এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নিঠারী - আজও একটি প্রশ্নচিহ্ন

    শ্রাবণী
    আলোচনা | বিবিধ | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৭ | ৬১২ বার পঠিত
  • ঝাঁ চকচকে স্যাটেলাইট সিটি নয়ডা, আস্তে আস্তে জমজমাট হয়ে উঠে বড়বোন দিল্লীকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে তার আধুনিকতার গরিমায়। রিয়াল এস্টেটের দাম এখানে আকাশছোঁয়া। প্রবেশপথের ঝলমলে ফিল্ম সিটি , বড় বড় শপিং মল, নির্মীয়মান মেট্রো, বিশাল আধুনিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এসব শহরের শোভা হলেও, কোনোদিন নিউজ হেডলাইন হয়নি আজ অবধি - যা হয়েছে শহরের অভ্যন্তরের এক ছোট্ট গ্রাম নিঠারী।
    নিঠারী, যেখানে রাস্তার একদিকে জীবিকার সন্ধানে আসা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খেটে খাওয়া গরীব মানুষদের বস্তি আর অন্যদিকে ধনীদের কোঠিবাড়ী। এইরকমই একটি বাড়ী ডি-৫ থেকে সূত্রপাত হয় এ শতাব্দীর অন্যতম হাড়হিম করা রহস্য ঘটনাবলীর। যা ঘটেছে, সংবাদমাধ্যমে যা জানা যায় তাতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় এটি একটি সিরিয়াল কিলিং এর ঘটনা, যা দুজন বা একজন মানসিকভাবে বিকৃত লোকের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু এরপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়।

    খুনের সংখ্যা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে তবে এ নিয়ে সন্দেহ নেই যে নিহতদের প্রত্যেকেই অল্পবয়সী , ব্যতিক্রম একটি যুবতী মেয়ে পায়েল, যার বাবা এই মামলার মুখ্য বাদী এবং এরা প্রত্যেকেই গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে। প্রথম থেকে ছেলেমেয়েদের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ উঠলেও স্থানীয় পুলিশের চরম নিস্পৃহতা এবং উদাসীনতায় হতভাগ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পরে তদন্তে দেখা গেছে যে সেক্টর সাতাশের থানার সব অফিসারেরা অভিযুক্ত পান্ধেরের অর্থে লালিত হত। সমস্ত ঘটনা সামনে এলে জনসাধারণ ও মিডিয়ার চাপে পড়ে এই সব পুলিশ অফিসারদের সাসপেন্ড করা হয় যদিও তার আগে ছোট্ট একটি নাটিকায় নিঠারী দর্শন পর্বে তদানীন্তন উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী, মুলায়মের ভাই এর "এ আর এমন কি ব্যাপার, এরমটা তো হামেশাই হচ্ছে" , সংলাপে বেশ সাড়া পড়ে যায়।

    আর একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল পুলিশ বা স্থানীয়রা প্রথম দিকে যা দেহ উদ্ধার করেছিল অভিযুক্তের বাড়ির সামনের নালা থেকে তাতে মাথা ও অন্যান্য অংশ পাওয়া গেলেও ধড় পাওয়া যায়নি। আলোচ্য ঘটনাস্থল থেকে অনতিদূরেই নয়ডা মেডিকাল সেন্টার যার মালিক নবীন চৌধুরীর নামে কিছুকাল আগে উঠেছিল মানব অঙ্গের কেনাবেচার অভিযোগ, সেই কেস পরে ধামাচাপা পড়ে যায়, সঠিক কিছু সামনে আসেনা, শোনা যায় চৌধুরীর লেনদেনে অনেক রথী মহারথীদের নাম জড়িত থাকায় এ মামলা চেপে যাওয়া হয়। নবীন চৌধুরীর বাড়ি ডি-৫ এর পাশেই। দুই দুইয়ে চার করে সংবাদমাধ্যম এই মামলাতে অর্গ্যান ট্রেডিং এর সম্ভাবনার দিক নিয়ে ইঙ্গিত করতে শুরু করে। পুলিশের তদন্ত জোরকদমে শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সরকার চার সদস্যের একটি কমিটি কে দায়িত্ব দেয় এ পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশের ত্রুটি বিচ্যুতি র হিসাব খতিয়ে দেখতে। কমিটি তদন্তের শেষে নিঠারী কেস কে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের চরম গাফিলতির একটি নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করে এবং এ প্রসঙ্গে অর্গ্যান ট্রেডিং এর সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়না।

    ইতিমধ্যে মালিক পান্ধের ও চাকর সুরেন্দ্র পুলিশের হেফাজতে চলে গেছে। গুজরাতে ফরেন্সিক সেন্টারে তাদের নিয়ে গিয়ে ব্রেন ম্যাপিং ও নার্কো অ্যানালিসিস করা হয়। যদিও সংবাদ মাধ্যমে নানা খবর আসতে থাকে তাদের বিকৃতমনস্কের (ক্যানিবালিজম, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি) কিন্তু সে সব নিছকই খবর, আসলে এই সব পরীক্ষা পুলিশকে কোন সিদ্ধ্বান্তে আসতে সাহায্য করেনা। পান্ধেরের ওঠাবসা প্রদেশের তাবড় তাবড় লোকেদের সঙ্গে, পুলিশ তার সহায়, মন্ত্রীরা অনেকে তার শুভানুধ্যায়ী। আরো কোথায় কোথায় তার ক্ষমতার হাত বিস্তৃত তা সঠিক কেউই বলতে পারেনা। রোজই কিছু না কিছু নতুন তথ্য সামনে আসতে থাকে সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের পর্দায়। নিঠারীর প্রবেশপথে কড়া প্রহরা, নয়ডাবাসীর কাছে এই শহরের ছোট্ট অঞ্চল টি হঠাৎ ই এক বিশাল প্রহলিকায় রূপান্তরিত, তবে একেবারে অগম্য যে নয় তা বোঝা যায় মাঝে মাঝে বিভিন্ন দলের নিঠারী ভ্রমণ, মোর্চা প্রদর্শন ও তৎসম্বন্ধীয় গরম গরম বিবৃতি দান থেকে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয় সরকার কর্ত্তৃক নিহতদের পরিবারকে বাতিল চেক দানের প্রহসন, যাতে স্টেজে প্রধান ভূমিকায় থাকে পুলিশ কর্ত্তৃপক্ষ আর অন্তরালে কারা থাকে তা দর্শকদের অজানাই থেকে যায়। ঘটনার কদিনের মধ্যে, সারা দেশের মানুষ যখন নিঠারীর ঘটনায় হতবাক, আর তার সঙ্গে জড়িত পুলিশী তানাশাহী আচরণে ক্ষুব্ধ, নানা দিক থেকে ধিক্কার ভেসে আসছে রাজ্য প্রশাসনের প্রতি, তখনই একদিন টিভির পর্দায় দেখি এই নাটক।

    প্রথমে দেখা যায় নিঠারী গ্রামে গিয়ে পুলিশ ও জেলার কর্তাব্যক্তিদের কিছু পরিবারকে সাড়ম্বরে দুই লক্ষ টাকার চেকপ্রদানের অনুষ্ঠান। শোনা গেল এই চেকের হকদার শুধুমাত্র তারা যাদের ছেলেমেয়েদের দেহ সন্দেহাতীত ভাবে সনাক্ত হয়েছে। এই ঘটনা আরো দেহ উদ্ধারের ও হায়দ্রাবাদের ল্যাবে ডি এন এ টেস্টের আগের কথা, তখন এরকম পাকা দাবীদার আট দশজনের বেশী পাওয়া যায়নি, ক্যামেরায় বাকীদের সর্বস্ব হারানো মুখের অভিব্যক্তির দিকে আমরা অসহায় বেদনায় তাকিয়ে থাকি। তবে আসল চমকটা ছিল একেবারে শেষ অংকে, পরদিন টিভির পর্দায় চেকগুলির ক্লোজআপ, কোনো চেকে সই নেই,ব্যাংকের কোড গায়েব ইত্যাদি নানা ধরনের অসংগতি। এ ব্যাপারে মিডিয়ার প্রশ্নের সামনে নীরব সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসন। এর অনেক পরে আবার ঘোষণা করা হয় কমপেনসেশনের মূল্য কিন্তু ততদিনে এইসব হতভাগ্যদের পাশে অনেকে এসে দাঁড়িয়েছে এবং তারা নিজেরাও প্রাথমিক শোক কাটিয়ে ভবিষ্যত কার্যাবলী সম্পর্কে ভাবনা চিন্তা করতে শুরু করেছে, আর তাই তারা দাবী রাখে নগদের পরিবর্তে চাকরী ও জমির। এই অবস্থায় শেষ হয় দুই পর্বের নিঠারী তদন্তের প্রথম পর্ব, পুলিশী তদন্ত।

    এর আগে ভারতের প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন যে তদন্ত প্রাথমিক অবস্থায় আছে, সিবিআই কে এর ভার দেবার এখনই প্রয়োজন নেই। তবুও শোনা যায় রাজ্য পুলিশের কার্যপ্রক্রিয়ায় খুশী নন কেন্দ্রের কর্তারা। তারা চান তদন্তে আসুক দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা অর্থাৎ সিবিআই, তবে রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে গররাজী। অপরাধের মোটিভ কোনোভাবেই সামনে আসছেনা। খুব সঙ্গত কিছু সাধারণ প্রশ্নের জবাব কোনো মাধ্যমই দিতে পারছেনা বা চাইছেনা অথচ সবাইকে তা ভাবাচ্ছে।
    ১) দুজন সম্পূর্ণ আলাদা সামাজিক স্তরের মানুষ কি করে একই ধরনের বিকৃতির অধিকারী হয় আবার পরস্পরকে খুঁজে বার করে জোট বেঁধে অপরাধ করে (যদি এই অপরাধকে মানসিক ও যৌন বিকৃতি জনিত অপরাধ বলে ধরা হয়)?
    ২) কি কারনে পান্ধের পুলিশ ও প্রশাসনকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে থাকে এবং নানা ভাবে মন্ত্রীদেরও হাতে রাখে। এরকম করার উদ্দেশ্য তার বড় কোনো অর্থনৈতিক ফায়দা ছাড়া অন্য কিছু হওয়া কি সম্ভব? তার ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার এমন কিছু অসঙ্গতি সামনে আসেনি যা তার পুলিশ প্রশাসনের ওপরে এত অর্থব্যয়ের সম্যক ব্যাখ্যা দিতে পারে?
    ৩) কেন ভুল করেও একজনও বড় ঘরের বা আপাত অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেমেয়ে এদের হাতে পড়লনা। বাঘ আবার রক্ত মাংসে ভেদ করে নাকি? সেরকম কিছু হলে কি পুলিশ এতটা নিস্পৃহ থাকতে পারত?
    ৪) পরবর্তী কালে পুলিশ কিন্তু জোর তল্লাশি চালিয়ে অনেক সুত্র সন্ধান বার করেছিল, অনেক খোঁড়াখুঁড়িও করেছিল তবু তারা ধড়গুলি উদ্ধার করতে পারেনি যা সিবিআই পেরেছিল একদিনেই। এই কেসের শুরু থেকেই পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতা এতটাই কমে যায় যে সবাই একে পুলিশেরই আরেক অপদার্থতার নিদর্শন বলে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু তা যদি না হয়?

    পৃথিবীতে সঙ্গীন অপরাধকে মানসিক অসুস্থতার মোড়ক দিয়ে অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা নতুন কিছু নয়, এছাড়া তদন্তের অসফলতা ও অনেক সময় চাপা পড়ে যায় এই যুক্তিতে। উপরোক্ত মামলাটি যদি অরগ্যান ট্রেডিং এর দৃষ্টিতে দেখা হয় প্রশ্নগুলির উত্তর অনেক যুক্তিপুর্ণ হয়। এরপরে আসে নিঠারী তদন্তের দ্বিতীয় পর্ব, সিবিআই এর নিযুক্তি। এই বছর জানুয়ারীতে রাজ্য সরকারের চিঠিতে নিঠারী মামলা তুলে দেওয়া হয় সিবি আই এর হাতে। সিবিআই এসেই পুনরায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে কড়া প্রহরায়, কোনো বহিরাগত বা মিডিয়ার কেউ তার ধারেকাছে যেতে পারেনা। এবং হাতে গরম সাফল্যও পেয়ে যায় তারা। মৃতদেহর যে ধড়ের অনুপস্থিতি এতকাল এত জল্পনা কল্পনার কারন হয়েছে, সেই বস্তাবন্দী ধড় গুলি লাভ সিবিআইএর প্রথম সাফল্য ও এই মামলার সঙ্গে অরগ্যান ট্রেডিংএর বা নবীন চৌধুরীর মামলার কোনো যোগ নেই তার অকাট্য প্রমাণ। এর পরেই সিবিআইএর আর এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণা, এই সমস্ত ঘটনায় পান্ধেরের ভূমিকা সামান্যই, সুরেন্দ্রই প্রধান অপরাধী। অবশ্যই তারা তাদের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের উৎস কখনই জনতার কাছে প্রকাশ করতে পারেনা অতএব আমরাও জানতে পারিনা এতবড় ছাড়পত্র পান্ধের পেল কি করে, আর সে কত মহানুভব যে চাকরের দোষ ঢাকতে নোটের বৃষ্টি করে নয়ডা পুলিশের ওপর (পায়েলের বাবার বয়ান অনুযায়ী দীনেশ যাদব নামে এক পুলিশকে পান্ধেরের ম্যানেজারকে বান্ডিল বান্ডিল পাঁচশ টাকার নোট দিতে সে নিজের চোখে দেখে, যাদব পরে সাসপেন্ডেড হয় এর ভিত্তিতে)।

    দুই অপরাধী ও সংগৃহীত সমস্ত তথ্যাদি রাজ্য পুলিশ তুলে দেয় সিবিআইএর হাতে। নিঠারী মামলা চলছে এখন সিবিআই কোর্টে তবে চমক শেষ। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নতুন খবরে, নিঠারী হেডলাইন, প্রথম পাতা থেকে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বুদবুদের মত কিছু খবর ভেসে ওঠে তাও ভেতরের পাতায়। বেশীরভাগই পান্ধেরের নির্দোষিতার সাক্ষ্য প্রমাণ। বহুকালের ছেড়ে যাওয়া বউ ছেলে চোখের জলে ভেসে আবার পাশে এসে দাঁড়ায়, পাবলিক সিমপ্যাথি ও পায়। সুরেন্দ্রর গ্রামে রেখে আসা বউয়ের ছবি সদ্যজাত সন্তান কোলে, তার যৌন বিকৃতির কোন খবরই সে রাখেনা।

    মামলার বাদী পক্ষরা তাদের দিন গুজরানের জন্য রুজিরোজগারে ব্যস্ত, শুধু মামলা নিয়ে থাকলে তাদের খাওয়া জুটবেনা। কোর্ট কাছারির ঘুর্ণাবর্তে এই মামলা হয়ত মিলিয়েই যাবে একদিন, কারণ বাদীরা সমাজের যে স্তরের মানুষ তাদের পক্ষে বেশীদিন এর দায়িত্বভার বহন করা সম্ভবপর হবে কিনা তা সন্দেহ থেকে যায়। অপরদিকে অন্যপক্ষও তৎপর হয়ে উঠেছে এদের দূর্বল করে মামলা শেষ করার জন্য। যে যতীন সরকারের কাছে পান্ধেরের স্বীকারোক্তি ছিল বলে দাবী তার স্ত্রীর, তাকে রহস্যজনক ভাবে মৃত পাওয়া গেছে মুর্শিদাবাদে। কেসের মুখ্য সাক্ষী পায়েলের বাবা নন্দলাল, যার সাক্ষ্য এ মামলার এক বড় হাতিয়ার ছিল বাদী পক্ষের, হস্টাইল হয়ে পান্ধেরের বিরুদ্ধে সব কেস তুলে নিয়েছে। উল্টে এখন পান্ধের নন্দলালের ও তার উকিল খলিদ খানের বিরুদ্ধে সিবিআই কোর্টে মানহানি/মিথ্যে কেস ইত্যাদির মামলা করেছে। ঘটনায় ভীত অন্যান্যরা এখন উকিল কে দিয়ে কোর্টকে অনুরোধ করেছে তাদের বয়ান সত্ত্বর রেকর্ড করার জন্য, তাদের সাথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই। খলিদ খান আর নন্দলালের উকিল নয় তবে অন্যান্যদের পক্ষ সেই সমর্থন করছে সিবিআই কোর্টে এখনো যতদিন না তারাও ভেঙে পড়ে অর্থলোভে বা ভয়ে। মৃত যতীন সরকারের স্ত্রী বন্দনা সরকার সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করেছে তার পরিবারের নিরাপত্তা বিপন্ন আর তার উকিল ভানুপ্রতাপকে সিবিআই এর তরফ থেকে ধমকি দেওয়া হচ্ছে, এই মর্মে।

    আশার কথা হল সুপ্রীম কোর্ট সমস্ত খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে পরিবারগুলির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে।
    ইতিমধ্যে রাজ্যে শাসকদলের বদল হয়েছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী নিঠারীর হতভাগ্যদের পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করে তাদের সুরক্ষার সবরকম বন্দোবস্ত করবেন এই মর্মে কথা দিয়েছেন। তবে মামলা যেহেতু সিবিআইএর কোর্টে আপাতত এর থেকে বেশী কিছু করার ক্ষমতা তার হাতে নেই এও জানিয়েছেন। হয়ত সুপ্রীম কোর্টের কড়া মনোভাবে প্রভাবিত হয়েই সিবিআই কোর্ট গত শুনানিতে অপ্রত্যাশিতভাবে মামলার স্বপক্ষে প্রকাশ করেছে যে পান্ধের অন্যান্য খুনের ব্যাপারে নির্দোষ হলেও (সিবিআইএর আগের বক্তব্য সমর্থনে) চোদ্দ বছরের পিংকী সরকার ও পায়েলের ধর্ষণ ও খুনের এবং খুন সংক্রান্ত প্রমাণ লোপাটের জন্য পান্ধেরই দায়ী। পান্ধের মেয়েদের ধর্ষণ করে সুরেন্দ্রের হাতে তুলে দিত তাদের হত্যা করার জন্য।পুলিশ অফিসার দীনেশ যাদব সিবিআই কোর্টে সাক্ষ্য দিয়েছে যে পান্ধেরের স্বীকারোক্তি পুলিশের দলিলে ছিল এবং তা তারা সিবিআইএর হাতে তুলেও দেয় অন্যান্য তথ্যপ্রমাণাদির সাথে। তবু কেন সিবিআই এর আগে পান্ধেরের অপরাধ কম এই মর্মে বিবৃতি দেয় তা আজ হেঁয়ালি। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার এরূপ আচরণের পরে দেশের মানুষের কাছে তাদের সততা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

    কিন্তু পান্ধেরের স্বীকারোক্তির পরেও কি সব রহস্যের সমাধান হচ্ছে? পরবর্তী শুনানি হবে নন্দলালের মামলার। সেদিনও হয়ত নতুন কোন চমকপ্রদ ঘটনাতথ্য সামনে আসবে তবে তা এই রহস্যে আলোকপাত করবে কি একে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেবে তা বলা কঠিন।
    এমনি করেই একদিন নিঠারী মামলা শেষ হবে, রায় ও বেরোবে তবে কতদিনে কেউ জানেনা, আর যা তথ্য সামনে আসবে তার সত্যতা কে বিচার করবে, কতটাই বা গ্রহণযোগ্য হবে তা আমাদের মত সাধারন মানুষের কাছে?

    ডিসেম্বর ৯, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৭ | ৬১২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    মতি - asiskumar banerjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন