ভাইফোঁটার স্মৃতির জোয়ারে চাপা পরে গেল ভাসানের গল্প. আমার ছোটবেলার সিঁথির গায়ে তখনো নকশাল আমলের দগদগে ঘা. বাঙ্গাল উদ্বাস্তুর সর্বহারানোর শেষে ফিরে-দাঁড়ানোর লড়াইতে সঙ্গী এপার বাংলার বিভিন্ন জেলার থেকে আসা মানুষেরা. কলকাতায় উড়তে থাকা সোনার টুকরো খপ করে ধরে ফেলার আশায় দিন কাটে তাদের. আজকের ধনাঢ্য সিঁথির নর্দমার জলে যে সোনার টুকরোর সন্ধান , সে দিন তখনো ভাবনার অতীত. এই নিতান্ত নিম্নবিত্ত - মধ্যবিত্ত আবহে দুর্গাপুজো হাতে গোনা. তাদেরও বিসর্জন সাড়া হত দশমীর রাতেই. নেহাতই কোন বড় গোছের পাঁজিগত সমস্যা হলে ... ...
#জলছবি-বাংলাদেশ
( সবার যেমন কিছু স্বপ্নের ভ্রমণ থাকে, আমারটা ছিল বাংলাদেশ। বাবা-পিতামো’র চরণধুলি যেখানে পড়েছিল সেই দেশ দেখব। এই ছিল স্বপ্ন। চূড়ান্ত পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা। তবুও। গিয়েওছিলাম। অসম্ভব আনন্দ হয়েছিল। আজ প্রায় এক দশক পরে দেখছি স্মৃতিটা ঝাপসা হয়ে আসছে। কিন্তু এই স্মৃতিটা এমন, যাকে আমি একদম ফিকে হয়ে যেতে দিতে চাই না। সেই ধরে রাখার তাগিদে এই লেখা। তবে হয়তো একটু ভালবাসায় বায়াসড, কখনো বা পলিটিক্যালি ভুল লেখা হবে। যারা পড়বেন তাঁরা নিজ গুণে মার্জনা করবেন এই আশা। )
দিন - ১ ... ...
আজ ঝুলন| ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীতে এই ধরণের অনুষ্ঠানগুলো পুরোপুরিই ছোটদের খেয়ালখুশীর ছিল - এর কোন ধর্মীয় অনুষঙ্গ যে আদৌ আছে তাও জানতাম না| শুধুই আমাদের হাতে ছিল বলে, মজা ছিল অফুরান| তবে সম্বল খুবই কম| বিনাকার সঙ্গে পাওয়া সেই মিনিয়েচার জন্তুদের কথা অনেকেরই মনে আছে হয়তো | যখনই নতুন পেস্ট আসত, সযত্নে তাদের বার করে , তুলে রাখতাম একটা হরলিকসের ফাঁকা কৌটোয়| গন্ডারের সঙ্গে সিংহ, সিংহের সঙ্গে হরিণ সবাই মিলেমিশে সারাবছর থাকত সেই কাঁচের জারে| আর ছিল পুতুলের ঝুড়িতে মেলার থেকে কেনা পেটটি-নাদা বুড়োবুড়ি, আধবি ... ...
আচ্ছা স্যার, আপনি মালয়েশিয়া বা বোর্ণিওর জঙ্গল দেখেছেন? অথবা অ্যামাজনের জঙ্গল? নিজের চোখে না দেখলেও , নিদেনপক্ষে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের পাতায়? একজন বনগাঁর লোকের হাতে যখন সে ম্যাগাজিন পৌঁছে যেত, তখন আপনি তো স্যার কলকাতার ছেলে - হাত বাড়ালেই পেয়ে যেতেন নিশ্চয়- দেখেন নি? কি আশ্চর্য ! তাহলে লিখলেন যে বড়, কোন দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল ? এখনই তো পৃথিবীতে ১৯৫ খানা দেশ| আপনার সময়ে কটা ছিল জানি না , কম বেশি ১৭৫ টা মত হবে - এক্কেবারে অতগুলো দেশের মধ্যে তুলনা করে বলে দিলেন "সকল দেশের চাইতে শ্যা ... ...
দিল ক্যা করে যব কিসিসে কিসিকো প্যার হো গ্যয়া - হয়ত এই রকমই কিছু মনে হয়েছিল ওয়াজিদ আলি শাহের। মা জানাব-ই-আলিয়া ( বা মালিকা কিশওয়ার ) এর জাহাজ ভেসে গেল গঙ্গার বুকে। লক্ষ্য দূর লন্ডন, সেখানে রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে সরাসরি এক রাজ্যচ্যুত সন্তানের মায়ের আবেদন জানাতে চললেন তিনি। সঙ্গে আরেক ছেলে সিকন্দর হাশমত। অথচ যার জন্য করা, সেই নবাবই রয়ে গেলেন কলকাতায়। সাল ১৮৫৬। আসলে নবাবটি একটু অন্য ধাতের - যুদ্ধ বিগ্রহ রাজ্য শাসনের থেকে তাঁর মন বেশি গান- নাচ- কবিতা-প্রেম এই সবে।
সে বছরই রাজ্য হাতছাড়া হবার প ... ...
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমেছে। অবশ্য ধোঁয়াশার দৌলতে আজকাল সবসময়ই ছায়া ছায়া। তাতে কিই বা আসে যায়! সকালে দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকে যাওয়া, আর বেরোতে বেরোতে সেই সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা, আটটা। এর মাঝে বিকেল আসে যায় নিজের খেয়ালে। পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সবাই বাড়ির দিকে রওনা দেয়। একে অপরকে গুড নাইট বলে। অনুপমার কথা ওদের খেয়ালও থাকে না। সত্যি কথা বলতে, অনুপমার তাতে সুবিধাই। নিজেকে আড়ালে রাখতে ও ভালবাসে। না হলে এত বড় একটা অফিসে একটানা পাঁচ বছর কাজ করার পরেও কোনও বন্ধু হয় না ওর! একা মানুষের জীবনটা অসহনীয় হত। অনুপমা ব ... ...
এখানে সবুজের ছড়াছড়ি। সবুজ মাঠের শেষে, সবুজ টিলার দল মাথা তুলতে তুলতে মিশে গেছে ধোঁয়ার মতো দলমা পাহাড়ে। আগে ছিল ঘন জঙ্গল। তখন নাম ছিল জারাগোড়া। হাতিদের দেশ। মাঝে মাঝে কয়েক ঘর আদিবাসীর ঝুপড়ি। খানিকটা চাষের জমি। আর তাদের ঘিরে ঘন শালের বন। তারপর জানা গেল এ জমিতে সোনা আছে। না, না সোনার থেকেও দামী জিনিস আছে মাটির তলায়। দলে দলে বাবুরা এলো। বলল, এ সব জমি সরকারের। সরকার যখন ইচ্ছে, নিজের দরকারে নিয়ে নিতে পারে। আইন নাকি তাই বলে। সে নিয়মও নাকি আজকের নয়। সেই প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চাণক্য বলে কে এক মহাপণ্ডি ... ...
জর্জ ফাঁকা শুয়োরের খোঁয়াড়টার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল আর ভাবছিল যে শুয়োরটা কি এমনি এমনি হাওয়া হয়ে গেল? একবার চোখ বন্ধ করে আবার খুলল - যদি কোন বিচ্ছিরি আলোর কারচুপি হয়ে থাকে! কিন্তু আবার যখন চোখ খুলল , দেখল - নাঃ শুয়োরটা নেই ই. ওর মোটকু গোলাপী রংএর বিশাল বপুটা কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি, জর্জ যখন দ্বিতীয় বারের মত ব্যাপারটা খতিয়ে দেখতে গেল, ব্যাপারটা খারাপ থেকে খারাপতর হল। ও দেখল যে খোঁয়ারের পাশের দরজাটা হাট করে খোলা। তার মানে কেউ একজন সেটা ঠিক করে বন্ধ করে নি। আর সেই কেউ একজনটা খ ... ...
মা হওয়া। একটা আনন্দজনক, মন আলো করা কথা। মাতৃত্ব ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের দেশে যত আলোচনাই হোক, সেটি অর্জনের পূর্ব-মুহূর্তের কথাগুলো কিন্তু ধামাচাপা দেওয়া থাকে। ছিঃ ওগুলো নেহাত-ই ব্যক্তিগত ব্যাপার – ওসব নিয়ে আবার আলোচনা করে নাকি কেউ?
আমিও করতাম না। যদি না এই লেখাটা কাকতালীয় ভাবে চোখে পড়তো। মনে হল একটু কথা হোক। নন-আকাডেমিক পরিসরের আলোচনা। আমার শরীর ... ...
#পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে_দেখা
আশালতা দেবী / আশালতা সিংহ
১৯১১-১৯৮৩
আগেকার দিনের মহিলা লেখকদের নিয়ে আমার একটু বিশেষ কৌতূহল আছে। এঁরা হয়তো ভাষা বা ফর্ম নিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন নি, কিন্তু সহজ ভাবে একটি নিটোল গল্প বলার যে কাজটা সেটা বেশিরভাগই বেশ নিখুঁত ভাবে করেছেন। আর বেশিরভাগ জনের লেখায় তখনকার সমাজের, বিশেষত অন্দরমহলের বেশ একটা অন্তরঙ্গ ছবি পাওয়া যায়। তাই কিছু বছর আগে কখন বই মেলায় "আশালতা সিংহের গল্প সংকলন" হাতে পেলাম, কিনে নিতে দ্বিধা করি নি। দেজ এর ২০০৭ র বই। অভিজিত স ... ...