এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফুটুরডুম

    শুভংকর ঘোষ রায় চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ জুন ২০২১ | ৯৫৯ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • #পুরোনো লেখা


    আজ সক্কালবেলা বেরিয়ে কাজে যাওয়ার পথে দেখলাম, রাস্তায় কিছু কিছু জায়গায় ম্যালা পুলিশ। ঊর্দি পরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অটোদের কেস দিচ্ছে, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সেটা তাদের আজকের কাজ নয়। ভাবলাম কিছু মিছিল টিছিল আছে বোধ হয় আজ গরু সংক্রান্ত, তাই বিশেষ ব্যবস্থা। কে একজন বললেন, "আজ এইচ এসের রেজাল্ট!" মনে মনে ভাবলাম, হ্যাঁ আয়, দু বছর পর থেকে রেজাল্টের দিন কার্ফু জারি করা হবে এরপর!


    পুলিশের কি হল জানি না, তবে আমার এই উদ্ভট ধারণাপোষণকারী বড়ভাইটি আমার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন। এইচ এস, মানে সায়েন্স, মানে পরীক্ষায় গোল্লা পেয়ে হাবু ফেরেন বাড়ি। মানুষ গতজন্মে পাপ করলে ইহজন্মে পশুপাখি হয়ে জন্মায় শুনেছিলাম। আমার পাপের বোঝা এমন ভারি ছিল, ভগবান আমায় পশুপাখি না করে সায়েন্স নিয়ে পড়ালেন। যমালয়ে জীবন্ত মানুষ পার্ট টু। আর সায়েন্সে আমি তো যেন রসগোল্লায় কাঁচালঙ্কা। কেউ বুঝতেই পারে না হচ্ছেটা কি।


    আমাকে সায়েন্স নিয়ে পড়তে হয়েছিল, কারণ মাধ্যমিকে নাকি আমাকে ইংরাজি-বাংলায় ব্রাইট মনে হয়েছিল স্যারদের। প্রথমত, এটা কেমন যুক্তি, আমি আজ অব্দি বুঝিনি। মানে একটা লোকের এসরাজ শুনতে ভালোলাগে শুনে আমি যদি তাকে জিজ্ঞেস করি, "আচ্ছা তাহলে তো তোমার গ্রীন স্যলাডে বাঁধাকপি নিশ্চয়ই ভালোলাগে?", বা সে প্রতিদিনই ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে বলে তাকে যদি বলি "জ্যোতির্বিজ্ঞানে তোমার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল", কেমন হবে ঘটনাটা! যাই হোক। দ্বিতীয়ত, তাঁরা বোঝেননি, বাংলা-ইংরেজিতে আমি ব্রাইট হলেও বাকি সব সাবজেক্টে স্কচ ব্রাইট। কাজেই এইচ এসে আমাকে কোনো অসম তুলনায় পড়তে হয়নি। কেউ আমায় বলেননি যে অমুক দাদা বা তমুক দিদির মার্কশীটটা দ্যাখ্ একবার! বরং, আমার কাছে সবাই-ই খুব আবেগের জায়গা থেকে এটুকুই চেয়েছিলেন যে, মনা তুই পাশ করে দেখা! হাম ভেট চড়ায়েঙ্গে!


    এবার মনার কথা বলি। মনার মাথায় অঙ্ক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি একসঙ্গে ঢুকতো না। প্রতি পরীক্ষায় এই তিনটের যে কোনো একটায় লাল দাগ থাকবেই। মনার বলতে কোনো লজ্জা নেই। অঙ্কের কথা তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। দু' বছরে পাঁচবার অঙ্ক টিউটর বদলেছিলাম। প্রথম দিকে আমি টিউটর ছাড়তাম, শেষদিকে তারাই আমায় ছাড়তেন। ফিজিক্স এসবের মধ্যে মন্দের ভালো। প্র্যাক্টিকাল করতে ভালোবাসতাম। আর কেমিস্ট্রি উরে বাবা রে বাবা রে বাবা! অরগ্যানিক কেমিস্ট্রিতে মৌচাকের মতো দেখতে কিছু ডিজাইন থাকত। অ্যাসেটিক অ্যাসিডের ফরমুলা বলার সময় CH3 বলে তারপর মুখ দিয়ে কুউউহ্ টাইপের একটা শব্দ করতাম (COOH), বেশ কোকিল কোকিল লাগত। আর ল্যাবে তো মনা একেবারে কুত্তা। যা-ই দিয়ে বলা হত এটা কি বার করো, আমি প্রাণপণে শুঁকতাম। শুঁকে যে কি উদ্ধার করতাম কে জানে, কিন্তু শুঁকতাম। তারপর এর-ওর পায়ে পায়ে ঘুরতাম, আমার মালটা আর কেউ পেয়েছে কিনা। একবার খুব ভালোবেসে একটা হলুদ মতো কিসে জানি কি একটা অ্যাসিড ঢেলেছি, আর সে কি অপূর্ব একটা কচি কলাপাতা রঙ, কিন্তু ল্যাব অ্যাসিস্টান্ট তপন এসে হঠাৎ এমন ঝাড়লো যে রঙটা মিলিয়ে গেল।


        


    এইচ এসে আমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম। তার বেশি কিছু না। ভাগ্যিস পাইনি, তাহলে হয়তো আবার ভাবা হত কোয়ান্টাম ফিজিক্সে আমার ফিউচার খুব স্কচব্রাইট। আসলে তো ফুটুরডুম!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন