এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  শিক্ষা

  • স্কুল শিক্ষার সংস্কার ও দশ দফা দাবি

    সীমান্ত গুহঠাকুরতা
    আলোচনা | শিক্ষা | ২৮ জুলাই ২০২৩ | ৩৪৫২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ছবি: ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক



    সমস্যাটা আগেও ছিল, কিন্তু কোভিড-অতিমারীর পর তা বহুগুণ বেড়ে গেছে। যেকোনো সরকারী স্কুলে সচরাচর দু-ধরনের ছাত্র পাওয়া যায়। একদল পড়াশুনায় আগ্রহী, তারা নিয়মিত স্কুলে আসে, ক্লাসে রেসপন্সিভ থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই হয়তো তত ভাল রেজাল্ট করে না, কিন্তু প্রথাগত পড়াশুনার বাইরে নানা রকম অ্যাক্টিভিটিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। কেউ খেলাধুলায়, কেউ সাংস্কৃতিক কাজকর্মে, কেউ বা নেতৃত্বদানের প্রশ্নে তার স্বভাবগত দক্ষতার পরিচয় দেয়। আর দ্বিতীয় দলটি পড়তে, বুঝতে অথবা অন্য কোনো রকম কাজেকর্মে নিতান্তই অনিচ্ছুক। এরা স্কুলে ভীষণই অনিয়মিত উপস্থিত থাকে। এই অনিচ্ছার পিছনে নিশ্চই কিছু আর্থ-সামাজিক কারণ অবশ্যই আছে, কিন্তু সেই কারণগুলো এতই বৃহৎ এবং জটিল যে তা নিয়ে তা নিয়ে ভাববার বা সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করা শিক্ষক-শিক্ষিকার কর্ম নয়, তাদের তাই ওই প্রথম শ্রেণির ছাত্রদলকে নিয়েই কাজে-কর্মে বৃত থাকতে হয়।

    মুশকিল হল, অতিমারী-জনিত যে পরিবর্তনগুলো আমাদের চারপাশের সমাজে ঘটে গেছে, তার থেকে স্কুলও রেহাই পায়নি। নগর পুড়িলে দেবালয় এড়ায় না। ঠিক যেমন কর্পোরেট সেক্টরে অফিসের বদলে গুরুত্ব বেড়েছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর, অথবা অর্থনীতির জগতে নগদের বদলে অনলাইন লেনদেনের ওপর ভরসা বেড়েছে অনেকখানি, অথবা সিনেমা হলের জায়গা নিয়েছে মোবাইল নির্ভর ওটিটি প্লাটফর্ম, ঠিক তেমনি স্কুলের প্রথাগত শিক্ষাদান বা গ্রহণের পরিসর অনেকখানি দখল করে নিয়েছে অনলাইন এডুকেশন। এসে গেছে অসংখ্য অনলাইন টিচিং অ্যাপ। দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট টিউশনের ওপর নির্ভরতা বরাবরই বেশি, অতিমারী এসে সেই নির্ভরশীলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল শুরুর আগে, সকালে অথবা স্কুলের পর সন্ধ্যায় টিউশন পড়তে যেত, ইদানীং দেখছি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারগুলো আর স্কুলের সময়টাকে বাদ দেবার সৌজন্যও দেখাচ্ছে না। দুপুর বারোটা, দুটো অথবা বিকেল তিনটের সময়ও ‘ব্যাচ’ বসানো হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরাও আজকাল স্কুলে অনুপস্থিতির জন্য জ্বর বা পেটখারাপের মত মত প্রচলিত অজুহাতগুলো দেখানোর বদলে পরিষ্কার বলে দিচ্ছে – ‘প্রাইভেট পড়া আছে স্যর’। শিক্ষার প্রশ্নে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি অস্বীকার করার এই স্পর্ধা কিন্তু অতিমারীরই অবদান। আজকাল তাই পড়াশুনায় ইচ্ছুক বা অনিচ্ছুক কোনো রকম ছাত্রছাত্রীকেই নিয়মিত স্কুলে পাওয়া যাচ্ছে না।

    কিন্তু দোষটা কি শুধুমাত্র অতিমারীই? অতিমারীর কাঁধে বন্দুক রেখে কোনো বৃহত্তর শক্তি তাঁর স্বার্থসিদ্ধির জন্য ময়দানে নেমে পড়েনি তো? প্রশ্নটা গুরুতর। এবং পাপী মনে প্রশ্নটা আসছে এই কারণেই যে, অতিমারী আগে-পরে বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, কমবেশী প্রতিবছরই গড়ে প্রায় দু-মাস করে গরমের ছুটি দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলোতে। এর পাশাপাশি রয়েছে গড়ে প্রতি বছর একটি করে ভোট-উৎসব, যার জন্য কমবেশি পনেরো দিন থেকে এক মাস স্কুল-বাড়িগুলো অধিগ্রহণ করা হয়। যেদিন এই নিবন্ধটি লিখছি, সেদিনকার সংবাদপত্রেই এই মর্মে প্রতিবেদন রয়েছে যে, দুমাস গরমের ছুটি এবং একমাস পঞ্চায়েত জনিত ছুটির পর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার একটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি দশ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে, ফলে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধান শিক্ষককেই মাইক হাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচারে নামতে হয়েছে।

    একটি শিশু বা কিশোরের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের প্রশ্নে স্কুলের ভূমিকা অসীম। অধিকাংশ অভিভাবক এবং জননেতাদের একাংশ যেমন মনে করেন স্কুল হল সিলেবাস শেষ করা এবং পরীক্ষা নিয়ে মার্কশীট আর সার্টিফিকেট বিলি করার জায়গা, তা আদৌ নয়। সিলেবাস শেষ করা বা একটা ভাল রেজাল্ট করার জন্য কিন্তু সত্যিই ইদানীং আর স্কুলের খুব একটা দরকার নেই। অজস্র অনলাইন কোচিং বা প্রাইভেট টিউটর বাজারে সুলভ, তারাই কাজটা সেরে দিতে পারেন। আর ‘ভাল রেজাল্ট’ তৈরির প্রয়োজনীয় সস্তা মালমশলা স্কুলের বাইরের বাজারে সুলভ বলেই হয়তো আজকাল আর স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা বলার বা গান গাইবার মত ছাত্রছাত্রী পাওয়া যায় না, স্পোর্টসে বা ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ নেই ওদের, সরস্বতী পুজোয় মণ্ডপ সাজানোর বা ফল কাটার লোক পাওয়া যায় না। এইভাবেই এই ‘নিউ নর্মাল’ শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের এক আত্মমগ্ন, স্বার্থপর এবং অবধারিতভাবে এক সমাজ-বিচ্ছিন্ন একক-যাপনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

    এর পাশাপাশি আর্থিক বা সামাজিকভাবে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া একদল ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষার অঙ্গন থেকে বার করে দেবার একটা গভীরতর চক্রান্ত তো রয়েইছে। যাদের মোটা দক্ষিণা দিয়ে প্রাইভেট পড়ার বা অনলাইন এডুকেশন গ্রহণ করার সামর্থ্য নেই, তারা এখন অবধারিতভাবেই পড়াশুনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের জন্য তাই অপেক্ষায় রয়েছে তামিলনাড়ু, মুম্বই, গুজরাটের পরিযায়ী শ্রমিক-মহল্লাগুলো।

    মোটের ওপর ব্যাপারটা তাহলে দাঁড়াল এই যে, যাদের সামাজিক সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য আছে, তাদের আর স্কুলের দরকার নেই। আর যাদের স্কুল ছাড়া শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই, স্কুল তাদের ভুলে বসে থাকছে। আর এক মাঝখানে আছেন শিক্ষক নামধারী এক তৃতীয় পক্ষ, যাদের অধিকাংশই শেষের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোকে দেখতে পাবার মত দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন নন, তাঁদের যাবতীয় দাবি-দাওয়া তাই ডি এ-কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে, এখনও।

    পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বললে কম বলা হবে, বরং এরকমই বলাই বোধহয় ঠিকঠাক হবে যে, আমাদের সরকারী শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। মুশকিল হল, এই পরিস্থিতিকে বদলানোর প্রশ্নে সরকার বা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দলকেই আর ভরসা করা যায় না। ইদানীং কিন্তু সরকার, বিরোধীপক্ষ এবং তাদের কারো-না-কারো তাঁবেদারী করা প্রাতিষ্ঠানিক গণমাধ্যমের বাইরে ফেসবুক-ট্যুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ-আদি সমাজমাধ্যমকে অবলম্বন করে একটি স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন স্বর উঠে আসছে । অনেক সময়ই সেই সমবেত ভিন্ন-স্বর বিভিন্ন স্পর্শকাতর ‘ইস্যু’-তে সরকারকে নড়েচড়ে বসতেও বাধ্য করছে। শিক্ষার প্রশ্নেও এমনই একটা তৃতীয় নিরপেক্ষ কণ্ঠ তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল বিগত কিছুদিন ধরে।
    সেই লক্ষেই এই সেদিন এক বৈঠক হল একটি অনলাইন প্লাটফর্মে। বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী, অধ্যাপক অচিন চক্রবর্তী, অনিতা অগ্নিহোত্রী, কুমার রানা, অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ কয়েকজন শিক্ষাবিদ, চিন্তাশীল মানুষ এবং সমাজকর্মী। হাজির ছিল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রায় একশো জন মানুষ, যারা সকলেই সেই বিপন্নতায় সামিল।

    প্রায় তিন ঘন্টার সেই ম্যারাথন বৈঠক শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, সত্যিই, এখন বোধহয় শিক্ষার গুণমান, পেডাগজি, সিলেবাস, কারিকুলাম ইত্যাদি গৌণ হয়ে পড়েছে। তার থেকে অনেক বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে কিছু মোটা দাগের সংস্কার। যেমন,
    ১. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে,
    ২. শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, নিলেও ব্ল্যাকবোর্ড, লেসন প্ল্যান ইত্যাদি যথাযথভাবে ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পড়াচ্ছেন কিনা যা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য ঘনঘন পরিদর্শনের ব্যবস্থা চাই,
    ৩. যেন-তেন-প্রকারেণ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে হাজিরা নিশ্চিত করত হবে,
    ৪. প্রাইভেট টিউশনের রমরমা বন্ধ করার জন্য স্কুল স্তরে উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে,
    ৫. ছাত্রছাত্রীদের মত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও কর্মদক্ষতার নিয়মিত মূল্যায়ন চালু করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে তার চাকরির স্থায়িত্ব নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে,
    ৬. মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে তার গুণগত মানের উন্নয়ণের পাশাপাশি তাকে সুস্বাদু করে তুলতে হবে,
    ৭. স্কুলগুলোর পরিকাঠামোয় পর্যাপ্ত সংস্কার করে এবং পর্যাপ্ত অশিক্ষক কর্মী, মেথর-ঝাড়ুদার ইত্যাদি নিয়োগ করতে হবে। এবং রক্ষণাবেক্ষনের খরচের জন্য কম্পোজিট গ্রান্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
    ৮. নানাবিধ ‘ডোল’ বিলির জন্য হয় বিদ্যালয়ের বাইরে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে স্কুলের তার জন্য পৃথক দপ্তর এবং কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
    ৯. ল্যবরেটারি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং শিক্ষকের অভাবে গ্রামের দিকে বিজ্ঞান-শিক্ষার হাল অত্যন্ত খারাপ। তাই বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রসারে আলাদা অর্থ-বরাদ্দ জরুরি,
    ১০. সর্বোপরি, কারণে-অকারণে দীর্ঘ ছুটি দেবার প্রবণতা কমাতে হবে এবং নির্বাচন ইত্যাদি প্রয়োজনে স্কুলবাড়ি অধিগ্রহণের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

    জনজীবনে শিক্ষার গুরুত্ব যিনি বোঝেন, তার কাছে এই দশ দফা দাবি খুব একটা গুরুতর বা বিরাট ব্যয়বহুল কিছু নয়। প্রশ্নটা কেবলমাত্র সদিচ্ছার। দেখা যাক, শিক্ষা-নিয়ামকদের মনে সেই সদিচ্ছা জাগরিত করা যায় কি না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ জুলাই ২০২৩ | ৩৪৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৪:২৯522180
  • আহা, এত রাগ না করে সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে তা বললে একটু বোঝা যায়। যাঁরা দশ দফা দাবী তুলেছেন তাঁদের তো তাও একটা নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে।
    কিন্তু সরকার ছেলেপুলের ইস্কুল ঠিক করে দিক এমন বললে যে একটা টোটালাটারিয়ান রাষ্ট্রবাসনার বাইরে কিছু বোঝা যায় না!

    আমি তো কোন খবরই রাখি না, তাও দাবী যাঁরা তুলেছেন তাঁদের মধ্যে অচিন চক্রবর্তী, কুমার রাণা, অনীতা অগ্নিহোত্রীদের নাম প্রায়শই নানান গঠনমূলক কাজের প্রসঙ্গে শুনি, তাঁরা হাই পেডেস্টালে উঠে বানী দিয়ে খালাস এমন ভাবার কারন দেখি না। সীমান্তবাবুও শিক্ষাবিদ, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ভাবেন, এমন বিশ্বাস করার কারন আছে, তাঁর ধারাবাহিক লেখাগুলি পড়ে।

    এখন হতেই পারে মনে হচ্ছে এই দশ দফা ঠিক নয়, তার প্রায়োরিটি অন্যরকম হওয়া উচিত, বা যাই হোক। অথবা প্রশ্ন উঠতে পারে, দাবী তো হল, সরকার কি শুনছে? বা শোনানোর জন্য কী করা হচ্ছে?
    কিছুই হবে না, সবাই চুর, জনগণই বদ, নেতাজী বীরের বেশে ফিরে এসে সবার নড়া ধরে বঙ্গপোসগরে ফেলে দিয়ে এলে সব ঠিক হবে - এমন বলে কী লাভ!

    আর লঙ্গর টঙ্গর বলে লাভ নেই। সরকারের দেওয়া অনুদান ভিক্ষে না, ওটা জনগনের প্রাপ্য অধিকার। সরকারের কাজ দেওয়া - এই জিনিসটা নর্মালাইজ হলেই আর এত খটকা লাগবে না।

    আমার যেমন মনে হয় স্কুল শিক্ষায় ব্যক্তিগত পুঁজির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রন একটা পথ। শিক্ষাটা ব্যবসার জায়গা না - সেই জিনিসটা প্রতিষ্ঠা করা।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৪:৩৫522181
  • প্রাপ্য অধিকার তো বটেই। সেই প্রাপ্য অধিকার ছেড়ে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাধ্য হচ্ছে সন্তানদের প্রাইভেট কুমীরের পেটে ঢোকাতে।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:acb4:7cf3:7373:a497 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:২১522182
  • ব্যাপারটা রাগের নয়। এখানে একটা চিকেন এগ সমস্যা আছে। একজন বলল আমরা শিক্ষার পেছনে অনেক টাকা খরচ করব। আর এক দল বলল আমরা প্রতি ছাত্রপিছু মাসে পাঁচশ টাকা বাবা মাকে দিয়ে দেব। বাবা মা তাই দিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।
     
    আমাদের সিস্টেমে দ্বিতীয় পার্টি হয়তো ভোট পাবে। তাতে সরকারের খরচ তুলনায় কম হবে, তাই সমাজের ক্ষমতাশালী এলিটরা কম ট্যাক্স দিতে হবে ভেবে খুশি হবে। শুধু তাই নয়, শিক্ষা ব্যবসায়ীরাও খুশি হয়ে এটার পক্ষে জোরালো প্রচার করবে। আর যেসব পার্টি লুম্পেন এবং কাটমানি নির্ভর, তারা উঠেপড়ে লেগে যাবে এই সিস্টেমের জন্য। কেননা ওই টাকা অনেকটা তাদের পকেটে আসবে অন্য চেহারায়। সরকারের অন্য সুবিধাও কিছু হবে। ওই টাকার জন্য অনেক বাচ্চা স্কুলে নাম কা ওয়াস্তে নাম লিখিয়ে রাখবে। স্কুল হয়তো তিনশ টাকা নেবে, বাবা নেবে দুশ। এই কৃত্রিমভাবে বর্দ্ধিত ছাত্র দেখিয়ে সরকার ক্রেডিট নেবে।
     
    ক্যাশ দিলেই যে তাই দিয়ে ঠিকমত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়না, এটা বোঝাটা শিক্ষাসাপেক্ষ। কাজেও মুরগি না ডিম কোনটা আগে হবে?
     
    ডোল ভিক্ষা কি ভিক্ষা নয় প্রশ্নটাই অপ্রাসঙ্গিক। প্রশ্ন হল পাবলিক ইন্টারেস্ট কখন কোনটায় রক্ষা হয়।
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:২৩522183
  • শিক্ষিত, শিক্ষার মূল্য বোঝে, খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের প্রাথমিক প্রয়োজন মিটেছে এবং এখন শিক্ষা একটি প্রাথমিকতা, সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সামাজিক ভাবে কিঞ্চিৎ প্রভাবশালী - এমন লোকজন ব্যবস্থার ভোক্তা না হলে ব্যবস্থার উন্নতি হবে না এতে দ্বিমত একেবারেই নেই।

    এবার মধ্যবিত্তের প্রাইভেটবাধ্যতা ব্যাপারটা নিয়ে আমার একটু কৌতুহল। এটা ঠিক কবে থেকে হল? সরকারী ইংলিশ মিডিয়ামের অপ্রতুলতা একটা বড় কারন? পবতে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়া আমার মতে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া, অনগ্রসরদের জন্য একটা বড় সদর্থক পদক্ষেপ ছিল কিন্তু শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা এতে যৌক্তিকভাবেই রেগে যান। বাড়িতে দেখিয়ে দেওয়ার লোক থাকলে ইংরেজিতে অসুবিধা কী, এবং উপার্জনের বাজারে ইংরেজি একটা হাতিয়ার।
    এর পর কি বড় কোন শিফ্ট হয়? পরিসংখ্যান আছে কিছু?

    এ তো গেল পব, কলকাতা। অন্যত্রও তো এক। আমার আত্মীয় নাগপুরে থাকে, মেয়ে এবছর উমা পাশ করলো। এগারো বারো ক্লাস স্কুলেই যায়নি - স্কুলের সঙ্গে আকাশ বাইজুসের সাঁট হয়েছে - আ.বা তে পড়লে স্কুলের উপস্থিতি লাগবে না। লুরুতে তো সরকারী স্কুল বলে একটা বস্তু আছে তাই লোকে জানে বলে মনে হয় না। অন্য রাজ্য বা শহরগুলি কেমন? গ্রাম মফস্বলে যেসব সরকারী কর্তারা, অধ্যাপক বা শিক্ষকরা থাকেন তাদের ছেলে মেয়েরা কোথায় যায়?

    ভোটের জন্য সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায়োরিটি না তা দেখাই যাচ্ছে। দিল্লিতে আতিশি মার্লেনা সরকারী স্কুলের ভোল বদল করলেন অবিশ্বাস্য দ্রুততায় - ভোটের বাজারে তা কোন কাজেই এল না।

    ত্রিপুরায় কিছু বছর আগেও পুরোপুরি প্রাইভেট স্কুল বলে কিছু ছিল না, সবই সরকারী অনুদান প্রাপ্ত। শিক্ষকদের বেতন সরকার দেয়, শিক্ষার্থীদের মাইনেকড়ি নিয়ন্ত্রিত। ওখানে এখনো সব স্তরের মানুষ সরকারী স্কুলে যায়, কিছু কিছু স্কুল নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি। ভালো মন্দ দুরকম স্কুলই আছে।
    সম্প্রতি অবশ্য বেসরকারীকরন নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে কাগজে পড়ি।
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:২৫522184
    • পলিটিশিয়ান | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:২১
    • ...এখানে একটা চিকেন এগ সমস্যা আছে। 
     
    হ্যাঁ, একেবারেই। নানান দিক দিয়ে এটা আছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদেও একমত।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:acb4:7cf3:7373:a497 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:৪১522185
  • ইংরেজী মিডিয়ামে না পড়লে সব গেল এটা কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট একটা মনোভাব। সেটা কোন একটি গোষ্ঠী একসময় রাজনৈতিক স্বার্থে করেছিল। ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়লে তেমন কিছু ক্ষতি হয়না। একটি উদাহরণ ইওরস ট্রুলি, হয়তো এখানের অনেকেই। আর পড়লেও এমন কিছু স্বর্গবাস হয়না। দুবেলা চারপাশে দেখি।
     
    শিক্ষার মাধ্যম নিয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়াটাই গোলমেলে ব্যাপার। এখন যা চলছে তাতে কি এরপর হিন্দী মিডিয়াম হবে? আমাদের শিক্ষাবিদরাও যে অশিক্ষিত তার একটা প্রমান হল বুনিয়াদি শিক্ষায় কি শেখানো হবে তাই নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব।
     
    আমার এক বন্ধু আইটি জগতে বহুদিন আছে। টিসিএস ইত্যাদি হয়ে এখন ফেসবুকে। সে বলেছিল, খারাপ কোম্পানি আর ভাল কোম্পানির মধ্যে একটা তফাৎ হল খারাপ কোম্পানি খোঁজ করে তখন তাদের যে টেকনোলজি দরকার সেটা চাকরিপ্রার্থী জানে কিনা। তারা জিজ্ঞেস করে জাভা জানা আছে? ওরাকল জানা আছে? ভাল কোম্পানি খোঁজ করে বেসিকটা জানে কিনা। প্রার্থী রিলেসনাল ডাটাবেস, নরমালাইজেশন জানে? অ্যালগোরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার বোঝে? উদাহরণটা প্রাসঙ্গিক মনে হল।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:৫০522186
  • আমাদের নিজেদের উদাহরণ দিয়ে মনে হয় না খুব লাভ আছে। কারণ ১৯৮০ এর দশকে যাঁরা প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি স্কুলে পড়েছেন, সরকারি বাংলামাধ্যম স্কুলে, সেইসব স্কুল আর তাদের পড়াশোনার পরিবেশ ও মান এখনকার ওই ধরণের স্কুলের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। হ্যাঁ, প্রাথমিকে ইংরেজী লোপ করার পড়েও। আমরা ক্লাস সিক্স থেকে ইংরেজী পেয়েছি, তাও লার্নিং ইংলিশ নামের অতি সাধারণ মানের ইংরেজী বই।
  • র২হ | 96.230.209.161 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৩522187
  • আমিও বাংলা মিডিয়াম এবং তাতে কোন অসুবিধে কোথাও হয়নি।
     
    তবে পারসেপশনটা অনেকদিন থেকেই ছিল। মুশকিল হল অনেক সময়ই পারসেপশনের বাস্তবের থেকে বেশি শক্তিশালী। সরকারী স্কুল বিমুখ কী করে হলো তার সবকটা কারন ভাবতে চাইছি আরকি। তাতে বিরোধীদের অপপ্রচারে জনগণের ভুল বোঝাও থাকতে পারে :)
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৭:০১522188
  • মাধ্যমটা তেমন অসুবিধের হয় না যারা খুব তুখোর আর বাড়িতে রিসোর্স আছে। আর যারা আমার মতন অজপাড়াগাঁয়ের সাধারণ মানের স্টুডেন্ট, তাদের কলেজে গিয়ে হঠাৎ সব ইংরেজী হয়ে যাওয়াতে বেশ একটা স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, রেজাল্টও আশানুরূপ হয়নি। তবে আস্তে আস্তে ইংরেজী শিখে শিখে ক্রমে ক্রমে কাজ চালাবার মতন অবস্থা আয়ত্তে এসেছে।
  • র২হ | 96.230.209.161 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৭:০১522189
  • তবে অনেক আধুনিক পেশায় ইংরেজি মাধ্যম না হলে চাপ। যেমন ঝকঝকে শপিং মলের কর্মচারী, ম্যানেজার, ক্রেডিট কার্ড জাতীয় জিনিসের সেলস। পিজার দোকানের কর্মচারী - সবাই ইংরেজীতে অর্ডার দেয়। এমনকি অর্ডার দিতে গেলেও মনে হয় কেন যে মা বাবা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালো না। 
    মোবাইলের দোকান, টেলিকলার (আজকাল অবশ্য হিন্দি জানলেই চলে)। 
    এসব পেশার লোকও অনেক। 
    আমি যদি আজ লুরুর পাঁচতারা শপিং মলের স্টারবাকসের বেয়ারার পদে ইন্টারভিউ দিতে যাই, চাকরী পাবো এমন ভরসা করি না। কর্পোরেট অফিসে পেলেও পেতে পারি।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:acb4:7cf3:7373:a497 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৭:১৯522191
  • কিছুদিন আগেও সমস্ত কর্পোরেট এস্টাব্লিশমেন্টেই অন দি জব ট্রেনিংয়ের একটা ব্যাপার ছিল। কোন স্পেশালাইজড স্কিল দরকার হলে শিখিয়ে নাও। কারো ঝকঝকে ইংরেজি বলা লোকের দরকার বলে সবাইকে সরকারি খরচে শেখানো হবেনা।
     
    এর আরো একটা দিক ছিল। ছাঁটাই করা যেহেতু একটু ঝামেলার ছিল, সেহেতু ছাঁটাই করার চেয়ে নতুন স্কিল শিখিয়ে নেওয়া সহজ ছিল। কাজেই অন দি জব ট্রেনিংয়ের একটা ব্যবস্থা প্রায় সবারই থাকত।
     
    এখন কোম্পানিগুলো লোককে বুঝিয়ে ফেলেছে তাদের বিশেষ স্কিলটি না জানলে তারা আনএমপ্লয়েবল। লোকে প্রচারের ঢক্কা নিনাদে সেটা গিলেও ফেলেছে। তাতে একদিকে অন দি জব ট্রেনিং খাতে করপোরেশনগুলোর খরচ কমেছে। কর্মীরা নিজেদের খরচে বা সরকারের খরচে সেসব শিখে আসছে। আবার স্কিলসেটের দরকার অনুযায়ী ইউজ অ্যান্ড থ্রো স্টাইলে হিউম্যান রিসোর্স চালানো যাচ্ছে।
     
    শুভলাভ।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৭:২৩522192
  • অতি অপূর্ব। কোম্পানিগুলোর তো পাথরে পাঁচ কিল। হেড পড়লে আমার জিত, টেল পড়লে তোর হার।
  • hu | 172.58.27.241 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৪522194
  • যে প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন করছি তাতে নিজের আস্থা নেই - এই অবস্থা আশি-নব্বইয়ের দশকেও ছিল। বাম সরকার সমর্থক যে মানুষেরা প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়ার পক্ষে সরব হয়েছিলেন তাঁরা নিজের সন্তানকে বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়েছেন এমন নজির অনেক আছে। তাঁরা আজও জোর গলায় বলেন ইংরেজি তুলে দিয়ে ক্ষতি কিছুই হয়নি, কিন্তু নিজেরা কেন সেই ব্যবস্থায় যাননি প্রশ্ন তুললেই ব্যক্তিগত জীবনকে রাজনৈতিক আনুগত্যের থেকে আলাদা করে নেন। তবে সে আমলে সবাই এমন বুদ্ধিমান ছিলেন না। তাই এঁদের পাশাপাশিই আরেকটা বড় অংশও ছিল যাঁরা সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে সব রকম খামতি সমেতই বরণ করেছিলেন। সেই জন্যই বোধ করি আশি-নব্বই দশক, এমনকি দুহাজার পাঁচ-ছয় পর্যন্তও সরকারী স্কুলে ছাত্রের অভাব হত না, পড়াশোনা হত। এখন আর সেদিন নেই। এমনকি যে প্রোডাক্ট বেচি তা নিজে ব্যবহার করি না একথা বলার মধ্যে লজ্জাও কেউ দেখে না। কলকাতার সরকারী স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা বোধকরি ডাবল ডিজিটে এসে নেমেছে। আমাদের মফস্বলের যে স্কুলগুলো দুই থেকে আড়াই হাজার পড়ুয়ায় গমগম করত সেখানে এখন ছাত্রসংখ্যা পাঁচশোর নিচে। গ্রামের স্কুলগুলোতে এখনো পড়ুয়া উপচে পড়ে৷ কিন্তু পড়াশোনা হয় কিনা সেটাই প্রশ্ন। যেখানে প্রাইভেট স্কুলের সুবিধা আছে সেখানে বাচ্চাদের আর সরকারী স্কুলে পাঠানোর কথা কেউ ভাবছে না। এমনকি আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও প্রাইভেটে পড়ানোর প্রবণতা। বিভিন্ন আর্থিক স্তরের মানুষের জন্য বিভিন্ন ফি স্ট্রাকচারের প্রাইভেট স্কুল গজিয়েছে। এখন এটা সত্যি করেই চিকেন-এগ প্রবলেম। সরকারী স্কুলে পড়াশোনা হয় না বলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সন্তানকে সরকারী স্কুলে পাঠায় না, আবার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত আসে না বলে সরকারী স্কুলে পড়াশোনার মান উন্নত করারও কোনো বাধ্যতা নেই।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:acb4:7cf3:7373:a497 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৯522195
  • যাঁরা বাংলা মিডিয়ামে শিক্ষার কথা বলেন তারা নিজেরাই ছেলে মেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ান, এই কথাটাই কর্পোরেট প্রচার। দু একজন সেরকম লোক ছিলেন, কিন্তু উল্টোটা অনেক বেশি সংখ্যায় ছিলেন। অন্ততঃ আমার সেটাই দেখা।
     
    প্রাইভেট স্কুলে চাকচিক্য বেশী, কিন্তু পড়াশোনা ভাল হয় এ কথাটা সত্যি না।
  • hu | 172.58.27.241 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৯522197
  • ঠিকই তো। উল্টোটা অনেক বেশি সংখ্যায় ছিল বলেই তো সিস্টেমটা এতদিন টিকলো। তবে ইংরেজি তুলে দেওয়ার সওয়াল করে নিজের বাচ্চাকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো বামপন্থীর সংখ্যা একেবারে নগন্য ছিল না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের যুক্তিসঙ্গত ক্ষোভও ছিল। আমাদের মফস্বলে দেওয়াল লিখন দেখেছি - ক্লাস সিক্সে পড়ছি মোরা এ বি সি ডি ই/ জ্যোতিবাবুর নাতি দেখো পড়ে নার্সারি।  তো মফস্বলে খুব বেশি জ্যোতিবাবুর নাতির সাথে পরিচয় না হলেও, বড় হয়ে এমন অনেক নাতি-নাতনির সাথেই পরিচয় হয়েছে, এক সাথে পড়েছি,  কাজ করেছি। 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:acb4:7cf3:7373:a497 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৩০522198
  • জ্যোতিবাবুর নাতনি কোথায় পড়বে সেটা বোধহয় ওনার ছেলে ছেলেবৌয়ের সিদ্ধান্ত, ওনার নয়। আমি অবশ্য জানিনা জ্যোতিবাবুর নাতনি কোথায় পড়ত।
     
    পোস্টটা পড়ে আমার আরএসএসের প্রচার মনে এল। অমুক মুসলমানেরা পাকিস্তানের সমর্থক, বা একাধিক বিয়ে করেছে, বা তিন তালাক দিয়েছে, বা তালাকপ্রাপ্তাকে খোরপোষ দেয়নি, বা এতগুলো বাচ্চা ইত্যাদি। বেশীরভাগ মুসলমান যে ওরকম করেনা সেটা কোন যুক্তিই নয়। দেখাই যাচ্ছে আরএসএসের যুক্তি লোকে খাচ্ছে।
     
    আমার অপছন্দের লোকেদের মধ্যে কয়েকজন এরকম করে, অতএব ইত্যাদি। এরপর আর যুক্তি কি?
  • hu | 172.58.27.241 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৪৮522199
  • সে আপনার মনে হলে আর কি করব! আমি তো আমার প্রথম পোস্টেই লিখেছিলাম 'এঁদের পাশাপাশিই আরেকটা বড় অংশও ছিল যাঁরা সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাকে সব রকম খামতি সমেতই বরণ করেছিলেন। সেই জন্যই বোধ করি আশি-নব্বই দশক, এমনকি দুহাজার পাঁচ-ছয় পর্যন্তও সরকারী স্কুলে ছাত্রের অভাব হত না, পড়াশোনা হত।" আপনার অন্যদিকটায় নজর গিয়ে কোনো কারণে অস্বস্তি লাগছে। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:72c2:7cba:4e11:88aa:27ed | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১২:৩৬522204
  • "আমার আত্মীয় নাগপুরে থাকে, মেয়ে এবছর উমা পাশ করলো। এগারো বারো ক্লাস স্কুলেই যায়নি - স্কুলের সঙ্গে আকাশ বাইজুসের সাঁট হয়েছে - আ.বা তে পড়লে স্কুলের উপস্থিতি লাগবে না।"
     
    একদম সেম ব্যাপার চেন্নাই আর তামিল নাড়ুতেও। এখানে প্রায় সমস্ত প্রাইভেট স্কুলের সাথে ফিটজি, অ্যালেন, বা আকাশের চুক্তি আছে। যেসব বাচ্চারা নিট বা জেইই র জন্য তৈরি হতে চায় তাদের জন্য প্রাইভেট স্কুলগুলোতে "ইন্টিগ্রেটেড কোর্স" অফার করা হয়। ১১ আর ১২ ক্লাসের বাচ্চারা ফিটজি ইত্যাদিতে পড়শোনা করে, স্কুলে যায় শুধুমাত্র অ্যাটেনডেন্স দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে সিবিএসই আর আইসিএসই বোর্ডের স্কুলগুলোর জন্য এই ব্যবস্থা। 
     
    তামিল নাড়ুর সরকারি স্কুলগুলোর হাল খুব খারাপ, ছাত্রছাত্রী নেই। তবে চেন্নাইতে কর্পোরেশন স্কুল বেশ কয়েকটা আছে, যাদের অবস্থা খুব ভালো। বড়ো বিল্ডিং, প্লেগ্রাউন্ড, স্মার্ট টিচিং অ্যাপ, সব আছে। টিচাররাও মনোযোগ দিয়ে পড়ান। তবে এই সব স্কুলের মাবাবাদের (যাঁরা বেশীরভাগ নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের) আক্ষেপ হলো যে এই স্কুলগুলো স্টেট বোর্ড ফলো করে, যার জন্য স্টুডেন্টরা নিট বা জেইই র জন্য তৈরি ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না। তামিল নাড়ু সরকার অবশ্য এই দিকটা নিয়ে ভাবছে, প্রাইভেট প্লেয়াররা যাতে কর্পোরেশান স্কুলগুলোর সাথে পার্টনারশিপে যেতে পারে সে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আর উদয়নিধি (স্ট্যালিনের ছেলে) অনেক বৈঠক করছেন। 
     
    তামিলদের মধ্যে ইন জেনারাল প্রথম ও তৃতীয় চয়েস হলো ছেলেমেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে আর সিবিএসি তে পড়ানো। দ্বিতীয় চয়েস হলো আইবিতে পড়ানো, তারপর গ্র‌্যাজুয়েশানের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া। তামিলরা ইন জেনারাল ইংরেজিতে কথা বলতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আমি দেখেছি দুজন তামিল নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকলে প্রথমে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার শুরু করেন, তারপর একেবারে পুরো ইংরেজিতেই কথা বলতে থাকেন। মোটামুটি কে কতোটা ইংলিশ ব্যবহার করেন তাই দিয়ে তাঁর পরিবারের সোশ্যাল অবস্থান নিয়ে একটা ধারনা করে ফেলা যায়। 
     
    ব্যাতিক্রমও আছেন, যেমন আমি একটা হোয়া গ্রুপের মেম্বার যেখানে প্রায় সাড়ে তিনশো জন তামিল আর মোটামুটি পঞ্চাশজন নর্থ ইন্ডিয়ান। এই গ্রুপে মাত্র একজন তামিল ভদ্রলোক লাগাতার গত তিন বছর ধরে তামিলে পোস্ট করে যাচ্ছেন। বাকি ৩৯৯ জন মেম্বার শুধুমাত্র ইংরেজিতে পোস্ট করেন। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:72c2:a88d:c08f:6c3e:2536 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৬:১৯522210
  • তবে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রবণতা বোধায় তামিলদের থেকেও তেলেগুদের বেশী। আর এই ট্রেন্ডটা বেশ পুরনো। আমি হায়দ্রাবাদে পনেরো বছর আগে বছর দুয়েকের জন্য ছিলাম। তখনই জানতে পেরেছিলাম, যে সমস্ত তেলেগু মাবাবার আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাঁরা একেবারে শুরু থেকে অন্যরকমভাবে প্ল্যানিং করেন। 
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৪২522213
  • ইংরেজি না জানলেও চলে এটা আমরা যখন বলি তখন আমরা মোটের ওপর উঁচু তলার চাকরি গুলির কথা ভাবি। যেসব কাজের জন্য জ্ঞান, বা "ভালো পড়াশুনো"র দরকার হয় না, বলিয়ে কইয়ে চটপটে হলেই চলে সেগুলি ভাবি না। অনেক কাজ শুধু ঐ ইংরেজিটা বলতে পারলেই হয়, কম উপার্জনের চাকরি, যেসবের জন্য দোকানগুলি বিনিয়োগও করবে না। ভালোরকম প্রশিক্ষণ একটু ওপর দিকের কাজগুলির জন্যই হয়। পিজার দোকানের কর্মচারীকে দোকান পিজা হ্যান্ডলিং শেখাবে, খদ্দেরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ইংরেজি শেখাবে এমন হলে ভালো হত, কিন্তু সেটা হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা কম। বিশ্বায়ন পরবর্তী মুক্ত অর্থনীতিতে ওরকম চাকরি এখন অনেক, সেগুলির ওপর অনেক লোক নির্ভরশীল।

    আবারও, আমি মনে করি ইংরেজি তুলে দেওয়া অনগ্রসর বা প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত, কিন্তু ওয়ান সাইজ ডাজন্ট ফিট অল।
    এমনিতে প্রাথমিকে ইংরেজি না থাকা নিয়ে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তো নেই, ত্রিপুরায় ওটা হয়নি।

    এবার কর্পোরেটগুলিকে কার্যত ফ্রিহ্যান্ড দেওয়া, মানব সম্পদকে হেলাফেলা, ঢিলেঢালা শ্রম আইন এবং সেসব নিয়ে কর্মীদের সচেতন না থাকা, মালিকপক্ষকে প্রশ্ন করায় ভয়, কর্মচারী সংগঠন না থাকা - এসব অবশ্যই খুব বড় সমস্যা।

     
    • পলিটিশিয়ান | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৭:১৯
    • শুভলাভ।
    একমত- কনজিউমার সর্বস্ব দৃষ্টিভঙ্গী, লাভের গুড় ইত্যাদি। খুব শিগ্গিরী যেহেতু বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রন, আর ঐ দশ দফা দাবী বা প্রস্তাবের মত কিছুই হয়তো আশার আলো।

    তবে মধ্যবিত্তের সরকারী স্কুলবিমুখতা আমি যতদূর বুঝি সারা দেশের লক্ষন; শুধু পব নিয়ে আলোচনা করা হলে শুঁড়টা বা লেজটা বোঝা যেতে পারে, হাতিটা নিয়ে কোন ধারনা পাওয়া যাবে না।
    বোর্ডের ব্যাপারটা একটা বড় জিনিস ঠিকই -সর্বভারতীয় পরীক্ষা ইত্যাদির জন্য।
  • dc | 2401:4900:1f2b:72c2:a88d:c08f:6c3e:2536 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:২৪522216
  • শুধু মধ্যবিত্ত না, অ্যাক্রস ইনকাম সেগমেন্টস সরকারী স্কুলবিমুখতা হয়েছে। সারা দেশের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের মধ্যে যদি সার্ভে করা হয় আর এই প্রশ্নটা করা হয়, আপনি কোন মাধ্যমে আর কোন বোর্ডে আপনার ছেলেমেয়েকে পড়াতে চান, তাহলে বোধায় ৭০-৮০% উত্তর দেবেন ইংরেজি মাধ্যমে আর সিবিএসই / আইসিএসই বোর্ডে। আমি চারপাশে যদ্দুর দেখি, স্টেট বোর্ডের স্কুলগুলোতে মাবারা পড়ান শুধুমাত্র আর্থিক কারনে। আর্থিক সঙ্গতি আছে, তাও ছেলেমেয়েকে হিন্দি বা তামিল বা তেলেগু ইত্যাদি মাধ্যমে পড়াচ্ছেন, এরকম মাবাবা এক হাজারজনও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। 
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৪১522219
  • হ্যাঁ, নিতান্ত সঙ্গতিহীনরাও যেভাবে হোক টাই বাঁধা ইংরেজি মাধ্যমে পাঠানোর চেষ্টা করেন, দেখতে পাই।

    সত্যিই বেসরকারি স্কুল সরকারীর থেকে এত ভালো - বাস্তবে তেমন হওয়া অসম্ভব। তবে ঐ যে, পারসেপশন অনেক সময়ই বাস্তব পরিস্থিতির থেকে বেশি শক্তিশালী।

    সারা দেশেই সব নিয়েই বেসরকারি হলে পরিষেবা ভালো হবা - এমন ধুঁয়ো। আবার এই প্রচারকে বাস্তবায়িত করতে লোকজনের চেষ্টারও কসুর নেই।
    মুশকিল হল আমরা যখন দেখি বিএসএনএল ঠিক করে কাজ করছে না আমরা যে লোকটা লাইন দেয় তাকে গাল দিই। আসলে টেলিকম মন্ত্রক অপদার্থ, ঠিকঠাক দপ্তর সামলাতে পারছে না, দক্ষ নেতৃত্ব দরকার, সে আর হয় না।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:641f:768c:747b:ad0b | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:১২522221
  • একটা সার্ভে হয়েছিল তো

    https://www.google.com/amp/s/m.timesofindia.com/india/26-of-schoolkids-in-english-medium-nearly-60-in-delhi/amp_articleshow/84082483.cms

    কিন্তু এখানে বলছে পঃবঃ তে নাকি মাত্র ৬% ইংরেজীতে পড়ে , দিল্লীতে ৬০%! অন্য কিছু রাজ্যেও হারটা ৬% এর বেশী !

    ফলে এই রাজ্য আর ত্রিপুরার এফেক্টে বাংলা, পড়াশোনার মিডিয়াম হিসেবে ৩ নম্বরে !

    তর্ক যে কী নিয়ে হয় !

    আসল সার্ভে রেজাল্টটা বার করুন কেউ।
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:641f:768c:747b:ad0b | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:১৪522222
  • পড়ে মনে হল যেহেতু ক্রমশঃ ইংরেজীতে পড়ার হার বাড়ছে সেই জন্যই হয়ত এখনকার হিন্দী push।
     
     
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:641f:768c:747b:ad0b | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:২৬522223
  • দক্ষিণ ভারত নিয়ে ডিসির কথাগুলো এই সার্ভেটাও বলছে, যে ঐ জায়গায় ইংরেজী মিডিয়ামের হারটা বেশ বেশী।

    এখন কথা হল, দক্ষিণ ভারত দেখে যদি উত্তর ভারতীয় বাবা-মারা ইংরেজী মিডিয়াম বেছে নেয় - যদিও বা সেইসব স্কুলের মান ভাল না হয় - সেও কী মন্দের ভাল হবে না ?

    আর কোন এক দভিত ইন্টেলেকচুয়াল ছিল না, ইউপির মনে হয়, মেকলে সাহেবের মূর্তি গড়ে প্রতি বছর পুজো করে ? কারণ ইংরেজীতেই দলিতদের মুক্তি।
     
     
  • এলেবেলে | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪১522224
  • কিছু মোটা দাগের সংস্কারের দাবিদাওয়াগুলো খতিয়ে দেখে বাস্তব পরিস্থিতিটা আসলে কেমন, সেটা একবার দেখে নেওয়া যাক। 

    ১. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে,
     
    একেবারে যথার্থ দাবি কিন্তু ঘটনা হল এ রাজ্যে গত দশ বছরে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলোতে একজন নতুন শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়নি। সেই চিত্র যে আগামী পাঁচ বছরে পরিবর্তিত হবে, এমন আশা করাও বেশ কষ্টকর। ফলে শিক্ষকসংখ্যা আরও কমবে।

    ২. শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন কিনা, নিলেও ব্ল্যাকবোর্ড, লেসন প্ল্যান ইত্যাদি যথাযথভাবে ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পড়াচ্ছেন কিনা যা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য ঘনঘন পরিদর্শনের ব্যবস্থা চাই,
     
    আমার অভিজ্ঞতায় এই পরিদর্শনের সংখ্যা গত ৩৩ বছরে সাকুল্যে একবার। তার আগের ৩৩ বছরে সে সংখ্যাটা বড়জোর দু থেকে তিনবার হতে পারে। জেলাসদরে তবুও বা হতে পারে কিন্তু দূরবর্তী অঞ্চলের স্কুলগুলিতে এর সম্ভাবনা শূন্য বা তার কাছাকাছি। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস আগেও নিতেন, এখনও নেন।  

    ৩. যেন-তেন-প্রকারেণ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে হাজিরা নিশ্চিত করত হবে,
     
    দাবি তোলাটা খুবই সহজ, কিন্তু সেটা কী উপায়ে হবে? ধরা যাক, বছরে ৭০% উপস্থিতি না থাকলে কোনও ছাত্রকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হল। কিন্তু তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে সেই ছাত্রকে ওই ক্লাসে আটকে রাখা হবে? ক্লাস নাইন ছাড়া তা সম্ভব নয় এবং সেটাও খুব কাজের কথা নয়। 

    ৪. প্রাইভেট টিউশনের রমরমা বন্ধ করার জন্য স্কুল স্তরে উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে,
     
    এক্কেবারে ফালতুস্য ফালতু দাবি। বিগত ২০ বছর যাবৎ মাধ্যমিকে প্রথম দশে থাকা পড়ুয়াদের কমপক্ষে ৭ জন এবং উমাতে ১০ জন টিউটর থাকা স্ট্যান্ডার্ড নর্ম। টিভিতে তাদের সাক্ষাৎকার দেখলেই এ কথা মালুম হবে। কিন্তু এই পরিসংখ্যান এ কথা প্রমাণ করে না যে তারা যেসব স্কুলের পড়ুয়া, সেখানে তারা 'উন্নত মানের শিক্ষা' পায় না। বরং সেসব স্কুলগুলো ভালো বলেই তারা সেখানে ভর্তি হয়। ইদানীং শুনতে পাই, অনার্স এমনকি পাস কোর্সেও ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউটর লাগে। হ্যাঁ, যাদবপুরের পড়ুয়াদেরও। 

    ৫. ছাত্রছাত্রীদের মত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও কর্মদক্ষতার নিয়মিত মূল্যায়ন চালু করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে তার চাকরির স্থায়িত্ব নির্ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে,
     
    খুবই চমৎকার দাবি সন্দেহ নেই তবে যে সকল মাননীয় শিক্ষাবিদ এই দাবি উত্থাপন করেছেন তাঁরা নিজেরা কখনও এর মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেননি, এই আর কি। নিয়মিত মূল্যায়নটা করবে কারা? ছাত্ররা? চাকরির স্থায়িত্বই বা নির্ধারণ করবে কারা? যাঁরা ডি আই অফিসে লাখচারেক খর্চা করে বাড়ির কাছাকাছি বদলি নিয়েছেন, তাঁদের কাছে এ দুটো জিনিস 'ম্যানেজ' করা নস্যি। বলির পাঁঠা অন্যরা হলেও হতে পারেন।

    ৬. মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়িয়ে তার গুণগত মানের উন্নয়ণের পাশাপাশি তাকে সুস্বাদু করে তুলতে হবে,
     
    মোটে মা ভাত রাঁধে না তায় তপ্ত আর পান্তো! বাকি আর বলছি না। 

    ৭. স্কুলগুলোর পরিকাঠামোয় পর্যাপ্ত সংস্কার করে এবং পর্যাপ্ত অশিক্ষক কর্মী, মেথর-ঝাড়ুদার ইত্যাদি নিয়োগ করতে হবে। এবং রক্ষণাবেক্ষনের খরচের জন্য কম্পোজিট গ্রান্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
     
    শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না বিগত দশ বছর। মেথর-ঝাড়ুদার এই বাংলার স্কুলগুলোতে কস্মিনকালেও নিয়োগ করা হয়নি। শিক্ষাকর্মী ('অশিক্ষক কর্মী' শব্দবন্ধ অত্যন্ত অমর্যাদাজনক যদিও আমরা তাতেই অভ্যস্ত, ওই চুরি'চামারি'-র মতো) শেষ কবে নিয়োগ করা হয়েছে কেউ জানে না। বাকি রইল RMSA-র ৫০ হাজার। ওই থুতু দিয়ে স্কুলগুলোর চিঁড়েও ভেজে না।

    ৮. নানাবিধ ‘ডোল’ বিলির জন্য হয় বিদ্যালয়ের বাইরে স্বতন্ত্র ব্যবস্থা করতে হবে, নইলে স্কুলের তার জন্য পৃথক দপ্তর এবং কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
     
    শুধু 'ডোল' কেন? একটি উমা বিদ্যালয়ে (বিশেষত কো-এড এবং গার্লস) শিক্ষকদের কতশত কাজ করতে হয় তার ইয়ত্তা নেই। করণিকের সংখ্যা দিনে দিনে কমছে বই বাড়ছে না। যাক, তাহলে এ বাবদ আরও আরও কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

    ৯. ল্যবরেটারি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং শিক্ষকের অভাবে গ্রামের দিকে বিজ্ঞান-শিক্ষার হাল অত্যন্ত খারাপ। তাই বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রসারে আলাদা অর্থ-বরাদ্দ জরুরি,
     
    শুধু শিক্ষক? ল্যাব অ্যাসিস্টান্ট লাগবে না? আচ্ছা, এঁদেরও নিয়োগ হবে তাহলে? বেশ। এবং পরিকাঠামোরও উন্নতি হবে? তোফা।

    ১০. সর্বোপরি, কারণে-অকারণে দীর্ঘ ছুটি দেবার প্রবণতা কমাতে হবে এবং নির্বাচন ইত্যাদি প্রয়োজনে স্কুলবাড়ি অধিগ্রহণের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
     
    এঃ, এটা এক্কেবারে ভুলভাল দাবি। মাননীয় সুকান্ত চৌধুরী ও অন্যরা বোধহয় ভুলে গেছেন তাঁদের ছাত্রজীবনে তাঁরা ৮৫ দিন ছুটি পেতেন। এমনকি সর্বশিক্ষা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত মানে বছর কুড়ি আগেও স্কুলে ছুটি থাকত ৮০ দিন, যেটা এখন কমে ৬৫ দিন হয়েছে। সঙ্গে শিক্ষাদানের সময় বেড়েছে শনিবার বাদে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪০ মিনিট। আর সরকার কেবল নির্বাচন কিংবা বন্যাকবলিত বাসিন্দাদের থাকার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করবে এটা ভাবতে ভালোই লাগছে। কেবল আজ পর্যন্ত হয়নি, এই যা।
     
    দাবির স্বপ্নরূপী পোলাওটিতে ঘি ঢালতে বিন্দুমাত্র কঞ্জুষি করা হয়নি (কোনও দাবিসনদে তা হয়-ও না)। কিন্তু এগুলো মিটে গেলেই সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোতে ছাত্রদের অভিভাবকরা ভর্তি করার জন্য লাইন লাগাবেন, বিষয়টা বোধহয় এত সহজ নয়।
     
    এত এত পরিকাঠামোগত দুর্বলতা সত্ত্বেও এ রাজ্য থেকে এখনও ফি বছর প্রায় ১০-১১ লাখ পড়ুয়া মাধ্যমিকে বসে। সমস্ত ইমি মিলিয়ে যে সংখ্যাটা এর এক-দশমাংশও নয়। এই যা কথা।
  • dc | 2401:4900:1f2b:72c2:a88d:c08f:6c3e:2536 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪৩522225
  • সিএস কে ধন্যবাদ, এই সার্ভেটার কথা জানতাম না। 
     
    তবে কিনা, ​​​​​​​আমার ​​​​​​​প্রস্তাবিত ​​​​​​​সার্ভে ​​​​​​​হলো ​​​​​​​মাবাবাদের জিগ্যেস ​​​​​​​করা ​​​​​​​তাঁরা ​​​​​​​কোথায় ​​​​​​​পড়াতে ​​​​​​​চান, ​​​​​​​আর ​​​​​​​এই সার্ভেটা ​​​​​​​হলো ​​​​​​​কতোজন ​​​​​​​অ্যাকচুয়ালি ​​​​​​​পড়ে। ​​​​​​​অর্থাত ​​​​​​​ইনটেন্ট ​​​​​​​আর রিয়েলিটির মধ্যে তফাত :-)
     
    এবার এই রিপোর্টটা থেকে কিছু জায়গা তুলে দি। 
     
    Among the states that have more kids in English medium than in vernacular are Punjab, Haryana and Delhi, besides most of the southern states and several smaller states and Union territories.
     
    The biggest increase in the proportion of children choosing English medium has been in Haryana, a jump of over 23 percentage points, compared to 27.6% of students in 2014-15. Telangana followed, with a jump of 21.7 percentage points putting 73.8% of students in English medium. Telangana and Andhra Pradesh have the smallest proportion of students studying in the vernacular medium, Telugu. Telangana has less than a quarter studying in Telugu medium, while in Andhra, it is less than a third. Enrolment in Malayalam medium too is eroding quickly, down to barely 35% from 46% in 2014-15. While only Telangana and Kerala among the larger states had more than half the enrolled students in English medium schools in 2014-15, since then, Tamil Nadu and Andhra Pradesh too have joined the club. In the last five years, English raced to overtake Tamil as the preferred medium of instruction in Tamil Nadu: from 42.6%, the proportion of students jumped to 57.6%.
     
    অন্ধ্র, কর্ণাটক, আর তামিল নাড়ুতে ইংরেজির জনপ্রিয়তা তো নিজের চোখেই দেখছি। কর্ণাটকে অবশ্য বলছে এখনও ভার্নাকুলার মিডিয়ামে বেশি সংখ্যক ছেলেমেয়ে পড়ে। 
     
    এবার এই রাজ্যগুলোর সবকটাতেই বোধায় ইনকাম ডিসট্রিবিউশান শহরগুলোর দিকে স্কিউড। অর্থাত আমার মনে হয়, যদি ইনকাম পার্সেনটাইলগুলো নিয়ে প্রতি রাজ্যের একটা করে হিস্টোগ্রাম বানানো হয়, তাহলে যেসব রাজ্যগুলোতো হিস্টোগ্রামটা যতো বেশী লেফট স্কিউড হবে সেইসব রাজ্যগুলোতে ইন জেনারাল ততো বেশী ছাত্রছাত্রী ইংলিশ মিডিয়ামে পড়বে। 
     
     
  • r2h | 192.139.20.199 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪৪522226
  • ত্রিপুরায় সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলও আছে। পবতেও আছে কি? জানি না। আগরতলায় শিশুবিহার অন্যতম পুরনো সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, অভিজাত ও অন্যতম ভালো স্কুল হিসেবে পরিচিত। শেষ বাম সরকার আরও একাধিক ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খুলেছিল, অভিভাবকদের মধ্যে খুবই ভালো চাহিদা। 
    তবে সংখ্যায় অনেক কম অবশ্যই। 
    প্রাইভেট পুঁজির বিনিয়োগে বিধিনিষেধ থাকায় কিছু মিশনারী স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, সৈনিক স্কুল এসব ছাড়া তেমন কিছু ছিল না। 
    ভবনস বোধহয় আছে, আর শ্রীকৃষ্ণ মিশন - তবে সেসব খুব পুরনো না।
    ত্রিপুরা রাজ্যের ভারতভুক্তির জন্য রাজাদের দেওয়া শর্ত হিসেবে সরকার উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা সব মেয়েদের একটা বার্ষিক ভাতা দিতো, বেশ ভালো অঙ্কের টাকাই ছিল সেই সময়। এখনও দেয় নিশ্চয়।

    https://www.bbc.com/news/world-south-asia-12355740
    "The Dalit (formerly untouchable) community is building a temple in Banka village in the northern Indian state of Uttar Pradesh to worship the Goddess of the English language, which they believe will help them climb up the social and economic ladder."
  • dc | 2401:4900:1f2b:72c2:a88d:c08f:6c3e:2536 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৪৭522227
  • "...এ রাজ্য থেকে এখনও ফি বছর প্রায় ১০-১১ লাখ পড়ুয়া মাধ্যমিকে বসে। সমস্ত ইমি মিলিয়ে যে সংখ্যাটা এর এক-দশমাংশও নয়" 
     
    এলেবেলে ঠিক বলেছেন। সিএস এর দেওয়া রিপোর্টেও এই কথা লিখছে। 
     
    However, the smallest proportion of students studying in English medium is in West Bengal, just 5.3%, compared to 89.8% in Bengali medium. This, combined with the high proportion of students in Bengali medium in Tripura (80%), makes Bengali the third largest language of instruction in India (6.7%), followed by Marathi (5.6%).
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:641f:768c:747b:ad0b | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫১522228
  • হুতো, হ্যাঁ, এটাই, চন্দ্রভান প্রসাদ। মেকলের জন্মদিনে ইংরেজী দেবীর পুজো হয়।
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন