এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি – সামাজিক বিস্মৃতিতে বিলীন এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা

    জয়ন্ত ভট্টাচার্য
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ২৬৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কলেরা, ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশনের ওষুধ কি? কিভাবে পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠেন প্রতিদিন? উত্তর আমাদের সবার জানা – স্যালাইন ড্রিপ বা ইনফিউশন। একবার ভাবুন তো – যদি এই সামান্য, এবং অসামান্য, আবিষ্কারটি না হত – তাহলে আজকের পৃথিবীর চেহারা কি হত? এই আবিষ্কারের প্রধান পুরোহিত একসময় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ছিলেন। কত ছাত্রকে নতুন পথে, মৌলিক চিন্তায় ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমরা তাঁকে জানি না কিংবা ভুলে গেছি। নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে থাকতেন এই মানুষটি। সেসময়ে অর্থাৎ ১৮৩৫-৪০ সালে, গরীব ভারতবাসী যাতে কমদামে ওষুধ পায়, তার জন্য চেষ্টা করেছেন। তাঁর কেমিস্ট্রি ক্লাসের ছাত্ররা যাতে তাদের জ্ঞানকে নিজের দেশের সম্পদ উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য প্রয়োগ করতে পারেন – সে শিক্ষা দিয়েছেন। বেশি দামী ইউরোপীয় ওষুধের পরিবর্তে দেশজ উপাদান থেকে নতুন পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরি করার জন্য ছাত্রদের বারংবার উজ্জীবিত করেছেন। এবার মানুষটিকে চেনার চেষ্টা করা যাক।

    স্থান – ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ড, ২৬ অক্টোবর, ১৮৩১। তথাকথিত “ভারতীয়” কলেরায় আক্রান্ত প্রথম রোগী চিহ্নিত হল। মারাও গেল। এক বছরের মধ্যে ২৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হল কলেরায়। যদিও ল্যান্সেট-এর সাম্প্রতিক হিসেব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ৫০,০০০ ছিল। এ সময়ে এখানে এলেন এডিনবার থেকে সদ্য পাস করে বেরনো এক উজ্জ্বল মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট। মাত্র ২২ বছর বয়স তখন। ১৮০৯ সালে ইয়ারল্যান্ডের লিমেরিকে জন্ম। এরপরে স্নাতক হন ডাবলিনের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ থেকে। (প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রায় ৬০% একসময় এই ট্রিনিটি কলেজে প্রথম পাঠ গ্রহণ করেছিলেন) জন্মসূত্রে বাবা ক্যাথলিক, মা প্রোটেস্ট্যান্ট। অদ্ভুত ব্যাপার হল, ইতিহাস ঘেঁটে আমরা এই যুবকের তিনটি নাম পাচ্ছি – প্রথমে উইলিয়াম স্যান্ডস, পরে উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি, এবং সবশেষে উইলিয়াম ও’শনেসি ব্রুক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠার যুগের শিক্ষক হিসেবে এবং দ্বিতীয় নামটিতে সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র লেখার সুবাদে আমরা তাঁকে জানবো উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি বা শুধু ও’শনেসি বলে।

    যে সময়ে ও’শনেসির জন্ম, সে সময়ের সাহিত্য এবং জীববিজ্ঞানের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য আরও দু’জন মানুষ জন্মগ্রহণ করছেন – চার্লস ডারুইন (১৮০৯) এবং অতলান্তিকের ওপারে এডগার অ্যালান পো (১৮০৯)। অর্থাৎ, পৃথিবীতে নতুন ভাবনা ও চিন্তা আসার ক্ষেত্রটি তৈরি হচ্ছে। ও’শনেসির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাকে উৎস থেকে ভাবার, এর সমাধানে পৌঁছনোর এবং সমাধানের পদ্ধতিকে বাস্তবে প্রয়োগ করার এক সহজাত বৈশিষ্ট্য ছিল। একই সাথে মেডিসিন, কেমিস্ট্রি, মেডিক্যাল টক্সিকোলোজি, ফরেন্সিক মেডিসিন এবং ফিজিক্স – এতগুলো বিষয় – সমান দক্ষতায় বুঝেছেন, আয়ত্ত করেছেন। নিজের বোঝা পথ ধরে এগিয়েছেন, এবং সে পথে ভুল হলে স্বীকার করতে কোন দ্বিধা করেননি।

    ১৮৩১-এ ইংল্যান্ডে যখন কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটল, তখন চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অনেকাংশে প্রচলিত সংস্কারে আচ্ছন্ন, তখনও “হিউমারের তত্ত্ব” এবং “মায়াসমাটিক” তত্ত্বের বাইরে (দূষিত বাতাস থেকে রোগের উৎপত্তি) একটি বড়ো অংশই বেরোতে পারেননি। প্র্যাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রিকে প্রয়োগ করা তো দূর কল্পনাতেও আসেনা। ও’শনেসি কলেরার ফলে রক্তে কি পরিবর্তন হয়, কেন রোগী অনেকটা নীল বর্ণ ধারণ করে, কি কারণে এত দ্রুত মারা যায় বমি এবং পায়খানার ফলে, এগুলো বোঝার জন্য রোগীর রক্তের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে শুরু করলেন। আমরা এখানে মাথায় রাখবো, একজন ২২ বছর বয়সী সদ্য পাস করে বেরনো চিকিৎসক এই কাজটি করছেন – প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে! আমাদের নিজেদের ছাত্রজীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারি একবার।

    তৎকালীন বিচারে অনেকাংশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী মেডিক্যাল জার্নাল ল্যান্সেট-এ তাঁর গবেষণাপত্র ছাপা হল “Proposal of a New Method of Treating the Blue Epidemic Cholera by the Injection of Highly-Oxygenised Salts into the Venous System”[1]। প্রথম কলেরা চিহ্নিত কেস ধরা পড়লো ২৬ অক্টোবর। ও’শনেসির গবেষণাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে ৩ ডিসেম্বরে। দুমাসরেও কমসময়ে তাঁর প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল বেরলো।

    প্রসঙ্গত, বলা দরকার ১৮২৩-এর ৫ অক্টোবর তারিখে ল্যান্সেট-এর প্রতিষ্ঠাও অনেকাংশে প্রতিষ্ঠানবিরোধী অবস্থান থেকে। প্রথম সংখ্যার ভূমিকাতেই বলা হয়েছিল মেডিক্যালের জ্ঞানকে কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে – “It has long been a subject of surprise and regret, that this extensive and intelligent community there has not hitherto existed a work that would convey to the Public, and to distant Practitioners as well as to Students in Medicine and Surgery, reports of the Metropolitan Hospital Lectures.” রক্ষণশীল ইংল্যান্ডের বৌদ্ধিক জগতে তখন এ’রকম ভাবনা কার্যত “বৈপ্লবিক”।

    তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্রে ও’শনেসি বললেন – “in the briefest time I can employ, an outline of suggestions regarding the treatment of the Indian cholera ... foundation of the subsequent observations is also strictly experimental and demonstrable in its nature.” তখনও অবধি তাঁর ধারণা ছিল, রক্তে অক্সিজেন কমে যাওয়ার জন্য (বিভিন্ন লবণ বেরিয়ে যাবার দরুণ) রোগীর মৃত্যু ঘটে। এরপরে আবার কলেরা রোগীর রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করলেন। এবার নতুন এবং নির্ভুল ফল পেলেন। ২৬ দিনের মধ্যে, একজন যথার্থ বৈজ্ঞানিকের মতো, তিনি তাঁর ধারণার পরিবর্তন করলেন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৮৩১, ল্যান্সেট-এর সম্পাদককে চিঠি লিখলেন। চিঠিতে জানালেন –



    1. “The blood drawn in the worst cases of the cholera is unchanged in its anatomical or globular structure.
    2. It has lost a large proportion of its water, 1000 parts of cholera serum having but the average of 860 parts of water.
    3. It has lost also a great proportion of its NEUTRAL saline ingredients.
    4. Of the free alkali contained in healthy serum, not a particle is present in some cholera cases, and barely a trace in others.
    5. Urea exists in the cases where suppression of urine has been a marked symptom.
    6. All the salts deficient in the blood, especially the carbonate of soda, are present in large quantities in the peculiar white dejected matters.

    ... All my experiments, however, have been publicly performed, and can be authenticated by numerous witnesses”.


    কলেরার ফলে রক্তের কি পরিবর্তন ঘটে, পৃথিবীর চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক-কুল জানল প্রথমবারের জন্য। কলেরার চরিত্র বোঝার ক্ষেত্রে, টমাস কুনের ভাষায়, একটি “paradigm shift” হল। ও’শনেসি কুকুরের ওপরে পরীক্ষা করেছিলেন, মানুষের ওপরে নয়। এর পরে, আরেক চিকিৎসক, টমাস লাট্টা – এর বাস্তব প্রয়োগ করলেন মানুষের ওপরে – কলেরা আক্রান্ত রোগীর শরীরে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ইনফিউসন দেওয়া শুরু হল। তারিখটি ১০ মে, ১৮৩২। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক মাইলফলক। এক নতুন যুগের সূচনাবিন্দু।

    ও’শনেসি ল্যান্সেট-এ একটি নোট লিখলেন (জুন ২, ১৮৩২) – “I beg to state that the results of the practice described by Drs. Latta and Lewins exceed my most sanguine anticipations.” একজন প্রকৃত বিজ্ঞান সাধকের মতো কি অকপট স্বীকারোক্তি!

    সেসময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত মুমূর্ষু কলেরা রোগীর ছবি ছাপা হয়েছিল। সেরকম দুটি ছবি দেখুন নীচে।



    ডঃ লাট্টা এক বৃদ্ধা রোগীর ওপরে প্রথম প্রয়োগ করেন ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন – রিডের যন্ত্রের সাহায্যে। নীচে আদিম এ যন্ত্রের ছবি রইল।


    মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধার ওপরে যখন একেবারে নতুন ও অভিনব এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়, তখন লাট্টার সামনে কোন পূর্বপ্রদর্শিত পথ ছিল না, যেমনটা ছিল না ও’শনেসির ক্ষেত্রে।

    পৃথিবীতে প্রথমবারের জন্য কলেরার চিকিৎসায় স্যালাইন ইনফিউসন দেবার পরে লাট্টার নিজের বর্ণনায় কার্যত এই রোমহর্ষক বৃত্তান্ত – তৎকালীন সময়ে কলেরার রোগী স্যালাইন ইনফিউসন পাবার পরে আবার স্বাভাবিক গলায় কথা বলছে, শরীরের উত্তাপ এবং পালস ফিরে এসেছে – এ একেবারেই এক অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল। পৃথিবীর চিকিৎসক সমাজ, বিশেষ করে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার, একদম অপ্রস্তুত ছিল এরকম এক ঐতিহাসিক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গে, ১৯৭৮ সালে সুভাষ মুখার্জির হাতে জন্মানো প্রথম টেস্টটিউব-বেবি নিয়ে যে প্রতিক্রিয়া এখানকার চিকিৎসক সমাজ দেখিয়েছিল, তার সাথে খানিকটা তুলনীয়। আকস্মিকতা এবং প্রথম হবার মূল্য চোকাতে হয়েছিল ও’শনেসি এবং লাট্টাকে ইংল্যান্ডে। ইংল্যান্ডের চিকিৎসক-সমাজ ১৮৩০-এর দশকে এই পদ্ধতি গ্রহণ করেনি। পদ্ধতিটি পরিত্যক্ত হয়ে রয়ে গেল। প্রায় ৭০ বছর পরে আমেরিকায় এ পদ্ধতির পুনরুজ্জীবন ঘটল। আর আমাদের এখানে বেদনাদায়ক মৃত্যু দিয়ে মূল্য চোকাতে হয়েছিল চিকিৎসক গবেষক সুভাষ মুখার্জিকে।

    লাট্টার কথায় আসি। স্যালাইন ইনফিউসন দেবার পরে তিনি রোগীকে হাসপাতালের সার্জনের দায়িত্বে রেখে চলে যান। রোগীর আবার বমি ও পায়খানা শুরু হয়। কিন্তু লাট্টাকে আর খবর দেওয়া হয় না। সাড়ে ৫ ঘন্টা পরে রোগী মারা যায়। এক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হলেও কলেরার চিকিৎসার নির্ভুল দিশা এবং একেবারে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল – প্রধান স্থপতি ও’শনেসি, নির্ভরযোগ্য দ্বিতীয় স্থপতি লাট্টা।

    ১৮৩২ সালে কলেরার রোগীকে যে স্যালাইন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল তার উপাদানের অনুপাত আজকের তথা ২০২১ সালের হিসেবে – ৫৮ মিলিইকুইভ্যালেন্ট/লিটার সোডিয়াম, ৪৯ মিলিইকুইভ্যালেন্ট/লিটার ক্লোরাইড এবং ৯ মিলিইকুইভ্যালেন্ট/লিটার বাইকার্বোনেট। বাস্তব হল, যে সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়েছিল এই চিকিৎসাপদ্ধতি – আমাদের বাংলার “মহীনের ঘোড়াগুলি”-র গানের মতো। যেমন একটু আগে বললাম, ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার চিকিৎসক সমাজ একে গ্রহণ করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ইঞ্জেকশন দেবার সময় পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য অনেকসময়েই রক্তে বাতাস ঢুকে যেত প্রচুর পরিমাণে। এতেও অনেক রোগীর মৃত্যু হত।

    ১৮৩১-৩২-এর ল্যান্সেট-এ (ভল্যুউম ২) “Injections venous, in cholera” শিরোনামে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা ২৯। পরের সংখ্যা এটা কমে হয় শূন্য। ১৮৩২-৩৩-এ ছিল ২টি প্রবন্ধ। সহজেই বোঝা যায়, খোদ ইংল্যান্ডেই এই পদ্ধতি চিকিৎসক-মহলে প্রত্যখ্যাত হয়েছে – “a number of reasons for the failure of the treatment to “catch on”: (1) it was only used in the moribund, and although some lives were saved it also seemed to accelerate death in others; (2) the treatment was not repeated often enough to maintain fluid balance; (3) the fluid was unsterile (Latta mentions using distilled water), the salts chemically impure, and the solution hypotonic. This resulted in a risk of sepsis, pyrogenic reactions, and haemolysis.”[2])

    নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল “Sir William Brooke O’Shaughnessy – The Foundation of Fluid Therapy and the Indian Telegraph Service” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ। এখানে বলা হল – “The name O’Shaughnessy and “the method of saline injections” became synonymous, and both controversial ... Finally, on the eve of the acceptance of the method” কলেরার প্রকোপ হারিয়ে গেল। তার সাথে যে প্রয়োজনীয়তা এ পদ্ধতির জন্মদাত্রী হিসেবে কাজ করেছিল, তার উপযোগিতা ফুরিয়ে গেল।

    ভারতে ও’শনেসি – কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক
    ১৮৩৫-এর ২৮ জানুয়ারি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সরকারি আদেশে প্রতিষ্ঠিত হল। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হল ১ ফেব্রুয়ারি, ১৮২৫। প্রথমে প্রিন্সিপাল জোসেফ মাউন্টফোর্ড ব্রামলে এবং অধ্যাপক হেনরি এইচ গুডিভকে নিয়ে শুরু হলেও ১৮৩৫-এর আগস্ট মাসে যোগ দিলেন ও’শনেসি। ফলে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক সংখ্যা দাঁড়াল তিনজন। রিপোর্ট পেশ করার আগেই অকালে ব্রামলের মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয়।

    যা হোক, মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বার্ষিকীর অসমাপ্ত রিপোর্টে, শিক্ষাদানের পদ্ধতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব এবং বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে ও’শনেসির তরফে ছাত্রদের লেকচার এবং প্র্যাক্টিক্যালি হাতেকলমে কেমিস্ট্রি শেখানোর পদ্ধতির ওপরে। এখানে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, সেসময় (১৮৩৫-১৮৩৮) মেডিক্যাল কলেজে  – (১) কোন নির্দিষ্ট সিলেবাস ছিলনা, (২) কোন পাঠ্য বই নেই, এবং (৩) কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষাপদ্ধতিও ছিলনা। এগুলো ধাপে ধাপে শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দীর্ঘ সময় জুড়ে গড়ে উঠেছে। এ’রকম এক অবস্থায় চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং ছাত্রদের শিক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ তিনজন শিক্ষক (আজকের ভয়াবহ কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলার মতোই হয়তো) আধুনিক মেডিসিনের জ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করছেন – কোনোরকম প্রচার বা পাদপ্রদীপের আলোয় আসার আকাঙ্খা ছাড়া। এ জ্ঞান বাহিত, বিকশিত এবং পল্লবিত হয়ে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে বয়ে চলেছে এ ধারা। এত বড়ো গর্বের ঐতিহ্য খুব কম আছে।

    এঁরা কি ধরনের বিষম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন সে বিষয়ে সম্যক অবহিত ছিলেন। মেডিক্যাল কলেজের সিলেবাসকে বিশ্বমানের উপযোগী করার জন্য গুডিভ এবং ও’শনেসি ১৭টি জার্নালের গবেষণাপত্রের উপযুক্ত ব্যবহার করেছিলেন। এই ১৭টি জার্নালের মধ্যে ৯টি ছিল ফরাসী এবং ৮টি ব্রিটিশ[3]
    Quarterly Journal of the Calcutta Medical and Physical Society-র প্রথম সংখ্যায় (১৮৩৭) গুডিভ এবং ও’শনেসি লিখলেন – “It must not be said of us in Europe, that expatriation has rendered us inefficient in the advancement of our profession ... that amidst the many impediments which beset us here, we will pursue with unabated zeal the various useful and enabling branches of our truly philanthropic art.” এখানে আমরা একটি বিশেষ ব্যাপারে নজর রাখি – গুডিভ এবং ও’শনেসিরা উপনিবেশিক সমাজে বিজ্ঞানের চর্চা করছেন, কিন্তু বিজ্ঞানের “global network”-এর সাথে একটি সংযোগ তৈরি করার ধারাবাহিক চেষ্টা করছেন। এজন্য পূর্বোক্ত প্রতিবেদনে বলছেন – “We cordially and earnestly, then, invite our brethren in the provinces to aid us in our usual undertaking ... The Medical Society of Calcutta has already earned a high name in the list of scientific bodies.”

    ১৭ মার্চ, ১৮৩৬, গভর্নর জেনারেল অকল্যান্ড এবং অন্যান্য বিশিষ্ট রাজপুরুষদের উপস্থিতিতে “Introductory Address Delivered at the Opening of the Calcutta Medical College”-এর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ব্রামলে, ও’শনেসি এবং গুডিভ লিখিত রিপোর্ট পাঠ করেন। ও’শনেসি তাঁর রিপোর্টে বলেন – “আমি আমার পাঠ্যক্রম গড়ে তুলেছি একদিকে এডিনবার এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যদিকে, প্যারিসের সবচেয়ে নামী শিক্ষাকেন্দ্র ও জার্মানির শিক্ষার সংশ্লেষিত চেহারার প্রতিরূপ মেডিক্যাল কলেজের কেমিস্ট্রি শিক্ষার পঠন পদ্ধতিতে।”[4] এ অনুষ্ঠানে ও’শনেসি অনেকগুলো পরীক্ষা হাতেকলমে করে দেখান।

    মেডিক্যাল কলেজের তথ্যনির্ভর ইতিহাস লেখার পথিকৃৎ গবেষক মেল গরম্যান এ সময়টিকে নিয়ে মন্তব্য করছেন – “At a time when a chemical laboratory in an American medical school was rare, this course with lectures and laboratory work was the equal of any in a European medical institution. Most importantly, the students were just as capable and enthusiastic about chemistry as they were about anatomy, and the testimony of outside examiners gives ample proof as to the rigor of the examinations.” (পূর্বোক্ত, পৃঃ ২৮৭)

    প্রসঙ্গত, আমাদের এখানে বুঝে নেওয়া দরকার – একদিকে “নেটিভ মেডিক্যাল ইন্সটিটিউশন”-এর প্রতিষ্ঠা (১৮২২-১৮৩৫) এবং সংস্কৃত কলেজে একটি ছোট হাসপাতাল তৈরি করা (১৮৩৪) ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ তৈরির পূর্ববর্তী “gestation period” এবং “period of nativity”। এই সময়কালে এক উল্লেখযোগ্য অংশের ছাত্র নতুন ধরনের মেডিক্যাল শব্দভাণ্ডার, হাসপাতালে গিয়ে রোগাক্রান্ত রোগীদের দেখা অর্থাৎ দৃশ্যমানতায় (visibility) আসা, চোখের সামনে পোস্টমর্টেম দেখা এবং সামগ্রিকভাবে সম্পূর্ণত নতুন ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো জ্ঞানের জগতে একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক রূপান্তর (epistemological transformation) ঘটালো। একই সাথে ছাত্রদের visual, verbal এবং psychic acculturations হতে শুরু করলো। চিরদিনের জন্য ভারতের চিকিৎসার জ্ঞানের জগৎ পরিবর্তিত হয়ে গেল, যে ধারা আমরা বহন করে চলেছি।

    ও’শনেসির ক্লাসে তাঁর দেওয়া নোটগুলো পড়ে একজন আরেকজনকে বোঝাতো, সপ্তাহান্তে পরীক্ষা দিতে হত এবং কিভাবে প্রেস্ক্রিপশন লিখতে হয় সেগুলো শিখতো। এবং মেডিসিনের অঙ্গ হিসেবে হাইজিনের আলোচনাও এ ক্লাসগুলোতে হত। এমন একটা উদ্দীপনা ছাত্রদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিল যে বেশ কিছু ছাত্র “evinced a strong desire to become experimentalists themselves, and were known to purchase at (to them) enormous expense, various tests and articles of apparatus with which they repeated at their home the experiments they witnessed in the lecture rooms.

    এমনকি ১৮৩৭ সালে প্রথমসারির উৎসাহী ছাত্ররা মিলে “কেমিক্যাল ডেমোন্সট্রেশন সোসাইটি” নাম দিয়ে একটি ক্লাবও খুলে ফেলে। এখানে প্রতি সপ্তাহে একজন করে নতুন বক্তা নির্বাচিত হত[5]।  নতুন জ্ঞানের সামাজিকভাবে প্রবাহের প্রশস্ত ও উন্মুক্ত পথ ধীরে ধীরে তৈরি হতে শুরু করলো।

    পাঠ্য বইয়ের অভাব মেটাতে ও’শনেসি লিখলেন Manual of Chemistry Arranged for Native, General and Medical Students, and the Subordinate Medical Department of the Service[6]। তাঁর প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে ভারতবর্ষে মেডিক্যাল পড়ার জগতে প্রথমবারের জন্য নম্বর দেবার পদ্ধতি চালু হল – “each pupil was questioned separately, and the value of his answer written down in numerals of 1, 2, 3 …”। ব্রামলে মন্তব্য করছেন, ও’শনেসির প্রাণবন্ত এবং তত্ত্ব ও প্র্যাক্টিক্যাল নির্ভর ক্লাস করার পরে – “Every pupil we teach here may go forth in his turn and teach a hundred more, thus scattering in every direction the seeds of useful knowledge we are now implanting, among themselves.”

    আগে বলা “Introductory Address Delivered at the Opening of the Calcutta Medical College”-এর অনুষ্ঠানে দেওয়া ও’শনেসির “Lectures on General Chemistry and Natural Philosophy” লেকচারে তিনি মেডিক্যাল কলেজের নবীন ছাত্রদেরকে ডঃ লাট্টা এবং তাঁর আবিষ্কৃত ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ইনফিউসনের ইতিহাস সংক্ষেপে স্মরণ করিয়ে দেন। এখানেই ছাত্রদের জানান – “the thoughtlessness or ignorance of many practitioners in performing the operation with common instead of distilled water, is quite sufficient to account for many of the reputed failures ... the injection of a minute portion of air into the vein is so rapidly fatal that this is the mode now adopted in killing horses in the tanneries of Paris.”

    এই লেকচারে তিনি এ কথাও বলেন, এই গরীব দেশের মানুষকে বাধ্য হয়ে চড়া দামে ইউরোপীয় মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। অথচ এই মেডিসিনগুলোর উপাদান এ দেশেই পাওয়া যায়। কম মজুরিতে এখানকার গরীব মানুষেরা এগুলো তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, মেডিসিন তৈরি হবার পরে ওদেশ থেকে আমদানি খরচও ভারতের মানুষকে দিতে হয়। এজন্য এত অধিক মূল্যে গরীব মানুষদের দামী বিদেশি মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। এজন্য তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল – “I have taken the trouble of counting the number of medicines now imported from Europe. They amount to several hundreds, all of which, except about 80, may be prepared or grown in this country. For these 80 many different efficient substitutes exist in known indigenous productions.” এরকম একটি স্বাধীন চিন্তার মানসিকতা এবং দরিদ্র ভারতকে স্বনির্ভর করার ব্যতিক্রমী চিন্তা কি তাঁর আইরিশ সত্তার মধ্যে ছিল? উত্তর জানা নেই।

    কলকাতায় ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ইনফিউসন দেবার চেষ্টা ১৮৩৬ সালের জুলাই মাসে একবার করা হয়েছিল। প্রকাশিত হয়েছিল Calcutta Monthly Journal-এর আগস্ট, ১৮৩৬, সংখ্যায়। ডঃ ডানকান স্টুয়ার্ট এক কলেরা রোগীকে রোগীকে ৩ পাইট (১ পাইট – ০.৫৬৮ লিটার) সল্যুশন দেওয়া হয়। এর উপাদান ছিল – কার্বোনেট অফ সোডা ২ স্ক্রাপলস (১ স্ক্রাপল ১.২৯৬ গ্রাম) এবং মিউরিয়েট অফ সোডা ৩ ড্রামস (১ ড্রাম ১.৭৮ গ্রাম)। পরিণতি? রোগী মারা যায়। অটোপ্সিতে দেখা যায় ডান ধমনীতে অসংখ্য বাতাসের বুদ্বুদ রয়েছে, ডান এট্রিয়ামে এবং সুপিরিয়র ভেনা কেভাতেও একই চিত্র। দেহের সমস্ত ভেইন জুড়ে ছিল অসংখ্য বাতাসের বুদ্বুদ। এখানেই পরিত্যক্ত হয় কলকাতার প্রচেষ্টা। মেডিক্যাল কলেজে তাঁর ছাত্রদেরকে, আমাদের মনে থাকবে, এ ব্যাপারেই সতর্ক করেছিলেন ও’শনেসি।

    আমরা বুঝতে চাইবো কোলকাতায় এসে তাঁর নিত্যনতুন আবিষ্কারের কথা। তার আগে শুধু এটুকু বলা যায় যে ও’শনেসি “local knowledge”-কে “global scientific knowledge network”-এর সাথে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। এবং পেরেছিলেন। ব্যারি ক্রসবি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন – “O’Shaughnessy began to explore the potential therapeutic effects of Indian hemp or cannabis. His first series of experiments using Indian hemp on both humans and animals were published in the Transactions of the Medical and Psychiatric Society of California in 1842, where they generated considerable interest. In the mid nineteenth century cannabis was virtually unknown as a drug in Europe and North America. Within a few years of O’Shaughnessy’s experiments, however, it was being used as a medication to treat a wide range of conditions by many of the leading doctors in Ireland, including Robert Graves and Sir Philip Crampton in Dublin.”[7]
    আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত এসব আবিষ্কারের ছেদবিন্দুতে যে আবিষ্কারক দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁর নাম উইলিয়াম ব্রুক ও’শনেসি।

    ও’শনেসির আবিষ্কারের কাহিনী
    ১৮৩৮ সালের জুন মাস। ২২ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় ও’শনেসির বাড়ির ভৃত্য তাঁর হাতে একটি চিরকুট দেয়। চিরকুটে লেখা, হাকিম আবদুল্লা গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। হাকিমকে ৩ সপ্তাহ আগে এক পাগলা কুকুর কামড়েছিল (কলকাতার রাস্তাঘাটে তখন পাগলা কুকুরের প্রাচুর্য নিয়ে কোন সন্দেহ প্রকাশ করা যাবেনা)। হাকিম নিজে এখন নিজের শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ বুঝতে পারছেন। এজন্য ও’শনেসির সাহায্যপ্রার্থী হয়েছেন। অনুমান করা যায় মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে নিশ্চয়ই তাঁর সুনাম কলকাতার সমাজের একাংশে প্রসারিত হয়েছিল। যে জন্য হাকিমের তাঁর কাছে আসা চিকিৎসার অন্তিম আকাঙ্খা নিয়ে।

    ১৯৩৮ জুড়ে ও’শনেসি ভারতীয় গাঁজা (Indian hemp), চরস এবং “মাজুন” (চরসের তরল দ্রবণ)-এর ওষুধ হিসেবে কি কি গুণ ও ধর্ম রয়েছে এ নিয়ে সুবিস্তৃত কঠোর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় লিপ্ত। সম্পূর্ণভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে। এরকম সময়ে হাকিমের উপরে পরীক্ষা চালানোর সুযোগ পেলেন তিনি। একটি জুড়ি গাড়িতে ছিলেন হাকিম। হাকিম তাঁকে জানালেন – আগের দিন সন্ধেবেলা এক পুকুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় তাঁর শরীরে উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আর কোন ধরনের তরল পদার্থ গিলতে পারছেন না। ও’শনেসি দেখলেন, হাকিমের চোখ অস্থির, সন্দিগ্ধ এবং বন্য দেখাচ্ছে। পালস ১২৫। শীতল ঘামে ভিজে আছে তাঁর শরীর। সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে (সেসময়ে এখনকার মতো মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালস তৈরি হয়নি, মেডিক্যাল কলেজের লাগোয়া একটি বিল্ডিং-এ ৩০-৫০টি বেড নিয়ে একটি কাজ চালানোর মতো হাসপাতাল তৈরি হয়েছে কেবল) ভর্তি করলেন।

    ও’শনেসির ভাষায় – “never can I forget the indescribable horrors of the paroxysm which ensued. It abated in about three minutes, and morbid thirst still goading the unhappy man.” যাহোক, এঁকে “হেম্প রেজিন” দেওয়া শুরু হল। প্রথমে ২ গ্রেন (১ গ্রেন = ৬৪.৮ মিলিগ্রাম) দেওয়া হল (কিভাবে দেওয়া হল এর বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছিনা, প্রয়োজন নেই)। এর পরিণতিতে হাকিম স্ফূর্তির সাথে বকবক করতে শুরু করলেন। ৩টি ডোজ এরকমভাবে পরপর দেবার পরে কিছু খাবার খেতে চাইলেন হতভাগ্য হাকিম। এ পদ্ধতিতে চারদিন চিকিৎসা হল। কিন্তু পঞ্চম দিনে সকাল ৩টের সময় তাঁর রোগের প্রকোপ প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়। ২৭ নভেম্বর ভোর ৪টের সময়ে তাঁর সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটে। তিনি মারা যান।

    পরবর্তী সময়ে এই কেসটিকে নিয়ে পুনর্ভাবনা করতে গিয়ে ও’শনেসির উপলব্ধি – “at least one advantage was gained from the use of the remedy—the awful malady was stripped of its horrors;—if not less fatal than before, it was reduced to less than the scale of suffering which precedes death from most ordinary diseases.” এই ভয়াবহ রোগের ততোধিক ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণার লাঘব হয়েছিল। মৃত্যুকে ঠেকানো যায়নি। একজন প্রকৃত বিজ্ঞানসাধকের মতো বললেন – “আমি এতটা হঠকারী নই যে দাবী করবো এই narcotic থেকে এই রোগের কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যাবে, এমনকি একটি কেসের ক্ষেত্রেও।” কিন্তু এটা সম্ভব যে রোগটির ক্ষেত্রে “to divest of its specific terrors the most dreadful malady to which mankind is exposed.”

    হ্যাঁ। প্রতিটি ক্ষেত্রে রোগের নিরাময় না হলেও রোগের ভয়াবহতা থেকে রোগীকে মুক্তি দেবার চেষ্টা প্রতিটি ক্ষেত্রে ও’শনেসি করেছেন।

    Indian hemp নিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ গবেষণার ফসল হিসবে ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত হল On the Preparation of Indian Hemp, or Gunjah (Cannabis Indica) গ্রন্থটি কলকাতা থেকে। পরে লন্ডন থেকেও ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত হয় এ গ্রন্থটি, সামান্য কিছু পরিবর্তন সহ। তার আগে প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল জার্নাল-এর জানুয়ারি ২৮ এবং ফেব্রুয়ারি ৪, ১৮৪৩, সংখ্যায় পরপর দুটি সংখ্যায় দুটি কিস্তিতে প্রকাশিত হয় এই লেখা। ইউরোপ এবং আমেরিকার চিকিৎসক মহলে শোরগোল পড়ে।

    আরেকবার বোঝার চেষ্টা করি প্রবল অনুসন্ধিৎসা, মৌলিক চিন্তাভাবনা এবং তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগ করার মতো অসামান্য সমাহার ও’শনেসির মেডিক্যাল আবিষ্কার ও সেগুলোর আন্তর্জাতিক পরিচিতির ইতিহাসকে।

    তিনি একইসাথে মেডিসিন, বোটানি, ফার্মাকোলজি, কেমিস্ট্রি, মেডিক্যাল টক্সিকোলজি তথা ফরেন্সিক মেডিসিন, ধাতুবিদ্যা, ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, নতুন ভাবনায় মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল শিক্ষার ধারাকে প্রভাবিত করা, জলের নীচের ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্যালভানিক ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে কাজ করেছেন। নাইটহুড পেয়েছেন ভারতে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার পত্তন করার জন্য। কিন্তু টেলিগ্রাফ নিয়ে আমি আলোচনা করবোনা।

    একজন ২১ বছরের সদ্য পাস করা এডিনবারের এমডি যুবকের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হল ল্যান্সেট-এর মতো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে – “On the Mode of Detecting Nitric Acid, and the total inefficacy of the New Test of Decolourising the Sulphate of Indigo” শিরোনামে (২৯ মে, ১৮৩০)। এরপর ল্যান্সেট-এ পরপর প্রকাশিত হয় চিঠি এবং গবেষণাপত্রগুলি[8]

    ৮ আগস্ট, ১৮৩৩, ও’শনেসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দিলেন। ১০ ডিসেম্বর, ১৮৩৩, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এসে পৌঁছলেন। এরপরে ১৮৩৫ সালের আগস্ট মাসে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেবার আগে কটক, বিহার এবং দমদমে আর্মি মেডিক্যাল সার্ভিসের বিভিন্ন পোস্টে কাজ করেছেন। ভারতের মতো সুযোগসুবিধেহীন দূরতম প্রান্তে বসেও বিহারের গয়া থেকে (তখন তিনি মেডিক্যাল সার্ভিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের পদে) ল্যান্সেট-এ গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন – “Discovery of a New Principle (Sub-Rubrine) in Human Blood; In Health and Disease, and also in the Blood of Several of the Lower Mammalia” (৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৫)। এই পেপারটিতে প্লীহার অসুখে তিনি আবিষ্কার করলেন – “labouring under disease of the spleen, my attention was forcibly attracted by some very remarkable phenomena, which were wholly inexplicable according to the previous state of our knowledge of the composition of the blood.” অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পরে এখন আমাদের আধুনিক মননে ভাবতে ইচ্ছে করে তিনি কালাজ্বরের  কোন আদিরূপ দেখেছিলেন? উত্তর জানা নেই। অনুমান মাত্র।

    নিত্যনতুন আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ একজন বৈজ্ঞানিকের মানসিক অস্থিরতা চলছে মেডিসিনের অগ্রগতির জন্য। এরকম একজন গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম যুগের শিক্ষক। মেডিক্যাল কলেজকে সেসময়ে ইংল্যান্ড বা আমেরিকার প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল স্কুলগুলোর তুল্য বলে গণ্য করা হত।

    উপনিবেশিক বিজ্ঞান থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান
    এখানে আমাদের বোঝা দরকার, ভারতীয়রা যাকে “জ্ঞান” বলে গণ্য করতো উপনিবেশিক ক্ষমতার কেন্দ্রে সেটাকে কেবলমাত্র “তথ্য” হিসেব গণ্য করা হতো। ক্ষমতার কেন্দ্র একে পরিশুদ্ধ করে অনুমোদন করলে তখন সেটা নতুন চেহারায় “জ্ঞান” হিসেবে আমাদের কাছে পরিগণিত হত। এমনটাই সেসময়ের ভারতীয় শিক্ষিত জগৎ বুঝতে অভ্যস্ত ছিল। এমনকি এরকম সুদূর উপনিবেশের মাটিতে সাদা চামড়ার সাহেবরাও এভাবে বুঝতো। এভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করা যায় – জ্ঞান > তথ্য > ধুয়েমুছে সংশোধন করা/সত্যতা যাচাই করা > “প্রকৃত” এবং “খাঁটি” জ্ঞান।

    কিন্তু ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ১৮৩৫-৪৫ সময়কালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগৎ থেকে একাধিক উদাহরণ দেওয়া যায় যা জ্ঞান উৎপাদনের উল্লেখিত প্রক্রিয়াকে অন্তর্ঘাত করেছে। এখানকার তত্ত্বায়ন প্রাধান্যকারী তত্ত্বায়নের সঙ্গে বহুক্ষেত্রেই মূলগতভাবে পৃথক অবস্থানে ছিল। বরঞ্চ উপনিবেশিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে এবং ইউরো-আমেরিকান বিজ্ঞানের চর্চাকে কিছুক্ষেত্রে প্রভাবিতও করেছে। আমরা একাধিক উদাহরণ দেখে নেব।

    প্রথম, কলকাতার মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটির মুখপত্রে কোয়ার্টার্লি জার্নাল অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি-র প্রথম সংখ্যায় (১৮৩৭) যুগ্ম সম্পাদক হেনরি গুডিভ এবং ও’শনেসি (দুজনেই তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক) লিখলেন – “It must not be said of us in Europe, that expatriation has rendered us inefficient in the advancement of our profession ... that amidst the many impediments which beset us here, we will pursue with unabated zeal the various useful and enobling branches of our truly philanthropic art.” এখানে আমরা একটি বিশেষ ব্যাপারে নজর রাখি – গুডিভ এবং ও’শনেসিরা উপনিবেশিক সমাজে বিজ্ঞানের চর্চা করছেন, কিন্তু বিজ্ঞানের “global network”-এর সাথে একটি সংযোগ তৈরি করার ধারাবাহিক চেষ্টা করছেন। এজন্য পূর্বোক্ত প্রতিবেদনে বলছেন – “We cordially and earnestly, then, invite our brethren in the provinces to aid us in our usual undertaking ... The Medical Society of Calcutta has already earned a high name in the list of scientific bodies.”

    দ্বিতীয়, এ লেখার প্রথমাংশে বলেছি যে ১৮৩৬ সালের ১৭ মার্চ মেডিক্যাল কলেজের প্রথম তিনজন অধ্যাপক বিশিষ্ট রাজপুরুষদের উপস্থিতিতে একবছর সময়ে (২৮ জানুয়ারি, ১৮৩৫, মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়) মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে লিখিত রিপোর্ট রাখেন। ও’শনেসি তাঁর লেকচারে বলেন, এই গরীব দেশের মানুষকে বাধ্য হয়ে চড়া দামে ইউরোপীয় মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। অথচ এই মেডিসিনগুলোর উপাদান এ দেশেই পাওয়া যায়। কম মজুরিতে এখানকার গরীব মানুষেরা এগুলো  তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, মেডিসিন তৈরি হবার পরে ওদেশ থেকে আমদানি করার খরচও ভারতের মানুষকে দিতে হয়। এজন্য এত অধিক মূল্যে গরীব মানুষদের দামী বিদেশি মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। এজন্য তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল – “I have taken the trouble of counting the number of medicines now imported from Europe. They amount to several hundreds, all of which, except about 80, may be prepared or grown in this country. For these 80 many different efficient substitutes exist in known indigenous productions.” এক্ষেত্রে ব্রুনো লাতুরের ধারণার সাথে সাজুয্য পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন – “Possessed of many of the finest dye stuffs in the world, India is forced to export them to a more enlightened land, where the cottons also exported from India receive their colour and return to the place of their original production.”  আজকের চোখে দেখলে উপনিবেশিক মাটি থেকে জ্ঞানের তথাকথিত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ ঘোষণা বলা যায়। এরকম একটি স্বাধীন চিন্তার মানসিকতা এবং দরিদ্র ভারতকে স্বনির্ভর করার ব্যতিক্রমী চিন্তা কি তাঁর আইরিশ সত্তার মধ্যে ছিল? উত্তর জানা নেই।

    তৃতীয়, আগেই উল্লেখ করেছি, ব্যারি ক্রসবি তাঁর Irish Imperial Networks Migration, Social Communication and Exchange in Nineteenth-Century India (২০১২) গ্রন্থে জানাচ্ছেন, ও’শনেসির ভারতীয় গাঁজা বা “হেম্প” নিয়ে প্রথম দফার পরীক্ষার ফলাফল ইউরোপ এবং আমেরিকার ডাক্তারদের মাঝে আলোড়ন তৈরি করে এবং মেডিক্যাল ক্যানাবিসের ব্যবহার হতে শুরু করে। (পৃঃ ১৮৪)

    চতুর্থ, মেডিক্যাল কলেজের কেমিস্ট্রি ক্লাসে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ফলশ্রুতি ১৮৩৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাঁর পুস্তক On the Employment of the Electro-Magnet as a Moving Power; with a Description of a Model Machine worked by this Agent। দ্য নর্থ আমেরিকান রিভিউ  সেসময়ের একটি নামকরা বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল। এই জার্নালের অক্টোবর, ১৮৩৭ সংখ্যায় ও’শনেসির বইটির ৫ পৃষ্ঠার রিভিউ প্রকাশিত হল। রিভিউয়ের শুরুতে বলা হচ্ছে – “It would have been natural to expect from Calcutta a case of indigo or of gum shellac, rather than a pamphlet upon a matter of science.” অর্থাৎ, কলকাতার মতো একটি জায়গা থেকে বিজ্ঞান-বিষয়ক প্যাম্ফলেটের বদলে থেকে নীল চাষের খবর বা কাঠের বার্নিশ করার জন্য আঠার খবর জানা যাবে এরকমটাই প্রত্যাশিত। এখানেই ও’শনেসির মতো মানুষদের হাত ধরে শুধু ইউরোপীয় জ্ঞানের ভুবন থেকে চুঁইয়ে আসা জ্ঞান গ্রহণ করার বিপরীতে ভারতে উৎপাদিত জ্ঞান আন্তর্জাতিক (বা প্রথম বিশ্বের জগতে) স্বীকৃতি পাবার জায়গা করে নেয়।

    যদিও এই বিশেষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ও’শনেসির মেডিসিনে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম প্রয়োগের লব্ধ ফলাফল নিয়ে নিশ্চিত কোন দাবী করা যাবেনা। এসব সত্ত্বেও এটা ইউরো-আমেরিকান মৌরসিপাট্টার দুনিয়ায় একধরনের অন্তর্ঘাত বা subversion বলা যেতে পারে।

    পঞ্চম, ও’শনেসি গ্যালভানিক ব্যাটারি নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। এমনকি সিডনিগামী Equitable নামে একটি জাহাজ ফলতার কাছে চড়ায় আটকে গেলে তিনি শক্তিশালী গ্যালভানিক ব্যাটারি ব্যবহার করে জাহাজটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন[9]। এর আগে Parbary’s Oriental Herald-এ (১ম সংখ্যা, ১৮৩৭, পৃঃ ২০) প্রকাশিত হয়েছিল – “Dr. O’Shaughnessy was electrifying the higher ranks of Calcutta society with his galvanic battery, and displayed much zeal and intelligence in explaining the science.” এমনকি, গ্যালভানিজমের ব্যবহার করেছিলেন aneurism সারাতে[10]
    যে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধান খাবারে ভেজাল আবিষ্কার করা দিয়ে শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ইনফিউশনের যুগান্তকারী আবিষ্কার (বিংশ শতাব্দীতে হলে নোবেলজয়ী হতেন আশা করা যায়) থেকে ভারতীয় গাঁজাকে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করে বিশেষ ডোজে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার থেকে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম, গ্যালভানিজম এবং বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়ার উপাদানের আবিষ্কার করা এবং হয়তো তুলনায় ছোট আরও কিছু ছোটখাটো আবিষ্কার ও’শনেসি করে গেছেন। একটি মানুষ এতগুলো কাজ ছাড়াও আরও অনেক কাজ করেছেন। এমনকি ভারতে প্রথম টেলিগ্রাফের প্রচলন করাও তাঁর মস্তিষ্ক ও উদ্ভাবনী শক্তি সঞ্জাত।

    এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করা দরকার। অ্যাকাডেমিয়ায় চালু ইতিহাস চর্চায় মেডিসিনকে সাম্রাজ্যবাদের “মানবিক মুখ” হিসেবে দেখার একটি যৌক্তিক প্রবণতা আছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে ও’শনেসি যখন ছাত্রদের কেমিস্ট্রি শিখতে বলেন দেশের সম্পদকে উপযুক্ত ব্যবহারের লক্ষ্যে, কিংবা দামী বিদেশি ওষুধের বিকল্প কমদামী দেশি ওষুধ তৈরির প্রকরণ শিখতে কিংবা এদেশের নিজস্ব উৎপাদিত সম্পদ যাতে বেশি দাম দিয়ে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে কিনতে না হয়, সে কাজে ব্যবহারের জন্য, তখন মেডিসিন আর শুধুমাত্র “মানবিক মুখ” হয়ে থাকেনা। নিজের আভ্যন্তরীন শক্তিতে মানুষের উপকারে আসার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্মরণে রাখতে হবে, গুডিভ মেডিক্যাল কলেজের পূর্বোক্ত বক্তৃতায় কেন মেডিসিন ভালোভাবে শিখতে হবে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন – “But alas! The poor are for the most part totally helpless; they have nowhere to look for aid of any kind; they die thou7sands for want of the commonest relief.” এ কথাগুলো তখন আর সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার থাকেনা। মেডিসিনের অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

    ভারতের প্রথম প্রাণীদেহের ওপরে পরীক্ষা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং রোগীর সম্মতিপত্রের আদিরূপ
    ১৮৩৬ সালের কথা বলছি। সেসময় ও’শনেসি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের হৃদয় জয়-করা ২৭ বছরের একজন টগবগে শিক্ষক, গবেষক এবং চিকিৎসক (অনেকটা ডিরোজিওর মতো)। সেসময় কলকাতার বাজারে বিষাক্ত নাক্স ভোমিকার (Nux Vomica) ছাল ভিন্ন কার্যকরী ওষুধ বলে বাজারে বিক্রী হত। ইংরেজ ডাক্তারদের একাংশের এতে সন্দেহ হয়। ফ্রেডেরিক করবিন সম্পাদিত The Indian Review and Journal of Foreign Science and the Arts পত্রিকার ১ম সংখ্যায় (১৮৩৭) এ নিয়ে “Caution to the Public” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ও’শনেসি এ নিয়ে তাঁর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেন। তাঁর রিপোর্ট ছিল – “The dog to which was administered one drachm of the extract was first convulsed one hour and twelve minutes after, and after a few rapid and strong fits of convulsion died in one hour and thirty one minutes। The dog which got half a drachm of the extract became convulsed 30 minutes after, and, after several fits of tetanic convulsions, died one hour and two minutes after.” (৫ অক্টোবর, ১৮৩৫, পৃঃ ২৮৮) [১ ড্রাম = ১.৭৭ গ্রাম]

    তাঁর লেখা পূর্বোক্ত On the Preparation of Indian Hemp, or Gunjah পুস্তকেও তিনি মানুষের ওপরে প্রয়োগ করার আগে অ্যানিম্যাল ট্রায়াল করেছিলেন। এতে তিনি দেখেছিলেন মাংসাশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে চরসের প্রভাব বেশি পড়ে, তুলনায় তৃণভোজীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব অনেক কম।
    ১৮৩৮ সালে, তিনি প্রথমে একটি মাঝারি সাইজের কুকুরের ওপরে ১০ গ্রেন নেপালি চরস প্রয়োগ করেন। আধ ঘন্টার মধ্যে কুকুরটি “stupid” এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১ ড্রাম “মাজুন” (চরসের জলীয় দ্রবণ) ছোট সাইজের একটি কুকুরকে দেওয়া হয়। সে প্রবল আনন্দে লাফালাফি আরম্ভ করে। ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম ক্ষেত্রে আরও ছোট কুকুরের ওপরে গাঁজার অ্যালকোহলীয় দ্রবণ দিয়ে পরীক্ষা করেন। ৬ষ্ঠ ক্ষেত্রে ২০ গ্রেন প্রয়োগ করেন একেবারে ছোট্ট একটি কুকুরের ওপরে। এ সমস্ত পরীক্ষা থেকে তিনি বোঝেন কুকুরদের ক্ষেত্রে কোন ব্যথার অনুভূতি ছিলনা, কিংবা কোনো খিঁচুনি হয়নি।

    প্রাণীদেহে এই ফলাফল দেখার পর মানুষের ওপরে তিনি এবার ওষুধটি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। ১৮৪৩ সালে প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল জার্নাল-এ যখন দু’কিস্তিতে তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় তখন তিনি ১৮৩৯-এর পুস্তকের থেকে আরেকটু পরিমার্জনা করেছেন। আমি সেখান থেকে কেসগুলো উল্লেখ করছি – (১) Cases of Rheumatism treated by Hemp. Catalepsy produced by on6 grain, (২) Case of Hydrophobia (আমি এর আগেই হাকিমের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ও ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছি)। (৩) Use in Cholera (এক্ষেত্রে একজন খাঁটি বিজ্ঞানীর মতো পরিষ্কার করে বলেন, “It is but fair to state, however, that the character of the epidemic was not at the time malignant. I admit the cases to be inconclusive, but I conceive them to be promising, and that they deserve the due attention of the practitioner.”), (৪) Use in Tetanus, (৫) Case of Infantile Convulsions, এবং (৬) Use in Delirium Tremens (মদ বা গাঁজা ছেড়ে দিলে যে প্রবল অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ কথাবার্তা শুরু হয় অর্থাৎ withdrwala syndrome, সেরকম পরিস্থিতি)।

    ও’শনেসির প্রাইভেট প্রাক্টিসে একদিন (১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৮) এক সাহেব দম্পতি (মি: এবং মিসেস জে বলে উল্লেখিত) ১৫ দিন ধরে ক্রমাগত খিঁচুনিতে ভোগা (convulsive disorder) মাত্র ৪০ দিনের শিশুকে নিয়ে আসে চিকিৎসার জন্য। যেদিন ও’শনেসি দেখলেন সেদিন “the attacks were almost unceasing, and amounted to regular tetanic paroxysms. The child had, moreover, completely lost appetite and was emaciating rapidly.” এবং, ও’শনেসির বয়ানে – “I had by this time exhausted all the usual methods of treatment, and the child was apparently in a sinking state.” সেসময়ের চিকিৎসা বলতে জোঁক দিয়ে রক্তমোক্ষণ, ব্লিস্টার প্রয়োগ করা, বমি এবং পায়খানা করানো। এছাড়া টার্টার এমেটিকের (অ্যান্টিমনি পটাশিয়াম টার্টারেট) বহুল ব্যবহার ছিল। এই কচি শিশুটির ঘাড়েও ব্লিস্টার প্রয়োগ করা হয়েছিল।

    যাহোক, এই শিশুটিকে নতুন ওষুধটি দেবার জন্য তিনি “Under these circumstances I stated to the parents the results of the experiments I had made with the hemp, and my conviction that it would relieve their infant if relief could possibly be obtained. They gladly consented to the trial”। ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রথম নথিভুক্ত হল রোগীর অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার (informed consent) নতুন অধ্যায়।
    ১/২০ গ্রেন “হেম্প” চিকিৎসা শুরু হল। তারপর নানা ওঠানামার মধ্য দিয়ে গিয়ে “The child is now (December 17) in the enjoyment of robust health, and has regained her natural plump and happy appearance.” অর্থাৎ, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর, মোট তিনমাস চিকিৎসার পরে সুস্থ সবল শিশু বাড়ি গেল। আরেকজন চিকিৎসক ডঃ নিকলসন এ চিকিৎসার সাথে যুক্ত ছিলেন। এবং চিকিৎসা হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজে।

    আমি ক্যানাবিস বা গাঁজা নিয়ে অন্য অসুখগুলোর ক্ষেত্রে ট্রায়ালগুলো নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলছিনা। এটুকু শুধু বলা যায়, সেসময়ে ও’শনেসির যুগান্তকারী কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে সঠিক এবং নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করলে ক্যানাবিসকে বহুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় – টিটেনাসের lock-jaw সারানো থেকে সার্জারির সময় বেদনা থেকে মুক্তিতে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি-তে (অক্টোবর, ২০০৩) প্রকাশিত হচ্ছে “Cannabinoids and glaucoma” শিরোনামে গবেষণাপত্র। সেখানে বলা হচ্ছে – “In 1839, Dr William Brooke O’Shaughnessy, an Irish physician at the Medical College of Calcutta, published a detailed report ‘‘On the preparations of the Indian Hemp or Gunjah.’’ After performing animal studies, he determined that cannabis preparations were safe and effective in treating rabies, rheumatism, epilepsy, and tetanus.” এমনকি নেচার-এর মতো জার্নালে (২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫) “A potted history” প্রবন্ধে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে – “O’Shaughnessy was of critical importance in introducing Indian hemp to British and North American physicians”। Therapeutic Advances in Musculoskeletal Disease জার্নালে “Medical cannabis for orthopaedic patients with chronic musculoskeletal pain: does evidence support its use?” (জুলাই ২, ২০২০) শীর্ষক রিভিউ পেপারে বলা হচ্ছে – “Medicinal applications of cannabis remained largely unknown to the West until the mid-1800s, when William O’Shaughnessy, an Irish physician working in Calcutta, India, first reported a series of basic animal experiments and human cases on various Indian Ayruvedic medicinal claims ... O’Shaughnessy recommended its use for spasticity, pain and epilepsy-related convulsions. Following this, the availability of cannabis extracts in over-the-counter medications, as well as its general use, proliferated rapidly throughout North America and Europe and, by 1850, cannabis was listed in the United States (US) Pharmacopeia as a treatment option for approximately 100 symptoms.”

    ক্যানাবিস এরকম বহুল প্রচার পাবার পরে ওষুধের কাউন্টারে প্রেস্ক্রিপশন ছাড়াই বোতলে করে বিক্রি হতে শুরু করলো ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। নীচে এর ছবি দেওয়া হল। আমেরিকাতে ক্যানাবিসের বহুল প্রচারের ক্ষেত্রে Du Pont পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি এবং হেনরি ফোর্ডের মতো প্রভাবশালী ধনকুবেররা এর বিরুদ্ধে প্রচারে মিডিয়াকে বিপুলভাবে ব্যবহার করে – কারণ, Indian hemp থেকে ভালো জাতের গাড়ির চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমাস জ্বালানি এবং ভালো জাতের কাগজ তৈরি হত। এজন্য আমেরিকায় এর মেডিক্যাল ব্যবহারের সূচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

    এবারে তাঁর আবিষ্কৃত কুইনিনের উপজাত নার্কোটিন (noscapine) নিয়ে কথা বলবো। ১৮৩৮ সালের গোড়ায় সম্ভবত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে কলহের কারণে পেরু সরকার ভারতে ৫ বছরের জন্য Peruvian bark বা সিঙ্কোনা গাছের ছাল, যা থেকে অতি প্রয়োজনীয় কুইনাইনের মতো ওষুধ তৈরি হত, রপ্তানি করা নিষিদ্ধ করে। “ক্যালকাটা মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি”-র ১৮৩৮ সালের আগস্ট মাসের সভায় ও’শনেসি সভ্যদের নজর এ সমস্যার দিকে আকৃষ্ট করেন। এরপরে সভার সদস্যদের সামনে তিনি তাঁর আবিষ্কার করা কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে (বাংলায় সহজলভ্য আফিম থেকে যা তৈরি করেছিলেন) narcotine দিয়ে চিকিৎসা করা ৩২ জন রোগীর বিবরণ পেশ করেন। এরমধ্যে ২টি কেসের ক্ষেত্রে ডঃ গুডিভ স্বয়ং ফল পেয়েছিলেন। ল্যান্সেট-এ (জুলাই ২০, ১৮৩৯) প্রকাশিত হয়েছিল নার্কোটিন তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং ম্যালেরিয়ার ইন্টারমিটেন্ট ধরনের জ্বরের চিকিৎসায় এর ফলাফল।



    ২০ জনের বেশি চিকিৎসক (সবাই বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসের সামরিক চিকিৎসক) ১৪১টি কেসের চিকিৎসা করেছেন। এরমধ্যে ১২৫ জনের সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। ৫ জন চিকিৎসাধীন। ১১ জনের ক্ষেত্রে কোন ফল পাওয়া যায়নি। উল্টোদিকে, ১৭টি ক্ষেত্রে যেখানে কুইনাইন ব্যর্থ হয়েছে সেখানে নার্কোটিন সফল হয়েছে। ২১ জন প্র্যাক্টিশনার যারা নার্কোটিন ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে ১৭ জন অতি সন্তোষজনক মন্তব্য করেছেন, ২ জন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি, ২ জন কেবল সংখ্যাভিত্তিক রিপোর্ট ছাড়া আর কিছু জানাননি।
    কুইনাইনের থেকে অনেক কম দামে (১ আউন্সের মূল্য ৬ আনা) এই ওষুধ পাওয়া যাবে বলে ও’শনেসি জানান। তিনি আরও নিশ্চয়াত্মক ফলাফলের জন্য নার্কোটিনের (আজকের ভাষায়) মাল্টি-সেন্ট্রিক ট্রায়াল করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল দুর্গম এবং কলেরা অধ্যুষিত অঞ্চলে, যেমন বার্মার Kyok Phoo, Akyab এবং চট্টগ্রাম, তমলুক ও রংপুরের মতো জায়গায় এ ওষুধ রোগীদের উপরে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হোক। কিন্তু বাংলার মেডিক্যাল বোর্ড এতে গররাজি হয়। ফলে নার্কোটিনের পরবর্তী ফলাফল অজানা থাকে।

    শেষ কথা
    বাস্তবিকই “শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে”! ও’শনেসি ক্লাসরুমের কেমিস্ট্রিকে প্রাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রির চেহারা দিয়েছেন। বিভিন্ন ওষুধ তৈরি ও প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রথম বায়োকেমিস্ট্রি এবং ফার্মাকোলজির সূচনা করেছেন। কেমিস্ট্রি ও বিজ্ঞানের শিক্ষাকে ছাত্রদের মাঝে একটি প্রাণবন্ত চিন্তা এবং বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করার সজীব প্রবাহ হিসেবে দেখেছেন।
    উপনিবেশিক বিজ্ঞানকে উন্নীত করেছেন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্তরে। আবার মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস রুমে ছাত্রদের উৎসাহিত করেছেন কেমিস্ট্রির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভারতের খনিজ, উদ্ভিজ্জ এবং ধাতুর চরিত্রের ক্ষেত্রগুলোকে সম্যকভাবে বুঝে এদেশের কাজে ব্যবহার করে অনেক স্বল্পদামে দেশীয় প্রোডাক্ট তৈরি করতে।
    মেডিক্যাল কলেজে তাঁর পূর্বোক্ত লেকচারে বলেছিলেন – “There are numerous and very powerful poisons, rapidly proven fatal, when taken in a certain quantity ... very little practice in the laboratory will enable you to detect the 100th part of a grain of arsenic, corrosive sublimate, &c. In any mixture can be presented to you ... very often enable you to protect persons labouring under false accusations.”

    ভারতে মেডিক্যাল টক্সিকোলজি তথা ফরেন্সিক মেডিসিনের সূচনা করলেন। সূচনা হল ও’শনেসির হাত ধরে মেডিক্যাল কলেজে – ১৮৩৬ সালে, প্রায় ৩০০ বছর আগে। কিন্তু এদেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীমহলে মানুষটি বিস্মৃত রয়ে গেলেন আজও।




    লেখাটি এর আগে দু'কিস্তিতে 'ডক্টর'স ডায়ালগ' সাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। এটা তার সংক্ষেপিত সংস্করণ।




    [1] ল্যান্সেট, ডিসেম্বর ৩, ১৮৩১
    [2] B A Foëx, “How the cholera epidemic of 1831 resulted in a new technique for fluid resuscitation”, Emergency Medical Journal, 2003, 316-18
    [3] মেল গরম্যান, “Introduction of Western Science into Colonial India: Role of the Calcutta Medical College”, পৃঃ ২৯৬
    [4] Calcutta Monthly Journal, 3rd Series, Vol. II, 1836, p. 17
    [5] Calcutta Monthly Journal, no. XXVI, July, p. 433
    [6] প্রথম সংস্করণ ১৮৩৯, ২য় সংস্করণ ১৮৪২
    [7] Irish Imperial Networks, পৃঃ ১৮৪
    [8] “The Detection of Nitric Acid” (২ জুন, ১৮৩০); "On the Detection of Iodine and the Hydriodate of Potash, in Animal and Mineral Admixture" (১৩ জুলাই, ১৮৩০); “Analysis of a Suspected Stain by Nitric Acid, with Observations” (২১ আগস্ট, ১৮৩০); "On The Toxicological Relations of the Sulphocyanic Acid” (২ অক্টোবর, ১৮৩০); “Poisoned Confectionery. The Detection of Gambogf, Lead, Copper, Mercury, and Chromate of Lead, in various articles of Sugar Confectionery” (১৪ মে, ১৮৩১); “Proposal of a New Method of Treating the Blue Epidemic Cholera by the Injection of Highly-Oxygenised Salts into the Venous System (the birth of I.V. fluid therapy - commonly known today as "the Drip")” (১০ ডিসেম্বর, ১৮৩১); “Experiments on the Blood in Cholera” (৩১ ডিসেমর, ১৮৩১); “Chemical Pathology of Cholera. Remarks on "Dr. Thompson's analysis of the blood of individuals affected with Malignant Cholera” (২৬ মে, ১৮৩২); “the Blood in the Cholera” (২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৩)।
    [9] O’Shaughnessy, “Memorandum on the Explosion of Gunpowder under Water by the Galvanic Battery”, Journal of the Asiatic Society of Bengal 8, no. 94 (1839): 860-862
    [10] O’Bryen Bellingham, Observations on Aneurism, and its Treatment by Compression, ১৮৪৭, পৃঃ ১০১


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ২৬৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জয়ন্ত ভট্টাচার্য | 117.217.8.35 | ০৬ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৩৯499180
  • লেখাটি এর আগে দু কিস্তিতে ডক্টরস ডায়ালগে প্রকাশিত হয়েছিল। এটা তার সংক্ষেপিত সংস্কর। লেখাটি প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডালীকে ধন্যবাদ। 
    সংক্ষেপিত হবার জন্য পাঠকদের পাঠের সুবিধে হবে।
  • b | 14.139.196.16 | ০৮ অক্টোবর ২০২১ ১২:৪৪499301
  • লেখককে ধন্যবাদ জানাই। 
  • শর্মিষ্ঠা রায় | 103.135.228.214 | ০৯ অক্টোবর ২০২১ ১০:৪২499335
  • অসাধারণ! যেন রূপকথা! লেখককে ধন্যবাদ, তাঁর দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল শেয়ার করার জন্য। 
  • মাধব চট্টোপাধ্যায়, ,হায়দ্রাবাদ | 124.123.181.83 | ০৯ অক্টোবর ২০২১ ২২:৩৪499373
  • অত্যন্ত মূল্যবান ররচনা।লেখককে ধন্যবাদ।
    মাধব চট্টোপাধ্যায়,হায়দ্রাবাদ
  • Soumya Chakraborty | 103.211.132.240 | ১০ অক্টোবর ২০২১ ১০:১০499394
  • খুব ভালো লাগলো স্যার। 
  • সুদীপ্ত বসু | 2409:4061:519:e69::2609:f0ad | ১০ অক্টোবর ২০২১ ১০:২৫499395
  •  খুবই ভাল লাগল , মূল্যবান তথ্য । ধন্যবাদ স্যর
  • Goutam Dutta | 2409:4061:791:87b7::1630:70ad | ১০ অক্টোবর ২০২১ ১৬:২২499406
  • Khub valo laglo..Sir
  • অভিভূষণ মজুমদার | 117.227.1.10 | ১২ অক্টোবর ২০২১ ১০:৪৮499458
  • সমৃদ্ধ হলাম।ডা ঃ সুভাষ গুপ্ত অনুসঙ্গ এখানে কেন এলো ঠিক বোধগম্য হলো না।
  • Basudev Banerjee | 45.250.246.219 | ১৪ জুন ২০২৩ ১০:২৬520412
  • অসাধারণ। পড়তে পড়তে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গেলাম। সমৃদ্ধ হলাম। 
  • Dinesh Jha | 103.242.189.5 | ১৪ জুন ২০২৩ ১২:৪৩520413
  • ও'শনেসির এই সব যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলির কথা পড়ে ও তোমার লেখা থেকে একটা লাইন তুলে নিলাম 
     
    *জ্ঞান > তথ্য > ধুয়েমুছে সংশোধন করা/সত্যতা যাচাই করা > “প্রকৃত” এবং “খাঁটি” জ্ঞান।*

    আমার উপলব্ধিতে এটাকেই *সিঞ্চন* বলছি । এই ক্ষেত্রে একটা প্রবাদের কথা বলতেই হয় *যদি দেখো ছাই খুজে দেখো তাই, পাইলেও  পাইতে পার অমূল্য রতন*

    ও'শনেসির ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছে । *জিজ্ঞাসা* এক একটি ঘটনা ঘটছে আর উঁনার  মধ্যে সেটার প্রতি জিজ্ঞাসা বেড়েই চলেছে, এটাই তো দর্শন । অনেকটা নীতিকথার গল্পের নচিকেতার মত । এক অগাধ জিজ্ঞাসা নিয়ে ধর্মরাজকে জীবন মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করছে আর তার প্রাপ্ত উত্তর থেকেই খুজে নিলেন তার কাঙ্ক্ষিত নতুন এক দর্শনের পথ ।

    এখানেও ও'শনেসিকে আমার তেমনি মনে হলো ।

    শেষ হয়েও হয় না শেষ ।।।। দারুন তথ্য বহুল লেখা ।
    Just WOW
  • সুকুমার ভট্টাচার্য্য | 2601:2c2:601:4660:e193:dc4e:1916:822e | ১৫ জুন ২০২৩ ০৪:৩৩520425
  • এই বিষয়ে লেখকের আগের দুটি লেখা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে।
    মেধা, চেষ্টা ও পরিশ্রম থাকলে চিকিৎসা শাস্ত্র পড়া যায় এবং চিকিৎসক হওয়া যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানী হতে গেলে আর এক ধাপ এগিয়ে ক্রমাগত শিখতে হয়। যাঁরা শেখেন তাঁরা কেউ দক্ষতার জোরে বিজ্ঞানী হন। আর যাঁরা প্রতিভা নিয়ে জন্মান তাঁরা চিকিৎসাবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেন। ও ‘শনেসি ওঁদেরই একজন। সেই যুগে এই কলকাতায় বসে চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন। ওঁদের কে মনে রাখছেন তা অবান্তর কারণ ওঁরা দধীচি। ওঁরা নিজেদের অস্থি বিসর্জন দেন অসুখ দানবকে বধ করতে।
    ধন্যবাদ ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে।
  • Dr Nirmal Gupta | 2409:4088:9e0a:399c::5988:c903 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৬522196
  • আমি পুরোটা পড়েছি  । লেখাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। এতো তথ্য আছে যে সবটা মনে রাখতে পারছি না। জয়ন্ত দা তোমায় সেলাম।
  • সাত্ত্বিক নন্দী | 2401:4900:3dc2:2c1:ba28:1513:a742:ce8f | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০০522214
  • ধন্যবাদ জয়ন্তদা, এই রচনাটির অপেক্ষায় ছিলাম । ও' শনেসির মহানুভবতা সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানা হল , সবচেয়ে বড় কথা ক্যানাবিস ইন্ডিকা এবং ক্যানাবিস স্যটাইভার মানবশরীরে প্রভাব ও কার্যকারিতা নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের আগ্রহ । সমৃদ্ধ হলাম। এ বিষয়ে আরও গবেষণা মূলক কাজ তোমার কাছে দাবি করছি ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন