এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • রাস্তাঘাটের কথা

    দময়ন্তী
    আলোচনা | বিবিধ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ৫৯০ বার পঠিত
  • রাস্তা বাঁধে পাহাড় আর সমুদ্রকে, জঙ্গল আর জনপদকে। রাস্তায় রাস্তায় কাটাকুটি খেলা হয় দেশে দেশে। বাড়ীর সামনের রাস্তাকে জিজ্ঞাসা করি তুমি কোত্থেকে আসছ গো? সে বলে তাও জান না, ঐ তো ন্যাশনাল হাইওয়ে আট থেকে। আট আবার এসেছে হয়ত বা সাত থেকে কিম্বা অন্য কোন হাইওয়ে থেকে। সব মানুষের মতই সব রাস্তারও গুরুত্ব সমান নয়। হাইওয়েরা জাতে কুলীন। তাদের দেখভালের জন্য সদাসতর্ক একদল লোক। ন্যাশনাল হাইওয়ে, ইয়ানে কি "জাতীয় সড়ক"। তা বলে জাতীয় সড়করাও যে সব্বাই সমান গুরুত্বপূর্ণ, তা কিন্তু নয়। হাঁটতে চলতে রাস্তা লাগে, রিক্‌শা, সাইকেল চলতে রাস্তা লাগে, গাড়ী চলতেও রাস্তা লাগে। যে রাস্তায় রিকশা চলে আর যে রাস্তায় অক্টোভিয়া চলে, এরা কখনও একরকম নয়।

    আমাদের ছোট্ট মফস্বল শহরে রাস্তা ছিল সরু সরু। কিছু পিচের, কিছু ইঁট দিয়ে পয়েন্টিং করা, কিছু আবার একদম কাঁচা, ধুলো মাটির পথ। তখন গাড়ী ছিল অনেক কম। মোটর মানে অ্যাম্বাসাডার আর ক্বচিৎ কদাচিৎ ফিয়াট। কারো বাড়ী তৈরী হলে, আসত লরি, বালি বা স্টোন চিপস নিয়ে। কেউ পাকাপাকি বাইরে গেলে বা বাইরে থেকে আসলে বড় ট্রাকে করে আসবাবপত্র আসত। আর ছিল মিউনিসিপ্যালিটির জঞ্জাল ফেলার গাড়ী। তা বাদে সবই সাইকেল রিকশা, ভ্যান আর পায়ে হাঁটা লোকজন। লোকের চাপে, গাড়ীর চাপে রাস্তা বেশী ক্ষয়প্রাপ্ত হত না। বর্ষাকালে সব রাস্তায়ই জল জমত না। যে সব রাস্তায় জমত, সেখানে জল জমলে আশেপাশের পাড়া থেকে ছেলেপুলেরা আসত নৌকা ভাসাতে, খেলতে। তবে রিক্‌শা বা গাড়ী চড়ে যেতে গেলে ঝাঁকুনি জানান দেয় রাস্তা তেমন ভাল নয়। তা সে আর কোথায় কতই বা ভাল! আশেপাশের উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর অঞ্চলেও এই একইরকম। তাই কেউ খুব একটা রাগটাগ করে না। কিন্তু দিনকাল তো বদলায়।

    বদলে যাওয়া দিনকালে স্টেশানের পাশের পুকুরটা বুজিয়ে দেওয়া হয় "সুপার মার্কেট' তৈরীর জন্য, একটা ছোট্ট ২ তলা বাড়ী। ঘুপচি ঘুপচি দোকান। একইসাথে ভরাট হয়ে গেল বিভিন্ন জায়গায় আরো কয়েকটা বড় বড় পুকুর। তাতে উঠল বড় বড় বাড়ী, রঙ্‌চঙে, গ্রীলওয়ালা। ভেতরে ঘুপচি ঘুপচি ফ্ল্যাট। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে বেরিয়ে আসা মধ্যবিত্তের স্বপ্ন। লরির চাপে রাস্তায় গর্তগুলো গায়েগতরে বেশ বাড়ল। আর বাড়ল বর্ষায় জল জমা রাস্তার সংখ্যা। এখন আর প্রায় কোন পাড়া থেকেই অন্য পাড়ায় নৌকো ভাসাতে যেতে হয় না, বড়জোর ৫ টা বাড়ী পেরোলেই পাওয়া যায় জলজমা রাস্তা। এখন পুকুরে চান করতে, কাপড় কাচতে বা মাছ ধরতে চাইলে যেতে হয় পাশের পাড়া, অথবা বেশ খানিকটা দূর। স্টেশান থেকে জি টি রোড যাবার দুটো প্রধান রাস্তাই ভেঙ্গেচুরে একশা।

    লোকে এবারে আস্তে আস্তে রেগে যেতে থাকে। একী অন্যায় কথা। রাস্তা কেবল ভেঙ্গেই চলবে! তা ভাঙ্গবে না তো কি? মিউনিসিপালিটির হাতে তো টাকা নেই। কেন নেই? কেউ জানে না। কেউ অবশ্য একা একা বা দলবেঁধে গিয়ে জানতেও চায় না। তো, সুপার মার্কেটের কাজ ততদিনে শেষ। হঠাৎই দেখা যায় ক্রাইপার রোড সারানো হচ্ছে। বেশ ভাল করে খোয়াটোয়া ফেলে, পিটিয়ে তারপর পিচ করা হচ্ছে ------- কারণ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু আসবেন সুপার মার্কেট উদ্বোধন করতে। জি টি রোড থেকে ক্রাইপার রোড দিয়েই তো গাড়ী আসবে। ক্রাইপার রোডে পার্টি অফিসের বাড়ীটাও হঠাৎ গায়েগতরে বেড়ে ওঠে আর এশিয়ান পেইন্টস মেখে লাল টুকটুকে হয়ে যায়। উল্টোদিকের দোকান, বাড়ীর লোকেরা বলাবলি করে রাস্তা তৈরীর জিনিষ আসে যে লরিতে, সেই লরিই পার্টি অফিসের সামনে কিছুটা জিনিষ নামিয়ে দিয়ে যায়। এইসব শুনে লোকাল কাউন্সিলার বলেন ওগুলো সব পয়সা দিয়ে কেনা। সাপ্লায়াররা একসাথেই আনে, তা ওঁরা কি করবেন! আর এই কদিন রবিবারে বাজারে কৌটো ঝাঁকানোয় নাকি হুড়হুড় করে পয়সা উঠছে, যা দিয়ে এই প্রসারণের কাজ। তা হতেই পারে। There are more things in ......... ইত্যাদি।

    মুখ্যমন্ত্রীর আগমনে ভাল হয়ে যাওয়া ক্রাইপার রোড ভাল থাকে প্রায় ৭-৮ বছর। কিন্তু সমান্তরাল এস সি চ্যাটার্জী স্ট্রীটের দুরবস্থা দিন দিন বাড়তেই থাকে। শেষে এমন অবস্থা যে একপশলা বৃষ্টি হলেই কোমর জল জমে যায়। রিকশাওয়ালাদের মহাফুর্তি। ২০০ মিটার যেতে আট টাকা, দশ টাকা ভাড়া। ৩-৪ টে বিভিন্ন স্তরের ভোট হয়ে যায় এই ইস্যুতে। শেষে তিতিবিরক্ত সাধারণ লোক বদলে ফেলেন মিউনিসিপ্যালিতির সমস্ত সভ্য। পুরানো কেউই প্রায় জিততে পারেন না। নতুন চেয়ারম্যান এসেই প্রবল উৎসাহে নর্দমা পরিস্কার করাতে লেগে যান। সমস্ত নর্দমা সাফ করিয়ে, জল জমলেই কিছু লোক দিয়ে বড় বড় নর্দমার মুখ খুঁচিয়ে, বেশ তাড়াতাড়িই জল সরিয়ে ফেলা হয়। কোত্থেকে যেন টাকার যোগাড় করে রাস্তাও সব সারানো হয়ে যায়। নীচু অঞ্চলের রাস্তা বেশ উঁচু হয়ে যায়। রাস্তায় আর জল জমে থাকে না। আধঘন্টার মধ্যে নেমে যায়। এবারে ক্ষেপে যায় রিকশাওয়ালা আর কিছু বাড়ীর মালিক। কেননা রাস্তা উঁচু করায় বাড়ীগুলোতে জল জমে যাচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে হার মানে জনস্বার্থ। "জন' তো হয় আমার আপনার মত এক এক "ব্যক্তি' নিয়েই। বেঁটে বেঁটে ব্যক্তিবর্গ। অনেক ছিঁচকে নাটকের পর আবার জমানা বদলায়। সর্বদা কিছু না কিছু করতে থাকা সেই চেয়ারম্যান, খুনের দায় প্রমান না হওয়ায় জেল থেকে ছাড়া পাবার পর, এখন এক কাউন্সিলার মাত্র। প্রতি মঙ্গল আর শনিবার কালীবাড়ী যান পুজো দিতে। আবার রাস্তাঘাট খারাপ হতে থাকে। নর্দমা সাফ হয় না। নাকি টাকা নেই। জল জমে, জমতে থাকে। এখন দিনকাল খারাপ, জিনিষপত্রের এত দাম -- ঐ ২০০ মিটারের ভাড়া, এখন জল জমলে ১২ - ১৫ টাকা। ৩ বছর আগে জলের পাইপ সারানোর জন্য খোঁড়া রাস্তা সারানো হয় না ৩ বছরেও। বর্ষার আগে আর পরে একবার করে ঘ্যাঁস ফেলে রোলার চালানো হয়।

    "বুদ্ধ আসছেন রাস্তা মসৃন পুরুলিয়ায়' - সোমবার ১১ই সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার। খবরে প্রকাশ যে পুরুলিয়া বরাকর রাস্তার ৩০ কিলোমিটার সারাতে ন'মাস লেগেছে, তার বাকী ৩৮ কিলোমিটার রাতারাতি সেরে উঠেছে। মূখ্যমন্ত্রী আসছেন পুরুলিয়া লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে।

    মুখ্যমন্ত্রী আর আসেন না আমাদের মফস্বলে। কোন কারন নেই তো আসার। লোকজন অপেক্ষায় থাকে কবে আবার কোন মূখ্যমন্ত্রী আসবেন কিছু একটা উদ্বোধন করতে। সেইসব লোকজন যারা স্টেটব্যাঙ্কের নতুন এ টি এম অপারেট করতে জানে না। সেইসব লোকজন যাদের প্রতিমাসে পোস্টাপিসে যেতে হয় এম আই এসের টাকা তুলতে। সেইসব লোকজন যারা অনেক দ্বিধার পর রিকশার দিকে এগোলেও রিকশাওয়ালা সীটের ওপরে বসে বসেই বলে "১৫ টাকা লাগবে"। আমাদের মত বেঁটে বেঁটে লোকজন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ৫৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন