এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী

    Biplob Rahman
    অন্যান্য | ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ | ৬৪৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:১৫507216
  • সেবস্তিয়ান মার্ডী : এক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা
    সালেক খোকন
    July6th, 2011
    .....................................................................................
    মাদলের তাল ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বাড়ছে এতদল নারী কন্ঠের সমবেত গানের সুর। গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচছে তারা। হলদে শাড়ি জড়ানো শরীর। হাতে সাদা শাখা আর খোপায় লাল জবা ফুল। হাত ধরাধরি করে পা মিলিয়ে নাচছে তারা। দুএকটা পা জড়িয়ে আছে নূপুরগুলো। ধুতি আর পাগড়ি পড়া এক আদিবাসী উদাসী ঢঙে মাদল বাজাচ্ছে। চারপাশে ঘিরে আছে গ্রামের সুধিজনেরা। এভাবেই চলছিল সাঁওতালদের খেমটা নাচের আসরটি।
    খেমটা নাচের এই দলটি সেবস্তিয়ান মার্ডীর। সেবস্তিয়ান বেশ আমোদি। খানিকটা নাচ-গান পাগলও। বিনে পয়সাতেই তার দলটি নাচ করে আশেপাশের আদিবাসী গ্রামগুলোতে। বিশেষ করে পূজার সময়টাতে এদের পাওয়াই দায়।

    অন্যের জমিতে চাষ করে যা পায় তাই দিয়ে কোনরকমে চলে সেবস্তিয়ানের পরিবারটি। আছে নানা অভাব অনটন। তবুও গান ছাড়ে না সেবস্তিয়ান। মাঝে মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে থাকে পুরোন মাদল আর ডিংগাটি। টাকা জমিয়ে বাদ্যগুলো কোন রকমে ঠিক করতে পারলেই আবারও শুরু হয় নাচগানের আসর।

    দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বেতুড়া। এ গ্রামেই আদিবাসীদের নাচ হচ্ছিল ‘হামরা দিনাজপুরিয়া’ নামের অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান ঘিরে প্রতি বছরই এখানে চলে আদিবাসীদের তীরধনুক নিক্ষেপ, তুমরি খেলা ছাড়াও বাঙালি কৃষকদের জন্য মজার সব আয়োজন। সে অর্থে এটি এ অঞ্চলের আদিবাসী ও বাঙালিদের মিলন মেলা।

    পুরষ্কার বিতরণের পর শুরু হয় সেবস্তিয়ান মার্ডীর নেতৃত্বে সাঁওতালদের খেমটা নাচ। আমরা নাচ দেখছি মুগ্‌ধ হয়ে। স্থানীয় সাংবাদিক ও অনুষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোগতা এম এ কুদ্দুস। পাশ থেকে সে জানালো সেবস্তিয়ান একজন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। কুদ্দুসের কথায় আমরা খানিকটা অবাক হই। আরো অবাক হই যখন জানি তিনি অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সনদধারী কোন মুক্তিযোদ্ধা নন। সনদহীন নিভৃত এক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি নিজেকে তেমন পরিচিত করেন না। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার কোন আক্ষেপ আর চাওয়া পাওয়াও নেই।

    বিকেলের দিকে অনুষ্ঠান শেষ হতেই সেবস্তিয়ান ফিরে যান তার দলটি নিয়ে। খানিকপরে আমরাও রওনা হই সেবস্তিয়ানের বাড়িমুখো। আমাদের সঙ্গি হয় এম এ কুদ্দুস।

    বুড়ির হাটের পাশ দিয়ে দুএকটা বাড়ি পেরোতেই কোন জনবসতি চোখে পড়ে না। চারপাশে শুধুই ধানক্ষেত। দূরে চোখে পড়ে মাটি আর ছনে ছাওয়া দুএকটা বাড়ি। কুদ্দুস জানলো এখানে এক সময় সাঁওতালদেরই আধিক্য ছিল। সন্ধ্যে হলেই আদিবাসী পাড়াগুলো থেকে ভেসে আসতো বাদল আর মাদলের শব্দ। সাঁওতালদের সেই অবস্থা এখন আর নেই। চরম দারিদ্রতায় অধিকাংশই ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রীস্টান হয়েছে। কিন্ত তবুও দারিদ্রতা তাদের পিছু ছাড়ে নি। তারা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে তাদের ধর্ম কেন্দ্রিক সংষ্কৃতিগুলো। কুদ্দুস জানালো সেবস্তিয়ানের পরিবার বহুপূর্বেই ধর্মান্তরিত হয়েছে। ফলে একধরণের ধর্মকেন্দ্রিক বৈষম্যের শিকার হয়েছে সেবস্তিয়ানসহ আদিবাসী পরিবারগুলো। খ্রীস্টাদের কাছে তারা আজ ‘আদিবাসী’। আর নিজ জাতির মানুষদের কাছে তারা জাতিত্যাগী ‘খ্রীস্টান’। ফলে এক ধরণের দু:খবোধ নিয়েই টিকে আছে ধর্মান্তরিত আদিবাসীরা।

    দূর থেকে সেবস্তিয়ানের বাড়ি দেখান কুদ্দুস। আমরা সে দিকেই এগৈ। যেতে যেতে কুদ্দুসের সাথে কথা চলে দিনাজপুরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। এম এ কাফি সরকারের মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর বইয়ের উদ্বৃতি দিয়ে সে জানালো দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী শুরু হয় কুটিবাড়ী থেকে। দিনাজপুর-রংপুর জেলা নিয়ে ছিল তখনকার ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এর দিনাজপুর সেক্টর। সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল শহরের দক্ষিণ -পশ্চিম উপকন্ঠ কাঞ্চন নদীর তীরে কুঠিবাড়ীতে।

    সাতাশে মার্চ ১৯৭১। কুটিবাড়ীর আম বাগানে পাওয়া যায় ১৭ জন নিরাপরাধ বাঙালির লাশ। তাদের হত্যা করেছিল পাঠান পাঞ্জাবী অবাঙ্গালী ইপিআররা। আটাশে মার্চ বাঙালি অফিসার ও জওয়ানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলো পাঠান পাঞ্জাবি অফিসাররা। সে থেকেই শুরু। কুটিবাড়ির ক’জন বাঙালি ইপিআর জওয়ানই শুরু করেছিলেন সেই সংগ্রাম। কথায় কথায় আমরা সেবস্তিয়ানের বাড়ির কাছাকাছি চলে আসি।

    আমাদের খবর পেয়ে ছোট্ট একটি মাটির ঘর থেকে বের হয়ে আসে সেবস্তিয়ান। জোহার বলে খাটিয়া টেনে বসতে দেয় আমাদের। আপনি তো একজন মুক্তিযোদ্ধা। এমন প্রশ্নে সেবস্তিয়ান নিশ্চুপ থাকে। উত্তর না দিয়ে বলে, ‘ বাবু কি হবে আর এসব শুনে’। স্মৃতি হাতরে সেবস্তিয়ান বলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা কাহিনী।

    রাগদা মার্ডী আর মেরী মুরমুর ছেলে সেবস্তিয়ানের মার্ডী। বাবা মা ধুমধাম করে কসবা মিশনের ছারা হাজদার সাথে বিয়ে দেয় সেবস্তিয়ানের। বিয়ের বেশ কিছুদিন পরেই শুরু হয় যুদ্ধ। সেবস্তিয়ানের গ্রামের ওপারে পশ্চিম দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ থানার রাধিকাপুর স্টেশন। সেবস্তিয়ান জানালো সে সময়টাতে তারা দেখতো দলে দলে লোক তাদের সর্বস্ব ফেলে সীমান্তপথে ভারতে যাচ্ছে।

    এক সময় তারাও পূর্বপুরুষের ভিটাবাড়ি ফেলে পাড়ি জমায় ভারতের শরণার্থী শিবিরে। তারা থাকতো গঙ্গারামপুরের কাছে শীববাড়ি ইয়োথ ক্যাম্পের পাশেই। দেশ থেকে আসা লোকদের দু:খগাথা কাহিনী শুনতেন এই যোদ্ধা। কিন্ত নিজের পরিবার ফেলে যুদ্ধে যাওয়ার কথা তিনি চিন্তাও করতে পারতেন না। নিজের জীবনের প্রতি এক ধরণের মায়া ছিল তার। অকপটেই সে কথাগুলো বলছেন সেবস্তিয়ান।

    এক সময় সেবস্তিয়ানের পরিচয় হয় জর্জ ভাইয়ের সাথে। জর্জ ভাই ছিলেন শীববাড়ি ইয়োথ ক্যাম্পের ৭ নং হামজাপুর সাব সেন্টারের কমান্ডার। তিনি সেবস্তিয়ানসহ শিবিরের আশেপাশের তরুণ ও যুবকদের যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করতেন। সেবস্তিয়ান বলেন জর্জ ভাই বলতেন, ‘চলেন যুদ্ধ করি, দেশে ফিরি, দেশ হলো মায়ের মতোন, আমরা তাকে দুসমনের হাতে ফেলে রাখতে পারি না’। বলতে বলতেই সেবস্তিয়ানের চোখ ভিজে যায়। জর্জ ভাইয়ের কথা আজো তার হৃদয়ে বাজে। মূলত জর্জ ভাইয়ের উৎসাহেই নিজের মাকে ফেলে দেশমাতাকে রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে যায় সেবস্তিয়ান।

    ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকের কথা। পরিচিত লিয়াকত, আলী সেক্রেটারী,পিউস, জহোনাসহ প্রায় ৫০জন ট্রেনিং নেন শিববাড়ীর তালদীঘিতে। সেবাস্তিয়ান জানালো তাদের মধ্যে সাহসী যোদ্ধা ছিল পিউস। তারা যুদ্ধ করতো রামসাগর এলাকায়। তবে জর্জ ভাই অধিকাংশ সময়েই তাকে ক্যাম্পের দায়িত্বে ব্যস্ত রাখতেন।

    আদিবাসী বলে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলনা কোন জাতপাত। সবার মা ছিল দেশ। তাকে মুক্ত করাই ছিল লক্ষ্য। মুচকি হেসে সেবস্তিয়ান সাঁওতাল ভাষায় বলেন, ‘ যত হরগি মওজ গেলে তাহেনা বইহা লিকা’ অর্থ্যাৎ সবাই ছিলাম ভাই ভাই হিংসা বিদ্বেষ ছিলো না।

    যুদ্ধের সময়ের সহযোদ্ধাদের কথা মনে হলে এখনো তার মন কাদে। প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে বেড়োত এক একটা দল। দুএকজনের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল সেবস্তিয়ানের। অপারেশন থেকে ফিরার পর সে দেখতো তার সেই বন্ধুটি ফিরে নি। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। অনেকেই ফিরতো রক্তাক্ত হয়ে। কত জনই শহীদ হয়েছে অথচ তাদের পকেটে পাওয়া যেত প্রিয়জনকে লিখা কয়েকটা চিঠি।

    সেবস্তিয়ান জানালো দেশ স্বাধীনের পর তারা সবাই জড়ো হয় দিনাজপুর স্টেডিয়ামে। কয়েকদিন থাকার পরে চলে আসেন নিজের ভিটায়। শুরু করেন পূর্বপুরুষদের কৃষি পেশা।

    মুক্তিযুদ্ধের সনদপত্রের কথা উঠতেই চুপ হয়ে যান সেবস্তিয়ান। ভবিষ্যতে সুবিধার কথা চিন্তা করে তো কেউ মুক্তিযুদ্ধে যায় নি। যুদ্ধের পরে কাগজপত্রগুলো পড়ে ছিল ঘরে। একবারের বন্যায় ভেসে যায় অধিকাংশ কাগজগুলৈ । এখন অবলম্বন শুধু ক্যাম্পের ডিসচার্জ সনদটি।
    বাড়ি সীমান্তবর্তী হওয়ায় কি ভাবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেতে হয় তা জানা ছিল না সেবস্তিয়ানের। তার পাল্টা প্রশ্ন ,‘ সনদ দিয়েই কি মুক্তিযোদ্ধাদের চেনা যায়’। সে জানালো যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য। আজ যখন দেশ হলো আইন হলো তখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের সনদ নিয়ে অমুক্তিযোদ্ধারাও পাচ্ছে সরকারী সম্মান ও সহযোগিতা।

    জাতীয় দিবসগুলোতে উপজেলা সদরে সরকারিভাবে চলে কুচকাওয়াজ আর মুক্তিযোদ্ধদের সংবর্ধনার। বেতুড়া থেকে সেই অনুষ্ঠান দেখতে যান সেবস্তিয়ান। দূর থেকে দেখেন মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার অনুষ্ঠানটি। কিন্ত সরকারি কাগুজে সনদ না থাকায় কোন সম্মান মিলে না এই যোদ্ধার। ফলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরেন সেবস্তিয়ান।

    মুক্তিযোদ্ধা সেবস্তিয়ান বিষয়ে আমাদের কথা হয় দিনাজপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিক গজনবী , বিরল উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী ও জর্জ ভাইয়ের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা রবাট আরএন দাশের সঙ্গে। তারা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন সেবস্তিয়ান একজন মুক্তিযোদ্ধা। একই সাথে তারা দু:খ প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় সেবস্তিয়ানের নাম না থাকায়। বিরলের ডেপুটি কমান্ডার জানালেন স্বাধীনের পর সেবস্তিয়ান সনদদের জন্য যোগাযোগ না করায় তার সনদ মিলে নি। সনদ না থাকলে কি কোন চিহিঋত মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত করা যায় না। এমন প্রশ্নে নি:চুপ থাকেন তিনি।

    সেবস্তিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ফিরতি পথ ধরি। সন্ধ্যা পেরিয়ে তখন রাত। চারপাশে ¯œগ্‌ধ জো¯œআর আলো। মনে ভাবনা আসে স্বাধীনের এতো বছর পরে সরকারি নিয়মের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে মিলবে কি মুক্তিযোদ্ধা সেবস্তিয়ানের কাগুজে সনদ কিংবা কোন সম্মান। নাকি মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধাদের স্মৃতি বুকে নিয়েই শেষ হয়ে যাবে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা সেবস্তিয়ান মার্ডীর জীবন প্রদীপ।

    http://www.salekkhokon.me/?p=486
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২০ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:২২507217
  • নিজ দেশে পরবাসী এক মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসী
    লিখেছেন: সালেক খোকন
    তারিখ: শুক্র, ১৫ জ্যান ২০১০, ০৩:২৮ PM
    ......................................................................

    ডিসেম্বর মাস।অআনন্দ আর কান্নার বিজয়ের মাস।অচারদিকে চলছে বিজয় উদ্যাপনের নানা আয়োজন।অদিনাজপুর শহর থেকে রওনা হয়েছি একজন মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে।অশহর পেরিয়ে চরপড়া কষ্টের পুর্ণভবা নদী।অব্যস্ত ব্রীজ থেকে এখন আর কেউ আগ্রহ নিয়ে নদী পানে তাকায় না।অব্রীজ পেরিয়ে সোজা বিরলের পথ।অধানকাটার পর দু’দিকের বিস্তীর্ণ মাঠে পড়ে আছে অজস্র ধান গাছের মোথা। দূরে কোন গ্রাম্যবাজার থেকে ভেসে আসছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গানের ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুর, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’।অগানের তালেই চলছি আমরা। মাঝে মধ্যেই সাইড দিতে হচ্ছে ছোট ভটভটি আর বাবরি চুল সাদৃশ্য ধান বোঝাই বড় ট্রলিকে। ভটভটি আর ট্রলিগুলোতে পত পত করে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা । ডিসেম্বর তাই সকলের পতাকা ওড়ানোর স্বাধীনতার মাস।

    আট কিলো পথ পেরিয়ে পৌছে গেলাম বিরল উপজেলা সদরে।অদিনটি ১৪ ডিসেম্বর।অমুক্তিযুদ্ধের নানা স্লোগান লেখা বড় বড় ব্যানার ঝুলছে সবখানে।অবিজয় মেলা, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা আর শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজসহ নানা আয়োজনের টানটান প্র¯ত্ততি চলছে।অএবারই প্রথম ঘটা করে উদযাপন করা হচ্ছে ‘বিরল মুক্ত দিবস’। সাংসদদের পদচারণা,৭১এ মুক্তিযোদ্ধাদের নানা স্মৃতিচারণ আর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা জানবে বিরলবাসী।অকিšত্ত এ সব অনুষ্ঠানে সম্মানিত হওয়া কোন মুক্তিযোদ্ধার কাছে আমরা যাচ্ছি না।

    দিনাজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রবাট আর এন দাসদের।অবড় ভাই জর্জ জে এম দাস (জর্জ ভাই),জেমস এম দাশ (লুইস) ও এন্টনী এন এন দাসসহ পরিবারের ৫জনই ১৯৭১এ যুদ্ধ করেছেন ৭ নং সেক্টরে।অবর্তমানে রবাট মুজিব নগর কর্মচারী কল্যাণ সংসদের যুগ্ম মহাসচিব।অতাঁর কাছ থেকে জেনেই আমরা খুঁজতে বের হয়েছি সেই মুক্তিযোদ্ধা আদিবাসীকে। যে মুক্তিযোদ্ধার সম্প্রদায়টিও নি:শব্দে হারিয়ে যাচ্ছে এদেশ থেকে। কোন রকমে টিকে আছে মাত্র ১৯টি পরিবার।অসম্প্রদায়টির নাম আদিবাসী ‘কড়া’ সম্প্রদায়। ১৯৭১ সালে এই সম্প্রদায়ের এক যুবক বঙ্গবন্ধুর ডাকে উজ্জীবিত হয়ে অন্যান্য বাঙালিদের সাথে ঝাপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।অকিšত্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আর তিনি নিজেকে পরিচয় দেন না।অনিজেকে লুকিয়ে রাখা এই মুক্তিযোদ্ধার নাম শতীশ কড়া। সবাই ডাকে সাতান কড়া নামে।

    বিরল সদর থেকে ভারাডাংগী মুখো পথটি শেষ হয়েছে সোজা ভারতের কাটা তারের বেড়ার কাছাকাছি গিয়ে। সীমান্তের ওপারে ভারতের কুসমন্ডি থানা।অআর এ পাশে বাংলাদেশের বৈরাগীপাড়া। বিকেলের দিকে আমরা পৌছে গেলাম বৈরাগীপাড়ায়। হাতেগোনা দশ থেকে পনেরটি বাড়ী এখানে। কিšত্ত সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সাতান কড়ার বাড়ী খুঁজে পাওয়া গেল না। লোকমুখে শুনে বহুকষ্টে একটি ছোট দোকানের সামনে পাওয়া গেল এই অভিমানী মুক্তিযোদ্ধাকে।১৯৮৭ সালে কুষ্টরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন। চলছেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে আগ্রহী নন তিনি। নিজের বাড়ী কোন দিকে জানতে চাইলে, কোন উত্তর মিলে না। জানা যায় একসময় সীমান্তবর্তী চক ফসল গ্রামে তার ভিটাবাড়ীসহ ৩৬একর জমি ছিল।অস্থানীয় ভুমিদস্যুরা জোর করে সেই জমি দখল নিয়ে নিলে সাতান চলে আসে এই গ্রামে।অএখানের প্রতিটি বাড়ীই এখন মুক্তিযোদ্ধা সাতান কড়ার বাড়ী। গ্রামের লোকদের দয় এবাড়ি ওবাড়ি রাত কাটিয়ে দিন কাটছে ৬৫ বছর বয়ষ্ক এই মুক্তিযোদ্ধার।

    রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে সাতান প্রবল ভাবে আবেগ তারিত হয়ে ওঠে।অগ্রামের যুবকদের সংঘবদ্ধ করে ‘কড়া’ ভাষায় বলতে থাকে,‘ চালা দেশ স্বাধীন কারূয়ে, সবইন মিলকে দেশ স্বাধীন করূয়ে’। যুদ্ধ শুরু হলে দেশকে মুক্ত করতে স্থানীয় ইদ্রিস আলী, মজিবর, নুরুল,দেবেন,বকুল, কাশেম বিসতী ও জাসেফসহ পরিচিত প্রায় ১১জন গোপনে সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাওয়ার।অবাবা, মা আর স্ত্রীকে না জানিয়েই গোপনে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। প্রথমে শিব বাড়ী ইয়ুথ ক্যাম্পে এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে শিলিগুড়ির পানিঘাটা থানায় ট্রেনিং নেন।অট্রেনিং শেষে চলে আসেন বড়গ্রাম ক্যাম্পে। ৭নং সেক্টরের অধীনে কমান্ডার ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন হিলির নিকটবর্তী গ্রামগুলোতে।অকার জন্য দেশ স্বাধীন করেছেন, জানতে চাইলে নিজ সম্প্রদায়ের ভাষায় বলেন- ‘ দেশ থেতুর হাম স্বাধীন করৈয়ে, হামার নিজের থেতুল স্বাধীন নাহি কারৈয়ে’(নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য স্বাধীনতা এনেছি)। আমাদের অনুরোধের চাপে মলিন মুখে বলতে থাকেন মুক্তিযুদ্ধের নানা কাহিনী।

    যুদ্ধের সময় অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের মত সাতানও না খেয়ে কাটিয়েছেন বহুদিন, কত রাত কাটিয়েছেন ডোবার পানির মধ্যে,ঘুমিয়েছেন গোরস্থানে।অযুদ্ধের সময়ে সহযোদ্ধাদের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখেছেন কাছ থেকে।অযুদ্ধকালীন সময়ে হানাদার আর রাজাকার বাহিনীর অত্যাচারের কথা শুনে নিজের পরিবারের কথা মনে করে সাতানের মন কেঁদে উঠত।অসে সময় এদেশের প্রতিটি পরিবারই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার।অসহযোদ্ধা খলিল,কবির,রফিক,নয়ন,নুরু মিলে একটি গ্রামকে শত্র“মুক্ত করার কথা বলতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাতান আবেগ তারিত হয়ে পরেন।অসে সময় তাঁর মাথায় বিধে যায় গ্রেনেডের ¯ইপ্রন্টার।অযুদ্ধের শেষের দিকে মুক্ত এলাকা ছাড়ার আগে হানাদাররা টিউবওয়েলগুলোতে বিষ ঢেলে রাখতো।অসে টিউবওয়েলের পানি খেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর বহু সহযোদ্ধার করুণ মুখগুলো দেখেছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। সে সব স্মৃতির কথা বলতে বলতে মাঝে মধ্যেই তার চোখ ভিজে যাচ্ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয় দিনাজপুর স্টেডিয়ামে।অতখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশিদ। অস্ত্র জমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাতান কড়া ফিরে আসেন নিজ সম্প্রদায়ের কৃষিকাজে।

    মুক্তিযুদ্ধের সময় আদিবাসী-বাঙালি একসাথে যুদ্ধ করলেও স্বাধীনের পর সব কিছু বদলে যেতে থাকে।অসাতান আক্ষেপ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হলো আর আমরা হয়ে গেলাম সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়’।অস্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার বিষয়টি জানলেও এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতেন না সাতান।অকাগুজে সনদ দেখিয়ে সুবিধা লাভের বিষয়টিতেও আগ্রহী নন তিনি।অফলে অযতেœ পড়ে থাকে ক্যাম্প থেকে পাওয়া কাগজগুলো।অপরবর্তীতে বন্যার পানিতে ভেসে যায় সেগুলো। কেন সনদপত্র করালেন না, জানতে চাইলে সাতান অকপটে বলেন,‘কি হবে ঐ কাগুজে সনদ দিয়ে।অযুদ্ধ করেছি বঙ্গবন্ধুর ডাকে, দেশ স্বাধীন করেছি - মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এর থেকে আর বড় কি পাওয়ার আছে’

    স্থানীয় ভূমিদস্যুদের হুমকির ভয়ে ২০ বছর আগে ভারতে চলে যায় সাতানের ছেলে মেয়েরা।অসে সময় পরিবারের সদস্যরা জোর করেও ভারতে নিতে পারেনি এই মুক্তিযোদ্ধাকে।অযুদ্ধকরে স্বাধীন করা এই প্রিয় দেশটিতেই মাটি কামড়িয়ে পড়ে থাকেন সাতান।অযুদ্ধের সময় বাঙালিদের কাধে কাধ রেখে যুদ্ধ করে এ দেশকে স্বাধীন করেছেন যে আদিবাসী যুবকটি, নিজের জমি থাকতেও সে আজ নিজ দেশে পরবাসী।আন্যের জমিতে নিড়ানোর মতো হালকা কাজ করে যা উপার্জন করেন তা দিয়েই কোন রকমে চলে যাচ্ছে তাঁর জীবন।

    মুক্তিযোদ্ধের ৩৮ বছর পর সাতানের আফসোস হয় যখন দেখেন অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারেরা কাগুজে সনদ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনের পরে পাওয়া এ দেশকে নিয়ে কোন আক্ষেপ বা কষ্ট আছে কিনা, জানতে চাইলে এই মুক্তিযোদ্ধা ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। ভেজা চোখে বলেন,‘ যার ডাকে যুদ্ধ করলাম তাকে তো স্বাধীন দেশেই বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না, তার পরিবারের সকলকেই হত্যা করা হলো, এখনও কোনই বিচার হলো না,একইভাবে বিচার হলো না রাজাকারদের, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটাই বড় দু:খ’

    মুক্তিযোদ্ধা এই আদিবাসীর সাথে যতই কথা বলছিলাম ততই তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হচ্ছিল। কাগুঁজে সনদ না থাকায় কোন ডিসেম্বরেই সাতানের মতো মুক্তিযোদ্ধারা সম্মানিত হন না। দেশের জন্য যে যুদ্ধ করল, দেশে থাকার কারণে যাকে ফেলে পরিবারের প্রিয় মানুষগুলো চলে গেল, সেই মুক্তিযোদ্ধার নিজের জমি আজ অন্যের দখলে।

    এদেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরী হয়নি অদ্যাবধি।অযার উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন ছিল যুদ্ধের পর পরই। অথচ অবাক আর লজ্জিত হতে হয় যখন দেখা যায় অমুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারেরাও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নিচ্ছেন, পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার সম্মান। সরকার পরিবর্তনের পর পরই পরিবর্তীত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা। সে সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদপত্র পায় অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারেরাও। ফলে স্বাধীনতার পর থেকে নানা দলে বিভক্ত হয়ে পড়ছে জাতির সূর্য সন্তানেরা।অমুক্তিযুদ্ধের ৩৮ বছর পরেও এদেশে সাতান কড়ার মতো নিভৃত, বঞ্চিত,ত্যাগী ও অভিমানী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে পাওয়া যায়।অযাদের কোন কাগুজে সনদ নেই।অআছে দেশের জন্য বুকভরা ভালবাসা।অযারা যুদ্ধ করেছিল শুধুই দেশের স্বার্থে।

    মুক্তিযোদ্ধা সাতান কড়া যখন মারা যাবে কাগুজে সনদপত্র না থাকায় তখনও মিলবে না কোন রাষ্ট্রীয় সম্মান। কিšত্ত তাতে সব হারা এই মুক্তিযোদ্ধার কি এসে যাবে। বরং লজ্জিত হতে হবে এ দেশকে, এ জাতিকে।

    http://www.sachalayatan.com/guest_writer/29782
  • Biplob Rahman | 117.18.231.10 | ২২ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫:৩৫507218
  • পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ: অন্য আলোয় দেখা-০২
    লিখেছেন: বিপ্লব রহমান
    ..................................................................................

    [সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকে বহুবছর ধরে বিভ্রান্তির ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে। খাটো করে দেখা হয়েছে পাহাড়ি জনগণের মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ সালে তাদের সব ধরণের চরম আত্নত্যাগের ইতিহাস। একই সঙ্গে সারাদেশে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগকেও অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করার অপপ্রস চালানো হয়। এ কারণে লেখার শিরোনামে 'অন্য আলোয় দেখা' কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। বলা ভালো, এটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর কোনো গুঢ় গবেষণাকর্ম নয়; এটি নিছকই পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আলোচনার অবতারণা মাত্র।]

    প্রথম পর্ব

    ত্রিদিব রায়ের ভূমিকা, ১৯৭১

    লেখার শুরুতেই বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অমি রহমান পিয়ালকে উদ্ধৃত করা যাক। এই লেখকের পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি খসড়া নোটে তথ্য ঘাটতি দেখা দেওয়ায় অরপিকে ইমেল করে ১৯৭১ সালে সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের ভূমিকাসহ এ সংক্রান্ত মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। ঐ ইমেইল বার্তার জবাবে তিনি একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে খুব চম্‌ৎকার করে তুলে ধরেন পুরো বিষয়। অরপি বলছেন:

    অমি রহমান পিয়াল
    জুন ২৫, ২০১১ at: ৫৯ অপরাহ্‌ণ লিঙ্ক

    সুপ্রিয় বিপ্লব রহমান, আপনার মেইল পেয়ে পোস্টটি পড়লাম এবং অনুরোধ রাখতেই আমার বক্তব্য রাখলাম। বিব্রতবোধ করছি এইজন্য যে সে বক্তব্য আপনার পোস্টের বক্তব্য সমর্থন নাও করতে পারে। তার আগে বলে নিচ্ছি যে আমি আরাফাতুর রহমানের লেখাটা পড়িনি। আপনারটা পড়েই আমার যা বলার বলছি। কোনো বাতুলতা নিজগুণে ক্ষমা করবেন।

    প্রথমে আসি আদিবাসী রাজাকার প্রসঙ্গে।আবাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো। পক্ষে এবং বিপক্ষে। এখানে লক্ষণীয় তাদের বসবাসের জায়গাটা সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় সেখানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী- দুইপক্ষই ছিলো ভীষণভাবে ত্‌ৎপর। এই পর্যায়ে এসে আদিবাসীরা গোষ্ঠীগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন পক্ষে যাবে। সাওতাল এবং গারোরা সরাসরি পাকিস্তানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। চাকমারা পক্ষে।(মগরা নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে আবার পাকিস্তানীদের বার্মায় পালাতেও সাহায্য করেছে।)এটা গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্ত, গোষ্ঠী প্রধানের নির্দেশ। এখানে সমর্থন অর্থে বলা হয়েছে। এই সমর্থনের অর্থ ইনটেলিজেন্স, আশ্রয় এবং লোকবল দিয়ে সহায়তা।

    প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর হয়ে গারোরা লড়েছেন, সাওতালরা লড়েছেন। ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ এবং ইপিআরের সদস্য যেসব আদিবাসী ছিলেন তারা লড়েছেন। এদের মধ্যে মারমা-মুরং-গারো-লুসাই সব গোষ্ঠীই ছিলেন,ছিলেন চাকমারাও। তারা তাদের সম্প্রদায়গত সিদ্ধান্তের বদলে প্রায়োরিটি দিয়েছেন কর্তব্যবোধ এবং ক্যামোরেডরিকে।

    চাকমাদের জন্য এই সিদ্ধান্তটা এসেছে রাজা ত্রিদিব রায়ের তরফে।আতিনি গোষ্ঠীপ্রধান। এপ্রিলের শুরুতেই রাঙ্গামাটিতে পাকিস্তান থার্ড কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান অবস্থান নেয়। স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের এলিট কমান্ডোদের প্রধান মেজর জহির আলম খান (শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করেছিলেন তিনিই) ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে দেখা করে সবধরণের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পান। সঙ্গে যোগ দেয় লালডেঙ্গার নেতৃত্বাধীন মিজোদের একটি ব্রিগেড। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে মুক্তিবাহিনী এবং বিএসএফের সম্ভাব্য ত্‌ৎপরতা এবং তা ঠেকানোর জন্য সহায়তার কথা ছিলো সে প্রতিশ্রুতিতে। শুধু ত্রিদিব রায়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী দলই নয়, রাঙ্গামাটিতে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সেস (ইপিসিঈফ) প্রাথমিকভাবে যোগ দেয় প্রায় শ তিনেক চাকমা। যুদ্ধশেষে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের সংখ্যাটা এক মাসে ছিলো দেড় হাজারের ওপর। যদিও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় তাদের সবাইকেই পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    এমনকি দুর্গমতার কারণে পাহাড়ের অধিকাংশ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের কোনো ঢেউই লাগেনি- আপনার এই কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। ৩ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই পাহাড় ছিলো উত্তাল। এখানে অপারেশনাল ছিলো মেজর জেনারেল সুজয় সিং উবানের তত্বাবধানে থাকা মুজিব বাহিনীর একটা অংশ (শেখ মনির নেতৃত্বাধীন) এবং উদ্বাস্তু তিব্বতীদের নিয়ে গড়া স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স। চেহারায় সাদৃশ্য থাকার কারণে (মঙ্গোলয়েড) তিব্বতীরা নভেম্বরের শুরু থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশনে নামে (অপারেশন মাউন্টেন ঈগল)। এই লড়াইয়ে পাকিস্তানীদের পাহাড়ে গাইড এবং ইন্টেলিজেন্স দিয়ে সহায়তার দায়িত্ব পালন করে ইপিসিঈফের চাকমারা।

    এখন ত্রিদিব রায়কে আপনি স্রেফ পাকিস্তানের একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক বা যে তকমাই দিতে চান না কেনো, তার প্রাথমিক পরিচয় তিনি চাকমাদের রাজা। এমন যদি হতো তিনি শুধু রাঙ্গামাটির চাকমাদের রাজা, বা অন্যরা তাকে রাজা বলে স্বীকার করতো না তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু রাজার দায় তার গোষ্ঠীর ওপর খানিকটা বর্তায় বৈকি!পার্বত্য চট্টগ্রামের দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে (সেগুলো বেশ চমকপ্রদ একদিন শেয়ার করা যাবে) চাকমারা তাই রাজার নির্দেশই পালন করেছে। কিংবা সে নির্দেশের বিপক্ষে যায়নি। ত্রিদিব রায় শুধু তার গোষ্ঠীকেই সহায়তার নির্দেশ দিয়ে বসে থাকেননি। নিজে মাঠে নেমেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সমর্থন আদায় করতে গেছেন কলম্বো, সেখানে সিংহলীজ ছাত্রদের ধিক্কার শুনে ফিরেছেন। স্বাধীনতার পরপর পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য যে ১২ জনের নাগরিকত্ব বাতিল এবং সহায়সম্পত্তি ক্রোক করা হয় আদালতের নির্দেশে সে তালিকায় গোলাম আজমের সঙ্গে রাজা ত্রিদিব রায়ও আছেন। তিনি নাগরিকত্ব ফিরে পেতে কোনো তদবির করেননি। যদিও সহায়সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন।

    প্রশ্ন উঠতে পারে যে যুক্তিতে গোলাম আজমের বিচার করা যায়, সেই একই যুক্তিতে ত্রিদিব রায়কেও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় কিনা। আমার ধারণা যায়, যদিও তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে সে দেশেই রয়ে গেছেন, কয়েকদফা মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ধরাছোয়ার বাইরেই। বাকি থাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী অক্সিলারি ফোর্সের চাকমারা। এরা সাধারণ ক্ষমা পেয়েছে। এদের কারো বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ এব লুটপাটের অভিযোগ ছিলো না। দে জাস্ট মার্চড এলং ফলৈং দেয়ার কিং। তবে সেরকম কোনো প্রমাণ নিয়ে কেউ যদি আসে, তাহলে নিশ্চয়ই তাদেরও বিচার করা যাবে। ব্যাস এটুকুই।

    আগেই বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ত্‌ৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় যেমন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তেমনি মং রাজা মং প্রু সেইন আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। সে সময় রাজা মং প্র সেইন মুক্তিবাহিনীর জন্য নিজ প্রাসাদ উজাড় করে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার প্রাসাদে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন, বহু সাহায্য পেয়েছিলেন। এছাড়া পাহাড়ি নেতা এমএন লারমা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। চাকমা রাজার কাকা শ্রী কেকে রায়ও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে তাকে ত্রিপুরায় আটক করা হয়েছিল। পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়টি আমরা তৃতীয় ও শেষ পর্বে আলোচনা করবো।

    ব্রিগেডিয়ার (অব:) জহির আলম খান পাকিস্তান ডিফেন্স জার্নালে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের কথাও ছিলো (একাত্তরের মাঝপথে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়)। সেখানে ত্রিদিব রায়ের অনুসারী চাকমাদের একাংশের সহায়তার বিষয়ে মতামত হচ্ছে :

    TheChakmaandtheMizotribesmenco-operatedwiththePakistanArmyin1971.Youwerecloselyassociatedwiththem.Howwastheexperience?

    WelandedinRangamatijustafternightfall, thenextmorningIcalledonRajaTridivRoy, theChakmaChief, Helivedinanoldbungalowonanislandseparatedfromthemainlandbyachannelaboutfiftyyardswide.

    IexplainedtotheRajathatthearmyhadcometore-establishthecontrolofthePakistanGovernmentontheHillTractsandaskedforhisco-operationinmaintainingpeaceandtokeepmeinformedaboutanyrebelmovement, concentrationandactivity, theRajaagreedandco-operatedrightuptothesurrender.AttherequestofourgovernmentRajaTridivRoycametoWestPakistanbeforeoursurrenderinEastPakistan, hewasourambassadorinanumberofcountriesandnowlivesinIslamabad.

    [লিংক]

    সাবেক চাকমা রাজা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিদেশেও সক্রিয় ছিলেন। ২৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন দূতাবাসের গোপন তারবার্তায় জানায়, রাজা ত্রিদিব রায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসেবে শ্রীলঙ্কা যান। তারবার্তাটি নিম্নরূপ:

    DepartmentofState

    TELEGRAM

    CONFIDENTIAL444

    COLOMB03360270603Z
    19
    ACTIONNEA-11
    INFO:OCT-01EUR-14CIAE-00DODE-00PM-06H-02INR-06L-03NSAE-00NSC-10P-
    03RSC-01PRS-01SS-14USIA-1210-12SP-02ORM-03AID-20RSR-01EA-11/133W
    ……….060184
    P261110ZNOV71
    FMAMEMBASSYCOLOMBO
    TOSECSTATEWASHDC7259
    INFOAMEMBASSYISLAMABAD
    AMEMBASSYLONDON
    AMEMBASSYNEWDELHI
    USMISSIONUSUN
    CONFIDENTIALCOLOMBO3360
    SUBJ:PRESIDENTYAHYAKHAN’SSPECIALENVOYTOCEYLON

    1.SUMMARY:RajaTridivRoyinCeylonasrepresentativeofGOPPresidentKhan.MainthrustofmissionseemsaimedatCeylon’sBuddhistmajority.RoysuggestsPakistanwouldwelcomeBandaranaike’sinvolvementinIndo-Pakdispute.Localinterestindisputerunningquitehigh.Endsummary.

    2.RajaTridivRoy, identifiedbypressreportsasquotePresYahyaKhan’sspecialenvoytoceylonunquotearrivedColomboNov25andisscheduledmeetwithPMBandaranikeonNov26.RoyaccompaniedonvisitbyS.L.Leghari, directorofForeignAffairs, GOP.RoyidentifiedashereditarychiefChakmacommunityinChittagonghills, quoteoneofthelargestBuddhistgroupsinEastPakistanunquote.InadditiontoscheduledmeetingswithPMandothercabinetmembershehasmetwithrepresentativesofAll-CeylonBuddhistCongressandYoungMen’sBuddhistAssociation.

    3.MainreasonforRoyvisitreportedlyistoconveytoPMBandaranaikePresidentKhan’sassessmentquoteoftheseriousthreattopeaceposedbythefull¬scaleassaultsonPakistan’sborders…andtoexplaintoMrsBandaranaikethetreatmentmetedouttominorities, particularlytoBuddhistsinEastPakistan.Unquote.

    4.InNov26SunRoystatedthatquoteallcountrieshavehighregardorPrimeMinisterBandaranaike.AnyformulaputforwardbyhertoeasethesituationinEastPakistanwouldbemostwelcome.Unquote.Withregardrefugeeproblem, RoystatedthatquotePakistanhasopenedthedoorfortherefugeestoreturntotheirhomeland,
    butIndiaistryingtodiscouragethemfromgoinghomeinordertoincreasetensionsinthearea.Unquote.PublisheditinerarycallsforhimtovisitThailand, NepalandBurmafollowingvisithere.

    5.RoyvisitseemstobebringingPakistanquestionbacktofrontburnerinlocaldebates.GroupcallingitselfCeylonCommitteeforHumanRightsinBanglaDeshwasrefusedinterviewwithRoyandpromptlybrandedhimquoteanoutcast...whocannotreconciletheteachingsofthecompassionateBuddhawithmurder, rapeandpillagebythemilitarycliquewhosecausehehadcomeheretoespouse.Unquote.Nov26DailyNewseditorialroundlycriticizedbothsidesintheconflictbutplacedmajorblameformilitaryactivityonIndia, arguingthatquoteanybodywhobelievesthatPakistan, inherpresentplight, wouldlaunchawaragainstIndiashouldsurelyhavehisbrainswashedagainintheholyGanges.Unquote.

    6.Comment:Roy’ssuggestionthatinterventionbyPMBandaranaikewouldbewelcomedbyPakistanraisespossibilitythatsuchrolemaybeattemptedagain.AsshownbyIndianOceanPeaceZoneproposal, PMBandaranaikeisseekingnewprestigeininternationalarena.SuccessfulinvolvementinIndo-PakdisputecouldearnforherthatprestigeaswellasscoredomesticpointsbecauseoftheincreasedinterestintheconflicthereinCeylon.GP-3
    STRAUSZ-HUPE

    Source:TheAmericanPapers–SecretandConfidentialIndia.Pakistan.BangladeshDocuments1965-1973, UniversityPressLimited, p.73–733

    ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দৈনিক বাংলায় একটি তালিকা ছাপা হয় যেখানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহায়তার অভিযোগে দালাল আইনে অভিযুক্তদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়; নুরুল আমিন, সবুর খান, গোলাম আযমসহ দালালদের সে তালিকায় ৮ নম্বরে ছিলো ত্রিদিব রায়ের নাম।

    [লিংক]

    এদিকে জনৈক আরাফাতুর রহমান জানাচ্ছেন:

    চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সহযোগিতায় রাঙামাটিতে গণহত্যা চলে। এই সময়ে রাঙামাটি মুক্ত করতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতঙ্কÄ বিভাগের ছাত্র এবং এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ইফতেখারসহ ৮-১০ জনের একদল মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়।

    চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় তার বির্তকিত বই TheDepartedMelody-তে লেখেন, ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সকালে তিনি (রাজা ত্রিদিব রায়) তার ভগ্নিপতি কর্নেল হিউম, ম্যাজিট্রেট মোনায়েম চৌধুরী, মো: হজরত আলী এবং আরো কয়েকজন বাঙালি মুসলিম লীগ নেতাসহ চট্টগ্রামের নতুন পাড়ায় অবস্থিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেন্টার-এর পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে ম্যাজিস্ট্রেট মোনায়েম চৌধুরী এবং রাজা ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে আসা আরো কয়েকজন বাঙালি ঢাকা থেকে আসা জুনিয়র অফিসারকে সঙ্গে করে কাপ্তাইয়ে যাবেন। ঠিক সেদিনই বিকেলে কাপ্তাই থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল কয়েকটি লঞ্চ এবং স্পিডবোট নিয়ে রাঙামাটি আসে এবং বিনা প্রতিরোধে দখল করে নেয়।

    এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের বলাকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত (ফেব্রু-২০১১) ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’ বইয়ে জামালউদ্দিন লেখেন, ‘…অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ঐ দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। এই দলের মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইফতেখার।’[পৃষ্ঠা ৩৭৯-৩৮০]

    এর আগে রাঙামাটি মহকুমা সদরের এসডিও আবদুল আলী কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে দুটি স্পিডবোটে করে মহালছড়ি থেকে রাঙামাটি আসেন। স্পিডবোটে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এস এম কালাম, আবদুল শুকুর, শফিকুল ইসলাম, মামুন, সামসুল হক মাস্টার এবং রাঙামাটি হাইস্কুলের তদানীন্তন হেডমাস্টার রহমান আলীর ছেলে ইফতেখার। এর মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য আবদুল আলীকে রাঙামাটিতে পুলিশ লাইনের এক ব্যারাকে আটক করে রেখে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে আঁচড় দেয়া হয়েছিল। এরপর সেসব জায়গায় লবণ দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তাকে একটি জিপের পিছনে বেঁধে টেনে রাঙামাটির বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয়েছিল। সূত্র :‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শরবিন্দু শেখর চাকমা, (অঙ্কুর প্রকাশনী, জানু-২০০৬ পৃষ্ঠা ২৫]

    [লিংক]

    তবে ঐ লেখক তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের গৌরবোঙ্কÄল ভূমিকার কথা বেমালুম চেপে যান। এমনকি লেখাটি যে কেউ পড়লে ধারণা জন্মাতে পারে যে, ১৯৭১ এ আদিবাসী মাত্রই ত্রিদিব রায়ের অনুসারি তথা রাজাকার ছিলেন! তিনি ভুলে যান কথিত ‘আদিবাসী রাজাকারের বংশধর’, বর্তমান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ১৯৭১ এ মাত্র ১১ বছরের বালক ছিলেন এবং পিতার কৃতকর্মের দায়ভার কোনোভাবেই তার ওপর বর্তায় না এবং চাকমা রাজা হিসেবে তার এ পর্যন্ত সমস্ত কর্মকাণ্ড আদিবাসী তথা বাংলাদেশের স্বার্থই রক্ষা করে। বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক রাজা দেবাশীষ পার্বত্য সমস্যা নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গবেষণাগ্রন্থ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ; এমনকি ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির খসড়াটিও তারই করা। চাকমা ভাষায় রয়েছে তার লেখা ও সুর করা অসংখ্য গান এবং গুনি এই ব্যক্তি বাঁশির সুরে ধরেছেন পাহাড়ি লোক ঐতিহ্য। সংক্ষেপে, রাজপরিবারের আশিবার্দে নয়, নিজস্ব যোগ্যতায় বর্তমান চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় পরিনত হয়েছেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বে।

    কিন্তু আরাফাতুর রহমান উগ্র জাতিগত বিদ্বেষজনিত কারণে আরো লেখেন:

    এই যুদ্ধাপরাধীদের বংশধররা বংশপরম্পরায় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। বর্তমান আমরা তাদেরই আবার দেশের প্রতিনিধি বানিয়েছি বিশ্বদরবারে, জাতিসংঘে। যুদ্ধাপরাধী চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় এবং বিচারপতি সায়েমের উপদেষ্টা ত্রিদিব রায়ের মা বিনীতা রায়ের বংশধর এবং উত্তরাধিকারী দেবাশীষ রায় বিগত তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজামী ও মুজাহিদের মতো তার গাড়িতেও বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে। তিনি সম্প্রতি মেক্সিকোর কানকুনে শেষ হয়ে যাওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের পক্ষে কাজ করেছেন। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংগঠন ইউএনএফসিসিসি (UNFCCC) এবং ইউ এন পার্মানেন্ট ফোরাম অন ইনডিজিনাস ইস্যুর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। (সূত্র : প্রথম আলো, ০২ জানুয়ারি ২০১১)

    রাজাকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর পুত্র হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যদি ওআইসির (ঙওঈ) মহাসচিব পদের জন্য নির্বাচন করে দেশের ভাবর্মূতি নষ্ট করতে পারে তাহলে কেন ত্রিদিব রায়ের মতো প্রমাণিত রাজাকারের পুত্র বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে? এখন তো মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবিত সরকার। তাদের অপরাধের কেন বিচার হবে না?

    [লিংক]

    এ যেনো আমতঙ্কÄ। আম গাছে তো আমই ফলে নাকি? ফকাচৌ’র পুত্র সাকাচৌ যুদ্ধাপরাধী হলে ত্রিদিব পুত্র দেবাশীষ কেনো বালক রাজাকার হবেন না? লা জবাব গরলীকরণ!!
    —
    http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=21015
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৬:০৬507219
  • পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধ: অন্য আলোয় দেখা- শেষ পর্ব
    লিখেছেন: বিপ্লব রহমান
    ................................
    [সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধকে বহুবছর ধরে বিভ্রান্তির ঘেরাটোপে রাখা হয়েছে। খাটো করে দেখা হয়েছে পাহাড়ি জনগণের মুক্তিযুদ্ধ তথা ১৯৭১ সালে তাদের সব ধরণের চরম আত্নত্যাগের ইতিহাস। একই সঙ্গে সারাদেশে আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগকেও অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ন করার অপপ্রস চালানো হয়। এ কারণে লেখার শিরোনামে 'অন্য আলোয় দেখা' কথাটি যুক্ত করা হয়েছে। বলা ভালো, এটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর কোনো গুঢ় গবেষণাকর্ম নয়; এটি নিছকই পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আলোচনার অবতারণা মাত্র।]

    পাহাড়িদের প্রতিরোধ লড়াই, ১৯৭১

    পুনর্বার বলা ভালো, ১৯৭১ সালে ত্‌ৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় যেমন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তেমনি মং রাজা মং প্রু সেইন আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। সে সময় রাজা মং প্রু সেইন মুক্তিবাহিনীর জন্য নিজ প্রাসাদ উজাড় করে দেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার প্রাসাদে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন, বহু সাহায্য পেয়েছিলেন। এছাড়া পাহাড়ি নেতা এমএন লারমা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেন। চাকমা রাজার কাকা শ্রী কেকে রায়ও ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে তাকে ত্রিপুরায় আটক করা হয়েছিল। পাহাড়িদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায়টি আমরা চলতি তৃতীয় ও শেষ পর্বে আলোচনা করছি।

    ‘৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী সামরিক জান্তা গণহত্যা শুধু করলে সারাদেশের মতো পাহাড়েও তরুণ ছাত্র-যুবারা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্নক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই প্রতিরোধ লড়াইয়ে সে সময় বাঙালিদের পাশাপাশি পাহাড়ি আদিবাসীরা সমানভাবে অংশ নিয়েছিলেন। কাজেই ত্রিদিব রায় ও তার অনুসারী মুষ্টিমেয়দের পাকিস্তানপন্থী ভূমিকাকে কেন্দ্র করে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম বা সারাদেশের আদিবাসীদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। বরং কার্যত অমন চেষ্টা উগ্র জাতিগত বিদ্বেষ ও ইতিহাস বিকৃতিকেই উস্কে দেয় মাত্র।

    খোদ সরকারের রাঙামাটি জেলার তথ্য বাতায়নে বলা হচ্ছে:

    "১৯৭১ এর মার্চ মাসে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজের ত্‌ৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান এবং সুনীল কান্তি দে এর নেতৃত্বে।

    মুক্তিযুদ্ধকালীন রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়িতে অবস্থিত ফারুয়া ও শুকরছড়ির মোহনায় পাক সামরিক ঘাঁটি ছিল। সেখানে পাঞ্জাবী, রাজাকার, আলবদরসহ ২৫০ জন সৈন্য অবস্থান করত। সেখানে পাক সেনাবাহিনীর কয়েকটি স্টীমার ও গানবোটও ছিল। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পাইলট মান্নানসহ মুক্তি বাহিনীর একটি দল পাহাড়ী এলাকায় পথ হারিয়ে রাতের অন্ধকারে ফারুয়াস্থ পাক বাহিনীর ক্যাম্পের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। তারা চাকমাদের সহায়তায় নৌকায় করে শুকরছড়ি এলাকায় নিরাপদ স্থানে পৌঁছে যায়।

    ১৭ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চল কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল সিং ওভান এবং শেখ ফজলুল হক মনি ভারতীয় হেলিকপ্টারযোগে রাঙ্গামাটির পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং মাঠে অবতরণ করেন। এখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান ত্‌ৎকালীন ছাত্রনেতা গৌতম দেওয়ান, আবদুর রশীদ, মো: ফিরোজ আহম্মদ, মনীষ দেওয়ান (পরবর্তীতে কর্ণেল)সহ হাজারো ছাত্র-জনতা।"

    [লিংক]

    এতে পাহাড়িদের প্রতিরোধ লড়াইয়ের পাশাপাশি সাধারণ নিরস্ত্র পাহাড়ি জনতার চরম আত্নত্যাগের কথা তুলে ধরে আরো বলা হয়:

    "পাক বাহিনীরা পার্বত্য জেলা সদর রাঙ্গামাটি ও মহকুমা সদর রামগড় এবং বান্দরবান দখল করার পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ঘাঁটি স্থাপন করে এবং ঘাঁটিসমূহ সুদৃঢ় করে নেয়। তারা বিভিন্ন এলাকায় শাখা কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় রাজাকার বাহিনী ও হিলরাজ বাহিনী গঠন করে এবং বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে বর্বর অত্যাচার চালায় ও ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। পাকবাহিনী রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে পাহাড়ী রমনীদের জোর পূর্বক ধরে নিয়ে অমানুষিকভাবে ধর্ষণ করে এবং ক্যাম্পে উলঙ্গ অবস্থায় বন্দী করে রাখে।

    ১নং সেক্টরের আওতায় সর্বপ্রথম ৫ মে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। এই দল গঠনের নেতৃত্ব দেন হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরা। এটি পরবর্তীতে একটি পূর্ণাঙ্গ কোম্পানী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। শ্রী ত্রিপুরাকে কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই কোম্পানীর অধীনে গ্রুপ নং- ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪ এবং ৯৫ সংযুক্ত করা হয়। উক্ত গ্রুপগুলির ট্রেনিং কেন্দ্র ছিল ভারতের অম্পি নগর এবং ১নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার হরিণা। ১নং সেক্টরের অধীনে হরিণা থেকে ৩০ কি: মি: দূরবর্তী সীমান্ত এলাকা ভারতের বৈষ্ণবপুরে আগস্ট মাসের প্রথম দিকে সাব-সেক্টর স্থাপন করা হয়। সেখানে অবস্থানরত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় গেরিলা আক্রমণ পরিচালনা করা হয়।

    পার্বত্য এলাকায় অবস্থানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচলের সুবিধা, শত্রুপক্ষের ঘাঁটি আক্রমণ এবং পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত নাকাপা, কুমারীপাড়া, পাগলা পাড়া, মানিকছড়ি, ডাইনছড়ি, যোগ্যাছলা ও গাড়ীটানা এলাকার গহীন অরণ্যে মুক্তিবাহিনীর গোপন ক্যাম্প বা আশ্রয়স্থল করা হয়। এই সমস্ত গোপন গেরিলা ক্যাম্পে ঐ এলাকার হেডম্যান কার্বারীসহ সকল স্তরের জনগণ খাদ্যশস্য সরবরাহ করত এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐ সমস্ত এলাকার জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পাকবাহিনীর গতিবিধি এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করত।"

    [লিংক]

    অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদান রাখা এমএন লারমা ও মং রাজা রাজা মং প্রু সাইন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক মঙ্গল কুমার চাকমা তার ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্যাঞ্চলের জুম্ম জনগণ ও প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়’ নামক লেখায় জানাচ্ছেন :

    "… সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জুম্ম ছাত্র-যুবকরাও আন্দোলনে যোগ দিতে সংগঠিত হতে থাকে। ত্‌ৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জুম্ম ছাত্র-যুবকদেরও উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী-লীগের প্রাথী কোকনদাক্ষ রায়ও (রাজা ত্রিদিব রায়ের কাকা) মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়েছিলেন। এ-সময় কয়েকশো জুম্ম ছাত্র-যুবকও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়েছিলো। প্রথম অবস্থায় তারা অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণও করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এইচ টি ইমামের প্ররোচনায় জুম্ম ছাত্র-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ-সময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় কোকনদাক্ষ রায়কেও কোনো অজুহাত ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়। ফলে অনেক জুম্ম ছাত্র-যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পেরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফেরত আসে।…"

    [লিংক]

    মঙ্গল কুমার চাকমা আরো জানান:

    "মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন মং সার্কেলের ত্‌ৎকালীন রাজা মং প্র¦ সাইন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে-সাথে যখন শতো-শতো লোক পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিল, তখন তিনি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়িস্থ রাজবাড়ীতে তাদের খাওয়া-দাওয়া-সহ নানাভাবে সহায়তা প্রদান করেন। পাক-সেনারা রামগড় দখল করার পূর্বেই তিনি ত্রিপুরা পালিয়ে যান। সেখানে গিয়েও তিনি বসে থাকেননি। কর্ণেলের ব্যাজ পরে তিনি কুমিল্লার আখাউড়াতে যুদ্ধ করেছিলেন। সেজন্য পাক সেনারা মানিকছড়িতে এসে রাজবাড়ী, ত্‌ৎসংলগ্ন বৌদ্ধ মন্দির ও গ্রামের জুম্মদের ঘারবাড়ী ধ্বংস ও লুটপাট করে।

    ত্‌ৎসময়ে ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেল (ইপিআর) বাহিনীতে কিছু জুম্ম ছিলো। তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রমণী রঞ্জন চাকমা রামগড় সেক্টরে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধে নিহত হন। সিপাহী হেমরঞ্জন চাকমা বগুড়া সেক্টরে নিখোঁজ হন। তার লাশও পাওয়া যায়নি। সিপাই অ্যামি মারমাও বগুড়া সেক্টরে যুদ্ধে শহীদ হন। পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অসম সাহসিকতার জন্য বান্দরবানের অধিবাসী ত্‌ৎকালীন ইপিআরের রাইফেলম্যান উখ্য জিং মারমাকে যুদ্ধের পরে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। অভাব-অনটনের মধ্যে কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করছেন বান্দরবান শহরে।

    সে-সময় পূর্ব পাকিস্তান পুলিস-বাহিনীতেও কিছু জুম্ম চাকরীরত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম বিমলেশ্বর দেওয়ান ও ত্রিপুরা কান্তি চাকমা-সহ ২০ / ২২ জন জুম্ম সিভিল কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে বরেন ত্রিপুরা, কৃপাসুখ চাকমা ও আনন্দ বাঁশী চাকমা ছিলেন অন্যতম।

    মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মেজর জিয়াউর রহমান তাঁর বাহিনী ও ইপিআর বাহিনী নিয়ে রাঙ্গামাটি হয়ে ত্রিপুরা পাড়ি দিয়েছিলেন। জিয়া বাহিনী-সহ রাঙ্গামাটি পৌঁছলে জুম্ম জনগণই তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য রসদ যুগিয়েছিলো। রাঙ্গামাটি জেলার বন্দুকভাঙ্গায় যেখানে বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের সমাধিক্ষেত্র রয়েছে, সেখানে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধের পর মেজর জিয়া তাঁর বাহিনী নিয়ে জুম্মদের গ্রামের ভিতর দিয়ে নানিয়ারচর, মহালছড়ি ও খাগড়াছড়ি হয়ে রামগড় সীমান্তে চলে যান। সে-সময় গ্রামে-গ্রামে জুম্ম গ্রামবাসীরা মেজর জিয়ার বাহিনীকে খাদ্য-সহ নানাভাবে সহায়তা করেছিলো। কথিত আছে, খাগড়াছড়ি জেলার কমলছড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে চেঙ্গী নদী পার হওয়ার সময় নদীতে হাঁটু পানি থাকায় যাতে জুতা-প্যান্ট ভিজে নষ্ট না হয় সে-জন্য কমলছড়ি গ্রামের জনৈক মৃগাঙ্গ চাকমা মেজর জিয়াকে পিঠে তুলে নদী পার করে দেন। জিয়ার বাহিনীকে সহায়তা দেয়ার জন্য পাক-বাহিনী মহালছড়ির সভ্য মহাজন, গৌরাঙ্গ দেওয়ান ও চিত্তরঞ্জন কার্বারীকে ধরে নিয়ে যায়। পাকবাহিনী তাদেরকে আর ফেরত দেয়নি। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, এজন্য অনেক জুম্ম নারী বিভিন্ন জায়গায় পাক সেনা সদস্যের ধর্ষণেরও শিকার হয়।"

    [লিংক]

    পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সে সময় যে অল্প কয়েকজন পাহাড়ি আদিবাসী নিরাপত্তা বিভাগে সরকারি চাকরিতে ছিলেন, তাদের মধ্য অন্যদম শহীদ খগেন্দ্র নাথ চাকমা (দ্রষ্টব্য: সূচনা ছবি, তন্দ্রা চাকমা)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লার মুরাদনগরে সার্কেল ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শ্রী খগেন্দ্র নাথ চাকমা পাকিস্তানী বাহিনীর কর্তৃক নিহত হন।

    অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রায় ৭০টি ভাষাগত সংখ্যালঘু জনজাতি আদিবাসী- মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ইউকে চিং হচ্ছেন একমাত্র বীরবিক্রম উপাধিপ্রাপ্ত আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস– ইপিআর’ এ কর্তব্যরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ইপিআরের নায়েক হিসেবে তিনি রংপুরের হাতিবান্ধা বিওপিতে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে রংপুর ৬ নম্বর সেক্টরে মেজর বাশারের নেতৃত্বে নয়জন বাঙালি ইপিআর সৈনিককে নিয়ে পাটগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেন। দেশকে পাক হানাদার মুক্ত করতে বিওপিতে কর্মরত একজন বিহারি ও দুজন পাঞ্জাবিকে হত্যা করেন তিনি। টানা নয় মাস সম্মুখ যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেন ইউকে চিং। তবে যদিও অভাব-অনটন এখন ৭৭ বছর বয়সী এই বীরবিক্রমের নিত্য সঙ্গী। অসংখ্য পদক বা সরকারি সন্মাননা — কোনটিই এই বীর যোদ্ধার বাকি জীবন ও সন্তানদের ভবিষ্‌য়্‌ৎ নিশ্চিত করতে পারছে না (দ্রষ্টব্য ছবি: বাংলানিউজ টোয়েন্টফোর ডটকম)।

    [লিংক]

    স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে ভাষাগত সংখ্যালঘু জনজাতি গোষ্ঠিগুলো উপেক্ষিত থেকে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোঙ্কÄল ইতিহাসের পাতায় উপেক্ষিত থেকে যায় আদিবাসী, উপেক্ষিত থেকে যায় ১৯৭১ এর তাদের প্রতিরোধ লড়াই, সব ধরণের আত্নগ্যাগ, এমন কি মুক্তিযুদ্ধের শেষপ্রান্তেও এসে মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ রাইফেলস — বিডিআর নামধারী কতিপয় বিপথগামী দুর্বৃত্তের হত্যাযজ্ঞ, যা এই ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।

    তাই বাংলাদেশ যেমন বহু জাতি, বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতির দেশ, এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও তেমনি বহু জাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের আত্নত্যাগের ইতিহাসে বর্ণিল।

    —-
    http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=21204
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:৫৮507220
  • সংযুক্ত::বাংলাদেশের ৭৫ টি আদিবাসী জাতিসমূহ:

    বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহায়তায় সারাদেশে অনুসন্ধান চালিয়ে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস গত ২৮ নভেম্বর ২০১০ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশ্য তাদের সুপারিশ তুলে ধরে। ‘আদিবাসী জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতি বিষয়ক সুপারিশমালা’ শীর্ষক বক্তব্যে ককাস ৭৫টি ভাষিক সংখ্যালঘু জনজাতির তথ্য প্রকাশ করে।

    এই ৭৫টি আদিবাসী জাতিসমূহ হচ্ছে:. অধিকারী, ২. অসম/অহম/অহমীয়া, ৩. ওঁরাও/উঁরাও, ৪. কন্দ/কন্ধ/খন্দ কড়া, ৫. কাউর, ৬. কুর্মি/মাহতো, ৭. কর্মকার, ৮.কড়া/করোয়া, ৯. কর্নিদাস, ১০. কোচ, ১১, কোল, ১২. খারিয়া/ খেরিয়া, ১৩. খুমি/খামি, ১৪.খিয়াং, ১৫. খাসি, ১৬. খারওয়ার, ১৭. গন্ড/ গন্ডি/গঞ্জু, ১৮. গড়াইৎ/গড়াত, ১৯. গারো, ২০. গোর্খা, ২১, গৌড়, ২২. চন্ডাল, ২৩. চাকমা, ২৪. চাক, ২৫. ছত্রী, ২৬. ডালু, ২৭. ডোম, ২৮. ত্রিপুরা/টিপরা, ২৯. তঞ্চগ্যা, ৩০. তুরি/ তুরিয়া, ৩১. তেলী, ৩২. নুনিয়া, ৩৩. পল্ল/পলিয়া, ৩৪. পাত্র, ৩৫. পাহান, ৩৬. পাহাড়িয়া, ৩৭. পাংখু/পাংখোয়া, ৩৮. পুন্ড্র/ পোদ, ৩৯. বম, ৪০. বর্মণ, ৪১. বাউরি, ৪২. বাগদী/ বাকতি, ৪৩. বানাই, ৪৪. বাড়াইক, ৪৫. বাদিয়া/বেদিয়া, ৪৬. বীন/বিন্দ, ৪৭. বোনাজ/বুনা, ৪৮. ভর, ৪৯. ভূমিজ, ৫০. ভূঁইয়া, ৫১. ভূঁইমালী, ৫২. মারমা, ৫৩. মারমি/মুরমি, ৫৪. মালো/মাল, ৫৫. মাহালী, ৫৬. মাহাতো, ৫৭. মনিপুরী, ৫৮. মিরধা, ৫৯. মুন্ডা, ৬০. মুরারি/মুরিয়ারি, ৬১. মুষহর, ৬২. ম্রো/মুরং, ৬৩. রাওতিরা, ৬৪. রবিদাস, ৬৫. রাখাইন, ৬৬. রাজোয়াড়, ৬৭. রাই, ৬৮. রাজবংশী, ৬৯. রানা-কর্মকার, ৭০. লুসাই, ৭১. লোহার/লহরা, ৭২. শবর, ৭৩. সাউ, ৭৪. সান্তাল/সাঁওতাল এবং ৭৫. হাজং।

    ককাসের তথ্য অনুযায়ী, এই জনজাতিসমূহের আনুমানিক লোকসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ।

    http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=21204
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:২১507222
  • আরো সংযুক্ত:: একটি প্রাসঙ্গিক আবেদন:

    মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি
    সিলেট জেলা শাখা
    কার্যøআলয়: নেহার মার্কেট; জিন্দাবাজার, সিলেট। ফোন-০১৭১১-৩৬২১৭৯, ০১৬১১-৩৪০৯৮৯

    সূত্র: মসকস/সিল/স্মারক-০০৭/১২/২০১১ তারিখ: ২২/১২/২০১১

    স্মারকলিপি
    উপমহাদেশের বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী, বাগ্মী জননেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, মহাজোট সরকারের মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপিকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মণিপুরীদের পক্ষে মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার স্মারকলিপি।

    হে মহানুভব,
    গোটা বাংলাদেশের মণিপুরী সমাজ তথা সিলেট অঞ্চলের সর্বস্তরের ক্ষুদ্র জাতি, নৃ-গোষ্ঠী, আদিবাসীদের পক্ষ থেকে গ্রহন করুন বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিপ্লবী অভিনন্দন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও উচ্ছসিত আপনি মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নেয়ায়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মুক্তি পাগল মানুষের অন্যতম নেতৃত্বে থেকে স্বাধীন সার্বোভৌম বাংলাদেশ নির্মাণে এবং এই দেশ পরিচালনার সংবিধান প্রণয়নে আপনার ত্যাগ মেধা ও দক্ষ নেতৃত্বের কথা আজো আমাদের স্মরণে রয়েছে। দেশের সর্ববৃহ্‌ৎ এবং মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আদর্শের অনুসারী জনগোষ্ঠী আজ নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরনে আশাবাদী। আমরা আপনার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মাননীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। এরসাথে আমাদের জাতি গোষ্ঠীর সর্বাত্নক উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে বিনবনত শ্রদ্ধাসহ সহ্যযাগিতা কামনা করছি মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যদের।

    মণিপুরী তথা ক্ষুদ্র জাতিসঙ্কÄ¡র কল্যাণ
    ও উন্নয়নে নিম্নলিখিত দাবি
    সমূহ পেশ করছি-

    ১। যাচাই বাছাইক্রমে মণিপুরী শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত করণ। পর্যায়ক্রমে তা সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জন্য কার্যকর করা।

    ২। ঐতিহাসিক বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহনকারী বীর মণিপুরী বীর মুক্তিযুদ্ধাদের নাম তালিকা খচিত দৃষ্টি নন্দন ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ মণিপুরী অধুøষিত মৌলবীবাজারের কমলগঞ্জস্থ মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে নির্মাণ। অনুসন্ধানক্রমে অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এমন গৌরবের কিছু থেকে থাকলে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

    ৩। বিশ্বনন্দিত মণিপুরী নৃত্য আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে এই বাংলাদেশ তথা সিলেট থেকেই এবং তা বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাধ্যমে। সেই ইতিহাস ধরে রাখতে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত সিলেট নগরীর মাছিমপুরে নির্মাণাধীন ‘রবীন্দ্র স্মৃতি ভাষ্‌ড়্‌গর্য’ বাস্তবায়ন। অনুসন্ধানক্রমে অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এমন গৌরবের কিছু থেকে থাকলে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

    ৪। অর্পিত সম্পত্তি আইন এ দেশের মণিপুরী, সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য দুষ্ট ক্ষত। এই ‘কালো আইন’ রোধ করে পূর্ব পূরুষদের মৌরসী ভিটেবাড়ী, সম্পদে উত্তরাধীদের মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করণ।

    ৫। মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি।

    ৬। মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা ও নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশের অধিকার প্রদান।

    ৭। মণিপুরীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ‘মণিপুরী ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন।

    ৮। মণিপুরী অধুøষিত সিলেট অঞ্চলের সকল পাবলিক মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মণিপুরী কোটা সংরক্ষণ।

    ৯। দেশে-বিদেশে সমাদৃত ও সম্ভাবনাময় মণিপুরী তাঁত শিল্পের বিকাশ ও বাজার জাতের সুবিধার্থে সিলেট বিভাগের বিসিক শিল্প নগরী/ প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকনোমিক জোন/ ইপিজেডে মণিপুরীদের জন্য স্বতন্ত্র স্থান এবং বিভাগীয় নগরীতে শুল্কমুক্ত মণিপুরী হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও বাজারজাত কেন্দ্র স্থান বরাদ্ধ করা।

    ১০। মণিপুরী অধুøষিত সিলেট বিভাগের বিভাগীয় নগরীতে মণিপুরী সংস্‌ড়্‌গৃতির বিকাশে স্বতন্ত্র অথবা সকল ক্ষুদ্র জাতিসভার জন্য সমন্বিত একটি ‘কালচারাল ইনস্টিটিউট ও অডিটোরিয়াম’ প্রতিষ্ঠা।

    ১১। বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি মণিপুরী ললিতকলা একাডেমীর মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ প্রদান।
    ১২। মণিপুরী অধুøষিত এলাকায় ‘আঞ্চলিক ভূমি আইন’ কার্যকর ও প্রথাগত ভূমি অধিকার আইনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান। পর্যায়ক্রমে তা সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জন্য কার্যকর করা।

    ১৩। মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলার দিনে আঞ্চলিক সরকারী ছুটি ঘোষনা।

    ১৪। মহান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে পুরুষ/মহিলা সংসদ সদস্য অন্তভূক্তির মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান।

    অবশেষে অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত গোটা বাংলাদেশের মণিপুরী জনগোষ্ঠীর পক্ষে এই জাতিগোষ্ঠীর অভিভাবক সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার পক্ষ থেকে আপনার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি।

    নমস্‌ড়্‌গার-

    নির্মল কুমার সিংহ সংগ্রাম সিংহ
    সভাপতি সাধারন সম্পাদক
    মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি
    সিলেট জেলা শাখা। সিলেট জেলা শাখা।

    https://www.facebook.com/groups/ithaak/permalink/10150527541890091/
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:২১507221
  • আরো সংযুক্ত:: একটি প্রাসঙ্গিক আবেদন:

    মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি
    সিলেট জেলা শাখা
    কার্যøআলয়: নেহার মার্কেট; জিন্দাবাজার, সিলেট। ফোন-০১৭১১-৩৬২১৭৯, ০১৬১১-৩৪০৯৮৯

    সূত্র: মসকস/সিল/স্মারক-০০৭/১২/২০১১ তারিখ: ২২/১২/২০১১

    স্মারকলিপি
    উপমহাদেশের বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম নেতৃত্বদানকারী, বাগ্মী জননেতা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, মহাজোট সরকারের মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপিকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মণিপুরীদের পক্ষে মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার স্মারকলিপি।

    হে মহানুভব,
    গোটা বাংলাদেশের মণিপুরী সমাজ তথা সিলেট অঞ্চলের সর্বস্তরের ক্ষুদ্র জাতি, নৃ-গোষ্ঠী, আদিবাসীদের পক্ষ থেকে গ্রহন করুন বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিপ্লবী অভিনন্দন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও উচ্ছসিত আপনি মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব নেয়ায়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পূর্ব বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মুক্তি পাগল মানুষের অন্যতম নেতৃত্বে থেকে স্বাধীন সার্বোভৌম বাংলাদেশ নির্মাণে এবং এই দেশ পরিচালনার সংবিধান প্রণয়নে আপনার ত্যাগ মেধা ও দক্ষ নেতৃত্বের কথা আজো আমাদের স্মরণে রয়েছে। দেশের সর্ববৃহ্‌ৎ এবং মাটি ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মহাজোট সরকার দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আদর্শের অনুসারী জনগোষ্ঠী আজ নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরনে আশাবাদী। আমরা আপনার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মাননীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। এরসাথে আমাদের জাতি গোষ্ঠীর সর্বাত্নক উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে বিনবনত শ্রদ্ধাসহ সহ্যযাগিতা কামনা করছি মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্যদের।

    মণিপুরী তথা ক্ষুদ্র জাতিসঙ্কÄ¡র কল্যাণ
    ও উন্নয়নে নিম্নলিখিত দাবি
    সমূহ পেশ করছি-

    ১। যাচাই বাছাইক্রমে মণিপুরী শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত করণ। পর্যায়ক্রমে তা সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জন্য কার্যকর করা।

    ২। ঐতিহাসিক বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, মহান ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও অংশগ্রহনকারী বীর মণিপুরী বীর মুক্তিযুদ্ধাদের নাম তালিকা খচিত দৃষ্টি নন্দন ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ মণিপুরী অধুøষিত মৌলবীবাজারের কমলগঞ্জস্থ মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে নির্মাণ। অনুসন্ধানক্রমে অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এমন গৌরবের কিছু থেকে থাকলে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

    ৩। বিশ্বনন্দিত মণিপুরী নৃত্য আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করেছে এই বাংলাদেশ তথা সিলেট থেকেই এবং তা বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাধ্যমে। সেই ইতিহাস ধরে রাখতে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত সিলেট নগরীর মাছিমপুরে নির্মাণাধীন ‘রবীন্দ্র স্মৃতি ভাষ্‌ড়্‌গর্য’ বাস্তবায়ন। অনুসন্ধানক্রমে অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার এমন গৌরবের কিছু থেকে থাকলে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা।

    ৪। অর্পিত সম্পত্তি আইন এ দেশের মণিপুরী, সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য দুষ্ট ক্ষত। এই ‘কালো আইন’ রোধ করে পূর্ব পূরুষদের মৌরসী ভিটেবাড়ী, সম্পদে উত্তরাধীদের মালিকানা ও দখল নিশ্চিত করণ।

    ৫। মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি।

    ৬। মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা ও নিজ নিজ মাতৃভাষায় সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশের অধিকার প্রদান।

    ৭। মণিপুরীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি ‘মণিপুরী ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল’ গঠন।

    ৮। মণিপুরী অধুøষিত সিলেট অঞ্চলের সকল পাবলিক মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মণিপুরী কোটা সংরক্ষণ।

    ৯। দেশে-বিদেশে সমাদৃত ও সম্ভাবনাময় মণিপুরী তাঁত শিল্পের বিকাশ ও বাজার জাতের সুবিধার্থে সিলেট বিভাগের বিসিক শিল্প নগরী/ প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকনোমিক জোন/ ইপিজেডে মণিপুরীদের জন্য স্বতন্ত্র স্থান এবং বিভাগীয় নগরীতে শুল্কমুক্ত মণিপুরী হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও বাজারজাত কেন্দ্র স্থান বরাদ্ধ করা।

    ১০। মণিপুরী অধুøষিত সিলেট বিভাগের বিভাগীয় নগরীতে মণিপুরী সংস্‌ড়্‌গৃতির বিকাশে স্বতন্ত্র অথবা সকল ক্ষুদ্র জাতিসভার জন্য সমন্বিত একটি ‘কালচারাল ইনস্টিটিউট ও অডিটোরিয়াম’ প্রতিষ্ঠা।

    ১১। বাংলাদেশ বেতারের পাশাপাশি মণিপুরী ললিতকলা একাডেমীর মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ প্রদান।
    ১২। মণিপুরী অধুøষিত এলাকায় ‘আঞ্চলিক ভূমি আইন’ কার্যকর ও প্রথাগত ভূমি অধিকার আইনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান। পর্যায়ক্রমে তা সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্বার জন্য কার্যকর করা।

    ১৩। মণিপুরীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলার দিনে আঞ্চলিক সরকারী ছুটি ঘোষনা।

    ১৪। মহান জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে পুরুষ/মহিলা সংসদ সদস্য অন্তভূক্তির মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান।

    অবশেষে অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত গোটা বাংলাদেশের মণিপুরী জনগোষ্ঠীর পক্ষে এই জাতিগোষ্ঠীর অভিভাবক সংগঠনের সিলেট জেলা শাখার পক্ষ থেকে আপনার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি।

    নমস্‌ড়্‌গার-

    নির্মল কুমার সিংহ সংগ্রাম সিংহ
    সভাপতি সাধারন সম্পাদক
    মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতি
    সিলেট জেলা শাখা। সিলেট জেলা শাখা।

    https://www.facebook.com/groups/ithaak/permalink/10150527541890091/
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১১ ১৯:৪১507223
  • আদিবাসী সাহসী মুক্তিযোদ্ধা খগেন্দ্রলাল চাকমা
    লিখেছেন: তন্দ্রা চাকমা •
    প্রকাশকাল:27 ডিসেম্বর 2011 - 7:24অপরাহ্ন
    .....................................................................................
    দীর্ঘদিন ধরে উনাকে নিয়ে লিখব লিখব করে সময় করতে পারছিলাম না। তথ্য উপাত্ত যা ছিল তা যথেস্ট নয় । আমি আবার ভীষণ খুতখুতে স্বভাবের তাই তথ্য যোগাড় করার জন্য আমি আমার বড় বোনকে ফোন দিলাম সে তার দেবর রতন চাকমা র ফোন নাম্বার দিল । এখানে উল্লেখ্য উনি আমার বড় বোনের শ্বশুর। ফোন নাম্বার পাওয়া সঙ্কেÄও প্রায় এক সপ্তাহ লাগলো উনাকে ফোন করতে । বিজয় দিবস পার হয়ে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল কেবল আজ ফোন করে তথ্য নিতে পারলাম । তাহলে রতন চাকমার মুখ থেকে শোন যাক উনার কথা।

    ১৯৭১ সালে উনি ছিলেন মুরাদনগর থানার সার্কেল ইনস্পেক্টর। শুধু তাই নয় তিনি মুরাদনগর, হোমনা, বাঞ্ছারামপুর ও দেবীদ্বার এই ৪ থানার ও দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন । সে সময় রতন ছচাকমা মাত্র এক ১৩ কি ১৪ বছরের এক কিশোর

    তখন উনি মানে রতন চাকমা ক্যাডেট কলেজের ভাইভা যাতে ভাল করতে পারেন সেজন্য ওখানে বাবার তত্তাবধানে এক গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়ছিলেন । এর মধ্যে একদিন উনি মানে রতন দাদা বুঝতে পারলেন উনার বাবার কাছে থানার লোকজন ছাড়া আর ও কিছু লোকজনের আনাগোনা আবিস্কার করলেন। উনারা বিভিন্ন নক্সা নিয়ে প্রতি রাতে মিটিং করতেন। যেহেতু কিশোর বয়স তাই কৌতূহল ও বেশী একরাতে রতন দা উনার বাবার রুম এ আড়ি পাতলেন, সেদিন জানতে পারলেন ইলিয়ট গঞ্জ ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার প্ল্যান হচ্ছে। কোন দিকে যাবে কার পজিসন কোথায় হবে, কোথায় ডিনা মাইট বসানো হবে এই বিষয়ে প্ল্যান হচ্ছিল। ঠিক তার পরদিনই ঢাকা চট্টগ্রাম রোডের ইলিয়ট গঞ্জ ব্রীজ উড়িয়ে দেয়া হয় । সময়টা ছিiল এপ্রিল এর শেষ সপ্তাহ অথবা মে মাসের প্রথম দিকে । আমি রতন দাদা কে তারিখটা জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনার ঠিক মনে নেই কবে। এই অপারেশন এর নেতৃত্ব দেন মুরাদনগর এলাকার মুক্তি বাহিনির কমান্ডার এবং বীর মুক্তি যোদ্ধা খগেন্দ্রলাল চাকমা । রতন দাদা আমাকে মুক্তি যোদ্ধা কাম্প কমান্ডার এর নাম জানতেন না । এই ঘটনার দুই দিন পর মুক্তি বাহিনির এই দলটি মুরাদনগর ছেড়ে আরও অন্যদিকে অপারেশন করতে চলে যায় । ইতিমধ্যে ঐ এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতে পারেন । তারা পাকিস্তানী সেনা বাহিনিকে বিষয়টি অবহিত করেন । এখানে উল্লেখ্য যে তদানীন্তন কুমিল্লা জেলার ডি, এস, পি পাক আর্মি কে সহযোগিতা করেন। ইলিয়ট গঞ্জ ব্রিজ উড়ানোর কয়েকদিন পর পাক আর্মি একদিন

    হঠাত করে পুরো মুরাদনগর ঘিরে ফেলে। দিনটা ছিল ৫ই মে ১৯৭১ । ঐদিন থানায় যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় । পাক আর্মি কিশোর রতন দাদা কে ও ধরে নিয়ে গিয়েছিল। পরে সবাইকে কুমিল্লা টাউনে নিয়ে যাওয়ার পর রতন দাদা কে একজন বিহারি আর ও এর হাতে দেওয়া হয়। যেহেতু বন্দি দের দুই টিমে ভাগ করা হয় । একদিন রতন দাদা আবিস্কার করলেন উনার বাবা ও অন্য টিমের আর কেও নেই। সেই সময় এর অনুভূতি বলতে গিয়ে রতন দা যা বলেছিলেন প্রথমে নাকি তাকে মেরে ফে লার কথা। কিন্তু বিহারী আর ও এর দ হওয়াতে তিনি বেচে ছিলেন । তিনি মানে রতন দাদা কুমিল্লার পুলিশ ক্লাব এ প্রায় ৩ মাস ছিলেন । পরে উনাকে একজন চাটগা বাড়ি এমন এস আই এর সহযোগিতায় চিটাগাং পাঠিয়ে দেওয়া হয় । উনি উনাদের চকবাজারের বাসায় গিয়ে দেখেন বাসায় কেউ নেই সব মালামাল লুট হইয়ে গেছে। পরে আবার উনি রাঙ্গামাটি ফিরে আসেন। এসে উনার মায়ের এক কাজিন এর বাসায় উঠেন । পরে মা ও আর সবার সাথে দেখা হয় ।

    রতন দাদার কাছ থেকে যা জানতে পেরেছি তা হল খগেন্দ্রলাল চাকমা কে কুমিল্লা ক্যান্টন মেন্ট এ ধরে নিয়ে আর ৩ জন হিন্দু এস আই সহ উনাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু আর যারা মুসলমান ছিলেন তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কুমিল্লা পুলিশ লাইনে এখন ও শহীদ দের স্মরণে যে স্মৃতি সৌধটি আছে সেখানে ৩ নাম্বার তালিকায় উনার নাম আছে । স্বাধীনতার প্রায় ৬ বছর পর খগেন্দ্র লাল চাকমার পরিবারের সাথে আমার দেখা হইয়েছিল । তখন ও দেখেছি পিসি মানে উনার স্ত্রী বিশ্বাস করতেন উনি ফিরে আসবেন । পরে ১৯৮০ সালের দিকে কেবল পিসি বুঝলেন উনি কখনও ফিরবেন না । এখানে বলা ভাল উনার বড় ছেলে ডাক্তার কিশলয় চাকমার সাথে আমার বড় বনের বিয়ে হইয় ১৯৭৭। উনার পরিবার এখনও মুক্তি যোদ্ধা তালিকায় অন্তরভুক্ত হন নি তাই সেজন্য কোন সরকারী সুবিধা ও পাননি । এই দেশের জন্য বিশষ করে কুমিল্লা অঞ্চল কে শত্রু মুক্ত করার জন্য যার এত সাহসী অবদান তার পরিবার কেন স্বীকৃতি পাবেনা। মাত্র তত্তাবধয়ক সরকার এর আমলে প্রথম তার নামে স্মৃতি স্তম্ভ হয় রাঙ্গামাটি শহরে ঢোকার মুখে ।

    আমার এই লেখা লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে যাদের কেউ মনে রাখেনা তাদের কথা লেখা । এখনকার কিছু লেখকের লেখা পরলে মনে হয় যুদ্ধ কেবল উনারা একা করেছেন আর কেউ করেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ দের অবদান আছে সে কথা সবাই ভুলে গেছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে এই দেশ কখনও সত্যিকার গনতান্ত্রিক দেশে পরিণত হবে না ।

    http://unmochon.net/node/1259
  • pi | 128.231.22.133 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ ০৪:৫৭507224
  • চলুক !
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:২৯507226
  • বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ
    ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১২
    কুঙ্গো থাঙ
    ..................................................................................................................
    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য জাতিসত্তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অনেকেই বিষয়টা প্রায় ভূলে থাকতে চান । ফলে ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তারা। হিসাব-নিকাশ না করে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ কীভাবে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় সেই পরিচ্ছেদ।

    ... এ রকমই এক শহীদের নাম গিরীন্দ্র সিংহ । জাতিগত পরিচয়ে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত। জন্ম তার ১৯৩০ সালে ত্‌ৎকালীন মৌলবীবাজার মহকুমার কমলগনে্‌জর মাধবপুরে আউলেকি গ্রামে।

    ... মনিপুরী গ্রামের পেছনে নদী সংলগ্ন শ্বশানঘাট থেকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের সাথে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তার সংগঠন ও নেতৃত্তে ছিলেন গিরীন্দ্র। সাধারন অস্ত্র লাঠি, বর্শা এবং আরো নানান প্রাচীন অস্ত্রকে সম্বল করে পরিচালিত হয় এই লড়াই। রক্তে লাল হয় ধলাই নদীর পানি। ১৯৭১ সালের আগষ্টের ১২ তারিখে হানাদাররা মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সমাজের পুরোহিত সার্বভৌম শর্মাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর ফুঁসে উঠে গিরীন্দ্রের নেতৃত্তে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজের তরুন সম্প্রদায়। মুক্তিবাহিনীতে মণিপুরী যোদ্‌দ্‌ধাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাবুসেণা সিংহ, থইবা সিংহ, নিমাই সিংহ, বাসন্তী সিংহ, বসন্তকুমার সিংহ, পদ্মাসেন সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ, আনন্দ সিংহ, মন্ত্রী সিংহ, নীলমণি চ্যাটার্জ্জিসহ অসংখ্য বীর তরুন জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। কেউ অস্ত্র হাতে,কেউ সংবাদবাহক হিসাবে, কেউ বা সংগঠকের ভূমিকায়, আর গিরীন্দ্র ছিলেন তাদের মধ্যমণি।

    গিরীন্দ্র ছিলেন অসীম সাহসি ও অসাধারন দৈহিক ক্ষমতার অধিকারী। যুদ্ধের পাশাপাশি মাধবপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবারদাবার সরবরাহের দ্বায়িত্ব ছিল তার উপর। মাঝেমধ্যে গোপনে এস ভীতসন্ত্রস্ত মণিপুরীদের অভয় দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কর্তব্যস্থলে। মাগুরছড়ায় মাইন পাতার কাজ তাকে দেয়া হয়।

    ... আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজার সময় (সেবছর অবশ্য শুধু ঘটপুজো হয়েছিল) মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশনের সময় শত্রুসৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন । এরপর তাকে জীপে করে ধলাই ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সপ্তাহখানেক আটকে রেখে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েও তার কাজ থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তাকে হত্যা করে লাশ ধলাই নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। যে ধলাই নদীর তীর থেকে অকুতোভয় এই মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রামের ডাক দিয়ে মণিপুরী তরুনদের উজ্জিবীত করেছিলেন, সেই ধলাইয়ের পানিতেই তার সমাধি ঘটে।

    ... স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মযজ্ঞের অন্যতম এই কারিগরের পরিবার ও উত্তরসুরিরা কেউ আজ পর্যন্ত রাস্ট্রের কাছ থেকে কোন আনুকুল্য পায়নি, কারণ গিরীন্দ্রকে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সাটিফিকেট বা পদক দিয়ে জাতে তোলা হয়নি ।

    ... কয়েক বছর আগে স্থানীয় উদ্যোগে শিববাজারের মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে শহীদ গিরীন্দ্র সিংহের একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। অভাবক্লিষ্ট গিরীন্দ্রের উত্তরসুরিরা সেই স্মৃতিস্তম্ভের দিকে তাকিয়ে পাওয়া ন্যুনতম সান্তনায় রাস্ট্রের উদাসীনতাকে কখনৈ মেনে নিতে পারেনা।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সম্বন্ধে বিস্তারিত একটি নিবন্ধ আজকের প্রথম আলোতে (০৯ মার্চ , ২০০৮) ছাপা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক প্রথম আলোর ১১ পৃষ্ঠায় লেখাটি পড়তে পারেন ।

    http://www.somewhereinblog.net/blog/kungothangblog/28777840
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ ১৮:২৯507227
  • বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ
    ০৯ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১২
    কুঙ্গো থাঙ
    ......................................................................
    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি ছাড়াও অন্যান্য জাতিসত্তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অনেকেই বিষয়টা প্রায় ভূলে থাকতে চান । ফলে ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তারা। হিসাব-নিকাশ না করে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ কীভাবে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ইতিহাসের পাতা থেকে বাদ পড়ে যায় সেই পরিচ্ছেদ।

    ... এ রকমই এক শহীদের নাম গিরীন্দ্র সিংহ । জাতিগত পরিচয়ে মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ভূক্ত। জন্ম তার ১৯৩০ সালে ত্‌ৎকালীন মৌলবীবাজার মহকুমার কমলগনে্‌জর মাধবপুরে আউলেকি গ্রামে।

    ... মনিপুরী গ্রামের পেছনে নদী সংলগ্ন শ্বশানঘাট থেকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের সাথে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তার সংগঠন ও নেতৃত্তে ছিলেন গিরীন্দ্র। সাধারন অস্ত্র লাঠি, বর্শা এবং আরো নানান প্রাচীন অস্ত্রকে সম্বল করে পরিচালিত হয় এই লড়াই। রক্তে লাল হয় ধলাই নদীর পানি। ১৯৭১ সালের আগষ্টের ১২ তারিখে হানাদাররা মণিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া সমাজের পুরোহিত সার্বভৌম শর্মাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর ফুঁসে উঠে গিরীন্দ্রের নেতৃত্তে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজের তরুন সম্প্রদায়। মুক্তিবাহিনীতে মণিপুরী যোদ্‌দ্‌ধাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাবুসেণা সিংহ, থইবা সিংহ, নিমাই সিংহ, বাসন্তী সিংহ, বসন্তকুমার সিংহ, পদ্মাসেন সিংহ, রবীন্দ্র সিংহ, আনন্দ সিংহ, মন্ত্রী সিংহ, নীলমণি চ্যাটার্জ্জিসহ অসংখ্য বীর তরুন জীবন বাজি রেখে মাতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। কেউ অস্ত্র হাতে,কেউ সংবাদবাহক হিসাবে, কেউ বা সংগঠকের ভূমিকায়, আর গিরীন্দ্র ছিলেন তাদের মধ্যমণি।

    গিরীন্দ্র ছিলেন অসীম সাহসি ও অসাধারন দৈহিক ক্ষমতার অধিকারী। যুদ্ধের পাশাপাশি মাধবপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবারদাবার সরবরাহের দ্বায়িত্ব ছিল তার উপর। মাঝেমধ্যে গোপনে এস ভীতসন্ত্রস্ত মণিপুরীদের অভয় দিয়ে আবার ফিরে যেতেন কর্তব্যস্থলে। মাগুরছড়ায় মাইন পাতার কাজ তাকে দেয়া হয়।

    ... আশ্বিন মাসে দুর্গাপুজার সময় (সেবছর অবশ্য শুধু ঘটপুজো হয়েছিল) মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশনের সময় শত্রুসৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন । এরপর তাকে জীপে করে ধলাই ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সপ্তাহখানেক আটকে রেখে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েও তার কাজ থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তাকে হত্যা করে লাশ ধলাই নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। যে ধলাই নদীর তীর থেকে অকুতোভয় এই মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রামের ডাক দিয়ে মণিপুরী তরুনদের উজ্জিবীত করেছিলেন, সেই ধলাইয়ের পানিতেই তার সমাধি ঘটে।

    ... স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মযজ্ঞের অন্যতম এই কারিগরের পরিবার ও উত্তরসুরিরা কেউ আজ পর্যন্ত রাস্ট্রের কাছ থেকে কোন আনুকুল্য পায়নি, কারণ গিরীন্দ্রকে তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সাটিফিকেট বা পদক দিয়ে জাতে তোলা হয়নি ।

    ... কয়েক বছর আগে স্থানীয় উদ্যোগে শিববাজারের মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে শহীদ গিরীন্দ্র সিংহের একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে। অভাবক্লিষ্ট গিরীন্দ্রের উত্তরসুরিরা সেই স্মৃতিস্তম্ভের দিকে তাকিয়ে পাওয়া ন্যুনতম সান্তনায় রাস্ট্রের উদাসীনতাকে কখনৈ মেনে নিতে পারেনা।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গিরীন্দ্র সম্বন্ধে বিস্তারিত একটি নিবন্ধ আজকের প্রথম আলোতে (০৯ মার্চ , ২০০৮) ছাপা হয়েছে। আগ্রহী পাঠক প্রথম আলোর ১১ পৃষ্ঠায় লেখাটি পড়তে পারেন ।

    http://www.somewhereinblog.net/blog/kungothangblog/28777840
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ ২০:৪৪507228
  • YuKChing’saspirationsremaindistantdreams
    Liberationthrutheeyesofanon-BangaleeFF→

    NomanChowdhury, backfromBandarban
    .................................................................

    Hefoughtforindependencein1971toseeapluralist, democraticBangladeshwhereallcitizenswouldenjoyequalrightsandprivileges.

    At79, YuKChingMarmaseeshisaspirationsfromtheauthoritiesinindependentBangladeshnotreflectedinrealityashe, asoneofethnicminoritygroups, feelsdiscriminated.

    “Mydreamsareyettocometrueasouraspirationshavenotbeenreflectedintheactivitiesofthesuccessivegovernments,”hetolddailysuninaninterviewathishouseon13December.

    Ching, thelonefreedomfighterfromethnicpeoplewhohasbeenawardedBirBikrom, thethirdhighestgallantryaward, saidhetookpartinthewartofreethemotherlandfromthePakistanidominationalthoughmostfreedomfighterswereimbuedwiththespiritofBangaleenationalism.

    “WewantedtoestablishbrotherhoodbetweentheBangaleesandthehillypeople,”saidChingwhowasborninBanderbanin1932.HejoinedtheEastPakistanRiflesin1952andfoughtguerrillawarinnortherndistrictsin1971.

    Goingdownthememorylane, hesaidhehadjoinedthebattleimmediatelyafter“theOperationSearchLight”, themilitarycrackdownlaunchedbythePakistanijuntaon25March, 1971tostopthepeopleofBangladeshfromestablishingtheirrights.

    Inthewarprocess, thevaliantfreedomfighterhadkilledasmanyas10PakistanisoldiersandthreelocalcollaboratorsknownasRazakars.Heexpressessolidaritywiththedemandfortrialofwarcriminals.

    Theethnicleaderisstillvocalforrealisingtherightsofthehillpeople.“Indigenouspeopleareyettoenjoythefruitsofindependenceastheyhavebeendeprivedofrights’,”hesaid.

    HeaddedthattheChittagongHillTractsPeaceAccord, signedon2December1997toendbushwarintheCHT, isyettobringanyfruittotheCHTpeople.

    Ching, whohaddevelopedcloserelationshipwithcommanderofEasternfront, India’sLtGeneralJagajitSinghAurora, refusedtoacceptIndiancitizenship.Hesaidheis‘notwelleither’hereinindependentBangladesh.

    “Ihavetoruna15-memberfamilywithmylimitedstatehonorarium,”hesaid.HeurgedPrimeMinisterSheikhHasinatogivehimsomestatesupportuntilhisdeath.

    Ching, whowasgiventheBirBikromtitleon15December, 1973, expressedhisangeratthekillingofBangabandhuSheikhMujiburRahmanandsaidthecountrywouldhavebeeninastate, hadBangabandhunotbeenkilledon15August1975.

    HealsobrushedasidecriticismatthattimethatBangabandhuwastryingtomakeBangladeshapartofIndiabysigningthe25-yearlongfriendshiptreaty.“Look, whatishappeningtoday? AgreementsarebeingsignedwithIndiabuttherearenoproblems,”hesaid.

    Thewarheroalsoventedhisanguishatthedivisivepoliticalculture, sayingthatthehostilitiesarenotgoodfortheprogressofthecountry.Heurgedmajorpoliticalpartiesnottodoconflictingpolitics.

    http://www.daily-sun.com/details_yes_16-12-2011_yu-k-ching%E2%80%99s-aspirations-remain-distant-dreams_423_5_2_1_2.html
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ০৩ জানুয়ারি ২০১২ ১৭:২২507229
  • আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি খুবই জরুরি
    লেখক: MithusilakMurmu
    .....................................................................................
    জয়পুরহাটের আদিবাসী সাঁওতাল বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীন মুরমুর সঙ্গে বেশ কয়েক মাস আগে পরিচিত হয়েছি। ঢাকায় চার্চ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে এক মিটিংয়ে তার সঙ্গে পরিচয়। এই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার টাইটেল এবং আমার টাইটেল একই হওয়ায় আমিই প্রথমে তাকে কাকা বলে সম্বোধন করি। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই আলাপ আলোচনা হয় পরিবার, সমাজ, দেশ ইত্যাদি নিয়ে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মোবাইল ফোনে আমাকে জানালেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শহীদ চার মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতির উদ্দেশে ভাস্কর্য উন্মোচন করা হবে।অভাস্কর্যটি নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল রাজশাহী চারুকলা ইনস্টিটিউট। গত ১৭ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলার জেলা প্রশাসক অশোক কুমার বিশ্বাস আদিবাসীয় অস্ত্র হাতে নারী-পুরুষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন। এই চারজনই (শহীদ খোকা হেমরম, পিতা- লক্ষণ হেমরম; শহীদ মন্টু হেমরম, পিতা-লক্ষণ হেমরম; শহীদ যোহন সরেন, পিতা- কালু সরেন; শহীদ ফিলিপ সরেন, পিতা- লক্ষণ সরেন) ছিলেন আদিবাসী সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম নন্দইলের। এছাড়াও ১৬ ডিসেম্বর জেলায় বর্তমানে বসবাসরত ২৩ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। আলাপ প্রসঙ্গেই এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জানালেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও পাঁচবিবি উপজেলার ৩৪ জন আদিবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এদের মধ্যে সাতজন (মি. উপেন মালো, গ্রাম- ভানাইকুসলা; মি. সামুয়েল সরেনসহ আরও পাঁচজন) বীর মুক্তিযোদ্ধা রাতের অন্ধকারে দেশ ত্যাগ করেছেন। উৎসাহী হয়ে জানতে চাইলাম, কেন তারা দেশ ত্যাগ করেছেন? জানালেন আরেক করুণ ইতিহাস।

    মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তির পর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকা-এর পরবর্তীকালে বিভিন্ন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র সমর্পণ করেনি এবং এলাকায় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে স্থানীয় প্রশাসন তাদের ধরে নিয়ে যায়। নবীন মুরমুকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জয়পুরহাট সদরে। প্রথম ছয় মাস জেলখানায় থেকেছেন প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি জড়িত নন। অত:পর তাকে আরও ছয় মাস লেগেছিল নির্দোষ প্রমাণ করতে, নির্দোষ প্রমাণ হয়েই বের হয়ে এসেছিলেন। পর্যায়ক্রমে সেই সাতজনও নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন কিন্তু তাদের হৃদয়ে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল তা আর নিরাময় হয়নি। দু:খ, বেদনায়, অভিমানে এবং ক্ষোভে স্বাধীন বাংলাদেশকে গুডবাই জানিয়েছেন। স্বাধীনতার পরবর্তীতে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা বুদু লাকড়া, মুক্তিযোদ্ধা শিবু মুরমু, মুক্তিযোদ্ধা শিবলাল মুরমু, মুক্তিযোদ্ধা বাবুরাম টুডু, মুক্তিযোদ্ধা দেবেন টুডুসহ আরও অনেকে রাতের অন্ধকারে দেশত্যাগ করেছেন, চোখের জল মুছতে মুছতে। অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে আমার মাতৃভূমি ঠাঁই দিতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধা নবীন মুরমু আরও জানিয়েছেন, এখনো আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রশাসনের কাছ থেকে নানান বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন, অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

    ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করলাম ‘বাদপড়া মণিপুরি শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির দাবি’ (সংবাদ ১৭.১২.২০১১) এবং দৈনিক প্রথম আলো আয়োজিত ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ (১৭.১২.২০১১) শীর্ষক আলোচনায় সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এস চাকমা অভিযোগের সুরেই বলেছেন, ‘একাত্তরে আদিবাসীরা বিচ্ছিন্নভাবে যার যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা দিয়েছেন। মং রাজার যে অবদান, আদিবাসী মংরা যে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তা ইতিহাসে উঠে আসেনি।’ মহান বিজয় দিবসের ৪০তম বার্ষিকীতে মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতি বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে সিলেটের জিন্দাবাজারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর সমিতির নেতারা ‘মহান বিজয় দিবসের ৪০তম বার্ষিকীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ গিরিন্দ্র সিংহ, সার্বভে০ম শর্ম্মা, ভুবেন সিংহসহ বাদপড়া অন্য শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্তির দাবি জানিয়েছেন।’ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বার বার প্রণয়ন করছেন, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী কিংবা অমুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিদের নামও তালিকায়, গেজেটে প্রকাশিত হচ্ছে, যা মুক্তচিন্তার ব্যক্তিদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে। প্রত আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র মাজহী (হাঁসদা) ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আস্ফালনে জীবিতকালে কোন তালিকায় নাম সংযোজিত করতে অপারগতা জানিয়েছিলেন। আমরা দেখেছি, রংপুর সদরে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে কয়েকজন শহীদের নাম উল্লেখ না থাকায় জোট সরকারের সময়ে কে বা কারা এটা ভেঙে ফেলেছিল। এরপর তা আর নির্মাণ করা হয়নি। কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদপড়া এবং কয়েকজন অমুক্তিযোদ্ধা ও একজন চিহ্নিত রাজাকারের নাম শহীদ স্মৃতি ফলকে স্থান পাওয়ায় সাতক্ষীরায় নির্মিত ফলকটি আজও উদ্বোধন করা হয়নি।

    রাষ্ট্র আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের করেছে চরম অবহেলা, সরকার করেছে বৈষম্য এবং প্রতিবেশীরা সহনশীলতা ভুলে গিয়ে সহিংসতার রূপ ধারণ করেছে। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবলিত যে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন তা আজও স্বপ্নই রয়ে গেছে। আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন হলেই আদিবাসী, খ্রিস্টান, বে০দ্ধ, হিন্দু, মুসলমানরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পারবে। কবি আবদুস সালাম (আজাদ) লিখেছেন_

    ‘…হিন্দু বে০দ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান আদিবাসী সবাই একাকার

    দেশ গড়ার কাজে আছে সবার সমাধিকার।

    তাজা বুকের রক্ত দিয়ে কিনেছি লাল সবুজের পতাকা

    স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার_ আছে কথা বলার অধিকার

    বাংলা আমার বাংলা তোমার বাংলা সবার।’

    http://w4study.com/?p=2443
  • Biplob Rahman | 202.164.212.14 | ১৫ জানুয়ারি ২০১২ ১৬:১৫507230
  • বীরগাঁথা ৭১ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রাখা কয়েকজন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মী
    কুঙ্গ থাঙ
    ...................................
    উপনিবেশবিরোধী কৃষক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ উভয় সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে ভুমিকা রেখেছিল সিলেটের একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়। সংখ্যাতাঙ্কিÄক বিচারে তাদের ত্যাগ, তিতীক্ষা ও অবদানের কথা ক্ষুদ্র হলেও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় তাদের কথা বিবেচনায় আনা প্রয়োজন – যদিও মুক্তিযুদ্ধে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীসহ দেশের ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোর অসামান্য ভূমিকা ও অংশগ্রহনের কথা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রচারযন্ত্রে আজো উপেক্ষিত।

    পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক সীমাহীন অবহেলা, উপেক্ষা, বঞ্চনা ও নিপীড়ন মণিপুরীদের চরম অস্তিত্বসংকটে ফেলে দেয়। এর সাথে যোগ হয়েছিল দেশমাতৃকার টান এবং অন্যায় আর শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চিরন্তন মণিপুরী ঐতিহ্য। স্কুলে পড়া তরুণ থেকে শুরু করে ক্ষেতে খামারে কাজ করা অশিক্ষিত মণিপুরী কৃষক হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। কেউ নেয় সংগঠকের ভূমিকা। কেউ সীমান্তে বাস্তুহারা মানুষ পারাপারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে। সম্ভ্রম বাঁচাতে দীর্ঘ নয়মাস মণিপুরী নারীকে গ্রাম থেকে গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে হয়। মণিপুরী বৃদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান ও সহযোগিতা করে। মণিপুরী গৃহবধু আহত মুক্তিযোদ্ধার সেবা শুশ্রুষার দ্বায়িত্ব নেয়। যারা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত, তারা সীমান্তের ওপারের আসাম ত্রিপুরা হাইলাকান্দি আগরতলায় গান গেয়ে নেচে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে নামে। এরা সবাই নিজেদের মতো মাতৃভুমি রক্ষার সংগ্রামে অংশ নিয়েছে, কারো অবদান কারো থেকে কম নয়।

    এ লেখায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সিলেট বিভাগের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীর কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।

    শ্রীকৃষ্ণকুমার সিংহ, পিতা : শ্রীরতন সিংহ, গ্রাম: উত্তর ভানুবিল, ডাকঘর: আদমপুর বাজার, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    কৃষ্ণকুমার সিংহ এমন পরিবারের সন্তান যার পুর্বপুরুষরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। ১৪ই আগস্ট ১৯৭১ তার বাড়িতে পাক বাহিনীর দোসররা হানা দিয়ে লুটপাট ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পরদিনই রাগী এই তরুন দা হাতে বেড়িয়ে পড়েন এবং দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে ভারতের কৈলাশহরে পৌছান। হাতে দা থাকায় ভারতীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে কৈলাশহরের ভারতের আইবিএ’র জেরায় উত্তীর্ন হন এবং হাফলং এ ট্রেনিং নেন। কৃষ্ণকুমার মাইননিক্ষেপে দক্ষ ছিলেন। তিনি গুয়াইসনগর, ওয়াপাড়া, ভাড়াউড়া, ফুলবাড়ী. ধলাই ক্যাম্প এবং কামারছড়া ক্যাম্পের অভিযানে সাহসী ভুমিকা রাখেন।

    ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে কৃষ্ণকুমার শ্রীমংগলে সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে অস্ত্র জমা দেন। স্বাধীনতার পর সরকারের রেভিনিউ বিভাগে তিনি একটি ছোট চাকরি পান। তবে এরপরে তার শরীর ভেঙে পড়ে এবং কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বর্তমানে বাকশক্তি হারিয়ে কোনরকমে দিন কাটাচ্ছেন।

    শ্রীসার্বভৌম শর্মা, গ্রাম: ভানুবিল, ডাকঘর: আদমপুর বাজার, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    শ্রীসার্বভৌম শর্মা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী সমাজের বিখ্যাত একজন পুরোহিত। তার পুর্বপুরুষ বৈকুণ্ঠনাথ শর্মা ছিলেন ১৯৩০ সালে পৃথিমপাশার জমিদার আলী আমজাদ খাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত কৃষক আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা। মুক্তিযুদ্ধে তার অবস্থান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে ১২ ই আগষ্ট পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর চোখ বাধাঁ অবস্থায় ভানুবিলের পুর্বদিকে জংগলে তার লাশ পাওয়া যায়।

    শ্রীসতীশচন্দ্র সিংহ, পিতা: মুরুলীচাঁন সিংহ, গ্রাম: তিলকপুর, ডাকঘর: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    সতীশচন্দ্র ১৯৭১ সালে শ্রীমংগল কলেজে বি.এ ক্লাসের ছাত্র ছিলেন। শ্রীমংগলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রবেশের পরদিনই তিনি আসামের লোয়ার হাফলং চলে যান। সেখানে এম. ভি কৃষ্ণন নামের ভারতীয় সামরিক অফিসারের অধীনে তিনি গেরিলা ট্রেনিং গ্রহন করেন। জুলাই মাসে ক্যাপ্টেন ফখরুলের অধীনে মুজিববাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের পাথরখোলায় প্রবেশ করেন। তারা ছিলেন ৩১ পলিটব্যুরোর। সতীশচন্দ্র শমশেরনগর বিমান ঘাঁটির অপারেশনে অংশ নেন। ঐদিন ত্রুটিপুর্ণ ডিরেকশনের কারণে হেলিকপ্টারের ব্রাশফায়ারে তিনি আহত হন, তবে তার ৫ জন সহযোদ্ধা নিহত হন। স্বাধীনতার পর মৌলবীবাজারে সতীশচন্দ্র অস্ত্র হস্তান্তর করেন।

    শ্রীনীলকান্ত সিংহ, পিতা: চাউরেল সিংহ, গ্রাম: নবালুনগর, থানা: কোম্পানীগঞ্জ, জেলা: সিলেট
    ছাতক হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র নীলকান্ত যুদ্ধে যোগ দেবার জন্য এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কুইঘাট হয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথে একটি শরনার্থী দলকে অসম সাহসিকতায় দস্যুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিরাপদে শরনার্থী ক্যাম্পে পৌছে দেন। সেখানে তার সহপাঠী সাংবাদিক অতীশচন্দ্র দাসের সাথে দেখা হয় এবং কিছুদিন ক্যাম্প পরিচালনার দ্বায়িত্বে থাকেন। তারপর চন্দ্রনাথপুরে মি. বাগচী নামের সামরিক অফিসারের অধীনে প্রশিক্ষন নেন। সিলেটের বড়লেখার লাঠিটিলা বর্ডারে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে কয়েকটি যুদ্ধ অংশ নেন। এরপর হাকালুকির হাওরে পাকিস্তানিদের সাথে ভবহ একটি সংঘর্ষ হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় ধরনের পরাজয় বরন করতে হয়। নীলকান্তসহ মাত্র ৬ জন প্রানে রক্ষা পেয়ে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর সিলেট জামিয়া মাদ্রাসায় মেজর সি আর দত্তের কাছে অস্ত্রসমর্পন করেন। বর্তমানে জৈন্তাপুর থানা হাসপাতালে একজন কর্মচারী হিসাবে কাজ করছেন।

    শ্রীব্রজমোহন সিংহ, পিতা: শ্রীবটা সিংহ, গ্রাম: ছড়াপাথারি, ডাকঘর: পাত্রখোলা, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    সহজ সরল কৃষক ব্রজমোহনকে জমিতে হালচাষ করা অবস্থায় রাজাকারেরা আটক করে এবং চোখ বেধেঁ মিলিটারি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাংকার খনন করার কাজে লাগানো হলে তিনি কৌশলে পালিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহর চলে যান। ট্রেনিং নেয়ার পর ক্যাপ্টেন আব্দুস সালামের অধীনে সিলেট শহরে অপারেশনে অংশ নেন। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমাদের অধীনে কৈলাশহর ও কমলপুর সীমান্তে কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর শ্রীমংগল ওয়াপদা অফিসে অস্ত্র জমা দেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত প্রথম ঢাকা সম্মেলনে তিনি উপস্থিত ছিলেন। কয়েক বছর আগে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করতে করতে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

    শ্রীগিরীন্দ্র সিংহ, গ্রাম: মাধবপুর(আউলেকি), ডাক কেরামতনগর, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    মনিপুরী ঘোড়ামারা গ্রামের পেছনে নদী সংলগ্ন শ্বশানঘাট থেকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের সাথে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তার সংগঠন ও নেতৃত্তে ছিলেন গিরীন্দ্র। সাধারন অস্ত্র লাঠি, বর্শা এবং আরো নানান প্রাচীন অস্ত্রকে সম্বল করে পরিচালিত হয় এই লড়াই। গিরীন্দ্র ছিলেন অসম সাহসি ও অসাধারন দৈহিক ক্ষমতার অধিকারী। যুদ্ধের পাশাপাশি মাধবপুর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবারদাবার সরবরাহের দ্বায়িত্ব ছিল তার উপর। মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অপারেশনের সময় শত্রুসৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন । ধলাই ক্যাম্পে সপ্তাহখানেক আটকে রেখে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েও তার কাজ থেকে কোন তথ্য বের করতে না পেরে তাকে হত্যা করে লাশ ধলাই নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। শহীদ গিরীন্দ্র সিংহ কে নিয়ে একটি লেখা পড়ুন - এখানে

    মণি সিংহ, গ্রাম: মাঝের গাঁও, থানা: ছাতক, জেলা :সুনামগঞ্জ
    ছাতক এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর হত্যা লুঠতরাজ শুরু হলে মণি সিংহ তার কয়েকজন বন্ধ ধের সিংহ, ব্রজ সিংহ, মনে সিংহ, হীরেন সিংহসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে সীমান্তবর্তী নামাইল ক্যাম্পে হাজির হল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবার উদ্দেশ্যে। বুটাং এবং শিলঙে প্রশিক্ষন গ্রহনের পর প্রথম অপারেশনে যান ৫ নং সেক্টরে ভোলাগঞ্জে। ১২ ডিসেম্বর সিলেটের শালুটিকর বিমান ঘাটিতে ৩ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শত্রুসেন্যদের আত্মসমর্পন করতে বাধ্য করা হয়, সেই অভিযানে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন মণি সিংহ। দেশ স্বাধীন হবার পর সিলেট আলীয়া মাদ্রাসায় কর্ণেল শওকত আলীর কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করেন। যুদ্ধের সুখস্মৃতি নিয়ে মণি সিংহ এখন কৃষিকাজ করে জীবন চালান।

    ভুবন সিংহ, গ্রাম: ঘোড়ামারা, ডাক: আদমপুর বাজার, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    ভুবন সিংহকে যুদ্ধকালীন সময়ে জরুরি বার্তা সংগ্রহের কাজ করতেন। কৈলাশহর, আগরতলা এবং ভানুগাছ ছিল তার কর্মক্ষেত্র। বাড়ীতে পরিবার পরিজন রেখে একাই ভারতে চলে গিয়েছিলেন। এরপর সংবাদ সংগ্রহ এবং শরনার্থী পারাপারের কাজে নিয়মিত সীমান্তের এপার -ওপারে যাতায়াত করতে থাকেন। সেপ্টেম্বর মাসে পাথরখোলা বর্ডারে পাকছাউনির কাছে তিনি শত্রুসৈন্যের হাতে ধরা পড়েন। তারপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার হাত পা বেঁধে শমসেরনগর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে জোড়ামন্ডপের রাস্তার সামনে এক বৃদ্ধকে দেখে তিনি শেষবারের মতো চিৎকার করে তার পরিবারের কথা জানতে চান। শমসেরনগর ক্যাম্পে নির্যাতনের পর তাকে মেরে ফেলে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

    রবীন্দ্র কুমার সিংহ, পিতা: ফাল্গুনী সিংহ, গ্রাম: তিলকপুর, ডাক: কমলগঞ্জ, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    ১৯৭১ সন সিলেট এম সি কলেজের গণিত বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন রবীন্দ্র কুমার সিংহ। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথেই ভারতে চলে যান মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে। সেখানে স্বল্পকালীন ট্রেনিং শেষ করে শমশেরনগর ও কামারছড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি সফল অভিযানে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণকুমার সিংহের বন থেকে জানা যায় কামারছড়া অঞ্চলের পাঞ্জাবি ছাউনিতে গেরিলা আক্রমনের সময় তিনি ঐ অঞ্চলের ম্যাপ রবীন্দ্র কুমার সিংহের হাতে হস্তান্তর করেন। যুদ্ধের পাশাপাশি শানীয় রাজাকার ও পাক বাহিনীর দোসরদের চিহ্নিত করে তাদের খুজেঁ বের করার কাজ করতেন।

    স্বাধীনতার পর অনার্স ও মাস্টার্স ১ম শ্রেনীতে পাশ করার পর তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে সেকশন অফিসার এবং পরে তার সততার কারণে তিনি বাংলাদেশ সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রীন একান্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৯ সনের ২৭ আগষ্ট ঢাকার আজিমপুরে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সশস্ত্র হামলায় তিনি নিহত হন।

    থইবা সিংহ, গ্রাম: তেঁতইগাও, ডাক: আদমপুর বাজার, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের মহকুমা সদরে কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তিনি মেঘালয়ের শিলং এর বালা ক্যাম্পে ১৫/২০ দিন থাকার পর ভারতীয় মেজর বাথ সিং এর তঙ্কÄ¡বধানে ট্রেনিং নেন। প্রথম অপারেশন ছিল ঢাউকির মুক্তাপুরে, তারপর তাহেরপুর রাতাছড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে কমান্ডার মানিক চৌধুরীর অধীনে দিরাই, কর্ণফুলী. শাল্লা ও জয়কলস এ গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। বর্তমানে কৃষিকাজ করে সংসার চালান।

    নন্দলাল সিংহ. গ্রাম: নবালুচর, থানা: কোম্পানিগঞ্জ, জেলা: সিলেট
    ১৯৭১ যুদ্ধ শুরু হবার পরপরই নন্দলাল সিংহ সপরিবারে ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে পরিবারের সদস্যদের ইছামতি ডিঙরায় শরনার্থী ক্যাম্পে রেখে মেঘালয়েল জোয়াই তে প্রশিক্ষনের জন্য চলে যান। প্রথম অপারেশন ছিল ভোলাগঞ্জের বিলাজোড়ে। তারপর বাদঘাটে এবং পরে প্লাটুন কমান্ডার মুসলিম মিয়ার অধীনে গোয়মারায় যুদ্ধ করেন। শালুটিকর বিমান ঘাটি ও তেলিঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন নন্দলাল। স্বাধীনতার পর সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় কর্ণেল শওকত আলীর কাছে অস্ত্র জমা দেন। পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পেয়েছিলেন কিন্তু তা ছেড়ে বাড়ীতে কৃষিকাজ করছেন।

    বিদ্যাধন সিংহ, গ্রাম: ভানুবিল, ডাক: আদমপুর বাজার, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা মৌলবীবাজার
    ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বিদ্যাধন সিংহের বাড়ীতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা হামলা চালায়। সেদিন সন্ধ্যায় ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে ভোররাতে ডলুগাও পৌছান। সেখানে স্বেচ্ছায় ডিআইবির হাতে আটক হন। তারপর নিজের ইচ্ছার কথা জানালে তাকে ট্রেনিং এর জন্য হাফলং পাঠানো হয়। বিদ্যাধন সিংহ কমলপুরের বালিগাও ক্যাম্পে এবং পরে গুরুত্তপুর্ন ধলাই ক্যাম্পের একটি অপারেশনে অংশ নেন। ভারতীয় সীমান্ত থেকে চরাশ গজ দুরের এই আউটপোস্টে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানীবাহিনীর মধ্যে কয়েকদফা সংঘর্ষ হয়েছিল। এই ধলাই আউপোস্ট শত্রুমুক্ত করতেই প্রাণ দিয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। দেশ স্বাধীন হলে বিদ্যাধন শ্রীমঙ্গল ওয়াপদায় এসে অস্ত্র জমা দেন। ১৯৯১ সালে তিনি ২ পুত্র ও ১ কন্যা রেখে মারা যান।

    ব্রজমোহন সিংহ, গ্রাম: মাঝের গাঁও, থানা: কোম্পানিগঞ্জ, জেলা: সিলেট
    টেইলার ব্রজমোহন সিংহ পেশাগত কাজের জন্যে আগরতলায় থাকতেন। যুদ্ধ শুরু হলে বাড়ীতে বাবা-মাকে দেখার জন্য দেশে আসেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাবেন। তারপর মেঘালয়ের শিলং এ ভারতীয় সামরিক অফিসার রলরাম সিং এবং ইম্ফালের কুঞ্জ সিং এর তঙ্কÄ¡বধানে ট্রেনিং রাভ করেন। জৈন্তা অঞ্চলের মুক্তাপুর এবং কালাইনছড়ি ছিল ব্রজমোহন সিংহের প্রথম অপারেশন। এরপর কমান্ডার আলমগীরের নেতৃত্বে ভোলাগঞ্জে কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। বর্তমানে হতদরিদ্র হয়ে অন্যের জমি বর্গাচাষ করে দিনযাপন করছেন।

    নিমাই সিংহ, গ্রাম: মাধবপুর, ডাকঘর: পাত্রখোলা, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    ছাত্রাবস্থায় নিমাই সিংহ ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী। প্রথমে ভারতে একটি শরনার্থী শিবিরের জীপগাড়ীর হেলপার হয়ে কাজ করতেন। পরে হাফলং লোয়ার বনে ভারতীয় সামরিক অফিসার হনুমান সিং এর কাছে ৩ মাস ২১ দিন প্রশিক্ষন নেবার পর ৪ নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন সাজ্জাদুর রহমানের অধীনে কমলপুর সীমান্তে নিয়োজিত হন। এরপর কমান্ডার আবুল কাশেমের অধীনে কুমারঘাট, শ্রীমঙ্গল, আখাউরা এবং খোয়াই এ কয়েকটি অভিযানে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হবার পর শ্রীমঙ্গলে অস্ত্র জমা দেন। পরে ১৫ দিনের মিলিশিয়া ট্রেনিং এ অংশ নেন। বর্তমানে আনসার বাহিনীর সাথে যুক্ত আছেন।

    বিশ্বম্ভর সিংহ, গ্রাম: বালিগাঁও,ডাকঘর: কেরামতনগর, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার ভাই কৃপাময় সিংহকে নিয়ে শরনার্থী শিবিরে উঠেন। তারপর নৌমুজা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখান।অসেখান থেকে শিলচরের লোয়ারবন ট্রেনিং সেন্টারে ১ মাস ১০ দিন ট্রেনিং নেন। ক্যাপ্টেন ধীর সিং এর তঙ্কÄ¡বধানে ট্রেনিং সমাপ্তির পর কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অধীনে চাতলাপুর বর্ডার অপারেশন ডিফেন্সে কাজ করেন। বিওপি, কামারছড়া চাতলাপুরে তিনি অপারেশনে ডিফেন্সে গুরুত্তপূর্ন দ্বায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর মৌলবীবাজার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারে অস্ত্র জমা দেন। ১৯৭৪ সালে শ্রীমঙ্গল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করার পর চেস্টা করেও একটি চাকুরি জুটাতে না পেরে মনক্ষুন্ন হয়ে কৃষিকাজে মন দেন।

    দীনমনি সিংহ, গ্রাম: পুরান বালুচর, থানা: কোম্পানিগঞ্জ, জেলা: সিলেট
    ‘৭১ এ দীনমনি ছিলেন ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। মে মাসে কোম্পানিগঞ্জে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ দীনমনিকে উৎসাহিত করে তোলে। বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে তিনি তার বন্ধু স্বপন, মণি ও নন্দলালের সাথে সীমান্ত পাড়ি দেন। ইছামতি ইয়ুথ ক্যাম্পে তার ট্রেনিং হয়। ট্রেনিং শেষে ভোলাগঞ্জ ৫নং সাবসেক্টরে অপারেশনে যোগ দেন। কমান্ডার ফখরুলের নেতৃত্বে পরিচালিত ঐ অভিযানে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং তারা সারারাত জেগে ভোলাগঞ্জের মোরায় শত্রুসৈন্যদের ঘাটিতে হামলা করেন। সেদিন গোলবারুদ ও অস্ত্রস্বল্পতার কারণে তারা ব্যাক করেন কিন্তু পরদিন শত্রুসৈন্যদের ঐ ক্যাম্পটি শুণ্য হতে দেখা যায়। তার স্মৃতিচারন থেকে জানা যায়, ঐদিন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সুরমা নদীর পাড়ে কিছু রাজাকারকে ধরে ফেলে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা এদের প্রাণে না মেরে সামান্য উত্তমমধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেন এবং ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করান। বর্তমানেছাতক থানার লাকেশ্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।

    বাপ্পী সিংহ, গ্রাম: বালিগাঁও, ডাকঘর: কেরামতনগর, থানা: কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলবীবাজার
    সঙ্গীত শিল্পী বাপ্পী সিংহ এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ত্রিপুরায় আমতলী অস্থায়ী ক্যাম্পে ১৫ দিন কাটান। তারপর হাফলং এ ট্রেনিং নেন ও পরে হবিগঞ্জের কমান্ডার মানিক চৌধুরীর অধীনে কয়েকটি অপারেশনে যোগ দেন। যুদ্ধকালীন সময়ে সহযোদ্ধাদের দেশাত্তবোধক গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি জে এল উইং এ ফাস্ট নেলস পাওয়ার, সিলেটের মাইন কালেকশন, আর্মস এন্ড এমুনিশন সাপ্লাই ইত্যাদির কাজ করেন। স্বাধীনতার পর অস্ত্র জমা দেন শ্রীমঙ্গলের ওয়াপদাতে। বর্তমানে নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত আছেন।

    চলবে…

    —
    তথ্যসূত্র:
    .দৈনিক সিলেট বাণী (নভে:-ডিসেম্বর ‘৯৩) – জহিরুক হক চৌ: সম্পাদিত
    . স্বা: সংগ্রামে বা: মণিপুরী সমাজ (১৯০১ -১৯৭১)- রণজিত সিংহ, ১৯৯৭
    . ইথাক (বি: ম: পত্রিকা), ডিসেম্বর ১৯৯৭ সংখ্যা
    . বৃহত্তর সিলেটের দুইশত বছরের আন্দোলন – তাজুল মোহাম্মদ

    —
    http://w4study.com/?p=2606
  • বিপ্লব রহমান | 127.18.231.50 | ২৬ জুন ২০১৩ ০২:২৫507231
  • ফেবু থেকে নেওয়া:
    -------------------
    NOTE FROM Ali Mahmed:
    "উক্য চিং এবং তাঁর অভিনব প্রতিবাদ!

    (এই লেখাটা আগেও পোস্ট করেছি কিন্তু টাইমলাইনে এখন নাই। রিপোস্ট। এই সমসস্ত লেখা প্রয়োজনে আমি রিপোষ্ট-ত্রিপোষ্ট-ফোরপোষ্টও করব। যারা পূর্বে পড়েছেন তারা এখান থেকেই বিদায় নিয়ে অন্য কোনো পড়ায় মন দিন। আদিউস)

    কাল যে লেখাটা লিখেছিলাম, মিসেস রাবেয়া খাতুনের কথা:
    https://www.facebook.com/ali.mahmed1971/posts/10151488939132335
    ওখানে তাঁর বর্ণনার সবটা আমি কিন্তু দেইনি কেবল "এদের উপর শুধু চরম শারীরিক অত্যাচারই করেই এরা থেমে থাকেনি- অবলীলায় কেটে ফেলেছে, ছিঁড়ে ফেলেছে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো...!" এটা লিখে মেয়েদের উপর নির্যাতনের ভয়াবহতা, বীভৎসতা বোঝাবার চেষ্টা করেছি।
    আমাদের নারীদের প্রতি পাক-বাহিনীর আচরণ এমন বীভৎস ছিল যার বর্ণনা লিখতেও বুকের জোর লাগে। সেই জোর আমার নাই! এসব পড়ার জন্যও আসলে শক্ত নার্ভ দরকার! আমি যেটা আগেও বলেছি, পাক-আর্মি, এরা আসলে যোদ্ধা ছিল না, ছিল সাইকোপ্যাথ! এই সাইকোপ্যাথদের পুরুষাঙ্গ কেটে রাস্তায় শুইয়ে রাখার মত প্রতিবাদ করেছিলেন, 'উক্য চিং'। জঙ্গলে চলে কেবল জঙ্গলের আইন...।

    একমাত্র আদিবাসি উক্য চিং বীর বিক্রম। তিন পার্বত্য জেলার একমাত্র আদিবাসি বীর বিক্রম। তিনি বাংলাদেশের ১৭৫ জন বীর বিক্রমের একজন।
    ৭১ এর ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যার হাতে এলএমজি, গ্রেনেড, মর্টার গর্জে উঠেছে বারবার। মাতৃভূমিকে বর্বর পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে স্বাধীন করতে মরণপণ যুদ্ধে যিনি ১৩ জন সদস্য নিয়ে অংশগ্রহন করেছেন। দুঃসাহসী এ যোদ্ধার প্রতিটি অভিযান শত্রুসেনার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। একের পর এক বর্বর পাকিস্তানি সেনারা লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে।

    কেবল একটা ঘটনার কথা বলি:
    ভুরুঙ্গমারীর যুদ্ধে উক্য চিংদের সাফল্য ছিল অন্যদের জন্য অহংকার করার মত! মুক্তাঞ্চল থেকে স্বয়ং মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ছুটে এসেছিলেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যুদ্ধের সাফল্যের কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, উক্য চিংদের বান্কারের মুখে একটা এলএমজির ট্রিগারে রশি বেঁধে সেই রশিটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক দূরে। সেখান থেকে রশিতে টান দিয়ে অনেকটা রিমোট কন্ট্রোলের মত এলএমজি ব্যবহার করা হয়েছে!

    উক্য চিং একবার একটি ছোট্ট ব্রিজের নীচে সার্চ করে দেখেন সাত-সাতটি রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন নারীদেহ। তখনও কারো জামায় শোভা পাচ্ছে ঝকঝকে ফাউন্টেন। বুঝতে সমস্যা হয় না এরা স্কুল-কলেজের ছাত্রী, বয়স ১৬ থেকে ১৮। পাক বাহিনী দ্বারা চরম পৈশাচিক নির্যাতনের পর এদের হত্যা করে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

    এই উক্য চিং, বাঙালী নারীদের ওপর পাক সৈন্যদের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে যিনি পাক বাহিনীর ১ কমান্ডারসহ সাত সেনাকে ধরে তাদের পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলেন।

    মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার যে অল্প পড়াশোনা কিন্তু তারপরও আর কোথাও এমন প্রতিবাদ আর কেউ করেছিলেন বলে অন্তত আমার জানা নাই। অথচ এই অগ্নিপুরুষকে এক বিজয় দিবসে বান্দরবান টাউন হলে ১০০ টাকার প্রাইজ বন্ড দিয়ে সম্মানিত (!) করা হয়েছিল!
    অশ্রুসজল চোখে উক্য চিং বীর বিক্রম তখন প্রশ্ন রেখেছিলেন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার কাছে, 'কেন এই প্রাইজ বন্ড দিয়ে আমাদের লজ্জা দেয়া'?"
    http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=8&porletPage=2&contentType=content&uri=content1324204680893#writehere
  • monsur | 151.0.8.139 | ০১ আগস্ট ২০১৪ ১৯:০২507232
  • উপজাতিরা (কথিত আদিবাসীরা) মূলত স্বাধীনতা বিরোধী, দেশদ্রোহী, রিফিউজি তথা নৃতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী।
    তিন পার্বত্যাঞ্চলকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের নীলনকশা উপজাতি পাহাড়ি, খ্রিস্টান মিশনারী ও আন্তর্জাতিক চক্রের!
    স্বাধীনতা বিরোধী পাহাড়ি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী কর্তৃক আর কত বাঙালি খুন হলে সরকারের টনক নড়বে? সরকারের নিষ্ক্রিয়তাই এদেরকে আরো বেপরোয়া করে তুলছে!
    সরকারের উচিত তিন পার্বত্যাঞ্চল রক্ষায় উপজাতিদের (কথিত আদিবাসীদের) সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে বাঙালিদের স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। (পর্ব-৭)
    -মুহম্মদ আজীজুর রহমান।

    ইন্দোনেশিয়ার জন্য কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল পূর্ব-তিমুর। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ মুসলমান দেশের উপস্থিতি মাত্র তিন কোটি অমুসলিমের দেশ অস্ট্রেলিয়া হুমকি মনে করে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার উত্তরেই হলো ইন্দোনেশিয়া। আর অস্ট্রেলিয়ার নিকটতম দ্বীপ হলো তিমুর। অস্ট্রেলিয়া জিও পলিটিকসের মাধ্যমে এখাকার জনগণকে সংগঠিত করে বিদ্রোহকে উস্কে দিয়ে জাতিসংঘের ব্যানারে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে ইউরোপের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলোর সাহায্যে পূর্ব-তিমুর নামে স্বাধীন খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এখন সে রাষ্ট্র পাহারা দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান সেনাবাহিনী।
    ঠিক একইভাবে সুদান বহুজাতি তাত্ত্বিক দেশ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ আফ্রিকার একটি বড় দেশ। সেটার দারফুর অংশে উপজাতির ভিত্তিতে মুসলমানদের বিভাজন সৃষ্টি করেছে। তারপর সবচেয়ে সম্পদসমৃদ্ধ দক্ষিণ সুদান- যেখানে রয়েছে তেলসমৃদ্ধ অ্যাবে অঞ্চল। এ অঞ্চলে আমেরিকার সিআইএ ও ইসরাইল অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। আশপাশের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলো জনবল ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কে দিয়ে গণভোটের নাটক মঞ্চস্থ করে স্বাধীন রাষ্ট্র তৈরির নামে সুদানকে খ--বিখ- করে দিয়েছে।
    আর সে ধারাবাহিকতায় বর্তমানে উপজাতি সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ভারতে ট্রেনিং নিচ্ছে এবং সেখান থেকে অস্ত্রশস্ত্র পাচ্ছে। উপজাতি সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ভারত থেকে এসে পুনর্বাসিত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাদের হাতেও হাজার হাজার বাঙালি মারা যাচ্ছে। আগে ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে। উপজাতি সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীর নেতা সন্তু লারমা এখনো বিচ্ছিন্নতাবাদ চাচ্ছে। এদের উস্কে দিচ্ছে বিদেশীরা। কারণ এখানে খ্রিস্টান মিশনারীদের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলছে। খ্রিস্টান মিশনারীরা হাসপাতাল, চার্চ প্রতিষ্ঠা করেছে। এখন জাতিসংঘের ইউএনডিপি’র ছদ্মাবরণে পাশ্চাত্য খ্রিস্টান এনজিওগুলো ধর্মান্তরের কাজ করছে। ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। ভারতের মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ খ্রিস্টান। বাংলাদেশের এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর অভিবাসীদের খ্রিস্টান করে এখানে এরা একটা খ্রিস্টান রাষ্ট্র করার পরিকল্পনা করছে।
    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ব্রিটিশের ১৮৯৯ অথবা ১৯০০ সালের একটি অ্যাক্ট ছিল যে চট্টগ্রাম পাবর্ত্য অঞ্চলকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা তাদের শাসন কাজের সুবিধার জন্য এ এ্যাক্ট জারি করেছিল। আমাদের স্বাধীন দেশে আমরা বাংলাদেশের সকল নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী। যারা সেই অ্যাক্টের আলোকে দেশের কোনো অঞ্চলের অথবা অধিবাসীর আলাদা গুরুত্বের কথা বলে তারা ঔপনিবেশিক মানসিকতা লালন করে।
    সুতরাং এটার কোনো ভিত্তি নেই। স্বাধীন দেশ চলবে তার সংবিধান অনুযায়ী। ঐ অ্যাক্টের দোহাই দিয়ে তাদের আলাদা স্ট্যাটাস দেয়া যায় না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ। চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকা দেশের এক দশমাংশ অর্থাৎ ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ৫ হাজার বর্গ মাইল। এখানে মাত্র ১৩ থেকে ১৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। দেশের জনসংখ্যা অনুসারে সেখানে দুই কোটি মানুষ বসবাস করতে পারে।
    প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য, উপজাতি পাহাড়িদের সম্পর্কে জাতিসংঘের রেজুলেশন প্রসঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। কারণ এখানে কোন আদিবাসী নেই। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ভারত, নিউজিল্যান্ডসহ যেসব দেশে আদিবাসী আছে তাদের জন্য জাতিসংঘের এ রেজুলেশন। তবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নয়, আলাদা স্ট্যাটাস দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা আদিবাসী হিসেবে কোথাও স্বীকৃত নয়। আর বর্তমান সরকারও তাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করে না। এদেশের কোনো সরকারই তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করেনি। বাংলাদেশে বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষীরাÑ যারা প্রোটো-অ্যাস্ট্রোলয়েড (proto Astroloid) নামের আদি জনধারার অংশ বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তারাই একমাত্র আদিবাসী এবং Son of the Soil বলে দাবি করতে পারে। তাছাড়া আর কেউ আদিবাসী নয়। সুতরাং জাতিসংঘের এ রেজুলেশন আমাদের জন্য কখনোই প্রযোজ্য নয়।
    ২০১১ সালে জাতিসংঘের একজন রিপোর্টার এদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে অনির্ভরযোগ্য কোনো উৎসসূত্র থেকে ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনীতি, নৃতাত্ত্বিক বিষয় না জেনে যে রিপোর্ট দিয়েছে তা নিতান্তই পক্ষপাতদুষ্ট, অজ্ঞানতা প্রসূত এবং ভুল। উক্ত রিপোর্টার বেশ কিছু বিদেশী মদদপুষ্ট এনজিও’র দ্বারা প্রকাশিত বই ও বিভিন্ন সোর্স থেকে ভুল তথ্যের পক্ষে সাফাই করে এ রিপোর্ট দিয়েছে। যাদের তারা আদিবাসী বলছে আসলে তারা সেটেলার। তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এর প্রতিবাদ করে বলেছে, ‘বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই’।
    ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্তের নিরীখে আমরাও বলতে চাই, বাংলাদেশে কথিত আদিবাসীরা মূলত অভিবাসী তথা ক্ষুদ্রজনগোষ্ঠী। কিছুতেই জাতিসংঘ ঘোষিত বাড়তি সুবিধা এদেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী পেতে পারে না। কারণ তারা আদিবাসী নয়, অর্থাৎ অভিবাসী বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
    অতএব, সরকারের উচিত হবে- এসব রাজাকার, দেশ ও জাতির শত্রু, নৃ-তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, মিশনারী এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে তিন পার্বত্য অঞ্চলকে রক্ষার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে উপজাতিদের (কথিত আদিবাসীদের) বিভিন্ন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া। অর্থাৎ তাদেরকে কোনো অবস্থাতেই পার্বত্য অঞ্চলে সংঘবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না দেয়া। পাশাপাশি ঐ অঞ্চলের স্থানীয় ও সারাদেশের ভূমিহীন বাঙালিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপকভাবে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে তিন পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন