এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • যে সুচিত্রা সেন কিডন্যাপ হয়েছিলেন 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৫৯৫ বার পঠিত
  • কুলদা রায় একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। এই জন্য নয়, যে, তিনি বিপজ্জনক শব্দ লেখেন। নতুন করে আর বিপজ্জনক কিছু লেখা তো সম্ভব নয়, সব শব্দই এখন কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে অভিধানে জমানো আছে। সব বাক্যই ব্যাকরণে বাঁধা। রবীন্দ্রগানের সব সুরই আছে স্বরলিপিতে। সব নদীই সমুদ্রে পড়ে, আর বিপ্লব শেষ করে সব পাখিই ঘরে ফেরে।
     
    আসল বিপদ তাঁর দেখার ভঙ্গীতে। কত লোকে কত ভাবে দেখে। কেউ আড়চোখে, কেউ সোজাসুজি। কারও দৃষ্টি ঘোরালো, কেউ চোখ পাকিয়ে তাকায়। কেউ কটাক্ষ করে, কেউ রাখে নজরবন্দী। কিন্তু দেখে একই জিনিস। সামনে সুচিত্রা সেনকে পেলে, সবাই 'মহানায়িকা'ই বলবে। কিংবা মোহময়ী। কিংবা মুনমুন সেনের মা। মানে, অভিধানে যা লেখা আছে। ফিল্মফেয়ারে বা আনন্দলোকে। 
     
    কিন্তু কুলদা রায় বিপজ্জনক এই কারণে, যে, তিনি এর মধ্যে থেকে এমন কিছু দেখে ফেলবেন, যা ব্যাকরণে নেই। এ কথা সক্কলে জানে, যে, সুচিত্রা সেনকে যখন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হল, তখন তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। কাউকে দেখা দিচ্ছেন না। শোনা যায়, সুচিত্রা সেন তার দরজার নিচে দিয়ে একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, না, তিনি এ পুরস্কারটি নিতে পারেন না। সুচিত্রা সেন সেজে থাকতে তার আর ভালো লাগছে না।

    এখান থেকে কুলদা রায় প্রত্যক্ষ করেন, যে, উনি আসলে সুচিত্রা সেন নন। সেজে ছিলেন মাত্র। আসল সুচিত্রা সেন তবে কোথায়? জানার জন্য কুলদার লেখা গল্প পড়তে হবে। তাতে যাই থাক,মোদ্দা কথা এই, যে, সেটা আম পাবলিকের নজরে পড়েনি। 

    কুলদা বাংলায় গল্প লেখেন। কুলদার বিপজ্জনক দৃষ্টির কারণে, সে গল্প ভারত না বাংলাদেশের, বোঝা ক্রমশ দুষ্কর হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার দুমদাম ঢুকে পড়ে সীমানাহীন ফেসবুক। জানা যায় কাবাশরীফে কারা নাকি একটা হিন্দুমূর্তি বসিয়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষজ্ঞানে লোকে তার ছবি দেখে। বিপদ দেখে। ষড়যন্ত্র দেখে। কী ভয়ানক এই ষড়যন্ত্র। সিসিটিভি এড়িয়ে, নিরাপত্তা টপকে, কীভাবে করল এই অপকর্ম? কে করল? ইহুদিরা? নাঃ হিন্দুরা। এইসব নানা গূঢ় সত্য। কিন্তু কুলদা দেখেন অন্য জিনিস। হিন্দু লোকটি মূর্তি আসলে বসিয়েছে ফেসবুক দিয়ে গিয়ে। সেখানে সিসিটিভি নেই। সিকিউরিটি নেই। স্রেফ একটা অ্যাকাউন্ট থাকলেই হল।

    কুলদা বিপজ্জন এই কারণে, যে, ফেসবুকের মতো, তাঁরও পাসপোর্ট নেই। তিনি সীমান্তের এদিকে-ওদিকে অবাধ বিচরণ করেন। ইলিশের মতো। কালো কাউয়ার মতো। দাঙ্গার মতো। ধর্ষণের মতো। যে ইলিশ ওঠেনা, স্বপ্নেই থেকে যায়। যে কাউয়া আসলে কাপড়ের, ওড়া তার হয়নি। যে দাঙ্গা পুলিশ রিপোর্টে নেই, সব শান্তিকল্যাণ। যে ধর্ষণ কখনও হয়নি। শুধু স্বাস্থ্যপরীক্ষায় ধরা পড়ে, গ্রামের প্রতিটি মেয়ে একদিন গর্ভবতী হয়ে গেছে। কীকরে কে জানে।

    কীকরে এসব হয়, কেউ জানেনা, কুলদা জানেন, তাই তিনি বিপজ্জনক। "এ গল্পগুলো বাংলাদেশের বলার চেয়ে উগান্ডা নামের কোনো দেশের বলাটাই নিরাপদ।" -- লিখেছেন তিনি। এ বিশ্বায়িত পৃথিবীতে ভারত কিংবা বাংলাদেশের চেয়ে উগান্ডা কি নিরাপদতর? আম পাবলিক তা বলবেনা। কুলদা বলেছেন। তাঁর দৃষ্টি আলাদা। যে কারণে কুলদা রায় একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। 

    পুঃ বইটি বেরোচ্ছে বইমেলায়। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব  এষ। আর আপনারা যারা এই বিপজ্জনক প্রকল্পের অংশীদার হতে চান, আংশিক অথবা পূর্ণ দত্তক নিয়ে, সভয়ে যোগাযোগ করুন। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন