এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রাকৃভ | 125.187.32.72 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৯:৩১573266
  • বাংলা ভাষার সব প্রচলিত বাক্যবিন্যাসকে তছনছ করে, যে অনবদ্য সাহিত্য সম্ভার সৃষ্টি করেছেন মুজতবা সাহেব, তার তুলনা আজও অমিল!

    আমি, আজও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ঠিকঠাক বাংলা যদি লিখতে হয়, তবে বেশ কয়েকবার মুজতবা সাহিত্যকে ভাল করে পড়া উচিত!

    আরবি, ফারসি, সংস্কৃতর ফোড়ন দেওয়া এমন উমদা বাংলা আর কেউ লিখেছেন বলে, এই মূর্খ প্রতিবেদকের জানা নেই! তাঁর ভাষা সাহিত্য নিয়ে যে গভীর ভাবে আলোচনা করা উচিত ছিল, সেটা হয় নি!!!!!!!

    আদ্যপান্ত নাস্তিক এই মহান লেখক নিজে ছিলেন, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

    “ তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রের” ডক্টরেট!

    তিনি নিজেকে বাঙালী বলেই পরিচয় দিতেই গর্ব বোধ করতেন!!!!

    দুর্ভাগ্য!! তাঁর চেহারা দেখে, তখনকার অনেক তা বড় তা বড় বিখ্যাত বাঙালী ওনার মুখের ওপর বলেছিলেন- আপনাকে দেখে তো মনে হয় না!!!!!!!!! আপনি লেড়ে!!!!!!!!

    বুঝুন!! আজও যখন শুনি- ও তো মুসলমান, বাঙালী নাকি? তখন মনে হয়, পশ্চাৎদেশে কয়েকটা পদাঘাত করি!

    যে বাংলা ভাষা কে ভালোবেসে পাকিস্তান দুভাগ হলো, তার মূল্য এপারের বাঙালী কবে যে বুঝবে?

    আরও দুর্ভাগ্য!!!!! ভারত সরকার মনে করত তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের চর আর পূর্ব পাকিস্তান সরকার মনে করত, ঠিক উল্টোটা!!!!!!

    সবার ওপরে লেড়ে বলে একটা তাচ্ছিল্য তো ছিলই! সাহিত্যিক বলে অনেকেই তাঁকে মানতে চাননি!

    তাই, “ও ঘাটে যেও না বেউলো” রচনাতে ঘুরিয়ে লিখেছিলেন:- ‘আমি লিখি কেন? সোজা কথায় আমার লেখা জিনিয়াসরা পড়ে বলে! অর্থাৎ আপনারা! আপনারা লিখলে আমার ভাত মারা যাবে।’

    যাঁরা রম্যরচনা লেখেন, তাঁদের একটা গুণ থাকা দরকার! নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা করার ক্ষমতা! যেটি অনেকেরই থাকে না!!!! মুজতবা সাহেবের সেই গুণটি ছিল! ৭ টা ভাষা ছেঁচে তিনি যে জ্ঞান আহরণ করেছিলেন, তা হাসিচ্ছলে পাঠকদের অনায়াসে উপহার দিয়ে আমাদের বোহোত উবগার করেছিলেন! তখনই বুঝতে পেরেছিলাম-লেখক, পাঠকের মাষ্টর নয়! ফিরেণ্ড!

    আম্মো লেড়ে- এই কথাটা যে কতবার কতজায়গায় বলেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই!

    তাঁকে একবার এক জার্মান পণ্ডিত ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করেছিলেন:- শেক্সপীয়রের কোন লেখাটা আপনার ভালো লাগে?

    ঝটিতি উত্তর দিয়েছিলেন:- হ্যামলেট!

    তারপর একটু চুপ করে থেকে বলেছিলেন:- ঐ একটা বই- ই পড়েছি কিনা!!!!!!!

    ঢাকার কুট্টি সমাজকে সাহিত্যে এনেছিলেন- এই মুজতবা সাহেব!!!!!!

    কুট্টিদের রসিকতা প্রায় কিম্বদন্তী পর্যায়ে!!!!! সেটা মুজতবা সাহেব এমন

    উচ্চঙ্গে নিয়ে গেছেন যে, কহতব্য নয়! হাজির জবাব বা Repartee এদের

    সহজাত ক্ষমতার মধ্যেই পড়ত!

    “ঘোড়ায় হাসবো”, “আহা পড়সেন দেহি, ব্যাথাও পাইসেন, কিন্তু লামসেন

    খুব তাড়াতাড়ী”, “ছাত দিয়া পানি পড়ব নাকি শরবত পড়বো?”

    এই জাতীয় হাজির জবাব, মুজতবা সাহেব না থাকলে সাহিত্য

    জানতোই পারতো না ,কি অফুরন্ত রসিকতা বুদবুদিয়ে উঠিয়ে দেয় মনের

    মপ্রখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জনাব সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাবলীর (৩য় খণ্ড) ভূমিকাতে যা লিখেছেন, সেটা হুবাহু তুলে ধরলাম:-

    “আমাদের ছেলেবেলা থেকেই এরকম ধারণা ছিল যে গুরু-চণ্ডালি মেশামেশি হলে সেটা একটা খুব দোষের ব্যাপার। ভাষাকে শুদ্ধ রাখার জন্য বঙ্কিমের আমল থেকেই এরকম একটা শমন জারী হয়েছিল।

    আসলে কোনটা যে গুরু ভাষা আর কোনটা যে চণ্ডালী ভাষা সে সম্পর্কে স্পষ্ট আলাদা কোনো সীমারেখা কেউ টানতে পারেনি এ পর্যন্ত। এককালে সাধু ক্রিয়াপদ এবং চলতি ক্রিয়াপদের একটা ব্যবধান ছিল। এখন সাধু ক্রিয়াপদ প্রায় লুপ্তই বলা যায়- অন্তত সাহিত্যে।আবার রবীন্দ্রনাথ যখন তাঁর অত্যন্ত পরিশীলিত নায়ক নায়িকার মুখে করিনে, পারিনে, যাইনে, কিংবা বললেম, করলেম, গেলেম-এইরকম ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেছেন, তখন আমরা খেয়াল করিনি, ওগুলো আসলে বীরভূমের গ্রাম্যভাষা থেকে নেওয়া।

    এখন আমরা জেনেছি, ভাষা বহতা নদীর মত। যদি তার স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তা হলে যেখান থেকে যাই-ই সংগ্রহ করুক, কিছুতেই তার অঙ্গে মলিনতার স্পর্শ লাগে না।

    এই ব্যাপারটি আমাদের সবচেয়ে স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। এই দিক থেকে তিনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীর সার্থক উত্তরাধিকারী। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষাশিল্প সম্পর্কে গভীর আলোচনা হওয়া উচিত। আমার চেয়ে যোগ্যতর ব্যক্তিদের ওপর সে ভার রইলো।

    এক সময় ঠাট্টা করে বলা হতো, যে লেখা পড়লে কিছুই মানে বোঝা যায় না, তারই নাম আধুনিক কবিতা। সেই রকমই এক সময় এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, যখন, যে লেখা পড়তেই ইচ্ছে করে না, তারই নাম ছিল প্রবন্ধ। সৈয়দ মুজতবা আলীই প্রবন্ধকে সেই অকাল মৃত্যুদশা থেকে বাঁচিয়েছেন। তিনি অন্তত একশোটি বিষয়বস্তু সম্পর্কে, অন্তত সাতটি ভাষা সেঁচে যে জ্ঞান আহরণ করেছিলেন, তাই বিতরণ করেছেন তাঁর রচনায়। এগুলো প্রবন্ধ ছাড়া আর কি? তাঁর অনেক বক্তব্য সম্পর্কে মতান্তর আছে, তাতে কি আসে যায়? কোন প্রাবন্ধিক অমোঘ বাক্য উচ্চারণ করতে পারেন? তাঁর রচনার পর থেকেই তথাকথিত প্রাবন্ধিকদের দুর্বোধ্য, কষ্টকল্পিত বাক্যের রচনা পাঠকরা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। যথার্থ পণ্ডিতেরাও এখন আস্তে আস্তে বুঝতে পারছেন, শুধু নিজের বিষয়ের ওপর দখল থাকাই বড় কথা নয়, সাবলীল ভাষায় তা প্রকাশ করতে না জানলে লেখক হওয়া যায় না। বিচারপতির মতন একটা উঁচু জায়গায় বসে থাকবেন লেখক, আর সেখান থেকে পাঠকদের উদ্দেশে জ্ঞান বা উপদেশ দান করবেন, সাহিত্যের এই ভূমিকা আর নেই। সারা পৃথিবীতেই পাঠকরা আর সাহিত্যিককে গুরু হিসেবে দেখতে চায় না, বন্ধু হিসেবে চায়।……….”
  • রাকৃভ | 125.187.32.72 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৯:৩২573267
  • উনি আড্ডায়, গল্পে যা যা বলেছেন, তার সিকিভাগও লেখেন নি। লেখার ব্যাপারে বড্ড কুঁড়ে ছিলেন। এর ফলে বাংলা সাহিত্যের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা আর বলবার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃত আড্ডা সাহিত্য বলতে যা বোঝায়, সেটা ওনার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে এসেছে।

    রবীন্দ্রনাথের অসম্ভব ভক্ত এই সাহিত্যিক, গুরুদেব বলতে অজ্ঞান ছিলেন। পান করতেন আর পানও অসম্ভব খেতেন।

    রসগোল্লা আর কিয়ান্তির গল্পটা উনি যে ভাবে বলেছিলেন, পরে ঠিক সেই ভাবেই লিখেছেন।

    চাচা কাহিনীর গোলাম মৌলা, যে উনি নিজে, সেটা উনি পরে বলেছেন।

    শুধু, কালী স্ত্রোত্র কেন, পুরো চণ্ডী ওনার মুখস্থ ছিল। এছাড়াও সংস্কৃত তে অনর্গল কথা বলা, তার কাছে ছিল জলভাত। তেমনই বলতেন- জার্মান, ফ্রেঞ্চ!

    ইংরাজীতে অসম্ভব দক্ষতা থাকলেও, পারতপক্ষে দরকার ছাড়া বলতেন না। মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন ওদের। তার প্রমাণ, হাসির ছলে, তিনি তাঁর লেখাতেই দিয়েছেন বহুবার!

    দোষে গুণে মানুষ! মুজতবা সাহেবও তাই ছিলেন! তাঁর প্রধান দোষ ছিল- আলস্য! এই আলস্যের জন্য প্রচুর লেখা তিনি লেখেন নি! আড্ডাতে যা বলেছেন, তার সিকিভাগও তিনি লিখে রেখে যান নি!

    তবে, যেটুকু তিনি লিখে রেখে গেছেন, তাতে আমার মত আরও গোলা পাঠকের; জ্ঞানের পরিধি অনেক খানি বিস্তৃত করে গেছেন! আমরা যারা বাস করি- ব্যবহার আর প্রয়োজনের পৃথিবীতে, সেখানে মুজতবা সাহেব বাস করতেন জ্ঞানের ক্রমবর্দ্ধমান ঐশ্বর্যের মধ্যে। কিন্তু, তাঁর লেখা পড়ে আমরা কোনো দিনও ভাবার অবকাশ পাই নি, তিনি আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন। প্রতিদিনের জীবনের লঘু এবং গুরু এ দুটিকেই তিনি কৌতুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে- আমাদের ক্রমাগত ঋদ্ধ করে গেছেন।

    পাঠকের বুদ্ধিকে দীপিত করা আর আবেগকে পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন তিনি!!!!! এটা সহজ কাজ নয়! ইদানীর একটা রেওয়াজ উঠেছে- Post Modernism । এই শব্দটাকে যদি ভালো করে বুঝতে হয় তবে, সৈয়দ মুজতবা আলি আত্মস্থ করলে বোঝা যাবে, আমরা Post Modernism এর নামে যে সব প্রলাপ লিখি তা বিলকুল বকওয়াজ!

    লেখার সময় আমরা ভুলে যাই, আমরা যা জানি, তা প্রতিদিনের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর সেই সত্যটাকে মানতে পারি না বলে, অনর্থক একটা ঝগড়া তৈরী হয় নিজের মধ্যে।

    সৈয়দ মুজতবা আলি এক জায়গায় লিখেছিলেন- তিনি চাকরী পেলে লেখেন না! চাকরী না থাকলে লেখেন। এই চাকরী তিনি বারবার কেন খুইয়েছেন,সেটাও খুব সহজ! কয়েক ডজন গণ্ডমূর্খের সঙ্গে তিনি চাকরী করতে পারতেন না! আর অবধারিত ভাবে তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই হতেন সেই ছাগল! স্বাভাবিক ভদ্রতাবশে তিনি ঝগড়া না করে, চাকরীই ছেড়ে দিতেন!

    ভাগ্যিস ছাড়তেন! ফলে, তাঁর অনবদ্য রচনা আমরা পেয়েছি! তাঁর দরকার ছিল পয়সা আর আমরা সেই পয়সার ষোলো আনা উসুল করতে না পারলেও, কিছুটাতো পেরেছি!

    এই চাকরী ধরা আর ছাড়া নিয়ে একটা গল্পের কথা মনে পড়ল!!!!!

    দরখাস্ত নামে একটা রচনায় তিনি লিখছেন:-

    -একবার ফ্রান্সে ঢোকবার ফর্মে লেখা ছিল- তোমার জীবিকা নির্বাহের উপায় কি?

    উত্তরে লিখেছিলুম- কিছুদিন অন্তর অন্তর চাকরী রিজাইন দেওয়া!

    তা হলে চলে কি করে?

    তুমি রেজিগনেশন গুলো দেখছ সাহেব, আমি চাকরীগুলো দেখছি!

    এটা তিনি লিখেছিলেন! আর এটা সত্যি ঘটনা! পরে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি বলেছিলেন:-

    এক চাকরী প্রার্থিনীর সঙ্গে নিয়োগকর্তার কথা হচ্ছিল:-

    - তুমি কি অবিবাহিত?

    - তিনবার!

    এটা বিখ্যাত সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামীও লিখেছিলেন।

    এবার মুজতবা সাহেব, তাঁর নিজের জবানীতে কি বলেছেন- দেখা যাক!!!!!

    “পেটের দায়ে লিখছি মশাই, পেটের দায়ে! বাংলা কথা, স্বেচ্ছায় না লেখার কারণ-

    আমার লিখতে ভালো লাগে না। আমি লিখে আনন্দ পাই নে।Ø

    এমন কোনো গভীর, গূঢ় সত্য জানি নে যা না বললে বঙ্গভূমি কোনো এক মহাবৈভব থেকে বঞ্চিত হবেন।Ø

    আমি সোসাল রিফর্মার বা প্রফেট নই যে দেশের উন্নতির জন্য বই লিখব।Ø

    খ্যাতিতে আমার লোভ নেই। যেটুকু হয়েছে, সেইটেই প্রাণ অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নাহক্ লোকে চিঠি লিখে জানতে চায়, আমি বিয়ে করেছি কিনা, করে থাকলে সেটা প্রেমে পড়ে না কোল্ড ব্লাডেড, যে রকম কোল্ড ব্লাডেড খুন হয়- অর্থাৎ আত্মীয়- স্বজন ঠিক করে দিয়েছিলেন কিনা?-শবনমের সঙ্গে আবার দেখা হলো কিনা, “চাচা”টি কে, আমি আমার বৌকে ডরাই কিনা- ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং কেউ কেউ আসেন আমাকে দেখতে। এখানকার বাঘ সিঙ্গি নন্দলাল, সুধীরঞ্জনকে দেখার পর আমার মত খাটাশ্ টাকেও একনজর দেখে নিতে চান! কারণ কোলকাতার ফেরার ট্রেন সেই বিকেল পাঁচটায়; ইতিমধ্যে আর কি করা যায়। এবং এসে রীতিমত হতাশ হন। ভেবেছিলেন দেখবেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মত সৌম্যদর্শন নাতিবৃদ্ধ এক ভদ্রজন লীলাকমল হাতে নিয়ে সুদূর মেঘের পানে তাকিয়ে আছেন; দেখেন বাঁধিপোতার গামছা পরা, উত্তমার্ধ অনাবৃত, বক্ষে ভাল্লুকের মত লোম, মাথাজোড়া টাক- ঘনকৃষ্ণ ছ্যাবড়া ছ্যাবড়া রঙ, সাতদিন খেউরি হয় নি বলে মুখটি কদমফুল, হাতলভাঙ্গা পেয়ালায় করে চা খাচ্ছে আর বিড়ি ফুঁকছে!!!!!!”Ø

    যাঁরা তাঁকে সচক্ষে দেখেন নি, তাঁদের অনুরোধ করছি নেটে ওনার সব বয়সের ছবি দেখে নিতে।

    তিনি সুন্দর দেখতে ছিলেন বলে, তাঁর ডাকনাম ছিল- সিতারা,সংক্ষেপে সিতু।

    ১৯০৪ সালের ১৩ ই সেপ্টেম্বর মতান্তরে ১৪ সেপ্টেম্বর তখনকার সিলেট জেলার অন্তর্গত (বর্তমানে ভারতের আসামে) করিমগঞ্জ শহরে সৈয়দ মুজতবা আলী জন্মগ্রহণ করেন।

    ১৯১৯ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে এলে সৈয়দ মুজতবা আলী কবির বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন এবং তার ভক্ত হয়ে যান। সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলেন এবং এ জন্য তিনি ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ওই বছরই তিনি বাংলায় লেটারসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। আলীগড়ে আইএ অধ্যয়নকালে তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা বিভাগে চাকরি নিয়ে কাবুল গমন করেন। অত:পর ১৯২৯ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জার্মানিতে গমন করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী আনন্দবাজার পত্রিকায় কিছু দিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং দেশ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন। ১৯৪৮ সালে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আলোচনা সভায় পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উর্দু ভাষার সপক্ষ শক্তির হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলী বগুড়া আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে আসেন এবং কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মালানা আবুল কালাম আজাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইন্ডিয়ান ‘কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স’-এর সচিব পদে নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-এর স্টেশন ডাইরেক্টর পদে কিছু দিন চাকরি করেন এবং সেই চাকরিতেও ইস্তফা দেন ১৯৫৬ সালে। অত:পর তিনি বিশ্বভারতীতে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। (ড. মাহফুজুর রহমান, নানা প্রসঙ্গ নানা ভাবনা, পৃ. ১৮-২৯)। এবার ওনার খাদ্যপ্রেমের কথা না বললেই নয়।

    সেকালের খাদ্যপ্রেমী বামুনরা পেট ভরেছে কিনা- সেটা জানার জন্য, পৈতেতে একটা চাবি বেঁধে রাখতেন।

    এক নৈয়ায়িক, বামুনদের এক প্রতিভূকে জিজ্ঞেস করেছিলেন:- আপনার ঈদৃশ কার্যের কারণ কি? উপবীতের সহিত কুঞ্চিকাঠির যোগ কোথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন?

    বামুন:- মান্যবর! খাদ্যগ্রহণ কালে মদীয় উদর পূর্ত্তি হইয়াছে কিনা তাহা বোধ করিতে পারি না। এই কারণে, সংকেতের নিমিত্ত এই উপবীতের সহিত কুঞ্চিকাঠির যোগ করিয়াছি।

    নৈয়ায়িক: -সংকেতটি কি প্রকার?

    বামুন:-উদরের সহিত কুঞ্চিকাঠি সমকোণে উত্থিত হইলে, বোধগম্য হইবে যে- মদীয় উদর পূর্ত্তি হইয়াছে।

    (কুঞ্চিকাঠি= চাবি)

    বুঝুন! কি রকম খাদ্যপ্রেম!

    সেই বামুনের আবার এরকমই খাদ্যরসিক যে কহতব্য নয়!‍

    নিয়মমত গায়ত্রী জপ করতে বসেছে!

    প্রথমেই বলল:-

    “ওঁ প্রজাপতি ঋষি, পাতা পেড়ে বসি।

    চিপিটক সহিত রম্ভা চর্বণে বিনিয়োগঃ।।”

    (চিপিটক= চিড়া, রম্ভা = কলা)

    খাদ্যরসিক সৈয়দ মুজতবা আলি আবার এককাঠি ওপর দিয়ে গিয়েছেন!

    অমৃতের সন্ধান, বলতে গিয়ে, সংস্কৃত সাহিত্যের উপমা সহ বলছেন:-

    “কেচিদ বদন্তি অমৃতস্তোসি সুরালয়ে

    কেচিদ বদন্তি অমৃতস্তোসি প্রিয়াস্য অধরে।

    ময়া পঠিতানি নানা শাস্ত্রাণি

    অমৃতস্তোসি জম্বুর নীর পুটিত

    ভর্জিত মৎস খণ্ডে।”

    অস্যার্থ:- কেউ কেউ বলেন- অমৃত আছে সুরালয়ে। ( এখানে, সুরালয়ে- শব্দটার দুটো মানে আছে।সন্ধির খেলা আর কি! প্রথমটা পড়তে হবে- সুর+ আলয়= দেবতার মন্দির। দ্বিতীয়টা- সুরা+ আলয়= ভাঁটিখানা) আবার কেউ কেউ বলেন- অমৃত আছে, প্রিয়ার অধরে মানে চুম্বনে। অনেক শাস্ত্র পড়েছি- কিন্তু অমৃত আছে লেবুর রস দেওয়া ভাজা মাছের মধ্যে। এবার মুজতবা সাহেবের সংযোজন:-

    “অহো! চুম্বনের সাথে- ভাজা মাছ! কি অপূর্ব মেলবন্ধন! এটা নিশ্চয়ই কোনো বাঙালী পণ্ডিতের লেখা! না হলে মাছের এই তুলনা আর কোন পণ্ডিত করতে পারতো না।”

    এবার সেই কুট্টিদের কথা বলি, যাদের মুজতবা সাহেব অজ- অমর করে রেখে গেছেন তাঁর আড্ডা সাহিত্যে। মুজতবা সাহেবের লেখা থেকে জানতে পারি, এরা ছিল, মূলত মোগলবাহিনীর ঘোড়সওয়ার সৈনিক । এরা খুব ভালো ঘোড়ার রক্ষনাবেক্ষণ জানত। মোগলবাহিনীর কঠোর নিয়মের জন্যই হোক বা যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়েই হোক, এরা মোগলবাহিনীর থেকে ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে পূর্ববাংলার গ্রামের ভেতর লুকিয়ে পড়ে।বাহিনীতে থাকা কালীন এরা কুঠিতে থাকত বলে, চলিত ভাষায় এরা কুট্টি হয়ে যায়!

    বাংলার মেয়েদের বিয়ে করার সুবাদে, এদের বংশধরদের বাংলার সহজাত রসিকতা জিনের মধ্যে ঢুকে যায়! বাবাদের তরফ থেকে পায় সহিস গিরির তালিম। সৈনিক হবার সুবাদে এদের বিশ্বাসযোগ্যতা ছিল সন্দেহাতীত!!! রায়টের সময় বা অন্য কোনো বিপদে মেয়েদের অভিভাবকেরা এদের গাড়ীতে স্কুলে- কলেজে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতেন!!!!!

    বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসা বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি- এরা এখন রিক্সা চালায় ঢাকা শহরে। কিন্তু সেই হাজির –জবাব এখনও অক্ষুন্ন!

    মুজতবা সাহেবের লেখা কুট্টিদের গল্পে পরে আসছি, তার আগে – কুট্টি রিক্সাচালকদের কিছু ঘটনা লিখি!!!!!! সাম্প্রতিক উদাহরণ দেবার কারণ, মুজতবা সাহেবের লেখাতে এদের কথা না থাকলে, এইসব ঘটনা আমাদের কাছে পৌঁছত না!

    নমুনা -১

    o ও মিঁয়া!!!! রমনা যাইতানি?

    o যাইতাম!

    o কত নিতা?

    o ২৫ ট্যাহা!

    o কও কি! ১৫ ট্যাহায় অইবো না?

    o খুব হইত! খাড়ান! রশ্শি বাহির করি! পেছনের চাকার লগে আপনারে বাঁইধ্যা লই!!!!

    নমুনা -২

    সেদিন কুট্টি তার রিক্সা তে এক কলকাত্তাইয়া বাবুকে উঠিয়েছে! বাবু তাকে বলেছেন- চলুন ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাব! কুট্টি রিক্সা এককথায় রাজী!‍ এরপর:-

    কি হলো ভাই? তোমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখি আর আসছেই না!!! এক ঘন্টা হয়ে গেল যে! চেনো তো?

    খুব চিনি! চিনুম না ক্যা? তয়, মনে একটা ধন্দ জাগসে!!!!!!! খাড়ান, ওই ঢাকাইয়া বাবুরে জিগাইয়া লই! ( জিজ্ঞেস করার পর:-)

    ওই দ্যাহেন, এহনে বুজসি! আপনে ইনিভাসাটি যাইবেন?

    ঠিকই তো!

    তয়, তহন থিক্যা ইংরাজীতে বিশবিদালয় কন ক্যা?

    নমুনা -৩

    ঢাকায় প্রচণ্ড গরম। কুট্টি তার রিক্সা চালাতে পারছে না! বিকেলে রাস্তার ধারে কিছু আম আর কয়েকটা গোটা মুরগী নিয়ে বিক্রী করছে!!!

    আমার বন্ধুটি, আমার মতই ছয় ফুটিয়া! তা তিনি জিজ্ঞেস করলেন:- ও মিঁয়া! আম কত করে?

    ৫০ ট্যাহা হালি! ( ৪ টে)Ø

    বল কি হে! ওই ছোট ছোটো আম ৫০ টাকায় ৪ টে??????????Ø

    কত্তা! আপনে হইলেন গিয়া আমাগো দ্যাশের মেহমান! আপনারে ঠকাইলে দোজখেও ঢুকতে দিব না! আমার আমগুলান ছুডু না! আপনে দোতালার থন দ্যাকসেন তোওও! হের লাইগ্যা আমগুলান ছুডু লাগে আপনার কাসে! বোজ্জেন নি!!!!Ø

    তা! মুরগী কত করে?Ø

    দেড়শ দিয়েন!Ø

    ওই মর মর মুরগী দেড়শ টাকা পিস!!!!!!!!!Ø

    কন কি কত্তা! মুরগী গুলা এক্কেরে জান্ত! ফরফরাইতেসে! তয়, কাল রাত ভর যাত্রা দেখসে! হের লাইগ্যা অহন ঘুমায়!Ø

    এবার খোদ মুজতবা সাহেবের ইষ্টক থেকে কিছু নমুনা দিচ্ছি: -

    নমুনা-১

    এই কুট্টি ঘোড়ার গাড়ী কিছুদিন বন্ধ রেখেছে। গরমকাল, তাই হাতপাখা বিক্রি

    করছে বাজারে।

    কত্তা! লইয়া যান! সস্তায় ছাড়তাসি! মাত্র এক পয়সায় একটা পাখা! এক আনায় ( ৪ পয়সা) ৫ টা দিমু হনে! পঞ্চাশ বসর হাওয়া খাইবেন! একটুও টসকাইবো না!

    একজন দু আনার পাখা কিনলেন। বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে একবার করে হাওয়া খাচ্ছেন আর পাখা তৎক্ষণাৎ ভেঙ্গে যাচ্ছে। করে, করে….. সব পাখা লোটিয়া গোল!

    পরের দিন আগুনের গোলা হয়ে কুট্টিকে বাজারে ধরলেন।

    ওই হালা! কেমন পাখা দিসস? আ্যাঁ? কইলি:- পঞ্চাশ বসর হাওয়া খাইবেন! একটুও টসকাইবো না! একবার কইরা লাড়ি আর পাখা ভাইঙ্গা যায় গিয়া!

    কত্তা! পাখা তো ভাঙ্গনের লয়! আপনে হাওয়া খাইসিলেন কেমনে?

    ক্যান? পাখাডারে যেমনে লাড়াইতে হয়, তেমনি কইরা!

    ওই তো ভুল করসেন কত্তা! এক পয়সার পাখাআআআআ! লাড়াইয়া হাওয়া খাইতে হয়?

    তইলে কেমনে হাওয়া খামু, তুইই কইয়া দে!

    পাখাডারে মুহের সামনে ধরবেন আর মাত্থাডারে জোরে জোরে হিলাইবেন! বোজ্জেন নি?

    নমুনা-২

    এক দম্পতি বাজারে গেছেন ডিম কিনতে! কুট্টির বউ ডিম বিক্রি করছে!

    হুনছি নি! তোমার ডিম কত কইরা?

    ডিম আমার লয়, ছাহেব! মুরগীর!

    বুঝসি! তা কত কইরা দিলা।

    এক আনা হালি! ( ৪টে)

    কও কি!!! ওই পায়রার ডিমের মত ছুড্ডু ছাইজের ডিম , এক আনা হালি!!!!!!!!!!!!!

    ডিম ছুড্ডু! হঃ! ঠিহিই কইছেন! তয়! যে পাড়ে, সে শ্যান বোঝে!

    তারপর ভদ্রলোকের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে:- কি কন, মা ঠাহরাণ?????????

    মুজতবা সাহেব- রায়পিথৌরা আর সত্যপীর ছদ্মনামেও লিখেছেন। রায়পিথৌরার লেখা থেকে একটি ছোট্টো গল্প:-

    “………………………………..

    সেদিন এক অবাঙালী পিথৌরাকে ধাঁতিয়ে গেলেন। পিথৌরা নাকি বড্ড “বাঙালী”, “বাঙালী” বলে চ্যাঁচাচ্ছে।

    আরে বাপু, রায়পিথৌরা কে এমন কেষ্টু- বিষ্টু যে তার চিৎকারে কারো কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হবে?

    একটা গল্প মনে পড়ল।

    পূর্ব বাঙলার গহনা নৌকো ঘাটে ভিড়তেই ভাড়াটেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে সব জায়গা দখল করে নিল। একটা চাষা ধরণের লোক কিছুতেই ঢুকতে না পেরে ছইয়ের বাইরে সেই হিমে বসে রইল।

    জায়গা দখলপর্ব শেষ হতে ভিতরে আলাপচারি আরম্ভ হয়েছে।

    ‘আপনার নাম?’

    ‘আজ্ঞে, তারাপদ হালদার। আপনার?’

    ‘আজ্ঞে, কেষ্টবিহারী পাল’

    তৃতীয় ব্যক্তিকে, ‘আর আপনার?’

    ‘আজ্ঞে, শশধরচন্দ্র গুণ।’

    করে করে নৌকোর ভিতরকার সকলের চেনাশোনা শেষ হল। তখন এক মুরুব্বি বাইরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ তোমার নামটা তো জানা হল না, বাবাজীবন।’

    লোকটি অতিশয় সবিনয়ে বললে, ‘ আজ্ঞে, আমার নাম, –পাঁচকড়ি বৈঠা’

    ‘বৈঠা!! এ আবার কি বিদঘুটে পদবীরে বাবা! বাপের জন্মে শুনিনি।’

    লোকটি আবার বৈষ্ণবতর বিনয়ে বলল, ‘আজ্ঞে, আপনারা ,- হালদার, পাল, গুণ সব নৌকোর ভিতরে বসে আছেন। নৌকো চালাবে কে? তাই আমি বৈঠা, একা একাই নৌকো চালাচ্ছি।’

    বাঙালী কেষ্টু-বিষ্টুরা নৌকোর ভিতর বসে আপন ধান্দায় মশগুল। তাই রায়পিথৌরা বৈঠা হরবকৎ চেল্লাচেল্লি করে।”

    আরও কয়েকটা কথা, মুজতবা সাহেব সম্বন্ধে বলি!!!!! একবার শ্রী সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত গেছিলেন মুজতবা সাহেবের সাক্ষাৎকার নিতে!

    ঠকঠক!

    কে কেএএএএ???

    স্যার আমি!

    আরে আমি তো সবাই! নাম কি?

    আজ্ঞে- সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত!!!!!

    ধড়াম করে দরজা খুলল!

    নাম তো শুনলাম! বাড়ী কোথায়?

    আজ্ঞে- উত্তরবঙ্গে!

    মানে বারিন্দির?

    না! মানে হ্যাঁ!

    ধড়াম করে দরজা মুখের ওপর বন্ধ করে দিলেন মুজতবা সাহেব!

    সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত হতভম্ব! কি করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না!!!! আবার দরজা ঠকঠক করবেন কিনা বুঝতে পারছেন না!!!!!

    একটু পরে আবার দরজা খুলল! ভেতরে এসো!

    হতভম্ব সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত ভেতরে গেলেন!

    আমাকে একদম ছোঁবে না! ঐ দূরে একটা চেয়ার দেখছ, ওইখানে বসে যা বলার বল!

    তারপর মুচকি হেসে বললেন:- একে বদ্যি, তায় ডবল পদবী, তার ওপর বারিন্দির! কি প্যাঁচে যে জড়াবো, তার ঠিক নেই!

    ————————————-

    মুজতবা সাহেবের বদলীর অর্ডার এলো কটক রেডিও ষ্টেশন যাওয়ার! তিনি মুখ ব্যাজার করে বললেন:- ১৫ দিন পরে যাব! আর ঐ ১৫ টা দিন আমার নষ্ট হল জীবন থেকে!

    পরে জানা গেল- মাত্র ১৫ দিনে তিনি ওড়িয়া পড়তে, লিখতে আর বলতে শিখে কটক রেডিও ষ্টেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত তিনি ৯ টা ভাষা শিখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯ টা ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন- মুজতবা সাহেব।

    ——————————

    এবারে লীলা মজুমদারের কথা ধার করে বলি:-

    আকাশ যদি কাগজ হত, সমুদ্র যদি কালি হত আর তালগাছ যদি কলম থুড়ি কীবোর্ড হত তাও এই মহান লেখকের কথা শেষ করা যাবে না!

    তিনি বেহেস্তে বা স্বর্গে নেই! তার কারণ, তিনি নিজেই বলে গেছেন:- বেহেস্ত বা স্বর্গের বর্ণণায় কোত্থাও ইলিশের কথা নেই। তাই সেখানে তিনি থাকতেই পারেন না।

    দোজখ বা নরকে, তাঁকে নেবে কোন ঈবলিশের বাচ্চারা????? ( দাঁত কিড়মিড়)

    তিনি যেখানেই থাকুন- সহি সলামত থাকুন! এ বান্দা আপনাকে রোজ সকালে কুর্ণিশ জানায়!
  • bb | 127.216.212.229 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১০:৪৫573268
  • অথচ এই লোকই শবনম নামের প্রেমের উপন্যাস ও লিখেছেন। বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসাবে 'সৈয়দের ব্যাটা" প্রথমদিকে থাকবেন।
  • কল্লোল | 230.226.209.2 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১২:৪৭573269
  • আমি তখন হিজলী আইআইটি ক্যাম্পাসে থাকি। প্রথমবার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর চলে যেতে হয়েছিলো কলকাতা ছেড়ে। থাকতাম মেশো-মাসীর কাছে, ঐ হিজলী আইআইটি ক্যাম্পাসে।
    তখন মার্চ মাস। ফলে ইস্কুলে ভর্তি হতে পারিনি। বাড়িতেই পড়াশোনা ও প্রস্তুতি চলছে যাতে পরীক্ষা দিয়ে ঢুকতে পারি হিজলী হাইস্কুলের ১১ ক্লাশে।
    তখন অখন্ড অবসর সময়। দুপুরে মেশোর বইয়ের আলমারী হাতড়ে পাওয়া গেলো চাচা কাহিনী। পড়লাম ও মরলাম। এছাড়া আর কোন ভাবে চাচা কাহিনী পড়ার অনুভব প্রকাশ করার কথা মনে আসলো না। এর পর ক্যাম্পাসের বাংলা লাইব্রেরী থেকে একের পর এক দেশে বিদেশে, পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকন্ঠী, চতুরঙ্গ, টুনি মেম, জলে ডাঙ্গায়, ধূপছায়া, শবনম, শহরঈয়ার..........................

    দেওয়ানা হতে যতটুকু ছিলো বাকি
    ষোল কলা তার পূর্ণ হয়েছে
    তোমাতেই ডুবে থাকি

    আজ এই আধবুড়ো বয়সে আলি সায়েবের লেখা মনে পড়ে গাইতে থাকি, সেই শুভ্রকেশ সেতারীর সাথে........

    শবি আগর শবি আগর শবি আগর
    আজ লবে ইয়ার
    বসোয়ে তবলম
    জওয়ান শওম
    জসেরোঁ জিন্দগী দুবারা কুনম

    আজি এ নিশীথে আজি এ নিশীথে আজি এ নিশীথে
    প্রিয়া আধরেতে
    চুম্বন যদি পাই
    জোয়ান হই
    এ জীবন আবার দোহরাই
  • ন্যাড়া | 132.178.223.88 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২১:১০573270
  • এটা মুজতবার এক নাতির কাছে শোনা, অল্প সেমসাইড যদিও, তাও বলি -

    মুজতবা বলতেন, "ঘটিদের অতিথি আপ্যায়ণ কীরকম জানিস? চায়ের সঙ্গে একটা বিস্কুট ধরিয়ে দিয়ে বলে 'পুরোটা খেতে হবে কিন্তু'"।
  • u | 69.164.188.63 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ ২১:৩৪573271
  • ঃD
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৩:৪২573272
  • আমার প্রিয় লেখক। কিন্তু এখন সময় নেই, পরে পড়ব।
    টইটার জন্যে ধন্যবাদ।
  • aranya | 154.160.226.53 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৭:০৬573273
  • মুজতবা বড় প্রিয় লেখক, একদম বুকের কাছে বাস করেন।
    অনেক ধন্যবাদ ঘনাদা, আলী সাহেব-কে নিয়ে এমন সুস্বাদু লেখা উপহার দেওয়ার জন্য।
  • কৃশানু | 226.113.128.239 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ ১৪:৫৭573274
  • একটা কস্ন ছিল। একদম ভুলে গেছি তাই জিগেস করছি। কেউ জানলে বলবেন প্লিজ। মনে হয় মুজতবা আলী-র ই একটা গল্পে পড়েছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক জার্মান দম্পতি-র কথা, যারা ইংল্যান্ড এ গুপ্তচর হিসেবে বাস করছিলেন। গল্পটার একটা জায়গায় একটি বক্তব্য রেখেছিলেন জার্মান মহিলা যে ইংরেজ দের আর কি আছে কবিতা ছাড়া? চিত্রকলা নেই, ভাস্কর্য নেই, সঙ্গীত নেই। আর ফ্রান্স এ যা আছে তাতে নতুনত্ব ক্রমশ কমছে। ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি-র ধারক ও বাহক এই সময়ে একমাত্র জার্মানি।
    মুজতবা আলী-র বলছি কারণ আরো কিছু লেখা তে মুজতবা এই মত পোষণ করেছেন- দেশে বিদেশে স্মর্তব্য। কিন্তু গল্পটির নাম ও মনে নেই, কোন বই তে ছিল তাও মনে নেই, এমন কি আদৌ মুজতবা কিনা তাও ভুলে গেছি। কারোর মনে থাকলে একটু আলোকপাত করবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন