এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dhiman Chakraborty | ২৫ মার্চ ২০১৭ ২০:৫৩364902
  • ।। প্রেম ।।
    আমি একবারই প্রেম করেছিলাম, তাই শিরোনামে "প্রথম" যোগ করলাম না। লোকে গাছ থেকে পড়ে, ছাদের কার্নিশ থেকে পড়ে, চলতে চলতে হোঁচট খেয়ে পড়ে, এমনকি খুব অবাক করা ব্যাপার হলে আকাশ থেকে পড়ে, কিন্তু আমি পা স্লিপ করে প্রেমে পড়ে গেলাম।

    চিনতাম আর কি ছোটবেলা থেকে। জীবন বিজ্ঞানের কোচিং এ পড়তে যেতাম। পিডির কোচিং। স্যারের ভালোনাম ভুলে গেছি। আমি একা ছেলে, বাকি সবাই মেয়ে। নিজেকে মঙ্গল গ্রহের জীব মনে হত। সুন্দরী মেয়েদের সাথে কথা বলতে আমি একেবারেই অভ্যস্ত নই। নার্ভাস লাগে। পাশে বসে এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে হৃৎপিণ্ড হঠাৎ ধড়াস করে ওঠে। ধর্মঘট করে। জীবন বিজ্ঞান খাতার কথা আলাদা, কিন্তু যৌনতা এবং সেক্স এইদুটো শব্দ উচ্চারণ করা আমরা পারতঃপক্ষে এড়িয়ে চলতাম। যেন গর্হিত অপরাধ। একবার মনে আছে, যৌন জনন এর উপর টেস্ট নিচ্ছেন স্যার। প্রশ্ন দিয়ে বাইরে কোথাও গেছেন । সবাই এর ওর খাতা দেখে লিখলেও আমি পারলাম না । বলতেই পারলাম না মুখ ফুটে । যাইহোক, কলেজে উঠে দেখতাম ছেলেরা গিটার বগলদাবা করে গোটা নারীসমাজকে ইমপ্রেস করতো। আমার তখন হারমোনিয়াম আর তানপুরা ছাড়া কোনো যন্ত্রই ছিলো না। পাশের বাড়ির জ্যাঠামশাই ভায়োলিন বাজাতেন। সেটা একবার বাজানোর চেষ্টাও করেছিলাম। দেখলাম সেটা গাধার মতো ঘেঁচু ঘেঁচু করে আওয়াজ করছে। আমার দৌড় ওই পর্যন্তই। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বাইরে চলে গেলাম, অনেকদিনই যোগাযোগ ছিল না আমার পাড়ার কারোর সাথে।

    চারবছর পর ফিরে এলাম নিজের শহরে। একটা সফটওয়্যার কোম্পানি জয়েনও করে ফেলেছি। প্রতিদিন সাঁতরাগাছি থেকে সেক্টর ফাইভ যাই। তখন এতো বাস ছিল না। আদ্দেকদিন শাটল পেতাম না। এক্সাইড থেকে বাস পাল্টাতে হতো। অসহ্য রকমের ভিড়। এরকমই একদিন কোনোমতে ঠেলেঠুলে উঠে ভেতরে চলে এলাম। এত্ত ভিড় সেদিন। একটা লেডিস সিট্ ফাঁকা ছিল, ভিড় সহ্য করতে না পেরে বসে পড়লাম। পাশের সিটে বসা মেয়েটিকে চিনি। ছোটবেলায় পড়া সেই পিডির কোচিং এ দেখেছি। পাশের পাড়াতেই থাকে। এইতো সেদিন মনের ভুলে ব্যাগ ফেলেই নেমে যাচ্ছিল । আমিও ব্যাগটা নিয়ে বাস থেকে নেমে ডাকতে ডাকতে দৌড়লাম। আলো-আঁধারি রাস্তা । ভাবল আমি ওর পিছু নিয়েছি। সেও দৌড়োতে শুরু করলো। যাইহোক, শেষে ভুল বুঝতে পেরে জিভ কামড়ে বলল, "ছি ছি, কি না ভাবছিলাম আমি। কেমন আছিস ? কতদিন পর দেখা। বাড়ির দিকে এসেই পড়লি, চা খেয়ে যাবি কিন্তু।" তারপর থেকে ধীরে ধীরে কথা বার্তা বাড়লো। আশ্চর্য, ও এখনো স্মার্টফোন ব্যবহার করে না। ইন্টারনেট এর সামাজিকতায় বিশ্বাস করে না হয়ত।

    আলাপ পরিচয় বাড়তে লাগলো। একদিন বললো, " দমদমে আয়। কথা আছে। " কি মোক্ষম কথা কে জানে। মেট্রো থেকে নেমে দেখি স্টেট ব্যাংকের এ টি এম এর সামনে অপেক্ষা করছে। পরনে গাঢ় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ। এই রংটা আমার খুব প্রিয় ও জানে। কিছু বোঝার আগেই টানতে টানতে অটোতে চাপিয়ে দিলো। সিঁথির মোড়ে নামতে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। বুঝলাম আজ আমার অফিসের দফারফা। কলেজের পরেও "বাংক" জাতীয় কিছু করলাম। স্কুলের ব্যাপার ছিল আলাদা । ছোটবেলায় স্কুল কামাই করা ছিল ভয়ংকর ব্যাপার । বাংলা পড়াতেন তারিণীবাবু । মেজাজ সপ্তমে লেগেই আছে । তবে বেশিরভাগ সময়ই মুখে পান চিবিয়ে ভাবসমাধিস্থ থাকতেন। একদিন বললেন, " ওরে ঠাকুর বলতেন, এসেছিস যখন ছাপ রেখে যা।" বোধকরি এই ছাপ রাখার তাগিদেই প্রতিদিন স্কেল-হাতে ক্লাসে ঢুকতেন এবং যথোপযুক্ত সম্মানের সঙ্গে সেটার সদব্যবহার করতেন । আমি মাঝের বেঞ্চে বসতাম । একদিন আমারই পাশে হরেনকে বললেন," বল দিকিনি, শিবেরা চার ভাই প্রতিদিন গাছে জল দেয়। ইংরিজিতে অনুবাদ কর ।" বেচারা হরেন বারকয়েক শিব শিব বলে থেমে গেল । ওমনি তারিণীস্যার সপাৎ সপাৎ করে তাঁর স্কেলটার সদ্গতি করলেন। হরেন পালাতে যেতেই উনি স্কেলটা প্রজেক্টাইল মোশনের মতো ছুঁড়ে দিলেন। হরেন ধরাশায়ী। হরেনের এই দেব-ভক্তি স্যার বুঝলেন না। স্কেল আর ওর পিঠের দফারফা ।

    "কিছু বলবি কি ?" আমার টেনশন বেড়েই চলেছে ।

    "দাঁড়া। আরেকটু। "

    রবীন্দ্রভারতীতে ঢুকে পড়লো। আমিও পোষা বিড়ালের মতো ল্যাজ নাড়তে নাড়তে পেছন পেছন চললাম।
    একটা জাগায় এসে বললো, "ভেতরে আয়। এই ব্লকে " । আমি প্রমাদ গুনছি মনে মনে। ভাবলাম এবার তো পুলিশে ধরাবে। আমি ত আর ইউনিভারসিটির ছাত্র নই । আমার হাঁটু তখন ভাইব্রেটিং মোডে চলে গেছে। বললাম, "একি বলছিস ?" কথা কানেই তুললো না।

    ভেতরে পরিচয় করলো এক জনের সাথে। বয়স্ক। " স্যার, যার কথা বলেছিলাম। "

    উনি স্মিত হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। উনি চলে যেতে পরে বললাম , " আমি কিছুই বুঝছি না। ঝেড়ে কাশ তো। "
    কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বললো, " ওরে হাঁদারাম, আমি তোকে একটা সারপ্রাইস দিলাম। আমি একটা চাকরি পেয়েছি। "
    নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সত্যি বলছে ও ! আমি উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারছিলাম না। ওর গালে আর একটা সারপ্রাইস এর মতোই চুমু খেলাম। প্রদীপ কাকু এমন সময় চলে এলেন। উনি আমার বাবার বন্ধু। সংগীতশিল্পী। খুব ভালো গিটার বাজান। কি বলবেন ইতস্ততঃ করে চলে গেলেন। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। যা হবার হবে।

    কিছুদিন পর ফল হাতে নাতে টের পেয়েছি । বিয়ে ঠিক হয়েছে। মা শুধু একটু কিন্তু কিন্তু করছিলেন "পাশের পাড়াতেই শ্বশুরবাড়ি " ব্যাস ওইটুকুই।

    বিয়েও করলাম। সারাদিন হরিমটর চিবিয়ে কিভাবে বিয়ে করতে হয় যারা করেছেন তারা জানেন। আমি আর বিস্তারিত কথায় গেলাম না। তবে এখন থেকে আমার রুটিং পাল্টেছে। সকালে উঠে উনি স্নান, কাপড়কাচা ইত্যাদি করতে যান। জল আর সাবানের সাথে স্ত্রীজাতির এত মধুর সম্পর্ক আগে জানতাম না। আমি এই সময়টা কড়াইতে খুন্তি নাড়ি ওর ইন্সট্রাকশন মতো। প্রেশারকুকারে ভাত চাপিয়ে যেই একটু খেলার খবরের পাতা ওল্টাতে বসেছি, ওমনি সে ব্যাটা রকে বসা বখাটে ছোড়ার মতো সিটি মারতে শুরু করলো। কি আপদ ! নবযুগের বিরহিনী রাধার মতো তিনি বাথরুম থেকে ছুটে চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে প্রেশারকুকারের সিটি শুনে।

    "সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। তোমায় দিয়ে যদি একটা কাজ হয় !"

    আমি মিউ মিউ করে "ক টা সিটি পড়লো" করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেষ্টা করি। তারপরের ঝটকা টা আসে খাবার পাতে। সেই মহার্ঘ্য খাবার যেটায় আমি জগন্নাথের ভোগের মতোই নুনের ছিটেফোঁটাও দেইনি।

    "তুমি কেন আমায় হেল্প করতে যাও যখন তুমি পারো না সেটা। "

    "কৈ ঠিকই ত আছে" আমি সাফাই গেয়ে খাবার গলাধঃকরণ করি। কীভাবে করি সেটা আপনারা বুঝতেই পারছেন। তারপর আমি আর আমার উনি দুজনেই বেরিয়ে পড়ি। আমি অফিসে আর উনি ইউনিভার্সিটি-তে।

    কি ভাবছেন ? প্রেম কোথায় ? তাহলে বলতে হবে আপনি প্রেমের কিছুই বোঝেন না। এই মিষ্টি ঝগড়াগুলোর মধ্যেই প্রেম লুকিয়ে থাকে । আমার একদিন সুগার ধরা পড়ল । ও মিষ্টি খেতে ভালবাসলেও আর কোনদিন মিষ্টি খায়নি । আমি জোর করেও খাওয়াতে পারিনি, রবীন্দ্রনাথের দিব্বি । আমার প্রথম প্রেমের রেশ এখনো টেনে যাচ্ছি, যতদিন বাঁচব টানতে চাই ।

    পুনশ্চ - আমার লেখক সত্ত্বা বাগদেবীর কাছে একটি বউ প্রার্থনা করেছিলেন । তাই বউটি লেখকের, আমার না ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন