এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ভ্রমণ কাহানি(২) : উপল মুখোপাধ্যায় 

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ৪৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | |
    এবার কত জায়গায় থাকব সেটা ছিল প্রশ্ন। যতজন বেড়াতে যাবে অনেকটা তার ওপর নির্ভর করে কত জায়গায় থাকা হবে। আমরা তিনজন, তিন রকম ভাবে ভেবেছিলাম তারপর আলাদা ভাবনাগুলো জড়ো  করেছি। প্রদীপ প্রথমে প্রস্তাব করে, "আমরা মালদায় হল্ট দেব। পরদিন সোজা পাহাড়ে, সেখানে কদিন থেকে ডুয়ার্সে নেমে এসে জয়ন্তী অবধি গিয়ে, আবার রায়গঞ্জে রাত কাটিয়ে ফিরব।'' আমি বললাম, "সাউন্ডস গুড।'' বুবাই বলল, "হুম।" এই বলে সে চুপ করে যায়। সময় কাটে, চা খাওয়া চলে আরো টুকটাক খাওয়া দাওয়া চলতে থাকে। কথা একবার উঠে অন্য দিকে চলে যায়, বলা কথা সরিয়ে রেখে অন্য নানা কথার ভাবনায় সময় কাটিয়ে আড্ডা জমে ওঠে। বাইরে হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামায় আমি জানলাগুলো বন্ধ করতে উঠি। আমার বাড়িতেই আজ আড্ডা বসেছে সকালে ছুটির দিনে, এই আড্ডায় আমার বউ মিঠু থাকে কোন কোন দিন কিন্তু আজ ছিল না। একগাদা ফ্রিলে দিয়ে গেছে সিন্টু মাছওলা, রান্নার মাসি চলে যেতে সে ফ্রিলেগুলো নিয়ে পড়েছে। আমি বলেছিলাম, "বেশি ভেজো না, ভাত খেতে পারবো না কেউ।'' মিঠু বলল, "তিন চারটে ফিশ ফ্রাই দিচ্ছি, বাকিগুলো পরে ভাজবো। সময় পেয়েছি রেডি করে রাখি।" মিঠু সময় পায় না, তার ব্যাংকে খুব চাপ বেড়ে যাচ্ছে, কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমি বললাম, "তোমায় একটু হেল্প করি।'' ও বলল, "তুমি ওদের সঙ্গে বসো, আমি আসছি।'' এই বলে সে চলে গিয়েছিল। এখন জানলা বন্ধ করতে করতে করে ফিশ ফ্রাই ভাজার গন্ধ পেলাম আর দেখলাম বাইরে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিরও একটা গন্ধ ছাড়ছিল যা  অনেক পেতাম যখন অনেক খোলা ছিল, না বাঁধানো ছিল আশপাশ। এখন খুব বেশি গন্ধ পাওয়ার কথা নয় তবু দেখেছি কোথা থেকে এক সোঁদা মাটির গন্ধের ওপর ফ্রাই ভাজার গন্ধটা মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে অনবরত। প্রদীপও বোধ হয় গন্ধ পেয়েছিল, ওর চোখ বুজে এসেছে আর মনে হল যেন প্রাণভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। বুবাই ঘাড় নিচু করে সোফায় আধশোয়া হয়ে মোবাইল ঘাঁটছে। কিন্তু প্রদীপ গন্ধের কথা কিছু বলে না, সে বললো, "যে কথা হচ্ছিল।" বুবাই মুখ তুলে বলেছিল, "কোন কথা?"
    ------ ওই যে বললাম না।
    ------ কী বললি।
    ------ থাকার জায়গাটা ঠিক করে নে। গাড়িতে এতটা যাবি।
    ------ ঠিক, সব সময় মেপে করতে হবে।
    ------ একদম।
    ------ করে ফেল।
    ------ করে ফেল বলে মোবাইল নিয়ে থাকলে হবে না।  মন দে।
    ------ দিলাম।
    ------ আমি যে ইটিনেরারির কথা বললাম, ঠিক আছে।?
    আমি বললাম, "মালদাটা একটু কাছে হয়ে যাবে। যাওয়ার সময়টা   আর একটু এগোনো যায় না?"
    ------ মালদা কত আর রায়গঞ্জ কত কিলোমিটার ?
    ------ মালদা তিনশো সত্তর।  যেতে গুগলে সাড়ে ন ঘন্টা দেখাচ্ছে।
    ------  আরো দু ঘন্টা যোগ কর।
    ------ দুই না তিন?  
    ------ তিন না। আর রায়গঞ্জ সাড়ে চারশো। যেতে গুগুলে এগারো দেখাচ্ছে।
    ------ তেরো থেকে চোদ্দ ঘন্টা। টানা যাবে?
    ------ নির্ভর করছে কবে, কখন বেরোচ্ছি তার ওপর। সময়টা অনেক কমে যেতে পারে।
    ------ কমবে?
    ------ আগেও তো গেছিস, দেখিস নি?
    ------ তা দেখেছি।
    ------ তবে?
    ------ আমরা কবে বেরোচ্ছি?
    ------ একাদশীর দিন।
    ------ কখন?
    ------ চারটের মধ্যে।
    ------ ভোরে?
    ------ হ্যাঁ।
    ------ ঠিকই বলেছিস সময়টা অনেক কমে যাবে।
    ------ আগেই পৌঁছে যাব?
    ------ হ্যাঁ।
    ------ থাকব কোথায়?
    এই সময় মিঠু ফিশ ফ্রাই নিয়ে ঢোকে, বলল, " নাও। '' বুবাই বলল, "তুইও নে।'' মিঠু বলল, "কোথায় কোথায় থাকছ, ঠিক করেছ?''
    ------- করছিলাম।
    ------- কী ঠিক করলে?
    ------- যাবার সময় রায়গঞ্জে থামছি, পরদিন পাহাড়ে উঠে দুদিন থেকে তারপর ডুয়ার্স নেমে আসব।
    ------- দু দিন?
    ------- নইলে গায়ের ব্যথা কমবে না।
    মিঠু বলল, "বুড়ো বয়েসে ধেড়ে কিত্তি করতে যেও না। গাড়িতে যাবার কী দরকার ছিল। বরাবর এইরকম। শেষ মুহূর্তে ঠিক করে। কোথায় বুকিং পাবে এখন ?''
    ------ পাহাড়ে?
    ------ হ্যাঁ।  পাহাড়ে সব ঠেলে উঠবে পুজোর সময়।
    ------ তা যা বলেছিস।
    ------ তাহলে?
    ------ কী করা?
    ------ করা যায়।
    ------ কী?
    ------ কার্শিয়াং।
    ------ কার্শিয়াং ?
    ------ ইয়েস কার্শিয়াং ! দ্য ল্যান্ড অফ হোয়াইট অৰ্কিড !
    মিঠু বলল, "আবার শুরু হল !'’
    ------ কী ?
    ------ নাচ।
    ------ শুরু নয় শেষ হল কার্শিয়াং টুরিস্ট লজে ।
    ------ পাবি ?
    ------ অনেক চাপ কম।  খালি থাকতেও পারে।
    ------ লাগোয়া রেস্তরাঁটা দারুণ।
    ------ আর বারটা?
    ------ আগে খুলে দেখ আছে কিনা , একটা ঘর পেলেই হবে।
    ------ আর বিনোদ?
    ------ একটা ঘর দেবে না?
    ------- একটা জায়গা দেবে না ড্রাইভার থাকার?
    ------ আলবাত দেবে।
    ------ তাহলে দেখ। 
    ------ দুদিন?
    ------ দেখ না। একদিন পেলেও নিয়ে নে।
    ------ বাকি দিন?
    ------ দেখা যাবে, যা পাস নিয়ে নে।
    ------ ওতো ভাবলে চলবে না।
    ------ আচ্ছা।
    আমরা কার্শিয়ংয়ে একদিন ঘর পেলাম। এন এইচ থার্টি ওয়ানের একদম ধারে, পাহাড়ের খাঁজে একচিলতে টুরিস্ট লজটা হয়ত বড্ড ঠাসাঠাসি, কম জায়গার জন্য বেশি বুকিং হয়না। তবে রেস্তরাঁটা খুব জনপ্রিয়। দারুণ খাবারদাবার। সব সময় ভিড়ে গমগম করে। ওই জায়গাটা আমার অন্য কারণে ভালো লাগে। কোনা করে কাটা বাড়িদের আমার বরাবরই ভালো লাগে। কেন লাগে বলতে পারবো না। যতদূর দেখা যাচ্ছে জীবন কোনা করে কাটা একটা কিছু। যেখানে আলো পড়ে পড়ে অন্ধকার তৈরি  করবে বলে ঠিক করেছে। কে ঠিক করে দিয়েছে? কেন ঠিক করল? কী রূপ করাকে ঠিক বলে? কোনো কিছুর ঠিক নেই এটা বুঝতে পারছিলাম। না, অতীত কেন বলছি, অতীত কেন বলব এখনো বুঝতে পারছি কী ?
    আমাদের বাড়ির বেড়ানোর একটা  গভীর ইতিহাস আছে।  ঠাকুরদা খুব ধনী ছিল, শৌখিনও। সাহেবের মুৎসুদ্দি ছিল। মুৎসুদ্দি পুঁজির ক্ষীর খেয়েছে ঠাকুরদা। বাবা কি ওই জন্য ঠাকুরদাকে ঘেন্না করতো? শুনে কোনোদিন মনে হয়নি একথা। বরং নিজের বাবার সঙ্গে ঘোড়ায়  টানা ল্যান্ডো গাড়িতে নিউমার্কেটে যাবার গল্প করত। বাবা বলেছিল অসহযোগের কথা।  তখন অসহযোগ আত্মায় ঢুকে গেছে। ঠাকুরদার নিউমার্কেট থেকে কিনে আনা সুবাসিত বিলিতি সাবান ফেলে দিয়েছিল বাবা। খোঁজখোঁজ পড়ে গেল, কার এতো বড় আস্পর্ধা ! কর্তার সাবান চুরি করে ! বাবা বলেছিল, "আমি করেছি। ''
    ------- তুমি ?
    ------- হ্যাঁ।
    ------- সত্যি বলবে তোমায় কিছু করব না।
    ------- মিথ্যে বলব না বাবা।
    ------- তোমায় সত্যি বলতে বলা  হয়েছে তাই সেটাই বলবে।
    ------- আপনি ……
    ------- বল বল , বলতে থাক।
    ------- আপনার সাবান আমি ফেলে দিয়েছি বাবা।
    ------- সেকি !
    ------- হ্যাঁ বাবা।
    ------- সাবান ফেললে কেন ?
    ------- আপনি বিলিতি সাবান ব্যবহার করবেন কেন ?
      সম্ভবত একটা নৈঃশব্দ নেমে আসে বা নৈঃশব্দ নেমে আসার আওয়াজ শোনা যায়।  থমথমে একটা পরিবেশ তৈরি হয় দেশ জুড়ে ,কলোনির কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শুরু করেছেন বাপু।  ছেলের মুখে বাপুর ছায়া দেখে ঠাকুরদার কী মনে হয়েছিল কে জানে, তিনি ছেলেকে কাছে টেনে নেন।  মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন ঠাকুরদা, আস্তে আস্তে বলা কথাগুলো যা বাবার কাছে শুনেছি, তা ছিল এইরকম," ভেক ধরতে হয় বাবা, ভেক ধরতে হয়। '' তখন ঠাকুরদা কি বুঝতে পেরেছিল ওই ছেলে জেল খাটবে স্বাধীনতার আগে ও পরে?  উপর্যুপরি জেল খাটবে - স্বাধীনতার দাবি তার শেষ হয়না যে।
    সেই ঠাকুরদার একটা ছবি বাবা দেখায় সুট বুট পরা সঙ্গে আর একজন সেও সুট বুট, কোথাও একটা দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম:
    ------ এটা কার ?
    ------ বাবা আর বড়দা।
    ------ কোথায় বললে না তো ?
    ------ দার্জিলিং।
    ------ কবে ?
    ------ অনেকদিন আগে।
    ------ তুমি গেছ বাবার সঙ্গে ?
    ------ কোথায় ?
    ------ দার্জিলিং ?
    ------ ওখানে একটা জমি ছিল, জানিস ।
    ------ কার ?
    ------ বাবা কিনেছিল।
    ------ জমিটা দেখেছ ?
    ------ না শুনেছি ধ্বসে গিয়েছিল।
    ------ ইস। দেখতেই পেলে না।
    ------ বাবা প্রায়ই দার্জিলিং যেতেন বড়দা, মেজদাকে নিয়ে।
    ------ তোমাদের নিয়ে যেত না।
    ------ আমরা বড় হওয়ার আগেই উনি চলে গেলেন।
    ------ তখন বড় না হলে দার্জিলিং নিয়ে যেত না।
    ------ না।  অনেক ঝক্কি ঝামেলা ছিল, সময় লাগত অনেক।
    ------ অনেক ?
    সেবার মাকে  আর বাবাকে জোর করে দার্জিলিং নিয়ে গেলাম। বাবা যেতে চায়নি আমি জোর করে বললাম, "চল তোমাদের জমিটা খুঁজে বার করি। " বাবা শুনে হেসেছিল, "তাই চ।  খুঁজে বার করি। '' মা শুনে বলেছিল," আবার জমিদারির গল্প। কোথায় কী জমি ! সারা জীবন ধরে শুনে আসছি।" আমি বলি, "পাওয়া যাবে, ঠিক পাওয়া যাবে।" বাবা শুনেছিল কিছু বলল না, সুলুপ সুলুপ করে চা খাচ্ছিল। তবে বাবার মনে জমি টমি ছিল না। অনেক পরে ওর লেখা ডাইরিটা ঘাঁটতে ঘাঁটতে অন্য এক বেড়ানোর ইতিহাস খুঁজে পেয়েছি, পেয়ে দেখলাম সেটা ছিল একটা লেখার স্মৃতির সঙ্গে মেলানো একটা কিছু। সেটা কি জায়গা, না সে জায়গায় অনেকদিন বাদে ফিরে আসার, মনে ধরে রাখা অনেক কিছু  ফিরে না পাওয়ার গল্প? বাবা লিখছে :

     এই সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমি দ্বিতীয়বার দার্জিলিং গেলাম।আমার বয়স এখন ৭৯.।এই বয়সে আমি যেতে চাইছিলাম না।এই বয়সে পাহাড়ি রাস্তায় চলাফেরা করা কষ্টকর।আমার ছেলে আমাকে ও ওর মাকেও সঙ্গে নিতে চাইল।সাধারণত আমার ভ্রমণের স্পৃহা কোনকালেই ছিল  না। অর্ধশতাব্দী আগে একবার দার্জিলিং এসেছিলাম। 'সে যে আজ কত হল কাল'।সুকনায় চা বাগানের কাজের সুবাদে বড়মামা থাকতেন। সেখানে গিয়ে হঠাৎ ইচ্ছে হল দার্জিলিং ঘুরে আসি। সুকনা স্টেশন থেকে দার্জিলিং হিমালয়ান টয় ট্রেনে উঠে গেলাম একাএকাই। তখন টয় ট্রেন স্টীমে চলত(কয়লার)। প্রথম দিকে Wood burning charcoal এ ট্রেন চলত। সেই ইঞ্জিন সহ নোটিশ বোর্ডের ছবি দেখেছিলাম । ঘুমে গেলে সেই ইঞ্জিনটাও দেখা যাবে। প্রত্যেকটা স্টেশনে সময় নিয়ে থামত। চা ও চমরি গরুর গরম দুধ খেয়ে প্রায়  বিকেল হয়ে গেল  দার্জিলিং পৌঁছাতে। ঘুম স্টেশনে  এসে মনে পড়ল প্রাইমারিতে পড়া "দার্জিলিং ভ্রমণ" একটা লেখা। লেখাটা  কার আমার মনে ছিল না। আমার সহপাঠী দেবাশিস  রায় বলে দিলেন ওটা জলধর সেনের লেখা। সেই লেখায় জলধর সেনের ঘুমের নৈ:শব্দের  বর্ণনার  মিস্টিক আস্বাদন সেবার পেয়েছিলাম, এবার তার ছিটেফোঁটাও অনুভব করিনি। প্রথম পাওয়ার অনেক কিছু এবার পেলাম না।
     প্রদীপ বলে ," আর সময় নষ্ট না করে ইটিনেরারিটা পুরো বানিয়ে ফ্যাল।  কিছুতেই পুরো বানানো হয়ে উঠছে না।'' বুবাই বলে, "ঠিক বানিয়ে ফেলি চ।"
    ------ কার্শিয়াংয়ের পর কোথায় ?
    ------ কোথায় ?
    ------ কার্শিয়াংয়ের পর কার্শিয়াং। দেখে শেষ করতে পারবি না।
    ------ তা ঠিক।
    ------ কুয়াশায় ডুবে বসে থাকবি ডাউহিলে।
    ------ উঠে যাব পাইন গাছ বেয়ে বেয়ে।
    ------- খাড়াই গাছ।
    ------- ওই গাছে প্রেত হব।
    ------- স্কাইস্ক্যাপারের মতো উঠে গেছে ওই ওক গাছ, পাইন গাছ সেখানে প্রেত নেই।
    ------- প্রেত হব।
    ------ স্কাইস্ক্যাপারে প্রেত থাকে না।  থাকতে পারে না।
    ------- প্রেত ।
    ------- স্কাইস্ক্যাপারে ফ্ল্যাট থাকতে পারে, প্রেত নয়।
    ------- প্রেত হব আমি।
    ------- খাড়া গাছের ইমেজে, স্কাইস্ক্যাপার থাকে, কিছুতেই  প্রেত হবি না।
    ------- এ গাছ ও গাছে ঘুরে বেড়াব। নামব না কোথাও।
    ------- ওই খাড়া গাছের ভেতর ভেতর তুই স্কাইস্ক্যাপার খুঁজবি। ফ্ল্যাট পাবি। প্রেত পাবি না।
    ------- শুধু বাতাস এসে কথা বলে যাবে।
    ------- বলবে না।
    ------- কানেকানে কথা হবে বাতাসের সঙ্গে।
    ------- হবে না, নাগরিক ইমেজে কথা থাকবে না। খাড়া গাছে ফ্ল্যাট দেখবি, কথা বলবি না।
    ------- সব ফেলে দেব, দিয়ে আসব।
     ------- কী ফেলবি ?
    ------- আত্মাদের সঙ্গে সংযোগ হবে, পাইনে ওকে সব গাছে  ।
    ------- তবে তাই হোক।
    ------- যেখানে আত্মারা থাকে শুধু।
    ------- হোক।
    ------- তাই হোক।
    ------- হোক।
    ------- প্রেত হবো আমি।
    মিঠু বলল,  “আর প্রেত না হয়ে ভূত হও।’’
    ------- ভূত ?
    ------- ভূতটা ঠিক হচ্ছে না।
    ------- একদমই না। প্রেত ।
    ------- প্রেতই হতে হবে।
    ------- তার জন্য
    ------- কী করতে হবে ?
    ------- দার্জিলিং ……
    ------- দার্জিলিং?
    ------- দার্জিলিং চল।
    মিঠু বলল, "কতবার দার্জিলিং যাবে, একঘেঁয়ে হয়ে গেছে।''
    ------ তাহলে মংপং চ।
    ------ কোথায়?
    ------ মহানন্দা ফরেস্ট রেঞ্জের ঠিক  ওপরে।
    ------ ওপরে?
    ------ হ্যাঁ।  নিচে তিস্তা  নদী আর ফরেস্ট রেঞ্জ।
    ------ রেললাইনের পাশে, টিলার ওপর?
    ------ টিলার ওপর ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের কটেজ, অপূর্ব। বিশেষ করে….
    ------ বিশেষ করে?
    ------ রাতে, একটা হাওয়া ছাড়ে তার আওয়াজ হতে থাকে, হতেই থাকে।
    ------ বাবাইকে একটা ফোন লাগা।
    ------ মংপং?
    ------ বুক করে নে, তবু বাবাইকে একটা ফোন লাগা।
    ------ লাগাচ্ছি। 
    মংপং কটেজ পেয়ে গেলাম। আসলে পুজোর আশপাশের সময় পাহাড়েই ভিড় বেশি  হয়। মিঠু ঠিকই বলেছে সব ঠেলে পাহাড়ে ওঠে তাতে বেশ কিছু দারুণ জায়গা পাওয়া যেতেই পারে। মংপং বুক করে বাবাইকে ফোন করলাম। তখন ও কী  একটা ঝামেলায় ছিল, বলল রাতে ফোন করছে আমায়। আমি বললাম, "আচ্ছা, করিস কিন্তু দরকার আছে।’’ বাবাই বলল, "জানি রে বাবা।''
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | |
  • ধারাবাহিক | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ | ৪৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন