এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  আত্মজৈবনিক

  • ছন্নছেঁড়া জীবন : জয়িতা ভট্টাচার্য

    Jayeeta Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | আত্মজৈবনিক | ১৭ মে ২০২৩ | ৯৫ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8
    ছন্নছেঁড়া জীবন :  জয়িতা ভট্টাচার্য

    প্রতি আউন্স সুখের বিনিময়মূল্য অননুমেয় অতুলনীয় দুঃখ, তবু দুঃখের পারাবার থেকে আমরা হাত বাড়াব এক বিন্দু সুখের দিকে। এক সমুদ্র লোনা জলে ভেসে আনচান করব এক ঘটি মিষ্টি জলের নিমিত্ত। এমনকি আজন্ম অন্ধকারের প্রাণীও হাত বাড়ায় এক ঝিলিক আলোর দিকে যতই হোক তা ক্ষণস্থায়ী। আলো এমনই এক জৈব আসক্তি।

    এই সব আলো আর অন্ধকার দিয়ে তৈরী মানুষ শরীর আর শরীরের অন্তর্ভুক্ত মন। মনের গতি প্রকৃতি শরীরে নিহিত।

    শরীর থেকে মন, না মন থেকে শরীর! আলো না অন্ধকার? রবীন্দ্রনাথের গানে বারবার ঘুরে ফিরে এসে পড়ে অন্ধকারের কথা। আর আলোর দিকে পরিক্রমণের কথা, নিবিড়ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা মন রে মোর পাথারে হোক না দিশাহারা - বেদনাই তো সকল আনন্দের উৎস, অন্ধকার থেকেই আলো চেনার পাঠ শুরু।

    "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো, সেই তো তোমার ভালো" - আলো মানেই সজীব আর প্রাণোচ্ছল এই ধারনাকে ভ্রান্ত বলেছেন দেরিদা ও হাইডেগার। বরং প্রশ্ন তুলেছেন তবে অন্ধকার গর্ভে যে প্রাণের স্পন্দন তা কি আসলেই মৃত্যু সঞ্জাত?
    নবোকভ তাঁর speak, memory তে বলছেন the cradle rocks above an abyss and common sense tells us that our existence is but a brief Crack of light between two eternities of darkness ।

    হাইডেগার বলছেন death is but a fellow incident ।

    রবীন্দ্রনাথের দর্শন হাইডেগারের সঙ্গে প্রায় এক,
    "আঁধারের গায়ে গায়ে পরশ তব, সারারাত ফোটাক তারা নব নব, নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো",
    গ্রীক মেটা ফিজিক্সের তত্বকে যেমন দেরিদা হাইডেগার নস্যাৎ করে দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু চেতনাও একই পথে হেঁটেছে। উপনিষদেও এই transformation এর প্রসঙ্গ এসেছে অমৃতের সন্ধান।
    যে পথে যেতে হবে সে পথে তুমি একা
    নয়নে আঁধার রবে, ধেয়ানে আলোকরেখা - এই দর্শন পাশ্চাত্য দর্শনের সঙ্গে মিলে যায়, দেরিদার হাইডেগারের transformation সূত্র উপনিষদ কিম্বা রবীন্দ্রনাথ।

    হাইডেগারিয়হাই "ডশ্যয়ন" বা সচেতন মানবসত্ত্বার অলিগলিতে না ঘুরেও এটা বলাই যায় যে দুটি চিরন্তন অন্ধকার এপার ওপারের মাঝের বাস স্টপের নাম জীবন -- অথেনটিক টাইম। জীবন একটি অথেনটিক টাইম ছাড়া কিছুই নয় একথা মেনে নিলে আড়ামোড়া ভেঙে উঠে বসতেই হবে।

    কপালে করাঘাত করে কিম্বা অপরকে দোষারোপ করে করে এই অথেনটিক টাইম নষ্ট করার কোন মানে হয় না। রামকৃষ্ণ কথিত "লোক না পোক" এই কথা মেনে ফলের আশা না করে তাই যাঁরা কাজের মানুষ তাঁরা তাঁদের পরিস্থিতি ও সাধ্য মতো কাজ করে চলেছেন অবিরত।

    নেই নেই করার ফ্যাশন ছেড়ে আছেও অনেক কিছু এমন ভাবা শ্রেয়।

    একথা অকপটে বলা ভাল, এমন নয় যে জীবনে আমি কোনো ভুলই করি নি, এমন নয় যে এত রবীন্দ্রনাথ আমি যে দুঃখে মোটেও ভেঙে পড়ি না হতাশ হই না। তবে জীবনের কোনো কোনো সময় যান্ত্রিক ভাবে দাঁতে দাঁত চেপে খারাপ সময়টা ধৈর্য ধরতে হয় আলোকরেখা আছেই। হয়ত যেভাবে চেয়েছিলে সেভাবে নয় তবে আছে আলো।

    একটা দুটো প্রাচীন সত্য একেবারেই সত্যি বটেই। যেমন ক্রোধ, তা শুধু ধ্বংস করে।

    ১৪০১ সালের আশপাশ থেকে দশ বছর এক নাগাড়ে লিখেছি যাঁদের সঙ্গে একসারিতে সেই সুনীল গাঙ্গুলি, দিব্যেন্দু পালিত, সুবোধ সরকার, শম্ভু রক্ষিত, রানাদা, জয়দেবদা, মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায়, সৌমিত বসু - সকলকেই দেখেছি ফলের আশা না করে সেই সময় অবিরাম নিজের মতো লিখে চলেছেন। তাই আজ তাঁরা স্বপরিচিত। সেই সময় তো শুধু পোষ্ট এ লেখা পাঠানো হতো। কবিতার চেয়ে কবির গুরুত্ব ছিলো না, এত কবিতার উৎসব ছিলো না। তবু তাঁরা ঠিকই জিতে গেছেন পাঠক হৃদয়। অসুবিধে হয়নি কবি হতে।

    এইটুকু আমার সচক্ষেই দেখা।

    আমি ২০০৪ থেকে প্রায় নয় বছর লেখা থেকে দূরে সংসারে ব্যস্ত ছিলাম পরে ২০১৪ থেকে ফের লেখালিখির জগতে এসে দেখলাম পটভূমি পাল্টে গেছে আমূল। যাই হোক, ব্যক্তি যখন কর্মের চেয়ে বেশি প্রকট তখন তার কাজটা তো চাপা পড়ে যাবেই।

    ছোটবেলায় মা বলতেন যদি বেশি সাজসজ্জা করো লোকে তোমার সাজটাই দেখবে তোমাকে আর দেখবে না। সেই রকমই বিষয়টা। আসলেই তো যার যার অথেনটিক টাইমটা ব্যক্তিগত। আজকাল শিশুদের সঙ্গই ভাল লাগে। তাদের সঙ্গেই  কেটে গেছে কাটছে সারা জীবন, নিজের ছেলে মেয়ে ও আশপাশের শৈশব, আমার নিজের কৈশোর চৌকাঠ পেরোবার পর থেকেই প্রায় শিশু সান্নিধ্যে আমারার বড়ো হওয়া হলো না।

    শিশুরা সহজ তাদের মধ্যে ছল নেই। চালাকি নেই। ধূর্তামি নেই। দু একজন বড় মানুষ দেখেছি জীবনে সাধুর পোষাক না পরেও যারা এমন শিশুর সারল্য ধরে রাখতে পেরেছেন।

    একসময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে অচেনা অজানা দূর গ্রামের দিকে চলে যেতাম। দেখেছি তাদের সহজ জীবন যাপন। তাদের অভাব। সরাসরি সন্ত্রাস, প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের নৈতিকতা। সেই যাপন আজ শহরের লোক এসে পলিটিকালাইজ করে নিয়েছে।

    আসলেই রাষ্ট্র বা তার মাথায় চড়ে কে বসে আছে তাতে সাধারণ মানুষের কিস্যু যায় আসে না এটা নেতাদের একটা সুবিধে।

    রাতে হাঁড়িতে ভাত চড়বে কিনা, ছেলের জ্বর সারবে কিনা, মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় হবে কিভাবে বা শেষ ট্রেন টা ধরতে পারা যাবে কিনা এসব অনন্ত বিষয়ে অথেনটিক টাইম শেষ হয়ে যায়।

    সত্যি শুধু ভালোবাসা। ভালোবাসার আলো জীবনকে দেয় ছায়া।

    (ক্রমশ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8
  • স্মৃতিচারণ | ১৭ মে ২০২৩ | ৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন