এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আ মরি বাংলা (বা যে কোনো) ভাষা! 

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ৫৫৫ বার পঠিত
  • ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারে কংগ্রেস বা বিজেপি—যেই শাসন ক্ষমতায় আসুক, তাদের মাথায়—মাঝে মাঝেই একটা পোকা নড়ে ওঠে। হিন্দিকে এইবার সারা দেশে যে করেই হোক চালাতে (ওরফে, চাপাতে) হবে। এই সব শাসক দল জানে, বাস্তবে এটা কোনো দিনই আর সম্ভব হবে না। শাসন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে হয়ত সরকারি নথিতে, বিজ্ঞপ্তিতে, হুকুমনামায়, দরখাস্তে, রেল বা ব্যাঙ্কের কাগজপত্রে, হিন্দিকে আরও বেশি করে জায়গা ছেড়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু ওই অবধিই। ওর চাইতে বেশি আর কিছুই করা যাবে না। করতে গেলেই অশান্তি হবে। এমনকি নিজেদের দলের ভেতরেও। নীতিন গড়করি বিজেপি-র সভাপতি হলে হিন্দিতে ভাষণ দেবেন, আবার বেঙ্কাইয়া নাইডু সভাপতি হলে ইংরেজিতে বলবেন। সোনিয়া গান্ধী হিন্দিতে বলতে পারেন, কিন্তু শশী থারুর সেই ইংরেজিতেই ভাষণ দেবেন। এর ব্যত্যয় ঘটানো ভারি মুশকিল।
     
    তাই যদি হয়, সব জেনেশুনে আবার ওরা হিন্দিতে সমস্ত কাজ করার কথা বলছে কেন?
     
    বলছে, একাধিক কারণে।
     
    এক, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ। রাষ্ট্রের সম্পদ বলতে যা কিছু তার এক বড় অংশ সস্তায় পেয়ারের পুঁজিপতিদের কাছে বেচে (আসলে বিলি করে) দিতে গিয়ে সরকারি ভাণ্ডার প্রায় নিঃশেষিত। বেকার সমস্যা সর্বকালের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। মূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন। শিশু মৃত্যু, ক্ষুধা, নারীর নিরাপত্তা, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা, নাগরিক স্বাধীনতা, সাংবাদিকের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা—ইত্যাদি সমস্ত সূচকে দেশ এখন পাকিস্তান বাংলাদেশেরও কয়েক ধাপ পেছনে গেছে। এই সব দিক থেকে জনসাধারণের নজর ঘোরানোর জন্য ইসলামাতঙ্কের দাবার ঘুঁটিও আগের মতো আর কাজে দিচ্ছে না। লোকেরা চালাকিটা প্রায় ধরে ফেলেছে। ফলে নতুন কিছু একটা মুদ্দা দরকার। যা নিয়ে লোকে কিছু কাল পক্ষে বিপক্ষে মেতে উঠবে। সেই তালে আরও চারটে সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ সম্পন্ন করে ফেলা যাবে।
     
    দুই, উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতেও বিজেপি-র সাংগঠনিক অবস্থা খুব সুবিধার নয়। অন্য যে কোনো দল বিজেপি-কে বিধানসভায় হারানোর অবস্থায় উঠে এলেই দলে ভাঙন ধরবে। ফলে ভাষা আবেগ দিয়ে অন্তত আরও কিছু দিন কিছু লোককে ধরে রাখা যায় কিনা সুনিশ্চিত করা দরকার।
     
    তিন, বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি-বিরোধী দলগুলির সম্ভাব্য ঐক্যে ভাষার প্রশ্নে যদি ফাটল ধরিয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা আগে থেকে শুরু করে রাখা। ইত্যাদি।
     
    সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে হিন্দির বিরুদ্ধে একটা আওয়াজ উঠতে শুরু করেছে। শাসক দলের তরফে হিন্দি আধিপত্য চাপানোর বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেকেই হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে এবং হিন্দিভাষীদের বিরুদ্ধে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছেন। এক ভিন্ন উপলক্ষে ভাষাগত আগ্রাসন নিয়ে আমি একটা লেখা তৈরি করেছিলাম। সেটা এখন মনে হচ্ছে আরও বৃহত্তর পরিসরে এনে ফেলা ভালো।   

    [এক] প্রভাব না দাপট? 
     
    ভাষার প্রতি আবেগ মানুষের অন্যতম শক্তিশালী মনন-ক্রিয়া। মানুষের জৈবসাংস্কৃতিক বিবর্তনের নিরিখে এর হেতুত্ব অনুধাবন করা খুব কঠিন নয়। হোমো গণভুক্ত প্রাক-স্যাপিয়েন্স কিছু আদি মানব প্রজাতি—যথা, ঋজু মানব বা হোমো ইরেকটাস—আজকের থেকে অন্তত বিশ লক্ষ বছর আগে স্বর ভিত্তিক ভাষার প্রাথমিক রূপ আয়ত্ত করেছিল বলে তাদের মস্তিষ্কের জীবাশ্মে তার ছাপ (ব্রোকা অঞ্চল) রেখে গেছে। সেই তুলনায় ধর্মের বয়স তিন সাড়ে তিন হাজার বছরের এক পলও বেশি নয়। তাই ভাষার মনদখল শক্তি ধর্মের চাইতেও প্রবলতর। আপাত দৃষ্টিতে যদিও ধর্মকেই সবলতর মনে হয়। কিন্তু না, সে ওই আপাতভাবেই। বাস্তবের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, ভাষার ভিত্তিতে অসংখ্য জাতি-রাষ্ট্র তৈরি হলেও ধর্মের ভিত্তিতে কোনো স্থায়ী রাষ্ট্র বা জাতির জন্ম হয়নি। যদিও কোনো কোনো রাষ্ট্র একটি বিশেষ ধর্মমতকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে ঘোষণা করেছে। একই ধর্মে আস্থাশীল মানুষেরা একাধিক জাতীয় রাষ্ট্রে সমবেত হয়েছে। একই ধর্মে বিশ্বাসী রাষ্ট্রনায়কেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। দুপক্ষই অন্য দেশের স্বধর্মস্থানকেও বোমা বারুদের লক্ষ্যস্থল বানিয়েছে। এই সব ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে এত সুপরিচিত যে আলাদা করে উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।
     
    ভাষার প্রতি আবেগের একটা খুব অদ্ভুত অন্ধ ঐকান্তিক বৈশিষ্ট্য আছে। আমার ভাষা অন্য ভাষিক অঞ্চলে চালু হলে বা চালু করা গেলে মনে হতে থাকে, এ বুঝি আমাদের ভাষার প্রভাব। আর আমার ভাষা-ভূগোলে কেউ অন্য ভাষাকে চালু করতে চাইলে বা চালু হয়ে গেলে মনে হয়, এটা আমাদের উপর ওই ভাষাটির দাপট। আধিপত্য। জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেওয়া হল। ভারতের স্বাধীনতা-উত্তর কালের যাবতীয় ভাষাগত সমস্যা, ভাষা নিয়ে বিতর্কের পেছনে এই আহমিক মানসিকতার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। দুঃখের কথা হল, না রাজনীতিবিদেরা, না বিদ্বজ্জনেরা—কেউই এই বিষয়টির দিকে নজর দেননি। হয়ত তাঁদের উপলব্ধিতেই ঘটনাটা আসেনি।
     
    আসামে বাংলা ভাষা এবং বাঙালিদের সম্পর্কে সাধারণ অসমীয়াদের যে প্রবল বিক্ষোভ—যাকে মূলধন করেই এযাবত কংগ্রেসের আসাম নীতি ও রাজনীতি ঘুরপাক খেয়েছে এবং যাকে অবলম্বন করেই বিজেপি হিন্দু তাস খেলতে গিয়ে এনআরসি-র নামে কার্যত হিন্দু বাঙালিদের এক বিরাট অংশকে “বিদেশি” বানিয়ে ফেলেছে—তারও মূল কারণ এই “প্রভাব বনাম দাপট”-এর দ্বন্দ্বের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে। সুদূর অতীতে যখন বাংলা ওখানে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বাঙালিরা ভেবেছিল, ওখানে বাংলা ভাষার প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু অসমীয়াদের কাছে তা ছিল বাংলা ভাষার আগ্রাসন! অন্য দিকে সাম্প্রতিক অতীতে অসমীয়ারা যখন কাছাড় বা গোয়ালপাড়ার বাঙালিদের উপর অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছে, তারা ভেবেছে প্রভাব বৃদ্ধি, আর বাঙালিদের কাছে তা প্রতিভাত হয়েছে আধিপত্য হিসাবে। এর অন্যথা হওয়ার উপায় নেই।     
     
    কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দি চাপানো নীতির ক্ষেত্রেও একই কাণ্ড ঘটে চলেছে। হিন্দি ভাষীরা মনে করছেন, সারা ভারতেই হিন্দি ভাষার প্রভাব রয়েছে। অন্য ভাষিক সাধারণ মানুষের একে মেনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, মানুষ নিচ্ছে না। সংবিধানে হিন্দি চাপিয়ে দেবার নীতি গ্রহণ করে, কোটি কোটি টাকা এক তরফা ভাবে খরচ করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অজস্র জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবার পরেও আজও সারা ভারতে অহিন্দি বলয়ে হিন্দি সাদরে গৃহীত হয়নি। একজন অহিন্দি ভাষী যেখানেই অপশন আছে, ইংরেজি ব্যবহার করে, হিন্দি নয়। এমনকি মুম্বাই সিনেমার প্রবলতর জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও। কিংবা দূরদর্শনে রামায়ণ মহাভারত মেগাসিরিয়ালের সমগ্র ভারতকে আকৃষ্ট করা সত্ত্বেও। এরই বা কারণ কী? আসলে অহিন্দি ভাষিক মানুষের কাছে কেন্দ্রের যাবতীয় নীতিই হিন্দির প্রভাব হিসাবে নয়, দাপট বা আগ্রাসন ইত্যাদি রূপে প্রতিভাত হয়। ফলে তা স্বাভাবিক গ্রহণের পথ খুঁজে পায় না।
     
    কয়েক দিন আগে (আগস্টের প্রথম সপ্তাহান্তে) বাঙালোর গিয়েছিলাম তিন দিনের আমাদের একটি মঞ্চের জাতীয় স্তরের কার্যকরী সমিতির সভায় যোগ দিতে। ছোট সভা। দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দু-একজন করে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। সভায় একটা অদ্ভুত ঘটনা দেখা গেল। কোনো বক্তা ইংরেজিতে বললে উত্তর প্রদেশ রাজস্থান বা হরিয়ানার কমরেডরা তার পরেই বলছেন, সেই কথাগুলো সংক্ষেপে হলেও হিন্দিতে অনুবাদ করে দিতে। নতুবা তাঁরা কিছু বুঝতে পারছেন না। আর উত্তর ভারতের কেউ হিন্দিতে বক্তব্য রাখলে কেরালা কর্ণাটকের কমরেডরা অনুরোধ করছেন তার সারাংশ ইংরেজিতে তরজমা করে দিতে, নয়ত তাঁদের পক্ষেও কিছু বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। দুপক্ষই অল্প দুচার কথা বুঝতে পারেন, কিন্তু লম্বা বক্তব্য, একটানা ভাষণ শুনে অর্থ উদ্ধার করতে পারেন না।
     
    এটা শুধু আমাদের সেই মঞ্চের সমস্যা নয়, আমার ধারণা, কম বেশি সমস্ত সর্বভারতীয় মঞ্চেরই একই ছবি। অর্থাৎ, স্বাধীনতার সাড়ে সাত দশক পেরিয়েও আমরা এখনও সরকারিভাবে ঘোষিত ত্রিভাষা সূত্র বাস্তবে মেনে নিতে পারিনি। এক দিকে হিন্দিভাষীদের বেশিরভাগই ইংরেজি যথাযথভাবে শিখছেন না। আর অহিন্দিভাষীদের প্রায় সকলেই হিন্দিকে সজ্ঞানে না হোক অজ্ঞানে এড়িয়ে চলছেন।
     
    [দুই] দাপট সর্ব কালে সর্ব দেশে আত্মঘাতক
     
    তুলনায় এক কালের সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা ভাবা যেতে পারে। জারের আমলে সমস্ত অরুশ জাতির উপরে রুশ ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লেনিন জানতেন, ভাষা ব্যবহারের সমস্ত উপযোগিতার দিক থেকে রুশ ভাষা জার সাম্রাজ্যের সকলের কাছেই সুবিধাজনক হওয়া সত্ত্বেও অরুশিদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাদের কাছে রুশ ভাষার প্রভাব নয় দাপটই অনুভূত হত। সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের পর সোভিয়েত রাজ তাই সিদ্ধান্ত নিল, অরুশ প্রজাতন্ত্রগুলিতে আর রুশ ভাষা বাধ্যতামূলক থাকবে না। যাদের যা নিজস্ব ভাষা তাই সেখানে প্রধান সরকারি ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম হবে। রুশ ভাষা থাকলেও তা দ্বিতীয় ভাষার স্থানে থাকবে। পক্ষান্তরে, রুশ প্রজাতন্ত্রের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে একটি অরুশ ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এখানে মনে রাখা ভালো, সোভিয়েত জাতিসঙ্ঘের বারো আনাই ছিল রুশ ভাষিক অঞ্চল। তথাপি রুশ ভাষাকে অরুশিদের উপর চাপিয়ে দেবার কথা ভাবেননি সোভিয়েত শাসকরা। এর ফলে বাকি সমস্ত প্রজাতন্ত্রে রুশ ভাষা বিরোধী মানসিকতা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।
     
    তুলনায় আমরা প্রসঙ্গত বাংলাদেশের কথাটাও ভাবতে পারি। পশ্চিম পাকিস্তানের চাইতে পূর্ব পাকিস্তানই জনসংখ্যার বিচারে আসল দেশ ছিল। অবশ্য দেশ বলতে যদি দেশবাসীকে বোঝানো হয়। দুঃখের কথা, অন্যান্য দেশের মতোই পাকিস্তানের শাসকগণ তা বুঝতে পারল না, মানতেও পারল না। ফলে তারা উর্দু ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করে বাঙালিদের উপরেও চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। বোধ হয় তাদের ভালো রকম ভরসা ছিল ধর্মের ধৃ-ধাতুর উপর। ইসলামের পতাকায় বাংলার আবেগকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে। অচিরেই ঠিক তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। স্বাধীনতা ও পাকিস্তান গঠনের এক বছরের মধ্যেই ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেল। দেখা গেল, ধৃ-ধাতুর তুলনায় বাক্‌-ধাতুর শক্তি বেশ কয়েক গুণ বেশি। ১৯৫২ সালের উত্তাল ভাষা আন্দোলনে ঢাকা শহরের রাজপথে পাঁচ শহিদের রক্তস্নাত মৃত্যুতে কার্যত ঘোষণাই হয়ে গিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তান উর্দু পরিত্যাগে স্থিরসংকল্প, প্রয়োজনে তারা উর্দু এবং পাকিস্তান দুইই পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত!
     
    ভাষার এ এক অদ্ভুত রহস্য। কিংবা ক্ষমতাও বলা যেতে পারে।
     
    আরও একটা তথ্য এই ব্যাপারে উল্লেখ করা ভালো।
     
    বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যাঁরা ভাষার অধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই ভারত ভূভাগ থেকে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ধর্মের নামে ভাগাভাগির পথরেখা ধরে। শেষ পর্যন্ত ধর্ম তাঁদের খুশিও করতে পারল না, বাঁচাতেও পারল না। বাংলা ভাগের সময় তাঁরা যে ভাগ বেছে নিয়েছিলেন, সেখানে গিয়েও তাঁদের ভাষার জন্যই লড়াই করতে হল। প্রায় এক দশক পরে, ১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামের শিলচরে যে ষোল জন বাঙালি ভাষার অধিকারের দাবিতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, তাঁদেরও বায়োডাটা দেখতে গিয়ে অবাক হই যে তাঁরা বেশিরভাগই হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে পাকিস্তান থেকে হিন্দুস্তানে জীবনের নিরাপত্তা ও আত্মসম্মান বাঁচাতে চলে এসেছিলেন। এপারে এসেও তাঁরা শেষ অবধি সেই নিরাপত্তা পেলেন না। আসাম ভূভাগে ঢুকে হিন্দুস্তানেও মুখের ভাষার অধিকার রক্ষায় তাঁদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হল, আত্মাহুতি দিতে হল। দুই তরফেই যার যার ধর্ম এইভাবে ভাষার আবেগের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছিল।
     
    অনাচারি ব্যবস্থার স্বৈরপন্থী শাসকরা কোনো দেশেই এই সব ঐতিহাসিক তথ্য থেকে কিছু শেখে না। পাক শাসকরাও শেখেনি, ভারতীয় শাসকরা শেখেনি। শেখেনি বলেই আসামের ভাষা জটিলতাকে সমাধানের জন্য তারা কিছু চটজলদি এবং ভোটাকর্ষক ব্যবস্থা নিয়ে বিবদমান বিভিন্ন পক্ষকে আপাতত সন্তুষ্ট করে এগোতে চেয়েছে। আসামে বাংলা ভাষার দাপটে অসমীয়া জনগণের মধ্যে ভাষা সংস্কৃতির অস্তিত্বের বিপন্নতার আশঙ্কাকে দূর করার জন্য সেখানে বসবাসকারী এবং দেশভাগের ফলে আগত উদ্বাস্তুদের স্রেফ ভাষার কারণে “বিদেশি বিতাড়ন” করে বাঙালিদের সংখ্যা হ্রাস করাটা একটা যুক্তিসঙ্গত ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক পদ্ধতি হতে পারে না। তার জন্য অন্যভাবে নতুন করে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রক্ষাকবচ সৃষ্টি করতে হবে—এই বোধ শুধু আসামের আঞ্চলিক দল অসম গণতান্ত্রিক পরিষদ নয়, জাতীয় দল হিসাবে কংগ্রেস, এমনকি জাতীয় স্তরের বামপন্থী দলগুলির মধ্যেও জাগ্রত হয়নি। বিজেপি আবার এরই মধ্যে ঘোলা জলে দুচারটে চিতল ধরার আশায় (এই সুযোগে এনআরসি করে কয়েক লক্ষ মুসলমানকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর মতলবে) নেমে পড়েছিল। এই কাজে তারা আবার সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিচার কক্ষকেও প্রায় কুক্ষিগত করে ফেলেছিল। অবশেষে যখন দেখা গেল, মুসলমানদের (৪ লক্ষ) তুলনায় হিন্দুদেরই (১৪ লক্ষ) বেশি বিতাড়ন করতে হচ্ছে, তারা এখন নিজের তৈরি এক ফাঁসকলে আটকে পড়ে গেছে। আর অগপ-র কাছে যেহেতু হিন্দু না মুসলমান এই প্রশ্নের চাইতেও বাঙালির সংখ্যাটাই বড় কথা, তারা বাঙালির এত কম সংখ্যক বিতাড়নে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। ফলে আসামের এনআরসি এখন বিয়াল্লিশ বাঁও জলের তলায়। মাঝখান থেকে বেশ কিছু নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে গেল মৃত্যু শিবিরের দেওয়ালের আড়ালে, যাদের আবার কেন্দ্রীয় সরকার মরণোত্তর “স্বদেশি” বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। অর্থাৎ, এত আয়োজন করেও যে শেষ পর্যন্ত একজনও “বিদেশি” সনাক্তকরণ ও বিতাড়ন সম্ভব হয়নি, এবং যাদের বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা যে ভুল হয়েছে তা কার্যত মেনে নিতে হল। 
     
    রোগ হয়েছে কলেরা, চিকিৎসা হচ্ছে টাইফয়েডের—অসুখ সারবে কীভাবে?

    [তিন] ভ্রান্ত ভাষা নীতি 
     
    ভারতে ভাষা নীতির প্রণেতাগণ হিন্দিকে দেশ ও দেশবাসীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে যতটা ব্যস্ত হয়েছেন, দেশের ভাষা বৈচিত্র্যকে বোঝার জন্য তার এক আনা চেষ্টাও করেননি। ভাষা মনস্তত্ত্বকে তো নয়ই। হিন্দির রাস্তা খুলে দিতে গিয়ে তাঁরা কার্যত ইংরেজি ভাষা শিক্ষা চর্চার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। সংবিধানে তাঁরা এমন দুটি ধারা সংযোজন করেছেন (Article 344, Sections 1 as well as 2a and 2b) যার বলে রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত যে কোনো শিক্ষা কমিশনকে হিন্দির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং ইংরেজির ব্যবহার হ্রাসের পরামর্শ দিতেই হবে। তারপর আবার বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশ দেখিয়ে নির্লজ্জের মতো দাবি করেছেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষা কমিশনের মাননীয় সদস্য শিক্ষাবিদরাই নাকি প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজির গুরুত্ব কমাতে এবং হিন্দির ব্যবহার বাড়াতে বলেছেন। একটা দেশের প্রশাসনের সর্বোচ্চস্তরে এই রকম সাংবিধানিক  জোচ্চুরি দিয়ে আর যাই হোক, শিক্ষা বা ভাষা সমস্যার জটিলতার কোনো স্থায়ী সমাধান করা যায় না। তার জন্য সততাও লাগে, প্রজ্ঞাও লাগে।
     
    হিন্দিভাষীদের কাছে এই নেতারা বুঝিয়ে চলেছেন, ইংরেজির বিস্তৃত অস্তিত্বই হিন্দি প্রচারের পক্ষে প্রধান বাধা। অতএব তাঁরা ইংরেজিকে কার্যত বয়কট করে চলেছেন। সরকারি বদান্যতায় এমনকি সিবিএসই পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিকেও বাস্তবে হিন্দি মাধ্যম করে তোলা হয়েছে। আর প্রায় সমস্ত কেন্দ্রীয় স্কুলেই রাজ্য ভাষাগুলিকে প্রান্তিক করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যে রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষিক জনসাধারনের মনে যে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে চলেছে, সরকারি কর্তারা সেই খবর রাখার প্রয়োজন মনে করেননি।
     
    অন্য দিকে, বিভিন্ন জনজাতিগুলিও—সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোল, ভীল, শবর, বোরো, গারো, প্রমুখ—যে ক্রমশ তাদের নিজস্ব ভাষাকে কেন্দ্র করে সচেতন হয়ে একই রকম অধিকার ও সুযোগসুবিধার দাবি করতে পারেন এবং বাস্তবে করছেনও—সেই কথাও সেই নেতৃবৃন্দ ভুলে থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন। এর পরিণাম কী হল দেখা যাক। আদিবাসী ভাষা সংস্কৃতির রক্ষা ও সমৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘকাল আন্দোলন করে তৈরি হল ঝাড়খণ্ড ছত্তিসগড় ইত্যাদি রাজ্য। সেই সব রাজ্যের সরকারি ভাষা কী হল? হিন্দি। আর সেই সব রাজ্যের আদিবাসী নেতারা জনজাতির ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নতির দাবিতে আন্দোলনের জোরে জনপ্রিয়তা অর্জন করে দিব্যি নিজেদের পুরনো দাবিদাওয়া ভুলে কখনও কংগ্রেস কখনও বিজেপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখন হিন্দি ভাষার মাধ্যমে সেই সব রাজ্যে সরকারি কাজকারবার চালাচ্ছেন। এর দ্বারা এই রাজ্যগুলির জনসাধারণের ভাষা সংস্কৃতির আবেগের প্রতি কী বিপুল বিশ্বাসঘাতকতা করা হল ভেবে দেখুন।
     
    জবরদস্তির ভাষা কখনও আপন হয় না। চাকরি বা অন্য প্রয়োজনে বড় জোর তাকে মেনে নেওয়া হতে পারে। হিন্দির ক্ষেত্রে এই জবরদস্তি করতে গিয়ে তাকে অহিন্দিভাষীর কাছে আরও অপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। এই জন্যই একজন অহিন্দিভাষী কর্ম সূত্রে হিন্দি জানলেও সুযোগ পেলেই এবং বিকল্প থাকলেই হিন্দিকে বর্জন করেন। এটা আবার হিন্দি ভাষার পক্ষেও যথেষ্ট অমর্যাদাকর। আর কেন্দ্রের এই জবরদস্তি রাজ্যগুলোকেও আপন সীমানায় ভাষাগত জবরদস্তিতে উৎসাহিত করে থাকে। ফলে আসাম যে তার সীমানায় অসমীয়াকে নিয়েও গায়ের জোর খাটাতে চায় তাও আসলে ভারত সরকারের ভাষানীতিরই প্রাদেশিক প্রতিফলন। নীচের দিকে জোর খাটানো বন্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে উপর দিক থেকে জোর খাটানোর রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
     
    বিভিন্ন অছিলায়, আমরা এত কাল বালির স্তুপে মুখ গুঁজে সত্যকে অস্বীকার করে এসেছি। ভেবেছি ঝড় এলেও আমার ক্ষতি হবে না। আর ঝড় এসে আমাদের আরও বেশি করে চোরাবালিতে আটকে দিয়ে গেছে। এক আসাম বাঙালি বিদ্বেষের রাজনীতির শিকার হয়ে জাতীয় দলগুলির নিজ নিজ স্বার্থের ক্রীড়নক হয়ে খেলতে খেলতে আজ তিন চার টুকরো হয়ে গেছে। আগামী অদূর ভবিষ্যতে আরও ক্ষুদ্রতর হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। জাতিসত্তা ভাষাসত্তার দাবি যত প্রবল হবে, বোরো গারো খাসিয়া ফালং প্রভৃতি (২৬টি) জনজাতিগুলির আপন অস্তিত্ব ঘোষণার আওয়াজ যত শক্তিশালী হতে থাকবে, আসাম ততই বিভক্ত হয়ে চলবে। অনুরূপ আওয়াজ অন্যান্য রাজ্যেও উঠতে থাকবে।
     
    একে বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে গাল পেড়ে লাভ নেই। সংযুক্তি যদি জবরদস্তি নির্ভর হয়, তার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে সংস্রব তো ছাড়তেই হবে। আগ্রাসনকারীর জোয়াল থেকে বেরতে হলে বিচ্ছিন্ন না হয়ে উপায় কী? যদি তুমি চাও আমি যেন বিচ্ছিন্ন না হই, তাহলে তোমাকেও আমার ভাষাকে তোমার ভাষাটির মতোই সমান যথোচিত সম্মান ও গুরুত্ব দিতে হবে। মুখের বচনে নয়, কাজের প্রমাণে।  

    [৪] আবেদন
     
    সুতরাং সেই সমস্ত বিভাজন রুখবার একটাই উপায়—সকলকে নিয়ে চলার রাজনীতি। সকলের ভাষাকে সমান মর্যাদা দেবার ইচ্ছা এবং কার্যক্রম। হিন্দির জন্য ৫০০ টাকা খরচ করে বাংলা কিংবা তেলুগুর জন্য ২০ টাকা করে খরচ করতে থাকলে হিন্দির প্রতি অন্যদের আগ্রহ এক তিল তো বাড়বেই না, উলটে কমে যেতে থাকবে। বাংলার সাহিত্য একাডেমি যদি যোগ্য নেপালি সাহিত্যিককে পুরস্কার দেবার কথা ভাবতে না পারে, নেপালি জনগণের মনে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগতে এবং তীব্রতর হতে শুরু করবেই।
     
    আমরা যখন বছর বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৯শে মে বাংলা ভাষার সম্মানার্থে ভাষা শহিদ দিবস পালন করি, শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে যথার্থ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করি, তখন আমাদের শপথ নিতে হবে: পুরনো ছল চাতুরির আবর্জনা সরিয়ে ফেলে আগামী দিনে দেশে আমরা একটা বৈজ্ঞানিক মানবমুখী ও গণতান্ত্রিক ভাষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হব। 
       

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন