এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্যার

    তাপস রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২১ মে ২০২১ | ১৩২১ বার পঠিত
  • সকালে আজকালে প্রকাশিত (১৯শে মে ২০২১) লেখায় শোকোচ্ছ্বাসকে আপনি যতই কুশলী আমলার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় আবেগহীনতার শক্ত খোলসে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, ডাবের ভেতরে যে নরম শাঁস থাকে আমরা সবাই সেটা জানি। মনে হচ্ছিল আপনি যেন তিন কন্যার এক কন্যা অপর্ণা সেনের মতো ছেলেমানুষী করছেন। কোঁচড়ে লুকিয়ে রেখেছেন কাঠবিড়ালি। সেটা যে বেরিয়ে পড়বে সে খেয়াল নেই। শেষ অনুচ্ছেদের শেষ কতিপয় লাইন পাঠ করার সময় আমার চোখ সহসা ভিজে গেল। লেখাটায় শোকের এত প্লাবন ছিল তবু জলধারার শব্দ নেই যেন। একদিকে চেনাপরিচিত মানুষের চলে-যাওয়া ও অসুস্থ হয়ে পড়ার ধুম লেগেছে। মনের ভেতরটা খা-খা করছিল। দূরাগত ঘুঘুপাখির ডাকে যে বিষণ্ণ দুপুর তার চেয়েও বিষণ্ণ চারপাশের পৃথিবী। অন্যদিকে আপনি অজয় ও টুমনি নদীতে বাবার চিতাভস্ম একসাথে নিয়ে যাচ্ছে এমন দুই ভাইয়ের গল্প শোনাবার ছলে ছোটভাইয়ের অকাল প্রয়াণে বড়ভাইয়ের নিঃশব্দ বিলাপ শুনিয়ে দিলেন। সকালে পড়ার পর সারাটা দিনগুমোট আকাশের মত স্তব্ধ হয়ে থাকলাম। লেখাটা কয়েকবার পড়ে মনে হয়েছিল আপনি বোধহয় নিজের অজ্ঞাতসারে অথবা সচেতনেই এক অব্যাখ্যাত ডিলেমায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। এক হাতে ঢাকতে চেষ্টা করেছেন, অন্যহাত দিয়ে শোককে আচ্ছাদনমুক্ত করতে চেয়েছেন । যদি তা নাই হয়, বা হত, কী লাভ লিখে, তাই না স্যার! কিন্তু এই রাখঢাক সরিয়েএকটু অঝোরে কেঁদে নিলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত! রাজ্যের আমলাকুলের সর্বোচ্চ পদে আসীন। খুব যদি ভুল না বলি জীবন থেকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার থাকলেও এই পেশায় আর তো বিশেষ কিছু পাওয়ার অবশিষ্ট ছিল না আপনার। মুখ্যসচিবদের বুঝি কাঁদতে নেই। তবু সকালের ওই "আমরা, মফস্বলের ভাইরা" নামক নিবন্ধে বড় ভাইয়ের হৃদয়ের মেঘময় আকাশ থেকে মাটিতে ঝরে পরা বিষাদবৃষ্টির টুপটাপ আলাপন আমরা শ্রুতিগোচর করেছি। বিশ্বাস করুন স্যার ভিজে গেছি! নিবন্ধটা স্ত্রীকে পাঠ করে শোনাতে গিয়ে গলা বুজে গেছে মাঝপথে। স্তব্ধ হয়েছি, লেখাটা হাতে দিয়ে বলেছি, নাও তুমি নিজেই পড়ে নাও।

    এতদিন শুনেছি ভাইরাল হয় ছবি, ভিডিয়ো, লেখা, কার্টুন। বোধহয় এই প্রথম-- সফল, সুদক্ষ এক বাঙালী আমলার ব্যক্তিগত শোক ভাইরাল হয়ে ঘুরে বেড়ালো সোস্যাল মিডিয়ায়।
    সকালের আজকাল আর বিকেলের আনন্দবাজার, সময়ের এই ক্ষুদ্র কিন্তু প্রবল স্রোত বেয়ে কত লাশ চলে গেল চুল্লিতে। কত মানুষ টিকা নিল, কতজন বেড পেল, কতজন সেরে উঠল, কতজন না-সেরে লাশ হল, কত লাশ চুল্লিতে গেল প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হিসেব মুখ্যসচিবের টেবিলে আছে। সেই হিসেব মেলানোর গুরুভার সামাল দিতে গিয়ে আগুনখেকো ভাইকে সাততাড়াতাড়ি অতীতে ঠেলে দিতে হল। সময় বড়ই অল্প। অশ্রুপাত মুখ্যসচিবের কাছে বিলাসিতা। দায়িত্ব সামলাতে হবে। বিকেলের আনন্দবাজারে আপনি তাই ভিন্নতর ভূমিকায়, আবেগ বর্জিত অবিচুয়ারি লেখক।

    'আমরা, মফস্বলের ভাইরা' নামক নিবন্ধে আপনি কোথাও বলেননি যে, যে-দুই ভাইয়ের কথা বলছিলেন তাদের মধ্যে বড়জন আপনিই। বলাটা আবশ্যক ছিল না যদিও।

    কিন্তু সন্ধের আনন্দবাজারে "কালের মন্দিরা" শীর্ষক নিবন্ধের আলাপটাই শুরু হল এই সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে, অঞ্জন বন্দোপাধ্যায় আপনার ভাই। এক ছিটে গর্বও হয়ত বা নিহিত ছিল। নিতান্তই এক ছিটে। কিন্তু আপনি এর প্রবল হকদার। কিন্তু এই লেখায় আপনি যতটা না ছোটর দাদা তার চেয়েও বেশি নির্মোহ নিবন্ধকার যিনি এক তরুণ সাংবাদিকের অবিচুয়ারি লিখছেন, কলম কাঁপছে না। 'অজেয় ব্যূহকৌশল ত্যাগ করে ছোট ভাই কেন এগিয়ে গেল' এজাতীয় কোনও অভিমানও আর ঝরছে না। আপনাকে স্যালুট স্যার! ভালো থাকবেন।

    তাপস রায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Milan Ganguly | ২১ মে ২০২১ ১৫:৩৩106226
  • খেরোর খাতায় এক হৃদয়স্পর্শী বিষয় নিয়ে খেলো লেখা। বা খেল খেল হয়েছে।‌আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি  একটি বিষয় নিয়ে একাধিক সংবাদপত্রের দাবি পূরণ করেছেন। ফলে সকালের শোকাশ্রু যে শুভ্র ফুল দিনশেষে বহু চর্চায় মলিন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন