এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • থ্যাংক ইউ

    Sourav Maji লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৫১৪ বার পঠিত
  • ঠিক ১১ টা বাজলেই শব্দটা ছাদের দিকে থেকে আসে। কখনো কখনো ধুপ ধুপ, কেউ যেনো হাঁটছে। আবার কখনো দেওয়ালে খস খস শব্দ। কোনো কোনো দিন জানালার কাঁচে খুট খুট শব্দ। প্রথম প্রথম ছাদে কেউ মদ বিয়ার খাচ্ছে ভেবে রাকেশ ইগনোর করে যেত। কিন্তু কয়েকদিন ছাড়া ছাড়া একই ঘটনা। রাকেশ জানলা খুলে জোরে চেঁচালো- ছাদে কে রে? রোজ রোজ পুরো টাউনশিপ এর মধ্যে আমাদের ছাদটাই পাও পার্টি করার জন্য। 
    সব চুপ.. কারো কোনো সাড়া নেই। 
    - কী হলো কে ছাদে?
    আর কোনো আওয়াজ হলো না।
    দিন দুয়েক পরে আবার সেই ধুপ ধুপ দিয়ে শুরু, রাকেশ বলতেই চুপ, খানিক পরে ঠুক ঠুক শব্দ। এবার রাকেশ আর থাকতে না পেরে বাড়িতে থাকা শিলিগুড়ি থেকে নিয়ে আসা লম্বা ছাতা দরজা খুলে বলে।
    - সালা কোন হারামী ছাদে পার্টি করবে। বাবার ছাদ পেয়েছিস রোজ রাত্রে। 
    বলতে বলতে পৌঁছে যায় সোজা ছাদে। দেখে ছাদের দরজা বন্ধ।
    - এত স্মার্ট তোরা! ভেবেছিস একজন ছাদ থেকে এসে দরজা বন্ধ করে পালাবি। আমি শব্দ পাচ্ছি।
     তারপর দরজা খুলে ছাদে যায়। গোটা ছাদে কেউ নেই। বোতল টোতল পড়ে আছে, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যেনো পুরনো বোতল। ইতি উতি এদিক ওদিক চিপস এর প্যাকেট পড়ে। রাকেশ একপ্রকার নিশ্চিত। সোসাইটির বখাটে ছেলেরা এসে ওর ফ্ল্যাট এর উপরে পার্টি করে।
    পরদিন সকালে রাকেশ সোসাইটির সেক্রেটারি অলক বাবুকে কল করে। পুরো ঘটনাটা বলতে বলতে অলক বাবুর সাথে একচোট বাওয়ালও হয়ে গেলো। শেষমেষ ঠিক হলো, বিকালে সোসাইটির মিটিং বসবে।
    হোয়াটসঅ্যাপ গ্রপে শেয়ার করে দেওয়া হলো আজ বিকালে মিটিং হবে। মোটামুটি ভাবে এখানে মিটিং মানেই সন্ধ্যার স্ন্যাকস টা ফ্রী হয়ে যায়। তাই মিটিং এ লোকের অভাব হয় না। আর সব সেক্রেটারি ই মোটামুটি চায় তার সময়কালে খাওয়া দাওয়া যেনো ভালো হয়, টাকা তো আর নিজের পকেট থেকে যাচ্ছে না।
    সন্ধ্যাবেলার মিটিং, মোটামুটি ঘর ভর্তি লোক। অলোক বাবু এখন অফিস থেকে ফেরেননি আর এর মধ্যে লোকজন পিএনপিসি করছে। মিটিং হলটা তিন নম্বর টাওয়ার এর নিচে গ্যারেজ স্পেস ঘিরে দিয়ে বানানো। পাশেই বাউন্ডারি ওয়াল, ঐদিকে যে তেলে ভাজার দোকান আছে ওখানের নিতাই দা ব্যাগ নিয়ে ঢুকেছে সাথে চায়ের বড়ো ফ্লাস্ক, আজ বোধহয় কফি আছে, গন্ধ তাই বলছে। 
    মিটিং যে কারণে ডাকা সেই কারণটি ছাড়াও আরও নানাবিধ এসেনশিয়াল টপিক নিয়ে আলোচনা হলো। যেমন মাসিদের গেট পাস থাকবে কিনা, ৬ তলার ফ্ল্যাট থেকে নোংরা ছুড়ে বাইরে কে ফেলে দিচ্ছে, ৪ নম্বর টাওয়ার আর ৬ নম্বর টাওয়ার মাঝে কুকুরে বোস বাবুর কুকুর হেগে দিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি...
    শেষমেষ ঠিক হলো কয়েকদিন এর জন্য গেট এর দুজন সিকিউরিটির একজন রাকেশ এর বিল্ডিং এর সামনে রাত্রে থাকবে। 
    -আজ রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারা যাবে। 
    এই ভেবে রাকেশ বিছানা টিছানা ঝাড়ছে, এমন সময় আবার ছাদে ধুপ ধুপ। রাকেশ রেগে বোম, নিচে গিয়ে দেখে সিকিউরিটি ঘুমাচ্ছে। মনের সুখে হেব্বি ঝাড় দিয়ে দিল। তারপর সিকিউরিটি কে শুদ্ধু ছাদে গিয়ে দেখে কেউ নেই। সিকিউরিটি নিচে চলে গেলো, আর রাকেশ তার ফ্ল্যাটে। ওই রাত্রে তারপর আর কোনো শব্দ নেই। 
    পরদিন সকালে দোকানে গিয়ে ২ টা তালা কিনে ব্রিজের নিচের দোকান থেকে আরো সাতটা করে চাবি বানিয়ে সব ফ্ল্যাটে দুটো করে চাবি দিয়ে দিল। একটা চাবি নিচের গেটের আর আরেকটা ছাদের দরজার। 
    - যাক আর চাপ নেই। এবার ঘুমাবো। 
    সেদিন রাত্রে আর কোনো সাড়া শব্দ নেই। তারপর দিনও তাই। গোল বাঁধলো দুদিন পরে। 
    আবারও সেই ধুপ ধুপ আর খস খস শব্দ। রাকেশ চুপ করে শুনে যাচ্ছে। 
    - একবার কি ছাদে গিয়ে দেখে আসবো! 
    বলে চাবি নিয়ে ছাদের দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকাতেই কার্নিশ এর ধারে একজন কে দেখা যায়। ছাদের ল্যাম্পটা বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। মোবাইল এর আলো জ্বেলে বোঝার চেষ্টা করে এটা কে? -নিচের গ্রিল এ তো তালা বাইরের কেউ তো ঢুকতে পারবে না। তাহলে কি বিল্ডিং এর কি কেউ আমার সাথে বদমাইশি করছে?? দেখি তো কে।
    আস্তে আস্তে সামনে পৌঁছায় রাকেশ। হঠাৎ লোডশেডিং। মোবাইল এর ফ্ল্যাশ লাইট টাও কিরকম আসতে করে কমে আসছে। কি যেনো একটা ধাক্কা লাগল। রাকেশ পরে গেলো ছাদের উপরে। মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো। নাকে নতুন রঙের মিষ্টি গন্ধ। ঝুপ করে একটা শব্দ কানে এলো। দেখে পাশে এক ছেলে বসে আছে। মাথার খুলির পাস দিয়ে রক্ত বইছে। চোখ লাল, আর জামাকাপড় যা পরে আছে তাতে বিভিন্ন রং লেগে আছে। রাকেশ এর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। 
    রাকেশ এর গলা শুকিয়ে আসছে। জ্ঞান হারাবে হারাবে এমন সময় ছেলেটা বলে ওঠে
     - বাবু সেদিন তুমি বলেছিলে সেফটি বেল্ট পরার কথা। আমরা তোমার কথা শুনে হেসেছিলাম। বলেছিলাম ওরকম কত বড় বড় বিল্ডিং রং করে দিলাম, কিছু হয়নি। তোমাদের ওই পুঁচকে বিল্ডিংয়ে কি হবে!! তখন কিছুই হয়নি। কিন্তু হপ্তা দুয়েক আগে তোমাদের মত একটা বিল্ডিং এ রঙ করতে গিয়ে দড়ি ছিড়ে পড়ে আমি মারা গেছি। তোমাকে Thank You বলতে এসেছিলাম।
     
    *সৌরভ মাজি*

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন