এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • দীপ | 42.110.144.28 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১১:৫৩512077
  • আবার প্রশ্ন রাখছি।
    মহিষাসুর ঐতিহাসিক চরিত্র- এর সপক্ষে প্রমাণ কি?
    মহিষাসুর ও হুদুড়দুর্গা এক- এর সপক্ষে প্রমাণ কি? তথ্যনিষ্ঠ প্রমাণ চেয়েছি, গপ্প নয়! 
    মহিষাসুর ঐতিহাসিক চরিত্র হলে কোন সময় তিনি রাজত্ব করতেন? কোথায় ছিল তাঁর রাজধানী?
    আশা করি এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর পাব।
     
  • দীপ | 42.110.144.28 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৩512079
  • Again I directly challenge this person and his followers to support the demand with proper documents. We want to see proper documents, not any mere propaganda!
  • দীপ | 42.110.137.3 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:২৯512091
  • গালাগালি দিতে খুব ভালো লাগে, তাই না? কিন্তু যেই তথ্যপ্রমাণ চাওয়া হয়, তখন আর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হয়না!
  • Tamoghno chaudhuri | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৭512109
  • এখানে আবার হিন্দু মুসলিম আসছে  কোথা থেকে?
  • দীপ | 42.110.146.165 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৫০512143
  • ছাগনৃত্য বন্ধ হবেনা!
  • দীপ | 42.110.146.165 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৫১512144
  • ছাগল বানানটাও ঠিকমতো লিখতে জানেনা। 
    এরাই আবার পাণ্ডিত্য দেখাতে আসে!
  • ? | 2405:8100:8000:5ca1::169:cfd6 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:০২512145
  • বানানের কথা ওখানে বলতে কি ফেটে হাতে চলে আসছে? গোশাবক এই সাইটটাকে গোভাগাড় পেয়েছে।  যাও না চাঁদু ওয়ার্দপ্রেসে নিজের ব্লগ খুলে জমাও না। 
  • দীপ | 42.110.138.79 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:০৭512147
  • গত বছর আরেক মহাবিপ্লবীর বিপ্লব। যদিও কিছুক্ষণ পরেই এই লেখাটা ডিলিট করে দেন। 
    ও, এই ব্যক্তিও ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশের একের পর এক ব্লগার হত্যাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন!
  • দীপ | 42.110.138.133 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:২৫512148
  • অবশ্য পোষ্য সারমেয়দের খুব সমস্যা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি!
  • <> | 2405:8100:8000:5ca1::180:a9c | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৯:২৯512163
  • ইসলামোফোব দীপ্তাংশু মালটা  একগাদা ফেক নামিয়ে  নাগাড়ে স্প্যামিং করে চলেছে।
  • দীপ | 42.110.137.147 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:২২512168
  • Hello Admin! This shameless scoundrel is continuously framing baseless allegations against me. I hope you will ask this scoundrel ( whose name is not known) to show proper evidences against me. It is expected that you should take proper steps against these personal attacks.
    Otherwise it will be proved that you and your team are endorsing these dirty languages and the attack!
  • হ্যাহ | 2405:8100:8000:5ca1::1d8:ffa1 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:১৯512182
  • অঁ অ্যাঁডঁমিন দ্যাঁকো নাঁ কেঁমন কঁচ্চে। কটা ফেক নামিয়ে ন্যাকামি মারছে আবার।
     কাল না বললে আজও চলত ফেক দিয়ে স্প্যামিং।
  • দীপ | 42.110.147.129 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৩৫512183
  • So again the nameless scoundrel has arrived to start personal attacks!
    O Shameless scoundrel! At first show proper evidences to prove your demand! Shameless liar!
  • দীপ | 42.110.147.129 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৫২512186
  • Continuously this shameless liar is spreading lies without any hesitation!
  • ব্যাস | 140.99.197.138 | ১৯ মে ২০২৩ ০৩:০৪519901
  • আরেকটা মুসলমান নাম পেয়েছে পোঁদে লাগার জন্য। র‍্যাবিড চাড্ডি একটা।
  • বিপ্লব রহমান | ২৩ মে ২০২৩ ০৬:৪২519988
  • এলেবেলের পর দীপ,  ফেকু গং এর এই  দীর্ঘতম ছাগ নৃত্য ব্লগ বারান্দায় বাঁধিয়ে রাখার মতো! 
     
    এডমিন যথারীতি গভীরতম শীতনিদ্রায় অথবা স্প্যামিং এর বায়েস্কোপ উপভোগ করেছেন! 
     
    কী যে এক্টা অবস্থা!! devil
  • দীপ | 2402:3a80:a09:cd40:15d0:730f:2442:75cb | ২৩ মে ২০২৩ ০৯:৫৪519993
  • মাননীয় ‌বিপ্লব রহমান, আপনার কাছে আপনার দাবির তথ্যসূত্র চাওয়া হয়েছে। আশা করি আপনি যথাযথ তথ্যসূত্র দিয়ে আপনার দাবীর সত্যতা প্রতিপন্ন করবেন।
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:29cb:29de:f4ba:9384 | ২৩ মে ২০২৩ ১১:০২519994
  • এলেবেলেকে চাড্ডি বলতে আমার আপত্তি আছে।
  • দীপ | 106.194.91.149 | ০৮ আগস্ট ২০২৩ ২৩:৩৬522286
  • রাঢ়ে সাঁওতাল মহিলার পৌরোহিত্যে দুর্গাপূজা। মহান গবেষকরা গেলেন কোথায়?
  • দীপ | 42.110.146.72 | ২৭ আগস্ট ২০২৩ ০১:০৭522975
  • বাংলাদেশের পার্বতীপুরে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মনসা পূজা। 
    মহান গবেষকদের পরিব্যাপ্ত গবেষণার খবর কদ্দূর? 
  • বিপ্লব রহমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৩523714
  • যুক্তি তর্ক গল্পে ৮ নোক্তা~ 

    ১.
    মিথ, পরস্পর পালটা মিথ, বা প্রচন্ড  দ্বি ম ত। কথিত দেবী দুর্গার যেমন লিখিত প্রামান্য ইতিহাস নাই, তেমনি কথিত সান্তাল রাজা অসুরেরও লিখিত প্রামাণ্য ইতিহাস নাই।

    এ যেন "শিলা জলে ভাসি যায়, বানরে গীত গায়" সমান। 

    //তবে নৃত্বত্ত্বের অ আ ক খ বলছে// :  

    ২. দেবী দুর্গার গায়ের রং ফর্সা, দীর্ঘ ধারালো ও বাঁকা কালো চোখ, দীর্ঘ ঢেউ খেলানো চুল ইংগিত দিচ্ছে, তিনি এদেশের জল-হাওয়ার কেউ নন, বহিরাগত বিদেশীনি তো বটেই, সম্ভবত ভারতবর্ষের দখলদার আর্য-জাত রাজনৈতিক দেবী, 

    ৩.  অন্যদিকে, ভারতবর্ষের  আদিবাসী সান্তাল মিথের কথিত রাজা অসুর রাজা দৃশ্যত কালো চামড়ার, পেশি বহুল ও ঢেউ খেলানো বাবড়ি চুলের, যা এ দেশের জল-হাওয়ার সাথে সংগতিপূর্ণ, আদিবাসী পুরুষজাত বলে সন্দেহ হয়,

    ৪.  লক্ষ্যনীয়, কথিত দেবী জ্ঞানে দুর্গা যেহেতু অধিক পূজিত ও ঘরে ঘরে "শুভ" র আরাধনা, সেহেতু ভিলেন (মহি) অসুর (বাস্তবে নিম্নবর্গের, অচ্ছুৎ, আদিবাসী রাজা[!?] তেমনই প্রাচীন আর্যগণ প্রভুদের দ্বারা যেন চাপিয়ে দেয়া "অশুভ" এবং তেমনি অচ্ছুৎ। 

    ৫. এখন সান্তালরা কেন এই সেদিনও হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সমাজের নিষেধাজ্ঞা বা ভয়ে লুকিয়ে অসুর পূজা  করেন, বা সান্তালী গানে হাজার বছর ধরে কথিত দেবী দুর্গাকে "বেশ্যা" বলা হয়েছে, তা গবেষণার বিষয়, 

    ৬. মান্যবর এক্টিভিস্ট শরদিন্দু উদ্দীপন আদিবাসী, চণ্ডাল, নিম্নবর্গ, দলিত অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন পাত করছেন বহুবছর, মানলাম ফেকু লেঞ্জার "চ্যালেঞ্জ  
    মোকাবেলা" বা প্রমান হাজির-নাজিরে তিনি সত্যিই অক্ষম, কিন্তু আদিবাসী সান্তাল সমাজের যুগ যুগ ধরে পাথর চাপা কান্না ও কথিত দেবী দুর্গার প্রতি অভিশাপও ইতিহাস,  এই মানবিক মূল্যবোধ, ইনভেলিট হয়ে যায় না। 

    ৭. শরদীন্দু ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সমাজের মুখে প্রচণ্ড চপেটাঘাত দিয়ে আরেকটি অকপট সত্য বলেছেন, যা চাড্ডি গং নিজ "চেহারা সুরত নাম ধাম পরিচয়"
    প্রকাশের হেডমে বলতে অক্ষম-- তার দাবি, পূজার নামে, উৎসবের নামে এই "নরহত্যার প্রজেকশন বন্ধ" হোক। 
    শাবাশ! জোহার! উজো! 

    ৮. 
    পাশের বাড়িতে একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, কাদায় নেমে শুওরের সাথে কুস্তি লড়ে লাভ কী? 

    সংগে সংগে উত্তর এলো, ধুর মশাই! শুওরের সাথে কুস্তি লড়ার মজাই আলাদা! 

    অধম অবশ্য প্রথম জনের সাথেই যাবেন। 
    জ্জয় চণ্ডাল!! 

    পুনশ্চঃ কলিকালে নাকি লিংক ছাড়া গীত নাই, এর বিপরীতে এই গীত সম্পূর্ণ লিংক ছাড়াই, গুরুগণ  দরকারে গুগল মামাকে জিজ্ঞেস  করে নিজ দায়িত্বে লিংক খুঁজে নেবেন, নিবেদন ইতি। devil
  • শরদিন্দু বিশ্বাস | 202.8.116.33 | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২৪523716
  • মহিষাসুর এক শিকড়ের সন্ধান  
    শরদিন্দু বিশ্বাস 

    সম্প্রতি “হুদুড় দুর্গা স্মরণ সভা” বা মহিষাসুর স্মরণ সভা মানুষের মধ্যে ব্যপক সাড়া জাগিয়েছে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং গবেষকদের মধ্যেও মহিষাসুরকে নিয়ে শুরু হয়েছে  নানা আলোচনা। সাধারণ মানুষ বিস্ময়য়ের সাথে খোঁজ নিতে চাইছেন এই মহিষাসুর স্মরণ সভার উদ্দেশ্য কি এবং কেন তা বিভিন্ন আসিবাসী গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে?  কেন ভারতবর্ষের মূলনিবাসী-বহুজন মানুষ নিজেদেরকে মহিষাসুরের বংশজ বলে দাবী করছেন এবং কেনইবা তাঁরা দেবীদুর্গার অসুরনাশিনী রূপের পরিবর্তন চেয়ে পদদলিত এবং শূলবিদ্ধ অসুরকে মুক্ত করতে চাইছেন? ভারত সরকারের সেনসাস তালিকার একেবারে প্রথমে থাকা অসুর সমাজ দাবী করছে যে তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন মহিষাসুর। দেবী নামে এক আর্য রমণী তাঁকে অন্যায় ভাবে হত্যা করেন এবং এই দেবী বর্তমানে দেবী দুর্গা নামে পূজিতা হন। মহিষাসুরের এই হত্যার দৃশ্য তাঁদের কাছে অপমান স্বরূপ। তাঁরা দেবীদুর্গার মুখ দর্শন করেন না এবং ৫দিন ধরে অশৌচ পালন করেন। সাঁওতালী ভাষায় এই মহিষাসুরকে বলা হয় “হুদুড় দুর্গা”। সাঁওতাল সমাজ দাবী করেন তাঁদের রাজা ছিলেন এই হুদুড় দুর্গা। বহিরাগত আর্য সেনাপতি ইন্দ্রের নির্দেশে দেবী তাঁকে হত্যা করেন। এই হত্যাকান্ডের ইতিহাস আজও সাঁওতাল সমাজ তাঁদের “দাঁশাই” পরবের মধ্যে বহন করে চলেছে। মহিষাসুরের খোঁজে এই প্রাথমিক উপাদানগুলি ইতিহাসের অনন্য সম্পদ হয়ে উঠছে। শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও গবেষকদের কাছে এই উপাদানগুলিই ক্রমশ ভাস্বর হয়ে উঠছে।                            কালের দাবীতে মানুষের এই জিজ্ঞাসু মনন কি কোন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকে খুঁজে পেতে চাইছে? চলুন আলোচনা করে দেখা যাক জনপুঞ্জের লোকায়ত সংস্কৃতি এবং ভারতের পুরাতত্ত্বের মধ্যে    কেমন ভাবে লুকিয়ে আছে অতীত ভারতের এক সংঘর্ষময় অধ্যায়।        
    দাঁশায় নাচের ইতিকথাঃ 
    “দাঁশায়”  আদিবাসীদের একটি শোকপালনের ব্রত। পাঁচদিন ধরে চলে এই শোক পালন। এই শোক   পালন হয় নাচ, গান এবং ভিক্ষার মাধ্যমে। ভিক্ষা বৃত্তি সাঁওতাল সমাজে এক সামাজিক অপরাধ হলেও দাঁশায়ের দিনগুলিতে তাঁরা প্রতীকী ভিক্ষা করে। বুক চাপড়ে ও হায়রে, ও হায়রে ধ্বনি তুলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচ করে। এই নাচকে বলা হয় “দাঁড়ান ভুয়াং” নাচ। লাউয়ের শুকনো বসের উপর ধনুকের মত ভুয়াং বাদ্যযন্ত্রতে টঙ্কার তুলে এই আর্তনাদ আসলে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া রাজার উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তাঁরা বিশ্বাস করে “দেবী” নামে কোন এক গৌরবর্ণা নারী তাঁদের রাজাকে বন্দী করে নিয়ে গেছে গোপন ডেরায় অথবা তাকে ছলনার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করেছে। এই দাঁশায় নাচের সমস্ত পুরুষেরা নারীর ছদ্মবেশে সজ্জিত হয়ে নেয়। পরনে শাড়ি, মাথায় ময়ূরপুচ্ছ ধারণ করেন তাঁরা। শোনা যায় তাঁদের প্রাণপ্রিয় রাজা হুদুরদুর্গা বা  ঘোড়াসুরকে সব সময় ঘিরে থাকত সাত জন বীর যোদ্ধা। এই যোদ্ধারাই নারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তাদের রাজাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। হাতের শস্ত্রগুলিকে বাদ্যযন্ত্রের আদল দেওয়া হয়। যাতে সন্ধিক্ষনে যুদ্ধ বিজয়ে সেগুলো কাজে লাগে। “হায়রে ও হায়রে” ধ্বনি তুলে তাঁরা টিকটিকি, মাকড়সা গাছপালা, পশুপাখিদের তাঁদের রাজাকে দেখেছে কি না প্রশ্ন করে। সাংকেতিক ভাষায় প্রশ্ন করে এই ভুয়াং এর জন্ম কেমন করে হয়েছে। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই প্রশ্নের উত্তর কেবল হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরই দিতে পারেন। গানের সুরে তাঁরা প্রশ্ন করেন,
    অকারে দ ভুয়াং এম জানামলেনা রে?
    অকারে দ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে?
    খত মাদের  রে ভুয়াং এম জানামলেনা রে
    গড়া সাড়িমরে ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে
    চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম জানামলেনা রে
    চেতে লাগিৎ ভুয়াং এম বুসাঁড়লেনা রে
    দেশ দাড়ান লাগিৎ ভুয়াং এম জানাম লেনা রে
    দিসম সাঙ্গার লাগিৎ ভুয়াং এম বুঁসাড়লেনা রে।

    দুর্গা কে?  
    দুর্গা সাঁওতাল ভাষায় পুংলিঙ্গ। এর স্ত্রীলিঙ্গ শব্দটি দূর্গী। সাঁওতালী লোকসাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে যে তাঁদের রাজা দুর্গার কণ্ঠস্বর ছিল বজ্রের মত। ঝড়ের মত(প্রচন্ড জোরে বয়ে চলা বাতাস বা ঝড়কে সাঁওতাল ভাষায় হুদুড় বলে)তাঁর গতি। তিনি ছিলেন পরাক্রান্ত বীর। আর্য সেনাপতি ইন্দ্র চাইচম্পাগড় আক্রমণ করে হুদূর দুর্গার হাতে পর্যুদস্ত হয়। পরপর সাতবার আক্রমণ করে পরাজিত হওয়ার পরে ইন্দ্র বুঝতে পারেন যে সরাসরি যুদ্ধে হুদুড়দুর্গাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই ছলনা এবং কৌশলের আশ্রয় নেন ইন্দ্র। হুদুড়ের রণকৌশলের মধ্যে কোন দুর্বলতা আছে কিনা এই খোঁজ শুরু করেন ইন্দ্র। ইন্দ্র জানতে পারেন যে অসুর নিয়ম অনুসারে এ দেশের রাজারা আশ্রিতের সাথে, শিশুর সাথে, দিবাবসানে, রাত্রে এবং নারীর সঙ্গে যুদ্ধ করেন না। সুযোগ পেয়ে যান ইন্দ্র। তিনি লাবণ্যময়ী বারাঙ্গনা “দেবী”কে উপঢৌকন হিসেবে হুদূরদুর্গার কাছে প্রেরণ করেন। এক মহিষী থাকতে দ্বিতীয় নারীকে গ্রহণ করা যায় না এই অসুরনীতি মেনে দেবীকে প্রত্যাখ্যান করেন হুদূরদুর্গা। ইন্দ্র এবার নিজেই সন্ধির প্রস্তাব দেন। ঠিক হয় বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে তাঁরা বৈরিতা দূর করবেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য দেবীর সাথে হুদুড়দুর্গার বিয়ের প্রস্তাব দেন ইন্দ্র। হুদুড়দুর্গা আবার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইন্দ্র জানান যে হুদুড়দুর্গা দেবীকে প্রত্যাখ্যান করলে লোকে তাঁর  পৌরুষ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। উপায়ান্তর না ভেবে হুদূড়দুর্গা দেবীকে বিয়ে করতে রাজি হন।
    ইন্দ্রের আসল উদ্দেশ্য ছিল দেবীর মাধ্যমে হুদুড়দুর্গার দুর্বল মুহূর্তগুলির খোঁজ নেওয়া এবং সেই সুযোগে তাকে হত্যা করা। দেবীর মাধ্যমেই ইন্দ্র জানতে পারেন যে একমাত্র রাতের বেলায় ঘুমাতে যাবার আগে হুদুড়দুর্গা শস্ত্র খুলে রাখেন এবং তার দুর্ধর্ষ রক্ষীরা কাছে থাকে না। বিয়ে করার অষ্টম দিনে হুদূড়দুর্গাকে হত্যা করার কৌশল ঠিক করে নিলেন ইন্দ্র। তিনি দেবীকে জানালেন যে নবমীর রাতেই হুদূড়কে হত্যা করতে হবে। তাকে কামাসক্ত করে সুরাসক্ত করে মহাঘোরের মধ্যেই হত্যা করতে হবে। আদিবাসীদের বিশ্বাস নবমীর রাতেই দেবী নিজে আকন্ঠ সুরাপান করে এবং হুদুড়দুর্গাকে সুরাসক্ত অচৈতন্য করে তার বুকে খঞ্জর বসিয়ে দেয় এবং পরেরদিন ভোর রাতে তার দেহকে ইন্দ্রের শিবিরে নিয়ে আসে। হুদুড়দুর্গাকে হত্যা করার ফলে তার নাম হয় “দেবীদুর্গা”

    দেবী দুর্গাকে নিয়ে লোকসাহিত্যে নানা কাহিনী রয়েছে। একটি কাহিনীতে পাওয়া যায় যে, দেব সেনাপতি ইন্দ্র মহিষাসুরের কাছে পরাজিত হয়ে পারস্যের বিখ্যাত বারাঙ্গনা অ্যানার  সাহায্য গ্রহণ করেন। উল্লেখ থাকে যে, এই অ্যানা "কাম ও যুদ্ধের দেবী"। আবেস্তা গ্রন্থে এই "দেবাস"দের শয়তানের অংশে জাত বলা হয়েছে। লোককথায় বলা হয়েছে যে, বারাঙ্গনা অ্যানা মহিষাসুরকে কামাসক্ত করে অচৈতন্য অবস্থায় তাকে হত্যা করেন। তাছাড়া দুর্গা প্রতিমার পরিকল্পনায়ও হুবহু উঠে এসেছে অ্যানার প্রতিচ্ছায়া। দুর্গার সিংহবাহিনী রূপ, হাতের আয়ুধ সব কিছুই অ্যানার প্রতিরূপ। গবেষকেরা এইখানেই দেবাসুরের দ্বন্দ্বের মধ্যে আর্য এবং অনার্যের একটি চিরায়ত লড়াইয়ের সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন।            
    আর একটি উপকথায় পাওয়া যায় এই নারী ছিলেন ইন্দ্রের নিজের বোন দেবী। অন্যদিকে ভীল আদিবাসীরা দাবী করেন দুর্গা তাদের মেয়ে। দেবতারা তাকে শিবিরে নিয়ে গিয়ে মহিষাসুরকে হত্যা করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। দেবীর আর এক নাম চণ্ডী। হাঁড়ি সম্প্রদায়ের দাবী চণ্ডী তাঁদের মেয়ে।  দেবতারা তাকে দিয়ে তাঁদেরই রাজাকে হত্যা করে। এখনো হাঁড়ি সম্প্রদায়ের চণ্ডী পূজায় কোন ব্রাহ্মণ ব্যবহার করা হয় না।
    সাঁওতালরা দাঁশায় গানের মধ্য দিয়েই প্রকাশ করেন যে হুদুড়দুর্গা বা মহিষাসুরকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে ইন্দ্র চাইচম্পাগড় বা হড়প্পা থেকে আদিবাসীদের বিতাড়িত করেন। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে নারীর ছদ্মবেশ ধারন করে “ইয়ায় নায়ে দিশম চাম্পা” বা সপ্ত নদীর দেশ হড়প্পা থেকে গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। স্বদেশ হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে আজও তাঁরা বুক চাপড়ে ও হায়রে-ও হায়রে আওয়াজ করে ভুয়াং নাচের মাধ্যমে তাঁদের রাজাকে খুঁজে বেড়ায়। দেবী দূর্গার হাতে হুদুরদুর্গা বা মহিষাসুরের হত্যার কাহিনী এভাবেই লোকায়ত হয়ে আছে আদিবাসীদের মধ্যে। আদিবাসী সত্তায় রাজত্ব হারানোর স্মৃতি এখনও সমান ভাবেই বর্তমান।
    অসুর সভ্যতা ও সংস্কৃতিঃ
    নৃতাত্ত্বিকেরা নিশ্চিত হয়েছেন যে মানব প্রজাতির উদ্ভব এবং বিকাশ শুরু হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশ থেকে। ৩.৯ মিলেনিয়াম বছর আগের প্রাপ্ত কেনিয়ার লায়েটেলিতে (Laetoli) আগ্নেয় ছাইয়ের মধ্যে পাওয়া হোমিনিন্স (Hominins) প্রজাতির মনুষ্যপ্রায় জীবের ছেড়ে যাওয়া একটি পায়ের ছাপ এই বলিষ্ঠ দাবী জানাচ্ছে। Australopithecus Afarensis পরিবারের এই আদিম প্রজাতিটি পরবর্তী কালে উত্তর তানজানিয়া হয়ে ক্রমশ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। মূলত খাদ্য অন্বেষণের তাগিদ হয়ে ওঠে টিকে থাকার অভিধা। অভিযোজন প্রক্রিয়ার  মধ্যে                

    সংস্কৃত সাহিত্যে মহিষাসুর এবং দেবী দুর্গাঃ    
    আদিবাসীদের এই লোকসাহিত্যের অনেকটাই সমর্থন পাওয়া যায় নানা পুরাণ কাহিনীতে। কাহিনীগুলি এমন হেঁয়ালিতে পরিপূর্ণ যে একটির সাথে আর একটির মিল খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মহাভারতের বনপর্বতে রয়েছে মহিষাসুরের কাহিনী, কিন্তু সেখানে দুর্গা অনুপস্থিত। দেবাসুরের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময় মহাবল-পরাক্রান্ত মহিষাসুর যখন অতিপ্রকাণ্ড এক পর্বত হাতে নিয়ে প্রচণ্ড বেগে দেবতাদের দিকে ধেয়ে আসে তখন সূর্যমণ্ডলের মত এই মহিষাসুরকে দেখে দেবতারা ভীত মনে পালাতে থাকে। এই সময় শঙ্কর মহিষাসুরকে বধ করার জন্য কার্ত্তিককে স্মরণ করে। কার্ত্তিক কনকসঙ্কাশ রথে ধাবিত হয়ে মহিষাসুরের মাথা কেটে ফেলে।(কালী প্রসন্ন সিংহের মহাভারত, বনপর্ব, বসুমতি-সাহিত্য-মন্দির, ৬৯২ পৃষ্ঠা)

    মহাভারতে অর্জুন দুর্গার উদ্দেশ্যে একটি স্তোত্র বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “হে সিদ্ধ-সেনানী, মহীয়সী, মন্দারবাসিনী, কুমারী, কালী, কপালি, কৃষ্ণ-পিঙ্গলা, তোমাকে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। হে ভদ্রকালী, তোমাকে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।হে মহাকালী, চণ্ডী, চন্ডা, তারিনী, বরবরণী, তোমাকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। হে ভাগ্যবতী কল্যাণী, হে কালী, মহিষেরে রক্তপানে আনন্দিতা, রাখালরাজের ভগ্নী- হে জ্যা, বিজয়া, হে শ্বেতকায়া, উমা, শাকম্ভরী, হে কৈটভ-সংহারীকা! বিজ্ঞানের মধ্যে তুমি ব্রহ্ম-বিজ্ঞান, মূর্ত প্রাণীগণের মহানিদ্রা, হে স্কন্দ মাতা, পবিত্র দুর্গা,বিজন প্রদেশবাসিনী, হে মহীয়সী দেবী, পবিত্র হৃদয় নিয়ে তোমার প্রশস্তি গীত হয়। আমি যেন তোমার কৃপায় চিরকাল যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারি”।
    ঋগবেদে যে দেবীদের নাম পাওয়া যায় সেখানে সরস্বতীর নাম পাওয়া গেলেও দুর্গার নাম পাওয়া যায় না। দুর্গার নাম পাওয়া যায় বিভিন্ন পুরানে। পুরানে যে দেবীদের নাম পাওয়া যায় তার প্রত্যেকেই এক একজন স্বতন্ত্র দেবী কিনা বলা মুশকিল। যেমন, দেবী, উমা, সতী, অম্বিকা, পার্বতী, হৈমবতী, গৌরী, কালী, নিরীতি, চণ্ডী, কাত্যায়নী, দশভুজা, সিংহবাহিনী, মহিষাসুরমর্দিনী, জগদ্ধাত্রী, মুক্তকেশী, তারা, ছিন্নমস্তা, অন্নপূর্ণা, সরস্বতী, ও লক্ষ্মী। এমন হতে পারে যে এই নামগুলির মধ্যে কয়েকজন স্বতন্ত্র দেবী এবং অন্যগুলি একই দেবীর বিভিন্ন নাম।

    পার্বতীর মূল উৎস সম্পর্কে বরাহ পুরাণ বলেছে যে, অন্ধক নামে এক পরাক্রমশালী অসুরের আক্রমণে ভীত হয়ে যখন দেবতারা ব্রহ্মার কাছে ছুটে আসে তখন ব্রহ্মা সেই বার্তা নিয়ে শিবের কাছে ছুটে যায়। শিব পরামর্শ করার জন্য বিষ্ণুকে ডেকে নেয়। এই তিন দেবতা পরস্পরের দিকে তাকালে তাঁদের তেজময় দৃষ্টি থেকে লাবণ্যময়ী, নীলবর্না, রত্নভূষিতা কুমারী কন্যার জন্ম হয়। এই নারী কালো, সাদা এবং লাল রঙের দ্বারা চিহ্নিত। পরে ব্রহ্মার নির্দেশে এই নারী তিন ভাগে ভাগ হয়ে তিনটি নারীরূপ পরিগ্রহ করে। সাদা অংশটি সরস্বতী, লাল অংশটি লক্ষ্মী এবং কালো আংশটি পার্বতী।সরস্বতী ব্রহ্মার পত্নীরূপে সৃষ্টি করে, লক্ষ্মী বিষ্ণুর বক্ষে থেকে রক্ষা করে আর পার্বতী শিবশক্তিসম্পন্না।
    পার্বতীর আর এক নাম গৌরী। পুরাণ বলছে যে কৈলাসে বসবাস কালে শিব মাঝে মাঝে পার্বতীকে কালোবর্ণ রূপের জন্য নিন্দা করত। গৌরী তাতে ভয়ানক ব্যথিত হয়ে জঙ্গলে এসে কঠোর তপস্যা শুরু করে। পার্বতীর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা তাঁকে বর দিল যে, তার গায়ের রঙ সোনার মত হবে। সেই থেকে পার্বতী গৌরী নামে পরিচিতা।
    দুর্গা এবং শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে যে দুই অসুরের যুদ্ধ হয় তার বর্ণনা আছে মার্কণ্ড পুরানে। এই পুরানে বলা হয়েছে যে, “দুর্গারূপে তিনি দৈত্যের সংবাদ পান। দশভুজারূপে তিনি তাঁদের সেনাবাহিনীর একটি অংশকে বধ করেন, সিংহবাহিনীরূপে তিনি রক্তবীজের সাথে লড়াই করেন, মহিষ-মর্দিনীরূপে তিনি মহিষরূপী শুম্ভকে হত্যা করেন; জগদ্ধাত্রীরূপে তিনি দৈত্যদের সেনাবাহিনী জয় করেন; কালীরূপে তিনি রক্তবীজকে হত্যা করেন; মুক্তকেশীরূপে তিনি দৈত্যদের আর একটি সেনাবাহিনী জয় করেন; তারারূপে তিনি শুম্ভকে তার আসল মূর্তিতে নিধন করেন; ছিন্নমস্তারূপে তিনি নিশুম্ভকে হত্যা করেন; জগদ্গৌরীরূপে তিনি দেবতাদের কাছে থেকে প্রশস্তি ও ধন্যবাদ লাভ করেন”।                                                                  
    দেবীপুরানে যে ঘোড়াসুরের বর্ণনা পাওয়া যায় তা হুদুড়দুর্গাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। 'সার্বনি' নামে অষ্টম মনুর মন্বন্তরের সময় যখন পুরন্দর দেবতাদের ইন্দ্র হয়েছিলেন (মার্কন্ডেয় পুরান 80 অঃ) সেই সময় রম্ভাসুরের পুত্র ' ঘোরাসুর' কুশদীপের অধিপতি ছিলেন। সেই ঘোরাসুরই  মহিষাসুর নামে খ্যাত (দেবীপুরান- 1ম অঃ)। তিনি নিজে বাহুবলে জম্বুদ্বীপ, ক্রোঞ্চদ্বীপ, শাল্মদ্বীপ, পুস্করদ্বীপ, মানসদ্বীপ (স্বর্গ) ও নাগরাজ (পাতাল) জয় করে সপ্তদীপ ও সপ্তসমুদ্রের অধিপতি ছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন বলবান, বীর্যবান, বুদ্ধিমান, ও সর্ব্ববিদ্যায় পারদর্শি তেমনি ছিলেন ধর্মপরায়ন, সংযমী, বিলাসহীন, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবতাবাদের আদর্শে প্রজাহিতৈষী। প্রজাগন শ্রদ্ধার সঙ্গে তার নাম বুকের মধ্যে খোদাই করে রাখত (দেবি পুরান -2 ও 16 তম অঃ)। পরস্ত্রী কে তিনি সর্বদা কন্যা ও মাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন (দেবিপুরান ষোড়ষ অধ্যায় শ্লোক নং 2-12) । তার মতো সর্বগুন সম্পন্ন মহান রাজা  মহাভারত, রামায়ন এমনকি অনান্য পুরাণ কাহিনীগুলিতেও  দ্বিতীয় কোনো রাজার পরিচয় পাওয়া যায় নি। কেবলাত্র রাজা হরিশচন্দ্রের মধ্যে কিঞ্চিৎ এই গুন থাকলেও হরিশচন্দ্রের তুলনায় তিনি বহুগুনে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।
    শব্দক্লপদ্রুম একটি সর্বমান্য সংস্কৃত অভিধান। রাজা রাধাকান্ত দেব সহ আরো অনেক ভাষাবিদগণ শব্দের লিঙ্গভেদ  সহ প্রকৃত অর্থগুলিকে অটুট রেখে এই অভিধানকে গ্রন্থনা করেছেন। এই শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, “দোর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা”। অর্থাৎ দুর্গা নামক অসুরকে বধ করেন তিনিই নিত্য দুর্গা নামে অভিহিতা হলেন।
     কোন সর্বগুণ সম্পন্না, কল্যাণময়ী নারীকে যেমন মহিষী বা মহিয়সী উপাধী দেওয়া হয় তেমনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ হিসেবে ঘোড়াসুরকে মহিষ , মহিয়ষ তথা (মহিষ+ অসুর ) মহিষাসুর উপাধি তে ভূষিত করা হয়েছিল। পরবর্তী কালের পুরাণগুলিতে বিশেষ করে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, বৃহদ্ধর্ম পুরাণ এবং ইদানীং কালের মহিষাসুর মর্দিনীতেও মহিষাসুরকে মহিষের গর্ভজাত অথবা মহিষেররূপী এক মায়াবী এবং দুরাচারী অসুর হিসেবে দেখানো হয়। মূলত দুর্গা শক্তির নামে এক ব্রাহ্মন্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী এবং ভোগবাদী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর জন্যই জনকল্যাণকারী, মঙ্গলময় আদিকৌম সংস্কৃতির মহান রাজা হুদুড় দুর্গা, ঘোড়াসুর বা মহিষাসুরকে 'অশুভ শক্তি'র প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।   
    মহাপণ্ডিতেরা বলছেন, অশুভ শক্তির বিনাশ শুভ শক্তির বিকাশ নাকি দুর্গা পূজার অন্যতম অভিধা। কিন্তু এই ধাঁধার যথার্থ  উত্তর খোঁজা প্রয়োজন বলে মনে করি। মনে করি যে আমাদের খুঁজে দেখা উচিৎ বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে কারা এই অশুভ শক্তির প্রতীক! কাদের দুর্দম্য, দুর্বিনীত আচরণের জন্য সাম্যবাদের  এই মহান ভূমি কলুষিত হয়েছে বার বার? কারাই বা নারীকে ক্লেদাক্ত পঙ্কে  নিক্ষিপ্ত  করেছে। কারা নিমজ্জিত হয়েছে লুন্ঠন, ধর্ষণ জিঘাংসায়? কারা পূজার অছিলায় দুর্গা শক্তির নামে সমগ্র নারীসমাজকে গণিকার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে? কারা এখনো পর্যন্ত নারীকে নরকের দ্বার মনে করে? কারাই বা শুধুমাত্র পুত্র কামনার্থে নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করে? কারাইবা নারীকে বহুগামিতা বহুবিবাহে প্রলুব্ধ করে?
    এই সমস্ত কাজ যদি সমাজ বিকাশে অকল্যাণকারী হয় এবং এদেরকেই যদি অশুভ শক্তির ধারক বাহক হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়; তবে নিশ্চিত ভবেই ভারতের ব্রাহ্মন্যবাদ এই অশুভ  শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

    ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে মহিষাসুর স্মরণ সভা। রাজ্যের প্রতিটি আদিবাসী গ্রামে পূর্ণ উদ্যমে দাঁশাই পালন করার জন্য প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে মূলনিবাসী-বহুজন সমাজ। সমগ্র রাজ্যের অনুষ্ঠানগুলিকে একসূত্রে গাঁথার জন্য গঠিত হয়েছেপশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অসুর স্মরণসভা কমিটি এই কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, অসুর সংস্কৃতির শিকড়ের অণুসন্ধানই তাদের মূল উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদীদের মদতে দুর্গাপূজার অছিলায় যে সাম্রাজ্যবাদী, ভোগবাদী এবং আগ্রাসী শক্তি ভারতীয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তাতে বহুজন সংস্কৃতিতে নেমে এসেছে এক অস্তিত্বের সংকট। মহিষাসুর স্মরণ সভা সেই স্বাধিকার এবং শিকড়ের সন্ধানের এক সাংস্কৃতিক জাগরণ। এই জাগরণ ভাবি কালের জন্য এক নব নির্মাণের ইঙ্গিত বহন করছে।      

     

     
  • কামাল পাশা | 74.82.60.17 | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩১526640
  • উল্লুকটাকে ফের গদাম দিতে হবে  
  • চাড্ডি-ছাগুদের দ্বৈতনৃত্য দেখব<33 | 103.87.143.154 | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৫২526644
  • দুর্গাকে 'বেশ্যা' পর্যায়ে ফেলা হচ্ছে কেন তার একটি সঙ্গত ব্যাখ্যা হয়তো এই যে- আগেকার দিনে যেমন ষোড়শ মহাজনপদের কালে ও তৎপূর্বে, আম্রপালির মতো নগরনটী, বারাঙ্গনা বা জনপদবধূ(রবীন্দ্রনাথের 'শ্যামা' স্মর্তব্য)রা যেমন সমাজে যথেষ্ট ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারিণী ছিলেন ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে আনাগোনা ছিল তাঁদের বিভিন্ন সঙ্গত কারণে, honey trap tool হিসেবে ব্যবহৃত হবার জন্য‌ই হোক, বা গুপ্তচরবৃত্তির কাজের উদ্দেশ্যেই হোক। সেরকমই কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ পদের অধিকারিণী ছিলেন দুর্গা কোন আর্যরাজত্বাধীন অঞ্চলে। এ প্রসঙ্গে দুটি বেশ কৌতুহল-উদ্রেককারী reference দেওয়া যায়-
     ১. দুর্গার উৎপত্তি-সমস্ত দেবতাদের 'বীর্য নিজ অঙ্গে ধারণ করে'(বাস্তব দৃষ্টিতে দেখলে, হয় সূক্ষ্মভাবে এই ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে-দুর্গা ইন্দ্রাদিনানাদেবতাতুল্য-দেবসদৃশ পুরুষদের থেকে উৎপন্ন কন্যা, অর্থাৎ স্থূল অর্থে কোন জনপদবধূজাতা নারী, কোন "বেশ্যাপল্লীজাতা" "বেশ্যা"নন্দিনী, অথবা তিনি নিজেই স্বয়ং কোনো ক্ষমতাশালিনী বারনারী যিনি এই ক্ষমতার শীর্ষে থাকা আর্যপুরুষদের অঙ্কশায়িনী ও 'বীর্যধারিণী', আর তখনকার দিনে মুখ্যত এইরূপ বারমুখ্যা ও বারাঙ্গনা নারীরা বহু বিদ্যা(৬৪ কলা) য় পারদর্শিনী হবার প্রশিক্ষণ পেতেন, বিষবিদ্যা, ভেষজ বিদ্যা ও শস্ত্রবিদ্যা সহ, আত্মসুরক্ষার কারণে)। এই দেবীর নিবাস যে আর্যরাজত্বে ছিল, সেই রাজ্যের সাথে অন্য রাজ্যের অনার্য শাসক (মহিষাসুর/হুদুড় দুর্গা/বা অন্য কিছুও নাম হতে পারে, নামে কিছু এসে যায় না) এর দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে, কিছুতেই অনার্য শাসককে বাগে আনতে না পেরে, এই আর্য দেবতা-তথা-শাসকেরা দুর্গাদেবীকে honey trap অথবা উপঢৌকন বা ভেট/নজরানা/সন্ধিপ্রস্তাবক দূতী/গুপ্তচর হিসেবেই পাঠান এই অনার্য রাজার কাছে, এবং প্রাথমিকভাবে, অনার্য শাসক দেবীর রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে দেবীকে অধিকার করার জন্য আক্রমণ করলে বা আগ্রাসী ব্যবহার করলে দেবী বাধ্য হন ভল্ল/বর্শা প্রয়োগ করে সেই আক্রমণকারীকে বধ করতে, যা হয়তো দেবীর নিয়োগকারী 'দেবতা'দের ও প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল না। দেবতারা এতে হয়তো ভীত/শঙ্কিত হন যে, যে পুরুষ, প্রবল পরাক্রান্ত 'অসুররাজ'কে, তাঁরা, বড়ো বড়ো 'বীর বোগাতীর' ইন্দ্র-বরুণ-অগ্নি দেবতারা বধ করতে পারেননি, তাকে এক সামান্য 'নগরবধূ' পর্যায়ের নারী বধ করেছে, যা তাঁদের 'পৌরুষ', 'ক্ষমতার দম্ভ'এর প্রতিস্পর্ধী হতে পারে- সেই আশঙ্কায় দুর্গার 'দেবী/দৈব ক্ষমতার অধিকারিণী-যে দৈব ক্ষমতা দেবী পুরুষদেবতাদের থেকেই লাভ করেছেন' এরূপে বিনির্মাণ শুরু হয়- এভাবে 'দেবতা'রা এক ঢিলে দুই পাখি মারেন-
    ক. দুর্গাকেও যথোচিত সম্মান দেখানো হলো- মানবী নগরবধূ না, অসুরঘাতিনী দেবী হিসেবেই ভাবীকাল তাঁকে শুধু স্মরণ করবে না, পূজাও করবে, আর সেই 'ধূপের ধোঁয়া ফুলের মালা' র আড়ালে এক অসামান্যা নারীর বীরত্বের ও আত্মসম্মান রক্ষার অধিকারের কাহিনী ঢাকা পড়ে গিয়ে তার দৈবী অলৌকিক মহিমার আখ্যানটিই অধিক প্রচারিত হবে।
    খ.দেবতাদের নিজেদের "পৌরুষগর্ব" ও "ক্ষমতার অধিকার" ও সুরক্ষিত র‌ইলো- দুর্গা এখন সামান্যা নগরনটী, বহুভোগ্যা 'নারী' থেকে দেবী পর্যায়ে উন্নীতা হয়ে যিনি 'রাষ্ট্রী', রাষ্ট্রশক্তির প্রতিস্পর্ধী নয়, রক্ষাকারিণী দেবী তিনি। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, পরবর্তীকালেও এইরকম অসুরকে রূপের মায়া-মোহজালে আবদ্ধ/বশীভূত করে বধ করার আখ্যান আমরা পাচ্ছি শ্রীশ্রীচন্ডীর আরেক অধ্যায়, "মহাসরস্বতী চরিত্রে", শুম্ভ-নিশুম্ভ বধার্থে দেবীর সম্মোহনী রূপ পরিগ্রহ করা, দেবীর 'কৌশিকী' রূপে তারা আকৃষ্ট হলে "চামুন্ডা" রূপে চন্ডমুন্ডাদিসহ অসুরদের নিধন করা, পরে নরকাসুর বধের সময়েও "কামাখ্যা"র নিজরূপ দ্বারা অসুরকে আকর্ষণ করা ও ছলের আশ্রয় নিয়ে হত্যা করা(অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীতেও সমগোত্রীয় ঘটনার সন্ধান পাই- বিষ্ণুর 'মোহিনী' রূপধারণ কর্তৃক অসুরদের অমৃত থেকে বঞ্চিত করা, সমুদ্রমন্থনকালে তারা সমান শ্রমদান করে অমৃতের ন্যায্য অধিকারী হলেও, অথবা 'তিলোত্তমা'র দ্বারা সুন্দ-উপসুন্দের মধ্যে ভ্রাতৃদ্বেষ সৃষ্টি করা প্রভৃতি) এবং শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ যুক্তিতে এইসব ঘটনাক্রমকে justify করা। আবার ক্রমশ এভাবেই রাষ্ট্রশক্তির রক্ষিণী হিসেবে দেবীর বিভিন্ন রূপের উত্থান-বিভিন্ন রাজপুত রাজবংশের কুলদেবী(অম্বাদেবী প্রভৃতি), দাক্ষিণাত্যের রাজশ্যামলা-বিন্ধ্যবাসিনী প্রমুখাদি রূপে রাজবংশের অধিষ্ঠাত্রী-রক্ষয়িত্রী দেবীরূপে প্রতিষ্ঠালাভ, মহাভারতে যুধিষ্ঠির-অর্জুনকৃত দুর্গাস্তব বা কৃত্তিবাসী রামায়ণে, জগদ্রামী অদ্ভুত রামায়ণে রাজা রাম কর্তৃক দুর্গার/সীতারূপিণী শক্তির বোধন/আরাধনা, অনার্য অধ্যুষিত লঙ্কার‌ও রক্ষয়িত্রী রূপে রাবণ-অহিরাবণ-মহীরাবণ পূজিতা ভদ্রকালীর উপাসনা-একথাই বারংবার প্রমাণ করে, কিভাবে প্রকৃতি ও শক্তি মাতৃকা আরাধনার যে অনার্য মাতৃতান্ত্রিক সমাজের শক্তিসাধনার ধারাটি, তা আর্য discourse এ এসে প্রাতিষ্ঠানিক রাজশক্তি/শাসকশক্তির পৃষ্ঠপোষক/সংরক্ষক দৈবশক্তির আরাধনায় রূপান্তরিত হয়েছে, ও ছলনা, শঠতার আশ্রয়ে আর্যগৌরবান্বিত পুরুষতান্ত্রিক শাসকশক্তির সহায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে মাত্র‌।
     
    দেবী দুর্গার রূপকল্প বিশ্লেষণ করলে চার-পাঁচটি উল্লেখযোগ্য দিক উঠে আসে-
    ১.আর্যগুণসম্পন্না দেবী(পীতঅতসীপুষ্পবর্ণা, যদিও অনেক জায়গাতেই দেবীকে গলিত স্বর্ণ, অগ্নির মতো রক্তবর্ণা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে, যা আর্য-অনার্য সঙ্কর জাতি উৎসের ইঙ্গিতবাহী, পরে গিরিজা যোদ্ধৃরূপা দেবীকে আর্য ব্রাহ্মণ্য দেবপরিমন্ডলে স্থান দেবার জন্য পূর্ণ বিশুদ্ধ আর্যনারীসুলভ বৈশিষ্ট্যাবলী আরোপিত হয়েছে দেবীর রূপে)
    ২.মহিষ/মহিষদানব মর্দিনী দেবী( buffalo demon slayer goddess)
    ৩.বহুভুজা(৪/৮/১০/১৮ ভুজা) দেবী(ইনান্না/ইশতার প্রভৃতি মেসোপটেমিয়/ব্যাবিলনীয় সভ্যতার দেবীরা স্মর্তব্য এই প্রসঙ্গে), যার জন্য আব্রাহামিক ধর্মগুলির অন্যতম, খ্রিস্টধর্মের প্রচারক পাদ্রীরা প্রাচ্যদেশে ধর্ম ও ঔপনিবেশিকতার প্রচারে এসে কালী, দুর্গার মতো দেবীদের 'many handed aboriginal demoness' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
    ৪.সিংহবাহিনী দেবী(lion-riding war goddess cult reference)
    ৫.মাতৃকাদেবী(fierce but nurturing protective mother goddess cult)
    ৬.প্রকৃতিদেবী(nature and fertility goddess cult)
    এই বহুপ্রকার ভিন্ন ভিন্ন দেবীরূপ, যাঁদের ভূমিকাও ভিন্ন ভিন্ন, একটি দেবীতে এসে সমাহিত হয়েছেন, যিনি দুর্গা-মূলে যিনি ছিলেন মানবী, জনপদমোহিনী নারী, পুরুষতান্ত্রিক আর্য শাসকতন্ত্রের জটিল কূটনীতির ক্রীড়নক হয়েও 
    যিনি নিজের সম্ভ্রমরক্ষার্থে অনার্য শাসক তথা ধর্ষককে সংহার করেছিলেন, কূটনৈতিক জটিলতার তোয়াক্কা না করেই, আর্য বীরপুরুষ শাসকেরাও সম্মুখসমরে যা পারেননি।
     
    ২. এ তো গেল একটা ধরনের dispositional deconstruction, দ্বিতীয় বিষয়টায় আসি-দুর্গাপূজায় প্রতিমা নির্মাণ, ঘটস্থাপন ও মহাস্নান কালে বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা ব্যবহার-হঠাৎ বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকাই কেন? গজদন্ত-বরাহদন্তমৃত্তিকার ও না হয় ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে সেগুলি অপেক্ষাকৃত দুর্লভ বস্তু, তাই সেগুলি জোগাড়ের মাধ্যমে পূজায় একধরনের কৃচ্ছসাধন হয় ও পূজার জাঁকজমক-ধুমধাম ব্যাপারটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় জনমানসে-কিন্তু বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা?!! দুর্গার সাথে অস্ত্রশস্ত্র-বীরত্বব্যঞ্জক বিষয়গুলির সংযোগ রয়েছে-তাই অস্ত্রাগার, যুদ্ধক্ষেত্রের মৃত্তিকা অথবা অন্য কোন বৃত্তিধারী মানুষ-পাঠশালা/গুরুগৃহের পণ্ডিত শাস্ত্রবেত্তা ব্রাহ্মণের গৃহাঙ্গনের মাটি, অথবা ক্ষত্রিয় শাসকের রাজগৃহের রাজদ্বারমাটি, বা শ্মশানবাসী ডোম-চন্ডালের গৃহের মৃত্তিকাও তো সুপ্রশস্ত হতে পারতো শক্তিরূপা দেবীর তন্ত্রমতে আরাধনায়-তাহলে এতকিছুর বদলে বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা কেন? তবে কি এইখান থেকে এই ইঙ্গিত‌ই পরিস্ফুট হয়, এই বেশ্যাপল্লীর সাথে দেবী দুর্গার সুপ্রাচীন নৃতাত্ত্বিক কোনো সংযোগ রয়েছে, যা কালক্রমে বিস্মৃতির আড়ালে চলে গিয়েছে, কেবল শাস্ত্রাচারটিই পড়ে রয়েছে?
     
    উপসংহারে এটিই বলা যায়, যেসব বিশেষ আব্রাহামীয় ধর্মানুসারীরা ভাবছেন ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের একজন প্রধানা দেবীকে "বেশ্যা" অভিহিত করে তাঁরা "হিন্দুধর্মকে বেশ একহাত নিলেন" ও অপরপক্ষে যাঁরা মনে করছেন, "বেশ্যা" অভিধায় দেবী 'অপমানিতা' হচ্ছেন, হিন্দুধর্ম 'অপমানিত' হচ্ছে, সেইসব পুঙ্গবদের জন্য অনেক সেলাম-আদাব ও গৈরিক নমন। তাঁরা যুদ্ধ করুন, যোদ্ধা দেবী দুর্গা ও তাঁর উপাসক-উপাসিকাদের মনোরঞ্জন করুন, আমার শেষ প্রণাম সেইসব দেবীদের চরণে, যাঁদের মধ্যেও ব্রহ্মস্বরূপিণী হৈমবতী ও লীলাময়ী মহামায়া সংস্থিতা-আমাদের মতোই যাঁরা রক্ত-মাংস সমন্বিত আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানবী, যাঁদের সমাজ "দেহপসারিণী" বলে ঘৃণা-করুণা করতেই অভ্যস্ত, তাঁদের মানবাধিকারের কথা বিস্মৃত হয়ে-সেইসব মানবীদের প্রতি, রামকৃষ্ণ চিৎপুরের রাস্তায় যাঁর মধ্যে 'দক্ষিণেশ্বরের মা' কে দর্শন করেন, বা বিবেকানন্দ ফরাসী বারাঙ্গনাপল্লীতে যাঁদের দুরবস্থায় অশ্রুবর্ষণ করেন, সেইসব মহাভাবভাবিনীদের কল্যাণ হোক। শুভমস্ত।।
  • টুকরে টুকরে | 2405:8100:8000:5ca1::2a6:b5fe | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৩526658
  • পুরুষতন্ত্রের পক্ষে নারীর জয় মেনে নেওয়া এতটাই কঠিন যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেই নারীর সামাজিক সম্মান ধ্বংস করার চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক। তাকে বেশ্যা বলে দেগে দাও, আবার রামকৃষ্ণ দেখিয়ে বলো বেশ্যাও তো মানুষ, হেয় করছি না তো। অথচ সারদা দেবীর হরিশ-দমনের বৃত্তান্তটি তখন ভুলে থাকতে হয়, অথবা সারদা-বিবেকানন্দ নিয়ে চটি লিখে আরেকদফা 'যৌনতায় দোষ কি?' আওড়াতে হয়।
    আর্য-অনার্য তত্ত্ববাগীশদেরও দায় আছে অনার্য মানেই লম্পট, রাজা রাজ্যের হিতাহিত ভুলে কামোন্মত্ত হয়ে পড়ে, আর্যরাই এদেশে নৈতিক চরিত্র ব্যাপারটা শেখাল এ মত প্রতিষ্ঠা করার।
    উপনিবেশবাদীরা জেএনইউতে আবিষ্কৃত এই তত্ত্ব যে আনসাস্পেক্টিং জনজাতির ঘাড়ে চাপিয়ে ভারত বিভাজন প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এতে অবাক হবার কিছু তো দেখিনা।
  • Strawman argument whataboutary fallacy checker | 103.87.143.154 | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪২526669
    • কোথাও বেশ্যা হিসাবে দেবীকে 'দেগে' দেওয়া হয়নি বা কলঙ্ক আরোপ করা হয়নি, যে কাহিনীকে কেন্দ্র করে 'দুর্গা চরিত্রের উত্থান, তার যে মূল চরিত্র এক রূপোপজীবিনী রক্তমাংসের মানবী হতে পারেন, সেই সম্ভাবনার প্রতিই নির্দেশ করা হয়েছে কেবল। 'বেশ্যা', 'চরিত্রহীনা', 'কুলটা', 'পতিতা' বলে মানুষকে তার যোগ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করে 'বেশ্যা' শব্দে কলঙ্ক-কলুষ-কালিমা সন্ধান করা আইটি কুলের ভাইটি ও তার পূর্ব'পুরুষ'দের‌ই একচেটিয়া বরং।
    • রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দর এই 'আপাত-কলঙ্কিনী' 'বেশ্যাজাতি'র নারীদের প্রতি ব্যবহারের কাহিনী দ্বারা তাঁদের দেওয়া 'লোকশিক্ষে'র দিকটিই স্মরণ করিয়ে দেবার প্রয়াস করা হয়েছে মাত্র, সারদাদেবীর 'বগলামূর্তি' ধারণপূর্বক হরিশকে প্রশমন করা, সারদা-বিবেকানন্দ 'হেটেরোইরোটিক' বা রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ 'হোমো-ইরোটিক'(এইটায় যা জ্বলবে না, পুরো লঙ্কাবাটা!) সম্ভাব্য যৌন রসায়নের প্রসঙ্গটির উত্থাপন‌ই এই প্রেক্ষাপটে অবান্তর।
    • আর্য-অনার্য পরিচিতিটির সাথে লাম্পট্য বিষয়টির সংযোগস্থাপন ভিত্তিহীন, লাম্পট্য পুরুষমাত্রেই একচেটিয়া, ওর আর্য-অনার্য হয় না-তাও বলা যায়, আর্যভাষী ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতভূমি আক্রমণকারীদের(aryan invaders), যাদের 'মহাকাব্যে' নায়ক কর্তৃক ভিন্নজাতির নারীর অঙ্গচ্ছেদন, কর্তন নেহাৎ‌ই 'হাসির কথা' অথবা প্রেমপ্রস্তাবক 'রাক্ষসী'র স্পর্ধার যথোচিত শাস্তিপ্রদান বলে বিবেচিত, 'কৃষ্ণা'নারীর রাজসভামধ্যে বস্ত্রহরণ ও পাশাক্রীড়ার পণরূপে ব্যবহার সুসঙ্গত, যাদের 'দেবরাজ' শক্র অন্যন্য 'pagan' ধর্মের দেবরাজদের মতোই নামকরা লম্পট ও নারীর শ্লীলতাহানিকারী, যাদের ব্রাহ্মণ্যবাদী নিয়মনীতিমূলক গ্রন্থে নির্দেশ দেওয়া হয় "স্ত্রীরত্নং দুষ্কুলাদপি" থেকে 'রাক্ষস বিবাহ' সম্পাদনের-তাদের কাছ থেকে শিক্ষণীয় 'নৈতিক চরিত্র' গঠনমূলক বিষয় কিছু তেমন নেই বললেই চলে।এরকম আরো উদাহরণ দেওয়া যেত হয়তো, আপাতত স্থানপরিসর, সময় ও উপযুক্ত শ্রোতৃমণ্ডলীর অভাবে দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন