এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • madhu | 106.245.10.125 | ০৭ আগস্ট ২০১৩ ১০:২০559245
  • মধু যে কি করে 'অধিক' পান করা যায়, আজ-ও বোধগম্য হল না - তা সে যতই ভাল হ্ক।
  • Siddhartha | 79.29.16.11 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৩:৪৭559246
  • নবদ্বীপ জেলাতেও ইন্দ্র পদবি ধারী বংশ ছিল | অনেক ইন্দ্র পদবি ধারী , কস্মিন কালেও কেউ বাংলাদেশ যাননি , এবং জাতিগত দিক দিয়ে ময়রা | শান্তিপুর থেকে সতেরোশ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে কালী ইন্দ্র কলিকাতা এসে উত্তর কলকতা-র কুমোরটুলি অঞ্চলে নিজ মিষ্টান্ন ভান্ডার খোলেন , এবং কথিত আছে রামকৃষ্ণদেব নাকি মা-এর বাড়ি যাবার সময় কালী ইন্দ্র-র দোকান থেকে বদে কিনতেন | কালী ইন্দ্র-র নাতি মহেন্দ্রনাথ ইন্দ্র-ও মিষ্টি ব্যবসায়ে মন না দিয়ে ডাক্তারি পরে সিভিল সার্জন হন | আর জি কর মেডিকেল কলেজ-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইন্দ্র বাড়ির মেয়ে শান্তি ইন্দ্র , ৪০-এর দশক-এ যখন মেয়েদের ১৫ পেরোনো-র আগে বিয়ে হয়ে যেত ইনি সেই সময়ে বিলেত গেছিলেন ডাক্তারি পড়তে , তিনি ছিলেন মহেন্দ্রনাথ ইন্দ্র-র কনিষ্ঠা কন্যা | এখন-ও সেই বাড়ি আছে, ৫২৩ রবীন্দ্র সরণী |
  • achintyarup | 69.93.242.156 | ১৫ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:২৮559247
  • বাল্যকাল

    ৫ বৎসর বয়সের সময় আমার হাতে খড়ি দিয়া (বিদ্যারম্ভ করাইয়া) আরও ২/১ বৎসর পর পিতা মহাশয় আমাকে স্বগ্রামস্থ বাঙ্গলা পাঠশালায় ভর্ত্তি করিয়া দিলেন। এই ২/১ বৎসর পাতা খাঁড়া লিখা চলিল এবং অধিকাংশ সময়ই মাতুল বাড়ীতে অবস্থান করিতে লাগিলাম। এই সময় এক দুর্ঘটনা ঘটীল। একদা পিতা মহাশয় বর্ষাকালে এক বড় নৌকা সহ মাতুলালয়ে গিয়া উপস্থিত। আমি মাতা ঠাকুরাণীর সহ তথায়ই আছি। পিতা মহাশয়কে দেখিয়া খুব আনন্দ বাড়িয়া উঠিল। নৌকায় বার২ যাতায়াত ও সমবয়স্ক ছেলেদের সহিত দৌড়াদৌড়ি খেলা চলিল। ইতিমধ্যে একদিন দুপুরবেলায় পিতা মহাশয় নৌকার ঘাটেই স্নানার্থ আসিয়াছেন, আমিও সঙ্গে সঙ্গেই আসিয়া নৌকায় উঠিয়াছি। তিনি অন্যমনস্ক হইয়া কাহার সহিত ঘাটপরে উপরিভাগে আলাপ করিতেছিলেন, আমার দিকে কাহারও দৃষ্টি নাই; আমি অল্প জলে কিছু২ সাঁতার দিতে শিখিয়াছি বলিয়া সাঁতরাইবার খুব সাধ, এই ঘাটে সর্ব্বদাই সমবয়স্ক ছেলেদের সহিত সাঁতার খেলিয়া থাকি। এই হেতু একবার নৌকার অগ্রভাগ হইতে পিতা মহাশয়কে সম্বোধন করিয়া "সাঁতার দেই" বলিয়া লম্প প্রদান করিলাম, যেই লম্প দিয়াছি, নীচে এক গর্ত্ত ছিল, তাহাতে যে অধিক জল জানিতাম না, ঘাটাল হইতে নৌকাটা কিছু সরিয়া ছিল, সুতরাং সে স্থানটার জল পরিমাণ পূর্ব্বে জানা ছিল না এবং সাঁতারেও বিশেষ পটুতা জন্মে নাই, ক্রমে জলমগ্ন হইয়া পড়িতে লাগিলাম; সাঁতারিয়া উঠিবার শক্তি হইল না। হাবু ডাবু খাইয়া জল উদরস্থ হইতে লাগিল। পিতা মহাশয় কি নিকটস্থ কেহই এই ঘটনা জানিতে পারেন নাই। আর কিছু কাল এই ভাবে থাকিলে আমার জীবনলীলা এখানেই শেষ হইত, কিন্তু ভগবানের অপার মহিমা!! যদুনাথ নামক আমার এক প্রিয় সখা, আমার খুঁজে২ সেই সময় সেই স্থানে আসিয়া উপস্থিত, সে দূর হইতেই আমার জলমগ্নাবস্থা দেখিয়া চিৎকার করিয়া উর্দ্ধশ্বাসে নৌকার উপর দিয়া দৌড়িয়া আসিল, তখনও আমার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ দেখা যাইতেছিল, সে হস্ত বাড়াইয়া আমার হাত ধরিয়া টানিয়া নৌকায় তুলিল, সকলেই দৌড়াদৌড়ি করিয়া আসিলেন এবং সর্ব্বনাশ ঘটীল বলিয়া হা হতোস্মি করিতে লাগিলেন। নানা কৌশলে উদরস্থ জল কতকটা বাহির করিলে আমি সুস্থ হইলাম এবং সে যাত্রা বাঁচিয়া গেলাম। যতদূর মনে পড়ে ইহা আমার জীবনের প্রথম দুর্ঘটনা। ইহার পর আরও অনেক দুর্ঘটনা আমাকে ভোগিতে হইয়াছে, যথাস্থানে ক্রমে তাহা বলা যাইবে।

    আর একটী বিষয়ে আমি জিবনের প্রথম হইতে এ পর্য্যন্ত যে সুখানুভব করিয়া আসিতেছি এবং যে জন্য সময়২ আমি ভগবানে করুণা স্মরণ করিয়া বিস্মিত হই, তাহারও এই স্থানেই সূত্রপাত হইল। সেই বিষয়টী আমার জীবনপথের আলো, এই আলোক না পাইলে আমার জীবন অন্ধকারময় থাকিত, এতদূর অগ্রসর হইত কিনা সন্দেহ! একথা কেন বলিতেছি-- আমার জীবনে কি আছে? কি মহৎ কার্য্য আমি করিয়াছি? এ নগণ্য জীবন লইয়া কিসের জন্য আমি গৌরব করিতে পারি? গৌরব বা অহঙ্কারের কথা কিছু নহে, নিজের কথা নিজে বলাই বিষম বিপদ, তবে সত্যের অনুরোধে না বলিয়াও উপায় নাই, তাই আমাকে সকল কথাই খুলিয়া বলিতে হইবে। লোকে কি ভাবিবে কি আলোচনা করিবে সে দিকে আমি চাহিব না।

    যে বিষয়টীর অবতারণা করিয়া এত কথা বলিলাম, তাহা আর কিছু নহে, "ভালবাসা"। সাধারণ ভালবাসা নহে, সকলের ভালবাসা নহে, কোন২ নিঃসম্পর্কীত ব্যক্তির বিশেষ ভালবাসা-- হৃদয়ের দৃঢ়তর আকর্ষণ। ভক্তি স্নেহ প্রনয় নানা আকারে এ অন্ধকারময় জীবন পথের বর্ত্তিকা হইয়া তাহা আমাকে এতদূর অগ্রসর করিয়াছে। এখনও সমভাবে তাহা চলিয়াছে; কেন চলিয়াছে, এবং কি সূত্রে কোথা হইতে সেই আলো আসিয়া এ জীবনের সজীবত্ব রক্ষা করিতেছে তাহা আমি এখনও কিছু বুঝিয়া উঠিতেছি না। এইজন্য সময় সময় বিস্মিত হইয়া ভগবানের অসীম করুণার বিষয় ভাবিয়া অবাক হইয়া থাকি, কেবল বলিতে ইচ্ছা হয় "ভগবান্‌ তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হউক"।

    এ ক্ষেত্রে যাহাদিগের সহিত পরিচয় হইয়াছে, যাঁহারা হৃদয়ের সহিত আমাকে ভালবাসিয়াছেন, স্নেহ করিয়াছেন, শ্রদ্ধা করিয়াছেন এবং এখনও যাঁহারা আমাকে প্রীতি চক্ষে দেখিতেছেন এবং আমার মঙ্গল কামনা করিতেছেন, সেই সুহৃদবর্গের মহত্ব কীর্ত্তন, তাঁহাদিগকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, এবং তাঁহাদের স্মৃতির দৃঢ়িকরণই আমার এই বহী লিখার অন্যতর উদ্দেশ্য।

    আমি মনে করিতেছি, তাহাদের সকলেরই নিকট আমি চিরঋণে আবদ্ধ আছি, সেই ঋণ পরিশোধের আমার কোন উপায় নাই, ভবিষ্যতে যে উপায় হইবে তাহারও আশা বৃথা। এ অবস্থায় যদি আমার জীবনলীলার পরিসমাপ্ত হয়, তাহা হইলে ঋণ শোধ ত দুরের কথা, দুইটী কৃতজ্ঞতার কথাও তাহাদিগকে জানাইতে পারিলাম না। মনের সাধ মনেই থাকিয়া গেল। তাই সেই সাধ পূর্ণ করিবার বাসনায়, লিখিতে না জানিলেও লিখিতে বসিয়াছি। বন্ধু বান্ধবের নিকট আর ভাল মন্দ কি? প্রীতির চক্ষে মন্দও ভাল দেখায়, এই ধ্রুব সত্যে বিশ্বাস করিয়া আমার এ অসঙ্গত উদ্যম।
  • achintyarup | 69.93.242.14 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ ০৪:০১559248
  • আপন কথা ছাড়িয়া অনেক কথা লিখিয়া ফেলিলাম। তা কি করি, নিজের প্রবোধজনক দুই চারি কথা আপনা হইতে আসিয়া পরে, মনে হয় যেন তাহা না বলিলে এ জীবনী অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইবে।

    যে যদুনাথ আমাকে জলমগ্ন মৃত্যুপ্রায় অবস্থা হইতে প্রাণে বাঁচাইল, সেই আমার জীবন পথের প্রথম সহায়। সেই শৈশব কালে সে আমার জীবনের সঙ্গী হইল, মাতুলালয়ে যতদিন থাকিতাম, সে আমার সঙ্গ প্রায় ছাড়িত না। আমাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিত; সে আমাপেক্ষা কিছু বয়োধিক ছিল, আমি তাহাকে মামার বাড়ীর সম্পর্কানুযায়ী মামা বলিয়া ডাকিতাম। সে আমাকে নানাবিধ উপায়ে ভালবাসার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিত। আমি তাহার ব্যবহারে সুখী ও মুগ্ধ হইতাম। সমবয়স্ক আরও অনেকানেক বালকের সহিত সখ্য ও ক্রিড়াদি হইত বটে, কিন্তু যদুনাথের ব্যবহার ভিন্ন রকমের ছিল, তাই তাহার সহিত মিলন ও তাহার ভালবাসাকে বিশেষ ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখিতেছি এবং ভগবানের কোন অলক্ষিত নিগূঢ় উদ্দেশ্য তাহার ভিতর ছিল বলিয়া মনে হইতেছে। অনেক কাল গত হইয়াছে, এখনও তাহাকে ভুলি নাই। তাহার কথা মনে হইলে সুখ হয়।

    সেই যাত্রায় পিতা মহাশয় মাতাঠাকুরাণী সহ আমাকে বাড়ী লইয়া আসিলেন; রাস্থায়ই আমার জ্বর হইল; সেই জ্বর জলমগ্নাবস্থায় ভয় পাওয়ার আনুসঙ্গিক ফল বলিয়া সকলেই অনুমান করিয়া লইল। জ্বর বড় দুরন্ত হইল; কিছুতেই আর আমাকে ছাড়িতে চায় না। পরিশেষে প্লীহাদিকে সহায় করিয়া লইল। নানা রূপ গ্রাম্য চিকিৎসা দ্বারা জ্বালা যন্ত্রণা করার প্রায় ছয় মাসের পর আমি তাহাদের হস্ত হইতে মূক্তি লাভ করিলাম।
  • achintyarup | 24.99.121.96 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:২৮559249
  • শিক্ষা

    রোগ মূক্ত হইয়া গ্রাম্য পাঠশালায় বাঙ্গলা ভাষা অভ্যাস করিতে লাগিলাম। ক্রমে জাইরতলা মধ্য বাঙ্গলা ছাত্রবৃত্তি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণী পর্য্যন্ত অগ্রসর হইলাম। এই সময়, তারকনাথ সেন ডিপুটী ইনস্পেক্টর ও রামশঙ্কর বাবু ডিপুটী মাজিস্ট্রেট আমাদের স্কুল পরিদর্শনার্থ একদা জাইরতলা স্কুলে উপস্থিত হইলেন। ইহার পূর্ব্বে উপরিস্থ শিক্ষা বিভাগের কর্ম্মচারী স্কুল পরিদর্শন করিয়া কি করেন সে জ্ঞান আমার ছিল না। এই প্রথম দেখিয়া কিছু ভীত ও স্থম্ভিত হইলাম। তারকবাবু ২।৪ কথা সকলকেই জিজ্ঞাসা করিলেন; পরিশেষে পুরস্কার দিবার ব্যবস্থা হইল। কয়েকজনে কয়েকখানা বহী পাইল; আমিও একটা নীলমণীবাবুর কৃত ভারতবর্ষের ইতিহাস পাইলাম। খুব স্ফূর্তি হইল।

    ইহার কিছুদিন পরে মাতুল মহাশয় আমাদের বাড়ীতে আসিলেন। পিতা মহাশয়ের সহিত আমার পড়াশুনার কথা আলাপ হইল। তাঁহারা পরামর্শ করিয়া ঠিক করিলেন যে আমাকে ইংরেজী পড়ানই কর্ত্তব্য। বাঙ্গলা ভাষার আদর সে সময়েই হ্রাস হইতেছিল। মাতুল মহাশয় সে যাত্রায়ই আমাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া গেলেন। কিছুদিন মাতুল আলয়ে থাকিয়া একদা মাতুল মহাশয়ের সঙ্গে ত্রিপুরা জেলার অন্তর্গতঃ ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সব্‌ডিবিসনের সদর স্থানে গেলাম। তথায় মাইনার স্কুল ছিল এবং সেই স্কুলের খুব নামও ছিল। আমাকে তথায়ই ইংরেজী শিক্ষায় ভর্ত্তি করাইয়া দিয়া আসিবেন এই মনে করিয়াই মাতুল মহাশয় তথায় আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা হইয়া উঠিল না। তথায় তাঁহার পরিচিত যে সকল লোকের বাসা ছিল, তন্মধ্যে কোথায়ও আমার স্থান হইল না। এই অল্প বয়সে (তখন আমার বয়স ১০ বৎসরের অধিক নয়) কোন্‌ অপরিচিত স্থানে আমাকে ফেলিয়া আসিবেন এই ভাবিয়াই বোধহয় আর কোথাও চেষ্টা না করিয়া বাড়ী লইয়া আসিলেন। আসিবার কালে রাস্থায় মেড্ডা নামক গ্রামে এক নূতন অদ্ভূত দৃশ্য দেখিয়া আসিলাম। তাহা আমার মনে এখনও জাগিয়া রহিয়াছে। তথায় কোন বাড়ীতে এক দেবতা স্থাপিত আছেন, তাহার নাম "কাল ভৈরব"। কাল ভৈরব মাটী কি কাষ্ঠনির্ম্মিত জানিনা। কিন্তু এত বড় দেব মূর্ত্তী আমি আর জীবনে দেখি নাই। এক অত্যুচ্চ চৌচালা গৃহে তিনি স্থাপিত; পদ্মাসনে উপবিষ্ঠ আছেন; তথাপি তাঁহার মস্তক গৃহের সর্বোর্দ্ধ ভাগে লাগিয়া রহিয়াছে। সে বিশাল ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি দেখিলে কাহার না যুগপৎ ভয় ও বিস্ময়ের উদয় হয়! হাঁহার বিরাট আকারের সম্মুখে ছোট এক কালী মূর্ত্তি রাখিয়া তিনি কালের মহিমা ঘোষণা করিতেছেন। শুনিয়াছি এখনও তিনি সেই ভাবেই পূজিত হইতেছেন। এ দৃশ্য দেখিয়া মাতুলালয়ে আসিয়া উপস্থিত হইলাম।

    মাতুল মহাশয় মহা ভাবনায় পড়িলেন; কোথায় আমাকে পাঠাইলে পড়ার সুবিধা হইবে, থাকার সুবিধা হইবে, এই অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন। এই সময়ে জানা গেল জেলা শ্রীহট্টের অধিন বাগাশুরা গ্রামে এক ইংরাজী (মাইনার) স্কুল হইয়াছে। আমার মাতুলবাড়ী আদাঐর গ্রামও জেলা শ্রীহট্টের অধিন। তথা হইতে বাগাশুরা অধিক দূর নয়, ১।। কি ২ প্রহরের রাস্থা ব্যবধান হইবে। ঐ বাগাশুরা যাইতে পথে বেজুরা নামা প্রসিদ্ধ গ্রাম, তথায় মাতুল মহাশয়ের মাসির বাড়ী। বেজুরা হইতে বাগাশুরা অতি নিকট। এই কারণে বাগাশুরা মাতুল মহাশয়ের অপরিচিত ছিল না। বাগাশুরাতে অনেক ভদ্র ব্রাহ্মণের বাস। মাসিবাড়ী যাতায়াত উপলক্ষে বাগাশুরার ভদ্রলোক সমাজেও মাতুল মহাশয়ের পরিচয় ছিল।

    তথাকার ইংরেজী স্কুলের কথা শুনিয়া তিনি অবিলম্বে আমাকে তথায় লইয়া গেলেন এবং সেখানে এক পরিচিত দোকানে বাসা নির্দিষ্ট করিয় দিয়া স্কুলে ভর্ত্তি করাইয়া দিয়া আসিলেন। দোকান বাজারের উপর, স্কুলও বাজারের এক পাশেই। দোকানদার কায়স্থ বটে কিন্তু সে স্কুলের সময় পাক করিয়া দিতে পারিত না, তাই আমাকে প্রথমেই পাক শিক্ষা কার্য্যে ব্রতী হইতে হইল। ১০ বৎসর বয়সের সময় পাক করিয়া খাওয়া এখনকার কায়স্থ ছেলেরা বোধহয় কল্পনাও করিতে পারে না। আমি কিন্তু তাহাতে পশ্চাৎপদ হইলাম না। পাক জানিতাম না, যেরূপ আমার কল্পনায় আসিত কোনরূপ একটা সিদ্ধ করিয়া খাইয়া স্কুলে যাইতে লাগিলাম। ইংরেজী (first Book of reading) প্রথম পাঠ্য বহী আরম্ভ করিলাম। এই সম্পূর্ণ নূতন অপরিচিত স্থানে আমার অনেক বন্ধু ও হিতৈষী মিলিয়া গেল। সাধারণতঃ সকলেই আমাকে ময়মনসিংহ হাজরাদী পরগণাবাসী বলিয়া খুব সম্মান ও শ্রদ্ধা করিতে লাগিল। তথাকার ভদ্রব্যক্তিদের ধারণা যে হাজরাদী পরগণায় খুব ভদ্রলোকের বাস, এবং হাজরাদীর লোক খুব বুদ্ধিমান ও উন্নতিশীল। এই ধারণাতে, নিতান্ত অপরিচিত ব্যক্তিও বাসস্থানের পরিচয় মাত্রই আমাকে শ্রদ্ধা দৃষ্টিতে দেখিতে লাগিল। মাস্টার, ছাত্র, স্কুলের সেক্রেটরী সকলেরই নিকট আমি খুব আদর ও যত্ন পাইতে লাগিলাম। আমার পাকের কষ্ট দেখিয়া সেক্রেটরী নবিনবাবু (যিনি এখন কাছরে কোনও চা বাগানে বড় বাবু এবং অতুল সম্পত্তি ও সম্মানের অধিকারী হইয়াছেন) নিয়ম করিয়া দিলেন যে প্রতি শনিবার বিকালে তাঁহাদের বাড়ীতে যাইয়া থাকা এবং সোমবার স্কুলের সময় আহার করিয়া স্কুলে আসা। প্রায় শনিবারই তিনি আসিয়া সঙ্গে করিয়া আমাকে লইয়া যাইতেন। তাঁহার বাড়ী হইতে স্কুল বেশী দূর নহে, বিশেষ নূতন স্কুল বলিয়া তিনি প্রায় সর্ব্বদাই স্কুলে আসিতেন ও ছেলেদিগের পড়াশুনা দেখিতেন। তাঁহার স্বভাব অতি উদার ও মহত্বে পরিপূর্ণ দেখিয়াছি। তিনি আমার প্রতি যে অপরিসীম স্নেহ প্রদর্শন করিয়াছেন এবং তাহা দ্বারা আমি যে উপকার প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহা আমার শিক্ষা জীবনের অপরিচিত পথে প্রথম পদ বিক্ষেপের সময়। কে জানে এই দুর্গম প্রবেশদ্বারে যদি আমি এই অনুকূল সাহায্য না পাইতাম তবে আমার জীবন কোন পথে চলিত। আমার অপরিসীম শ্রদ্ধার পাত্র বাল্য জীবনের সহায় ও অভিভাবক জেলা শ্রীহট্টের অন্তর্গতঃ ধরমণ্ডল গ্রামবাসী বাবু নবীনচন্দ্র রায় মহাশয়ের প্রতি আজীবন আমার ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা অবিচলিত থাকিবে।
  • I | 120.224.203.197 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:৩৬559250
  • বেলকাম ব্যাক!
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৭:১৬559251
  • একি ভুল দেখছি না সত্যি ঃ-০ চিন্টুবাবু ইজ ব্যাক ?! বড় আনন্দের কথা -- কত্ক্ষণ থাকবে এবার কলম তোমার হাতে ? ভয়ে ভয়ে পড়া শুরু কল্লুম--
  • achintyarup | 127.194.66.207 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৬559252
  • দৈব ও পুরুষকার দুইয়ের সমান প্রভাব জীবনে না ঘটীলে কেহ সংসারে উন্নতি লাভ করিতে পারে না। ছোটকাল হইতে দৈব আমার অনুকূল না থাকা পদে২ প্রমাণিত হইতে লাগিল। মাত্র ২ মাস কি ২।। মাস না যাইতে ২ই আমার কপাল ভাঙ্গিল। একদিন বিকাল বেলায় বাঘাশুরাতে সংবাদ পঁহুছিল মাতুল মহাশয় আর ইহলোকে নাই। কি নিদারুণ সংবাদ!! যেন আকাশ হইতে পড়িয়া গেলাম। মাতুল মহাশয় আমার অন্যতম মুখ্য অভিভাবক, পড়াশুনার জন্য অপরিসীম চেষ্টাও যত্নের ত্রুটী করিতেছেন না। আমি তাহার প্রাণের অধিক স্নেহের ভাগিনা। তিনি বাঁচিয়া থাকিলে তাঁহার ও পিতামহাশয় উভয়ের যত্নে জীবন পথে অগ্রসর হইতে পারিতাম, কিন্তু জীবনের প্রথম উন্মেষেই দৈব প্রতিকূল হইল। অকালে অল্পবয়সে অপার স্নেহের আধার মাতুল মহাশয় লোকান্তরিত হইয়া আমার ভবিষ্যৎ উন্নতির পথ যে অন্ধকারময় তাহাই যেন ইঙ্গিত করিয়া গেলেন।

    এই অশনি নির্ঘাত সম দুঃসংবাদ প্রাপ্ত হইয়াই অনতিবিলম্বে প্রিয় বাঘাশুরা গ্রাম জন্মের মত পরিত্যাগ করিয়া মাতুলালয়ে উপস্থিত হইলাম এবং তথা হইতে পদব্রজে জনৈক সঙ্গী সহ ১।। দিনের পথ অতিক্রম করিয়া বাটীতে পঁহুছিলাম। বাটীস্থ সকলেই তাঁহার অকাল মৃত্যুতে অত্যন্ত গভীর শোক অনুভব করিলেন। কয়েকমাস কাটীয়া গেল। অতঃপর শোকাবেগ কিছু প্রশমিত হইলে আমার শিক্ষার কথা উঠিল। পিতা মহাশয় আমাকে কিশোরগঞ্জ পাঠাইবার প্রস্তাব করিলেন। শুভদিন দেখিয়া পিতা মহাশয়ের সহিত কিশোরগঞ্জ অভিমুখে রোয়ানা হইলাম। যশোদল গ্রামে জনৈক দূরসম্পর্কিত আত্মীয়ের বাড়ীতে থাকার কথা হইল। তথা হইতে কিশোরগঞ্জ ইংরাজি স্কুল (মাইনর স্কুল) ২ মাইলের অধিক দূর। কিন্তু কি করা, সহরের উপড় কোথায়ও থাকার সুবিধা না থাকায় বাধ্য হইয়া যশোদল থাকিয়াই পড়িতে হইল। মাইনার স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতে ভর্ত্তি হইলাম।
  • achintyarup | 127.194.66.207 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৯559253
  • পূর্ব্বেই বলিয়াছি দৈব আমার প্রতিকূল। ১২৭৭ সালের আশ্বীন মাসে পুজার ছুটীর সময় বাড়ী আসিলাম। আমার কপাল ভাঙ্গিল। লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন পিতা মহাশয় আমাকে অকূল সাগরে ভাসাইয়া, আমার ভবিষ্যত জীবন যে অন্ধকারময় হইবে তাহারই সুস্পষ্ট নিদর্শন প্রদর্শন করিয়া অনন্তধামে চলিয়া গেলেন। আমার বয়স তখন ১২ বৎসর ৬ মাস। পিতার মৃত্যু শোকে ও অন্যান্য কারণে তাঁহার মৃত্যুর পর প্রায় ৬ মাস কাল বাড়ীতেই কাটাইলাম। এক্ষণে জেঠা মহাশয় (ঁরাজচন্দ্র রায় মহাশয়) অভিভাব্ক, তিনি পড়িতে যাও বলিয়া অনুমতি করিলেন।

    অত;পর সেই যশোদলে আত্মীয়ের বাড়ীতে গিয়া অবস্থান করতঃ কিশোরগঞ্জে পড়িতে লাগিলাম। ২/২।। মাইল গ্রাম্য পথে হাটীয়া স্কুলে যাইতে ও আসিতে যে কষ্ট ও অসুবিধা হইত তাহা মনে করিতাম না। খাওয়া দাওয়ার অসুবিধা কি কষ্টও গ্রাহ্য হইত না। এখনকার দিনের মত সুখ সুবিধার বোর্ডিং কি ছাত্রাবাস তখন ছিল না, প্রাইভেট শিক্ষক কি অর্থ পুস্তকও ছিল না। বাড়ী হইতে সচ্ছলভাবে খরচও পাইতাম না। পরের বাড়ীতে কষ্টে সৃষ্টে থাকিয়া প্রাতে ৯টার কালে আহার করিয়া স্কুলে যাইতাম, আর সন্ধ্যাকালে ফিরিয়া আসিয়া রাত্রির আহার সমাধা করতঃ পড়ায় মনোনিবেশ করিতাম। স্কুল হইতেই অপরের সাহায্যে অর্থ লিখিয়া লইয়া আসিতাম এবং অপরের নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করার সুবিধা পাইলে পড়া বুঝিয়া শিখিতাম, তখনকার দিনে জিজ্ঞাসাবাদ করার লোকও বেশি মিলিত না। যাহা হউক এইরূপে মাইনারের ৩য় শ্রেণী পর্য্যন্ত অগ্রসর হইলাম।
  • achintyarup | 127.194.66.207 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪559255
  • এই সময়, যে আত্মীয়ের বাড়ীতে থাকিতাম তাঁহার মৃত্যু হইল। অনেক অনুরোধ উপরোধে যে একটু স্থান পাওয়া গিয়াছিল তাহাতেও বিঘ্ন ঘটিল, সে বাটীতে আর থাকার সুবিধা হইল না। হতাশ হইয়া পড়িলাম, কোথায় যাই, কাহার নিকট দাঁড়াই, সম্মুখে অকূল সাগর দেখিতে লাগিলাম। মনে২ স্থির করিলাম স্কুল ছাড়িয়া সম্প্রতি বাড়ীতেই চলিয়া যাইব, জেঠা মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিয়া কর্তব্য স্থির করিব, এইরূপ চিন্তাকুল অবস্থায় বাড়ী যাওয়ায় উদ্যত হইলে ঐ আত্মীয়ের বাড়ীর সন্নিকটবাসী এক প্রৌঢ় বয়সী ঝি যে আমাকে পূর্ব্ব হইতেই বিশেষ স্নেহের চক্ষে দেখিত, সে আপনা হইতই বলিল, "কেন বাপু বাড়ীতে চলিয়া যাইতেছ, আমি গরিবের বাড়ীতে থাক, বাড়ী হইতে খোরাকীর চউল ত মাসে২ আসিয়াই থাকে, আমি তোমাকে রান্ধিয়া খাওয়াইব, পড়া ছাড়িও না"। তাহার এই সকরুণ ব্যবহার ও বাক্যে আমি আকাশের চান্দ যেন হাতে পাইলাম, আমার জীবে জল আসিল, আমি সান্ত্বনা পাইলাম। বাড়ীতে জানাইলাম আমি ঝির বাড়ীতে আছি। ঝির একমাত্র অল্প বয়স্কা কন্যা সন্তান, সুতা কাটীয়া ও অন্যের কাজকর্ম্ম করিয়া জিবীকা নির্ব্বাহ করিত, কেন যে এই ঝি আমাকে প্রাণের সহিত ভালবাসিত তাহা আমি বলিতে পারি ন, এখানেও আমার সেই জীবনপথের আলোকের কথাই মনে হয়।

    এইরূপে আমার এই দুঃসময়ে আশ্রয়দাতৃ ও পরম শ্রদ্ধার পাত্রী ঝির বাড়ীতে থাকিয়া পড়াশুনা করিতে লাগিলাম। পুজার ছুটী আসিল, বাড়ী গেলাম, বাড়ীতে সকলেই বলিতে লাগিলেন ঝির বাড়ীতে থাকা ভাল দেখায় না, তখনকার দিনে কায়েস্থ ভদ্রলোকেরা ভাণ্ডারী চাকরের হাতে কি ঝির হাতে খাওয়া নিন্দনীয় মনে করিতেন। তাই ঝির বাড়ীতে থাকা বাড়ীর লোকের অমত হইল। সকলই বলিতে লাগিলেন অন্য কোন স্থান ঠিক করিতে হইবে। অতঃপর আমার জ্ঞাতী জ্যেষ্ঠতাত পত্নী সর্ব্বজন পরিচিত বৃদ্ধা পরম পূজনীয়া সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া আসিয়া বলিলেন, ভাবনা কি, যশোদল আমার মাতুল বাড়ীতে থাকিয়া পড়ার বন্দবস্থ করা যাইবে, স্কুলের ছুটী অন্তে আমি নৌকাযোগে লইয়া যাইব।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:০৪559256
  • উপ্স আজও এসেছে --দূগ্গা দূগ্গা---পড়ছি-----
  • নী-পা | 53.252.141.67 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২২559257
  • .
    @ achintyarup

    পড়ছি....

    ".. এ জীবনী অসম্পূর্ণ .. " যেন না থাকে ---- ইহা একমাত্র প্রার্থনা
  • achintyarup | 127.194.65.230 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:১৭559258
  • সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া প্রথম বয়সেই বিধবা হইয়া তাহার পৈতৃক সম্পত্তি দ্বারা জিবীকা নির্ব্বাহ করতঃ পিত্রালয়ে বাস করিতেন। ধারীশ্বরের অনুপ নারায়ণ চৌধুরী মহাশয়ের তিনি একমাত্র কন্যা। আমার জ্ঞাতী জ্যেষ্ঠতাত কৃষ্ণকিঙ্কর রায় মহাশয় তাঁহাকে বিবাহ করিয়া তিনিও শ্বশুরালয়েই বাস্তব্য করিতেন। তাঁহাদের মোহনকিশোর নামে একমাত্র পুত্র জন্মিয়াছিল, তাঁহার অল্পবয়সে মৃত্যু হয়। আর কোন সন্তান ছিল না। অনুপ নারায়ণ ও তাঁহার স্ত্রীর মৃত্যুকালে সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া বিধবা, সুতরাং পিতার প্রচুর সম্পত্তির তিনি অধিকারিণী হইলেন না। আঠারবাড়ীর জমিদার শম্ভূ রায় মহাশয় তাঁহার সাক্ষাৎ মাসতুত ভ্রাতা ছিলেন। তিনি তাহার সাজনপুরের তালুক হইতে কতক ভূমি সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়াকে জিবীকা নির্ব্বাহার্থে জোত স্বরূপে প্রদান করেন। স্বামী ও পিতৃত্যক্ত ও কোন সম্পত্তি প্রাপ্ত না হইলেও সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া কোন দিন অন্যের গলগ্রহ হন নাই। তাঁহার জিবন কাল পর্য্যন্ত তিনি তাঁহার পৈতৃক বাড়ীতে বাস করিয়া শম্ভূ রায় মহাশয়ের প্রদত্ত ভূমির উপস্বত্ত্ব দ্বারাই সুখে দিনাতিপাত করিয়াছেন। তাঁহার স্বভাব পুরুষের ন্যায় ছিল, তাহার কার্য্যতা ও বুদ্ধি, বিবেচনা সকলই পুরুষোচিত ছিল। স্ত্রী পুরুষ সকলই তাহাকে মানিত ও ভয় করিত।

    যশোদলের রামলোচন রায় প্রভৃতি তিন ভ্রাতা সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়ের মাতুল ছিলেন। তিনি মাতুলালয়ে বর্ষাকালে নৌকা যোগে যাতায়াত করিতেন, আমি যে সময়ের কথা লিখিতেছি অর্থাৎ যখন আমি যশোদল থাকিয়া পড়াশুনা করি, সে সময়ে তাঁহার মাতুলদিগের কেহই জিবীত ছিলেন না। রামলোচন রায়ের পুত্র আনন্দকিশোর ও কুঞ্জকিশোর রায় মহাশয়দিগের বাটীতে আমাকে পুজার ছুটীর পর লইয়া গেলেন, এবং তথায় থাকার বন্দবস্থ করিয়া সাবিত্রী দাস্যা মহাশয়া বাড়ী ফিরিলেন। তথায় থাকিয়া পূর্ব্বব্য কিশোরগঞ্জ মাইনার স্কুলে অধ্যয়ন করিতে লাগিলাম। কুঞ্জকিশোর রায় আমার সহাধ্যায়ী ছিলেন। তাঁহার মাতা বাড়ীর কর্ত্তৃ। কি কারণে জানি না, বৎসরেক কাল গত হইলে কর্ত্তৃ মহাশয়া আমার প্রতি কিছু বিরক্তি জনক ভাব প্রকাশ করিতে লাগিলেন। ইহাতে আমি আবার বিপদ গণিতে লাগিলাম। কিন্তু এবার বিপদ ঘণীভূত হইতে না হইতেই আশ্রয়ান্তর প্রাপ্ত হইলাম। কুঞ্জকিশোর রায়দিগের জ্ঞাতী তাঁহাদের একই পাড়া নিবাসী মৃত মহেন্দ্র রায়ের ছেলে কৈলাসচন্দ্র প্রভৃতি তিন নাবালক ভ্রাতা তাহাদের মাতার সহিত বাস করিতেছিল। তাহাদের বাড়ীতে রামদুলাল সরকার নামক একজন কর্ম্মচারী ছিল, অন্য আর কেহ ছিল না। আমি সর্ব্বদাই তাহাদের বাড়ীতে যাতায়াত করিয়া কৈলাসের মাতা ও রামদুলালের সহিত বিশেষভাবে পরিচিত হইয়াছিলাম। তাঁহারা আমাকে কেন জানিনা স্নেহের চক্ষে দেখিতেন। আমি যখন কুঞ্জ রায়ের মাতার অসন্তোষের কথা তাঁহাদের নিকট প্রকাশ করিলাম তাঁহারা অম্লান বদনে আমাকে আশ্বাস প্রদান করিলেন। তখন স্কুলের ছুটী নিকটবর্ত্তী ছিল, ছুটীর পর একবারে তাঁহাদের বাড়ীতে আসিয়া উঠিলাম, তাঁহারা আহ্লাদিত হইলেন। কৈলাস অল্পবয়স্ক, সে এই অল্পদিবস যাবৎ স্কুলে ভর্ত্তি হইয়াছে। আমার সঙ্গে থাকিয়া পড়াশুনা করিতে ও স্কুলে যাইতে লাগিল। এইরূপে তাহাদের বাড়ীতে বৎসরেক কাটীল, আমি মাইনারের দ্বিতীয় শ্রেণী হইতে ১ম শ্রেণীতে উঠিলাম। পড়াশুনায় ছাত্র ভাল বলিয়া নাম প্রকাশ পাইল, কি ছাত্র কি মাষ্টর কি প্রতিবেশী সকলের নিকটই বিশেষ পরিচিত হইলাম, সকলেরই আদর যত্ন পাইতে লাগিলাম। ভাল ছাত্রকে কে না ভালবাসে? এই সময় কেশববাবুর ব্রাহ্মধর্ম্মের প্রবল তরঙ্গে বঙ্গদেশ আলোড়িত, তাহার ঢেউ কিশোরগঞ্জের নরনারীকেও আঘাত করিল। অনেক শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও ছাত্র ব্রাহ্মধর্ম্মে মাতোয়ারা হইলেন। আমিও সে তরঙ্গের আঘাতে স্থির থাকিতে পারিলাম না। নবীন উদ্যমে তাহাতে যোগ দিলাম। সে ১২৮০ বাঙ্গলা সনের কথা। আলাপ আলোচনা ও সমাজে যাওয়া এবং নূতন নিয়ম প্রণালী অবলম্বনের দ্বারা লোকে জানিতে পারিল আমি ব্রাহ্ম হইয়াছি। পাড়াগায়ের লোক হৈ চৈ করিয়া উঠিল। কৈলাস রায়ের মাতাকে বলিল ইহাকে বাড়ীতে স্থান দিলে একঘরে হইতে হইবে। আমি আবার বিপদ গণিলাম। এখন আশ্রয়ের স্থান কোথায়? ধর্ম্মমত পরিত্যাগ করিয়া থাকিলে এ বাড়ীতেই থাকা যায় এ আশ্বাস সকলেই দিতে লাগিলেন, কিন্তু মনের গতি ফিরিল না। নূতন ধর্ম্মের প্রবল টানে আমি তাহাতেই আত্মসমর্পণ করা শ্রেয় মনে করিলাম। হিন্দু সমাজের পুরাতন গণ্ডির মধ্যে থাকিতে যেন ভাল লাগিল না।
  • ranjan roy | 24.99.61.64 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২৩:৩৫559259
  • আভান্তি! আভান্তি!
  • achintyarup | 127.194.66.233 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৭559260
  • এই সময়কার একটী ঘটনা আমার ছাত্র জীবনের সহিত বিশেষ ভাবে জড়িত। তাহার উল্লেখ এখানে না করিলে আমার ধর্ম্মমত পরিবর্তনের কারণ অপ্রকাশিত থাকিবে এবং কিশোরগঞ্জের তদানিন্তন সমাজের অবস্থাও কেহ বুঝিতে পারিবেন না। কিশোরগঞ্জে তখন কেবল একটী মাত্র মাইনার স্কুল বিদ্যমান ছিল, ময়মনসিংহ সদর স্থান ব্যতীত আর কোন স্থানে মাইনার কি এনটেন্স স্কুল বর্ত্তমান ছিল না। কিশোরগঞ্জ সব ডিভিশনে স্থানে ২ বাঙ্গলা ছাত্রবৃত্তি স্কুল ও পাঠশালা কয়েকটী মাত্র ছিল। কিশোরগঞ্জ মাইনার স্কুল খুব উন্নত অবস্থার স্কুল ছিল, পড়াশুনা খুব ভাল হইত, বহু সংখ্যক ছাত্র অধ্যয়ন করিত। আমি যখন মাইনারের ২য় শ্রেণীতে পড়ি, তখন হেড্‌মাষ্টর বৈকুণ্ঠনাথ সেন স্কুল সব্‌ইনস্পেক্টরী পদ প্রাপ্ত হইয়া চলিয়া গেলেন, তাহার স্থানে অন্নদাবাবু নামে একজন নূতন হেড্‌মাষ্টর আগত হইলেন। সেকেণ্ড মাষ্টর "হেলনা কাব্য" (?) প্রণেতা আনন্দচন্দ্র মিত্র এবং পণ্ডিত শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র ভট্টাচার্য্য ছিলেন। এখনও সেই ঈশানবাবু কিশোরগঞ্জ এনট্রান্স স্কুলে পণ্ডিতি কার্য্য করিতেছেন। ঈশানবাবুর ন্যায় শিক্ষাদাতা দুর্লভ, তাঁহার নিকট কেবল পড়াশুনা নহে, আচার, ব্যবহার, চলা ফেরার রীতিনীতি সম্বন্ধে অনেক বিষয় শিক্ষা করিয়াছি, সেই শিক্ষার ফল পরবর্ত্তী জীবনেও অনুভব করিতেছি। বৈকুণ্ঠবাবু ও আনন্দবাবু ব্রাহ্মধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন। তাঁহাদের প্রভাব কতকটা আমার উপর বিস্তার লাভ করিল। বৈকুণ্ঠবাবু আমাকে বিশেষ স্নেহ করিতেন, "কালাচান্দ" বলিয়া সম্বোধন করিতেন। স্কুলের সমস্ত ক্লাশের পড়ার কার্য্য শেষ হইলে পর ছুটীর অল্প পূর্ব্বে তিনি সমস্ত ক্লাশের ছাত্রকে স্পেলিং জিজ্ঞাসা করিতেন, তাহাতে উপর নীচ করার নিয়ম ছিল, পারদর্শীতা অনুসারে অতি নিম্ন শ্রেণীর ছাত্রও প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রের উপড়ে উঠিয়া যাইত। এ বিষয়ে আমার পারদর্শীতা অধিক ছিল, আমি যখন ৩য় শ্রেণীতে পড়ি, সেই সময়ও স্পেলীংএর আবৃত্তিতে আমি প্রায়ই ১ম শ্রেণীর ছাত্রের উপড়ে উঠিয়া গিয়াছি। বৈকুণ্ঠবাবু ইহাতে খুব প্রীত হইতেন এবং স্নেহসূচক রঙ্গ রহস্য করিতেন। আনন্দবাবু খুব দৃঢ় ও নির্ভীক প্রকৃতির লোক ছিলেন। পড়াশুনায় অমনোযোগী ছাত্রকে লাটীর প্রহার করিতেও কুণ্ঠিত হইতেন না। পণ্ডিত মহাশয়ের শিক্ষা দেওয়ার প্রণালী যেমন সুষ্ঠু ছিল, সাশনের প্রণালীও তেমন কঠোর ছিল, তাহাকে ভয় না করিত এমন ছাত্র কেহ ছিল না। বৈকুণ্ঠবাবু হেড্‌মাষ্টর মহাশয় অতি সদাশয় লোক ছিলেন, তাঁহার মধুর ব্যবহারে সকলই তাঁহার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবান ও আকৃষ্ট হইয়াছিল। তাঁহার পরিবর্ত্তনে সকল ছাত্রই বিশেষ দুঃখিত হইল, পক্ষান্তরে যিনি তাঁহার স্থলাভিষিক্ত হইলেন তাঁহার ব্যবহার ও শিক্ষাপ্রণালীতে কেহই সন্তোষ লাভ করিল না, তাঁহার প্রতি সকল ছাত্রই শ্রদ্ধাহীন হইল। নূতন হেড্‌মাষ্টরবাবুর আগমনের অল্প কয়েকদিন পরই এক ভোজবাজী প্রদর্শক সাহেব কিশোরগঞ্জ আসিল। তখন কিশোরগঞ্জে কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ডিপুটী মাজিস্ট্রেট সবডিভিসনের ভার প্রাপ্ত হইয়া কার্য্য করিতেছিলেন এবং তিনি স্কুলেরও সেক্রেটারী ছিলেন। সাহেব বাজীকর ডিপুটীবাবু নিকট স্কুলঘরে বাজী প্রদর্শন করার প্রস্তাব করিলেন, ডিপুটী তাহাতে সম্মতি দিয়া শনিবার দিন নির্দ্দিষ্ট করিলেন। বাজী দর্শনের টিকেটের মূল্যের হার প্রচারিত হইল। তাহাতে দেখা গেল স্কুলের ছাত্রের পক্ষে অন্য লোকের অর্দ্ধেক হার। তাহাতে আমরা খুব সন্তোষ লাভ করিয়া উৎসাহীত হইলাম। শনিবার স্কুলে গিয়া দেখি বিজ্ঞাপনে যে অর্দ্ধহার নিয়ম ছিল তাহা কাটীয়া স্কুলের ছাত্রের পক্ষেও পূর্ণ মাত্রাই করা হইয়াছে। এ বিষয়ে হেড্‌মাষ্টরবাবুকে জানাইলে তিনি বিশেষ কোন সহানুভূতি প্রদর্শন করিলেন না। সেক্রেটারীকে জানান হইলে তিনিও তাহার প্রতিকারের আশ্বাস দিলেন না, বরং বলিয়া পাঠাইলেন যে শীঘ্রই স্কুল ছুটী দেওয়া হউক, সত্বর অনুষ্ঠানে তামাসা আরম্ভ হইবে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৭:২০559261
  • প্লিজ মাঝপথে পালিও না চিন্টুবাবু
    অনেক আশা নিয়ে পড়ছি
  • de | 69.185.236.53 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৩৫559262
  • খুব ভালো হচ্ছে!
  • achintyarup | 24.96.2.38 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৫559263
  • এই কারণে স্কুলের বয়স্ক ছাত্রগণ সকলই চটিয়া গেল, এবং প্রত্যেক শনিবার যে ছাত্রগণের হিতবোধিনী সভার অধিবেশন হইত, তামাসার অনুরোধে সে সভা বন্ধ হইতে পারেনা বলিয়া আপত্য তুলিল ও হেডমাষ্টর বাবুকে সভাপতি হইয়া সভার অধিবেশন করার জন্য অনুরোধ করিল। হেড্‌মাষ্টরবাবু তাহাতে সম্মতি প্রদান করিলেন না। ছাত্রগণ সভা করিতে কৃতসংকল্প হইয়া স্কুল ছুটীর পরও স্কুল ঘরে বসিয়া রহিল, একথা সেক্রেটরীর কর্ণগত হইলে তিনি ছাত্রদিগের প্রধান২ কয়েক জনকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। ছয়াল গ্রামের কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী যিনি এখন পোলীশের সব্‌ ইনস্‌পেকটরী পদে আছেন তিনি সর্ব্বাপেক্ষা বয়স্ক ছাত্র ছিলেন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়ন করিতেন। তাহাকে দলপতি করিয়া কয়েকজন ছাত্রকে সেক্রেটরীর নিকট পাঠান হইল। সেক্রেটরী রোষ কষায়ীত লোচনে আদেশ করিলেন তোমরা এখনই স্কুলঘর ছাড়িয়া দেও, না দিলে আমি ঘাড়ে ধরিয়া তাড়াইয়া দিব। কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী মহাশয় নির্ভীক সাহসী লোক, তিনি উত্তর করিলেন আমাদের সভা আছে, সভার কার্য্য শেষ না করিয়া যাইতে পারি না। সেক্রেটরী ইহাতে আরও ক্রোধান্নিত হইয়া চাপরাশীকে হুকুম দিলেন ইহাদিগকে স্কুলঘর হইতে তাড়াইয়া দেও। সঙ্গে২ চাপরাশী আসিতে লাগিল। ছাত্রগণ এ সংবাদ শুনিয়া সকলেই মালকোচা করিয়া ছ্লেট হাতে লইয়া দণ্ডায়মান, যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত, হেন সময় সুচতুর পণ্ডিত মহাশয় সংবাদ পাইয়া তাড়াতাড়ী স্কুলে আসিয়া (তিনি পূর্ব্বেই ছাত্রগণের সভার উদ্যোগ দেখিয়া স্কুল হইতে চলিয়া গিয়াছিলেন এবং নিকটে কোথায়ও থাকিয়া এ সকল বাগ বিতণ্ডার সংবাদ লইতেছিলেন) ছাত্রদিগকে বলিলেন "তোমাদের অপমান বোধ নাই -- ঘাড়ে ধরার আর বাকী কি, স্কুলে কেন রহিয়াছ"। এ কথায় ছাত্রদিগের মধ্যে যেন এক বৈদ্যোতিক প্রবাহ বহিয়া গেল। সকল ছাত্রই মালকোচা ছাড়িয়া দিয়া শান্ত ভাব অবলম্বন করিল, এ দিকে চাপরাশী আসিয়া অনুনয় বিনয় করিয়া বলিল আপনিরা আজ সভা ক্ষান্ত দিয়া তামাসা দেখুন, ডিপুটীবাবু অত্যন্ত রাগ হইয়াছেন। ছাত্রদের পণ্ডিত মহাশয়ের তীব্র বাক্যে চৈতন্য সঞ্চার হইল, তাহারা স্কুল পরিত্যাগ করিলেন, কিন্তু ঘর হইতে বাহির হইয়াই সকলই দলবদ্ধ হইয়া পরামর্শ করিলেন যে সোমবার হইতে আর কেহই যেন এ স্কুলে না আসে -- দেখি কর্ত্তারা কি করেন। সোমবার দলপতী ছাত্রগণ সকাল অনুষ্ঠানে যাহার তাহার বাড়ী ও বাসা হইতে খাওয়া দাওয়া করিয়া পুস্তকবিহীন হস্তে কর্ম্মকর্ত্তার ন্যায় সর্ব্বাগ্রে আসিয়া মহকুমায় হাজীর হইলেন এবং যে সকল বড়২ রাস্থা দিয়া ছাত্রগণ আসে ভিন্ন২ দলে সেই রাস্থার মোড়ে আড্ডা করিলেন। যে পথ দিয়া যত ছাত্র আসিতেছে সকলকেই ডাকিয়া আড্ডায় দলবদ্ধ করা হইতে লাগিল, কেহই স্কুলে যাইতে পারিল না। ১৫০/২০০ শত ছাত্রের মধ্য সে দিন মাত্র ২০/২৫ টী ছাত্র স্কুলে উপস্থিত হইল, অনুসন্ধানে জানা গেল তাহারা সকলই আফিসের আমলাদিগের বাসার। অভিভাবকের ভয়ে২ স্কুলে গিয়াছে।
  • 13 | 109.172.117.250 | ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৭:১৩559264
  • তুলে দিলাম।
  • achintyarup | 125.187.53.190 | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৩২559266
  • স্কুলের কর্ত্তারা সেই দিন স্কুল ঘরে এক নোটীশ প্রচার করিলেন যে অদ্য যে ছাত্র স্কুলে হাজীর না হইবে তাহাকে বিশেষ রূপ দণ্ডিত করা যাইবে। এই নোটীশের কথা জানিয়া দলবদ্ধ ছাত্রগণ আরও চটিয়া গেল। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হইল আর কখনই কেহ এই স্কুলে প্রবেশ করিবে না। অন্য একটা নূতন স্কুলের যোগার করিতে হইবে। নগুয়া গ্রাম নিবাসী শ্রীযুক্ত বাবু কালীনারায়ণ রায় মহাশয় ব্রাহ্ম ধর্ম্মাবলম্বী। তিনি তখন ঢাকায় বাস করিতেছিলেন, তাঁহার আদর্শে নগুয়া গ্রামে ব্রাহ্ম ধর্ম্ম বিস্তার লাভ করিতেছিল, সকলেরই দৃষ্টি তখন তাঁহার দিকে পতিত হইল। তিনি উদার হৃদয় দেশহিতৈষী, তাঁহাকে ধরিলে নগুয়াতে একটা স্কুল হইতে পারে। এইরূপ পরামর্শ আটীয়া সকল ছাত্রই নগুয়া গ্রামের দিকে ছুটীলাম। উক্ত গ্রামনিবাসী ঁআনন্দকিশোর কর মহাশয় তাঁহারই অনুগামী জানিয়া তাহাকে গিয়া আবদ্ধ (?) করায় তিনি কালীনারায়ণবাবু নিকট ঢাকায় চিঠি লিখিলেন। কয়েকদিন পর উত্তর আসিল। তিনি স্কুল স্থাপনের অনুমতি প্রদান করিলেন। অনতিবিলম্বে সকলে মহা উৎসাহের সহিত মিলিত হইয়া আনন্দ কর মহাশয়কে সেক্রেটারী করিয়া স্কুল স্থাপন করিলাম। উক্ত গ্রামের শ্রীযুক্ত দীনদয়াল দে ও কুঞ্জরপুর গ্রাম নিবাসী ঁআনন্দচন্দ্র চক্রবর্ত্তী মহাশয় মাষ্টর নিযুক্ত হইলেন। সুযোগ্য ও সর্ব্বগুণান্নিত দীক্ষিত ব্রাহ্ম শ্রীযুক্ত চন্দ্রমোহন কর্ম্মকার মহাশয় পণ্ডিত নিযুক্ত হইলেন। স্কুলের কার্য্য চলিল। কিন্তু হেড্‌ মাষ্টরের অভাব হেতু আমরা ১ম, ২য় শ্রেণীর ছাত্রগণ বসিয়া২ দিন কাটাইতে লাগিলাম। প্রায় প্রতি দিনই কালীনারায়ণবাবু নিকট চিঠি যাইতেছে। তিনি উপযুক্ত লোক খুজিয়া পাইতেছেন না এই উত্তর আসিতেছে। আমরা হতাশ্বাস ও ম্রিয়মাণ হইয়া পড়িলাম। কয়েকদিন এরূপ ভাবে গত হইলে একদিন অকস্মাৎ এক ভদ্রলোক আসিয়া স্কুলে উপস্থিত হইলেন। পরিচয়ে জানিলাম তিনি ঢাকা হইতে আসিয়াছেন। আমাদের স্কুলে হেড্‌মাষ্টরী কার্য্যে নিযুক্ত করিয়া কালীনারায়ণবাবু পাঠাইয়াছেন। আমরা অবনত মস্তকে তাঁহাকে অভিবাদন করিলাম, আমরা আকাশের চান্দকে হাত বাড়াইয়া প্রাপ্ত হইলাম। আমাদের উদ্বেগ অশান্তি সব দূর হইল। কয়েক দিন স্থায়ী গৃহের অভাবে এখানে সেখানে স্কুল হইল। হেড্‌ মাষ্টর মহাশয় আসিলে পর আমরা মহা উল্লাসে টাকা করজ করিয়া এক বৃহৎ গৃহ খরিদ করিয়া আনিয়া নগুয়া গ্রামের মধ্যস্থলে এক পতিত বাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত করিলাম। শতাধিক ছাত্র হইল। অদম্য উৎসাহে ও উদ্যোগে পড়াশুনায় মনোযোগ দিলাম। হেড্‌ মাষ্টর মহাশয়ের নাম ... তিনি পূর্ব্ব স্কুলের দ্বিতীয় শিক্ষক আনন্দচন্দ্র মিত্র মহাশয়ের সম্পর্কীত। তাহার অমায়ীক ব্যবহার ও সুষ্ঠু শিক্ষা প্রণালীতে আমরা সন্তোষ লাভ করিলাম। দিন২ স্কুলের উন্নতি চলিল। হেড্‌ মাষ্টর মহাশয়ও ব্রাহ্ম ধর্ম্মাবলম্বী। স্কুল ছুটীর পর প্রায় প্রতিদিনই, পণ্ডিত ও হেড্‌ মাষ্টর মহাশয় দ্বয় আমাদিগকে ব্রাহ্ম ধর্ম্মের উপদেশাদি দিতে লাগিলেন। আমরা ছাত্রগণ মধ্যে একটা হুলুস্থুলু পড়িয়া গেল। কতক দিন স্কুল স্থাপনের হুলুস্থুলে কাটীয়া গিয়াছে, এ আবার ধর্ম্মের হুলুস্থুল আরম্ভ হইল। প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর অধিকাংশ ছাত্রই তাহাতে মাতিয়া পড়িলাম।
  • achintyarup | 125.187.53.190 | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৩559267
  • পূর্ব্বেই বলিয়াছি যশোদল গ্রামে আমি ব্রাহ্ম হইয়াছি বলিয়া একটা হৈ চৈ পড়িয়া গিয়াছে। আমিও এ দিকে মাতুয়ারা, মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন, কিছুতেই ব্রাহ্ম ধর্ম্ম ছাড়িব না। একদিন মনে মনে চিন্তা করিলাম, যশোদলের ভাত ত উঠিল এখন কোথায় থাকিব। বাড়ী হইতেও খরচপত্র রীতিমত চলিতেছে না, যাই বা কোথায়। এইরূপ চিন্তার পর ঠিক করিলাম যে অবস্থাই ঘটুক যশোদল গ্রামে আর থাকা হবে না, আগামী কল্যই এ স্থান পরিত্যাগ করিতে হইবে। বাটীস্থ কর্ত্তৃকে আমি মামী ঠাকুরাণী ডাকিতাম, তাহাকে বলিলাম, মামী ঠাকুরাণী আমাকে বিদায় দিন, আমি কল্য চলিয়া যাইব। তিনি অনেক কান্দা কাটা করিয়া বলিলেন তোমার মত পরিবর্ত্তন কর আমাদিগকে ছাড়িয়া যাইও না। আমার ছেলেগুলী শিশু তাহারা তোমার সঙ্গে থাকিয়া তোমার সাহচর্য্যে কিছু শিখিবে আশা করিয়াছি। তুমি গেলে তাহাদের কি উপায় হইবে ইত্যাদী ইত্যাদী অনেক প্রবোধ বাক্য বলিলেন। তিনি বিশেষ বুদ্ধিমতি স্নেহ মমতার আধার ছিলেন। আমাকে আপন ভাগীনার ন্যায় যত্ন করিয়া খাওয়াইতেন ও নানা প্রকারে স্নেহের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিতেন। তাঁহার ছেলে কৈলাস, যোগেশ ও জ্ঞানও আমাকে আপন দাদার ন্যায় ভক্তিশ্রদ্ধা করিত। তাহাদের অমায়িকতা ও সদ্‌ব্যবহার আমি কখন ভূলিতে পারিব না, চিরকাল আমি তাহাদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকিব।
  • sosen | 78.105.152.253 | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৬:০০559268
  • প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণীটা শুনলে কেমং লাগে
  • ranjan roy | 192.69.150.184 | ১৮ আগস্ট ২০১৫ ০৭:৪৯559269
  • সত্যি কথা; এই রিভার্স স্কেলে হাঁটা ! তখন কি সাহেবদের দেশেও এমনি ছিল?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন