এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সার্থক মেয়ে জনম আমার --

    শ্রাবণী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জানুয়ারি ২০১১ | ৭৬০ বার পঠিত
  • টিভির পর্দায় মেয়েটির মুখ অস্পষ্ট আবছা করা ক্যামেরার কারসাজিতে। তাতে আরো অসুবিধা আমার মত লোকেদের, ঐ মুখে বসে যাচ্ছে কত মুখ, চেনা অচেনা। এ ঘটনা এমন কিছু নতুন নয়। জানি এরকম আকছারই হয়ে থাকে, কখনও খবর হয় কখনো হয় না। তবু একটা লজ্জা, ঘৃণা আর হতাশা ঘিরে ধরে মনকে। এদেশে অনেক জায়গায় মেয়ে জন্মালে এখনও বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে, রেকর্ড সংখ্যক কন্যাভ্রুণ হত্যার নজির দেখা যায়, অস্বাভাবিক কম সেক্স রেশিও গুজরাট হরিয়ানা পাঞ্জাব হিমাচলের মত রাজ্যে । এসবকী শুধুই কন্যাপণের চিন্তায়, পূর্বপুরুষের জল পাওয়ার বন্দোবস্তে, নাকি এরকম কোনো এক পরিণতির কথা চিন্তা করে গরীব মা বাপ কন্যাসন্তান চায় না? দেশের সমাজব্যবস্থা, আইন, শাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন দুর্নীতির ঘুণ, যেদেশে কোনো মেয়েই তা সে সমাজের যে স্তরেরই হোক না কেন, যেখানে পুরোপুরি সুরক্ষিত নয়,তখন একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে তার মেয়ের নিরাপত্তা সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব কী প্রকারে?

    সমাজের যত্রতত্র মানুষের মুখোশে যেসব নারীমাংসভোজীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের সহজ শিকার হল দুর্বল গরীব, সবদিক থেকে নিম্নবর্গের মানুষেরা। একবার বাড়ির মেয়ে বা মেয়েরা এদের শিকার হলে পুরো পরিবারই একদিক থেকে শেষ হয়ে যাবে। কে না জানে আমাদের দেশে ধর্ষণের শাস্তি ধর্ষণকারীর জায়গায় ধর্ষিতা ও তার পরিবার ভোগ করে থাকে। আমরা শহুরে আলোকপ্রাপ্তরা কন্যাভ্রুণ হত্যা নিয়ে ভাষণ দিই, মেয়ে জন্মালে তা নিয়ে যারা শোক করে তাদের উদ্দেশ্যে নাক সিঁটকোই, প্রাচীনপন্থী অশিক্ষিত বলে তাদের নিন্দে করে থাকি। কিন্তু আজকের এই অবস্থায় যেখানে সরকার সমাজ মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না সেখানে এরকম একটি পরিবার যদি কন্যা না চায় বা কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলতে চায়, তাদের কি খুব দোষ দেওয়া যায়!

    প্রথমে মেয়েটিকে মধ্যপ্রদেশের এক গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ির বাইরে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেচে দেওয়া হল। পুলিশকে এ দেশের কোনো লোকেই আর নিজেদের রক্ষক মানেনা, তবু নিয়মের বন্ধনে তাদের কাছে যেতেই হয় সাধারণ মানুষকে। গরীব নীচুজাতির দলিত পরিবার তাই যায় পুলিশের কাছে মেয়েকে খুঁজে বার করার আর্জি নিয়ে, যথা নিয়মে কোনো ফল হয়না। পুলিশ তাদের নিজেদের সুনাম ও ধারা অক্ষুণ্ন রেখে তাদের ফিরিয়ে দেয়। সঠিক প্রমাণাদি না থাকলেও খুব সম্ভব পুলিশেরই এক কর্মচারী ও পাশের গ্রামের প্রধান এই চক্রে জড়িত। অর্থাৎ সবদিক থেকেই রক্ষকই ভক্ষক!

    এবার তারা যায় গরীবের মা বাপ তাদের স্থানীয় বিধায়কের কাছে মেয়েকে উদ্ধার করতে। উদ্ধার করা হয়, শুধু তাই নয় সুরক্ষার হেতু তাকে নিজের বাড়ীতে রেখে দিয়ে বাপ ভাইকে বাড়ি পাঠিয়ে। কি অসীম করুণা, কি বিবেচনা! গরীব বাপ বিধায়কের জয়গান করতে করতে নিজের কুটীরে ফেরে।

    এরপরে মেয়েটিকে দেখা যায় জেলে বিধায়কের বাড়ী চুরির অপরাধে। চুরি যদি করেই থাকে শাস্তি তার নিশ্চয়ই প্রাপ্য। কিন্তু কহানীতে একটু ট্যুইস্ট এসে যায়। তড়িঘড়ি করে জেলে পুরে দেওয়া সত্ত্বেÄও কিভাবে যেন আশেপাশে ছড়িয়ে যায় বিধায়ক ও তার সঙ্গীদের দ্বারা মেয়েটির চরম সর্বনাশের কথা। হয়ত বয়স কম তাই দুনিয়াদারীর পাঠ এখনো পড়েনি সে মেয়ে। সে জানে না যে উচ্চকূলশীল ব্রাহ্মন দেবতা,যে আবার পদাধিকারেও সমান উচ্চতায় আসীন, সেরকম লোকের হাতে ধর্ষিত হওয়াও তার মত দলিত গরীব নারীর পক্ষে পরম সৌভাগ্যের কথা। সেই সৌভাগ্য মেনে নিয়ে তার চুপচাপ বাপের ভাঙা ঘরে ফিরে যাওয়াই ছিল সকলের পক্ষে মঙ্গলের। সে জানেনা যে আমাদের মহান ভারতে তার মত হাজার হাজার গরীব আদিবাসী দলিত মেয়েদের হমেশাই এরকম সৌভাগ্যপ্রাপ্তি হচ্ছে, এতে গৌরব তাদেরই। পুরুষশ্রেষ্ঠ বিধায়কটি তো বলেইছে মেয়েটি মুর্খ ও অনপড় মানে অশিক্ষিত। প্রকৃত শিক্ষার অভাবেই বোধহয় সে তার একাধিক ধর্ষণকারীদের বিরূদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কথা মুখে আনতে সাহস করে!

    এছাড়া মাসাধিককাল অসহনীয় অবস্থায় জেলবাসের পরেও কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজের বক্তব্যে অনড় থাকতে পারে সেও শুধু বোধকরি শিক্ষিত নয় বলেই।

    এরপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। অশিক্ষিত মেয়েটি বিধায়কের সুরক্ষিত আবাসস্থল থেকে নোকর চাকর পাহারাদারদের নাকের ডগায় একটি লাইসেন্সড রিভলভার ও পাঁচহাজার টাকা চুরি করে এবং ধরা পড়ে। মনে হয় আসলে মেয়েটি পড়ালিখা না হলেও পুরাকালের হান্টারওয়ালী বা তার রাজ্যের বিখ্যাত মহিলা ফুলনদেবীর কর্মকান্ডের বিষয়ে অবগত ছিল। তাই প্রতিশোধের জন্য বন্দুকের নল বেছে নিয়েছিল। বিহারের বিধায়ক হত্যার ঘটনাটি যদি আগে ঘটত তাহলে টিভি নিউজকেও দায়ী করা যেত প্রেরণার উৎস হিসেবে। তবে পুলিশ সবই কি আর সবসময় একই ধরণের অকর্মণ্য? অন্ততপক্ষে বান্দা পুলিশ মোটেও এমন নয়। রাতারাতি প্রচন্ড তৎপরতার সাথে চোরকে ধরে জেলে পুরে তবে তাদের শান্তি!

    কাহিনি এখানেই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল, যেরকম সচরাচর হয়ে থাকে এদেশের এইসব মেয়েদের কাহিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। কারণ বিধায়ক হলেন ক্ষমতাসীন,দলিতদের চ্যাম্পিয়ন বহেনজীর দলের। আর কে না জানে বহেনজীর শত্রুর অভাব নেই। তাই বান্দার এদিক ওদিক উড়ে বেড়ানো স্ফুলিঙ্গ শীতের রুক্ষ হাওয়ায় আগুনের আকার নিতে থাকে। আমাদের দেশে রাদিয়া পরবর্তী কালে সংবাদমাধ্যমের খবর ও নিউজ চ্যানেলের নানা প্রচারকে সাধারণ লোকে আজকাল বিনোদনে রিয়্যালিটি শোর মত করে দেখলেও খবর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে। তবে রাজনীতির লোকেরা বোধহয় এখনো ঠিক আপামর জনতার মত মিডিয়াকে খরচের খাতায় লিখে দিতে পারেনি, সেরকমটা হলে দুপক্ষেরই ব্যবসায় ভাটা পড়বে। জনতার সঙ্গে এদের যোগাযোগের আধার এখনো মিডিয়াই!

    নানান দলের ও মিডিয়ার শোরগোলে বহেনজী ঈষৎ বিচলিত হলেও খুব বেশী বেকায়দা হয়না। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী কাটিয়ে দেয় রাজ্যের ক্রাইম ব্র্যাঞ্চকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে। কিশোরী কন্যাটি বান্দার জেলে রক্তাক্ত শরীর সামলে, পুলিশ ও বিধায়কের যুগ্ম সন্ত্রাস ও অত্যাচার যুঝতে যুঝতে নারী জন্মের, দলিত জন্মের, মাশুল গুনতে থাকে।

    কিছুদিন লোকসভায় মহিলা আসনের সংরক্ষণের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এই আমি বা আমার মত অনেকে বলেছি যে মহিলা সাংসদ রাজনীতিকরা আর কিছু নাহোক মহিলাদের প্রতি অন্যায় ইত্যাদি উপলব্ধি করতে পারবে ও কিছুটা হলেও সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে প্রয়াস করবে, সেটাও একটা দরকারী পদক্ষেপ। এক ধর্ষিতার বিড়ম্বনা একজন মহিলা যত বুঝবে সেরকম করে একজন পুরুষ বুঝতে পারবে না!

    এরপরে আর সে কথা আমি বা আমরা বলতে পারব না। এক দলিত মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্বে দলিত মেয়ের এহেন অদৃষ্ট আমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে আসলে এইসব রাজনীতিকরা নারী পুরুষ কিছু হয়না, মানুষও নয়। এরা শুধু ক্ষমতালোভী অর্থলোভী এক বিশেষ জাত যাদের ঠিক মানবিক নিয়মে মূল্যায়ন হয়না! এদের তাঁবেদার সরকারের আধিকারিকরাও অবশ্য প্রায় একই ছাঁচের হয়ে যায়। তাই হাসপাতালের মহিলা ডাক্তার মেয়েটিকে পরীক্ষা করে কিছু পায়না, মেয়েটির মিনতিতে অনুরোধে কর্ণপাত করেনা! যে ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে মেয়েটিকে তোলা হয় সেও কোনো কিছু শোনবার আগে মেয়েটিকে জেল থেকে বার করে তার বয়সের উপযুক্ত হোমে বা কেয়ারে পাঠাবার নির্দেশ দেয় না, কারণ এরা প্রশাসন যন্ত্রের আধীন।

    চাপে পড়ে লোকটি একমাস পরে হলেও দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, এবং শেষমেশ গ্রেফতারের জন্য সবুজ নিশান দেখিয়ে দিয়েছে দলিতের মা বাপ, কোটি কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী মুখ্যমন্ত্রী। ন্যাশনাল উইমেন্স কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের হোমরাচোমরারা টিভি ক্যামেরার সামনে, বিভিন্ন প্যানেলের লম্বাচওড়া আলোচনায় মতামত ব্যক্ত করছে দু:খী দু:খী মুখে। তাদের থেকেই আমরা জানতে পারি যে অনেক কিছু সম্ভব। মেয়েটিকে জামিনে বের করে আনা যায়,অভিযুক্তের বিরূদ্ধে রাজ্যের সাহায্য ছাড়াই অনেক ব্যবস্থা নেওয়া যায় অমুক অপরাধে তমুক অপরাধে। এসব কিভাবে করা যায়, সুপ্রীম কোর্ট কি করতে পারে তার অনেক ফিরিস্তি দেখে আমরা ঘুমোতে যাই এই ভেবে যে কাল শুনব মেয়েটি ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু পরদিন আবার আরো আলোচনা আরো মত ও নানান পথের হদিশ।

    একটি গণধর্ষণের শিকার কিশোরী আজ একমাস ধরে সাধারণ একটি জেলের কুঠুরিতে, কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সম্ভবত, তাকে সেখান থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টা কোনো তরফেই নেই। এন সি ডাব্লিউর সুসজ্জিতা স্মার্ট প্রতিনিধি মহিলারা মেয়েটির সঙ্গে জেলে দেখা করতে যেতে পারে কিন্তু রিপোর্ট দিতে সময় নেয় সাতদিন। তারা গিয়ে বলতে পারেনা যে একটি কিশোরীকে অপরাধী সন্দেহেও পুলিশ জেলে বন্দী করে রাখতে পারেনা, তাকে কোনো হোমে বা জুভেনাইল কেয়ারে পাঠানো হোক অনতিবিলম্বে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।

    এদিকে মিডিয়ার বিশেষজ্ঞরা উপায় বলেই খালাস, বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার কেউ নেই। অথচ এই সব বিশেষজ্ঞরা বেশীরভাগই মহিলা, সাংসদ বা কোনো মহিলা সংগঠনের কর্তা অথবা মহিলা আইনজীবি। এরা সবাই নিজের পরিধির বাইরে অন্যদের দিকে আঙুল দেখিয়ে তারা কী কী করতে পারে তার বিবরণ দিচ্ছে দিনের পর দিন ক্যামেরার সামনে সেজেগুজে। ওদিকে রাজনৈতিক মহল ব্যস্ত বিধায়ক ও তার দলনেত্রীকে শিক্ষা দিতে!

    এই ঘটনার ভবিষ্যত কী, সাধারণত এরকম ঘটনায় কী হয়? মেয়েটির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনার তো কোনো প্রশ্নই ওঠেনা, রাতারাতি দেশটা কি পাল্টে যাবে নাকি! অভিযুক্ত বিধায়ক গ্রেফতারও হয়েছে শেষ অবধি। কিন্তু তাতেই বা কী হল! লোকটিকে রাখা হয়েছে বান্দারই জেলে। পুলিশ ও আধিকারিকরা তার যেরকম বাধ্য তাতে এ জেলবাস শুধু দুর্জনের ও বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার ছল, হাওয়া বদলানো ছাড়া কিছুই নয়।

    অথচ মেয়েটিও আছে এখনো হ্যাঁ এখনো সেই বান্দা জেলেই! এরকম অবস্থায় তার কী দশা হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহই থাকতে পারেনা। আরো আক্রোশ ও রোষের মুখে সে কতদিন নিজের অবস্থান বজায় রাখতে পারবে কে জানে! এদিকে তার পরিবার ক্রমাগত সরকারপক্ষের গুন্ডাদের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে,তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর পরে আর কোনো এধরণের পরিবার যাবে পুলিশের কাছে, অধিকারীদের কাছে তাদের মেয়ে বউদের প্রতি অন্যায়ের রিপোর্ট করতে? কেন এদেশে প্রতি ঊনসত্তরটি রেপ কেসে একটির রিপোর্ট হয় তা এ থেকেই আন্দাজ করা যায়!

    মেয়েটির জামিন না হলেও অভিযুক্তর জামিন হতে নিশ্চয়ই বেশীদিন লাগবেনা। কোর্টে সমস্যা হলে শারীরিক গোলযোগের রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতালের ডাক্তাররা তৈরী থাকবে, সবই তো এদের ঘরের ব্যাপার। ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডিজি বয়ান দিয়েছেন যে মেয়েটির প্রতি অশ্লীল ব্যবহারের আরোপে বিধায়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে, ধর্ষণের নামোল্লেখ নেই সে বক্তব্যে! আমাদের কেন্দ্রের মাননীয়া মহিলা বিভাগের মন্ত্রী এখনো সব খতিয়ে দেখতেই ব্যস্ত, চিঠিতে এ কেস সি বিআইয়ের হাতে দেওয়াই ভালো এরকম মন্তব্য করেই দায়িত্ব শেষ।

    মেয়েটিকে জেলের বাইরে আনা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই কোথাও। এই সার্কাসে তার ভূমিকা তো নগণ্যই, তাকে নিয়ে তাই কারুর মাথাব্যথা গুটিকয়েক মিডিয়া ছাড়া।

    আরো কিছুদিন বাদে মিডিয়া ক্লান্ত হয়ে যাবে, টিআরপি কমে যাবে, সাথে উৎসাহও। সিবিআইয়ের হাতে কেস সঁপে দিয়ে বহেনজী শত্রুর মুখে ছাই দেবেন। এদিকে কে না জানে বহেনজীর প্রতি তার বড় বিরোধী, দেশের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী আর এক কুলীন মহিলা এখন নরম। দুর্জনে গোপন আঁতাত আঁচ করছে, শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় এই নিয়মে। এছাড়া যুবরাজের অভিষেকের আগে নিজের জমিতে শক্তি প্রমাণ করতে বাধাবিঘ্ন কম হতে পারে শুধু বহেনজীর চাপা সমর্থনে।

    তাই আশা করা যায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে বাঁধা সিবিআই রুচিকা,আরুশী,মাট্টু ইত্যাদি অগণিত মামলার মত এই মামলাটিও যথার্থ প্রমাণাভাবে ক্লোজ ঘোষণা করে দিতে দ্বিধা করবেনা। এমনিতেই এ ক্ষেত্রে পুলিশের যা তৎপরতা, আধিকারিকদের যা দক্ষতা তাতে কোর্টে শেষমেশ কী তথ্যপ্রমাণ দেখা যাবে তা যথেষ্ট সন্দেহের। পুরুষোত্তম রামের দেশের ছেলে অগ্নিপরীক্ষায় সফল হয়ে আবার ঘরে বহেন্‌জীর আঁচলের ছায়ায় ফিরে যাবে, সগৌরবে।

    বান্দার দলিত মেয়েটির কাহিনি আজ সামনে এসেছে তা দলিত আদিবাসীদের প্রতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা এরকম কোনো সদুদ্দেশ্যে নয়, এর কারণ সম্পুর্ণ রাজনৈতিক। বিভিন্ন মহিলা বা শিশু কিংবা আদিবাসী অধিকারের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের তথ্যাবলীতে দেখা যায় এদেশে এহেন অপরাধ সর্বদাই হচ্ছে রাজ্য প্রদেশ নির্বিশেষে প্রত্যেকটি এলাকায়। সবসময় সব তথ্য সামনেও আসেনা। আজ ন্যাশনাল চ্যানেলগুলি বান্দার ঘটনা নিয়ে খবর করছে,অথচ তাদের নাকের ডগায় গুরগাঁও গাজিয়াবাদের মত জায়গায় গরীব নিম্নবর্ণের ঘরে এরকম অন্যায় হরদম হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়াও শুধুমাত্র জাতের কৌলীণ্যর জোরে অপরাধী বেকসুর খালাস পেয়ে যায় পুলিশ, আইন, আদালতের এমনকি আম জনতার কাছেও। মানুষের ওপর জাত গোত্রর এমনই প্রভাব আজকের যুগেও এসব সমাজে বিশেষ করে উত্তর পশ্চিম ও মধ্য ভারতে, যে নীচুজাতির ওপরে কোনো প্রকারের অত্যাচারকে এরা অন্যায় বলেই মনে করেনা। দলিত মেয়ের মহাভাগ্য যে ব্রাহ্মণ দেবতা তাকে স্পর্শ করেছে!

    গুজরাটের প্রখ্যাত মহিলা অ্যাক্টিভিস্ট ইলা পাঠক তাই বান্দার ঘটনা শুনে বিচলিত হননা। এ কোনো নতুন কিছু নয়, তিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনে এধরণের ঘটনার মুখোমুখি হমেশাই হয়ে থাকেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলেন সেসব কেসের কথা যেখানে কোর্ট অভিযুক্তের বিরূদ্ধে কেস নাকচ করে দেয় শুধুমাত্র সে উচ্চবর্ণের ও অভিযোগকারিণী নিম্নবর্ণের বলে। জানান এই কেসে শুধু এটাই দু:খ যে এক দলিত মহিলা যেখানে রাজ্যের কর্ণধার সেখানেও যদি এরকম হয় তাহলে অন্য জায়গায় কী অবস্থা দাঁড়াবে।

    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলে এই দলিত মহিলাটি রাজ্যের ভার নেওয়া থেকে দলিত মহিলাদের ধর্ষণের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সনে অন্য সমস্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানের বাইরে অজস্র কেস আছে যার কোনো রিপোর্ট হয়নি বা পুলিশ রিপোর্ট নেয়নি! অজস্র সংগঠন, দেশের আইন,অ্যাক্টিভিস্ট, আমাদের মত সাধারণ নাগরিক বিশেষ করে মহিলা যারা প্রত্যেকে হয়ত অনুভব করছি মেয়েটির দুর্দশা, তারা অসহায় কোন অশুভ শক্তির কাছে,ব্যবস্থার কাছে নাকি নিজেদের কাছে কে জানে? পনেরই জানুয়ারী শ্রদ্ধেয় বহেনজী তাঁর জন্মদিন পালন করছেন, এবার হয়ত লাড্ডুর সাইজ আরো বড় হবে। কেন্দ্রের বন্ধুদের দাক্ষিণ্যে কোর্টের কাছে বেকসুর ছাড় পাওয়ায়, ভক্তরা গলায় পরাবে আরো মূল্যবান টাকার মালা। কাগজে কাগজে আজ তাঁর ছবিতে ছয়লাপ, দলিতদের মসীহা, তাদের উন্নতির শক্তিরূপে। ওদিকে দলিত সতের বছরের কিশোরী মেয়েটি আজো অপেক্ষা করে মুক্তির, শুধু জেলের খাঁচা থেকে নয়, মুক্তি এদেশে এই নারী জন্মের শৃঙ্খল থেকে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৫ জানুয়ারি ২০১১ | ৭৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০১:৪৮89178
  • touched. শুধু এই সব খবরের পর পর মনে হয় ওই গানটার কথা একবার মনে পড়ে -ওটা বোধহয় এবার এদের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে যাবে - "আগলে জনম মোহে বিটিয়া না কিজো"
  • nina | 78.37.164.19 (*) | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১০:১৮89179
  • অসহায় লাগে বড্ড--গিল্টিও----কিছুই করতে পারিনা--বলা উচিৎ কিছুই করলামনা--নিজেরটুকুই শুধু গোছাতে ব্যস্ত রইলাম----নিজেকেই ধিক্কার!
  • de | 69.185.236.51 (*) | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১১:৩৬89177
  • এই মেয়েটির খবরের আর কোন আপডেট আছে?
  • ম্যাক্সিমিন | 69.93.195.249 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১০:৩০89180
  • প্রকৃত শিক্ষার অভাবেই বোধহয় সে তার একাধিক ধর্ষণকারীদের বিরূদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কথা মুখে আনতে সাহস করে!

    এছাড়া মাসাধিককাল অসহনীয় অবস্থায় জেলবাসের পরেও কোর্টে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিজের বক্তব্যে অনড় থাকতে পারে সেও শুধু বোধকরি শিক্ষিত নয় বলেই।

    এই সার্কাসে তার ভূমিকা তো নগণ্যই, তাকে নিয়ে তাই কারুর মাথাব্যথা গুটিকয়েক মিডিয়া ছাড়া।

    লাইনগুলো মনে দাগ কেটে গেল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন