এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ভ্রমণ কাহানি  (৩)  : উপল  মুখোপাধ্যায়  

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ৪১৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | |
     রাতে মিঠু বলল ," হয় নাক ডাকা বন্ধ করবে, নয়ত… " আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম , কী বলতাম কে জানে ? এই সময় বাবাইয়ের ফোন এল।  বাবাই বলল , " বল। " আমি দেখলাম মিঠু উঠে চলে যাচ্ছে পাশের ঘরে। ওর পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।  আমি জানি ও পাশের ঘরে ঢুকবে। সেখানে দরজা খোলার আওয়াজ হবে খুট করে।  এই ঘরে আগে প্রচুর কিছু ছিল যা বাড়িটাকে গমগমিয়ে রাখত। ওটা ছিল আমাদের এক লোতা মেয়ে ঝিনকির ঘর।   যেখানে আমাদের মেয়ে ঝিনকি শুতো আর ও গুরুগ্রামে চাকরি নিয়ে চলে যেতে ঘরটা খালি পড়ে আছে ,ওই মহিলা কক্ষটা। সেখানে ঝিনকি এলে ওঠে আবার চলে গেলে ফাঁকা পড়ে থাকে।  না, ফাঁকা পড়ে থাকা কথাটা ঠিক বললাম না। ওখানে ঝিনকির প্রিয় ছবিরা থাকে , শব্দেরা , গন্ধেরা।  কোথা থেকে কোথা  থেকে জোগাড় করে একগাদা মুখোশ রেখে গেছে ঝিনকি , সেই মুখোশগুলো তাকায়। যার দিকে তাকায় আসলে তার অনেক পেছনের কিছু একটা দেখে।  মুখোশদের মুখে কোন ভাবলেশ নেই , তাদের চোখে পলকও পড়ে না ফলে কী দেখছে, কেন দেখছে কিছুই বোঝা যায় না  । পিছনের দিকে তাকায় বলে এমনটা ভাবা যেতে পারে যে সব মুখোশরাই দূর অতীতের দিকে দেখছে। এইভাবে একগাদা রহস্যময় মুখোশ রেখে ঝিনকি কেটে পড়েছে পেশার টানে। ঘরটা অধিকাংশ সময় অন্ধকার থাকে,  তখন সে ঘরের সব জিনিস অন্ধকারে এ ওর সঙ্গে কথা বলে নিঃশব্দে। মিঠু ওই ঘরটা রোজ নিজের হাতে পরিষ্কার করতে ঢোকে।  ওই মহিলা কক্ষ সে কাজের লোকের হাতে কিছুতেই ছাড়বে না। সেখানে মাঝে মধ্যে ড্রামের আওয়াজ শোনা যায় , ঝিনকির প্রিয় বাদ্য ড্রামেদের তালে তালে কেউ নাচে কি ? ওই ঘরে মিঠু ঢুকে গেল ,  সেখানে ও  চলে গেলে বাবাই আর আমি কথা বলতে শুরু করে দিয়েছি। নিস্তব্ধ আমাদের বাড়িতে এখন এই রাতে সব শব্দ শোনা যাচ্ছিল , শুনলাম   মিঠু এসি অন করেছে , তার একটা মৃদু আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 
    বাবাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ওই আওয়াজটা আর শোনা যায় না, শোনার বাইরে কোথাও থেকে যায় । তখন শুধু কথোপকথন হতে থাকে , শুধুই কথোপকথন। বাবাইকে বলেছিলাম," রওনা দিচ্ছি। ''
    ------ দাও।
    ------ তোদের ওখানে যাচ্ছি।
    ------ এসো।
    ------ অনেক জায়গায় থাকতে হবে।
    ------ তাতো হবেই। পুরোটা গাড়িতে আসবে , দুবার তো রাস্তাতেই হল্ট।
    ------ আপ -ডাউন দুটোই রায়গঞ্জে থাকছি।
    ------ কোথায় ?
    ------ রায়গঞ্জ।
    ------ রায়গঞ্জে কোথায় ?
    ------ রায়গঞ্জ থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে তোদের ডিপার্টমেন্টের  বাংলোয় , আমার বন্ধু এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার।
    বাবাই নাম জিজ্ঞেস করল না দেখে একটু আশ্চর্য লাগল। আমি বললাম ," তোদের সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার , নাম জিজ্ঞেস করলি না ?"
    ------ কী হবে জিজ্ঞেস করে ?
    ------ সেকি রে !
    ------ কিছু একটা নাম নিশ্চয়ই হবে।
    ------ বাবা ! এর মধ্যেই বৈরাগ্য !
    ------ ধুর ভাল্লাগছে না।
    ------ এর মধ্যেই ?
    ------ হ্যাঁ। সব চোর !
    ------ তুই যে বললি নর্থ বেঙ্গল অনেক ভালো।
    ------ বলেছিলাম ….।
    ------ দাদা তখন কিন্তু বলেছিল।
    ------- কী ?
    ------- সব  জায়গা একই রকম।
    ------- ওটা  কী বলতে লাগে ?
    ------ তা নয় , ওতো দূর মিছিমিছি গেলি !
    ------ মিছিমিছি নয় আগে সত্যিই অনেক ভালো ছিল।
    ------ আগে কী সুন্দর দিন  কাটাইতাম !
    ------ সে বলতে পারবো না।
    ------ ঠকে গেলি তো ?
    ------ মোটেই না ! এখনো অনেক ভালো নর্থ বেঙ্গল!
    ------ তবে ?
    ------ একটা লোক এসে সব গণ্ডগোল পাকিয়ে দিল !
    ------ কে ?
    ------ যাকগে ছাড়  অফিসের কথা ।  কবে বেরোচ্ছ ?
    ------ একাদশীর দিন।
    ------ প্রথমে  রায়গঞ্জ ?
    ------ তারপর দিন কার্শিয়াং বুক করলাম।
    ------ কোথায় ?  চিমনি গ্রামে ?
    ------ না কার্শিয়াং টুরিস্ট লজ।
    ------ এন এইচ থারটি ওয়ানের ওপর।
    ------ হ্যাঁ।
    ------ ওকে , তারপর
    ----- মংপং নেমে এসে জয়ন্তী যাব।
    ------ ঠিক করেছ ?
    ------ মংপং বুক করেছি।
    ------ জয়ন্তী ?
    ------ ফোন করছি রাজাকে ?
    ------ সাফারি ?
    ------  নেপালদা কে ফোন করছি।
    ------ কর।
    ------ করছি।
    ------ আর কোথায় ?
    ------ তোর  ওখানে একদিন ….
    ------  কবে আসবে ?
    ------ দেখি।
    ------ মনে হয় পারবে না যা টাইট শিডিউল করেছ ।
    ------ দেখি।
    ------ এক কাজ কর।
    ------ কী ?
    ------ মংপং থেকে কোথায় যাবে ?
    ------ আশেপাশে ঘুরব।
    ------ আপার ফাগুর দিকটা চলে যাও , ঝান্ডি অবধি।
    ------ ঝান্ডি ?
    ------ হ্যাঁ , ঝান্ডি অবধি যাবে।
    ------ কতটা ?
    ------ মংপংয়ের রাস্তাটা ধরে ওদলাবাড়ি ?
    ------ চিনি।
    ------ তারপর ডামডিম মোড় ?
    ------ চিনি।
    ------ ডামডিম মোড় ধরে সোজা গরুবাথান ?
    ------ চিনি।
    ------ গরুবাথান বাজারটা ছাড়িয়ে তলায় নেমে গেছে রাস্তাটা ?
    ------ আচ্ছা।
    ------ সেই রাস্তা দিয়ে নেমে , উৎরাই ধরে নামবে।
    ------ আচ্ছা।
    ------ নেবে চেল নদীর খাত।
    ------ আর ঘিস নদী ?
    ------ বললাম তো চেল নদী , চেল।
    ------ হ্যালো ?
    ------ বলছি , শুনতে পাচ্ছ।
    ------ বলছিলাম চেল নদী।
    ------ আচ্ছা।
    ----- চেল নদীর  ওপর একটা ব্রিজ।
    ------ ও।
    ------ সেই ব্রিজ টপকে তুমি লোয়ার ফাগু নামছ।
    ------ আচ্ছা।
    ------ লোয়ার ফাগু থেকে চাবাগানের মধ্যে দিয়ে পথ গেছে।
    ------ কোথায় ?
    ------  আপার ফাগুতে।
    ------ আপার ফাগু ?
    ------ হ্যাঁ। অপার ফাগু গেলে ?
    ------ চলে গেছি !
    ------ কোথায় ?
    ------ আপার ফাগু !
    ------ ওতো সোজা নয়।
    ------ কেন ?
    ------ ঘরে বসে বসে চলে গেলে ?
    ------ তুই যেরকম বলছিস পরপর তাতে চলে না গিয়ে উপায় আছে ?
    ------ শোনো না , সব লিখে হোয়াটস্যাপ করছি। এখন শুনবে তো নাকি !
    ------ বল বাবা বল !
    ------ বলছি , আপার ফাগু গেলে ?
    ------ আচ্ছা।
    ------ সেখান থেকে বাঁ দিক চেপে পাহাড়ি রাস্তাটা আরো খাড়াই উঠবে।
    ------ হ্যাঁ।
    ------ ওটা  ঝান্ডিতে যাচ্ছে ।.
    ------ আচ্ছা।
    ------ খুব ভালো ভিউ পয়েন্ট।
    ------ এতদূর গিয়ে আবার মংপংয়ে ফিরতে পারব ?
    ------- পারবে , পারবে।
    ------- আচ্ছা।
    ------- পরদিন কী প্রোগ্রাম ?
    ------- পরদিন লালিগুরাস পয়েন্ট চলে যাও , রকি আইল্যান্ড।
    ------- ঝালং- বিন্দু ?
    -------  যেতে পার। সময় নেবে সারাদিন। এক কাজ কর।
    -------  কী  ?
    ------- ঝালং- বিন্দু ঘুরে বানারহাটে থেকে যাও।
    ------- কোথায় বানারহাট  ইরিগেশন বাংলোয়।
    ------- কোথায় ?
    ------- জয়ন্তী যাবার পথেই পড়বে। আমি বলে দিচ্ছি দুটো ঘর।
    ------- বলে দে।
    ------- রাস্তার ওপর পড়বে।
    ------- আচ্ছা।
    ------- ইটিনেরারি ফাইনাল করে জানাও। ডেট বল। আমি বলে  রাখছি।
    ------- আচ্ছা।
     ------- সেদিন রাতে আমি তোমাদের সঙ্গে বসব।
    ------- বাঃ। একটা সিঙ্গল মল্ট রাখতে হবে।
    -------- কেন ? সিঙ্গল মল্ট কেন ?
    -------- এমনিই।
    -------- না হলেও চলবে।
    -------- হলে ক্ষতি ? কাকার সঙ্গে বসবি।
    -------- আচ্ছা।
    ------ আচ্ছা টাচ্চা নয়।  আসবি।
    ------ আগে ডেটটা  ঠিক কর।  সে অনুযায়ী জয়ন্তী বুক করে দাও।
     ------- আচ্ছা।
    ------ আচ্ছা নয়। ফাইনাল কর।  কালকের মধ্যে।
    ------ আচ্ছা।
    ------  কাল রাতে ফোন করব। হ্যালো।
    ------ হ্যালো।
    ------ শুনতে পাচ্ছ।
    ------ হ্যালো।
    ------ বলছি । হ্যালো।
    ------ হ্যালো।
    ------ বলছি ।
    ------ বল।
    ------ কাল জেনে নেব।
      পরদিনই আমরা তিনজন আবার বসলাম। প্রদীপ বলল, "হোয়াটস্যাপে একটা গ্রুপ করে দিচ্ছি   
    । কত খরচ , কোথায় , কখন যাব সব। " বুবাই আর আমি সায় দিলাম। এসব ও বেশ গুছিয়ে করে হিসেবে টিসেব একদম  ঠিকঠাক রাখবে , ওর এতেই আনন্দ,  করুক না।  আমি শুধু বলি ," আজ রাতেই বাবাইকে বানারহাট বুকিংয়ের ডেটটা ঠিক করে জানাতে হবে। প্রদীপ বলেছিল , "আচ্ছা , এখনই করে দিচ্ছি । " বলে সে আধ ঘন্টার মধ্যে সব ঠিকঠাক করে ফেলে জানিয়ে দিয়েছিল।
      আসলে আমরা পাঁচ জায়গায় থেকে ছিলাম। সবটা বাবাই জানে না। বাবাইয়ের সঙ্গে কথা বলে রাজার সঙ্গে কথা বলেছিলাম জয়ন্তীতে দুদিন থাকার  ব্যাপারে।জয়ন্তী ঠিক হয়ে গেলে ওখানের জঙ্গলের সবচেয়ে পুরনো গাইড নেপালদার সঙ্গে কথা বলেছিলাম   নেপালদাকে বললাম ," আপনার সঙ্গে সেই কথা হয়েছিল না ,হাতিপোতার বাংলোটা বুকিংয়ের ব্যাপারে , দেখুন না। " নেপালদা বলল , " দেখছি তবে পাব কিনা জানি না। "
    ------ ওটা পাওয়া খুব মুশকিল।
    ------- কেন ?
    ------- সব ওপর থেকে হয়।
    ------- কেন ?
    ------- তা বলতে পারব না। তবে কখনো পাইনি।
    ------- ওঃ।
    ------- হ্যাঁ , ফালতু এটাসেটা করে ঘোরাবে শেষে হবে না।
    ------- তাহলে দরকার নেই।
    ------- যদি বলেন দেখতে পারি তবে ওই অবস্থা।
    ------- না দেখতে হবে না।
    ------- আপনার কোন জজের সঙ্গে চেনা নেই ?
    ------- জজ ?
    ------- হ্যাঁ , কোর্টের জজ ?
    ------- জজ দিয়ে কী হবে ?
    ------- ওরা সব সময় বলে জজসাহেব আসবেন, দেওয়া যাবে না ।
    ------ কারা  বলে?
    -------  ফরেস্টের লোকেরা। চেনা আছে ?
    ------- না। জঙ্গলে জজেরা কী করে ?
    ------- তা বলতে পারব না ,ওরা  বলে তাই বলছিলাম।
    ------- আপনি জয়ন্তী -বক্সায় দুটো কোর এরিয়া সাফারির ব্যবস্থা করুন।
    নেপালদা অন্য বারের মতো ঠিক সাফারির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।  আমার খুবই বিশ্বস্ত লোক মনে হয় নেপালদাকে , দারুণ গাইড।  জঙ্গলটা হাতের তালুর মতো চেনে , ভালোওবাসে জঙ্গলকে। সব জীবজন্তু,  গাছপালা - ফ্লোরা আর ফনার নাম মুখস্থ।  কিন্তু আমাদের পাড়ার বিশ্বজিৎ সেদিন নেপালদার সম্পর্কে ওইরকম উল্টোপাল্টা বলল কেন  ? বুবাই বলল , "কী বলেছে ?"
    ------- নেপালদা  আগে নাকি বিখ্যাত পোচার ছিল। প্রচুর হরিণ মেরেছে।
    ------- যা আলফাল বকেছে ।
    ------- কী জানি হলেও হতে পারে।
    ------- কী  করে  বুঝল ?
    ------- ও সেলস ম্যানেজার তো, অনেক খবর রাখে।
    ------- ধুস। সেলসের লোক হলেই অনেক খবর রাখতে হবে ?
    ------- কী জানি বাবা যে রকম কনফিডেন্টলি কথা বলে।
    প্রদীপ এতক্ষণ কিছু বলেনি কেন কে জানে।  এবার কি কিছু বলবে?  ও কিছুতেই বলছে না দেখে আমি বলে উঠি ," কিরে তুই কিছু বলছিস না যে ?'' প্রদীপ কোন উত্তর না দিয়ে বলেছিল ," মাথাপিছু হাজার বিশেক পড়বে মনে হচ্ছে। " বুবাই বলল ,"কী ?" প্রদীপ বলল , " সব মিলিয়ে মাথাপিছু বিশ হাজার। কুড়ি করে। "
      নেপালদার সঙ্গে কথা বলার পর দেবুদার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। দেবুদার সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিল বাবুদা। একদিন বাবুদাদের ওখানে গেছি দেখি একটা বেঁটেখাটো লোক বসে আছে। বাবুদা  বলল ," এই দেখ দেবু। আমরা একসঙ্গে প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলাম সত্তরের প্রথমে। '' আমি দেবুদাকে বললাম," আপনি কী করেন দাদা। " দেবুদা বলল।," আমি আর কী করব ?"
    ------- না,মানে পেশা ?
    ------- পেশা ?
    ------- হ্যাঁ।
    ------- কিছুই না। এই যেমন এখন চা খাচ্ছি -এটাই আমার পেশা !
    এই বলে বাবুদা আর দেবুদা খুব একচোট হেসে নিল আমাকে বুড়বাক বানিয়ে দিয়ে।  তারপর সে বছর কুড়ি হলো দেবুদার সঙ্গে তারপর থেকে আমার খুব জমে গেছে।  এর মধ্যে বাবুদা মারা গেছে , টিউশনি করে ছেলেটাকে খুব ভালো মানুষ করেছিল দুর্দান্ত অংকের মাস্টার মশাই আমাদের অনেকেরই শিক্ষক জেলখাটা নকশাল  বাবুদা আর বৌদি । আস্তে আস্তে জেনেছিলাম দেবুদার সব- ,জলপাইগুড়ি , আলিপুরদুয়ারের একডাকে চেনা একসময়ের নকশাল এখনের লেখক দেবুদার  কথা। যে কথা বাবাইকে বলা হয়নি কিন্তু বুবাই আর প্রদীপ জানে আমি একবার আলিপুরদুয়ারে গিয়ে দেবুদার সঙ্গে দেখা করে আসবই। এরকমও হতে পারে জয়ন্তীতে দেবুদা  আর কবি শৌভিক আমাদের সঙ্গে আড্ডা মারতে আসবে। দেবুদাকে বলেছিলাম ," আসবে নাকি দেবুদা ?" দেবুদা বলল ," শৌভিককে বলি, ওর  স্কুটিতে চলে যাব। "
    ------  স্কুটিতে ?
    ------ হ্যাঁ।  প্রায়ই যাই জয়ন্তী।
    ------ নেপালদা একটা একসিডেন্টের কথা বলেছিল।
    ------ দুস ওসব ভাবলে চলে।
    ------ না গো। তোমাদের আলিপুদুয়ারের একটা ছেলেকে গাউর ঠুসে দিয়েছিল জানুয়ারিতে দমনপুর বীটের কাছে , রাস্তার ওপর।  ওই ছেলেটাও  স্কুটিতে ফিরছিল জয়ন্তী নদীর ধার থেকে। লাং ফেটে মরে যায় গুঁতোয়, পচিঁশ ফুট দূর ছিটকে পড়ে।দেবুদা বলেছিল ," জঙ্গলে জন্তু জানোয়ার  কিছু করে না।’’
    ------ কিন্তু খবরটা ?
    ------ মিথ্যে নয়।
    ------ তাহলে ?
    ------ আসলে  কী জান।
    ------ কী ?
    ------ হাই স্পিড রাস্তা।
    ------ সত্যি ! রাজাভাতখাওয়া থেকে জয়ন্তী বক্সার ভেতর দিয়ে ওতো ভালো রাস্তার কি দরকার ?
    ------ সেটা অবশ্য অনেকটা মানুষের দরকারে।
    ------ ওটাই সমস্যা।
    ------ হ্যাঁ , রাস্তাটা বেশ কিছু  শুঁড়িপথের ওপর দিয়ে গেছে। জানোয়ার বিরক্ত হয়। তাতে চার্জ করতে পারে।
    ------ করেছে।
    ------ হ্যাঁ।  আরো একটা ব্যাপার হচ্ছে।
    ------ কী ?
    ------ জঙ্গলে মানুষ যাচ্ছে কম।
    ------ কম ?
    ------- হ্যাঁ।  আগে যেমন রোজ কাঠ টাঠ কাটতে যেত
    ------ এখন যাচ্ছে না ?
    ------ আগের থেকে কম যাচ্ছে। আগে জানোয়ার রোজ মানুষ দেখত , এখন দেখছে না।
    ------ কেন ?
    ------ গ্যাস ট্যাস অন্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে…..
    ------ কী ?
    ------ রোজ মানুষ দেখে অভ্যস্ত ছিল জানোয়ার , এখন না দেখে হঠাৎ দেখে,  চার্জ করে দিচ্ছে। এইভাবে কনফ্লিক্ট বাড়ছে।
    ------ ম্যান এনিম্যাল কনফ্লিক্ট , পরস্পরকে না দেখে।
    ------ হ্যাঁ। করবেটের প্রসঙ্গে বন্ধুরা বলছিল। যারা ওখানে নানা কাজে থাকে।
    ----- গাউরটা ওই জন্য চার্জ করেছিল ?
    ----- হতে পারে। এখানেও তো একই অবস্থা, তবে  সে হতে পারে দশ বছরে একটা , তাও হয়ত নয়।
    দিনের পর দিন জঙ্গলের মধ্যে একা পালিয়ে থাকত দেবুদা।  সেসব তার বইতে পড়েছি। ষাটের শেষে বা সত্তরের শুরুতে কী পরিমাণ জঙ্গল ছিল এখন কল্পনাও করা যাবে না। দেবুদার সামনে এইসব  কথা আর  বাড়াই না আমি । 

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | |
  • ধারাবাহিক | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ৪১৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন