এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পুরোনো পিজে ভাটে বাড়ে 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ মে ২০২৩ | ৫৬০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৪ (৫ জন)
  • জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, দেখা করতে এলেন এক ছোটো গুজরাতি বেওসায়ি। ব্যবসায় ছোটো হলেও চেহারায় ইয়াব্বড়ো। এসেই বললেন, গুরুদেব, আমার নাম আমিৎ, গুজরাতে বেয়াপার করি, আপনার কাছে একঠো সাহায্য চাইতে এলাম। 
    রবীন্দ্রনাথ স্মিতহাস্যে বললেন, অমিতজি, আপনি তো ব্যবসায়ী, আমি আর আপনাকে কী সাহায্য করব।
    ব্যবসায়ী বললেন, আমরা আর কী বেওসা করি গুরুদেব, আপনি আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো বেওসায়ি। একটা দু-আনার কলম আর দু-পয়সার কালি ইনভেস্ট করে আপনি কোতো টাকা কামিয়েছেন বোলেন। এক নোবেলেই তো কোত্তো প্রোফিট। তার উপোর বইয়ের তো লাখে-লাখে কাটতি। সোব ওই দুটাকার ইনভেস্টেমেন্টে। কাগোজ-টাগোজ ধোরে।   
    রবীন্দ্রনাথ ঝট করে বিষম খাননা। শান্তিনিকেতনে পোড়ো সামলে সব রকম অভিজ্ঞতা আছে। একবার শেলি পড়াচ্ছিলেন, এক ছাত্র বলেছিল, গুরুদেব আপনি তো শেলি পড়াচ্ছেন, আর আমাদের মাঠের মধ্যে কীটস কামড়াচ্ছে। তখনও তিনি হাসেননি। এখনও না হেসে বললেন, কিন্তু সে টাকা তো আপনাদের দিতে পারবনা। ওটা শান্তিনিকেতনের কাজে লেগেছে।
    বেওসায়ি লম্বা জিভ কেটে বললেন, ও কোথা বোলবেননা স্যার। সান্তিনিকেতনে নতুন ইসকুল বিজনেস খুলেছেন জানি তো। প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট। টাকা চাইব কেন।
    - তাহলে কী সাহায্য চান অমিতজি?
    - তেমোন কিছু না। আপনার জন্মতিথি আর জোন্মের সোমোয়টা একটু জানাবেন কাইন্ডলি? খুব দোরকার।
    রবীন্দ্রনাথ অবাকও তেমন হননা। কিন্তু এবার হলেন। বললেন, এইটা দরকার? কেন?
    গুজরাতি বললেন, আসোলে মুম্বাইয়ে আমার বস থাকেন। আম্বানিশেঠ। উনিও আপনার লাইনেই বিজনেস কোরেন। ওনেক টিভি চ্যানেল আর খোবোরের কাগোজ কিনে নিয়েছেন। দেসের কালচার একদম বোদলে দেবেন। একঠো ইউনিভার্সিটি ভি খুলেছেন, যার নাম হোয়াটস্যাপ ইউনিভার্সিটি। প্রোচুর ইনভেস্টমেন্ট।
    রবীন্দ্রনাথ আরও অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন - এতে আমার কী করণীয়?
    - কিছুই না স্যার। উনিই বোললেন, যে, এইটুকু আউটপুটের জোন্যো এত ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। আর গুরুদেবের একই আউটপুট দুটাকার ইনভেস্টমেন্টে। কোন রহস্যে হচ্ছে জানতে গেলে রবীন্দরনাথজির কুন্ডলি বানিয়ে দেখা দোরকার। একবার বুঝে গেলে আমরাও ওই মডেলে বিজনেস কোরবো। তাই জোন্মের সোমোয়টা একটু দোরকার ছিল। প্লিজ না বোলবেননা।
    লোকটি চলে যাবার পর রবীন্দ্রনাথ মুখ ঝুলিয়ে বসে থাকলেন অনেকক্ষণ। যেন কেউ মৃত্যুসংবাদ দিয়ে গেছে। বনমালীকে ডেকে একগ্লাস নিমের শরবৎ খেলেন। তারপর কাগজকলম নিয়ে দু-কলম লিখে ফেললেনঃ 
    "মোর লাগি করিয়ো না শোক / আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে এইসব লোক।" শক্তপোক্ত মানুষ। ছোটোবেলায় মুগুর ভেঁজেছেন, উচ্চাঙ্গসঙ্গীতও গেয়েছেন। লিখেই সব শোকতাপ সামলান। ওই আসনে বসেই তৈরি করে ফেললেন নতুন এক চরিত্রকে। সে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘোষণা করেছে। রবীন্দ্রনাথ তার বক্তব্য লিখতে শুরু করলেনঃ "রবি ঠাকুরের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড়ো নালিশ এই যে, বুড়ো ওয়ার্ড্‌স্বার্থের নকল করে ভদ্রলোক অতি অন্যায়রকম বেঁচে আছে। যম বাতি নিবিয়ে দেবার জন্যে থেকে থেকে ফরাশ পাঠায়, তবু লোকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও চৌকির হাতা আঁকড়িয়ে থাকে।" চরিত্রটির নাম দিলেন, কী আবার অমিত। সেই তো নতুন ব্যবসাবুদ্ধিটা দিয়ে গেছে। আর এই নতুন ব্যবসার নাম শেষের কবিতা। 

    *এই গপ্পের প্রথম অর্ধেক সবাই জানেন। সেটার মতো বাকি অর্ধেকটাও ডাহা গুল। একটাই কেবল সত্যি কথা। যে, জোড়াসাঁকোয় অমিত নামের এক ভদ্রলোক এসে রবীন্দ্রনাথের জন্মতিথি আর জন্মের সময় জানতে চেয়েছেন। এই পরশু দিন। সেটাই এই পুনর্লিখনের অনুপ্রেরণা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১১ মে ২০২৩ ০৮:২৫519651
  • হা হা হা হা এইটে ব্যপক হইছে। laugh
  • :|: | 174.251.160.108 | ১১ মে ২০২৩ ১০:৫২519657
  • এইটা চেনা মানুষ অজানা কথার মতো। ভালো -- "আমার রয়েছে এইসব লোক" :)
  • Subhadeep Ghosh | ১১ মে ২০২৩ ১৯:৩২519670
  • দুর্দান্ত! :)
  • Sara Man | ১১ মে ২০২৩ ২২:৩৫519692
  • হা হা হা হা চমৎকার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন