এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লোভে লাভ

    Prakalpa Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ২৩৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prakalpa Bhattacharya | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৪৪630636
  • তারপর একসাথে অনেকগুলো সোনার ডিম পাবে ভেবে লোকটা তো হাঁসের পেটটা ফেলল কেটে। কোথায় কী! মাঝ থেকে হাঁসটা গেল মরে।
    ‘লোকটা’ আবার কি! তার তো একটা নাম তো থাকা উচিৎ! আচ্ছা, ধরা যাক তার নাম ছিল ভুতো।
    ভুল কাজ করবার পর যা হয়, মাথা চাপড়ানি, হায় হায়। কথামালার গল্পের সারমর্ম, উপদেশ। সে সব চুকে গেলে মাথায় চাপল শয়তানি।
    পাড়ার হাবু অনেকবার তার কাছ থেকে হাঁসটা কিনতে চেয়েছিল। এই সুযোগ। ভুতো মুখচোখ মুছে ভালমানুষটি হয়ে হাবুর বাড়ি গিয়ে বলল, ‘ভাই রে, হঠাত কিছু টাকার দরকার, ভাবছি ঐ সোনার ডিমপাড়া হাঁসটা বেচে দিই। তাই তোর কাছে এলুম। হাজার পাঁচেক টাকা হলেই আমার চলবে। তুই যদি রাজী না হোস, তাহলে ও পাড়ার বঙ্কুর কাছে যাই।’
    হাবুর তো হাতে স্বর্গ! পাঁচ হাজার টাকায় এস ডি পি এইচ! (মানে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আজকাল আবার সব শর্টে শাঠ্যং তো!) তক্ষুণি সে এটিএম থেকে টাকা তুলে এনে ভুতোকে বলল, ‘আমিই কিনব। কিন্তু হাঁসটা কই?’
    -‘সঙ্গে আনিনি, যদি তুই রাজী না হোস। আমার বাড়ীতেই আছে, গিয়ে নিয়ে নে! আমি একটু জরুরি কাজে চললুম। আসি ভাই?’
    আর আসে! হাতে টাকা পেয়ে ভুতো সঙ্গে সঙ্গে সামনের পগারটা পার হয়ে সেই যে গেল, আর পাক্কা একটা বছর গ্রাম মুখো হল না।
    লোভে পাপ হল, পাপে লাভ। গপ্পোটা কিন্তু এখানেও শেষ নয়।
    বছর ঘুরলে ভুতোর মনটা খচখচ করতে লাগল। মরা হাঁস কিনে হাবু ঠিক কেমন মুরগি হলো? তার নামে মামলা ঠুকেছে কি? নিদেনপক্ষে ফেসবুকে আপডেট? শেষমেষ যা থাকে কপালে ভেবে সে চলল গ্রামে ফিরে।
    হবি তো হ’, রাস্তাতেই হাবুর সংগে দেখা। ভুতোকে দেখে সে তার বাইক থামিয়ে দৌড়ে এল। মারবে নাকি! না না, ‘ওরে ভুতো রে, কতদিন দেখা হয় নি!’ বলে জড়িয়ে ধরে, টেনে নিয়ে গেল পাশের রেস্টুরেন্টে। চা, মামলেট অর্ডার দিল। দিব্যি খোশমেজাজ! ভুতো তো হতভম্ব, পাঁচ হাজার টাকার শোকে হাবুর মাথাটাই বিগড়েছে নাকি!
    -তারপর, কী খবর তোর! জরুরি কাজ বলে সেই যে চলে গেলি...
    -হ্যাঁরে, তোর মনে আছে, সেই হাঁসটা...
    -মনে থাকবেনা কেন! কিনলুম তো তোর কাছ থেকে! আর তার জন্যেই তো আমার এত উন্নতি!
    -কী বলছিস! ওটা তো মরে গেছিল!
    -হ্যাঁ তো। তোর বাড়ী পৌঁছেই বুঝলুম যে ঠকে গেছি। তখন আর কান্নাকাটি করে কী লাভ! ভেবেচিন্তে পেপারে একটা অ্যাড দিলুম, একশো টাকার লটারি, ফার্স্ট প্রাইজ এস ডি পি এইচ!
    -তারপর? টিকিট বিক্রি হলো?
    -হবে না আবার! দু-তিনটে গ্রাম মিলিয়ে পাঁচশো টিকিট বিক্রি! নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা এল হাতে!
    -সেকিরে! লটারির দিন কী করলি?
    -কী আবার করব! লটারি করলুম! নাম উঠল নবগ্রামের পঞ্চার!
    -পঞ্চা কে কী বললি?
    -বলার কী আছে! লটারি জিতেছে, বললুম হাঁসটা নিয়ে যা!
    -মরা তো!
    -হ্যাঁ, পঞ্চাও বলল, হাঁসটা মরা তো! বললুম, আমি তো বলিনি জ্যান্ত!
    -পঞ্চা রাগ করে নি?
    -কেন করবে! ও মরা হাঁস নিতে রাজী হলো না দেখে ওর একশো টাকা ওকে ফিরিয়ে দিলুম, আর সেদিন আমাদের বাড়ি ডাক রোস্ট হলো!! হ্যাঁ, তুই কিন্তু আজ দুপুরে আমার বাড়ি খাবি! তোরই জন্যে তো সব পেলুম!!
    (সারমর্মঃ
    লোভ, পাপ, অন্যায়, এ কলিতে সবই মায়া...
    সত্য কেবল মার্কেটিং, মার্কেটিং, আর মার্কেটিং, ভায়া!!)
  • Prakalpa Bhattacharya | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৫২630637
  • টুনটুনি-টু
    -
    টুনটুনি গেছিল বেগুন ক্ষেতে, সেখানে তাকে কয়েকটা জন্তু ধর্ষণ করল।
    ও মা, কী হবে? এত বড় অন্যায়ের কে শাস্তি দেবে?
    টুনটুনি একে জিগগেস করে, তাকে জিগগেস করে। সবাই বললে, ‘ওটা পুলিসকে গিয়ে জানাও।’
    তাই টুনটুনি পুলিসের কাছে গিয়ে বললে, ‘পুলিসদাদা পুলিসদাদা, ওই জন্তুগুলোকে শাস্তি দাও না !’
    পুলিস তার কথা শুনে ঘাড় বেঁকিয়ে নাক সিঁটকিয়ে বললে, ‘ইস! আমি মন্ত্রীর খিদমত খাটি, আমি তোর অভিযোগ শুনতে গেলুম আর কি!’
    টুনটুনি বললে, ‘আচ্ছা দেখতে পাবে এখন, অভিযোগ শুনতে যাও কি না।’
    বলে সে মন্ত্রীর কাছে গিয়ে নালিশ করলে, ‘মন্ত্রীমশাই, আপনার পুলিশ কেন আমার অভিযোগ শুনছে না? ওকে সাজা দিতে হবে!’
    শুনে মন্ত্রীমশাই হো হো করে হাসলেন, বিছানায় গড়াগড়ি দিলেন, পুলিশকে কিছু বললেন না। তাতে টুনটুনির ভারি রাগ হল।
    সে মস্তান সর্দার -এর কাছে গিয়ে বলল, ‘মস্তানভাই, মস্তানভাই, বাড়ি আছ?’
    মস্তান বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
    টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি এক কাজ কর।’ মস্তান বললে, ‘কি কাজ?’
    টুনটুনি বললে, ‘মন্ত্রীমশাই যখন ভোটে দাঁড়াবেন, তখন তাঁর গদিটা কেড়ে নিতে হবে।’
    তা শুনে মস্তান জিভ কেটে কানে হাত দিয়ে বললে, ‘ওরে বাপরে! আমি তা পারব না।’
    তাতে টুনটুনি রাগ করে আণ্ডারওয়ার্ল্ড ডন-এর কাছে গিয়ে বললে, ‘ডনভাই, ডনভাই, বাড়ি আছ?’
    ডন বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
    টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি মস্তানকে উচিত শিক্ষা দাও।’
    ডন বললে, ‘এখন আমি শিক্ষা-টিক্ষা দিতে পারব না, আমার বড্ড ঘুম পেয়েছে।’
    শুনে টুনটুনি রাগের ভরে সিবিয়াই-এর কাছে গিয়ে বললে, ‘সিবিয়াই ভাই, বাড়ি আছ?’
    সিবিয়াই বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
    টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি ডন-এর বিরুদ্ধে তদন্ত কর।
    সিবিয়াই বললে, ‘ডন আমার কি করেছে যে আমি তার বিরুদ্ধে তদন্ত করব? আমি তা পারব না।’
    তখন টুনটুনি মিডিয়ার কাছে গিয়ে বলল, ‘মিডিয়াভাই, মিডিয়াভাই, বাড়ি আছ?’
    মিডিয়া বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
    টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি সিবিয়াই-এর পর্দা ফাঁস করে দাও।’
    মিডিয়া বললে, ‘আজ ঢের পর্দা ফাঁস করেছি, আজ আর কিছু ফাঁস করতে পারব না।’
    কেউ তার কথা শুনল না দেখে টুনটুনি শেষে জনতার কাছে গেল।
    জনতা দূর থেকে তাকে দেখেই বললে, ‘কে ভাই? টুনিভাই? এস ভাই! বস ভাই! খাট পেতে দি, ভাত বেড়ে দি, খাবে ভাই?’
    টুনটুনি বললে, ‘তবে ভাত খাই, যদি মিডিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন কর।’
    জনতা বললে, ‘সে আবার একটা কথা! এখুনি যাচ্ছি! দেখব মিডিয়া বেটার কত ক্ষমতা!’ বলে সে সকল দেশের সকল জনতাকে ডেকে বললে, ‘তোরা আয় তো ভাই, দেখি মিডিয়া বেটার কত ক্ষমতা।’
    অমনি পিল-পিল-পিল-পিল করে যত রাজ্যের জনতা, বাপ বেটা ভাই বন্ধু মিলে মিডিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামল। জনতায় পথ ভরে গেল, দেশ ছেয়ে গেল। তাদের গলার আওয়াজে ঝড় বইতে লাগল। তাদের দাবিতে সকলের প্রাণ কেঁপে উঠল। তখন-
    মিডিয়া বলে, সিবিয়াই-এর পর্দা ফাঁস করি।
    সিবিয়াই বলে, ডন-এর বিরুদ্ধে তদন্ত করি।
    ডন বলে, মস্তানকে উচিত শিক্ষা দিই।
    মস্তান বলে, মন্ত্রীর গদি কেড়ে নিই।
    মন্ত্রী বলে, পুলিসকে সাজা দিই।
    পুলিশ হাত জোড় করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘রক্ষা কর, টুনি মা! এস, তোমার অভিযোগ শুনি আর দোষী জন্তুদের চরম শাস্তি দিই।’
    জন্তুরা শাস্তি পেল, কিন্তু টুনটুনি আর কোনওদিনই নাচতে বা গাইতে পারল না!
  • Prakalpa Bhattacharya | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৫৩630638
  • রাজার বাগানের কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজা সারদা-র টাকা রোদে শুকোতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তার একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল।
    টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এসে রেখে দিলে, আর ভাবলে, `ঈস্! আমি কত বিখ্যাত লোক হয়ে গেছি। রাজার ঘরে চোরাই টাকা, আমার ঘরেও চোরাই টাকা!' তারপর থেকে সে কেবলি এই কথাই ভাবে, আর বলে---

    রাজার ঘরে চোরাই টাকা
    টুনির ঘরেও চোরাই টাকা!
    রাজা সভায় বসে সে কথা শুনতে পেয়ে জিগগেস করলেন, `হ্যাঁরে! পাখিটা কি বলছে রে?'
    সকলে হাত জোড় করে বললে, `মহারাজ, পাখি বলছে, `আপনার ঘরে যেমন চোরাই টাকা আছে, ওর ঘরেও নাকি তেমন চোরাই টাকা আছে!' শুনে রাজা খিল্‌খিল্ করে হেসে বললেন, `দেখ তো ওর বাসায় কি আছে।'
    তারা দেখে এসে বললে, `মহারাজ, বাসায় একটি টাকা আছে।'
    শুনে রাজা বললেন, `সে তো আমারই টাকা, নিয়ে আয় সেটা।'
    তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা থেকে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা আর কি করে, সে মনের দূঃখে বলতে লাগল---

    রাজার বড্ড বাড়াবাড়ি
    টুনির ওপর বাটপাড়ি!
    শুনে রাজা আবার হেসে বললেন, `পাখিটা বড় ঠ্যাঁটা রে! যা, ও কে একটা বিভূষণ টুষণ দিয়ে আয়।'
    ছড়াশ্রী খেতাব পেয়ে টুনির বড় আনন্দ হয়েছে। তখন সে বলছে---

    রাজা ভারি ভয় পেল
    টুনিকে ডেকে খেতাব দিল
    রাজা জিগগেস করলেন, `আবার কি বলছে রে?'
    সভার লোকেরা বললে, `বলছে মহারাজ নাকি বড্ড ভয় পেয়েছেন, তাই ওকে খেতাব দিয়েছেন।'
    শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, `কি এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে জেলে পুরি!'
    যেই বলা অমনি পুলিশ গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে! রাজা তাকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলখানার ভিতর গিয়ে সিবিয়াই কর্তাদের বললেন, ‘এর বিরুদ্ধে কড়া কেস ঠুকে দিতে হবে!'
    বলে তো রাজা চলে এসেছেন, আর কর্তারা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।
    একজন বললেন, `কি সুন্দর পাখি! কেসটা আমার হাতে দাও তে একবার দেখি।' বলে তিনি তার কেস হাতে নিলেন। তা দেখে আবার আর একজন দেখতে চাইলেন। তাঁর হাত থেকে যখন আর একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি জামিন পেয়ে পালাল!
    কি সর্ব্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রক্ষা থাকবে না!
    এমনি করে তারা দুঃখ করছেন, এমন সময় একটা ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থ্প-থ্প করে যাচ্ছে। সাত কর্তা তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, `চুপ-চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে! এইটের নামে কেস ঠুকে দি, আর রাজামশায় ভাববেন টুনটুনিই কেস খেয়েছে।'
    সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে কাঠগড়ায় তুললে রাজা ভারি খুশি হলেন।
    তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, `এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।'
    অমনি টুনি বলছে---

    বড় মজা, বড় মজা,
    ব্যাঙ পেল টুনির সাজা!
    শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন! তখন তিনি থুতু ফেলেন, গাল পাড়েন, বিবৃতি দেন, আর কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, `সাত সিবিয়াই কর্তার চাকরি খেয়ে ফেল।'
    অমনি চামচা গিয়ে সাত কর্তার চাকরি খেয়ে ফেললে।
    তা দেখে টুনটুনি বললে---

    এক টুনিতে টুনটুনাল
    সাত কর্তার চাকরি গেল!
    তখ্ন রাজা বললেন, `আন বেটাকে ধরে! এবার গুন্ডা লাগিয়ে মারব! দেখি কেমন করে পালায়!'
    টুনটুনিকে ধরে আনলে।
    রাজা বললেন, `আন গুন্ডার দল!'
    দল এল। রাজা তাদের মধ্যে টুনটুনিকে ছেড়ে দিয়েই তার নামে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে কবিতা লিখতে বসে গেলেন।
    সবাই বলে, `এবার পাখি জব্দ!'
    বলতে বলতেই রাজামশাই একটা কবিতা শোনাতে আরম্ভ করলেন।
    সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই সুযোগে গুন্ডাদের ভিতর থেকে বেরিয়ে পালাল।
    রাজা বললেন, `গেল, গেল! ধর, ধর!' অমনি সবাই বললে, `চামচা, চামচা! মারো, মারো! পালালো!'
    চামচা তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে গিয়ে পড়্ল।
    রাজামশাই তো ভয়ানক চ্যাঁচালেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক চ্যাঁচাতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচাল।
    টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল---

    নাক কাটা রাজা রে
    বেরিয়ে দ্যাখ বাজারে!!
    বলেই সে পালিয়ে সে দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এসে দেখল, খালি বাসা পড়ে আছে।
  • Prakalpa Bhattacharya | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:৫৪630639
  • বাঘ

    একদা যে বাঘটির গলায় হাড় ফুটিয়াছিল, আজ তাহার গলায় পুণরায় হাড় ফুটিল। পূর্ব অভিজ্ঞতা তিক্ত হইবার কারণে সারস পক্ষী পুণর্বার সেই হাড় বাহির করিতে রাজী হইল না। যন্ত্রণায় ছটফট করিতে করিতে বাঘ সম্মুখের ডাক্তারখানায় যাইল। টোকেন লহিয়া এক ঘটিকা প্রতীক্ষা করিবার পর ডাক্তার তাহার রক্তচাপ, শারীরিক উষ্ণতা ইত্যাদি মাপিয়া কহিলেন, গলার জন্য তাহাকে ইএনটি বিশারদ দেখাইতে হইবে। সন্ধানও বাতলাইয়া দিলেন। তাহার পর নিজ ফীস গুনিয়া লহিলেন।
    উক্ত হাসপাতালে যাইয়া বাঘ দিশাহারা হইয়া পড়িল। সুন্দরী অভ্যর্থিকা তাহার ঠিকুজি কুষ্ঠী ফর্মিভূত করিবার পর যখন জানিলেন যে তাহার কোনরূপ স্বাস্থ বীমা নাই, ভ্রুকূটির দ্বারা বিরক্তি প্রকাশ করিলেন। যাহা হউক, নির্ধারিত কক্ষের সম্মুখে আসীন হইয়া বাঘ দূরদর্শনে এনডিটিভির সম্প্রচার দেখিতে লাগিল।
    অবশেষে ডাক আসিল। সুসজ্জিত কক্ষে নানাবিধ যন্ত্রপাতি সহযোগে কিছুক্ষণ ধরিয়া বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চক্ষু-নাসা-কন্ঠ বিশারদ বাঘকে একটি সুবৃহত তালিকা ধরাইয়া দিলেন। তাহাতে মস্তিষ্কের স্ক্যান হইতে পাকস্থলির সোনোগ্রাফি পর্যন্ত পরীক্ষণের নির্দেশ রহিয়াছে। কন্ঠে হাড় ফুটিবার দরুণ তাহাকে নিকটবর্তী কক্ষে অস্থিবিশারদের সাথে সাক্ষাত করিতেও বলা হইয়াছে। যন্ত্রণায় কাতর বাঘ সেই তালিকা লইয়া ক্যাশ কাউন্টারে পঁহুচাইবা মাত্র সমপরিমাপের একটি বিল তাহাকে ধরাইয়া দেওয়া হইল। টাকার অস্বাভাবিক অংক দেখিয়া বাঘের কপালে স্বেদবিন্দু প্রকট হইল এবং হৃৎস্পন্দন বর্ধিত হইল। সে তখন অতিকষ্টে এক পাত্র জল চাহিয়া খাইল, এবং ঢোঁক গিলিবামাত্র তাহার গলার হাড় নামিয়া গেল।
  • | 127.194.81.2 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৯:৪৩630640
  • প্রকল্প বাবু, দারুন। খুব উপভোগ করলাম। ঃ))
  • s | 182.0.249.87 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১১:৫৪630641
  • যদিও এগুলো ফেসবুকে আগে পড়া, কিন্তু আমি প্রকল্পের সবচেয়ে বড় ফ্যান হিসাবে একটা বড়ো লাইক দিয়ে গেলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন