এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সিনেমা সিনেমা

    Sara Man লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ মে ২০২২ | ৭১৫ বার পঠিত
  • দীর্ঘ সময়, তা দীর্ঘ বলতে কম করে পঁচিশ ছাব্বিশ বছর তো হবেই, মানে বলতে চাইছি ঐ সিনেমা দেখার ব‍্যাপারটা। দেখা মানে কর্তা গিন্নি টোনাটুনি শুধু দুজন মিলে সিনেমা দেখার কথা বলছি। কর্তা গিন্নি হবার আগে অনেক দেখতাম - বেবিস ডে আউট, আগের লায়ন কিং - এসব দেখেছিলাম। তবে কর্তা গিন্নি হবার পরে যা হয়, সব জানলা দিয়ে উবে গেল। না মানে আমার সিনেমা দেখাটা উবে যায়নি, ঐ কর্তার সঙ্গে দুজন মিলে দেখাটা আর হলনা। বিয়ের আগে যখনই দেখা হত, উড বি একটা করে দু ইঞ্চি স্কোয়ার মাপের খুদে লাভ কার্ড হাতে ধরিয়ে দিত, কোনটায় মিকি - মিনি, কোনটাই কী যেন কীসব, অতশত মনেও নেই ছাই। বিয়ের পরে জেনেছিলাম পাড়ার দোকান থেকে পঞ্চাশ পয়সা করে এক প‍্যাকেট কার্ড কিনে রেখেছিল - রোজ একটা করে নিয়ে আসত। আমি এতটাই বোকা, যে ভেবেছিলাম কর্তা বোধহয় খুব রোমান্টিক। পরে বুঝলাম কর্তা রোমান্টিক তো নয়ই বরং ভীষণ কাঠখোট্টা, থিয়েটার প্রেমী আঁতেল, নাটকের টিকিট জমায়, সিনেমাকে পাত্তা দেয়না আর হাড়কেপ্পন, খুব হিসেবী, মানে সিনেমার টিকিট কেটে পয়সা নষ্ট করার পক্ষপাতী মোটেই নয়। এদিকে আমি সিনেমাখোরের সিনেমাখোর। জ্ঞান হওয়ার আগে থেকে অসিত বরণ, উত্তম কুমারের সিনেমা দিয়ে হাতেখড়ি। মামার বিয়ে হল - নতুন বৌকে নিয়ে মায়ার সংসার। রবিবার এল তো বাবা মার হাত ধরে সব‍্যসাচী। মাসিমণির বিয়ের কথা চলছে, নতুন পাত্রকে নিয়ে চিরন্তন।  কালে কালে বাবার হাত ধরে টোয়েন্টি থাউজ‍্যান্ড লীগস আন্ডার দ‍্য সী, এন্টার দ‍্য ড্রাগন, গ্রেট এসকেপ, গানস অফ নাভারোন। অবশ্য হিন্দি সিনেমায় বাধানিষেধ ছিল। স্কুল পাশ করে কলেজ পর্যন্ত শুধু সফেদ হাতি আর পার। কলেজে উঠে ও ব‍্যথাও মিটে গেল। নুন শোয়ে ফুল অর কাঁটে, প্রতিবন্ধ, লমহে - আহা কীসব দিন। ইংরেজি ও দেখেছি, কিন্তু ন-না, ওসব নাম বলা যাবেনা। বিয়ের পরেও ভেবেছিলাম দিন বুঝি এমনই রঙিন থাকবে। কিন্তু মানুষ যা ভাবে সবটাতো আর সত‍্যি হয়না, তাই প্রথম কয়েক বছর কাটলো সিনেমা বিহীন ফিকে ফিকে। তবু বাপু আমি কি হাল ছাড়ার পাত্রী? দাঁতে দাঁত চেপে থাকি - ফাইট টুম্পা ফাইট। 
    তারপর একদিন দেখি, আমার চারপাশে আবার প্রজাপতিরা উড়ছে, কচি কচি বুলি, হাঁটি হাঁটি পা। আমিও কন‍্যে, ভাইপো সব মিলে সিনেমা - দল গঠন করে ফেললাম। গুপ্তধনের সন্ধানে, বাহুবলী থেকে আর আর আর - আর আমাকে পায় কে? আবার শুরু সিনেমা পার্টি, ঠিক যেমন আমি আর বোন যেতাম - বাবা, মা, মামা, মাসির সঙ্গে। 

    যৌবন গেছে, প্রৌঢ় হয়েছি। প্রজাপতিরা খুবই ব‍্যস্ত। সবসময়ে তাদের বিরক্ত করা যায়না - উচিত নয়। এখন মাঝে মাঝে একাই যাই। এইতো কদিন আগে বেলাশুরু দেখে এলাম একা একা, নিজেই কাঁদলাম, নিজেই চোখ মুছে বাড়ি এলাম। তা হল কী, বহু বছর পরে কর্তার সাধ হল পথের পদাবলীর পরিচালক অপরাজিত রায়কে দেখবে। মেয়ের সময় নেই। পড়া আছে। তার ওপর সে না পড়েছে মূল উপন‍্যাস, না দেখেছে তালপাতার বাঁশি বইটার মলাটের অলঙ্করণ। অপরাজিত বইটা দেখে সে আসল নামগুলোই তো বুঝবেনা। কে বিমলা, কে বরুণা - তার কাছে সবাই সমান। মেয়ে বাদে বাড়িতে পড়ে রইলাম আমি - ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। তাই এই এতোগুলো বছর মানে সিকি শতাব্দী পরে আবার কর্তা গিন্নি মিলে সিনেমা দেখতে বসলাম। তাও কর্তা হলে ঢোকার আগে পর্যন্ত হম্বিতম্বি করছে - আমার টিকিট কাটার পয়সা নেই। তুই দেখাবি তো? অনেক বছর হল, এসব কথার আর আজকাল উত্তর দিইনা। দুটো টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম। আমি এ লাইনে ঝানু। তাই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে একটা কাঁথা স্টিচের গায়ের চাদর ওড়নার মতো গলায় করে নিয়ে এসেছি। সিটে বসে মাথা ঢেকে মুড়ি সুড়ি দিয়ে বসে আছি। অভনি পি ভি আর হলের ভিতরটা বরফ ঠান্ডা। ঘন্টা খানেক বাদে হঠাৎ গলায় টান। পাশে তাকিয়ে দেখি, কর্তা রাজভোগ টাইপের গোল গোল চোখ করে আমাকে দেখছে। 
    - কী হল?
    - এটা চাদর? আমায় একটু দে না!
    ও হরি এতদিন পরে সিনেমা দেখার নেশায়, পাশে যে আমি এতক্ষণ মুড়িসুড়ি ঝোলাবুড়ি হয়ে বসে আছি খেয়াল করেনি মোটে। আরে একি! আমি ও তো খেয়াল করিনি যে কর্তা সাত পুরোনো, জিলজিলে, মিনি হাতা গেঞ্জি পরে সিনেমা দেখতে এসেছে আর ঠান্ডায় হাত দুটো বুকে চেপে জড়োসড়ো বিবেকানন্দ হয়ে বসে আছে। শেষমেশ কী আর ক‍রি, একটাই চাদর লম্বা করে দুটো সিটে দুজন চাপা দিলাম। 

    হল থেকে বেরিয়ে এসে আবার বলছে, কি রে ওপরে ফুড কোর্টে যাবিনা? আমাকে খাওয়াবি না? ঠান্ডা দৃষ্টিতে কর্তার দিকে তাকিয়ে ওপরে ওঠার বদলে নিচে নামার চলমান সিঁড়িতে চেপে ফেরার রাস্তা ধরি। আমি এমনিতে নিষ্ঠুর মানুষ নই। তবে কিনা কড়া হতেই হয়। তিনদিন আগে কর্তার পেট জবাব দিয়েছিল। নারায়ণা ইমার্জেন্সিতে স‍্যালাইন দিতে হয়েছে। এখনও পাঁচদিনের ও টুর কোর্স শেষ হয়নি। বুড়ো খোকা নিয়েই চলতে হবে। করার তো কিছু নেই। 

    কলমে শারদা মণ্ডল
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Emanul Haque | ২৮ মে ২০২২ ২৩:১৫508191
  • বাহ
  • Sara Man | ২৯ মে ২০২২ ০০:১৩508192
  • নেহাৎ আটপৌরে কথা, আপনার ভালো লাগল, ধন‍্যবাদ।
  • শ্রাবণী দি | 115.96.124.2 | ৩০ মে ২০২২ ১৫:৩৮508239
  • বেড়ে লিখেছিসlaugh
  • Sara Man | ৩০ মে ২০২২ ১৫:৪৩508240
  • কি আর করি বলো শ্রাবণীদি। রোজকার সুখদুঃখের ডাইরি লিখি। সংসার, কর্মক্ষেত্র - হাজার জটিলতা থেকে একটু মুক্তি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন