আমি সবসময় বাসের পেছনের সিটে বসি, আজকেও তাই বসেছিলাম। কানে হেডফোন থাকেই, আজও ছিল। কালীঘাট পেরোতেই শুনতে পেলাম, কন্ডাক্টর সামনে বসে থাকা একজন ভদ্রলোককে কিছু একটা বলছেন। বলা বাহুল্য, চিৎকার করছেন কন্ডাক্টর ভায়া। এইসব জিনিসে একটু কৌতূহল বেশি আমার , উঠে দাঁড়িয়ে তাকালাম সামনে। দেখলাম, এক ভদ্রলোক একটি তিন চার বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, বাচ্চাটার নিম্নভাগে কোন পোষাক নেই আর সিটে একজন ভদ্রমহিলা কিছু একটা পরিস্কার করছেন। পাশে ওমরেশ পুরীর মত ভান করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কন্ডাক্টর মশাই।
সামনে এগিয়ে গিয়ে ব্যাপারটা বুঝলাম, বাচ্চাটি পায়খানা করে ফেলেছে। তাই কন্ডাক্টর মশাইয়ের এত রাগ। বাচ্চাটিকে ডাইপার কেন পরানো হয়নি। সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তিনি। ভদ্রলোককে বলতে শুনলাম "ও এমন করেনা দাদা। পেট খারাপ কাল থেকে। তাই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।"
কন্ডাক্টর বললেন "একটা ডাইপার এর দাম তিরিশ টাকা। তাও কেনার মুরোদ নেই?"
ভদ্রলোক শান্ত স্বরে জবাব দিলেন "নেই দাদা, সত্যিই নেই।"
পাশে থেকে একজন মহিলা বললেন "কি গন্ধ! এই বাসে আর লোক উঠবে কি করে?"
গন্ধ আমিও পাচ্ছিলাম কিন্তু ঘৃনা হয়নি। কারণ, বাড়িতে বাচ্চা থাকলে এই গন্ধ অভ্যাস হয়ে যায়। হঠাৎ দেখলাম পাশ থেকে একটা বছর বাইশের যুবক ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে আমার পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে । সিটের ওখানে গিয়ে ডেটলের বোতলের ঢাকনা খুলে কিছুটা ছড়িয়ে দিল সিটের উপর। আমি রুমালটা দিলাম, তাতে ডেটল দিয়ে বাচ্চাটাকে পরিস্কার করল ছেলেটা। তারপর আমায় জিজ্ঞেস করল "একশ টাকা খুচরো হবে দাদা?"
বললাম "কেন?"
বলল " আসলে বাড়ি থেকে একশ পনেরো টাকা নিয়ে বেরিয়েছিলাম, পনেরো টাকা ভাড়া দিয়েছি। এখন একশ টাকার নোট। বাচ্চাটার ডাইপার ৩৭ টাকা। তাই..."
আমি বললাম " আমি দিচ্ছি, আপনি রাখুন। অনেক করলেন।"
পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে বললাম "বাস থেকে নেমে কিনে নেবেন..."
ভদ্রলোক মেয়েকে কোলে নেওয়া অবস্থাতেই হাত জোড় করে বললেন "অনেক উপকার করলেন দাদা।"
কিছু না বলে সিটে গিয়ে বসলাম, আর কানে হেডফোন লাগাইনি। ওই ছেলেটার জন্য গর্ব হচ্ছিল, কে বলেছে পুরুষ কেবল ধর্ষক? কে বলেছে পুরুষের মায়া মমতা নেই? কে বলেছে নতুন জেনারেশন মানুষকে ভালোবাসতে জানে না? কে বলেছে, কে?