এতক্ষণ যা লিখলাম সে নিতান্ত ভূমিকা মাত্র। আসল যাত্রাপথের বিবরণ চমকপ্রদ, রোমহর্ষক। সবচেয়ে বড় কথা হল সেই পৃথিবী, পৃথিবীকে আবিষ্কারের সেই বিস্ময় আমরা ফেলে এসেছি বহু বছর আগে, এখন আর চাইলেও সেরকম যাত্রা করা সম্ভব নয়। পদে পদে প্রাকৃতিক বাধা বিপত্তি, চৈনিক প্রহরা সে যাত্রাকে করে তুলেছিল রোমহর্ষক, বিপদসংকুল। ঋতু হিসেবে তখন গ্রীষ্মের শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় বরফ তখনো গলে নি, রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের অনেকটা নীচে। এই অবস্থায় অধিকাংশ যাত্রাপথ লেখক কাটিয়েছেন জুতো এমনকি মোজা ছাড়া। অনেকদূর এগিয়ে তবে এক তিব্বতি যাযাবর দলের থেকে তিব্বতি উলের মোজা কেনেন, আরো পরে প্রায় লাসা পৌঁছিয়ে কেনেন জুতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস করেন নুন মাখন মেশানো চা খাওয়া, সম্পূর্ণ অন্ধকারে পাহাড়ি পথে হাঁটা আর কোনও প্ররোচনাতেই মুখ না খোলা, মৌনী হয়ে থাকা। ... ...
কিছু না জেনে বইটা হাতে তুলে নিলে প্রথমেই প্রচ্ছদে পাঠক দেখেন যেন দুদিনের জন্য ঘুরতে এসে রিসর্টের জানলার ব্লাইন্ডের ফাঁক দিয়ে তোলা এক অদেখা কল্পিত জীবন - এক নদীর ধারে এক যুবতীর দাঁড়িয়ে দূরের দিকে চেয়ে থাকা। তারপর পাতা ওল্টাবার পর পাঠক বুঝতে পারেন আমরা এবার এক বহিরাগত হিসেবে যেন ওই দূর থেকে দেখা মেয়েটিরই বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে চলেছি। ... ...
রেবা রায়চৌধুরীর নাম কতো জনপ্রিয়, তাঁর কাজকর্ম কোন মাত্রার ছিল, সে বিষয়ে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়। তবে বলে রাখা ভালো যে রেবা গৌতম ঘোষের "পার"-ছবিতে নাসিরুদ্দিনের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর লেখা বই পড়ে, আপাদমস্তক এক আধুনিক মানুষকে আবিষ্কার করলাম। যার অন্য নাম সপ্রতিভতা। তাঁর জীবনসঙ্গী সজল রায়চৌধুরী। তিনি "পার"-ছবিতে নাসিরুদ্দিনের বাবার ভূমিকাতে ছিলেন। রেবা অভিনয় করেছেন মৃণাল সেনের "পরশুরাম" এবং অজয় দত্তগুপ্তর "দেবীগর্জনের" মতো ছবিতে। ... ...
২রা মার্চ ছিল তাঁর জন্মদিন। ফেসবুকে তাঁর নাম দিয়ে সার্চ করলাম সেই তারিখের কয়েকদিন পরে। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই উঠে এল ৩৩ টা ছবি, আর অন্তত গোটা পঞ্চাশেক পোস্ট। ছবি এবং পোস্টগুলোর অনেক ক’টাই একই বা ছবি বা লেখার কপি, কিন্ত প্রকাশিত হয়েছে আলাদা আলাদা ফেসবুক পেজে। অনেকেই জানেন তাঁর বিষয়ে। গত শতকের নব্বই দশকের প্রথমার্ধেও বাংলা বইয়ের অ্যাভারেজ পাঠককে শৈলবালা ঘোষজায়ার নাম জিজ্ঞেস করলে ভুরু কপালে তুলে বলতেন, ‘ না, পড়েছি বলে মনে পড়ছে না!’ শৈলবালা পুনরাবিষ্কৃত হলেন, কারণ বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়ল। ... ...
প্রথমদিন হাঁড়ি দুটো কথকের বাড়ির পাশে রক্তকরবী গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হল। তাদের খাবার দেওয়া হল দু-ঘটি জল আর দুমুঠো মাটি। টিভিতে শুনে তারা হিন্দি গান পটাপট গলায় তুলে ফেলল। কয়েকদিন পর তাদের স্থান হল মাটির হাঁড়ি থেকে অ্যালুমিনিয়ামের ডেচকিতে। সুষম খাদ্য তালিকা অনুযায়ী তাদের খাবার দেওয়া হতে থাকল। ভুজু ডিবরা গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় কথককে অনুরোধ করে গেল ‘গাঁইয়া ভূত’ বলে তাদের যেন অনাদর না করেন, সর্বদা যেন সন্তান স্নেহে ‘মানুষ’ করেন। সত্যিকারের কোনো দোষ করলে আচ্ছা করে কানমলা দিয়ে শাস্তি দিতেও যেন না ভুলে যান। ... ...
'দুষ্কালের আখ্যানমালা'র গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে একটা ট্রেনে করে যেতে যেতে জানলা দিয়ে আচমকা কয়েকটি চরিত্রের ঝলক এবং কিছু দৃশ্য দেখছেন, আর এই যাত্রাপথে ট্রেনটা আসলে এগিয়ে যাচ্ছে এক দুষ্কাল থেকে আরেক দুষ্কালের দিকে। চরিত্রগুলোকে পড়তে পড়তে আসলে আমরা যখন এই সামগ্রিক যাত্রাপথের কথা অল্প সময়ের জন্য বিস্মৃত হই, তখনই মাঝে মাঝে দিনের বেলা আচমকা সূর্যগ্রহণের মত এই সমস্ত দুষ্কালের ছায়া নেমে আসে চরিত্র এবং দৃশ্যাবলীগুলির ওপর। ... ...
কথা বাড়াতে ইচ্ছে করবে না বলেই হাঁটব। আমার পাশেপাশে যারা ভীড় জমাবে তাদের গা থেকে উঠে আসা ধোঁয়া গন্ধে ভয় পাব না। না জেনে না চিনে অযথা ভয়ে একটা অভিশপ্ত জীবন আঁকব না, এটুকু অন্তত আমার উত্তরণ ঘটবে আমি নিশ্চিত। গুনিনের বুকের ভিতর কোন ঝড় গেঁথে তুলেছেন লেখিকা সেকথা ভাবতে ভাবতে বরং অন্ধকারের গায়ে আঙুল রাখব। কেউ হয়ত গল্প শোনাবে তাদের গুনিন হবার কাহিনী। ভুলভ্রান্তিতে ভরা ভয়ংকর দানবীয় ইতিবৃত্ত। লেখিকাও যে 'গুনিন' গল্পে বুক মুচড়ে ওঠা শব্দটুকু লিখেছেন, ভাবতে থাকব... ... ...
প্রমদারঞ্জন রায়ের বনের খবর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি - দুটি বই নিয়ে আলোচনা করলেন দিব্যেন্দু সিংহ রায়। ... ...
'এই ধরনের অপরাধে সেদিনই ছিল আমার হাতেখড়ি, যেজন্য বিপদটা হল।...' (শীতবন্দরে)। 'গোলমালটা ঠিক কীভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন।..' (পাইথনের গপ্পো)। 'কেলোটা হল বড়দিনে।...' (বড়দিন)। 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড় আসার কথাই ছিল।...'(ক্যাম্পফায়ার, আমাদের রাতের উৎসব)। এই জাতীয় সূচনা লেখকের একটি বিশেষ স্টাইল। শুরুর এই কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন না। কিন্তু চিত্তাকর্ষক হল সেটা মিটে যাওয়ার পরে পাঠক টের পাবেন অতিরিক্ত কি একটা যেন বলা হল, যা প্লটের চাইতেও বেশি করে বেরিয়ে আসছে লেখকের অননুকরণীয় নির্মাণকৌশল থেকে! ... ...
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি? ... ...
ধুন্দুলের লতা বা আকন্দের চারা যদিবা দেখেছি, তাও মনে হয় যেন বিগত জন্মের স্মৃতি, কাউরি গ্রাম-ফেরতা কোন গুনিনের সঙ্গেই কোনদিন কোন লেনাদেনা গড়ে ওঠেনি। না ভয়ের, না ভালবাসার। অবশ্য সে দেখলে শ্যাখের বিবি হালিমার ঘরকন্নাই বা কোন সুতোয় চেনা! তবু একুশ বছরের দিদির বিয়ের দায় মাথায় চাপানো চৌদ্দর ছোটভাই এর শিশু শ্রমের গল্পটা চেনা চেনা লাগে যে! আর তারই মাঝে লেখক কেমন বুনে দেন শবেবরাতের মোমের আলো আর দোলের চাঁদের পৃথগন্ন হওয়ার কিসসা। ... ...
মূল বইটির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে পারি যে, ইংরাজি বইটি ২০২১ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের আগে করণ থাপার, বরখা দত্তের মত সাংবাদিকরা আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। দ্য উইক ম্যাগাজিনে কভার স্টোরি হয়। অ্যামাজনে বইটি অনেকদিন ধরেই বেস্ট সেলার হিসাবে আছে এবং বিক্রিও ভালই হচ্ছে। মারাঠি, পাঞ্জাবি, বাংলা, কন্নড় ও হিন্দীতে অনূদিত হয়েছে। তামিল অনুবাদ-ও শীঘ্রই আসছে। বইতে আপত্তিজনক কি কি আছে তা যদি কেউ তুলে ধরতে পারতেন তাহলে ভালো হত। আমি বলতে পারি, এই বইতে এমন কিছুই নেই যাতে একে মাওবাদী বলা যায়। বইটির উপসংহার বলছে যে পরিবর্তনের জন্য আনা যে কোনও সামাজিক প্রকল্প সফল হতে গেলে তাতে ব্যাক্তিত্বের স্বাভাবিকতা, অকপটতা, সততা, সারল্যের মত ভ্যালু বা মূল্যবোধের স্থান থাকতেই হবে – এমন কিছু গুণ যা আমি আমার প্রয়াত স্ত্রী অনুরাধার মধ্যে দেখেছিলাম। সেই সাথে, স্বাধীনতার অন্যতম উদ্দেশ্যই হতে হবে অধিকাংশের জন্য সুখ/আনন্দ। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাদের কি অসুবিধা? তদুপরি, এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে মূল বিচার্য ছিল অনুবাদের উৎকর্ষ। তিনি এই কাজটি করেছেন একজন পেশাদার অনুবাদক হিসাবে। যাঁর জীবিকা অনুবাদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁর থেকে পুরস্কার কেড়ে নিয়ে সরকার কি বার্তা দিতে চাইল? ... ...
গত দেড়দশক ধরে ইন্দ্রাণী দত্তের ছোটগল্প প্রবুদ্ধজনের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর কাহিনীর বুনোট, গল্প বলার ধরণ, দৈনন্দিন জীবনের কাঁকর-বালি বেছে স্বর্ণরেণু আহরণের ক্ষমতা পাঠককে আবিষ্ট করে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে উনি বাংলাভাষার অগুনতি লেখকদের ভীড়ে হারিয়ে যান না। যে ক’জন সমসাময়িক ছোটগল্প লেখককে সিদ্ধিপ্রাপ্ত বলে আঙুলে কর গুনে চিহ্নিত করা যায়—নিঃসন্দেহে উনি তার অন্যতম। প্রথম গল্পসংগ্রহ ‘পাড়াতুতো চাঁদ’ গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনই ছেপে বের করেছিল। এটি সে’ হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ। যথারীতি, চটিবই সিরিজের, এবং ১২৮ পাতার বইটির দাম মাত্র ১৩০ টাকা। এটি বেরিয়েছিল করোনাকালে, ২০২০ সালের বইমেলায়। উনি লেখেন কম। সুদূর প্রবাসে জীবিকার এবং সংসারের দায় মিটিয়ে ফাঁকে ফোকরে চলতে থাকে তাঁর অধ্যয়ন এবং লেখাপত্তর। না, আমার ওপরের দুটো অবজার্ভেশন পরস্পরবিরোধী নয়। উনি যখন পাবলিক ফোরামে কোন লেখা পেশ করেন সেটা একবার পড়লেই বোঝা যায়—বড় যত্নে লেখা। ফরমাইশি লেখা নয়, ধর-তক্তা-মার-পেরেক গোছের তাড়াহুড়ো লেখা নয়। বোঝাই যায় এ লেখা অনেকদিন ধরে মনে মনে কম্পোজ হচ্ছে , কাটছাঁট হয়েছে। একটি শব্দ বা লাইনও অনাবশ্যক নয়। ... ...
প্রথমেই যা নিবিষ্ট করে তা হল এই বইয়ের অত্যন্ত সুলিখিত ভূমিকাটি। লেখক পাঠক দুইয়ে মিলেই তো সাহিত্যের সেতু গড়া। "সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন সাহিত্যের মণি-মুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।" এইরকম পাঠকেরাই খুঁজে বার করেছেন কতোদিনের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলি। তাদের অনেকগুলিই বিশ্বমানের, অথচ তাদের স্রষ্টারা আজ বিস্মৃত। এদের সংগ্রহ করে এবং একত্রে সংকলিত করে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, প্রকাশনার জন্য গুরুচন্ডা৯। আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকে পরবর্তী খন্ডগুলির জন্য, কারণ "এই সংকলন যেন আমাদের বংশলতিকা খুঁজে বের করা। সেই খোঁজের শুরু হলো মাত্র।" ... ...
নভেম্বর বা মে নয়। ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিন, আপনাদের একখানি বিপ্লবের গল্প শোনাতে চাই। এই বিপ্লব জড়িত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে। শিল্পবিপ্লবের কেন্দ্রে যেমন ছিল ‘শিল্প’, তথ্যবিপ্লবের কেন্দ্রেও তেমনই রয়েছে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। প্রশ্ন অতঃপর, ‘ইনফরমেশন এথিক্স’ বিষয়টি কী? খুব সোজা করে বললে, ইনফরমেশন এথিক্স হল এথিক্স বা নীতিবিদ্যার সেই শাখা, যার আলোচনার কেন্দ্রে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। এবং, তার সঙ্গে নীতিবিদ্যা বা এথিক্স নিয়ে আলোচনা। কথা হচ্ছে লুসিয়ানো ফ্লোরিদির বই দ্য ফোর্থ রেভোলিউশন: হাউ দ্য ইনফোস্পেয়ার ইজ় রিশেপিং হিউম্যান রিয়্যালিটি বইটি নিয়ে। ... ...
পেন্ডুলাম দোলে একই নিশ্চিত গতিতে –ডাইনে থেকে বাঁয়ে, ফের বাঁ থেকে ডাইনে। টিক টক, টিক টক। এই দোলনগতিকেই বোধহয় স্কুল পাঠ্য বই বর্ণনা করে সিম্পল হারমোনিক মোশন বলে। আরও দুটো শব্দ শুনি—গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ এবং কাইনেটিক এনার্জি বা গতিশক্তি। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় বোধহয় মাধ্যাকর্ষণের চেয়ে গতিশক্তি জোর বেশি—যা বস্তুর অবস্থানকে বদলে দেয়। ঘাবড়াবেন না। আমি কোন স্কুলে বিজ্ঞান পড়াই না, আমার সে যোগ্যতাও নেই। কিন্তু এতসব কথা আমার মনে এল একটি গল্প-সংকলন পড়তে গিয়ে। বইটি হল একডজন গল্পের একটি সংকলন। ... ...
গত শতাব্দীর শুরুর দিকে এই কাদামাটি, বাদাবনের দেশে ‘আদর্শ সমাজ’ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন এক সাহেব। সে সময় প্রায় ৯ হাজার একর জমি কিনেছিলেন হ্যামিল্টন। ক্রমে সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক, চালকল, গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সেখানে। ১ টাকার নোটও চালু করেন গোসাবায়। গোসাবায় গেলে দেখতে পাবেন, তাঁর বাংলোটি এখনও নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যামিল্টনের কুঠি বললে যে কেউ দেখিয়ে দেবে। একবার ওই চত্ত্বরে ঢুকে পড়লে বোঝা যায়, কী যত্ন করেই না তৈরি হয়েছিল এই বাংলো। ওই বাড়িটির সামনে দু’দণ্ড দাঁড়ালে বাদাবনের ইতিহাস যেন কথা বলে। প্রায় ১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের ওই সাহেব মানুষটি। ... ...
চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’ ... ...
যা ছিল হাহাকার থেকে উদ্ভূত এক বিরাট অনুভূতি-স্থল, দেশপ্রেমের চরম নিশান, তা হয়ে গেল 'বাগান', প্রমোদ-উদ্যান না হলেও ভ্রমণবিলাসীর রম্য কানন! তবে কি পাঞ্জাবেরই একার দায় ইতিহাসের এই রক্ত দিয়ে লেখা অধ্যায়কে অটুট রাখবার? দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তে কিষাণ কিষাণীরা উধম সিং-এর ছবি-আঁকা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করেন আর আমরা দলে দলে ছুটি ওয়াগা বর্ডারে, যেখানে দু দেশের ইউনিফর্ম পরা সৈনিকের দল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের মতো বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোজ অবনমিত করে যার যার দেশের পতাকা। প্রবল করতালি, হাজার মোবাইলের ঝলকে শেষ হয় সেই বিচিত্র নাচনকোঁদন, নকল দেশপ্রেমের উচ্ছাসে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে। অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের ভ্রমণ সূচিতে কদাচিৎ থাকে, ঘরের শিশুটিকে কখনও বলি না উধম সিং, ভগত সিং-এর কাহিনি! এই সত্যিকারের শহিদ-এ-আজমদের ভুলে গিয়ে নির্মাণ হতে থাকে নতুন শহিদ, ব্রিটিশের কাছে লেখা মুচলেকাকে কার্পেটের নীচে ঠেলে দিয়ে শহিদত্ব আরোপকে নতমস্তকে মেনে নিই। এইখানে, এই পরিস্থিতিতে আলোচ্য বইটির গুরুত্ব অসীম। খুবই সুলিখিত, অজস্র সাদা কালো ছবিতে সাজানো বইটি হাত ধরে আমাদের নিয়ে যায় সঠিক ইতিহাসের কাছে, সেই অর্থে সত্যেরও কাছাকাছি। ... ...