এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে আসা কি নীতিগত সিদ্ধান্ত ?

    Souvik Porel লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ মার্চ ২০২৪ | ৯৬৩ বার পঠিত
  • অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে আসা কি নীতিগত সিদ্ধান্ত? কেন রাজনীতিতে এলেন এই প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত হেঁয়ালিপূর্ণ এক উত্তর দিয়েছেন, তৃনমূল তাকে মাঠে নামার ডাক দিয়েছে তাই তিনি মাঠে নামছেন। আরেকটা উত্তর তিনি দিয়েছেন, কোর্টে অন্যায়গুলো একটা পিটিশন আকারে এলে তবেই তার বিচার করা হয়। এমন অনেক অন্যায় হয় যেগুলো পিটিশন আকারে আসে না, কোর্ট তার বিচার করতে পারে না। এখানে প্রশ্ন থেকে যায় পিটিশন আকারে যে অন্যায়গুলি আসে সেগুলোরও কি কোর্ট সব ন্যায়বিচার দিতে পারে! এই ব্যপারে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কিছু বলেননি। বিচার বিভাগ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ এমনকি অনেকক্ষেত্রে সংকীর্ণ পরিসরেই ন্যায়বিচার দিতে পারে। ঠিক এই কারনেই রাজনীতির প্রয়োজন। কিন্তু অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের উত্তরে প্রথম হেঁয়ালিপূর্ণ উত্তরটাই প্রধান, দ্বিতীয়টা যেন গৌন হয়ে যাচ্ছে। তার বিজেপি-তে যোগ দেওয়াই এর প্রতিফলন। আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে, তিনি বলছেন, বিজেপি একমাত্র সর্বভারতীয় পার্টি যারা তৃনমূলেকে প্রতিরোধ করছে। অথচ আর্থ-সামাজিক পলিসিগুলো যে দুটি পার্টির একইরকম সেইদিকে হয়তো তিনি ধ্যান দেননি। হাইকোর্টের বিচারক মানে তিনি শুধু রাজ্যের নয় সমস্ত দেশেরই সর্বোচ্চমানের বিচারক হিসাবে গ্রণনযোগ্য। তিনি এত বছর বিচারক থাকার পরেও বিচার ব্যবস্থার গৌন সীমাবদ্ধতার কথাই কেবল বললেন মুখ্য সীমাবদ্ধতা বেমালুম অগোচরগ্রস্থ হয়েছে। আবার যখন রাজনীতিতে যুক্ত হলেন সেখানেও এন্টাগনিজম-ই প্রধান হয়ে দাঁড়ালো। সেক্ষেত্রেও বিজেপি-র থেকে ভালো তৃনমূল-বিরোধী দল উনি আর খুঁজে পেলেন না? বিজেপি জয়েন করার কারন হিসাবে, বিজেপি “সর্বভারতীয় দল” এই ব্যপারে উনি জোর দিয়েছেন। এখানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট, নীতিগত লড়াই নয় বরং মিডিয়াতে তৈরি করা যে হাইপাররিয়েল এন্টাগনিজম, সেটাই মুখ্য।

    এখন, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া ইতিহাসের এক বিখ্যাত বিচারকের কথা মনে করিয়ে দেওয়া দরকার। দার্শনিক হিসাবেও খ্যাতি লাভ করা সেই বিখ্যাত বিচারক হলেন কার্ল স্মিট। ১৯২৭ সালে ‘'দ্য কনসেপ্ট অফ দ্য পলিটিক্যাল” রচনায় তিনি রাজনীতির বন্ধু-শত্রু পরিচয় ও বিভেদের এক বালখিল্য ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীকালে সেই বিচারক নাৎসি পার্টিতে যোগ দেন। নাৎসিদের গনহত্যা নিয়েও তার কোন নীতিগত সমস্যা ছিল না। কারন তার ব্যাখ্যা থেকেই বলা যায়, বন্ধুর সাথে সহমর্মিতা এবং শত্রুর সাথে বিরোধ-ই রাজনীতির ভিত্তি, বিরোধী দমন-ই তার লক্ষ। অর্থাৎ শত্রুর পরিচয়ের মধ্য দিয়েই বন্ধুর পরিচয় ঘটে। রাজনীতি থেকে নীতির বিয়োগ ঘটে। এখানে ব্যক্তিত্ববাদ প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। এখানে নৈতিক খেসারত ব্যক্তির নৈতিকতা। নীতির বিয়োগ ঘটিয়ে নৈতিকতা আঁকড়ে ধরা মানে পুরোনো সমাজ এমনকি তার পচনশীলতাগুলোকেও আঁকড়ে ধরা।

    জার্মান দার্শনিক ভালটার বেঞ্জামিন বলেছেন, প্রত্যেক ফ্যাসিবাদের পেছনে একটা বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে মানুষ রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটালেও বিপ্লব ব্যর্থ হয়। তিরিশের দশকে হিটলার ক্ষমতায় আসে। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানির রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করে বেঞ্জামিন এই সিদ্ধান্ত দেন। ইতালির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার এক জঘন্য পরিনতিকে ফ্যাসিবাদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তবু, ইংল্যান্ডে পিউরিটানীয় বিপ্লবের পরবর্তীকালে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইতিহাস, ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ফ্রান্সের ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে বিপ্লবী ব্যবস্থাকে প্রতিহত করে যখনই রেস্টোরেশন হয় সেই ব্যবস্থায় কোন প্রগ্রেসিভ এলিমেন্ট থাকে না। আধুনিক রাষ্ট্রের বুর্জোয়া ব্যক্তিত্ববাদী ব্যবস্থার মূলগত পরিবর্তন না ঘটিয়ে রেসিডুয়াল হেজেমনি যখন ডমিনেন্ট হেজেমনি হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, সেটাই ফ্যাসিবাদ। ফলে, যে কোন রক্ষনশীল রাজনীতির একমাত্র পরিনতি ফ্যাসিবাদে পর্যবসিত হওয়া। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, তিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাই সিপিআইএম-এ জয়েন করলেন না। ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বা না করা কোনো অপশন নয়, এটা চিন্তার মূলগত ভিত্তি, চিন্তার সম্পূর্ণ জগৎকে প্রভাবিত করে। ঠিক একইভাবে “কোন পার্টিতে যুক্ত হব?” এটা কোন এমসিকিউ নয়। আমি কোন পার্টিতে যুক্ত হবই কেনো, এই প্রশ্নটা করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। লক্ষ্য  করতে হবে, কোনো বামপন্থী দলে যোগ না দিয়ে তিনি এক চরম ডানপন্থী রক্ষনশীল দলে যোগ দিলেন। অর্থাৎ, ওই ডানপন্থী দলের রক্ষনশীল চিন্তার সাথে ওনার মূলগত নৈতিক বিরোধ নেই। তিনি বিরোধীপক্ষ লক্ষ্য করে আঁতাত গড়েছেন, অথচ বিরোধীপক্ষ কে? তার সাথে তার দলের পলিসিগত পার্থক্য কোথায়! বাবরি মসজিদ ধ্বংস, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার উচ্ছেদ, ইলেক্টোরাল বন্ড, চন্ডীগড়ের নির্বাচন এবং শোষনমূলক কৃষি ও শ্রম আইন প্রনয়ণ এগুলির কি নৈতিক ব্যখ্যা দেবেন! এখানে ন্যায়ের পরিভাষায় কোন ব্যখ্যা নেই। কার্ল স্মিটে-র মতোই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিকে ভালো-খারাপ বিরোধে ভাগ করে নিয়েছেন এখানে সত্যানুসন্ধানের অভিধা লোপ পেয়েছে। এই পথ হল, যাকে বলে কুল-দ্য-সাক, ফ্যাসিবাদের বন্ধ্যাত্ব ছাড়া এই পথ আমাদের আর কোথাও নিয়ে পারে না।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • @r2h | 2a0b:f4c2:2::61 | ১০ মার্চ ২০২৪ ০৮:৫২529184
  • দীর্ঘদিনের মাকুত্ব বাংলাকে বাইরের চোখে বড় হীন করে দিয়েছে। এখন থাবড়া খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
  • Arindam Basu | ১০ মার্চ ২০২৪ ০৯:২৫529187
  • কোর্ট, রায়দান, আর হিন্দুত্বের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে বহুশ্রুত/বহুদেখা এই ভিডিওটি আরেকবার শেয়ার করা যাক (বাজপেয়ীর সেই কুখ্যাত জমিন সমতল করনা পড়েগা র কনটেকস্ট), আজকের গাঙ্গুলীবাবু সেইদিনকার বিষবৃক্ষের ফল বই আর কিছু নন,
     
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন