এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সুচিত্রা সেন ও আমাদের ছেলেবেলা!

    biplab
    অন্যান্য | ১৮ জানুয়ারি ২০১৪ | ১২২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • biplab | 78.33.140.55 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৪ ২০:৩৫629162
  • বাঙালী হিন্দু মধ্যবিত্ত পরিবারে ধর্ম হেঁসেলে না ঢুকলেও, জীবন প্রবাহের পদে পদে স্বতঃসিদ্ধ। নব্বইএর দশকে সেই রাজীব জমানায়, আমাদের চারিদিকে নানান সব না না এর পর্দা খুলে একটু মিঠে রোদ। কোলকাতা দূরদর্শন শনিবার বিকেল পাঁচটায় পুরানো বাংলা সিনেমা দেখাত। তখনো কেবল টিভির জন্ম হয় নি। ডিডির ছেঁড়া গেঞ্জি জাঙ্গিয়া আমাদের একমাত্র এন্টারটেইনমেইন্ট। আমি ক্লাস সেভেন এইটে পড়ি। কিশোর ভারতী, আনন্দমেলা, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে আস্তে আস্তে দেখতে শিখলাম উত্তম সুচিত্রা। মাসিমা, কাকিমারা হাঁ করে গিলত। মধ্য বয়স্ক মহিলাদের কাছে ওই রোমান্স ছিল শেষ পাতে চাটনি চাটা। তাদের জীবনে কখনো আসে নি বিপাশা বা রিনা ব্রাউনের দুর্ধস্ব সব রোমান্স। সেই যুগে মাইক্রোওয়েভ, ফ্রিজ ঢোকেনি। হেঁসেলের আগুনে, ছেলে মেয়ে মানুষ করার চাপে, অধিকাংশ মহিলাদের নারীত্ব ছিল অবদমিত। উত্তম সুচিত্রার রোমান্স সেই ধিক ধিক করা রিক্ত সাদা কাঠ কয়লায় জলন্ত অঙ্গার। উনারা কেমন হিপটোনাইজড ছিলেন উত্তম সুচিত্রায় তা সিনেমা ভাঙার পর ওদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যেত।

    আর আমাদের মতন কিশোরদের কাছে, তিনি স্বপ্নের সেই রাজকন্যা। রক্ষণশীল সমাজে আশেপাশে কোনকিশোরী নেই যার সাথে গুনগুনিয়ে অন স্ক্রীন রোমান্স এর শিক্ষাটা রোল প্লে করা যায়। সেক্স, কিসি এসব অনেক দূর, কথা বলা যায় এমন কিশোরী নেই জীবনে। ছেলে প্রেম করছে, করতে পারে, এই নিয়ে সেকালে বাবা মায়েরা সিঁটিয়ে থাকতেন শুধু একটাই কারনে। প্রেম করতে গিয়ে পড়াশোনাটা না গাড্ডায় যায়। জয়েন্টে মোটে ১০০০টা সিট। ছেলে ওই লিস্টে নিজের নাম না ঢোকাতে পারলে, গেল ওর জীবনটা!! সেটা সেই সময় যখন ভারতে টিসিএস, ইনফি এসব আসে নি। মাইক্রোসফট, এপল এদের আমেরিকাতেই কেও চেনে না। চাকরি বলতে স্কুল কলেজে শিক্ষকতা আর সরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার। ফলে ওই এক হাজারটার মধ্যে লিস্টে নাম না তুলতে পারলে তুমি বেনামী। আর বাবা মার সারাক্ষনের ভয় প্রেমের পিচ্ছিল পাড়ে পা পিছলোলেই শ্যাওলা পুকুরে সলিল সমাধি।

    উত্তম সুচিত্রার সিনেমা দেখার পরই আবার পড়ার টেবলে ফিরতে হত শনিবার রাতে। এদিকে মন ত উসখুশ উদাস। টেবলের সামনে ক্যালেন্ডারের মধ্যে দিয়ে আমি তখন সুচিত্রার স্বপ্ন জগতে! অহ যদি জীবনে একটু দাঁড়াতে পারি আর-আর বিপাশার মতন কোন মেয়ে যদি আমাকে বলে, "আমার কথা কি তোমার একবার ও মনে পরে না"- কি বলবো-কিভাবে উত্তর দেব-সেই নিয়ে উত্তাল সুইট ভাবনা। আমি কেন আমার মতন অনেক কিশোরই তখন ডস্টভয়েস্কির আর্কাডি ডলগুর্কি। টিনিশ রেভরি বা কৈশরের দিবাস্বপ্ন অনাগত রোমান্স, রেভোল্যুশন আর রেস্টিকশনের মধ্যে খাবি খাচ্ছে। সুচিত্রা, মার্কস, লেনিন, নেতাজি, বিবেকানন্দ নিয়ে ঘেঁটে ঘ। দুর্ভাগ্য এটাই- অনেক বাঙালীই দেখেছি এই সব লক্ষণরেখা থেকে এখনো বেড়তে পারেন নি। এবং আজন্ম এই বৃত্তেই দুর্বার অভিকেন্দ্র বলেই ঘেঁটে থাকেন।

    তারপরে অনেক বছর কেটে গেছে। আই আই টিতে ঢোকার পর, বাবা মারা যখন নিশ্চিত হলেন, এবার ছেলের সদগতি হল- তখন বড়দের কাছ থেকে জানলাম রোমান্স শিখতে গেলে নাকি উত্তম সুচিত্রা দেখা মাস্ট!! তবে ওই ১০ ; ১ রেশিওতে যেখানে মেয়ে পাওয়া যায়, সেখানে রোমান্স নামানোর চেয়ে চেকভ, টলস্টয় পড়া অধিক চিত্তাকর্ষক। আনরোম্যান্টিক মহিলাশুন্য ছাত্র জীবনের পর রিসার্চ লাইফে রোমান্স এল বটে-তবে বুঝুলুম বিপাশা আর রীনা ব্রাউনরা সিলভার স্ক্রীনের প্রেমিকা। বাস্তবে যা জোটে সেটা লিখতে গেলে, মহিলা পাঠকবৃন্দ আমাকে মিজোগাইনিস্ট বলে ঠেঙাবে। আর আমরাই বা উত্তমের মতন সুইট রোম্যান্টিক হতে পারলাম কই?

    কয়েক মাস আগে আমার প্রবল ইচ্ছা জাগল উত্তম-সুচিত্রার সাফল্যের পেছনে গণিতিক রহস্যটা কি? আমার মাথায় পোকাটা নড়িয়েছিল হলিউডের এক ভারতীয় প্রোডিউসার। আসলে প্রেডিকশন টেকনোলজী নিয়ে কাজ করি শুনে বললো-আছা স্ক্রিপ্ট, এক্টর, ডিরেক্টর এসব দেখে আগে থেকে কি বলা যার সিনেমাটা হিট করবে কি না??

    আসলেই কিছুটা যায়। সেসব গণিতিক ব্যপারে পরে আসব। এবার ক্ষীরটা বলি। আমি লক্ষ্য করেছি উত্তম সুচিত্রার হিটের পেছনে আছে ভাল স্ক্রীপ্ট। সেই প্রেমে উত্থাল পাথাল-বাধা-মিলনের চেনা ছক। যে থিম চিরনবীন। ইউরোপে নায়কের সাথে মিলন হত না, তাকে যুদ্ধে যেতে হত। সেখান থেকে সে ফিরত না বা আহত হয়ে ফিরত। ভেতো বাঙালী প্রেমিক উত্তমকে যুদ্ধে যেতে হত না। তাহলে প্রেমে চ্যালেঞ্জ? বিরহ? সেটার ইজি ভিলেন আমাদের বর্ণবাদি, ধর্মীয় সমাজ। একটু ঘাঁটলেই দেখা যাবে এই ছকে সেরা মাস্টার শরৎ চাটুজ্জে। আর সেই শরৎ লাইনেই এসেছ উত্তম সুচিত্রার সাফল্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন