এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • "নায়াগ্রা ফল্‌স্‌ ---- সপ্ত আশ্চর্য্যের এক আশ্চর্য্য

    damayantee
    অন্যান্য | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ | ২২৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • damayantee | 61.246.74.217 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২৩:১৮450275
  • নায়াগ্রা আমার অতিপ্রিয় একটি জায়গা। স্মৃতি থেকে তার একটু অংশও যাতে হারিয়ে না যায় তাই এটি লিখে ফেলেছিলাম। গতবছর অন্য জায়্‌গায় ভাগ ভগ করে লিখেছিলাম। মনে হল এখানেও থাক, তাহলে একজায়গায় থাকবে, যদিও পুরোন লেখা।
    --------------------------------------------------------------------

    আমার সাড়ে চার বছর বয়সে বাবা আমাকে একটি খেলনা এনে দেন যার নাম ভিউমাস্টার। এতে একটা প্ল্যাস্টিকের বাক্সে নানারকম ছবি দেখা যেত। সাদা রঙের গোল কার্ডের পরিধি বরাবর ছোট্ট ছোট ফিল্ম আটকানো থাকত। ঐ বাক্সের মাথার দিকে একটি স্লট যাতে ঐ সাদা কার্ড ঢুকিয়ে দিলে চমৎকার ছবি দেখা যায়। পাশে একটা হাতল আছে যা টানলে ছবি পরিবর্তন হয়। একেকটা কার্ডে ছবি থাকে ৭টা করে। এতেই একখানা কার্ড ছিল seven wonders বলে। তাতেই আমি প্রথম দেখি নায়াগ্রার ছবি। জলপ্রপাতের থেকেও আমার আশ্চর্য্য লেগেছিল কিছু লোককে একরকম হলুদ পোশাক পরে তার পাশ দিয়ে উঠতে দেখে। কেউ ঠিক করে বলতে পারে নি এক্কেরে একরকম পোশাক পরা ওরা কারা। কে যেন বলেছিল ওরা সৈন্য। সেই থেকে কতকিছু ভাবতাম ঐ জলপ্রপাতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নিয়ে। আহারে অত অত জল টপকে ওরা কি করে যাবে যুদ্ধ করতে? তখন অবশ্য ঐ জায়গাটা মস্ত দুরের দেশ বলে মনে হত। কল্পনাই করি নি নিজেও কোনোদিন ওখানে গিয়ে উপস্থিত হব।

    ২০০৩ এর সেপ্টেম্বরের শুরুতে যখন কানেটিকাটের হার্টফোর্ডে পৌঁছাই তখনই মনে মনে বাসনা ছিল, যে কোনো ভাবেই হোক নায়াগ্রা ফল্‌স্‌টা একবার দেখে আসতেই হবে। শুনেছি মাত্র ৭-৮ ঘন্টার যাত্রাপথ। তা এক সপ্তাহের মাথায় মারাঠী বন্ধু আর্‌তী বলল ওর বাবা আসছেন আর তার ২০ দিন পরে ওর মা চলে যাবেন। কাজেই এই মাঝখানের ২০ দিনে ও মা, বাবা দুজনকে নায়াগ্রা দেখাতে চায়। আমি যদি যেতে চাই।।।। আহা একেই বোধহয় বলে "ভাত খাবি না আঁচাবো কোথায়?" পরিস্থিতি। এবারে হল এক সমস্যা। আমি বা আর্‌তী কেউই ড্রাইভ করতে জানি না। আর বাসে করে যেতে ৩ বার বাস বদলাতে হয়। সময় লাগে মোট ১৬ ঘন্টা। যাব্বাবা। তাহলে আর ঘুরবো কি করে! শেষে আর্‌তীর এক পরিচিত ভদ্রলোক, সতীশ রাজি হলেন আমাদের ড্রাইভ করে নিয়ে যেতে। একটা আট আসনবিশিষ্ট সু ভাড়া করে সেপ্টেম্বরের শেষ শনিবার সকাল আটটার সময় আমরা রওনা হলাম। সতীশ একাই ড্রাইভ করবেন সারা পথ। সঙ্গে আছি আর্‌তী, ওর মা, বাবা, ওর মেয়ে
    আনুইয়া আর আমি। আমি ছাড়া বাকী সকলেই মারাঠী, কাজেই কথাবার্তা, গান শোনা সবই মারাঠীতে। সতীশের অফিসের আরেক বন্ধু নভীনও তার বাবা, মা বৌ ছেলেকে নিয়ে অন্য একটা গাড়ীতে যাবে আমাদের সঙ্গে। নভীন এই প্রথম এত দূর যাবে গাড়ী নিয়ে, তাই ঠিক আছে ও আমাদের গাড়ীকে অনুসরন করবে। তা এইভাবে আমাদের যাত্রা হল শুরু।

    সেপ্টেম্বরের শেষ মানে "ফল" আসছে। হাইওয়ের দুধারের অজস্র বড় বড় গাছে কোনো খেয়ালী শিল্পী যেন এলোমেলো বুলিয়ে গেছেন তাঁর তুলির আঁচড়। কোথাও ঘন সবুজের সাথে লাল, কমলা,মেরুন, হলুদের জোর প্রতিযোগীতা। কে দখল পাবে পুরো বনভুমির। কোথায়ও বা মনে হয় কোনো শিল্পী ছবি আঁকতে আঁকতে ক্লান্ত হয়ে উঠে যাবার সময় তুলিটা মুছে নিয়ে গেছেন সবুজ পাতাগুলিতে। তাই গাছের একটিমাত্র ডালে হালকা কমলার ছোপ আর আঁকিবুকি।

    ঘন্টা দুই বাদে থামা হল পথের পাশের এক রেস্ট এরিয়ায়। অ্যামেরিকায় হাইওয়ের ধারে ধারে এই "রেস্ট এরিয়া" ব্যপারটা আমার খুব সুবিধাজনক মনে হয়। সাধারণত: গ্যাস স্টেশন অর্থাৎ গাড়ীতে গ্যাসোলিন ভরার স্টেশনগুলোর কাছাকাছিই হয় রেস্ট এরিয়া। এখানে থাকে কিছু খাবার জিনিষের দোকান যেমন বার্গার কিং বা স্টারবাক্‌স্‌ কফির দোকান, একটি গিফ্‌ট্‌ আইটেম, খেলনা, পত্রপত্রিকা আর ছোটখাট স্ন্যাক্‌স্‌ নিয়ে পাঁচমিশেলী দোকান। এছাড়া থাকে ভেতরে ও বাইরে বসে খাবার জায়গা, ছেলে ও মেয়েদের বাথরুম এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা। যাঁদের সঙ্গে খাবার আছে তাঁরা Fixi'n Bar থেকে ইচ্ছামত সস্‌, স্যলাড, নুন, গোলমরিচ নিয়ে বসে খেতে পারেন। কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। বেশীরভাগ রেস্ট এরিয়াই ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। তা আমরা এখানে হট চকোলেট বা কফি, যার যা পছন্দ, নিয়ে বসে বাড়ী থেকে আনা ফ্রেঞ্চ টোস্ট আর পুরাণপুলি (একরকম মারাঠী মিষ্টি খাবার) দিয়ে একপ্রস্থ খাওয়াদাওয়া সারলাম। এরপরেও পথে বহুবার থেমে আমরা নিউইয়র্ক প্রদেশের একটি ছোট শহর 'বাফেলো'তে পৌঁছালাম বিকেল চারটে নাগাদ।

    বাফেলোর 'রেড রুফ ইন'এ আমাদের ১ রাত্রের জন্য বুকিং আগে থেকেই করা ছিল। যে যার ঘরে গিয়ে একটু স্নান-টান করে ফ্রেশ হয়ে নেওয়া গেল। তারপরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বেরোন হল যথারীতি সামনে আমাদের suv আর পেছনে নভীনের ক্যামারী। ঠিক হল আমরা পৌঁছে যদি সম্ভব হয় "মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট" রাইডটা নিয়ে নেবো। তারপর নায়াগ্রার আশেপাশে ঘুরে রাত ন'টায় আলোর খেলা শুরু হলে সেটা কিছুক্ষণ দেখে একেবারে রাতের খাওয়া সেরে ফিরব। বেরোনর আগে আর্‌তীরা খুব দ্রুত মারাঠীতে কিসব আলোচনা করছিল, যার মধ্যে একটা শব্দই আমার বোধগম্য হল "পাসপোর্ট"। আসার আগেই আর্‌তী আমাকে বলেছিল পাসপোর্ট যেন সঙ্গে রাখি। আমি ভাবলাম তা-ই হয়ত বলাবলি করছে। তাড়াতাড়ি নিজের ব্যাগ দেখে নিলাম, ঠিক আছে। বাব্বা এখনও একমাসও হয় নি আমার এদেশে আসার। হায় তখন যদি জানতাম ওরা কি বলছে!

    নায়াগ্রা ফল্‌স্‌টি অ্যামেরিকা আর কানাডার সীমান্তে অবস্থিত। এর সম্পুর্ণ অশ্বক্ষুরাকৃতি চেহারা একমাত্র কানাডা থেকেই পরিস্কার দেখতে পাওয়া যায়। বাফেলোর ডাউনটাউনে আছে কানাডিয়ান দুতাবাস। সেখানে সোম থেকে শুক্র সকাল আটটায় গেলে বেলা এগারোটার মধ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব। তবে আমরা এযাত্রা শুধু অ্যামেরিকান ফল্‌স্‌ই দেখব।

    বেশ খুশী খুশী ফুর্তি ফুর্তি মেজাজে I-190 N দিয়ে চলছি। বাঁ দিকে দিব্বি দেখছি নায়াগ্রা নদীকে। রোদ পড়ে নদীর নীল জল চিক্‌মিক্‌ করছে। সামনে পেছনে অজস্র গাড়ীর সার। একবার পেছন থেকে শোনা গেল নভীনের গাড়ী ঘন ঘন হর্ন দিচ্ছে। এ-দেশে খামোখা কেউ হর্ন বাজায় না। সবাই এতই গল্পে মত্ত যে বিশেষ অনুসন্ধানের কোনো প্রয়োজন কেউ বোধ করল না। ইশারায় পেছনের গাড়ীকে জানানো হল সো--জা পেছন পেছন আসতে। আরো দশ মিনিট। আরে কি কান্ড আমরা তো সোজা রেনবো ব্রীজের দিকে চলেছি! এই ব্রীজটি পেরোলেই কানাডা। তা আমাদের তো ওদিকে যাওয়ার কথা নয়। ভাবতে ভাবতেই দেখি সতীশ আর আর্‌তী ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ চলল উত্তেজিত বাক্য বিনিময়। ইতিমধ্যে ব্রীজ পেরোবার টোল বুথের কাছে উপস্থিত গাড়ী। তখন বোঝা গেল ব্যপারটা। আমাদের অস্টিন স্ট্রীট থেকে বাঁ দিকে ঘোরার কথা ছিল অ্যামেরিকান ফলসে যাবার জন্য। গল্পে মত্ত থাকায় সতীশ ওটি মিস করে ! গেছে। এখানে তো আর হুটহাট ইউ-টার্ন নেওয়া যায় না। ফলে আমরা ব্রীজের মুখে উপস্থিত। টোল বুথে করুণভাবে জানানো হল যে আমরা কানাডা যেতে চাই না, আমাদের ভিসা নেই। তা ওরা বলে তা চলবে না। এসেছি যখন ব্রীজের কাছাকাছি তখন আমাদের ব্রীজ পেরোতেই হবে। আর টোল ট্যাক্স্‌ও দিতে হবে। আরে তা দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমাদের ফিরে যেতে দাও বাবারা। কিন্তু শিবঠাকুরের আপনদেশের নিয়ম কি অতই সহজ রে বাপু! এইসময় পেছনের গাড়ী থেকে নেমে এল নভীন। ভীষণ উত্তেজিত, মুখ লালচে বেগুনী হয়ে গেছে। ও নাকি ঐ রাস্তা মিস্‌ করাটা দেখেছে এবং আমাদের হর্ন দিয়ে সতর্ক করতেই চেয়েছিল। কিন্তু যেহেতু ওর শুধু অনুসরন করার কথা, তাই ভুল হচ্ছে জেনেও ও তাই করেছে। যাচ্চলে!!! আমি করুণভাবে নভীনের পকেটের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে থাকি কানাডায় "অবৈধ অনুপ্রবেশ"এর শাস্তি কি হতে পারে।

    আমরা কাঁচুমাচু মুখ করে চললাম ব্রীজের ওপর দিয়ে। আধাআধি পেরোনর পরই দেখি সেই ছবিতে দেখা নায়াগ্রা। সেই অজস্র ধারায় ঝরতে থাকা প্রপাত, সেই আকাশের অনেকখানি জোড়া ধোঁয়ার পুঞ্জ। সব উৎকন্ঠা ভুলে পটাপট ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে লাগলাম। এরমধ্যে আঙ্কল মানে আর্‌তীর বাবা একবার সতর্ক করলেন যে ছবি তুলতে দেখলে ওরা ভাববে আমরা ইচ্ছাকৃত এটা করেছি। অতএব ব্রীজ শেষ হবার একটু আগেই সব ক্যামেরা চলে গেল ব্যাগের মধ্যে। ব্রীজের শেষে যেখানে টোল এর রসিদটি দেবার কথা, সেখানেই পাশের ইমিগ্রেশনের বাড়ীটি দেখিয়ে বলল রিপোর্ট করতে। ভদ্রমহিলাকে জানালাম আমাদের সমস্যাটি। ভিসা নেই এবং রাস্তা ভুল করে চলে এসেছি। উনি খুব মজা পেলেন শুনে। একখানা বড়সড় হলদে রঙের কাগজ দিয়ে বললেন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশনে গিয়ে রিপোর্ট করে ওটি জমা দিলে ওরা লিখে দেবে যে আমরা কানাডায় ঢুকি নি। গেলাম পাশের ইমিগ্রেশানের দপ্তরে। ওরা কাগজ জমা নিয়ে সব শুনেটুনে আমাদের পাস্‌পোর্ট চাইল। এইবারে হল আসল মজাটা। অমাদের বসতে বলে সতীশ গেছে কাউন্টারে কথা বলতে। ও হল অ্যামেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা। তায় আবার আগে আটবার নায়াগ্রা এসেছে, এটা নবমবার। আর্‌তী আছে ওর সাথে সাথে। আমি দেখলাম ওরা কি একটা বলছে আর মাথা দুদিকে নাড়ছে আর তাতে অল্পবয়সী ইমিগ্রেশন অফিসার খুব একটা খুশী হচ্ছে না। ওর মুখের প্ল্যাস্টিক হাসিটাও উধাও। আবার আমাদের দিকে (বিশেষ করে বোধহয় আমার দিকেই) সন্দিগ্‌ধভাবে তাকাচ্ছে। আমি উঠে গেলাম কাউন্টারের কাছে। শুনি আর্‌তী বলছে "না না আমাদের কারো কাছে পাসপোর্ট নেই, হোটেলে আছে" অ্যাঁ!!! বলে কী!!! আমি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বলি "না না আমার কাছে আছে তো!"। এবারে আবার দেখা গেল প্ল্যাস্টিক হাসিটি। সব দেখেশুনে সত্যিকারের হাসিও একটু বেরোল। সতীশের কাছে ওর ড্রাইভিং লাইসেন্স্‌ ছিল, তার থেকেই ওর সম্পর্কে কিছু ! তথ্য ওরা পেল। এরপরে প্রথমে আমার পাসপোর্ট থেকে ভিসা আর I-94 এর সময়সীমা ইত্যাদি দেখে সন্তুষ্ট হয়ে সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার লিখে নিয়ে ঐ হলদে কাগজে সব লিখে দিয়ে ছেড়ে দিল। এরপরে আর্‌তীকে পরপর বলতে হল ওর নিজের, মেয়ের, বাবার ও মায়ের পাসপোর্ট নাম্বার, পুরো নাম, বয়স, ভিসা ফুরোবার তারিখ ইত্যাদি। আর্‌তী বেচারী এত ঘাবড়ে গেছে যে দেখি মায়ের প্রথম নামের সাথে নিজের পদবী (মানে ওর বরের পদবী) মিশিয়ে বলছে। আবার একপ্রস্থ মারাঠী আর ইংরাজীর টানাপোড়েন। যাই হোক পুরো ব্যপারটা মিনিট দশেকের মধ্যে মিটে গেল। বাইরে এসে জানলাম "মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট" এ ভিজে যাবে ভয়ে ওরা সবাই পাসপোর্ট ও অন্যান্য সমস্ত কাগজপত্র হোটেলে রেখে এসেছে শুধু নয়, ওরা ধরেই নিয়েছিল আমিও তাই করেছি। এইবারে আবার ব্রীজ পেরিয়ে অ্যামেরিকায় ফেরত গিয়ে ইমিগ্রেশানে রিপোর্ট করতে হবে আর ঐ হলদে কাগজখানা জমা দিতে হবে। ফেরার পথে আবার দুয়েকটা ছবি তোলার লোভ সামলানো গেল না। যাই হোক এপারের ইমিগ্রেশানে দেখা গেল বেশ ভীড়। একটা খুপরী থেকে ক্রমিক সংখ্যা লেখা টোকেন নিয়ে বসলাম। দেখি একজন ভদ্রমহিলা, চেহারা, পোশাক আষাক দেখে মনে হল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের লোক। সঙ্গে একটি ৭-৮ বছরের ছেলে আর একটি ৬-৭ মাসের শিশু। শিশুটি পরিত্রাহী কাঁদছে। ওর মা বারেবারে আবেদন জানাচ্ছে ওকে নীচে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক যাতে ও গাড়ী থেকে বাচ্চাটির খাবার ও স্ট্রলারটি নিয়ে আসতে পারে। সিকিউরিটির লোকজন কিছুতেই দেবে না অনুমতি। প্রায় মিনিট পনেরো বাদে সম্ভবত: বাচ্চার গলার জোরের কাছে হার মেনে ওরা অনুমতি দিল, যে কোনো একজন গিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। এইবারে দেখলাম সঙ্গে একজন ভদ্রলোক, সম্ভবত: মধ্যপ্রাচ্যরই, আছেন। তিনি নীচে গেলেন বাচ্চার জিনিষ নিয়ে আসতে। সঙ্গে একজন অস্ত্রধারী রক্ষী। ভদ্রলোককে নাকি এতক্ষণ ভেতরের একটি ঘরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। জানা গেল এঁরা ! নাকি প্রায় দেড় ঘন্টা এখানে আছেন। এঁরা আসলে কানাডায় থাকেন। কানাডিয়ান ফল্‌স্‌ দেখতে আসছিলেন। অনেকটা আমাদেরই মত ভুল করে রেনবো ব্রীজের কাছে এসে আর ফিরতে না পেরে বাধ্য হয়ে অ্যামেরিকা পৌঁছে গেছেন। আরো জানলাম ওঁরা কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা বললেও তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। ভদ্রমহিলার সঙ্গে এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনোরকম আইডি কার্ডই নেই। সবচেয়ে বড় অপরাধ ওঁরা মুসলমান। এবারে আমাদের ডাক এল। আমার পাসপোর্ট আর স্‌স্‌ন দেখে শুধু জিজ্ঞাসা করল আর্‌তী আমার অফিসেই কাজ করে কিনা? বললাম "হ্যাঁ"। তখন একটু মুচকি হেসে বলল "তা তুমি সঙ্গে আইডি নিয়ে ঘুরছ তো ও কেন রাখে নি?" যাচ্চলে!! আমি কি করে জানব? বললাম "ও ভুলে গেছে" বলে " হ্যাঁ সে তো বুঝলাম, কিন্তু কেন?" এই একই প্রশ্ন ও উত্তর বার তিনেক চলার পর রেহাই দিল। আমাদের দুই গাড়ীর মোট ৯ জনের হয়ে যাবার পর লাউঞ্জে এসে দেখি বেজায় হট্টগোল চলছে। এক ৬ ফুট লম্বা আড়াই ফুট চওড়া মহিলা, একেবারে চলমান দুর্গের মত দেখতে, বেজায় চেঁচাচ্ছেন। কারণ ঐ বেচারী মুসলমান মেয়েটি এবারে ওর বড় ছেলেটির ক্ষিদে পেয়েছে জানিয়ে আরেকবার বাইরে যেতে চেয়েছে। ঐ "চলন্ত দুর্গ" চেঁচাচ্ছেন "জানেন আমার দেশ এখন যুদ্ধে ব্যস্ত।(যেন ওরা বলেছিল ব্যস্ত থাকতে) জানেন আমার দেশের কত সৈন্য রোজ বেঘোরে মারা যাচ্ছে ইরাকে। তার মধ্যে আপনারা কাগজপত্র কিচ্ছু দেখাতে পারেন নি, আমরা কানাডিয়ান সরকারের দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। ওখান থেকে আপনাদের সম্বন্ধে সমস্ত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আপনাদের এখানে, এভাবেই থাকতে হবে"। ঐ সাত আট বছরের ছেলেটি বড় বড় কালো চোখ তুলে একদৃষ্টে, একটু কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে থাকে ঐ চীৎকার করতে থাকা মহিলার দিকে। কি যেন একটা ছিল ওর তাকানোর মধ্যে। কে জানে ঐ শিশুটিই ভবিষ্যতে কোনোদিন মানববোমা হয়ে ফেটে পড়বে কিনা কোথায়ও। তারই কি সলতে পাকানো হয়ে গেল আজ? কোনো ধর্ম বা ঈশ্বর না মানা আমি, জীবনে প্রথমবার মুসলমান হয়ে না জন্মানোর স্বস্তিতে একটা নিশ্বাস ফেলে, বাইরে এসে গাড়ীতে উঠি। আজ দেড়বছর বাদে যখন ৯/১১ কমিশনের সম্পুর্ণ রিপোর্ট পড়া হয়ে গেছে, তখন কখনো কখনো ভাবি সতর্কতার
    প্রয়োজন ও আছেই, সতর্কতার অভাব আর নিয়মের অজস্র ফাঁকফোকর দিয়েই তো সম্ভব হয়েছিল ৯/১১। কিন্তু ঐ দুর্ব্যবহার! আর ঐ বড় বড় কালো চোখের অদ্ভুত চাউনি!

    এবারে নির্বিঘ্নে এসে পৌঁছালাম নায়াগ্রার ধারে। দেখা গেল "মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট" সেদিনের মত বন্ধ হয়ে গেছে। অগত্যা নদীর ধার দিয়ে দিয়ে শুরু হল হাঁটা। নায়াগ্রা ফল্‌স্‌ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জলপ্রপাত, দক্ষিণ আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া ফলসের পরেই। এই প্রপাতটিকে মুলত: ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। অ্যামেরিকান ফল্‌স্‌, ব্রাইডাল ভেল ফল্‌স্‌ এবং কানাডিয়ান হর্স শ্যু ফলস্‌। এই যাত্রা আমরা প্রথম দুটি দেখতে পাব। এই দুটির দৈর্ঘ্য বা বিস্তার ১০৬০ ফুট আর উচ্চতা ১৭৬ ফুট, যদিও নীচে জমে থাকা বড় বড় পাথরের উপস্থিতির জন্য এর প্রকৃত উচ্চতা দাঁড়ায় ৭০ ফুট। এই প্রপাত প্রতি সেকেন্ডে জল বহন করে ১৫০,০০০ ইউ। এস। গ্যালন। কানাডিয়ান প্রপাতের বিস্তার ২৬০০ ফুট, উচ্চতা ১৬৭ ফুট। প্রতি সেকেন্ডে আছড়ে পড়া জলের পরিমাণ ৬০০,০০০ ইউ। এস। গ্যালন। পৃথিবীর মিষ্টি জলের এক পঞ্চমাংশ পাওয়া যায় ৪টি বৃহৎ হ্রদে, মিশিগান, হুরন, সুপিরিয়র এবং ইরি তে। এই ৪টি হ্রদের জল এসে পড়ে নায়াগ্রা নদীতে এবং তারপর সেই নদী ঝাঁপিয়ে পড়ে উপরিল্লিখিত ৩টি প্রপাত হয়ে। নীচে পড়া জল ১৫ মাইল গিয়ে জমা হয় আরেক বৃহৎ হ্রদ অন্টারিওতে। এই নদীখাত সবটুকুই যে সমান তা নয়। জায়গায় জায়গায় অনেক ছোট বড় বোল্ডার তৈরী করেছে প্রবল ঘুর্ণি আর অজস্র ফেনা। সেপ্টেম্বরের এই সময়টায় বেলা একটু ছোট হয়ে এলেও প্রায় আটটা অবধি আলো থাকে। সূর্যাস্তও হয় প্রায় সাতটা পনেরো নাগাদ। শেষবেলার রোদ্দুরে ভারী সুন্দর লাগছে নায়াগ্রা নদীকে। যত গর্জের কাছে আসছে তত বেড়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে পাথরের সংখ্যা, আর তীব্র বেগে ফুঁসতে ফুঁসতে নদী বয়ে চলেছে ঝাঁপ দেবে বলে। নদীর ধার দিয়ে দিব্বি সুন্দর রাস্তা বানানো। আর রাস্তার পাশ দিয়ে আছে চমৎকার সাজানো গোছানো বাগান, বসার জায়গা, Niagara State Park। অ্যামেরিকান ফলস্‌ আর ব্রাইডাল ভেল ফলসের মাঝে আছে লুনা আইল্যান্ড। এখানকার লুনা আইল্যান্ড থেকে সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময়ে অসম্ভব সুন্দর রামধনু দেখা যায়। জলপ্রপাতের ওপরে প্রকৃতির নিজস্ব রঙের খেলা। আমরা ওখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম ওয়াচ টাওয়ারে। একই জায়গায় কাটতে হয় 'মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট' এর টিকেট। জলপ্রপাত যেখানে পড়ছে সেই নদী থেকে ছাড়ে ছোট্ট স্টীমার, মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট'।! যেহেতু এটি সেদিনের মত বন্ধ হয়ে গেছে, অতএব আমরা চললাম অবজার্ভেশান টাওয়ারের দিকে। নায়াগ্রা যেখানে পড়ছে সেই নদীখাতের ওপরে প্রপাতের মুখোমুখী একটি সেতু নদীর অর্ধেক পর্যন্ত বানানো আছে। সেতুর ওপরে রেলিঙের ধারে ধারে বসানো আছে বাইনোকিউলার। ১ কোয়ার্ট মানে ২৫ সেন্ট ফেলে দেখা যায় ফল্‌স্‌কে। একেবারে চোখের সামনে চলে আসে অজস্র মোটা ধারায় পড়া জল, আর উড়ন্ত সীগ্যালের দল। এই সেতুরই এক জায়গায় আছে দুটি লিফ্‌ট্‌। এই লিফ্‌ট্‌ দুটি মেইড অফ্‌ দ্য মিস্টের যাত্রীদের আনা নেওয়া করে নীচের জেটিতে। আমরা অনেকক্ষণ ধরে ঘুরেফিরে দেখলাম নায়াগ্রাকে। দেখেশুনে আশ যেন আর মেটে না। কি গম্ভীর জলের আওয়াজ। এমনিভাবেই রাত্রি হল। ঠিক ন'টায় শুরু হল আলোর খেলা। নানারঙের আলো ফেলা হয় প্রপাতের ওপরে। জলের ধারায়, আলোয়, হাল্কা কুয়াশায় আর নদী থেকে ছিটকে ওঠা জলকণায় সে এক স্বপ্নপুরী। ওপরে তারাভরা রাতের অনন্ত আকাশ। প্রকৃতি আর মানুষের প্রয়াসে তৈরী করেছে ঐ অপরুপ মায়াপুরী। ওখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে মনে হয় কি অসম্ভব ক্ষুদ্র আমি, আমরা মেতে থাকি কত ছোট ছোত জিনিষ নিয়ে। চমক ভাঙে সহযাত্রীদের ডাকে। এবারে খেয়েদেয়ে হোটেলে ফেরা। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আর্‌তী আর নভীনের বাচ্চাদের তৈরী করতে করতে বেজে গেল সাড়ে আটটা। ন'টায় পৌঁছে প্রথম দাঁড়িয়ে পড়লাম "মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট" এর লাইনে। ঠিক স্টীমারে ওঠবার আগে আমাদের প্রত্যেকের হায়ে ধরিয়ে দিল একটা করে নীল রঙের পলিথিনের ঢোলা জোব্বা ধরণের জিনিষ। তাতে দুটো হাত আর মাথা গলাবার জন্য গর্ত করা, আছে মাথা ঢাকার একটা টুপির মত অংশও, যা ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখা যায় চিবুকের সাথে। বস্তুটা বেশ ভাল, দিব্বি ব্যাগ ট্যাগ শুদ্ধ ওটার ভেতরে ঢুকে পড়া গেল। স্টীমারটি দোতলা, বেশ
    বড়সড় মোটরচালিত যান। যথেষ্ট জায়গা আছে ডেকে। এটি অ্যামেরিকান ফল্‌সের বাঁ দিক থেকে ছেড়ে ফলসের সামনে দিয়ে ব্রাইডাল ভেল ফলসের সামনে দিয়ে আরো খানিকদুর গিয়ে একঝলক হর্স শ্যু ফলস দেখিয়ে আবার ঘুরে আসে। যত এগোচ্ছি প্রপাতের দিকে তত বাড়ছে জলের ছাঁট। ঐ ১৭০ ফুট ঝাঁপিয়ে পড়া জল ছিটকে উঠছে ওর চেয়েও বেশি উচ্চতা। ফলে! সেই অঞ্চলে অনবরত বৃষ্টির মত ঝরে চলেছে জলকণা। এদিকে আকাশ নীলকান্তমণির মত ঝলমলে নীল, প্রখর রোদ। আমরা ক্রমশ: এগিয়ে যাচ্ছি প্রপাতের দিকে। অজস্র জলের ছাঁটে মুখ মাথা ভিজে একশা। কখন যে মাথার টুপিটা খুলে গেছে খেয়ালই করি নি। কিছু সীগ্যাল উড়ছে প্রপাতের কাছ ঘেঁষে। অত জোরে পড়ায় জলের ফেনা তৈরী হচ্ছে প্রায় দেড় দুই ফুট গভীর। আমরা দেখছি সে-এ-ই কত্ত উঁচু থেকে নেমে আসছে মোটা মোটা জলের ধারা আর সূর্য্যের আলোয় তাতে হঠাৎ হঠাৎ জেগে উঠছে লাল কমলা রঙের ঝলক। আছড়ে পড়ে ছিটকে ওঠা জলের
    কণায় যে কুয়াশার মত ঘেরাটোপ তৈরী হয়েছে তারই একেক অংশে হঠাৎ করে তৈরী হচ্ছে রামধনু। আবার নৌকা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মিলিয়েও যাচ্ছে। এমনিভাবেই পেরিয়ে গেলাম চিরবৃষ্টির রাজ্যটা। একটু দূর থেকে যেন নায়াগ্রার গাম্ভীর্য্য আর সৌন্দর্য্য বেশী করে দেখা যায়। এবারে যেই নৌকাটা ঘুরেছে, ওমা দেখি কি, ঠিক! যেন জলের তলা থেকে উঠে আসছে একটা মস্ত বড় রামধনু। খুব সামান্য, বোধহয় ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য দেখা গেল সোনালি রঙ আর তারপরেই খিলখিল করে হাসতে হাসতে উঠে এল রামধনুর সাত রঙ আর তার পাশের জল রুপোলি। এত সুন্দর দৃশ্যকে কোন ভাষায় বর্ননা করব আমি! আবারও পেরোলাম সেই চিরবৃষ্টিপাত অঞ্চল। তবে এবারে একটু দূরে আমরা, তাই ততটা ভিজতে হল না। পাড়ে এসে নামার পর ইচ্ছা করলে রেনকোটগুলো সঙ্গে আনা যায়, নাহলে একটা বড় ড্রাম রাখা আছে তাতে ফেলেও আসা যায়। নদীর পাড় দিয়েই এর পাশে আবার প্রপাতের উচ্চতার তিন চতুর্থাংশ পর্যন্ত
    ধাপ কেটে সিঁড়ি বানানো আছে, দুদিকে রেলিঙ দেওয়া। এই সিঁড়ি দিয়ে উঠে কিছুদূর গিয়েও অ্যামেরিকান ফলসকে দেখা যায় বেশ কাছে থেকে। সব দেখেশুনে জিন্সের আর্ধেক ভিজিয়ে যখন নামলাম তখন বেলা সাড়ে বারোটা। নভীনরা গিয়েছিল আরেক আকর্ষণ "কেভ অব্‌ দ্য উইন্ড্‌স্‌" দেখতে। ওরা এসে বলল সেখানে নাকি বিশাল কিউ। ওরা পাক্কা ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে তবে দেখেছে। সর্বনাশ। আমাদের তো অতক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। আমাদের গাড়ী ফেরত দিতে হবে রাত ৯ টার মধ্যে। তার মানে অন্তত দুপুর দুটো নাগাদ বেরিয়ে যেতে হবে, তাছাড়া সঙ্গে বাচ্চা আছে। আর্‌তীরা কেউ যাবে না, তাহলে আর আমি যাই কি করে। ওরা বলল আর একটু নদীর ধারে ঘুরেটুরে চল ফেরা যাক। অগত্যা একটু বিমর্ষ হয়েই ফেরার রাস্তা ধরলাম। মনে মনে ভেবে রাখলাম এরপরে আবার যে আসবে তার সাথে আরেকবার আমাকে আসতেই হবে। ২০০৪ এর 'মে' মাসে শুনলাম আমার দুই বন্ধু জেভিয়ার আর শ্রীনিবাস প্ল্যান করছে নায়াগ্রা যাবার এবং কানাডিয়ান ফলসও দেখে আসবার। এই সুযোগ কেউ ছাড়ে? তৎক্ষণাৎ আমিও জুটে গেলাম সাথে। ঠিক হল জুনের প্রথম শুক্রবার ছুটি নেওয়া হবে। আমরা বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে নাগাদ বেরিয়ে পড়ব। তাহলে মাঝরাত নাগাদ 'বাফেলো' পৌঁছে যাব। পরেরদিন সক্কালে উঠে বাফেলোর কানাডিয়ান দূতাবাসে গিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে তারপর দেখা শুরু করব। তাহলে দিব্বি রবিবারের মধ্যে সব দেখা হয়ে যাবে। জেভিয়ার, তার বৌ অসিতা, শ্রীনি, তার বৌ সত্যা আর আমি এই আমরা পাঁচ জন আর জেভিয়ারের দুই বছরের মেয়ে তনুস্কা আর শ্রীনির এক বছরের মেয়ে হর্ষিনি। অতএব এবারেও ভাড়া করা হল এক এইট সীটার সু। আমার ওপরে ভার ছিল হোটেল বুক আর ভিসার নিয়মাবলী জেনে নির্দেশ দেওয়া। ভিসার জন্য প্রত্যেকের দুই কপি ছবি লাগে। দেখা গেল দুই শিশুর কারোই দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নেই। বৃহস্প! তিবার বিকালে রওনা হবার আগে আমরা গেলাম সব ছবি তুলিয়ে নিতে। এইসব করেটরে রওনা হতে হতে হয়ে গেল বিকেল ছটা। ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই, আলোইথাকবে রাত সাড়ে ন'টা অবধি। সন্ধ্যে ন'টা নাগাদ একটি রেস্ট এরিয়ায় থেমে রাত্রের খাওয়াদাওয়া সারা হল। এরপর যাত্রা শুরু করেই হল আসল সমস্যা। তান্নু বা হর্ষিনি কেউই কারসিটে বসতে রাজী নয়। যে যার মায়ের কোলেই ঘুমোবে। অথচ হাইওয়েতে সেটা সম্পুর্ণ বে-আইনী। কিন্তু দুজনেই এমন পরিত্রাহী কাঁদতে লাগল যে নিরুপায় হয়ে অসিতা আর সত্যা দুজনেই কোলে তুলে নিল। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আবারও থামা হল একজায়গায়। এরপর শ্রীনি বেশ জোরে চালাতে শুরু করল। স্পীড লিমিট যেখানে ৬৪ মাইল/ঘন্টা সেখানে ও দিব্বি নব্বইতে চালাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে যেন অন্ধকার ফুঁড়ে একটা গাড়ী এসে ফ্ল্যাশ মেরে আমাদের থামতে ইশারা করল। পুলিশ! কোথায় যে এরা ঘাপটি মেরে থাকে! আমরা তো ভয়ে কাঁটা, এই বুঝি লাগল একখানা দেড়! দুশো ডলারের ফাইন। যাই হোক পুলিশ এসে তো প্রথমেই বেশ রেগে গেল সত্যার কোলে হর্ষিনিকে দেখে। মাত্র দশ মিনিট আগে তান্নুকে কার সীটে দিয়েছে অসিতা, ও আপত্তি করে নি। একে তো স্পীড লিমিটের ঢের ওপরে গাড়ী চালানো, তায় আবার বাচ্চাকে কার সীটে না বসানো। বেচারা শ্রীনি মাত্র মাস দুই হল লাইসেন্স পেয়েছে। যাই হোক আমরা তো খুব অবাক হলাম "সত্যি! ৯০ তে চালানো হচ্ছিলাম বুঝি! এম্মা ভারী অন্যায় হয়ে গেছে তো।" লোকটা দেখেশুনে একটু কড়া করে বলল তক্ষুণি যেন হর্ষিনিকে কার সীটে বসানো হয়। ওকে কার সীটের কাছাকাছি নেওয়া মাত্র প্রচন্ড চীৎকার। যাই হোক কি ভেবে কি জানি আমাদের শুধু ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দিল, তবে ঐ এক শর্ত, তক্ষুণি হর্ষিনিকে সীটে বসাতে হবে নিরাপত্তার খাতিরে। তা হর্ষিনি তখন রীতিমত গর্জিনী ও বর্ষিনী। আমরা সেই ভাবেই আবার রওনা দিলাম, অবশ্যই স্পীড লিমিট মেনে।

    রাত পৌনে দুটোয় পৌঁছালাম "বাফেলো"র "রেড রুফ্‌ ইন"এ। হর্ষিনিও কেঁদে কেঁদে ততক্ষণে খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েই পড়েছে। সইসাবুদ সেরে যে যার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। কাল - নাকি আজই সকাল ৭টায় আবার বেরোতে হবে। আটটার আগে গিয়ে কানাডিয়ান দূতাবাসে লাইনে দাঁড়াতে হবে। সকাল এগারোটার মধ্যেই আমরা প্রত্যেকে সিঙ্গল এϾট্র ট্যুরিস্ট ভিসা পেয়ে গেলাম। এইবারে হোটেলে ফিরে আগের রাতের ঘুমের কোটা পুর্ণ করতে হবে। বিকেল ৪ টে নাগাদ বেরোন হল আবার নায়াগ্রার দিকে। যেহেতু বিকেলে "কেভ অব্‌ দ্য উইন্ডস"এ অপূর্ব রামধনু দেখা যায়, তাই প্রথমে সেদিকেই যাওয়া হবে ঠিক হল। এবারে আমি জেভিয়ারকে পেছনে পাঠিয়ে নিজে বসলাম ন্যাভিগেটর হয়ে। বাপ্‌স!যদিও হাতে কানাডার ভিসা আছে কিন্তু তা তো একাঘ্নী বাণ। আজ পৌঁছে গেলে মোটেই ভাল হবে না। "কেভ অব্‌ দ্য উইন্ডস"এর জন্য $7 দিয়ে টিকিট কেটে আমরা পেলাম একটা হলদে রংএর পলিথিনের রেনকোট, অবিকল "মেইড অফ্‌ দ্য মিষ্ট"এ যা দেয় সেরকমই শুধু রংটা আলাদা। আর একখানা চমৎকার জুতো, যাতে জলে ভেজা পিছল সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে কেউ পিছলে না পড়ে যায়। আরে আরে কি আশ্চর্য্য! এই তো সেই ছোটবেলায় দেখা হলুদ রংএর পোষাক! নিজেদের জুতো খুলে, জিন্স গুটিয়ে, রেনকোট আর ওদের দেওয়া জুতো পড়ে সবাই তৈরী হয়ে একটা লিফ্‌টের সামনে এসে লাইনে দাঁড়ালাম। তান্নু আর হর্ষিনি রেনকোটের মধ্যে ঢুকে কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেছে, রোবটের মত হাঁটছে। ওদেরকে ঠিক একেকটা ভীতু চড়াইপাখির মত দেখাচ্ছে। আমরা একটা লিফটে চড়ে নায়াগ্রার খাত বরাবর অর্ধেকের কিছু বেশী উচ্চতা নেমে এলাম। এখান থেকে বেশ পরিস্কার দেখা যায় কী ভীষণ বেগে নামছে জলের ধারা। এখান থেকে সরু কাঠের সিঁড়ি বানানো আছে খাতের গা বরাবর, যা ধরে উঠলে প্রপাতের বিরুদ্ধে ওঠার অভিজ্ঞতা হয়। এইবারে বেশ পরিস্কার বুঝতে পারলাম ছোটবেলার ছবির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি। কিছুটা করে কাঠের সিঁড়ি উঠে একটা করে চাতাল। এখানে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকালে দেখা যায় ভীমবেগে নেমে আসা জলের ধারা। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পায়ের দিকে তাকালে দেখা যায় কাঠের ধাপের ফাঁকে ফাঁকে এঁকেবেকে খেলা করে যাওয়া সরু সরু জলের ধারা। এদিকে যত ওপরে ওঠা যায় ততই বেড়ে চলে জলের ছাঁট। সবচেয়ে উঁচু চাতালের ঠিক নীচেরটায় ওঠার পরই হাওয়ায় আর জলের ছাঁটে বেশ একটু শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করল। কিন্তু উপরের চাতালের দিকে তাকিয়ে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেলাম। একজোড়া ড্যানিশ সাহ! এব মেম ততক্ষণে পৌঁছে গেছে সেখানে আর একখানা ম-অ-স্ত রামধনু সাহেবের কপাল, মেমের গাল, কাঁধ ছুঁয়ে তৈরী হয়েছে। ওরা বোধহয় বুঝতে পারে নি, আরো ওপরের দিকে দেখছে। আমরা চেঁচিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। এ-ও হয়!! মানুষের গায়ের ওপরে সৃষ্টি হয় রামধনু! এরপরই আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে প্রথমে সত্যাকে পাঠালাম ওপরে। ও বলল ও রামধনুর অন্য দূরে থাকা অংশ দেখতে পেলেও ওর নিজের হাতে, কাঁধে থাকা অংশ দেখতে পাচ্ছে না। তারপর গেলাম আমি। সত্যা আর অসিতা নীচে থেকে বলতে লাগল "ঐ তো
    তোর কপালে রামধনু, না না কানে, আরে হাতের ওপরে তো।।।।।।।"। আর আমি হাত তুলে ঘাড় বেঁকিয়ে প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছি দেখবার। এই খেলা চলল যতক্ষণ না আমরা শ্বাসকষ্টে একেবারে বেদম হয়ে পড়লাম। এদিকে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে নীচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেভিয়ার আর শ্রীনি ততক্ষণে অধৈর্য্য হয়ে পড়েছে। আমরা একেবারে স্নান করে প্রচন্ড খুশী হয়ে লাফ! অতে লাফাতে নেমে এসে ওদের যেতে দিলাম। অত জলের ছাঁটে কেউই সাহস করে ক্যামেরা খুলতে পারলাম না, যদি নষ্ট হয়ে যায়। ভারী দু:খ রয়ে গেল মনে। পরেরদিন দুপুরে রওনা হওয়া গেল কানাডার দিকে। সেই রেনবো ব্রীজ পেরিয়ে যাওয়া। এবারে একেবারে বৈধ প্রবেশ। আমরা সমস্ত হোটেল বুক করেছিলাম হোটেল ডট কম এর মাধ্যমে। অন্টারিওতে হোটেল নেবার সময় বারেবারে জিজ্ঞাসা করে নিয়েছিলাম "ফলস ভিউ" পাওয়া যাবে কিনা। ফোনের ওপার থেকে রীতিমত যাচাই করে নিল আমরা "ফলস ভিউ" চাই না "রোডসাইড ভিউ।" কি কান্ড হোটেলে পৌঁছে দেখি হোটেল তো ফলসের
    ধারে কাছেও নয়, অনেক দূর। ফলস ভিউ পাবার কোনো সম্ভাবনাই নেই। রিসেপশনে বলতে বলে ওদের নাকি অমন কোনো ঘরই নেই, আর ওরা নাকি অমন কথা কক্ষণো বলে না। বোঝা গেল হোটেল ডট কম ই বোকা বানিয়েছে। কি আর করা, যা পাওয়া গেছে তাই নিতে হল। তবে হোটেল থেকে ফলস বেশ কাছে। জমজমাট বাজার এলাকার মধ্যে অগুন্তি ছোটবড় হোটেল, আর অজস্র দোকান। অধিকাংশ দোকানে ভারতীয় উপমহাদেশের লোক বিক্রেতা হিসাবে উপস্থিত। চলছে প্রবল দরাদরি অনেক জায়গাতেই। বেশ কিছু "ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট"ও দে! খা গেল। পায়ে হেঁটেই এসে পড়লাম আমরা ফলসের ধারে।

    আ-হা কানাডায় না এলে বোঝা যায় না অ্যামেরিকা থেকে ফলসের কত কম অংশ দৃশ্যমান। আমার আর জেভিয়ারের তো পাগল পাগল অবস্থা, কোন দিক থেকে ছবি তুললে অনেকটা অংশ পাওয়া যাবে, আর কতক্ষণই বা তুলব! নদীর ধারে ধারে ভিক্টোরিয়া পার্কের মধ্যে দিয়ে শুরু হল আমাদের পায়ে হেঁটে হর্স শ্যু ফলসের দিকে যাত্রা। এই রাস্তার মাঝ বরাবর গেলে অ্যামেরিকান আর কানাডিয়ান সবকটি ফলসই পুরো দেখা যায়। হর্স শ্যু এর ব্যপ্তি ও তীব্রতা এতই বেশী যে আছড়ে পড়ে ছিটকে ওঠা জল পাশের রিভারসাইড রোডে একটি চিরবৃষ্টি অঞ্চল তৈরী করে রেখেছে। পথচারীরা মস্ত মস্ত সুদৃশ্য ছাতা নিয়ে হাঁটছেন। আমরা অবশ্য মহানন্দে ভিজে ভিজেই হাঁটতে লাগলাম। হর্স শ্যু এর পিছন দিক পর্যন্ত গিয়ে আবার ফেরা হল। আসলে এত কাছে থেকে একে ঠিক অনুভব করা যায় না, ভেজাই সার। ইতিমধ্যে আবার আকাশ থেকে সত্যিকারের বৃষ্টিও নামল। দে দৌড়, দৌড়। ভিজে চুপ্পুস হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে উঠলাম স্কাইলন টাওয়ারে। একটি ছোট টিলার ওপরে অবস্থিত এই টাওয়ারের উচ্চতা ৭৭৫ ফিট (২৩৬ মিটার)। এর ওপরে একটি অবজারভেশন ডেক আছে। আর আছে ঘুরন্ত রেস্তরাঁ। শুধু অবজারভেশান ডেকে চড়তে দক্ষিণা লাগে $6। ইতিমধ্যে রাত ন'টা বেজে গেছে। শুরু হয়ে গেল সবকটি ফলসের উপরে আলোর খেলা। এত উঁচু থেকে হর্স শ্যুএর আকৃতিটি পরিস্কার বোঝা যায়। ফলসের সামনে পুঞ্জ পুঞ্জ জলকণার ঘেরাটোপের ওপরে নানারঙের আলো পড়ে ঠিকরোচ্ছে, ঝলকাচ্ছে। অ্যামেরিকান ফলসের ওপরে যখন বেগুনীর নানা শেড, ব্রাইডাল ভেল ফলসে তখন আবছা থেকে গাঢ় রুপালীর খেলা, আর ঠিক তখনই হর্স শ্যু হয়ে যায় নীলে, সবুজে, গোলাপীতে মাখামাখি। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আবার বদলে যায় রং। আহা কোথায় লাগে ইন্দ্রের দেবসভার বর্ননা! কোথা দিয়ে যে কেটে যায় ৩ ঘণ্টা বুঝতেই পারি না। রাত ১২টায় নিভে যায় আলো। আর মানুষের সৃস্টি করা মায়াজাল নেই, এইবারে আবছা ঘোলাটে চাঁদের আলোয় দেখা গেল প্রকৃতিসৃস্ট নায়াগ্রার গাম্ভীর্য্য। এতক্ষণ নায়াগ্রা আমাদের মুগ্‌ধ করে রেখেছিল, এইবারে স্তব্ধ, বাক্যহীন হয়ে গেলাম। সকালে সন্ধ্যায় যার ওপরে দেখেছি অপূর্ব রামধনুর খেলা, এখন তা ধূষর সাদা। তবুও কি সুন্দর, কি মহান, গম্ভীর। টাওয়ার থেকে নেমে আবার পায়ে পায়ে হেঁটে নায়াগ্রার পাশে। কানাডার দিক থেকেও নেওয়া যায় "মেইড অফ্‌ দ্য মিস্ট"। আমরা আর এদিক থেকে নিলাম না তা। রবিবার সকালে গেলাম মেরিনল্যান্ড দেখতে, তবে সে তো অন্য গল্প। রবিবার ফিরে আসা। এবারে সাধ মিটিয়ে কাছ থেকে, দূর থেকে নানাভাবে দেখেছি নায়াগ্রাকে। তবু আবার সুযোগ পেলে আবারও আসবো আমি। মনে মনে ভাবি যদি কখনও শীতের দিনে আসতে পারি, যখন ওপরের নদীটা জমে সাদা হয়ে যাবে আর তবুও নীচে থেকে যাবে জলের তীব্র স্রোত। আহারে না জানি সে কেমন দেখতে হবে!
  • tanu2 | 171.72.5.133 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০০:০২450276
  • দারুণ লেখা! মনে হল যেন আবার পৌঁছে গেলাম এক্কেবারে সশরীরে। তোমার সঙ্গে আমিও একমত, man made lightingএর থেকে natural lightএই নায়াগ্রা বেশী সুন্দর। পরেরবার গেলে একবারের জন্য হেলিকপ্টার থেকে জলপ্রপাতটা দেখো। সে এক সম্পুর্ণ ভিন্ন দৃশ্য!
  • Ru | 24.148.171.115 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০০:৫৩450277
  • দারুণ লাগল দময়ন্তী দিদি খুব সুন্দর লেখা। তবে মনে হয়না যদি অতো হোটেল না থাকতো কাছে Niagranatural Beauty আরো দেখতে ভালো লাগতো।
  • r2h | 2405:201:8005:9947:95ae:f69f:66b3:41aa | ২০ আগস্ট ২০২১ ১২:৫৪734880
  • এই তো!

  • জয় | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:০৫741282
  • ক'টি ছবি হবে না?
  • Zzzzz | 2409:40f2:103a:aacb:8000:: | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৪741283
  • চমত্কার!

    আচ্ছা, পর্বে পর্বে কবিতার প্রথম পর্বকে আমরা চিরতরেই হারিয়েছি?
  • | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৪741285
  • বোঝো! এ তো এক যুগেরও বেশী আগের লেখা। 
    জয়, 
    তখন একটা পেন্ট্যাক্স  পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় ফিল্মে তোলা ছবি।  খুব একটা সুবিধের  নয়।  স্ক্যান করলে  আরোই কেমন হয়ে যায়। 
     
    ফোজ্জি কি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে  ফাইভজি হয়ে গেল না অন্য কেউ?  অন্য কেউ বলেই মনে হচ্ছে। যাই হোক হারানো টইয়ের কথা ল্যাদোষ  জানে। 
  • 4z | 64.229.22.77 | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫২741286
  • নাহ, ফোজ্জি ফোজ্জিই আছে। ইনি অন্য কেউ @দমদি 
  • Zzz | 49.207.233.54 | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৪741288
  • ফোজ্জি কেনো হতে যাবে, ওটা তো আমি।

    কতোদিন হয়ে গেলো প.প.ক খুজে যাচ্ছি, তো কোথায় কী?

    ছায়াপিন্ড স্পিক্টি নট
  • r2h | 208.127.71.78 | ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৬741290
  • এই হর্ষিনী গর্জিনী বর্ষিনী পড়ে খুব আমোদ পেয়েছিলাম, কী সুন্দর লেখে লোকজন, এইসব মনে হয়েছিল!

    পপক - সত্যিই তো, প্রথমটা গেলো কই! ২, ৩ সব আছে কিন্তু প্রথমটা নানা ভাবে খুঁজেও পেলাম না। অন্য কোন নাম ছিল নিশ্চয়।
  • | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩৩741316
  • ধব্যবাদ রমিত। 
     
    তোমাকে তখন চিনতাম না মনে হয়। মানে রবাহুত তখনো এন্ট্রি নেয় নি মনে হয়। আর কবিতা লিখতে ত পারেই না। cheeky
  • দীমু | 106.210.71.162 | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৫০741317
  • কোনো ছবি নেই বলেই এই লেখাটা আরো ভালো লাগল। কল্পনার ওপর ভিত্তি করে চোখের সামনে ছবিগুলো দেখলাম।
  • | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৯741319
  • দীমু, ধন্যবাদ। 
    ছবি ছাড়া আরো কিছু আছে। যেমন
     দুধসাগর তারকরলি। তারকরলি পার্টটা আর লেখা হয় নি অবশ্য
     
  • সুদীপ্ত | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৪741336
  • এটা তো আছেই, আমার চক্রাতা-টা বেশ পছন্দ, সে কবে পড়েছি, মজলিশে না গুরুতে তাও মনে নেই! ওটায় সূর্যাস্ত নিয়ে একটা লাইন ছিল মনে আছে ' কার্নিশ দিয়ে একটা লাল কমলালেবু গড়িয়ে পড়ে গেল' এরকম কিছু, দুর্দান্ত লেগেছিল! 
  • | ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৬741337
  • ওটা গুরুতেই।  চক্রাতা লিখে সার্চ দিলেই পাবার কথা। টইপত্তরের তিন্নং পাতা। 
  • r2h | 165.1.200.97 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:০৮741356
    •  | ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৩৩
    • ...রবাহুত তখনো এন্ট্রি নেয় নি মনে হয়। আর কবিতা লিখতে ত পারেই না। cheeky
     
    হাহা, হ্যাঁ! আমি বোধহয় ২০০৭ এর ডিসেম্বরে প্রথম টুকটাক মন্তব্য করতে শুরু করি, তার আগে একেবারেই নীপা ছিলাম!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন