এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ছত্তিশগড়ের আঁকিবুকি

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ | ৮৭৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.115.126 | ১৪ অক্টোবর ২০১৩ ১০:০৯527469
  • :-(
    এইটা একটা বই হলে ভাল হয়।
  • aranya | 154.160.226.53 | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:২৮527470
  • সবকটা এপিসোড পড়লাম। রঞ্জন-দা বড় ভাল লেখেন
  • Ranjan Roy | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৪৯527471
  • সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।

    সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।

    সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।

    সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।

    সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।

    সুদে আসলে
    সেই যে গঙ্গারামবাবু একরাত্তির পঞ্চায়েতের দরবারে এক বদচলন নারীর প্রকাশ্য বিচার দেখেছিলেন (বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন গল্পটি দেখুন), সেটা ওঁর মনের পলিমাটিতে বেশ ভালরকম আঁচড় কেটেছিল। অন্ধকারে হ্যাজাকবাতির আলোয় মেয়েটির আবছা চেহারা, গলার চড়া স্বর, আবার জমিদার দাদুসায়েবের ধমক খেয়ে নেতিয়ে পড়া; এইসব ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারামের বুকের নিস্তরঙ্গ পুকুরে হঠাৎ এমন ঢেউ তুলল যে উনি আরও ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
    আসল কথা: ওই মেয়েটা, উম্মেদ কুঁয়র।ওই তো নষ্টের গোড়া।আর কেমন বুকের পাটা! প্রকাশ্য সভায় বললঃ মিশ্র গুরুজিকে নিয়ে আমার কোন নালিশ নেই। উনি ব্রাহ্মণদেবতা; চেয়েছেন, আমি দান করেছি।
    নিজের শরীর দান করেছে, সেটা আবার বড় মুখ করে বলছে!
    কোলকাতার ট্রেনিং সেন্টারে এক বাঙালী কলিগের কাছে শোনা কবিতার লাইন ভ্যাবাগঙ্গারামের মাথায় পাক খেতে থাকে।
    এই পূথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন, তোমার শরীর
    তুমি দান করনিতো?
    সময় তোমাকে সব দান করে চলে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মূত।

    ধ্যেৎ,কিসব ভাবছি!একজন নারী তার নিজের শরীর যাকে ইচ্ছে দান করবে, বা করবে না; তাতে কার বাবার কী?আমিই বা কেন ফালতু মাথাখারাপ করছি?
    গঙ্গারাম লজ্জা পেলেন। আজ রোববার, ব্যাংক বন্ধ।গায়ে লাগা স্টাফ কোয়ার্টার। ভাবলেন সময় কাটাতে অফিস খুলে কিছু পেণ্ডিং কাজ সেরে নিলে কেমন হয়?এদিকে চাপরাশি বুধরাম ঘর ঝাঁট দিয়ে তাজা খবরের কাগজ আর জলের গেলাস রেখে গেছে।
    খেয়াল হল আজকের দৈনিক পত্রিকাটি পড়া হয় নি।
    অস্ট্রেলিয়ায় শিবরামকূষ্ণানের লেগস্পিন ও গুগলি ভালই খাচ্ছে।কিন্তু বর্ডারের ক্যাপ্টেনশিপ?আজহার বলে নতুন ছেলেটা ব্যাকলিফট কম করলে ক্যাঙারুদের দেশে বেশি রান পাবে।
    ছত্তিশগড়ের কোন অজ পাড়াগাঁয়ে একটা তেমুন্ডে বাছুরের জন্ম হয়েছে। আরেকটা জায়গায় একটি মেয়ের কান দিয়ে সুগন্ধি চাল বেরোচ্ছে। ধ্যেৎ, কাগজটা বন্ধ করলে হয়।
    এইসব নানারকম ‘ধ্যেৎ, ধ্যাত্তেরি, ধুত্তোর’ এর পালার মাঝখানে বুধরাম এসে বলল যে দাদুসায়েব নাস্তা করতে ডাকছেন।অফিসে পড়ল তালা,গঙ্গারাম চলল বারান্দা পেরিয়ে দাদুসায়েবের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় যার দরজা কিছু অম্তরঙ্গদের জন্যেই শুধু খোলে।
    গঙ্গারাম গিয়ে দেখল ঘর খালি, একজন সাদা থান পরা মহিলা বাবা আদমের জমানার সোফা, টেবিলগুলোকে একটা পালকের ঝাড়ন দিঁয়ে সাফ করছিলেন।ওকে দেখে চমকে উঠে জিভ কেটে ঘোমটা টেনে পালিয়ে গেলেন।যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকালেন। মনে হল বয়স চল্লিশ ছোঁয়নি এখনো।

    –উনি বড়ী বহুরানি, দাদুসায়েবের সম্পর্কে ভাবীজি।ঠাকুরসাব গুজর গয়ে দশসাল হোথে।

    বুধরামের টীকা শেষ হবার আগেই দাদুসাব হাজির।লুঙ্গির উপর চিকনের কাজ করা কুর্তা। কলপ লাগানো চুলের কালো বড্ড বেশি চকচকে, কোথাও কোথাও জুলপি ছাড়িয়ে কপাল আর গালের চামড়ায় জুতোর পালিশের মত লাগছে।
    –আইয়ে ম্যানেজার সাব! ছুট্টি কে দিন ভি কাম? আরে থোড়া আরাম কীজিয়ে। কুছ গপসপ হো জায়ে।
  • Ranjan Roy | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৫০527472
  • সরি! সরি! কি যাত হচ্ছে।
  • Ranjan Roy | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ০০:১৬527473
  • কখন যেন বুধরাম ভেতর থেকে নিয়ে এসেছে একথালা ফুলুরি, স্থানীয় ভাষায় ভাজিয়া; সঙ্গে ছোট বাটিতে লাল লংকা–আদা–টম্যাটো পেষা চাটনি।এরপর ফুলকাটা কাঁচের গ্লাসে ঠান্ডা জল আর অতিথিদের জন্যে বের করা চিনেমাটির বিশেষ কাপে দুধ–চা, কড়িমিঠি।
    একপ্রস্থ শেষ হতেই বুধরাম আর একপ্লেট নিয়ে এসেছে। গঙ্গারাম হাঁ–হাঁ করে উঠতেই দাদুসায়েব ধমকে ওঠেন: আরে খান, খান! এই তো খাওয়ার বয়েস।ছত্তিশগড়ে চাকরি করে ভাজিয়ার প্রেমে পড়বেন না , সে কি হয়?
    নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠে বললেন– গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করলে কোথায় অজ পাড়াগাঁয়ে আদাড়ে– পাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে হবে; সময়ে অসময়ে খাবেন কী? আজ্ঞে, এই ভাজিয়া। যে কোন জায়াগায় এর দোকান পেয়ে যাবেন। বেসনের মধ্যে কুচো পেঁয়াজ আর কাঁচালংকা চটকে গরম তেলের কড়াইয়ে ছাড়ুন আর ছেঁকে তুলুন। এই নিয়ে তো ছত্তিশগড়ি দদরিয়া লোকগীত আছে, শোনেননি?
    ‘চানাকে দার রাজা, চানা কে দার রানি,
    চানাকে দার গোঁদলি মেঁ কড়কয়থে।
    আরে, টুরা রে পর বুধিয়া, হোটেল মেঁ ভাজিয়া
    ঝড়কয়থে’।
    ( ছোলার ডাল গো রাজা, ছোলার ডাল যে রানি,
    ছোলার ডালের ভাজিয়ার গুণ কীই বা বলা যায়!
    ছোঁড়ার মাথায় কি যে আছে, বন্ধুর কথায় নাচে,
    হোটেলে গো ভাজিয়া সাঁটায়!’)

    কি রে বুধরাম, তুই জানিস না?
    বুধরাম হেসে মাথা নাড়ে।
  • Ranjan Roy | ০৮ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:২৪527474
  • (২)
    নানান আশকথা–পাশকথার পর দাদুসায়েব জিজ্ঞেস করলেন –– আজকের খবরটা দেখেছেন?
    –কোনটা? আজহারউদ্দিনের ব্যাটিং?
    –ধ্যেৎ, রাখুন তো আপনার ওই ব্যাটবল! আসল খবর হল একজন ঠাকুরসাব রাজকাপুরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন।
    –কেন?
    –কেন আবার কি? উনি ‘প্রেমরোগ’ বলে একটা সিনেমা বানিয়েছেন তাতে একজন ঠাকুরা্ইনকে বিধবা হওয়ার পর আবার বিয়ে করতে দেখানো হয়েছে।এতে দেশের সমস্ত ঠাকুরসমাজ, মানে ক্ষত্রিয়রা অপমানিত হয়েছে।আমিও।এগুলো ফিলিমওলাদের অবাস্তব কল্পনা। কোন ঠাকুরপরিবারের বিধবা দু’বার বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারে না।ওসব নীচুজাতের মধ্যে হয়।
    যেমন ছত্তিশগড়ে সতনামী ও অন্য অচ্ছুৎ সমাজে শুধু বিধবা নয়, অন্যরাও কয়েকবার বিয়ে করতে পারে। একে বলে ‘চুড়িপরানো’। মন লাগলো তো একস্বামীর ঘর ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে পালিয়ে গেল, আর সে ব্যাটা ওকে চুড়ি পরিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এল, মেয়েটি হবে ‘চুড়িহাই পত্নী’।এ’রম ঠাকুর পরিবারে জন্মানো কোন মহিলা করবে? মরে গেলেও না!
    –আরে দাদুসায়েব! আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। জল খান।মেয়েরাও মানুষ তো, ঠাকুর বা যেকোন পরিবারেই জন্মাক না কেন?

    দাদুসায়েব হাঁফাতে লাগলেন।
    –আপনারা বুঝবেন না। দু’পাতা আংরেজি পড়া সেদিনের ছোকরার দল। আমাদের সংস্কার জানেন না। আমাদের ঘরের বিধবা জানে যে বিয়ে জীবনে একবারই হয়,আর সেটা ঠিক হয় ভগবানের দরবারে।
    আমাদেরই সমাজের পদ্মিনী জৌহরব্রত করেছিলেন, জানেন তো?বিধবা মেয়েছেলে ঘর–গেরস্থালি, মন্দিরের দেখাশুনো পূজোআচ্চা নিয়ে এমন ব্যস্ত থাকে যে মনে কোন কুচিন্তা আসতে পারে না।
    আমাদের বাড়িতেই দেখুন আমার পিসতুতো বৌদিকে। বিধবা মানুষ, আমার ঠাকুরাইনের স্বর্গবাসের পর উনিই এ বাড়ির মালকিন। ভাঁড়ারের চাবি ওনারই আঁচলে বাঁধা। নিষ্ঠাবতী মহিলা। আপনার কি মনে হয় এত সম্মান পেয়েও উনি সুখে নেই?

    মাসখানেক পরে একদিন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার মুখে বুধরাম এগিয়ে দেয় একটা পাসবুক আর টাকা তোলার উইথড্রয়াল ফর্ম।
    –কী ব্যাপার রে?
    –নারাজ না হোনা সাহাব!দিদি আজ খুদ নহী আ সকতি। দস্তখত করকে মোলা দিহিস। খাতে সে পৈসা আমি নিয়ে যাব।
    –কে তোর দিদি?
    –উম্মেদ কুঁয়র। তবিয়ত ঠিক নহী হ্যায়।
    –কিন্তু ও তো সই করতে পারে না, অংগুঠা ছাপ। এতে তো বিয়ারার পেমেন্ট করা যায় না।

    বুধরাম গরুর মত ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে থাকে কিন্তু নড়ে না।
    –আচ্ছা, ঠিক আছে। সত্তর টাকা তো? এককাজ কর্। আমার মোটরবাইকের পেছনে বোস্।দুজনেই যাব তোর দিদির বাড়ি, সামনে টিপছাপ নিয়ে তবে পেমেন্ট করব। তোর দিদি বলে কথা!

    রাত্তিরে ফিরে এসে গঙ্গারাম নিজের হাতে ডিমের ঝোল, আলুসেদ্ধ–ভাত রাঁধলেন। বুধরামকে বল্লেন ট্রানজিস্টর চালিয়ে দিতে– রায়পুর স্টেশন। লোকগীতের মনকেমন করা উদাস সুর ভেসে আসে।
    ‘তঁয় একেলা যাবে, হংসা মোর, একেলা যাবে।
    জায়েকে বেলা রে, একেলা যাবে’।
    (যে পথে যেতে হবে, সে পথে তুমি একা! ও মোর হংসরূপী আত্মা।)
    গঙ্গারাম রেডিও বন্ধ করে দিলেন।

    খাওয়ার পর বুধরাম বাসন ধুচ্ছে, গঙ্গারাম ওকে ডাকলেন।
    –শোন, সারাজীবন অংগুঠাছাপ হয়ে থাকা বড় অভিশাপ রে!কাল থেকে লেগে যা।আমি তোকে লিখতে পড়তে শেখাব। ঢের সময় পাস্, খামোকা বিড়ি টেনে আর দাদুসায়েবের মুনিষজনের সংগে গুলতানি করে নষ্ট করিস না’।

    রাত্তিরের মনখারাপ করা বিষণ্ণতা আর ব্রাত্যজনকে অক্ষর পরিচয় করানোর তাগিদ সকালের রোদ্দূর কড়া হতেই কেমন উপে গেল।তবু সন্ধেবেলা বুধরামকে গঙ্গারামের সামনে আসনপিঁড়ি হয়ে বসতে হল। ওর হাতে সদ্যকেনা স্লেট–পেন্সিল।
    আধঘন্টাও কাটল না, গঙ্গারাম হাঁফিয়ে উঠলেন।
    ভারি বালতি–বওয়া, কুড়ুল দিয়ে কাঠ চেরা কড়া পরা হাতে পেন্সিল ধরতে শেখানো যে এত কঠিন হবে ভাবতে পারেন নি। আঙুল বেঁকছে না।কি ঝকমারি রে বাবা!– হবে, হবে। সময় লাগবে, ঘাবড়াস নে।
    গঙ্গারাম কাকে বললেন? বুধরামকে? কি নিজেকে?

    সেদিন কোন স্থানীয় পরব ছিল। ব্যাংকে লোকজন নেই বললেই চলে।চা খেয়ে, মাছি তাড়িয়ে সময় কাটছে না।ভাতঘুম চোখের পাতায় জেঁকে বসছে।এমন সময় ক্যাশিয়ার মাঠের দিক দিয়ে হেঁটে যাওয়া কাউকে দেখিযে প্রায় ‘অমানুষ’ সিনেমার উৎপল দত্তের কায়দায় বলল–– ও যা রহে হ্যায় সরকার, আপকা কাম কা আদমী!
    ওর তর্জনী অনুসরণ করে গঙ্গারাম দেখলেন একজন বছর তিরিশের লোক ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটছে, কিন্তু পা পড়ছে ঢিমে তেতালায়। ঠিকমত সমে আসছে না।লোকটাকে চিনতে পারলেন। মাত্র গত সপ্তাহে শাকসব্জি বিক্রির ব্যবসা করতে ‘আই আর ডি পি’ সরকারি প্রজেক্টে পাঁচহাজার টাকা লোন দিয়েছেন।
    গলা চড়ল– এ, এ সোহন! ইধর আ!ইধর আ নিপোড়!( এদিকে আয়! আয় বলছি, ক্যালানে কোথাকার!)যা বুধরাম, পকড় কে লে আ উস্ বেওকুফ কো।
  • Ranjan Roy | ১০ নভেম্বর ২০১৩ ০০:০৪527475
  • খানিক পরে বুধরামের সঙ্গে ঢুকল এক মূর্তি; পরণে চেককাটা লুঙি ও সস্তা সিল্কের পাঞ্জাবি, গলায় লাল রুমাল, মুখের কষ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানের পিক।কামরার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে মহুয়ার তীব্র গন্ধ।
    –নমস্তে সরকার! মাফি দেও মালিক, বুরা না মানো!
    –কি রে হতভাগা! ব্যাংকলোনের পুরো পয়সাটা দারুভাট্টিতে দিয়ে এলি?
    –নহী সরকার! ইয়ে গলত বাত হ্যায়। লোনকা এক ভী পৈসা দারু মেঁ নহী গয়া। মদ তো আমি নিজের পয়সায় খাই।
    –ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পাস নি? ব্যাংকের পয়সায় কেনা শাকসব্জি কোথায়?
    –সচ্ বোলতা হুঁ হুজুর। মেরে উস্তাদ কী কসম!সব্জি কেনাবেচার ধান্ধা? ও তো আমার বাঈ করে। আজকেও দুই ঝুড়ি শাকপাতা নিয়ে কাঠঘোরার হাটে গেছে, রাত্তিরে ফিরবে। কাল সকাল সাতটায় যদি এই গরীবের ঘরে পায়ের ধুলো দেন তখন সব হিসেবনিকেশ কিলিয়ার করে দেব। আমি কলাকার, বেইমান নই।

    হ্যাঁ হুজুর, আমি কলাকার, মানে আপনাদের আর্টিস্ট।বাড়ি থেকে পালিয়ে সেই কলকাতায় গিয়ে মেটিয়াবুরুজের উস্তাদ হাফিজ নগীনার কাছে পাঁচবছর সাগরেদি করে গজল–কাওয়ালি শিখেছি।এ’বছর গণেশপূজোয় এই গাঁয়েই আমার প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ সময়ে সরপঞ্চ ধোঁকা দিল।

    গঙ্গারামবাবু হতভম্ব। এর বৌ শাকসব্জি বেচে, তো এ কী করে?
    –খুলে বলি সরকার। মেটিয়াবুরুজ থেকে ফিরে গাঁয়ে গাঁয়ে গান গেয়ে বেড়া্ই, কিছু দক্ষিণা পাই, দিন চলে যায়।এমনসময় ‘নজর লড় গয়ি হ্যায়, তো মনমেঁ খটকওয়া হইবে করি!’
    যে নারীর সঙ্গে দো–আঁখে–চার হল সে জাতে চামার।বাড়ি থেকে বের করে দিল, সমাজে একঘরে হলাম।তাতে কি? ভিনগাঁয়ে ঘর বাঁধলাম, ছেলেপুলে হল। এখন বৌ রোজগার করে, আমি ঘর সামলাই, রান্নাবান্না করি আর বাচ্চা সামলাই।
    আর কখনও সখনও গানের প্রোগ্রাম পেলে শ’দুই কামিয়ে নিই।

    ইতিমধ্যে ক্লার্ক বলার চেষ্টা করল– ব্যাটা পাঁড় মাতাল, ওর সব কথা বিশ্বাস করবেন না।
    ধমকে উঠল সোহনলাল– তুম চুপ রহো জী! হম দেবতা সে, হমারে মালিক সে বাত কর রহেঁ হ্যাঁয়, নৌকর সে নহীঁ।আপনি চিন্তা করবেন না সরকার।লোনের কিস্তি ঠিক সময়ে জমা হয়ে যাবে।
    আমার বাঈ করবে। কখনো কখনো আমিও আসব, আপ দেবতাকে দর্শন কে লিয়ে।

    এবার সোহন সামনে হাত মেলে দিয়ে গেয়ে উঠল– দরশন দো ঘনশ্যাম নাথ মোরি, আঁখিয়া পিয়াসী রে!
    তারপর হাত নেড়ে নেড়ে অদূশ্য ব্যাঞ্জো বাজাতে লাগল– টিংরিং– – রিংরিংরিংরিং–রিং, টিংরিং– – রিংরিংরিংরিং–রিং।

    সোহনলালের গান শোনা গেল একমাস পরে, হোলির দিনে।

    বিশাল মিছিল, প্রায় জনা চল্লিশ লোক।নাচতে গাইতে আসছে রাজবাড়ির অর্থাৎ, দাদুসায়েবের কোঠির দিকে।মাদল বাজছে, সঙ্গে করতাল– এরা বলে মঞ্জিরা।লিড করছে সোহনলাল, বাকিরা দোহার। অনেকেই ভাঙ খেয়েছে। কেউ কেউ আলু কেটে তাতে ব্লেড দিয়ে যৌনক্রিয়ার সবচেয়ে পরিচিত হিন্দি শব্দটি খুদে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে।আর রঙ লাগিয়ে সবার বুকে ছাপ লাগাচ্ছে।
    গঙ্গারামকে দেখামাত্র ভীড় চেঁচিয়ে উঠল– লাগা, লাগা! ব্যাংকওয়ালে সাহাবকো লাগা।
    আর মুহুর্তের মধ্যে গঙ্গারামের জামায় মুদ্রিত হল গালিটি। ওর ভ্যাবাগঙ্গারাম চেহারা দেখে আরও একপ্রস্থ হাসির হররা ছুটল।খানিকক্ষণ পরে ব্যাংকসাহাবও সবার সঙ্গে মিলে সোহনলালের গানের সাথে নাচতে লাগল।
    ‘রং পিচকারি, সন্মুখমারি; ভিগি আঙ্গিয়া, অউর ভিগি শাড়ি। আরে হোলি মেঁ ঝুম গয়ে শ্যাম, অরে হোলি মেঁ’।
  • Ranjan Roy | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ২০:০৫527476
  • দুপুরে পুকুরে চান করার সময় ঘাটে বসে গায়ে সাবান মাখতে মাখতে গঙ্গারাম দেখলেন এপারে ওপারে অশ্লীল গালাগালির কম্পিটিশন চলছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা হাসিমুখে অনায়াসে এ ওর বৌ ও বোনের সাথে সম্পর্ক জুড়ছে।যাহোক করে চান শেষ করে দুটো ভাতডাল খেয়ে বিছানায় ডাইভ মারার আগে বুধরামকে বলা হল হোলির মিষ্টির থালিতে নমকিন, গুজিয়া এসব সাজিয়ে দাদুসাহেবের বাড়িতে পৌঁছে দিতে।

    (৩)
    সপ্তাহ দুই কেটে গেল।বাতাস গরম হচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ ধুলোর ঘূর্ণি ওড়ে।ঝেঁটিয়ে দেয় যত ঝরাপাতা।বাতাসে ম’ ম’ করে মহুয়া ফুলের গন্ধ।
    গঙ্গারাম বেলা একটা নাগাদ মোটরসাইকেলে করে একটা রিকভারি ট্যুর থেকে ফিরছিল, ব্যাংকের কাছে পৌঁছতেই দেখতে পেল বিরাট ভিড়। ওকে নামতে দেখেই ভিড় থেকে আওয়াজ উঠলো– আ গয়ে, আ গয়ে!
    আর ও মোটরবাইক থেকে নামা মাত্র একজন আধবয়সী মহিলা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল ওর হাঁটু।
    –হুজুর! আমার ছেলেকে বাঁচান!
    বারান্দার থামের গায়ে পিছমোড়া করে বাঁধা রয়েছে বুধরাম।কষের পাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরনে একটা হাফপ্যান্ট, গায়ে জামা নেই।ফলে গায়ে দাগড়া দাগড়া কালসিটে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একটা মোষবাঁধার মোটা দড়ি পাকিয়ে ওকে চাবকেছেন দাদুসায়েব। অনেকক্ষণ ধরে চলায় হাঁফিয়ে পড়েছেন। এখন শুধু গালাগাল আর চিৎকার।
    বুধরাম নেতিয়ে পড়েছে, কোন প্রতিবাদ নেই।
    গঙ্গারাম প্রথমেই দাদুসায়েবের হাত থেকে মোটা দড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
    –কী করছেন কি? ছেলেটা মরে যাবে যে!
    –মরে যাওয়াই ভাল ছিল ওর। দুধকলা দিয়ে ঘরে নাগ পুষেছি।আমাকে না বলে ওকেই জিজ্ঞেস করুন,– জানেন কী করেছে ও? চুরি করেছে।
    –চুরি? বুধরাম চুরি করেছে? বিশ্বাস হয় না।
    –আমি কি মিথ্যে কথা বলছি? চারদিন আগে ধানবেচার চারশ’ টাকা টেবিলের নীচের ড্রয়ারে রেখেছিলাম, হ্যাঁ, ওর সামনেই। বিশ্বাস করতাম যে! কাল থেকে পাচ্ছি না। আজ ওর টিনের তোরঙ্গ থেকে বেরিয়েছে।পানদোকান থেকে বিড়ি না কিনে সিগ্রেট কিনেছে, তখনই সবার সন্দেহ হয়েছিল। সবাই জানে আপনি সিগ্রেট খান না, তবে?

    গঙ্গারাম চুপচাপ ওর বাঁধন খুলে দেয়।বুধরামের মা আর ক’জন ওদের সমাজের লোক এসে ওকে নিয়ে যায়।গঙ্গারাম বললেন– আগে মিশ্র ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। আমার নাম করলে পয়সা লাগবে না।
    এবার মুখ খুললেন দাদুসায়েব– ম্যানেজারবাবু, আপনাকে অন্য লোক দেখতে হবে।চোরকে তো
    আর ব্যাংকে রাখা যায় না!ছোটবেলা থেকে দেখছি,পুলিশে দেব না।কিন্তু কাল সকালে ওকে এই গ্রাম
    থেকে চলে যেতে হবে।
    গঙ্গারাম আস্তে আস্তে মাথা নাড়েন।

    ভোরবেলা।বিজলী চলে গেছে। মশারির ভেতরে গুমোট, গঙ্গারামের ঘুম ভেঙে গেল।
    একটা মোমবাতি কে যেন টেবিলের ওপর রেখে গেছে।আস্তে আস্তে একটি ছায়ামূর্তি বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকছে।বুধরাম–হাতে চায়ের কাপ।
    –কি রে, তুই? এত ভোরে?
    –হ্যাঁ, চা খেয়ে নিন। আমি এখন যাব, জামাকাপড় গুছিয়ে নিয়েছি।
    –কোথায় যাবি?
    –দিদির গাঁয়ে, অমরতাল।
    –দিদি?
    –হ্যাঁ, উম্মেদ কুঁয়র। ওর কাছে থাকব, নিতে এসেছে।

    গঙ্গারাম কিছু ভাবেন।তারপর বালিশের তলা হাতড়ে একটা পঞ্চাশটাকার নোট বের করে ওর দিকে এগিয়ে দেন।
    –নে, এটা রাখ।
    বুধরাম যেন ভূত দেখেছে, মাথা নাড়ে, পিছিয়ে যায়।
    গঙ্গারাম বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন, এগিয়ে যান।
    –কি হল? ধর, আমি দিচ্ছি।
    বুধরামের হাত থেকে চায়ের পেয়ালা পিরিচ মাটিতে পড়ে খানখান হয়ে যায়।অস্ফুট স্বরে বলেঃ
    –রুপিয়া তো ওহু দিহিস্।
    –কৌন দিহিস্?
    –বড়ে মালিক, দাদুসাব!
  • Ranjan Roy | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ২১:৩২527477
  • (৪)
    ফোঁপানি ও ঢোঁকগেলার মাঝে একটু একটু করে বুধরাম শোনায় এক আজব গল্প।
    সেই হোলির দিন দুপুরে বুধরাম ব্যাংকের কোয়ার্টার থেকে হোলির প্রসাদ নিয়ে দাদুসাহেবের কোঠিতে থালা পৌঁছাতে যাচ্ছিল।শুনশান চারদিক।ঠাকুর–চাকর সিদ্ধির নেশায় ঢুলছে।বুধরাম পেরিয়ে যায় বারান্দা, করিডর, খালি ঘরগুলো–– একের পর এক।
    বৈঠকখানার দরজাটা ভেজানো; ও ভাবে টেবিলে ঢাকা–থালা রেখে চলে আসবে।দরজা একটু ঠেলে ভেতরে যেতে গিয়ে ও পাথর হয়ে যায়।তক্তপোষে শায়িত দুই মানবশরীর।খেলায় মেতেছে।দেয়ালের দিকে পাশ ফেরা বয়স্ক পুরুষ তো ঠাকুরসায়েবের মত, কিন্তু ওদিকের নারীশরীরটি?
    ওপাশ থেকে গড়িয়ে আসার সময় নারীমূর্তিটি দেখতে পায় বুধরামকে, চমকে উঠে গায়ে কাপড় টানে।
    বুধরামের যেন অঙ্গদের পা’, মাটিতে সেঁটে গিয়েছে।হঠাৎপেছন ফিরে প্রাণপনে দৌড় লাগায়। ক’দিন আর ও’মুখো হয় না, ব্যাংকেই এঁটুলির মত সেঁটে থাকে।
    গতকাল দাদুসায়েব ওকে ধরে ফেলেন। ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া বুধরামকে চারটে বড় পাত্তি দিয়ে বলেন––হোলির বকশিস, কাউকে বলার দরকার নেই; ম্যানেজার সায়েবকেও না।

    খানিকক্ষণ পরে গঙ্গারাম বলেন– তোকে কোথাও যেতে হবে না, এখানেই থাকবি। আমি দাদুসায়েবের সঙ্গে কথা বলব।
    –থাক না সায়েব, কোন লাভ নেই।খামোকা আপনার সঙ্গে অশান্তি হবে। বড়ে মালিকের সম্বন্ধে আমার মুখের কথা কে বিশ্বাস করবে? আর আমি যে কাল পানঠেলা থেকে সিগারেট কিনেছি– সেটা তো সত্যি! তার চেয়ে এই ভাল।
    (শেষ)
  • ranjan roy | 24.98.230.193 | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ১৪:২৪527479
  • ছত্তিসগড়ের আঁকিবুকি
    তোলা দাঈ বুলা্থে!

    নাঃ, মানতেই হবে ভাগ্য বলে কিছু একটা আছে; নইলে এই বাজারে পাশ করতেই চাকরি! কয়জনের জোটে?আমি রায়পুরের বড়ইপাড়ার মনবোধি দেবাংগন, মাত্তর তিনমাস আগে আইটিআই থেকে ড্রাফটসম্যানের পরীক্ষা পাশ করেছি আর গতকাল পিয়ন এসে টেলিগ্রামটা দিয়ে গেল!
    কোরবা জেলার আদিবাসী এলাকায় কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। বিশাল ভান্ডার। সেইখানে একটি আধা সরকারী সংস্থায় চাকরি। সার্ভে চলছে, ফিল্ড অফিসে কাজ। মাইনে আহামরি কিছু নয়।তবু মন্দ কি!
    খবরটা পরিচিত মহলে ছড়িয়ে পড়ল। পাড়াপড়শির দল ঝেঁটিয়ে এলেন শুভেচ্ছা জানাতে।
    ঃ কি গো মনবোধির মা! এত ভাল খবর, মিষ্টি কই?
    ঃ আচ্ছা, ছেলে তোমার কলেজেও যায় নি, ওই ছাতার আইটিআই না কি যেন, ওর থেকে একটা সার্টিফিকেট পেয়েছে। ওরকম তো অনেকেই পায়।তোমাদের ওপর মহলে চেনাজানা আছে বুঝি?
    ঃ এর আবার কথা কি! আজকাল ধরাকরা ছাড়া কিছু হয় নাকি? তবে ছেলের ও কিছু এলেম চাই।
    ঃ বেশ তো, দ্যাখো না, যদি আমার অকালকুষ্মান্ডটার জন্যে কিছু করতে পার। দুবছর হল কলেজের পাট চুকিয়ে ঘরে বসে আছে।
    হ্যাঁ, আমার ঘরের আবহাওয়া সত্যি পাল্টে গেছে।দুবছর পর রিটায়ারের সম্ভাবনায় বাবার কপালে পড়া ভাঁজগুলোর সংখ্যা কমেছে। বোন খুশি, দাদা নিশ্চয়ই এবার হারমোনিয়ামটা কিনে দেবে। আর মায়ের তো মাটিতে পা পড়ছে না!
    সত্যিই তো, পাড়ার বাকি ছোঁড়াগুলো না হয় কলেজে পড়েছে, তাতে ঘরের কী উবগারটা হয়েছে শুনি?
    মনবোধির পাপা না হয় কূষিদপ্তরের ক্লার্ক, আর ভগবান সিং ঠাকুর কালেক্টর অফিসের বড়বাবু, তাতে কি? জোটাক দেখি ছেলেটার জন্যে একটা ভাল চাকরি? উল্টে নিত্যিদিন পাড়ার কোন না কোন মেয়ের বাপের বাড়ি বয়ে নালিশ! ছেলেটা একেবারে বখে গেছে!
    আমার অবস্থা! চাকরি পাওয়ার প্রথম উচ্ছাস কেটে গিয়ে এখন কেমন যেন মুখের ভেতর একটা বোদা ভাব।এই রায়পুর শহরে বড় হয়েছি। এই জয়স্তম্ভ চৌক, সারদা টকিজ, গাস মেমোরিয়াল হলের গলি, কফি হাউস, গান্ধী উদ্যান, সব ছেড়ে যেতে হবে; তাও একটু একটু করে নয়, একদিনে!
    যেন আমার আত্মার সার্জারি হচ্ছে।
    আর আমার বন্ধুর দল! যাদের সঙ্গে দুবেলা বনোয়ারির পানঠেলায় দু এক খিলি মিঠিপাত্তি খেয়ে নতুন রিলিজ ফিলিম নিয়ে গলা ফাটিয়ে ,পাড়ার সেলুনে রাজ্যের কেচ্ছা শুনে, করপোরেশনের কাউন্সিলরের কাছে চাকরির উমেদারি করে, পাড়ার উঠতি ছমকছল্লোদের তুলনামূলক প্রোফাইল বানিয়ে এতদিন কেটেছে তারা সব ক্রমশঃ আঁখো সে দূর, দিলোঁ সে দূর হয়ে যাবে?
    আর কেমন হবে আমার অফিসটা? কম্পিউটার টেবিল, রিভলভিং চেয়ার? এসব কি ফিল্ড অফিসে হয়? আর আমার বস্! খুব কড়া? আমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবেন তো, আমি যে কিছুই জানি না!
    আচ্ছা, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাবার আগে মেয়েদেরও কি এমনই মনে হয়? রাত্তিরে ভালো করে ঘুম হচ্ছে না।
    ঘুম হচ্ছে না মাযেরও। ওনার সুপুত্তুরটি তো কখনো একগ্লাস জল গড়িয়ে খেত না, আর খাওয়া নিয়ে বড্ড বাছবিচার। ওই বিদেশ বিভুঁইয়ে ওর হাজার বায়নাক্কা কে সামলাবে?
    কে সামলাবে তা তো আমিও জানিনা। আর মাত্র কয়েকটা দিন।
    ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখা দিনটি এসেই গেল।
    প্যাসেঞ্জার ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। ধুতির খুঁট দিয়ে চশমার কাঁচ মুছতে থাকা বাবা আর হাসিমুখে হাত নাড়তে থাকা ছোটবোন ও দুইবন্ধুর চেহারা ক্রমশঃ মিলিয়ে গেল। আমি এবার একটু গুছিয়ে বসেছি।ছোট্ট বেডিং ও একটা সুটকেস বাংকের ওপর তুলে দিয়ে একটা জাসুসী নভেল বা রহস্যরোমাঞ্চ সিরিজ খুলে চোখ বোলাই কিন্তু মন লাগায় কার সাধ্যি!
    ছোট কামরাটিতে বোঁচকাবুঁচকি নিয়ে ওঠা যাত্রীদের পোষাক, ভাষা সবই কেমন যেন। পুরুষদের মাথায় বড় টিকি, গায়ে নীল হলুদ জামা।কানে পেতলের কুন্ডল, খেটো ধূতি, হাতে মুঠো বাঁধানো ছোট লাঠি। এরা বোধহয় রাউত বা গয়লা। মেয়েদের চুড়ো করা চুল, উন্মুক্ত বাহুতে উল্কি আর নাকে নথ। এরা সবাই তামাকপাতা চিবুচ্ছে আর পিচ্ করে কামরার মধ্যেই থুতু ফেলছে।আলাপচারিতা চলছে আমার কানের অভ্যস্ত পর্দার থেকে একটু চড়ায়।
    কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতে পারি নি।গাড়ির হ্যাঁচকায় চোখ খুলল। একটা স্টেশনে গাড়ি দাঁড়িয়েছে। লোকজন উঠছে, নামছে। ডিজেল বদলে কয়লার ইঞ্জিন। আওয়াজ বদলে গিয়ে এখন ঘ্যাঁচা ঘ্যাঁচা হুস্ হুস্।জানলা দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে আসছে কয়লার গুঁড়ো। চোখ মুছে গোটা কামরার ঝারি মারলাম। যাত্রীদের চেহারা পোশাক আশাক কিছু পাল্টেছে।
    পুরুষদের গালপাট্টা আরও বড়, মেয়েদের মাথার চুড়ো খোঁপা কেমন যেন ট্যারচা করে বসানো। কথাবার্তা একটু অনুনাসিক। হ্যাঁ, আদিবাসী এলাকায় এসে পড়েছি বটে।
    আমার গন্তব্য এ লাইনের অন্তিম স্টেশন, আরও একঘন্টা।কল্পনা করিঃ সেখানেও কি রাজকাপুরের বরসাত সিনেমার মত আমার প্রতীক্ষায় কোন আদিবাসী বালা দুহাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? আজা মেরা বালমা, তেরা ইন্তেজার হ্যায়!


    হুস হুস করে ট্রেন থেমেছে , আর এগোবে না। কামরা খালি করে শেষ কজন যাত্রীর সঙ্গে আমিও নেমেছি। নভেম্বরের শেষ। দ্রুত সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। বাকি যাত্রীর দল কখন সুট সুট করে অন্ধকার গাঁয়ের পথে মগলগয়ে গেছে।
    ছোট্ট স্টেশন। পাশে কয়লার স্তুপ।স্টেশনের ছোটবাবু বড়বাবু বলতে একজনই।
    না, আমার আসার টেলিগ্রাম পৌঁছয়নি। আর কোম্পানির ঠেক বা ক্যাম্প এখান থেকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে পাক্কা তিন কিলোমিটার। হ্যাঁ, সল্যুশন আছে। একজন কুলি কিছু দক্ষিণার বিনিময়ে কাঁধের বাঁক বা কাঁওড়ে করে আমার মালপত্তর বয়ে নিয়ে যা্বে। ও রাস্তা চেনে, কাজেই চিন্তার কিছু নেই।
    কূষ্ঞপক্ষের রাত।অনভ্যস্ত পায়ে কুলির পেছন পেছন ঠোকর খেতে খেতে চলেছি।ও এড়িয়ে চলছে কাঁটাঝোপ, উইঢিবি, বাঁশের কোঁড়। ও বলল এইসময়ে সাপের ভয় কম।আমার টর্চের আলোয় দুএকবার দৌড়ে পালায় কোলিহা, মানে খেঁকশিয়াল, আর খরগোস।কিন্তু বাঁশঝাড়ে সরসর, একটা উঁচু ঢিবির ওপর বসে ওটা কী? খানিকটা কুমীরের মত, গায়ে বড় বড় আঁশ, মুখের থেকে চেরা জিভ বেরিয়ে লকলক করছে! একেবারে বাচ্চাদের কমিকস্ থেকে উঠে আসা ড্রাগনের মত।
    আমার হাত থেকে টর্চ পড়ে গেল। কুলিটা আমাকে ধরে ফেলেছে।
    ঃ কাবর ডরথস্ সাহাব? ঝন্ ডরাবে, উয়ো তো গোহিলা হাবে।
    গোহিলা? মানে গোধিকা? অন্ধকারে প্রথমবার দেখলে সবারই হার্টফেল হতে পারে।
    আর দশ কদম এগিয়ে ডানদিকে বেঁকতেই উজ্বল আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেল।তারকাঁটা আর লোহার খুঁটি দিয়ে ঘেরা অনেকটা জায়গা, মাঝখানে টিন ও এ্যাসবেসটসের ব্যারাক মত, আর আঙিনায় কিছু মেশিনপত্তর, লোহালক্কড়, এই নাকি আমার অফিস বা ক্যাম্প! মনটা দমে গেল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন