এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • আবার মোহনের মানুষখেকো - ৬

    উপল মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৭৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | | | | | |
    ছবি: সুনন্দ পাত্র


    (৬)


    সকাল হল।যথারীতি অনেক ছাপ রেখে রিসর্টের খোলা চত্বর ছেড়ে জঙ্গল চলে যায়। আমাদের ঘরের ভেতরটায় বারান্দার দিক থেকে রোদ্দুর ঢুকে পড়ে। বাঘা যথারীতি সবচেয়ে আগে উঠে পড়েছে। বারান্দা থেকে কুমু জানলা দিয়ে উঁকি মারছে । ওর মুখে ব্রাশ আর একগাদা ফেনা বেরিয়ে পড়ব পড়ব করছে । আমি বললাম , '' বকবকানি শুরু করিস না এখুনি মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে। ''রাজু তখনো শুয়ে, শুয়ে শুয়ে বলল , '' কথা শোন , কথা শোন। দাদা যা বলছে শুনে যা ,আখেরে লাভ হবে। ''

    ----- আরম্ভ হল সকাল থেকে।
    ----- এমনিই বলছিলাম।
    ----- এমনিই শুয়ে না থেকে চানটান করে নে।
    ----- বাথরুমে পার্থ ঢুকেছে।
    ----- ওটাকে তাড়াতাড়ি বেরোতে বল।
    ----- আধ ঘন্টা ঢুকেছে।
    ----- ল্যাদখোর।
    ----- বরাবরের।
    ----- আর একবার চা দিতে বল।
    ----- একটা সিগারেট দে না।
    ----- জঙ্গলে কিন্তু একটাও খাবি না।
    ----- লুকিয়ে। একটা দুটো ?
    ----- সাফারির সময় নয়।
    ----- কখন গাড়ি আসবে ?
    ----- সাফারির গাড়িতেই নিয়ে যাবে এফ আর এইচ।
    ----- তারপর তিন রাত আমাদের সঙ্গে থাকবে।
    ----- ওই গাড়িটাই থাকবে।
    ----- তাই তো কথা হয়েছে।

    বাঘার আগেই চান হয়ে গিয়েছিল পার্থ বেরোতে আমি আর রাজু বাথরুম নিয়ে কাড়াকাড়ি করছিলাম। কুমু ফিটফাট হয়ে এসে বলে ,'' আমার ঘরে চলে যাও। গিজার দেওয়া আছে। '' রাজু বলল , '' বডিস্প্রে মাখিসনি তো ? জঙ্গলে চলবে না কিন্তু। ভিমরুল তাড়া করবে। '' কুমু বগলটা রাজুর দিকে এগিয়ে বলে ,'' শুখে দেখ, দেখ । '' রাজু বিছানার ওপর দিয়ে গড়িয়ে পালায় বাথরুমের দিকে। আমিও কুমুর ঘরটায় বাথরুম সারতে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা বারোটা আক্রাম ভাই আমাদের জন্য জিপসি নিয়ে এল। সকালের সাফারিটা আজ করাবে না বলে ইচ্ছে করে দেরি করেছে। ওটা শেষ দিন ,ফেরার দিন সকালে করিয়ে দেবে। এসব পুরোনো ছক , দারুণ ছক, তাতেই সবাই বাঁধা পড়ে। এসব নিয়ে আর কিছু বলিনা আজকাল, বলে লাভ নেই। ড্রাইভার কাম গাইড ছেলেটার এক কানে রুপোর দুল , চুল কোঁকড়া ,চোখে সুরমা লাগান। বাঘা দেখে বলল , '' পুরো বিন্দাস মালটা। '' কুমু বলল , '' পুরো। '' আমি আক্রাম ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ,'' আগের বার আলম ছিল না ।'' ও বলে , '' আলমই থা। ''
    ----- জব মালানি এফ আর এইচ গেয়া ।
    ----- জি মালুম হায়। আলম অভি ফরেনার লোগোকে সাথ গর্জিয়া এফ আর এইচ মে। এ লেড়কা ভি আচ্ছা।
    ----- দেখো বাবা ডোবাবে না তো।
    ----- নেহি নেহি আচ্ছা গাইড।
    কুমু বলল , '' নির্ঘাত ডোবাবে। ''
    ------ বেশি স্মার্ট মনে হচ্ছে। ক্যা নাম হায় ভাই।
    ছেলেটা খুবই বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দেয় , '' জি মকুল।'' মুখ খুলতেই ছেলেটাকে আর ততো ওপর চালাক লাগে না। এরকম অনেক সময় হতে থাকে কাউকে দেখে একরকম মনে হয় মুখ খুলতেই দেখা যায় সে মানুষ আলাদা। খুবই তৎপরতার সঙ্গে জিপসিতে মালপত্র তুলতে থাকে মুকুল। ও নিশ্চয়ই আলমকে চেনে। কুমুকে বললাম ,'' জিজ্ঞেস কর না, আলমকে চিনতে পারে কিনা। ''
    ----- কোন আলম ?
    ------ ওমা ভুলে গেলি ! মালানির সাফারিতে আমাদের গাইড ছিল।
    ------ ও। ঠিক আছে এবার তো ধিকালাতেই যাচ্ছি।
    ------ তো ?
    ----- দেখি ওখানে দেখা হয় কিনা।
    ----- দেখা ?
    ----- মনে নেই ওর তো ধিকালাতেই বাড়ি।

    মালপত্তর নিয়ে চললাম ধিকালা এফ আর এইচ-বনবাংলোর দিকে। সারা এলাকাটা করবেটের নামে । রিসর্টের নাম করবেটের নামে, মদের দোকানের নাম করবেটের নামে। মুদির দোকানের নাম করবেটের নামে। চুল কাটার দোকানও। গিজগিজ করছে লোক আর সব জায়গায় করবেট বসে আছেন। দেখছেন, শুনছেন। সন্ধের দিকে, রাতের বেলায় যে আদমখোরের ভয়ে আচ্ছন্ন ছিল সবাই। সেই ভয় কী করে চলে গেল? রিসর্টের পাশেই যে নালা সে রাতের চুপচাপ ছেড়ে কখন আবার জোরে শব্দ করে বইতে শুরু করেছে।
    সেই জলের আওয়াজটা কানে নিতে নিতে জঙ্গলে ঢুকতে থাকি দিনের বেলা, রাতে আবার জঙ্গল বেড়ে বেড়ে সব কিছু ঘিরে ফেলার আগেই আমাদের এফ আর এইচের নিরাপত্তায় ঢুকে যেতে হবে বনবাংলোয় যা সাহেবরা তৈরি করে দিয়ে গেছে আমাদের জন্য।
    জঙ্গলের পথে ধনগড়ি গেটের দিকে যেতে যেতে বুঝি একটা কিছু আমাদের নিয়ে যাচ্ছে যাকে বাহন, বলে আর গেটের চেক পয়েন্টে পৌঁছে সেই বাহনকে আঁতিপাঁতি খুঁজে দেখছে ফরেস্ট গার্ডরা। কোন মদ আছে কিনা, দেশলাই আছে কিনা। সিগারেট আছে কিনা, চিপসের ক্যাচড়া আছে কিনা সব দেখছে। আর পেলে রেখে দিচ্ছে ফেরার সময় ফেরতের আশ্বাস দিয়ে। অসংখ্য মানুষের জঞ্জাল সব তুলে রেখে দিচ্ছে আর বাহনের নাম ঠিকানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কজন আছি। কে কে আছি সব লেখা হয়ে যাচ্ছে এমনভাবে যাতে বাহনটা ,জিপসিই যে জঙ্গলের পথে সব এটা বার বার প্রমাণ হতে থাকে। আমাদের পরিচয় বড্ডজোর এতো নম্বর জিপসির ,ততো নম্বর লোক ছাড়া আর কিচ্ছু নয়। আর হতেই বা যাবে কেন যখন ধিকালা পর্যন্ত আঠেরো কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে হাঁটা তো দূরের কথা , নামাও একদম বারণ।
    প্রথমে জিপসির আঁতিপাতি , তারপর ব্যাগ ট্যাগ প্রত্যেকের পরিচয়পত্র সব দেখা শেষ হয়ে যাবার পর যখন আর দেখার কিছু, খোঁজার কিছু, পাওয়ার কিছু পেল না তখন আমরা এগোলাম ধিকালার রেঞ্জের ঢোকার প্রবেশ দ্বার ধনগড়ি গেট ছাড়িয়ে আমাদের ঠিকানা ধিকালা এফ আর এইচে যাবার রাস্তায়। সামনে এগোলে একটা তোরণ আর দেওয়ালের মতো। সেই দেওয়ালে একটা জঙ্গলের ইলিবিলি ছবি গাছ, লতা, ফুল সব সেই ছবিতে অনেক বড় বড় করে আঁকা। সেই সব আঁকা আর দেওয়াল জঙ্গলের কথা মনে পড়াচ্ছিল। জঙ্গলের এই আঁকার ভেতর থেকে আরেক আঁকা আমাদের দেখছে। সেটা আর কারুর নয় জিম করবেটের একটা গোঁফওলা কোট পরা ছবি। পুরোটা নয় , বুক অবধি করবেট। সেই ছবিতে জিমের মাথায় কোন টুপি নেই তাই জঙ্গলের রোদ্দুরের তাপ এলে তাঁর কমে আসা চুলের মাথা ধরে যাবে। তখন সকাল পৌনে একটা, প্রচণ্ড রোদ উঠেছিল। এপ্রিলের গরমের মধ্যে আমরা দেখলাম জিম করবেট আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমাদের ছাড়িয়ে আরো অনেক পেছনে দেখছিলেন করবেট। বনের রাস্তা ধরে সুলতান এফ আর এইচ পার হবার আগেই আমার প্রচণ্ড মাথা ধরে গেল। সুলতানে কলের জলে মাথা ধুয়ে সুস্থ বোধ করলাম। সুলতান ছাড়িয়ে খানিকটা যাবার পর মুকুল গাড়িতে ব্রেক কষে চেঁচিয়ে উঠল,”টাইগার। বেঙ্গল টাইগার।'’ রাস্তার ওপরেই গাছের ছায়ায় একটা বাঘ বসে হাঁপাচ্ছে। আমি রাজুর দিকে তাকাতে সে বলল, 'গন্ধ পাচ্ছি না, একদম না।' আমি , বাঘা, পার্থ আর কুমু ওর দিকে তাকাতে দেখি রাজু ছবি তুলছে আর বলছে, “আদমখোরের গন্ধ পাচ্ছি না।‘’
    দেখি দেওয়ালের ছবির মধ্যে থেকে করবেট আমাদের ছাড়িয়ে আরো দূরে কিছু দেখছেন।ওনার চোখে চোখ রেখে দিনের বেলার জঙ্গলের ভেতর দেখা যাবে কিছুদিন আগের একটা ঘটনার হুবহু ছবি। ঘটনাটা আদমখোরকে নিয়েই , এ তারই গল্প একথা ভাবতেই কে যেন বলে উঠছে :

    ----- মোটেই না !
    ----- করবেটের চোখের দৃষ্টি আর কার কথা বলতে পারে ?
    ----- কেন ববিচাঁদের কথা।
    ----- করবেট ববিচাঁদের কথা বলবেন কেন খামোখা ?
    ----- কারণ এক আদমখোরেরও গল্প বটে।
    ----- ববিচাঁদ আর আদমখোর ?
    ----- মোহনের।
    ----- আবার?

    দেখা গেল ধিকালার ধনগড়ি গেট দিয়ে ববিচাঁদ সর্ফদুলির দিকে যাচ্ছিল। ববিচাঁদ উত্তরাখণ্ডের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের ঠিকা কর্মী, আট হাজার টাকা মাইনে পায়। বাড়ি মোহনের বাজারের কাছাকাছি। ছিপছিপে ববিচাঁদ বাইকে চড়ে ডিউটিতে যাচ্ছিল সকাল সাতটা নাগাদ। সর্ফদুলির বিট অফিসে রিপোর্ট করতে হবে তারপর কয়েকজনে মিলে রাউন্ডে বেরোবে। সঙ্গে একজন বন্দুকধারী থাকতেও পারে নাও পারে , বাকিদের হাতে লাঠি আর ওয়াকিটকি। কিন্তু তার আর রিপোর্ট করা হয়ে ওঠে না। মাঝ রাস্তায় আদমখোর তাকে ধরে ফেলে। ববিচাঁদদের বাইক উলটে যায়। সে পড়ে গেলে বাঘ তার ওপর চেপে বসে, গলা ধরতে যায়। তার ফুসফুস ফেঁড়ে যায় থাবার ঘায়ে । দুটো হাত দিয়ে সে নিজের গলা বাঁচাচ্ছিল।সে সময় তার পরিবারের অন্যদের কথা যদি তার মনে পড়ে তবে বাঁচাচ্ছিল পরিবারকেও। তবে তার সম্ভাবনা খুবই কম , সেসময় নিজের প্রাণ বাঁচানো ছাড়া অন্য কারু কথা মনে পড়ার কথা কি ? বাঘের গায়ের বোটকা গন্ধ ববিচাঁদ অবশ্যই পেয়েছিল তবে ভয়াল আওয়াজও করছিল আদমখোর ফলে শব্দ আর গন্ধের মধ্যে শব্দের স্মৃতিটাই রয়ে গেছে অনেকটা। এই সময় একটা জিপসিকে সিনে এন্ট্রি মারতেও দেখা যাচ্ছে। জিপসিটা ধনগড়ি গেট থেকে ধিকালা এফ আর এইচের দিকে যাচ্ছিল। বাঘ ববিচাঁদকে পেড়ে ফেলেছে দেখে ওটা প্রবল গোঁ গোঁ আওয়াজ মারে আর সঙ্গে তীব্র হর্ন। সেই শুনে আদমখোর ববিচাঁদকে ছেড়ে কাছেই এক খয়ের গাছের তলার ঘন ঝোপে ঢুকে পড়ে আর ও কোনমতে পালিয়ে জিপসিতে ওঠে। আদমখোর ছকটা ধরতে পেরে যায়। এই রকম নেলাবেলা মানুষের বুদ্ধি থেকে সে অনেক কিছু শিখেছে। সে আবার ছুটে এসে জিপসির পেছনের বনেটে মারে। একটা ঘ্যাং করে জোর শব্দ হওয়ায় বাঘ ভাবছে কীরকম হল। সে পেছিয়ে যাচ্ছে। জিপসিতে তার শিকার পালাচ্ছে দেখে আদমখোর আরো দুবার জিপসিকে আক্রমণ করতে গিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি ববিচাঁদকে নিয়ে জিপসিটা পালিয়েছিল। নেহাতই যন্ত্র হওয়ায় জিপসির কিছু হয় না ও সে ববিচাঁদকে বাঁচায়। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বড় বড় সাহাবরা ববিচাঁদের খুব দেখভাল করেছিলেন । মোহনের আদমখোরই যে ঘুরে ঘুরে এই আক্রমণ করছে এরকমই বলছেন তাঁরা। ওই সাহাবরাই ওকে দিল্লীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ফুসফুস ঠিক করান যা বাঘের থাবায় ভালো রকম ঘা খেয়েছিল। জিজ্ঞেস করতে একজন সাহাব বললেন ববিচাঁদের পরিবারের কথা তাঁরা সব সময় ভাবেন।
    এ সময় আমি মুকুল বলে আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড ছেলেটির দিকে তাকালাম। আমাদের বেঙ্গল টাইগার দেখাতে পেরে সে খুব আনন্দিত হয়েছে ,যাকে খুশি হওয়া বলে। বাঘটাও একটা হলদে রঙের সাব অ্যাডাল্ট কিছুদিন আগেও মায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে ঘুরত। আরো বড় হলে ঐ ছেলে বাঘটার গায়ের রঙটা সোনার মতো হবে। আমি মুকুলকে জিজ্ঞেস করলাম, '’তুমিই কি সেদিন ববিচাঁদকে বাচিয়েছিলে?'’ মুকুল আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকাল, তারপর বলল, ‘'কোউন ববিচাঁদ ?'’
    -----ওহি আদমখোরওয়ালা ববিচাঁদ ।
    -----বাপরে! ও তো মোহিত ভাইয়া থা!
    ----- কোন মোহিত ভাইয়া?
    ---- ওহি আদমখোরওয়ালা মোহিত ভাইয়া, মেরে তরাহ গাইড হ্যায় না।
    ---- আদমখোরওয়ালা ?
    আমরা মোহিতকে দেখতে পাইনি, এতো জিপসি চলে ধিকালাতে , এত অজস্র ড্রাইভার , গাইড যে তার মধ্যে কোনটা মোহিত আর কোনটাই বা তার জিপসি এটা বোঝা দুরূহ ব্যাপার। তবে তার জিপসিকে দেখেছিলাম কি ? এরকমতো হতেই পারে ওই একই গাড়ি মুকুল চালাচ্ছে অথবা পাশ দিয়ে অনবরত যে গাড়িগুলো যায় তার কোনটা সেই গাড়ি হতেই পারে যা নিজে বনেটে থাবার ঘা খেয়েও ববিচাঁদকে বাঁচিয়েছিল। ওই একই গাড়ি মুকুল চালাচ্ছে কি ? বাঘা বলল, ''না''।
    ----- তুই কি করে জানলি ?
    ----- বোনেটটা দেখলাম ঠিকঠাক আছে।
    ----- তাই ?
    ----- হ্যাঁ। একদম ঠিকঠাক।
    রাজু ক্যামেরা নিয়ে পড়েছে। পার্থ চুপচাপ আর কুমু বলে ,'' এতটা সিওর হচ্ছ। "
    ----- কেন ?
    ----- জঙ্গলের কোন জায়গাটায় ?
    ----- মানে ?
    ----- আক্রমণের জায়গাটা দেখেছ ?
    ----- না। বুঝব কীকরে ?
    ----- সেটাই তো। সিওর হয়ো না।
    ----- এরকম ভাবছিস কেন ?
    ----- বাঘটা কোন দিক থেকে এসেছিল ?
    ------ বলছে তো পেছন দিকে।
    ------ সে তো প্রথমবার , বাকি দুবার ?
    ----- তাই তো।
    -----আর দুবারই যদি পেছনদিক থেকে আসে, পেছনের বোনেটেই দুবারই থাবা মেরেছিল কি ?
    ----- তা কীকরে হবে ?
    ------ ঠিক তাই, তিনবারই থাবা মেরেছিল কিনা। মারলেও একই দিক থেকে তিনবারই নাও মারতে পারে।
    ------ তাহলে ?
    ------ সব গাড়ির খুঁটিনাটি না দেখে কিচ্ছু বলা যাবে না।
    ----- বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা ।
    ----- বলছ গাড়ি সরিয়ে ফেলেছে ?
    ----- তাই তো।
    ----- সেটাই তো বলছি সিওর হয়ো না।
    বাঘা কোনো উত্তর দিল না। সেও রাজুর মতো অজস্র ছবি তুলছিল বাঘের, যার কোনো গন্ধ সে পায়নি বলছে । রাজু বলল, “এটা কোনভাবেই আদমখোরটা নয়। একটা সাব অ্যাডাল্ট।‘’
    ----- কিন্তু তার বাচ্চাটাও তো হতে পারে?
    ----- বাচ্চা?
    ----- আদমখোরটা মেয়ে হলে তার সাব অ্যাডাল্ট বাচ্চা থাকতে পারে না।
    ----- তা পারে ।
    ------ সে হয়তো মায়ের সঙ্গে ঘুরে আদমখোর হয়েই আছে।
    ----- এখন তো আলাদা ঘুরছে।
    ----- একবার আদমখোর হলে আর দেখতে হবে না।
    ----- স্থায়ী ভাবে আদমখোর নাও হতে পারে।
    ----- তাই ?
    ----- অন্য জানোয়ার মারার জন্য বসে ছিল ,মানুষ চলে এল ….
    ----- খেয়ে নিলো ?
    ----- নিতেই পারে যদি খিদের মুখে পায় । ভয় পেয়েও মেরে দিতে পারে।
    ----- তাহলে আদমখোর -মানুষখেকো একটা ট্যাগ ?
    ----- ডেফিনিটলি একটা বদনামই বটে , গুলি মারার ছাড়পত্র।
    ---- তাহলে মূল প্রশ্ন একটা থেকেই গেল।
    ----- কী ?
    ----- আদমখোর বাঘটা ছেলে না মেয়ে।

    অনেকক্ষণ গরমের মধ্যে মাঝ রাস্তার পাশে ছায়ায় বসে বাঘটা ফটোশুটের মতো ছবি তুলতে দিয়েছিল। বাঘটা হঠাৎ উঠে চলে যাওয়ায় এই সময় আমরাও চলে যাই। আমাদের যে নিয়ে যাচ্ছিল তার নামও ছিল জিপসি। সেও এক যন্ত্র ছিল যা আক্রমণ হলে আদমখোরের হাত থেকে ববিচাঁদকে বাঁচিয়েছিল। তফাৎ হল সেটা যে চালাচ্ছিল তার নাম মোহিত। এটা জানতে পারলাম।




    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    | | | | | | | |
  • ধারাবাহিক | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৭৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • upal mukhopadhyay | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৪৪528594
  • ধনগড়ি থেকে ধিকালা এফআর এইচ আঠেরো নয় একত্রিশ কিমি।
  • | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:০৭528615
  • এই ধারাবাহিক ভাল লাগে। 
     
    আমার একটা অন্য প্রশ্ন আছে। ঢিকালা এফয়ারেইচএর হাটমেন্ট সেকশানের ঘরগুলো যেগুলোর সামনে রামগঙ্গা দেকগা যায়, ওইগুলোর বুকিং কীভাবে পাওয়া যায়? অনলাইনে যখনই চেষ্টা করি দেখি খালি নেই। 
  • upal mukhopadhyay | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৩528641
  • প্রতি সোমবার ১০ টা না সাড়ে দশটায়  খোলে। আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে বুক করতে হবে ১৫ নভেম্বর -১৫ জুনের মধ্যে। এখন থেকেই করবেট ভার্সন ৩ খুলে বসে থাকুন। laugh
  • | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:৫৪528647
  • আচ্ছা আচ্ছা ধন্যবাদ। smiley
  • upal mukhopadhyay | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৪528658
  • প্রতি সোমবার ১০টায় সাইট খোলে।
  • Prativa Sarker | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৭528699
  • হাইলি ইন্টারেস্টিং ! 
  • ইন্দ্রাণী | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৩528755
  • প্রথম পর্বে সবার বায়নোকুলার নিয়েই কথা হয়েছিল, শেষ হয়েছিল করবেটের বায়নোকুলার দিয়ে, তখন থেকেই ভাবছিলাম ...

    আর একজন অবলোকনকারী ঢুকে পড়লেন আখানে- স্বয়ং করবেট এবারে।
    সময়ের মধ্যে সময়ের ঢুকে পড়া, বদলে বদলে যাওয়া অবলোকনকারী , মানুষের খুব কাছে এসে পড়া জঙ্গল বা তার কাছেই যাওয়া - সব মিলিয়ে এই আখ্যানের অনন্য শৈলী। সত্যি অনন্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন