এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভোটবাক্স  বিধানসভা-২০২১  ইলেকশন

  • চিরবঞ্চিতদের দাবি নিয়ে রাজনীতি ছাড়া পথ নেই

    কুমার রাণা
    ভোটবাক্স | বিধানসভা-২০২১ | ২৩ মার্চ ২০২১ | ২৬৭৯ বার পঠিত
  • সার্বিক শিক্ষার অপ্রাপ্তি ও নগরকেন্দ্রিক মনন ও তজ্জনিত আকাঙ্ক্ষাতাড়িত চাহিদা নির্মাণ ক'রে, তাকেই সব মানুষের একমাত্র দাবি বলে হাজির করার মধ্যে একটা বিপুল ফাঁকি থেকে যায়। সে ফাঁকির ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়তে থাকে নানাবিধ বিষফল, কালে যা বিষবৃক্ষে পরিণত হয়। বাংলার ভোট ও দল রাজনীতির আকাশে যে পুঞ্জমেঘ দেখা যাচ্ছে, সে মেঘের অন্দরটিকে দেখা হয়েছে এই নিবন্ধে।

    পাঁচ-সাত বছর আগেও পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের সম্ভাবনার কথাটা লোকে একবাক্যে উড়িয়ে দিত। অথচ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সময় থেকে “বাংলার মাটিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জায়গা নেই” বাগাড়ম্বরটা শোনানোর লোক খুব বেশি পাওয়া যাবে না। রাজ্যের মোটামুটি সর্বত্র “জয় শ্রী রাম” রণহুংকার। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোর মতোই এ রাজ্যেও মুসলমানদের মধ্যেও ছড়িয়েছে ঘোর আতংক। সাড়ে তিন দশক রাজ্যের শাসনক্ষমতায় থাকা বামপন্থীরা দুষছেন বর্তমান শাসক তৃণমূলকে। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছদ্ম মুসলমান-প্রীতির রাজনীতি হিন্দু-মুসলমান বিরোধ বাড়িয়ে তুলে বিজেপি-র জন্য রাস্তা খুলে দিয়েছে। বিপরীতে, তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, ২০১৯-এর নির্বাচনে বামপন্থীরা ব্যাপক হারে বিজেপি-র ঝুলিতে ভোট দিয়েছে। কিন্তু, সত্য কী? কেন এ রাজ্যের রাজনীতিতে ধর্মীয় সংযোগ, অন্তত প্রকাশ্যে, দেখা যায়নি? কেন হিন্দু-মুসলমান সংঘাত সেভাবে মাথা চাড়া দেয়নি? আর কীভাবেই বা, বিশেষত একাংশের হিন্দুর মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষ এত কুৎসিতভাবে দেখা দিতে লাগল?

    জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর হয় না। কিন্তু, একটা কথা বোধ হয় নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায় যে, এ রাজ্যে হিন্দু-সাম্প্রদায়িকতার বেড়ে ওঠার মতো মাটি তৈরি ছিল, বস্তুত বহু দিন ধরে তৈরি হচ্ছিল। এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা না ঘটা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করে এসেছি, এবং সেটা সঙ্গত কারণেই। কিন্তু, হিংসার ঘটনা না ঘটা মানেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দূর হয়ে গেছে – এই ভাবনার মধ্যে অতি সরলীকরণ থেকে গেছে। বরং বলা চলে, বাংলার রাজনীতি, এবং রাজনীতি নিয়ে বিদ্যাচর্চা ও অন্যান্য আলোচনায় সামাজিক বিভাজনে ধর্ম, জাতি, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়ার পিছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়ে চলা – সেটা আর্থ-সামাজিক দিয়েও যেমন বেড়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক দিয়েও বেড়েছে।

    একটু নিবিষ্ট ভাবে দেখলে যে কোনো পর্যবেক্ষকেরই চোখে পড়বে যে, একদিকে যখন একাংশের মানুষ, বিশেষত শহুরে মধ্যবিত্তের সামনে জীবনের মান উন্নীত করে তোলার নানা সুযোগ খুলে গেছে, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়বার সুযোগ, চাকরি-বাকরি সহ সামাজিক-রাজনৈতিক-আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রগুলোতে অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ, বিশ্বায়িত পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ তুলনামূলকভাবে প্রসারিত হয়ে চলেছে, তখন চিরাচরিতভাবে সুযোগবঞ্চিত মানুষদের অবস্থা প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে। এই সুযোগবঞ্চিত মানুষেরা কারা? প্রধানত, দলিত, আদিবাসী, এবং মুসলমান, যাঁরা এ রাজ্যের মোট শ্রমজীবী মানুষের অধিকাংশ। আবার উল্টোদিকে রাজ্যের মোট নিরক্ষরের প্রায় পুরোটাই হচ্ছেন, এই তিন গোষ্ঠীর লোকেরা। কায়িক শ্রমের ওপর একান্ত নির্ভরতা যেমন তাঁদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানকে নীচে টেনে ধরে, তেমনি আবার শিক্ষাগত বঞ্চনা তাঁদের আয় ও জীবনকুশলতার অন্যান্য দিকগুলোকে সংকুচিত করে রাখে। এই দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে তাঁদের আর্থিকভাবে দুর্বল ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জীবন কাটিয়ে যেতে হয়।

    আর এরই মধ্যে, বাংলার গ্রামীণ সমাজে, এক শ্রেণির মানুষের লক্ষণীয় আর্থিক উন্নতি ঘটেছে। কৃষির উদ্বৃত্ত থেকে নানা রকমের বাণিজ্যিক সুযোগ গড়ে তোলা, আর সেই সুবাদে রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এই শ্রেণিটি বিশেষভাবে ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে। এই শ্রেণিটি প্রধানত হিন্দু মধ্যবর্ণ থেকে উঠে আসা। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে কিছু দলিত বা মুসলমান ও উঠে এসেছেন, কিন্তু মোটের ওপর প্রাধান্যকারী ভূমিকাটি থেকেছে হিন্দু মধ্যবর্ণের হাতে। এবার এই গোষ্ঠীটি বহু যুগ ধরে সাংস্কৃতিক কূপমণ্ডুকতার মধ্যে বেঁচে থেকেছে, ফলে পেশাগত পরিবর্তন হয়ে উঠলেও মনোজগতের অচলায়তন ভাঙবার মতো অনুকূল পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। এই পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য যে গভীর পরিবর্তনের উদ্যোগ দরকার ছিল, সে উদ্যোগ বাংলার অগ্রসর সমাজ নেয়নি। এর জন্য প্রয়োজন ছিল এমন একটি সচেতন প্রয়াস যার মধ্য দিয়ে গ্রামের সঙ্গে নগরের, গ্রামের ও শহরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে শ্রমের প্রকৃতিতে যে দূরত্ব, সেটা দূর হত। অর্থাৎ, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে একদিকে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠত, অন্যদিকে তেমনি তার মধ্য দিয়ে একটা সাযুজ্য, সমভাব গড়ে উঠতে পারত। জাতি-ধর্ম-আচার, ইত্যাদির বেড়াগুলো ভেঙ্গে মানুষ তার মানসিক বৃত্তটাকে প্রসারিত করতে পারত। এর প্রধান শর্ত ছিল, একটা পূর্ণ সাক্ষর সমাজ গড়ে তোলা, এবং সকলের জন্য অগ্রবর্তী শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা; সকলের জন্য সমান মানের স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা; নগরের সঙ্গে গ্রামের সাংস্কৃতিক দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ; সামাজিক স্তরে বিজ্ঞানচর্চা প্রসারিত করার মতো জরুরি উদ্যোগ।

    এ উদ্যোগগুলো নেওয়া কি খুব কঠিন ছিল? তেমন মনে করার কারণ নেই, বিশেষত, বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে যে, সুযোগবঞ্চিত মানুষের মধ্যে নিজেদের জীবনমানকে অর্থবহভাবে উন্নীত করে তোলার আকাঙ্ক্ষার অভাব নেই। অভাব যেটার ঘটল, তা হল, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষমতার অধিকারীদের পক্ষ থেকে বাংলার মানুষের বাস্তবতাটা জানা ও সেই জানার আলোকে তাকে বদলানোর সদিচ্ছা। অধিকারী অংশটি যেহেতু প্রধানত নগরকেন্দ্রিক, তার চোখে গ্রামীণ মানুষের দারিদ্র্য যদিও বা কখনো সখনো চোখে পড়েছে, তাঁদের কৃষি-কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অবলম্বনের দিকটি নাগরিক চৈতন্যে আঘাত করেনি। তাঁরা একটা এমন একটা অবাস্তবের বিশ্বাস আঁকড়ে থেকেছেন, যা ক্রমে একটা অবিশ্বাসের বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে। লোকে লোকে সাংস্কৃতিক দূরত্বটা ব্যবহৃত হয়েছে রাজনীতিতে। রাজনীতির বাক-ব্যবহার দেখলেই সেটা বোঝা যায়। হিংসার ভাষা বেড়েছে, রুচিহীনতা প্রকট হয়েছে। এবং নাগরিক উচ্চবর্গীয়রা যখন এক শ্রেণির রাজনেতার নিম্নরুচি সম্পর্কে উন্নাসিক ঔদাসীন্য দেখিয়ে এসেছেন, তখন নিম্নবর্গীয় মানুষের একটা বড় অংশ এই সব রাজনেতাকে নিজেদের কাছের লোক বলে দেখতে থেকেছেন। একটা সময় পর্যন্ত বাংলার রাজনীতিতে মানুষের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়াগুলো নিয়ে যে ব্যাপক আলোচনা-প্রত্যালোচনা হত, রাজনীতিতে দরিদ্র-অসহায় মানুষকে নিয়ে যত কথাবার্তা হত, রাজনৈতিক দাবি ও আন্দোলনের মধ্যে গরিবের চাহিদার একটা প্রতিফলন থাকত, ধীরে ধীরে সেগুলো লোপ পেতে লাগল। যেমন এই সহস্রাব্দের গোড়া থেকে শুরু হল শিল্পের দাবি, চাকরির দাবি, ইত্যাদি। এখন এই দাবিগুলো তো গ্রামীণ বা শহরের গরিবের দাবি নয়, এগুলো নির্ভেজাল মধ্যবিত্তের দাবি। সুতরাং, একদিকে যেমন মানুষের জীবনমানের যে উন্নতি বামফ্রন্ট সরকারের গোড়ার পর্বে দেখা গিয়েছিল – ভূমি সংস্কার, মজুরি-বৃদ্ধি, কাজের-বদলে-খাদ্য, শিক্ষার প্রসার, ইত্যাদির মধ্য দিয়ে – সেই উন্নতি একটা জায়গায় এসে থেমে গেল; সেখান থেকে উন্নততর চাহিদা, কর্মসূচি, এবং আন্দোলন গড়ে তোলা হল না। ভবিষ্যৎ আন্দোলনের কল্পনার জন্য যেটা সবথেকে বেশি করে প্রয়োজন ছিল সেই মানসিক অনুশীলনটা একটা জায়গায় এসে আটকে গেল। শিক্ষার প্রসার, পঞ্চায়েতকে স্থানীয় মানুষের সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের স্বাস্থ্যের বিকাশ ঘটানোর মতো জরুরি – এবং পরস্পর সংযুক্ত – কাজগুলো থমকে গেল। এখনো পর্যন্ত এ রাজ্যের বড় একটি অংশের মানুষ, বিশেষত নারীরা, নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারলেন না। বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষায় মানের নিশ্চয়তা দেওয়া গেল না, বিজ্ঞান শিক্ষা অবহেলিত থেকে গেল। শিশু ও মায়েদের মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা জারি থাকা সত্ত্বেও, মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে হওয়ার মাত্রা সাঙ্ঘাতিক বেশি (৪২%) থাকা সত্ত্বেও, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তা নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রতিফলন দেখা গেল না। প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মানে উন্নতি তো হলই না, বরং অধোগতি দেখা গেল। এর কুফলটা আপাতদৃশ্যে ভোগ করতে হল সমাজে পরম্পরাগতভাবে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীগুলোর ওপর, কিন্তু কার্যত তার দণ্ডটা দিতে হচ্ছে সামগ্রিকভাবে বাংলার সমাজকে। দলিত-আদিবাসী-মুসলমান এবং অন্যান্য গরিবদের চাহিদাগুলোকে দাবি আকারে তুলে না আনার ফলে গরিবদের মধ্য থেকে কাংক্ষিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব উঠে আসতে পারল না।

    এটা একটা মস্তো ফাঁক, আর সেই ফাঁকটা পূরণ করল গ্রামাঞ্চলে কৃষি-উদবৃত্তের ভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য ও অন্যান্য কায়িক-শ্রম বহির্ভুত পেশার সুযোগ বাড়িয়ে তোলা অংশটি। আগেই যেমন বলেছি, পেশার অধিকাংশ মানুষের অধরা থেকেছে, সকলের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। সুযোগের সংকোচন আবার নগরকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে, এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্য-শিল্প-রাজনীতি নিয়ে চর্চা করা নাগরিক বাঙালি সমাজেও সাংস্কৃতিক পশ্চাদমুখীনতা সহজে জায়গা করে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক অনুশীলনের পথ যত রুদ্ধ হয়েছে ততই ধর্ম-জাতি-আঞ্চলিকতার মতো বিভাজক উপাদানগুলো বেড়ে উঠেছে। এবং, আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, জাতপাত, নারী-বিদ্বেষ, ইত্যাদি অমানবিকতাগুলোও – এখনি প্রতিরোধের পথ না নিলে – করাল আকার নেবে। জয় শ্রীরা্মের রণহুংকার কেবল কিছু লোকের ধার্মিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, এ হুংকার সুযোগবঞ্চিত মানুষরা যে সামান্য সুযোগ অর্জন করেছিলেন তা কেড়ে নিতে পারার বিজয়োল্লাস, এবং আর কখনো সম্মানের সঙ্গে বাঁচবার স্বপ্ন না দেখবার হুঁশিয়ারি।

    কিছুটা আশার কথা, এই নির্বাচনে, বামপন্থীরা সীমিত আকারে হলেও তাঁদের প্রচারে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দাবি তুলে আনছেন। প্রচারের ভাষা ও ভঙ্গিতে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কিছু অঙ্গীকার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এই আশা কতটা প্রসারিত হবে তা নির্ভর করবে কত দ্রুত এবং কতটা ব্যাপকতার সঙ্গে তাঁরা সমাজের বঞ্চিত মানুষদের চাহিদাগুলোকে আন্দোলনে পরিণত করতে পারবেন। প্রকাশ্যে স্বীকার করুন বা নাই করুন, অন্তত নিজেদের অতীত সামাজিক নিষ্ক্রিয়তা এবং কিছু ক্ষেত্রে অনাবশ্যক ও বিপরীত ফলদায়ী অতি সক্রিয়তাগুলো নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করবেন। সাম্প্রতিক কালে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং ভারত সরকার সৃষ্ট মহামারী প্রতিরোধের নামে মানুষের ওপর দুর্গতদের ওপর নামিয়ে আনা ভয়াল আক্রমণে পর্যুদস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা একটা বার্তা দেবার কাজ শুরু করেছিলেন, সেই কাজের মধ্যে দিয়ে একটা ভিন্নতর নেতৃত্ব উঠে এসেছে। তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে একটা জনমুখী ঝোঁক দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এঁদের যেমন দায়িত্ব আছে এই টানকে তীব্রতর করার, এবং নির্বাচনী রাজনীতির বাইরে বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পরিণত করার, তেমনি বাংলার ভবিষ্যতকে সমুজ্জ্বল করে তোলার জন্য তুলনামূলকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত অংশটিরও দায়িত্ব আছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও পশ্চাদমুখী সংস্কৃতির বিরোধিতার পাশাপাশি তাদের জটিল মূল সম্পর্কে সম্যক অবহিত হবার। এই মূলের অনুসন্ধানের সরল কোনো পথ নেই, এবং একে উপড়ে ফেলার সহজ কোনো উপায় নেই। অমানবিকীকরণের মধ্যে দিয়ে শাসন চালানোর আদি ব্যাবস্থাটির বিরুদ্ধে লড়বার জন্য মানবিক সাহস ও সহনাগরিতার বোধ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভোটবাক্স | ২৩ মার্চ ২০২১ | ২৬৭৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উৎসব - Sobuj Chatterjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ২৩ মার্চ ২০২১ ১৭:০৯103985
  • অত্যন্ত সুলিখিত। কর্মযজ্ঞের এক বিপুল সম্ভাবনা হেলায় নষ্ট হয়েছে। যাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা নেই, সে তো নেইই, যাদের কাছে ছিলো তারাও নানা কারণে পেরে ওঠেননি। এবারের জনমুখিনতা কিরকম ফলদায়ক হবে তা সময় বলবে। 


    আমাকে যেটা অবাক করে সেটা সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতা তো বটেই, দুর্নীতির যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে। এরও সবচেয়ে ভুক্তভোগী প্রান্তিকতম মানুষজন যাদের ঘর তৈরির বরাদ্দ থেকেও বাট্টা দিতে হয়। এ-ই প্রসঙ্গে লেখকের সুচিন্তিত মতামত আমার কাছে খুবই আগ্রহোদ্দীপক হবে।


    এতসবের বিরুদ্ধে লড়া হিমালয় ডিঙানোর মতোই কঠিন কাজ। তবে সেটা করে উঠতে পারলে এ রাজ্যের পুনর্জীবন সম্ভব হতে পারে। কারা এজন্য বলিপ্রদত্ত, সবাই জানে। সত্যি তাদের এবারের শুরুটি ভালো। 

  • সপ্রতিভ | 2409:4060:2e88:d423::79c8:c611 | ২৩ মার্চ ২০২১ ১৮:০০103986
  • রাজ্যের পুনর্জীবন এর কাজ বলিপ্রদত্ত হবার শামিল নাকি! বাব্বা। 

  • সপ্রতিভ | 2409:4060:2e88:d423::79c8:c611 | ২৩ মার্চ ২০২১ ১৮:০০103987
  • রাজ্যের পুনর্জীবন এর কাজ বলিপ্রদত্ত হবার শামিল নাকি! বাব্বা। 

  • Raja Bhattacharyya | ২৩ মার্চ ২০২১ ২১:১৬103988
  • এমন চমৎকার লেখা সত্যিই বিরল। লেখক সাবলীল ভাষায় পাঠকদের সমাজের নানা জটিল প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সামগ্রিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত সমাজের সামনে একটা আয়না তুলে ধরেছেন আত্মবিশ্লেষণের জন্য। লেখকের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।  

  • এলেবেলে | 2402:3a80:116a:fcc0:dcad:7918:3a08:c8e0 | ২৩ মার্চ ২০২১ ২৩:২৮103989
  • যেহেতু লেখাটির বুবুভাতে প্রকাশিত, তাই ধরে নেওয়াই যায় লেখক এখানে কোনও উত্তরই দেবেন না। লেখাটি একটি উইশফুল থিংকিং ছাড়া অন্য কিছু নয়। কারণ যারা ছোটলোক, অর্থাৎ মুসলমান, আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায় - চিরকালই নিপীড়িত, বঞ্চিত এবং অবহেলিত। স্বাধীনতার পরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই শ্রেণির মানুষদের কেবল ভোট ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করেছে। এদের শিক্ষা বা সামাজিক উন্নতি নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামানো হয়নি। লেখার শেষাংশে লেখক বামদলগুলোর যে মৌখিক বিবৃতির ওপর অত্যন্ত বিশ্বাস  করেছেন, তা একই সঙ্গে কষ্টকল্পিত ও হাস্যকর। অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। 

  • Anindita Roy Saha | ২৪ মার্চ ২০২১ ১১:৪২103996
  • রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর সরকারের নীতির বিশ্লেষণের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্তের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন আছে। মধ্য মেধা আর উচ্চ আশা নিয়ে মধ্যবিত্ত তার সুবিধাবাদিতা আর ভণ্ডামি করেই চলেছে সামাজিকভাবে। সেই দোষে আমরা সবাই কমবেশি দোষী। তাই সমাজ বদলের দায়ও আমাদের। 

  • Haque Shaikh Ekramul | ২৮ মার্চ ২০২১ ১১:০২104168
  • দারুণ উপভোগ্য বাস্তবতার অপূর্ব আলোচনা। শহুরে ভাবনায় গ্রামীণ মানুষ আজও ব্রাত্য,থাকলেও তাঁদের নিজস্ব মোড়কে ও রঙে চুবিয়ে পরিবেশন করে। ফলে রাজ্যের অধিকাংশ জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন সরকারী নীতিতে ঘটে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সংস্কৃতি পুরোটাই মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন মাত্র। দুর্ভাগ্যের বিষয় ফ্যসিস্টরা নানা স্তরে একটা গোটা সম্প্রদায়কে দানবে রূপান্তরিত করতে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া সোজা রেখে সক্রিয় প্রতিবাদ প্রতিরোধ বেশ কম। 

  • guru | 115.96.144.114 | ২৯ মার্চ ২০২১ ১২:২৩104188
  • বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর অভিনন্দন সমস্ত বাঙালিকে জানাই যারা এই ফোরামে এই আলোচনায় যোগ দিয়েছেন | ১৯৭১ এবং বঙ্গবন্ধুর সাফল্যের অন্যতম মূল কারণ ছিল এই বিহারি সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান | বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির অন্যতম মূল উদ্যেশ্য ছিল যে এই বিহারিরা যেন বাংলাদেশের সম্পদ নষ্ট না করতে পারে এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে যেন বিহারীদের আসা বন্ধ হয় | বঙ্গবন্ধু যদি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিহারি সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে দূর করতে পারেন তাহলে এই রাজ্যে কেন বঙ্গবন্ধুর মতো বিহারি সমস্যার সমাধান করা যাবেনা ?

    আমাদের পশ্চিমবঙ্গের নেতারা বঙ্গবন্ধুর মতো এই বিহারি সমস্যার সমাধান না করতে পারলে এই রাজ্যের কোনো আশা নেই | মাননীয়া লেখিকার এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে পারলে খুবই খুশি হবো |

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:

West Bengal Assembly Election, West Bengal Assembly Election 2021, West Bengal Assembly Election Coverage, West Bengal Assembly Election Guruchandali, West Bengal Assembly Election human story, West Bengal Assembly Election Politics, West Bengal Assembly Election Votebaksho, West Bengal Assembly Election Votebakso, West Bengal Assembly Election, West Bengal Assembly Election Votebakso Guruchandali, Guruchandali Election Coverage, Guruchandali Assembly Election West Bengal 2021, Kumar Rana, Kumar Rana Article, Kumar Rana Article in Guruchandali
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন