প্রতিটি গৌণধর্মেই ভগবানের অস্তিত্বকে অতিক্রম করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। বাউল গান বাউল সাধনার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তার ধর্ম আলোচনার এবং প্রবর্তনের মাধ্যম।
    রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গানগুলির সাথে মূল বাউল গানের তুলনা টানতে গেলে, সবার আগে যা মনে আসে, তা হল, মূল বাউল গানের কথার মার-প্যাঁচ। আমার কাছে অন্যতম আশ্চর্য্য যেটা লাগে, তা হল, এত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও গানগুলির মূল প্রতিপাদ্য এখনও সাধারন জনসাধারনের কাছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যায়। যেমন, বাউল যখন গায়,
    “মূল ছাড়া এক আজগুবি ফুল, ফুটেছে ভবনদীর কূল,
    চিরদিন সেই রসিক বুলবুল, সেই ফুলেতে মধু খায়”।
    এই সঙ্কেতের পাঠোদ্ধার সাধারন শ্রোতার পক্ষে, বাউল সাধনায় কিছু ব্যূৎপত্তি না থাকলে বুঝে বার করা কঠিন, বা প্রায় অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথের পূর্ববর্তী অন্তত দ্বি-শতক ব্যাপী চলে আসা বাউল গানের সান্ধ্য ভাষা, বহুস্তরীয় অর্থ, গুপ্ত ব্যঞ্জনা এবং ভাবাদর্শের সাথে, রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের কোন মিলই নেই।
    এইখানে একটা উদাহরণ টানা প্রয়োজন, প্রায় একই রকম দুটি গানের মধ্যে কিছু পার্থক্য বুঝাতে;-

    আপাতদৃষ্টিতে একই ভাব বিন্যাসের মনে হলেও রবীন্দ্রনাথ আর লালনের গান দুটিতে বেশ পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, লালনের গানটি প্রথাগত বাউল পদ প্রকৃতির আকারে বিন্যস্ত। অর্থাৎ, পদের শুরুতে অর্ধকলি, এবং তার পরে, লালনের বেশীর ভাগ গানের মত তিনটি পূর্ণ কলি এবং অন্ত্যকলিতে ভনিতার মাধ্যমে পদকর্তার নাম প্রকাশ। যদিও বাউল গানে কলি সংখ্যা নির্দিষ্ট নয় এবং ভনিতা আবশ্যকীয় অঙ্গ নয়, তা হলেও, এই গানটির কলি বিন্যাস সাধারন বাউল গানের কাঠামো বোঝানোর জন্য একটি ভালো উদাহরণ। সেদিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গানটিতে অর্ধকলির ব্যবহার সুস্পষ্ট নয়। উপরের উদাহরণে গানটিকে চার ভাগে ভাগ করলেও, আমার মতে, গানটি আসলে তিনটি সমান অঙ্গে বিভাজিত। ১/ এবং ২/ কে একত্রে একটি কলি ধরা যেতে পারে। প্রচলিত রবীন্দ্রসঙ্গীতে যে চৌতুক ধ্রূপদ গানের আকার পাওয়া যায় (অর্থাৎ; স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী এবং আভোগ) এই খানেও যেন অনেকটা একই বিস্তার, কেবল চতুঃস্তুক এর বদলে গানটি তিন তুক। লক্ষ্যণীয়, লালনের গানের যে অংশটি প্রত্যক্ষ বাউল বস্তুতান্ত্রিক মত প্রকাশ করে, রবীন্দ্রনাথের গানে সেই অংশটি অনুপস্থিত। লালন প্রশ্ন করেছেন প্রথাগত ধর্মাবলম্বীদের কাছে, রাম বা রহিম কে? সে কি মাটি না পবন, জল না অগ্নি? বাউল-ফকিরি সম্প্রদায়ের মতে আব, আতস, খাক, বাদ এবং মনুষ্যবীজ শূণ্যে মিলিত হয়ে গঠন করে মানব শরীর। এর সবই প্রত্যক্ষ, কোনো আনুমানিক অর্থ নেই। ঈশ্বর কল্পনা, প্রচলিত ধর্মমত, বাউলমতে ‘আন্দাজি’। তার গান;-
    “ধান্দাবাজের ধোঁকায় পড়ে / আন্দাজি করলি সাধন
    কোন সাধনে পাবি রে সেই/ পরমধন”
    লালনের উপরিক্ত গানের প্রশ্ন, বাউল মতাবলম্বীদের কাছে গূঢ় বার্তা বয়ে আনে।
    রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গানে বাউল সাধনার এই দিকটিকে সযতনে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ যখন লিখেছেন, “ভেঙে মোর ঘরের চাবি, নিয়ে যাবি, কে আমারে” – তখন সেই ঘর হতে পারে মানুষের পার্থিব জড়ত্ব বা বন্ধনের প্রতীকি। আর লালন যখন বলেন, “আমার ঘরের চাবি পরের হাতে/ আমি ক্যামনে খুলি সে ধন দেখব চোখেতে” বা হাসন যখন বলেন “লোকে বলে, ঘর বাড়ি ভালা না আমার” ; তখন ঘর হয় মানব দেহ। তবে আবার যখন শুনি, “ঘরেতে ভ্রমর এল গুণগুণিয়ে” – তখন আবার ভারি ধন্দে পড়ে যাই। বিশেষত, তাসের দেশের ওই রকম মারকাটারি “কুঞ্জবনে এসো একা” র পরে ধন্দটা ক্রমশ সন্দেহে পরিণত হতে থাকে। তবে এও ঠিক যে এই মিল সম্পূর্ণ কাকতালীয়ও হতে পারে। লেখার স্বার্থে ধরে নেওয়া যাক, রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গান ও মূল বাউল গানের মিল সাধারনত বাহ্যিক।
    কোথাও কোথাও রবীন্দ্রনাথের সময়ে প্রচলিত বাউল গানের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গানের কথার যে বাহ্যিক ভাবগত একটি মিল পাওয়া যায়, তা স্বচ্ছন্দে গবেষকদের নীরিক্ষার বিষয় হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ কিভাবে তাঁর লেখনীতে তৎকালীন লোকসঙ্গীতকে আত্মস্থ করেছিলেন, নাকি তা নেহাতই সমাপতন – এই প্রশ্ন আমার কাছে এখনও তথ্যাভাবে পরিষ্কার নয়। কিন্তু মিল যে একটা রয়েছে না এড়িয়েও যাওয়া যায় না। যেমন “রূপসাগরে ডুব দিয়েছি / অরূপরতন আশা করি” আর কুবির গোঁসাইয়ের “ডুব ডুব ডুব রূপসাগরে আমার মন/ তলাতল পাতাল খুঁজলে পাবি রে প্রেম রত্নধন”, কিংবা “বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে/ শূণ্য ঘাটে একা আমি/ পার করে লও খেয়ার নেয়ে” এবং “আমি অপার হয়ে বসে আছি/ ওগো দয়াময়/ পারে লয়ে যাও আমায়”। এই রকম উদাহরণ রবীন্দ্রনাথের গানে খুব দুর্লভ নয়।
    আমার মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়েছিলেন বাউল গানের সহজ সুর এবং বাংলার সাধারন মানুষের কাছে সেই সুরের প্রভাবে। বাউল গানের ছন্দের প্রকৃতিও তার চলনও তাঁকে মুগ্ধ করে। বাউল বস্তূতান্তিক মতবাদ সম্পর্কে তিনি সাধারনের থেকে বেশি অবহিত হলেও, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতবাদ বা ধর্মবিশ্বাসকে অতিক্রম করেনি। রবীন্দ্রনাথ বাউল গানের রসগ্রাহী ছিলেন এবং তাঁর সমাদর করতেন, তৎকালীন বঙ্গসমাজে তাকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে তাঁর অবদানও অনস্বীকার্য। ১৯০৫ সালে, অন্যান্য স্বদেশ পর্যায়ের গানের সাথে গগন হরকরার মূল দুটি গান ভেঙে বানানো তাঁর দুটি গান আজও সুপার ডুপার হিট। একটিতো আবার পড়শি দেশের জাতীয় সঙ্গীত। লালন ফকিরের গানের সর্বপ্রথম সংগ্রাহক, সংকলক এবং অনুবাদক রবীন্দ্রনাথ সুযোগ পেলেই দেশের ও বিদেশের বিদ্বজ্জন সমাজের সামনে তুলে ধরেছেন বাংলার এই অমূল্য লোকরত্ন। অনেকেই হয়তো জানেন না, ছেউরিয়ায় লালন ফকিরের আখড়া পড়ে রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের জমিদারীতে। সেখানে বাউল ফকিরদের সাথে তিনি কালাতিপাত তো করেনই (যদিও যদ্দুর সম্ভব লালনের সাথে রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ দেখা হয় নি), লালন ফকিরের দুটি গানের খাতা তিনি নিয়ে আসেন নিজের সাথে করে। সেই দুটি খাতা আজও শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত। তাদের আখ্যাপত্রে লেখা “Songs of Lalan Fakir – Collected by Rabindranath”. দুটি খাতায় মোট গান সংখ্যা ২৯৮। ১৩২২ বঙ্গাব্দের আশ্বিন থেকে মাঘ অবধি, প্রবাসী পত্রিকার হারামনি বিভাগে রবীন্দ্রনাথ লালনের কুড়িটি গান প্রকাশ করেন। ১৯২৫ সালে ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসে তিনি অনুবাদ করে শোনান লালন ধ্রূবপদের একাংশ।
    “Nobody can tell whence the bird unknown
    Comes into the cage and goes out
    I would feign put rounds its feet
    The fetter of my mind
    Could I, but capture it.”
    লালনের গানের এই প্রথম ইংরেজী অনুবাদ। এই একই বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন;
    “That this unknown is the profound reality, though difficult of comprehension, is equally admitted by the English poet as by the nameless village singer of Bengal, in whose music vibrate the wing beats of the unknown bird, only Shelly’s utterance is for cultural few, while the Baul song is for the tillers of the soil, for the simple folk of our village households, who are never bored by its mystic transcendentalism.”
    লক্ষ্যণীয়, উপরের মন্তব্যে রবীন্দ্রনাথ পদকর্তা হিসাবে লালনের নাম ব্যক্ত করেননি, তাঁকে “Nameless village singer” বলে চালিয়েছেন। অর্থাৎ লালন নিয়ে এই সময়ে যত মাতামাতি, ১৯২৫ সালে তার বিন্দুমাত্রও ছিলনা। অথচ মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর আগে ১৮৯০ সালে লালন দেহ রেখেছেন। দ্বিতীয়ত, শেলীর কালচারাল ফিউ এর মতো, বাউল গানের গুঢ় অর্থও যে কিছু দীক্ষিত মানুষের কাছেই সাধারনত সীমিত থাকে তার উদাহরণ আগেই দেওয়া হয়েছে।

    বাউল গানের ছন্দ নিয়েও রবীন্দ্রনাথ তাঁর “বাংলা ছন্দের প্রকৃতি” প্রবন্ধে লেখেন;-
    “... যাঁরা রূপরসিক তাঁদের মূলধন ধ্বনি। প্রাকৃত-বাংলার দুয়োরানীকে যারা সুয়োরানীর অপ্রতিহতপ্রভাবে সাহিত্যের গোয়ালঘরে বাসা না দিয়ে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে, সেই ‘অশিক্ষিত’-লাঞ্ছনাধারীর দল যথার্থ বাংলাভাষার সম্পদ নিয়ে আনন্দ করতে বাধা পায় না।তাদের প্রাণের গভীর কথা তাদের প্রাণের সহজ ভাষায় উদ্ধৃত করে দিই।
    আছে যার মনের মানুষ আপন মনে
    সে কি আর জপে মালা ।
    নির্জনে সে বসে বসে দেখছে খেলা ।
    ,
    ... আর-একটি–
    এমন মানব-জনম আর কি হবে ।
    যা কর মন ত্বরায় করো
    এই ভবে ।
    ... এই ছন্দের ভঙ্গি একঘেয়ে নয়। ছোটো বড়ো নানা ভাগে বাঁকে বাঁকে চলেছে। সাধুপ্রসাধনে মেজে-ঘষে এর শোভা বাড়ানো চলে, আশা করি এমন কথা বলবার সাহস হবে না কারো”
    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উপরের উদাহরণ দুটিও লালনের গানের অংশ। রবীন্দ্রনাথ কেন বার বার লালনকে উদ্ধৃত করেন তার একটা বড় কারন হতে পারে তাঁর সংগৃহীত ২৯৮ টি লালনের ধ্রূবপদ। লক্ষ্যণীয়, লালনের সুর ভেঙে রবীন্দ্রনাথ কোনো গান বানাননি। হয়তো প্রচলিত বাউলগানের চলন থেকে কিছুটা ভিন্ন লালনশাহী সুর থেকে প্রচলিত লোকসুর বা বৈষ্ণবপন্থী বাউলদের সুর তাঁকে বেশী আকৃষ্ট করে। যেমন “হরিনাম দিয়ে জগত মাতালে”-র সুরে তিনি রচনা করেন “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে”।
    একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে বিভিন্ন ধরনের বাউল গান তাঁর গীত রচনার রসদ হয় নি। মূলত নদীয়া এবং পার্শ্ববর্তী খুলনা ও কুমিল্লা জেলা ছিল তাঁর বাউলাঙ্গের গান রচনার ক্ষেত্রে সুরের উৎসস্থান। ঝুমুর, ভাওয়াইয়া, ধুয়োজারী, ফকিরি, কাওয়ালি, চাপান উতোর বা কবিগানের ঢঙে গাওয়া বাউল গান থেকে রবীন্দ্রনাথ কখনো কোনো সুরের অনুপ্রেরণা গ্রহন করেননি। যদিও এই ধরনের সব গান না হলেও কিছু গান যে রবীন্দ্রনাথ একেবারে শোনেননি, একথা খুব জোর দিয়ে বলা যায় না। কেননা এই ধরনের কিছু গান অত্যন্ত বহুল প্রচারিত এবং সেই সময়েই রচিত।
    বাউল বস্তুবাদ সম্পর্কেও যে রবীন্দ্রনাথ অবহিত ছিলেন তার প্রমাণ, ১৯৩১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত তাঁর “Hibbert lecturers – Bauls of bangal”. রবীন্দ্রনাথ বলেন;
    “The human body, despised by most other religions, is thus for them the holy of holies, wherein the divine is intimately enshrined as the man of the heart. And in this wise is the dignity of man upheld by them.”
    কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্যের কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু এমন তথ্য আসে, যা থেকে মনে হয় যে, বাউল মতের মূল সুরটি জানা সত্ত্বেও, তাদের ধর্মাচার ও লোকাচার সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ অবহিত ছিলেন না। এই বক্তব্যেরই এক স্থানে তিনি বলেন;
    “If they cannot afford a new piece of cloth, they gather rags and make it of patches”

    যেখানে মূলত ফকির বা দরবেশের পোষাকে তাপ্পির সংখ্যা ও রঙ দুইই নির্দিষ্ট ইঙ্গিতবাহী ও বহু মতের মিলন স্বরূপ গঠিত মানব আবরণের গূঢ় অর্থ বহন করে।
    খুবই স্বাভাবিক, কেননা রবীন্দ্রনাথ তো বাউল মত বা সঙ্গীতের গবেষক ছিলেন না, তিনি সেই মতের ও সঙ্গীতের দর্শক ছিলেন এবং তার পরে সেই সুরের মূল রসটিকে যত্নে সাজিয়েছেন নিজের রঙে রাঙিয়ে, নিজের চেতনার রসে উদ্ভাসিত করে। রবীন্দ্রনাথের বাউলাঙ্গের গান তাই বাউল গানের থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তার স্বকীয় বৃত্ত তৈরী করেছে। বাউল গানের মত তার ভাব সাধারনের কাছে দুর্গম দুর্বোধ্য নয়, তার রসাস্বাদন সাধারন শ্রোতার কাছে অনেক সহজ। রবীন্দ্রনাথই প্রথম শহুরে সুরকার যিনি বাউল গানের সুরের শান্ত শীতল ধারাটিকে তৎকালীন শহুরে মানুষের কাছে তাদের মত করে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশে বাউল গানের প্রচার ও বিস্তারে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা ও অবদান তাই চিরকালই একটি বিশেষ স্থানের দাবী রেখে যাবে।

    কৃতজ্ঞতাঃ শম্ভুনাথ ঝা এবং সুধীর চক্রবর্তীর অসামান্য সব বই, বিশেষত, বস্তুবাদী বাউল, গভীর নির্জন পথে, ব্রাত্য লোকায়ত লালন। লালন গীতি সংগ্রহ, প্রবাসী হারামনি সংকলন, অক্ষয় কুমার দত্তের ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • Rana | 127.194.193.231 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৩:১৯630950
  • মাঝখানে দুটো টেক্সট বক্স ফরমাটিংয়ের চক্করে উড়ে গেছে, যেখানে দুটো গানের তুলনা টানা হয়েছে. গান দুটো নীচে দিয়ে দিলাম,

    ১ আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
    তাই হেরি তায় সকল খানে॥

    ২ আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়-
    ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়
    তাকাই আমি যে দিক-পানে॥

    ৩ আমি তার মুখের কথা শুনব ব'লে গেলাম কোথা,
    শোনা হল না, হল না-
    আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি
    শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥

    ৪ কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,
    দেখা মেলে না মেলে না,--
    ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে -
    ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥

    লালনের গানটি

    ১ কথা কয় রে দেখা দেয় না
    হাতের কাছে নড়েচড়ে
    খুঁজলে জনমভর মিলেনা

    ২ খুঁজি তারে আসমান-জমি
    আমারে চিনিনে আমি
    এ কী ভীষণ ভুলে ভ্রমি
    আমি কোন-জন সে কোন-জনা?

    ৩ রাম কি রহিম সে কোন জন?
    মাটি কি পবন?
    জল কি হুতাশন?
    শুধাইলে তার অন্বেষণ
    আমায় মুর্খ দেখে কেউ বলেনা

    ৪ হাতের কাছে হয় না খবর
    কি দেখতে যাও দিল্লি লাহোর?
    সিরাজ সাঁই কয় লালন রে তোর
    সদাই মনের ভ্রম গেলো না
  • কল্লোল | 125.242.129.69 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১০:৪২630951
  • বড্ডো ভালো লাগলো।
    রানার কাছে অনুরোধ রবীন্দ্রনাথের কীর্তনাঙ্গের গান নিয়ে এমন একটা লেখা চাই।
  • PaaThak | 69.160.210.2 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৫:৫৫630952
  • লেখা তথ্যবহুল ও সুখপাঠ্য। লিরিক ও স্ট্রাকচার বাদে শুধু সুরের নিরিখে বাউল গানের বৈশিষ্ট্য ও রবীন্দ্রকৃত বাউলাঙ্গ গানের বৈশিষ্ট্যের প্রত্যশিত বিশদ তুলনার অভাব একটু আশাহত করে।

    বিষয় কি মূলতঃ এইটুকুই যে, রবীন্দ্রনাথ লালন সাঁই-এর সৃষ্টির সংস্পর্ষে এসে এবং প্রচলিত অন্যান্য বাউল গানে মুগ্ধ হয়ে বাউল গানের সুর ও স্ট্রাকচার আত্মস্থ করে তাঁর বাউলাঙ্গের গানগুলি সৃষ্টি করেন এবং এই আত্মস্থীকরনের পথে বাউল গানের লিরিকের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক জটিলতা সাধারণের রসগ্রাহীতার সুবিধার্থে এড়িয়ে যান, অথবা এও হতে পারে এই আত্মস্থীকরনের সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথের গানের লিরিকে বহুস্তরীয় ব্যঞ্জনার সুত্রপাত? এ ও হতে পারে যে, রবীন্দ্রকবিতা ও গানে পুনরাবৃত্তিমূলক ছন্দ ব্যবহারের পরিবর্তে বিভিন্ন পর্বে ও স্তবকে পদদৈর্ঘ্যের বিভিন্নতা আনার শুরুও এই আত্মীকরনের সময় থেকেই?
  • | 24.99.221.194 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৬:১৪630953
  • রবিবাবু একেশ্বরবাদের লোক । যেখানে যে শব্দে আইকন দেখেছেন সেটাকে এড়িয়ে নিজের ভাবকে প্রাধান্য দিয়েছেন । এটা পলিটিক্স বললে পলিটিক্স । কবির অধিকার বললে অধিকার । যদিও মুচকি হাসি পায় দেখলে যে "মাথা নত " হয় । "চরণ ধূলা " তেই হয় । এত এব্সলিউতিস্ম এর পরেও । গোটা রবিন্দ্রনাথে এই দ্বন্দ ছড়িয়ে আছে । ইনফ্যাক্ট লালনেও । রবিতে হাইপার নর্মালায়স্দ । এবং সেই কারণেই ফেচিং স্লো ।
  • Ranjan Roy | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৪২630954
  • রানা,
    আর একটু হোক, প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। সিলেটের হাসন রাজা বা গগন হরকরা নিয়ে কিছু বলবেন নাকি?
  • Rana | 127.194.214.5 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৩:৪৬630955
  • কল্লোলদা, এটা সেই মাস ছয়েক আগে করা ফোনের পোস্ট কলোনীয়াল হ্যাংওভার। যদিও প্রতি দিন খোঁয়াড়ি ভাঙ্গতে গিয়ে আবার নেশা হয়ে চলেছে। কীর্তন নিয়ে লেখার যোগ্যতা এখনো আসেনি। কিন্তু যেটা এ কয়েক দিনে বুঝেছি, তা হল এই ফর্ম গুলির নিজেদের মধ্যে একটা গোপন পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। খুব সাধারন ভাবে, লোকে বলে বাংলাতে সংকীর্তনের প্রবক্তা শ্রী চৈতন্যদেব। অথচ সেই শাখা ভেঙ্গে যখন একের পরে এক গৌণ ধর্ম উঠে আসছে, হাজার প্রতিষ্ঠান বিরোধী হলেও, মুলত একই ডেমোগ্রাফি থেকে উঠছে, এই লোক শিল্পগুলির কোনো তুলনামূলক গঠন তাত্ত্বিক বা উৎপত্তিগত আলোচনার, একটা বিশাল জায়গা এখনো খালি রয়ে গিয়েছে।

    যদিও বাংলার গৌণধর্ম এত বিশাল পরিধির, যে এক্জন মানুষের পক্ষে তা কতোটা জানা সম্ভব, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। অন্তত তিনটে মূল ধর্মে ব্যুৎপত্তি (বৌদ্ধ, হিন্দু ও মুসলমান), তিনটে ভাষার এপিঠ ও পিঠ (বাংলা, আরবী, সংস্ক্‌ত), বাংলার ইতিহাস, বৈষ্ণব ও সুফি তত্ত্ব (শরিয়ত থেকে তরিকত, হকিকত, আর মারিফত) সমস্তটাই জানা খুব প্রয়োজন। পথে চলতে চলতে কোনোদিন কীর্তনাঙ্গ নিয়ে কিছু লেখার জায়্গাতে এলে নিশ্চয়ই লিখে ফেলবো।

    পাঠক, সুরের তত্ত্বগত প্রত্যাশিত বিবরন ছুঁয়ে ইচ্ছা করেই বেরিয়ে গেছি। বাউলাঙ্গে স্থান ভিত্তিক প্রভাবের কিছু কথা লিখেছি। সম্পূর্ণ সুরের আলোচনা করা উদ্দেশ্য ছিলোনা, তা অনেক টেকনিক্যাল হয়ে যাবে। আর কে না জানে, রবীন্দ্রনাথের মুন্সীয়ানা এদিকে অনেকই বেশী। যেমন, লালন, যখন লিখলেন "আমি অপার হয়ে", সুর বাঁধলেন ভৈরবীতে, যা কিনা ভোরের সুর। রবীন্দ্রনাথ একই ভাবে বাঁধলেন, "বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে" কিন্তু সুর করলেন পুরবীতে। অন্য একটা দিগন্ত খুলে গেল সন্ধ্যার রং পড়ে। কিংবা, "ঘরেতে ভ্রমর এলো" - কালাংড়াতে সন্চ্ঞারীতে কোমল নিষাদ ছুঁয়ে আসা দিন কাটানোর মন কেমন বোঝাতে।

    দ্বিতীয় অংশটা যদিও ট্যান হচ্ছে, তাও, লালন শাহের প্রভাবের ফলেই বাউলাঙ্গ কি না, তা জানা নেই, কেননা শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছানর আগেই লালন বেহেস্তবাসী হন। কিন্তু প্রভাব যে কিছু আছে তা অনস্বীকার্য্য। রবীন্দ্রগানে বানীতে বহুস্তরীয়তা আমি খুব একটা দেখিনি (নিজের মতো করে না ভাবলে), অর্থাৎ Definite metaphor / allegory প্রায় নেই বল্লেই চলে। তাও কিছু পেলে উদাহরন দিলে খুশী হব। পদ দৈর্ঘ্যতা বাউলাঙ্গের ফল নয়, উদাহরন - "বিশ্ববীনা রবে", "ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে", "আনন্দধ্বনি জাগাও", "খাঁচার পাখি" ইত্যাদি কোনোটিই বাউলাঙ্গের নয়। সম্পূর্ণ বাউল স্ট্রাকচার রবীন্দ্রনাথ অতোটা নেন নি বলেই মনে হয়। বরং কীর্তনাঙ্গে "ওহে জীবন বল্লভ" শুনলে তাও কীর্তনের স্ট্রাকচারের ছায়া আসে, বা "মাঝে মাঝে তব দেখা পাই" তে, তবে তা একেবারে প্রথম দিকে লেখা বলেই। পরের দিকে "আনমনা আনমনা" বা "না চাহিলে যারে পাওয়া যায়" আবার মূল ফর্ম ভেঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ফর্মে (অর্থাৎ চতুঃস্তুক) ফিরে আসে।

    রন্জ্ঞনদা, হাসন রাজা বা গগন হরকরার সম্পর্কে আলোচনা এই থ্রেডে কি মানাবে। গগন হরকরার গান ভেঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গান বাঁধার কথা বলেছি। এদের নিয়ে নয় পরে কখনো জমিয়ে বসা যাবে।
  • কল্লোল | 125.242.201.254 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২০:৩৫630956
  • "সেই মাস ছয়েক আগে করা ফোনের পোস্ট কলোনীয়াল হ্যাংওভার। "
    জ্জিও। হ্যাংওভারেই এই। ভোঁ হয়ে গেলে না জানি কত কি পাবো।
    এখানেই জানিয়ে দেই, মহীনের যে গেছে বনমাঝে নিয়ে তোমার সাঙ্গীতিক বিশ্লেষনটি বাপির (মহীনের তাপস দাস) খুব ভলো লেগেছে। তোমায় অনেক শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
  • Rana | 131.241.218.132 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২৩:০৫630957
  • থ্যাঙ্কু দাদা। অনেকদিন বাদে আবার সেই থ্রেডটা খুলে একটু পড়েও দেখ্লাম। অনেক নতুন লেখাও এসেছে দেখ্লাম।

    কলকাতা এলে টুক করে একটা SMS বা রিং করে দেবেন। আড্ডা মারা যাবে। সোমনাথকে নিয়ে চলে যাবো।
  • Rana | 131.241.218.132 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২৩:০৯630949
  • আর আচ্ছা, মহীনের একটা অনুষ্ঠানের প্ল্যান ছিলো না ১৪ই ফেব। সেইটার কি হলো কেউ কি জানেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন