এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নির্জন সৈকতে

    Achintyarup
    অন্যান্য | ০৪ জানুয়ারি ২০১৩ | ১৭২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Achintyarup | 69.93.240.91 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:৩০579185
  • সে অনেককাল আগের কথা। তখন আমি কলকাতার স্টেটসম্যান কাগজে কাজ করি। শীতকাল। জানুয়ারি মাস হবে। কারণ কদিন আগে ওড়িশার কেওনঝড়ে খুন হয়ে গেছেন খ্রীস্টান মিশনারি গ্রাহাম স্টুয়ার্ট স্টেইনস। প্রেম-টেম করতে শুরু করিনি তখনো। অর্থাৎ চাকরিটুকু বাদ দিলে একেবারে যাকে বলে পুরোদস্তুর বেকার যুবক।

    সে সময় আমার নিজের ঠিক করা নিয়ম ছিল, প্রতি দুমাসে অন্তত দু দিনের জন্যে হলেও ঝোলা কাঁধে করে বেরিয়ে পড়া। সঙ্গী পেলে ভাল, না পেলে একাই। (মনে পড়ে গেল, জব্বর সব ঝোলাও পাওয়া যেত বটে তখনকার দিনে। আমার আবার কলেজ স্ট্রীট মার্কেটের কোনার দিকের বিশেষ একটা দোকানের ঝোলা না হলে চলত না। বেশ কম্বল-কম্বল প্যাটার্নের জিনিস দিয়ে তৈরি হত সে জিনিস। সে সব ঝোলা কবেই জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে।)

    সেকালের স্টেটসম্যান পত্রিকায় মাইনে-টাইনের বিশেষ বালাই ছিল না বটে (তবে মিনি-মাগনায় মোটেই খাটিয়ে নিত না। মানে, মাসের শেষে খামে ভরে নগদ টাকা কিছু দিত, খুচরো পয়সাও থাকত সঙ্গে, বেতনের দিন ঝনঝন করত পকেট), কিন্তু ভারি ভাল একটা নিয়ম ছিল। পাঁচ দিন টানা নাইট ডিউটি করলে দুদিন ছুটি পাওয়া যেত। (আজকাল কলকাতার বুকে সব খপরকাগচ আপিসে হ্প্তায় আট দিন নাইট ডিউটি দিলেও, তারপর কেঁদে-ককিয়ে এক খানা ছুটি পাওয়া দায়।) সেবার বোধ করি সেইরকম কোনো পাঁচদিনান্তিক খান দুই ছুটি জমেছিল, তার সঙ্গে এক খানা সি এল-এরও ভরসা ছিল হয়ত, তাই ভোর ভোর দেখে বেরিয়ে পড়লুম। একাই।
  • sosen | 125.184.6.39 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৮:২৮579196
  • তাপ্পর?
  • achintyarup | 69.93.246.162 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:৫৪579203
  • একা না বোকা। বলে কে? যে বলে সে মোটেই ঠিক বলে না। একা বেড়ানোর মজাই আলাদা। তবে কোথায় যাব সেটা ঠিক করে না বেরোলে একটু মুশকিল হয় বটে।

    বেশ ভোর ভোর বাড়ি থেকে যখন বেরিয়েছি, তখনও ঠিক করিনি গন্তব্য। মনে হয়েছিল বেজায় রোমান্টিক ব্যাপার হবে যাওয়ার জায়গার কোনো ঠিক-ঠিকানা না রেখে পথে নেমে পড়া। কিন্তু পথে নামার পরে দেখলুম বিষয়টা মোটেই তত সুবিধের নয়।

    কোথায় যাই? কেওনঝড় যাব? আগেই বলেছি কদিন আগেই দারা সিং-রা সেখানে স্টেইনস সায়েব আর তার বাচ্চাদের পুড়িয়ে মেরেছে। যথেষ্ট গরম হয়ে আছে ওড়িশা। সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হয় না। নাকি বহরমপুর যাব? এক গাদা পুরোনো বন্ধুবান্ধব থাকে সেখানে। আগের বার গিয়ে প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে ছত্তিরিশ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মুর্শিদাবাদ ঘোরার স্মৃতি মনে এল। ভোর বেলা বেরিয়ে গোরাবাজার থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে বেড়াতে বেরিয়ে দুপুর পার করে ফেরা। আমাদের অভ্যর্থনা করার জন্য দরজার সামনে চ্যালা কাঠ হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বন্ধুর স্নেহময়ী মা। বড় মধুর স্মৃতি। নাকি পালামৌর দিক থেকেই ঘুরে আসব একটু? সেই ছেলেবেলা থেকে সেখানে যাওয়ার সখ আমার।
  • I | 24.99.76.251 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০০:২৫579204
  • চলুক।
  • achintyarup | 69.93.206.125 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:০৩579205
  • গড়িয়ার বাস স্ট্যান্ড থেকে কয়েকটা দূরপাল্লার বাস ছাড়ে জানা ছিল, কিন্তু যতক্ষণে আমি গিয়ে পৌঁছেছি ততক্ষণে তারাও সব যার যার নিজের নিজের রাস্তা ধরেছে। কী আর করা। অগত্যা ধর্মতলা। শহীদ মিনারের নিচ থেকে কিছু বাস এদিক-ওদিক যায় দেখেছিলাম। কিন্তু কোথায় কেওনঝড়ের বাস? কেউ একজন বলল, এখানে পাবেন না এখন, তার চেয়ে বরং হাওড়ায় চলে যান। ঠিক। হাওড়ায় যেখানে ডোমজুড়-খাঁদারঘাটের মিনি ছাড়ে সেখান থেকে ভিন-রাজ্যের কয়েকটা বাসও ছাড়তে দেখেছি। পুরী যাওয়ার বাস তো দেখেইছি। চলে গেলাম হাওড়া।
  • achintyarup | 69.93.206.125 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:১৭579206
  • ভেবেছিলাম চারদিকে গিজগিজ করবে বাস, একটা পুরী যাচ্ছে তো একটা কেওনঝড়, আরেকটা বাসের গায়ে চাপড় মারতে মারতে কণ্ডাক্টর চেঁচাচ্ছে রাঁচি, রাঁচি, রাঁচি... কিন্তু কোথায় কি? এ তো দেখি একেবারে ভোঁ ভা। একখানা মাত্তর লজঝড়ে বাস দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, প্রায় ভর্তি, সেটা যাবে দীঘা। অ্যাঃ, শেষ পর্যন্ত দীঘা? থিকথিকে ভিড়, ঘোলা জল... আমার দুচক্ষের বিষ। কিন্তু আর তো কোনো বাসও নেই। তা হলে কি যাবই না কোথাও? নাকি ট্রেন ধরব? মাথা চুলকোতে চুলকোতে পকেট থেকে চারমিনারের প্যাকেট বের করি।
  • achintyarup | 69.93.246.30 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:৪৮579207
  • এত্ত দিন হয়ে গেল, প্রায় চোদ্দ-পনের বছর তো, দেখছি সব ঝাপসা মত লাগছে। অথচ এই গল্পটা লিখে রাখার কথা আগে কেন মনে হয়নি? কিম্বা সেই হাতিবাড়ির বনবাংলোর গা দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখা নদিতে ডুব দিয়ে চান করার গল্পটা? অথবা পারুলিয়া গাঁ থেকে শেষ বাস মিস করার পর মাঝ রাত্তিরে বালির ট্রাক দাঁড় করিয়ে তাতে চেপে ভোরের ঠিক আগে বর্ধমান শহরে পৌঁছনোর গল্প? ভুলেই তো গিয়েছিলাম প্রায়। আর পলাশী থেকে ম্যাটাডোরে করে খানিক পথ যাওয়ার পর জলঙ্গী নদিতে সেই যে ভুট্ভুটি ধরলাম? দুধারে উঁচু পাড়, মাঝে ছোট্টখাট্ট শান্ত নদিটি, তারপর আড়াই ঘন্টা ধরে গুট্গুট গুট্গুট করে যাওয়ার পর সেই যে গ্রামটায় গিয়ে নামলাম? পাড়ের কাছে ছোট মাছি-ভনভন দোকানে চিনি-খড়খড়ে শুকিয়ে যাওয়া হলদে রঙের মিষ্টি কিনে খেলাম যেখানে? গ্রামটার নাম পর্যন্ত মনে নেই, ভাবতে পার?
  • achintyarup | 69.93.246.30 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:১২579208
  • দীঘা দীঘা দীঘা রামনগর শঙ্করপুর দীঘা... সিট খালি সিট খালি দীঘা...

    উঠে পড়ি বাসে। দরজা দিয়ে ঢুকে ঠিক বাঁদিকের সিটটায় জানালার পাশ ঘেঁষে বসি। খানিক পরে বাস ছাড়ে।

    কিন্তু যাব কোথায়? দীঘা যাওয়ার ইচ্ছে তো এতটুকুও নেই, তাহলে কি মাঝপথেই নেমে পড়ব কোথাও? কন্ডাকটার এসে টিকিট চায়। আচ্ছা, শঙ্করপুর যেতে কতক্ষণ লাগবে দাদা? চার-সাড়ে চার ঘণ্টা? ঠিক আছে, শঙ্করপুরের টিকিটই দিন একটা।

    তখনও শঙ্করপুর যাওয়ার খুব একটা চল হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। অন্তত আমার চেনাশোনা কেউ কখনও যায়নি সেখানে। যাক, দীঘায় তো আর যাচ্ছি না। এ জায়গাটায় গিয়েই দেখি না কেমন লাগে।

    রাস্তা খুবই খারাপ ছিল। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেতে খেতে বাস যখন কাঁথি গিয়ে পৌঁছুল ততক্ষণে হাড়মাস প্রায় আলাদা হয়ে এসেছে। মাথা-মুখ ভর্তি ধুলো। কাঁথিতে খানিক্ক্ষণ থেমেছিল বাস। লোকাল লোকেরা বলে কন্টাই। বাস থেকে নেমে হাত-পা ছাড়াই একটু, ঝাল মটর ভাজা কিনে খাই।

    তারপর কতক্ষণ লেগেছিল? মনে নেই। রাস্তার পাশে একের পর এক দোকান, সেখানে লেখা চিংড়ার পোনা পাওয়া যায়। সাইনবোর্ডে মস্ত বড় চিংড়ির ছবি আঁকা। চিংড়িকে এদেশে চিংড়া বলে তাহলে। নতুন জ্ঞান লাভ করে খুশি হয়ে উঠি।

    বাস চলে, আর আমি বাতাসে নাক তুলে সমুদ্রের গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করি। জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে দেখি লোনা লাগে কিনা। স্বাদে-গন্ধে সমুদ্রের নৈকট্য টের পাই না।
  • achintyarup | 69.93.246.219 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:১৬579209
  • দীঘা সম্পর্কে এত নাক-উঁচু, কিন্তু তখনও পর্যন্ত সারা জীবনে আমার সমুদ্র দর্শন হয়েছে সাকুল্যে সোয়া একবার। তার মধ্যে পৌনে একবার ওই দীঘাতেই। বাকিটুকু পুরী। তারও স্মৃতি যেটুকু মনের গায়ে লেগেছিল সে আর না বলাই ভাল। তবে তা ছাড়াও দেখিনি কি? কত বার তো দেখেছি, ছবিতে, সিনেমার পর্দায়, টেলিভিশনে। বেশ তো ভালই লাগে দেখতে। তবে একটুকখানি বলে রাখা ভাল, পরে দেশে বিদেশে নানা স্থানে নানা সাগরের নানা রূপ চাক্ষুষ করার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু সমুদ্র কেন জানি আমায় টানে না। মানে, ওই অত বড় জলাশয়ের সামনে গিয়ে, তা সে ম্যাড়ম্যাড়ে ঝিমিয়ে থাকা টাইপই হোক, কি লাফানো-ঝাঁপানো ঢেউ ছুঁড়ে দেওয়া ভয়ানক প্যাটার্নেরই হোক, আমার কেমন ভয় ভয় করে।
  • achintyarup | 69.93.246.219 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:৩২579186
  • কোন একটা জায়গায় এসে -- নাম-টাম এখন মনে নেই বলাই বাহুল্য -- কন্ডাক্টর বলল, নেমে পড়ুন দাদা, নেমে পড়ুন। অ্যাঁ? নামব? এ তো দেখছি বাস রাস্তার পাশে একটা সাধারণ গাঁ-গেরাম টাইপের জায়গা। এই নাকি শঙ্করপুর-অন-সী? সমুদ্রই বা কোথায়? কন্ডাক্টার জানাল, এটা শঙ্করপুর নয়। এখান থেকে কাঁচা পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলে তবে সেখানে পৌঁছনো যায়। সে কি কথা? তবে যে শঙ্করপুর শঙ্করপুর বলে হাঁক ছাড়ছিলে বড়? কিন্তু সে আর ভেবে কি হবে। শঙ্করপুর পর্যন্ত বাস সে সময় যেত না। বড় রাস্তায় নেমে রিক্শা ভ্যানে চড়তে হত। ট্রেকার-ফেকার চালু হয়নি তখনও।

    কি আর করা। মাফলার গলায় পেঁচিয়ে নেমে পড়ি বাস থেকে। খানিক দাঁড়াতেই শেয়ারের রিকশা ভ্যান মিলে যায়। হাট থেকে ফেরা জন কতক মেয়ে মদ্দ বিশ্রী গন্ধওয়ালা মাছের হাঁড়ি নিয়ে বসে ভ্যানের পাটাতনের ওপর। সেই এক হাঁড়ির কানায় কনুইয়ের ভর রেখে অখদ্দে রাস্তায় প্রবল ঝাঁকুনি খেতে খেতে এক সময় পৌঁছে যাই শঙ্করপুর।
  • nina | 79.141.168.137 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৬:৩৪579187
  • আবার ভয় ভয়ে পড়া শুরু করেছি---নটবরের ভূতকে বড্ড ভয় পাই ঃ-((
  • kumu | 132.160.159.184 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:১৯579188
  • নীনাকে সাপোট।
    তবে অন্য কয়েকটা টই চিন্টুবাবু শেষ করেছিল,এটাও ঠিক।
  • achintyarup | 69.93.196.70 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ০১:৩২579189
  • ভ্যান থেকে নামি একটা আধা-গঞ্জ মত জায়গায়। মাঝ বিকেলে। থাকব কোথায়? শুনেছিলাম বেনফিশ গেস্ট হাউস খুলেছে শঙ্করপুরে। খোঁজ করে করে পৌঁছে যাই। গেস্ট হাউসের নাম মৎস্যগন্ধা। সেখানে গিয়ে আরেক কেলো। দরজার সামনে টেবিল নিয়ে বসা লোক জিগ্যেস করে, কী নামে বুকিং আছে? বুকিং? সে আবার কী? না দাদা, বুকিং টুকিং কিছু করিনি। কিন্তু একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। অনেক কষ্ট করে কলকাতা থেকে এসেছি। গেরস্থের ছেলে, রাত্তিরে কি খোলা আকাশের নিচে থাকব? টেবিলের পিছনে বসা লোকটির মায়া হয় বোধ হয়। জিগ্যেস করেন, কী করা হয়? পরিচয় শুনে বলেন, দেখি, একটা কিছু ব্যবস্থা তো করতেই হবে। কিন্তু মুশকিল হল, আমাদের সব ঘর আজকে বুক হয়ে গেছে। কালকে হয়ত একটা খালি হবে। একটা রাত আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। কষ্ট করতে আমার আপত্তি নেই। শুধু শীতের রাত্তিরে খোলা আকাশের নিচে শুতে না হলেই হল। কাজেই মৎস্যগন্ধার পিছনে আউট হাউস মত ছোট্ট আলাদা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল।
  • nina | 79.141.168.137 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ০২:৪৫579190
  • পেছনের আউট হাউসই ভাল--মাছের গন্ধ কম হবে--কি নাম রে বাবা মৎস্যগন্ধা!!!!
    পাইদিদির বুকিং করে দাও ওখানে---

    কুমু---থেঙ্কু ঃ-))
  • achintyarup | 69.93.196.70 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:১১579191
  • একতলা ছোট্ট বাড়ি, সাকুল্যে দুখানাই ঘর। সামনে বারান্দা, ছাদ-ঢাকা। সিলিং-এ ড্যাম্পের ছোপ ছোপ। কড়ি-বরগা দেওয়া ছিল কি? মনে নেই। তবে সে বাড়ির বয়স তখনই অন্তত বছর চল্লিশ তো হবেই। হলদেটে রং করা হয়েছিল কোনও এক কালে, সে রঙের স্মৃতি রয়ে গেছে দেয়ালে। পলেস্তারা খসে গেছে জায়গায় জায়গায়। ঘরে এক খানা জানালা, ছোট্ট। লোহার গরাদ দেওয়া। গরাদ থেকে ফুট-খানেক লম্বা সাপের খোলস ঝুলছে। এমনিতে ব্যবস্থা মন্দ না। ইলেকট্রিক কানেকশন আছে, একটা খাট আছে, তাতে মোটা গদির ওপর সাদা মশারী পাতা। ওয়াড় দেওয়া কম্বলও আছে এক খানা। একটা দরজা দিয়ে পাশের ঘরে যাওয়া যায়। উঁকি মেরে দেখি সে ঘর ধুলো আর মাকড়শার জালে ভর্তি। একদিকে ডাঁই করা কয়েকটা ম্যাট্রেস। আর মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে আছে রামের খালি বোতল। কিছু আস্ত, কিছু ভাঙ্গা।

    ঘর থেকে বেরিয়ে দরজায় তালা লাগাই। তারপর হাঁটা দিই সমুদ্রের দিকে।
  • I | 24.96.119.120 | ২০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৩২579192
  • সাপের খোলস ও মাকড়সায় আমার ভেরি আপত্তি। গায়ে আমবাত বেরিয়ে যাবে।
    দিব্য হস্সে।
  • achintyarup | 69.93.242.110 | ২১ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:০১579193
  • তখন শঙ্করপুরে হোটেল-টোটেলের বিশেষ বাড়াবাড়ি ছিল না, দিনরাত থাকার পর্যটকরাও বিশেষ যেতেন না। যাঁরা দীঘা বেড়াতে যেতেন, তাঁরাই একবেলা টুক করে ঘুরে যেতেন। কেউ নির্জনতা উপভোগ করতে, কেউ নির্জনতা ভেঙ্গে ফাঁকা বিচে খানিক হুল্লোড় করে নিতে। গত কয়েক বছরে কয়েকটা ঝড়ে বন্যায় শঙ্করপুর সৈকতের মানচিত্র ও চরিত্র খানিক পাল্টে গেছে। ফলে বছর তিনেক আগে সেখানে গিয়ে আমার আগের দেখা জায়গাটাকে আর খুঁজে পাইনি। রতন আর মানিককেও পাইনি। বলে দিতে হবে না নিশ্চয়ই, রতন আর মানিক নামদুটো আমার বানানো। কারণ আসল নামগুলো কবেই ভুলে মেরে দিয়েছি।

    মৎস্যগন্ধা থেকে সমুদ্র দেখা যেত না। এখনও নিশ্চয়ই যায় না। পুব দিক (পুব দিকই হবে নিশ্চয়ই) বরাবর খানিকটা হেঁটে গেলে উঁচু হয়ে উঠে গেছে সরু বালি-ভরা রাস্তা, তারপর ফের ঢালু হয়ে নেমে গেছে নির্জন সৈকতে। রাস্তাটা যেখানে উঁচু হয়ে ঠেলে উঠেছে, ঠিক তার বাঁদিকে একটা চায়ের দোকান। সমুদ্রে ভাসার জন্য হাওয়া-ভরা মোটরগাড়ির টিউবও সেখানে ভাড়া পাওয়া যায়। দোকানের বাঁশের বেঞ্চে বসে লাল চা খেতে খেতে যতক্ষণ ইচ্ছে সমুদ্রের দিকে চেয়ে চুপটি করে একা একা বসে থাকাও যায়। সে সময় আমি সাধারণত ক্যামেরা নিয়ে বেড়াতে যেতাম না। মানে, সাধ যথেষ্ট থাকলেও সাধ্য ইত্যাদির অভাব ছিল। ফলে চতুর্দিকে তাক করে করে খামোখা খচাম খচাম করে ছবি তোলারও বালাই ছিল না। স্রেফ বসে বসে কিম্বা ঘুরে ঘুরে দ্রষ্টব্য স্থানের সৌন্দর্য দিব্যি উপভোগ করা যেত। চায়ের দোকানে বসে রাজ্যের লোকের গুলতানি শুনে নানা রকম স্থানীয় জ্ঞানও আহরণ করা যেত। যেমন ওই দোকানের ছোকরারাই আমাকে শেখাল সমুদ্রের বালিতে ফুর্তি করতে আসা লোকেদের গাড়ি আটকে গেলে সে গাড়ি টেনে তুলে আনার জন্য কী করে তাদের চাপ দিয়ে বাড়তি পয়সা রোজগার করা যায়। আমি যেদিন গিয়েছিলাম, সেদিনই নাকি একটা টাটা সুমো টাইপের বড় গাড়ি আটকে গিয়েছিল। লোকাল ছেলেরা নাকি হাজার টাকা (পাঁচশোও হতে পারে) চেয়েছিল গাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য। বাবুরা রাজি হয়নি। ছেলেরাও আর কিছু বলেনি। তারপর ধীরে ধীরে জোয়ারের জল বাড়তে লাগল, আর ভিজে বালিতে গাড়িও আস্তে আস্তে বসে যেতে লাগল। বাবুদের তখন কাঁদো-কাঁদো অবস্থা। শেষে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তারা সে বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেল। স্থানীয় বেকার যুবকদের পকেটেও কিছু পয়সা এল।
  • achintyarup | 69.93.244.107 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ০৪:৫৩579194
  • ঢালু বেয়ে আস্তে আস্তে নেমে যাই বিচে। সমুদ্রের দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকি খানিক, আস্তে আস্তে জলের কাছাকাছি চলে যাই। মেঘলা ছিল না সূর্য ডুবে গিয়েছিল ততক্ষণে সে মনে নেই, তবে আলো ছিল যথেষ্টই। পিছনে উঁচু পাড় টানা চলে গেছে ডাইনে, বাঁয়ে। পাড় ধরে ঘন ঝাউব্ন। বেড়াতে আসা লোক গুটিকয় দেখা যায় এদিক-ওদিক। গাঁয়ের লোক একটা দুটো। আমি ঝিনুকের খোঁজে বালির দিকে মন দিই।

    ছোটবেলা থেকেই জানি সমুদ্রের পাড়ে গেলে ঝিনুক কুড়োতে হয়। আমাদের বাড়িতে ছিল ছোট ছোট ঝিনুক। কয়েকটা সাদা, কয়েকটার গায়ে রং-বেরঙের নকশা। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকত। পুরী থেকে কুড়িয়ে এনেছিল মা। আমি কুড়োইনি। আমার তখন কুল্লে বছর দেড় বয়স ছিল। আবছায়া স্মৃতি ছিল পুরীর। তার কিছু নিশ্চয়ই ছবি দেখা, আর কিছু গল্প শোনা। তবে একটা বাড়িতে ছিলাম যেখানে ঘরের রং হলদে আর দুটো ঘরের মাঝের দরজার ওপরটা আর্চের মত, কিম্বা একটা দোকানে বসেছিলাম, যার মাটির দেওয়াল আর ছোট্ট ফোকরের মত জানালায় গরাদের বদলে কঞ্চি পুঁতে রাখা -- এসব নিশ্চয়ই কেউ গল্প করে শোনায়নি। এইগুলো সব মনের গায়ে লেগে রয়েছে। কিন্তু ঝিনুক কুড়োনোর কোনও স্মৃতি নেই।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:২৯579195
  • শরৎ আকাশে সাদা সাদা মেঘের সারি---এক একটা এক এক রকমের শেপ---সাইজ ----ভারি ভাল লাগে----কল্পনার ছড়াছড়ি থাকে ঝকঝকে নীল আকাশে সেই মেঘের আল্পনায়----

    চিন্টুবাবু এই লেখাটার মতন ।
  • achintyarup | 69.93.240.56 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৬:০৪579197
  • কী হবে এগুলো দিয়ে?

    বালি থেকে চোখ তুলে তাকাই। প্রশ্নটা এসেছে ডানদিক থেকে। কোথাকার গাঁইয়া রে বাবা, সমুদ্রের পাড়ে ঝিনুক কুড়োতে হয় তাও জানে না দেখছি। আবার তাই দিয়ে কী হবে জিগ্যেস করছে। দু খানা ছেলে। গাঁইয়াই হবে। বেশভূষা দেখে তো সেরকমই মনে হয়। জন্ম গেঁয়ো আমি, গ্রামের লোক চিনতে আমার ভুল হয় না।

    হেসে জবাব দিই, এমনিই কুড়োচ্ছি।

    কী করবে কুড়িয়ে?

    বোঝো কাণ্ড। ঝিনুক কুড়িয়ে কী করব আমিই কি তা জানি ছাই? বলি, এমনিই... রেখে দেব। ভারি মজা পায় ছেলেদুটো। রেখে দেওয়ার জন্য কেউ ঝিনুকের মত অকিঞ্চিৎকর জিনিসও কুড়িয়ে পকেট বোঝাই করে?

    আমারই কাছাকাছি বয়েস হবে দুজনের। চেহারা বা পোষাকের বর্ণনা এতদিন পর আর দিতে বোলো না। সে সব আমার মনে নেই। নামও মনে নেই, সে তো আগেই বলে দিয়েছি। ধরে নাও মানিক আর রতন হবে।

    জিগ্যেস করি, তোমরাও কি বেড়াতে এসেছ? নাকি এখানেই বাড়ি? হেসে গড়িয়ে পড়ে দুজনে। বাড়ির কি কোনও ঠিক আছে? যখন যেখানে থাকি সেটাই বাড়ি। কিন্তু দেশ তো একটা আছে? তা আছে। কাকদ্বীপে। বেড়াতে আসেনি ওরা। কার্যব্যপদেশেই এখন শঙ্করপুরের মৎস্য বন্দরে। মাছ ধরে মানিক আর রতন। ট্রলারে করে চলে যায় গভীর সমুদ্রে, তিন, চার, ছয় হপ্তার জন্য। তারপর ফিরে আসে মাছ নিয়ে। কখনও কখনও আবার মাছ তেমন হয়ও না। যখন যেমন। তাই বলে ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। কদিন আগেই ফিরেছে সাগর থেকে। আবার যাবে।

    এখান থেকেই যাবে? কবে যাবে? আমাকেও নিয়ে যাবে তোমাদের ট্রলারে? ছোটবেলা থেকে সমুদ্রযাত্রার যত গল্প-কবিতা পড়েছি, যত ছবি দেখেছি, সব একসঙ্গে ভেসে ওঠে চোখের সামনে। এতদিনে সমুদ্র অভিযানের সুযোগ এল তাহলে। ভয় করলে কি হবে, অ্যাডভেঞ্চারের টানটাও তো কম জোরালো নয়।

    না বাবু, নতুন লোকেদের ট্রলারে নেওয়ার অনেক হ্যাপা। এক কথায় নাকচ হয়ে যায় আর্জি। আমার করুণ মুখ দেখে বোধ হয় মায়া হয় রতনের। বলে হ্যাঁ গো, সবাই পারে না। ঢেউয়ে যখন ধাক্কা মারতে থাকে, ট্রলার উথাল-পাথাল হয়, রক্তবমি পর্যন্ত করতে থাকে লোকে, নিজের চক্ষে দেখা।
  • sosen | 125.241.117.46 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১১:৫২579198
  • তাপ্পর?
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১২:০২579199
  • আমি আর অচিন্ত্যাদার লেখা পর্ব না এ আমার পতিজ্ঞা , কারণ উনি লেখা শুরু করেন শেষ করেন না , আর আমার পেট গুরগুর কান কতকট মন ছটফট করে :(
  • ladnohc | 116.218.118.122 | ২৬ মে ২০১৩ ১৬:০২579200
  • এটাও শেষ হল না।
  • sosen | 59.136.171.156 | ২৬ মে ২০১৩ ২১:৪৪579201
  • অ চিন্টুবাবু! শ্যাষ কর্বেন্না?
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:০৬579202
  • আমিও তো তাই বলি!
    অচিন্ত্য ও অচিন্ত্য, শুনছেন? কোথায় গেলেন মাঝপথে দাঁড় করিয়ে রেখে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন