“গারো আদিবাসীর ফসলের বীজ বোনার উৎসব রংচুগালার আয়োজন ক্রমেই কমে আসছে, সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। এর কারণ, সাংসারেকরা ধর্মান্তরিত হচ্ছেন, বা খ্রিস্টান হচ্ছেন, এমন নয়. সাংসারেকদের যে প্রবীন প্রজন্ম এই রীতিনীতি পালন করেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক বয়স্ক, তাদের বয়স ৭০ বা ৮০ বছর। প্রতি বছরই একজন-দুজন করে তারা মারা যাচ্ছেন। সাংসারেক ধর্মটি এমন নয় যে, কাউকে দীক্ষা দেওয়া যায়। তাকে আসলে জন্মগতভাবেই সাংসারেক হতে হয়। আবার অনেকে নতুন করে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।” ... ...
এসব খবর-অপখবরের মধ্যে নিউজ পোর্টালের এপে সকাল হয় সবুজ। এখনো এই প্রাচীন নগরে টিকে থাকা কৃষ্ণচূড়ার কোটরে বাসা বাঁধে টিয়ে। বৃষ্টিতে হয় তার সবুজ স্নান। মনে পড়ে প্রাথমিকের সেই গান : একদিন সূর্যের ভোর, একদিন স্বপ্নের ভোর, একদিন সত্যের ভোর আসবে, এই মনে আছে বিশ্বাস, আমরা করি বিশ্বাস, সত্যের ভোর আসবে একদিন...। ... ...
শেষ বিকেলের আলোয় ডলি রাখাইনের ফর্সা কচিপানা মুখে লালচে আভা। কণ্ঠস্বর বাস্পরূদ্ধ, যেন অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে থাকে, আচ্ছা, বিপ্লব দা, আপনার তো ঢাকায় অনেক টাকার চাকরি! এ রকম একটা বাড়ি সস্তায় কিনতে পারেন? মানবিক লোকজন এসবের দখল নিলে রাখাইন মালিকটি দেশান্তরে গিয়েও অন্তত নিশ্চিন্ত যে, যাক, পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির নিশানাটুকু তো টিকে থাকবে, সেটুকু তো আর একেবারে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না! … ... ...
'রোমাঞ্চ কি রয়ে গেছে; গ্রামে অন্ধকারে ঘুম ভেঙে দেহের উপর দিয়ে শীতল সাপের চলা বুঝে যে-রোমাঞ্চ নেমে এলো, রুদ্ধশ্বাসস্বেদে ভিজে-ভিজে। সর্পিনী, বোঝনি তুমি, দেহ কিনা, কার দেহ, প্রাণ। সহসা উদিত হয় সাগরহংসীর শুভ্র গান। স্বর-সুর এক হয়ে কাঁপে বায়ু, যেন তুষত শীতে, কেঁদে ওঠে, জ্যোৎস্নার কোমল উত্তাপ পেতে চায়। রোমাঞ্চ তো রয়ে গেছে শীতল সাপের স্পর্শে মিশে।' (বিনয়) ... ...
‘একাত্তরের কথা কেউ মনে রেখেছে না কি? আর তাছাড়া আমি তো যুদ্ধ শুরু করেছিলাম মাত্র, শেষ করতে পারি নি। আমার যুদ্ধ ভারতীয় সেনারাই তো শেষ করে দিল’!…কথোপকথনে প্রয়াত পপসম্রাট, ১৯৭১ এর গেরিলা কমান্ডার আজম খান। ... ...
১৯৭১ এ স্বাধীনতার পর উর্দূভাষী আটকে পড়া পাকিস্তানীরা, যারা ‘বিহারী’ নামে এখনো পরিচিত, অনেকেই দেশবিভাগের সময় বিহার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা ঘোলকে বলতেন ‘মাঠা’। তো মোহাম্মাদপুরে বিহারী বসতিপূর্ণ এলাকায় বাসার গলির মুখে খুব ভোরে বিশাল এলমুনিয়ামের হাড়ি নিয়ে গাল ভাঙা, খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাঁড়ির বিহারী ঘোলওয়ালা বসতেন। তার হাড়িতে থাকতো ঘরে তৈরি ঘোল। হাড়ির মুখটি কাঁচের চৌকা টুকরো দিয়ে ঢাকা থাকতো। ওপরে বসানো থাকতো ছোট ছোট কাঁচের গ্লাস। মাঝারি মাপের এলমুনিয়ামের মাগ দিয়ে ক্রেতাদের ওইসব সব গ্লাসে ঢেলে দেওয়া হতো সুস্বাদু ফেনা ওঠা ঘোল। আর উঁকি দিলে হাড়িতে দেখা যেত ঘোলের ওপর বিস্কুট মাপের হলুদাভ মাখন ভাসতে। প্রতি গ্লাস দুই সিকি (তখনো একে ‘চার আনা’ বলা হতো) বা পঞ্চাশ পয়সা (‘আট আনা’) মাত্র। ঘোল ওয়ালা মাঝে মাঝে হাঁকতেন, ‘এই মাট্টঠাআআআআ…’! ... ...
তিনটি হাসপাতাল ছাড়া দেশের আর কোনো হাসপাতালে করোনা শনাক্তের ল্যাব নেই। চিকিৎসক-নার্সদের করোনা সুরক্ষা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত মেডিকেল কিট ইত্যাদি অল্প কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া আর কোথাও নেই। ঢাকা মেডিকেলসহ অধিকাংশ হাসপাতালই এখনো করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতই নয়। যে ১০ টি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তার সবই আবার ঢাকাতেই। করোনা ভীতির কারণে দেশের অধিকাংশ হাসপাতালই সীমিত করেছে চিকিৎসা সেবা। সাধারণ রোগিরা বিপাকে। এই বাস্তবতায় দ্রুত করোনার বিস্তার হতে থাকলে কী আছে আগামীতে? … ... ...
ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিশাল মিছিলে জেনারেল আইয়ুব বিরোধী সেই সময়ে একজন মুসলিম তরুণী প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দুই হাত মুখের কাছে গোল করে লিড শ্লোগানারের ভূমিকা পালন করছেন, ভাবা যায়? ... ...
প্রতিভা সরকার পাঠ সহজ কথা নয়, ইজি চেয়ারে এলিয়ে চায়ের কাপে অলস বিকালে হালকা-পাতলা গড়নের বইটির ১৩টি গল্প একদমে পড়ে ফেলা আদৌ সম্ভব নয়। গল্প, চরিত্র ও কথনে একেকটি কাহিনী পাঠককে থমকে দেয়, চেনা জগত থেকে টেনে হিঁচড়ে নামায় নির্মম বাস্তবতায়, কোনো কোনো গল্পের পাঞ্চ লাইন, এমনকি পুরো গল্পও পাঠককে গভীর ভাবনায় ফেলে, মুখস্ত নীতি-নৈতিকতায় অস্ত্রপচার, কখনো রাহাজানিও করে। প্রতিটি গল্পের ধরণ, বিষয়বস্তু, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস-ভূগোল আলাদা। আর নিছকই এসব শুধু সাধারণ মেয়েদের গল্প নয়, যদিও তারাই প্রধান উপজীব্য, কিন্তু এগুলো মূলত প্রান্ত নারী, সমাজের ঊনমানুষ যারা, তাদের নিষ্পেষণ ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প; আবার একই সঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম, দলিত, আদিবাসী বা ছিন্নমূল মানুষের নিত্যদিনের জীবন- ইনক্রেডেবল ইন্ডিয়ার গল্প। ... ...
মৌলবাদের উত্সমুখ যতদিন বন্ধ না হবে, ততোদিন অসির বিরুদ্ধে মসির অসম লড়াই চলতেই থাকবে। অন্যদিকে, আমরাও মুক্তমনার সংগ্রাম এগিয়ে নিতে মরীয়া। মৌলবাদের ছুরির নীচে গলা পেতে দিতে সর্বদাই প্রস্তুত। আর নির্মম বাস্তবতা এই যে, শেষ পর্যন্ত হত্যা করে অভিজিতদের শেষ করা যায় না। কারণ আমরা আসলে একেকজন রক্তবীজের ঝাড়। যতোবারই হত্যা করো, ততোবারই আমরা জন্মাবো। অভিজিতের মরণ নাই। আমিই অভিজিৎ! ... ...