এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • 'অমন মানুষ হয় না'

    শিবাংশু দে লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ জুন ২০২০ | ৫৯৭১ বার পঠিত
  • ভেবেছিলুম, কিছু লিখবো না আজ। পিতৃপুরুষদের নিয়ে বারবার মুগ্ধতা জানানো একধরনের প্রগলভতা। এক ধরনের অহমও। চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো, দেখো আমাদের পূর্বপুরুষদের গরিমা। তাঁদের আলোর বিচ্ছুরণ চুরি নিজেদের অন্ধকার লুকোনোর ছেলেমানুষি। তাঁর গান নিয়ে লিখেছি অনেকবার। আবার লিখবো। যতোদিন লিখতে পারবো। যতোদিন মাথা কাজ করবে। কিন্তু সচেতনভাবে ‘মানুষ’টিকে নিয়ে লেখালেখি করিনি। সেই মানুষ ও তাঁর জীবন আর শিল্প পুরো জড়াজড়ি করে থাকে। একটা জানলেই অন্যটা জানা হয়ে যায়।

    আজ দেখছি বন্ধুদের লেখায় তিনি বারবার আসছেন। প্রলুদ্ধ হচ্ছি কি? নাহ, আজ তাঁর গানের কথা থাক। মানুষটিকে কেন্দ্রে রেখে যেসব গল্পসল্প জেনে এসেছি সেকালের নানা গুণী জনের কলমে, তার কিছু আজ স্মরণ করতেই পারি।

    '... বরং আমার মন আনন্দে নেচে ওঠে, যখন চেতলায় যেতে-আসতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দক্ষিণের ফুটপাথে গাছের তলায় পাড়ার লোকের চাঁদায় তৈরি হেমন্তের আবক্ষ মূর্তিটা আমার চোখে স্মিত হাসিতে ভেসে ওঠে। সাধারণ মানুষের ভালবাসার কাছে ক্ষমতান্ধ রাজানুগ্রহ নিতান্তই খোলামকুচি বলে মনে হয়।'
    (সুভাষ মুখোপাধ্যায় -২৯।১২।১৯৯৫)

    'গান অনেকেই গায়। নামও অনেকের। কিন্তু সবাই অজাতশত্রু হয় না। হেমন্ত সেদিক থেকে সত্যিই ভাগ্যবান। যেখানেই যাই শুনি- হেমন্তের মতন মানুষ হয় না। শুনে আমরা যারা তার ছেলেবেলার বন্ধু-আমাদের বুক দশ হাত হয়। নাম অনেকেই করে, কিন্তু সর্বজনীন ভালবাসা ক'জন পায়? বোম্বাইতে বেশ কয়েকবার আমি এর সাক্ষী। একবার এক ট্যাক্সিতে উঠে বলেছিলাম- ফোর্টিন্থ রোড যাব। তারপর একটু বাজিয়ে দেখার জন্যই বলেছিলাম হেমন্তকুমারের নাম। শোনা মাত্র ট্যাক্সি ড্রাইভারের সে কী উচ্ছ্বাস। তারও সেই এক কথা - অমন মানুষ হয় না।'
    (হেমন্তর কী মন্তর-সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

    'বাঙালিয়ানা' বলতে কী বোঝায়, একালের ছেলেমেয়েরা প্রশ্ন করে। তারা মুক্ত বাজারের মানুষ। মানুষের 'বাজারে' 'বাঙালিয়ানা' নামে কোনও স্পেকস হয় না। ভাষণ দিয়ে বোঝানো যায় না। বরং বলি, বাঙালিয়ানা মানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁর থেকে বেশ খানিকটা তফাতে থাকলেও আরেকটা নাম আসবে বোধ হয়। উত্তম কুমার। তারা খুব সহজে বুঝে যায়। রবীন্দ্রনাথের নাম অপব্যবহার না করেও, অথবা স্বামীজি বা নেতাজি ধরনের স্টারেদের ছেড়ে দিলেও, নতুন প্রজন্মকে 'বাঙালিয়ানা' বোঝানো যায়। এই গরিমায় পৌঁছোনো কঠিন। এ হলো মধ্যবিত্তের এক্সেলেন্স। তার উপরের বা নিচের স্তরে প্রতিবিম্বটি ধরা যাবে না। আয়নাটিতে অতোটাই ধরে। না হয় 'মধ্যবিত্ত'ই হলো। শব্দটা তো গালাগালি নয়। নয়, কোনও অপরাধের নাম। একটা মনোজগত মাত্র। তাই নিয়েই জন্মেছি। সেভাবেই চলে যাবো। পূর্ণ হবে না কখনও, কিন্তু 'আপওয়র্ড মোবিলিটি'র অসীম তৃষ্ণাটি রয়ে যাবে। 'অপরাধ' বলতে ঐটুকুই।

    হেমন্তকে কপি করা কতো সহজ। হাত গোটানো শাদা শার্ট। ধুতি, ব্যাকব্রাশ, কালো ফ্রেমের চশমা। আমাদের সময়ে একজন গান গাইতেন। চিত্তপ্রিয় মুখোপাধ্যায়। গান গাওয়ার ধরন, কণ্ঠস্বর, উচ্চারণ, সাজপোশাক, ভাবভঙ্গি সব কিছুই স্বয়ং হেমন্তের থেকেও 'হৈমন্তিক' ছিলো। একবার কোনও এক অনুষ্ঠানে পকেটে কোঁচা গুঁজে, কোমরে হাত দিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। যেন অবিকল হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে দেখে বন্ধু গীতিকার মিল্টু ঘোষ বলে ওঠেন 'এই চিত্ত, হাত নামা কোমর থেকে। তুই কি হেমন্তদা হয়েছিস?' সুবীর সেনের এক উদীয়মান গায়ক বন্ধু খুব গোপনে জানিয়েছিলেন কী করে হেমন্তদার মতো গলা বার করা যাবে? সুবীর চমৎকৃত। অমন 'ঈশ্বরে'র গলা কীভাবে পাওয়া যায়? বন্ধু চুপি চুপি খুব সিরিয়সভাবে জানান, গানের আগে একটা বিড়ি টেনে নিলেই অমন গলা বেরোবে।

    'তিনি যেন বাংলা সঙ্গীত পরিবরের একজন সংবেদনশীল অভিভাবক'। বলেছিলেন বিখ্যাত কম্পোজার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সারা জীবন হেমন্তের থেকে অকৃপণ ভালোবাসা, দাক্ষিণ্য পাবার ভাগ্য করেছিলেন। হেমন্তের কাছে গান গাওয়া কোনও জীবিকা ছিলো না। ছিলো 'জীবনসাধনা'। বাইরে অনুষ্ঠান করতে গেছেন। সঙ্গে অনুজ গায়িকারা আছেন। রাতের বেলা তাঁদের ঘরের দিকে চটির শব্দ এগিয়ে আসে। হ্যাঁরে, তোদের সব খাওয়াদাওয়া হয়েছে? হ্যাঁ দাদা। তবে এবার শুয়ে পড়। কালকে তো আবার গান আছে। চটির শব্দ দূরগামী হয়ে যায়। প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার অনেকেই দেখেছেন। ছোটো বোনের প্রতি বড়ো দাদার স্নেহ অনুচ্য অনুভব হয়ে মুগ্ধ করে। দর্শকরা সবাই জানেন। 'বাঙালিয়ানা' বোধ হয় সেরকমই কিছু।

    হেমন্তকুমার তখন বম্বেতে সুপার সফল শিল্পী। সেখানকার বিখ্যাত গায়করা তাঁকে ধরে পড়েন তাঁরা হেমন্তের সুরে পুজোর গান করতে চান। হেমন্ত ভাবেন, সে তো ভালো কথা। এতো জন বিখ্যাত গায়ক যদি বাংলা গান করেন তবে সারা দেশে বাংলা গানের একটা প্রতিষ্ঠা হবে। গ্রামোফোন কোম্পানির কর্তা পি কে সেনও এ প্রস্তাবে খুশি। কিন্তু কোম্পানির মেজ কর্তা পবিত্র মিত্র পড়লেন বিপদে। তিনি হেমন্তকে জনান্তিকে জানালেন, 'ভাইব্যা দেখেন, বম্বের শিল্পীর তো সারা বসর কত কাম আসে। তারা প্রচুর অর্থ পায় বসর ধইর‌্যা। কিন্তু কইলকাতার শিল্পীগো তো একমাত্র ভরসা ঐ পুজার গান। হের সাফল্যের উপর তাগো সারা বসর প্যাট চলে। এখানের শিল্পী সব বাদ যাইবো। আপনি চিন্তা করেন, কী করবেন?' হেমন্ত বুঝতে পারেন কী ভুল হচ্ছিলো। তৎক্ষণাৎ বলেন, ' সরি, ভাববেন না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমি একজনেরও গান করবো না। আমি আপনাকে কথা দিলাম।' উদ্যোগটির সঙ্গে হেমন্তের কী পরিমাণ উপার্জন জড়িয়ে ছিলো সে কথার উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। অভিজিৎ বলেছিলেন 'হেমন্তদা জাত Humanist, জাত বাঙালি'। বাঙালিয়ানা, কী এরকমই কিছু?

    তাঁর জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। ধুলোমুঠি সোনা। বাংলা ছবির এক অকালপ্রয়াত কলাকুশলীর পরিবারের সাহায্যের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। তাঁরা হেমন্তকে অনুরোধ করলেন। তিনি এলেই আশাতিরিক্ত অর্থসংগ্রহ করা যাবে। সব শুনে তিনি রাজি হলেন। তবে বললেন তাঁর পুরো পারিশ্রমিক ও বম্বে-কলকাতা বিমানভাড়া তাঁকে অগ্রিম পাঠাতে হবে। তবেই তিনি গান করবেন। সংগঠকদের রাজি না হয়ে উপায় ছিলো না। তিনি ছাড়া টিকিট বিক্রি হবে না। কিন্তু আড়ালে গালাগালি দেওয়া শুরু হলো। হেমন্ত সবই জানতে পারছেন। কিন্তু কোনও মন্তব্য করছেন না।

    অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রয়াত সজ্জনের সহধর্মিণীকে ডেকে নিলেন তিনি। বলতে শুরু করলেন, 'হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অমুক হয়ে গেছেন, তমুক হয়ে গেছেন। এত টাকা নিয়েছে, প্লেন ফেয়ার নিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি সবই আমার কানে এসেছে। সবই সত্যি।' তিনি স্বীকার করলেন, অনেক টাকা নিয়েছেন। কেন? 'সাধারণত এই সব Charity Programme-এ যাঁর জন্য Charity তিনি কিছুই পান না। তাই আমি আমার সব পাওনা নিয়েছি আর সেই সব অর্থটাই আমি বৌদির হাতে তুলে দিচ্ছি, যাঁর সাহায্যার্থে এই অনুষ্ঠান।' প্রেক্ষাগৃহের মানুষ , তাঁদের মুগ্ধতা বন্ধহীন হয়ে ফেটে পড়ে করতালিতে। 'জাত বাঙালি'?

    যখন রোগে কণ্ঠ অবসন্ন হয়ে পড়েছে, তখনও তিনি কেন গাইছেন এ প্রশ্ন উঠতো বার বার। তাও যদি কেউ বলতো, ভালো লেগেছে। তিনি বলতেন, অনেক দিন তো ভালো শুনেছো। এবার একটু খারাপ শোনো। সহধর্মিণী বেলা একদিন বলতে যান, গান ভালো হয়েছে। হেমন্ত উত্তরে বলেন, 'কাকে কী বোঝাচ্ছো?'

    একজন তাঁকে বহুদিন ধরে অনুরোধ করছিলেন একটি ক্যাসেটে যদি হেমন্ত দুটি গান গেয়ে দেন, তবে পাঁচ হাজার টাকা দেবেন। তিনি সময় পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ তিনি একদিন নিজেই ফোন করে সেই মানুষটিকে ডেকে পাঠান। বলেন, 'যদি কালকের মধ্যে দশ হাজার টাকা দাও, তবে চারটে গান গেয়ে দেবো। চাও তো পুরো ক্যাসেটটা গেয়ে দেবো।' শেষে কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে পুরো ক্যাসেটটাই তিনি গেয়ে দিলেন। তার পর তিনি বললেন, 'তুমি আমায় বাঁচালে- আমার একটা টাকা আসতে দেরি আছে। কিন্তু মাসটা কাবার হলেই বাড়ি বাড়ি খাম পাঠাতে হবে-না হলে তাদের সংসারে অসুবিধে হবে।‘ 'বাঙালিয়ানা'?

    একবার পুজোর সময় ঠিক, হেমন্ত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরে গান গাইবেন। সবাই তাই জানে। হঠাৎ হেমন্ত জানালেন কোনও অনিবার্য কারণে মুকুল দত্তের গান তাঁকে নিজের সুরে গাইতেই হবে। তাই অভিজিতের গান এবার গাইতে পারবেন না। অভিজিৎ হেমন্তকে জানালেন এমন হলে তাঁর জীবিকায় সমস্যা হবে। তখন হেমন্ত বলেন, বেশ তিনি মুকুল দত্তের একটি গান গাইবেন। অন্যটি অভিজিতের হবে। তবে একটি শর্ত আছে। মুকুল দত্তের যে গানে তিনি সুর দেবেন সেটিও অভিজিতের নামেই বিজ্ঞাপিত হবে। সেই গান দুটি 'আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো' আর 'অনেক অরণ্য পার হয়ে'। বাঙালির সাইকির গভীরে রয়েছে তারা। অভিজিৎ দুটি গানের জন্যই রয়্যালটি পেলেন। আমাদের সমাজে অনুজের অভিভাবক হ'ন তাঁর বড়ো ভাই। 'বাঙালিয়ানা' তারে কয়?

    শেষ জীবনে অমিতাভ চৌধুরির বাড়ির রবিবারের আড্ডা হেমন্ত নিয়মিত আসতেন। তিন তলায় উঠতে কষ্ট হতো, তবু। সেই আড্ডায় আসতেন, সুচিত্রা সেন, বসন্ত চৌধুরি, নির্মলেন্দু চৌধুরি, বিকাশ রায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, বরেন গঙ্গোপাধ্যায়, সুরজিৎ দাশগুপ্ত, বিজয় চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। কখনও বা সুনীল-শক্তি। সস্ত্রীক সুধীন দাশগুপ্ত। হেমন্ত আড্ডা উপভোগ করেন। কথা কম বলেন। একদিন বলেন, ‘তোমরা ভাবো আমি ব্যস্ত, কাজের মানুষ, আসি কী করে? কিন্তু এখন আর আমি ব্যস্ত নই। বাড়ি থেকে কদাচিৎ বেরোই । একাই থাকি। স্ত্রী বেলা গানটান ছেড়ে শুধু তাস খেলেন। অনেক কাজের লোক আছে। তাই সেরকম অসুবিধে নেই।‘ বাংলা সাহিত্যের সব খবরাখবর রাখেন। বম্বে যাননা আর। তাঁর চিন্তা চারজন বন্ধুকে নিয়ে। তাঁর যৌবনকালের বন্ধু। সমরেশ রায়, অজিত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁদের পারিবারিক খরচ তিনি বহন করেন। 'তাদের তো ফেলে দিতে পারিনা। ওরাও সুখে থাকুক'।

    অন্তিম অসুস্থতার সময় হাসপাতালে যাবার আগে নিজে 'খাম' গুলো সাজিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। বলে গিয়েছিলেন নিয়ম মতো তাদের যেন পৌঁছে দেওয়া হয়। যথাসময়ে, নয়তো বন্ধুদের অসুবিধে হয়ে যাবে। সম্পন্ন 'মধ্যবিত্তে'র 'বাঙালিয়ানা'। একটি মানুষ যখন কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন, তাঁকে ঘিরে গল্পেরা গড়ে ওঠে। উঠতেই থাকে। হেমন্তকে ঘিরে গল্পের শেষ নেই। কতো আর লিখি? মানুষ সেই সব গল্প শুনতে ভালোবাসে। যে যাই বলুক, মানুষ তো শেষ পর্যন্ত 'তিমিরবিনাশী'ই হতে চায়। হেমন্ত ছিলেন বাঙালি মূল্যবোধের সময়প্রহরী। গুরু রবীন্দ্রনাথের থেকে ব্যক্তিসত্ত্বা আর শিল্পসত্ত্বাকে মিলিয়ে জীবনে যাত্রাপথের যে কম্পাস তিনি পেয়েছিলেন, তার দিক কখনও ভুল হয়নি। এমনি এমনি একটা মানুষ হাত বাড়ালেই আকাশ ছুঁতে পারে না।

    অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলতেন 'দেবশিল্পী'। সলিল চৌধুরী বলতেন, 'হেমন্তদা বা লতা যখন আমার গানের শিল্পী, তখন কল্পনা আমার দিগন্ত ছাড়িয়ে যায়। Sky is my limit.'
    আকাশই তাঁর সীমা হতে পারে। আকাশ পেরিয়ে ঐ পারেও রয়েছে তাঁর রাজপাট। বাঙালি হয়ে জন্মাবার সুবাদে যেসব ওয়রিশন ফাঁকতালে পেয়ে গেছি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে একটি সেরা অহংকার। নীল ধ্রুবতারা। সব প্রশ্ন থেমে যায় সেদিকে তাকিয়ে। তাকিয়ে থাকাটাই আমাদের প্রাপ্তি । অমলিন উজ্জ্বল উদ্ধার।


    ছবি: বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ জুন ২০২০ | ৫৯৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • রঞ্জন | 122.162.121.154 | ১৮ জুন ২০২০ ০৮:১১94423
  • সম্বিৎ (ন্যাড়া?) কুহক এবং কুশানবাবু,

    অশেষ ধন্যবাদ। কেন যেন এই সময়ে গুরুগাঁওয়ে ঘরে বন্দী অবস্থায় ওই  গানটার কথা খুব মনে পড়ছে।

     এবং হেমন্তের কন্ঠে ওই রিফ্রেন , নীচু গলায় " ঝড় উঠুক, ঝড় উঠুক"!

  • lcm | 99.0.80.158 | ১৮ জুন ২০২০ ০৯:৩৯94426
  • আর মান্না দে? কী বলেছিলেন তিনি? যে কোনও অনুষ্ঠানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে গান গাইতে যাওয়ার আগে সম্বোধন করতেন ‘মিষ্টি সুরকার মিষ্টি গায়ক মিষ্টি মানুষ’ এই বলে। বলতেন, ‘‘হেমন্তবাবু মানুষ খুব বড়। অমন যাঁর গলা তিনি সব গান তো নিজেই গাইতে পারতেন। কী দরকার আমাদের সুযোগ দেওয়ার। আমাদের খেটে গাইতে হয়, উনি কথা বললেই গান হয়ে যায়।’’
  • শিবাংশু | ১৮ জুন ২০২০ ১২:১৮94429
  • @ রঞ্জন,
    ১৯৬৯ সালের প্রথম দিক। সম্ভবত বসন্তকালে বাংলা আধুনিক গানের এক গুচ্ছ রেকর্ড প্রকাশিত হতো। কোনও এক রবিবার 'অনুরোধের আসরে'র শেষ গান 'এমন একটা ঝড় উঠুক'। আমার হেমন্ত- নিবেদিত পিতৃদেব সেদিনই বিকেলে সাকচি বাজারে মুখার্জিবাবুর দোকানে। হ্যাঁ, আছে। কালো গালার রেকর্ডে নীল লেবেল। অন্যপিঠে 'সবাই চলে গেছে'। গান শুনে বাবা বলেন এই সুর তো সলিলদা ছাড়া আর কারো হতেই পারে না। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনও আমরা তাঁর নামও শুনিনি এবং গুগলও ছিলোনা। খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেখলুম আরও চার-পাঁচ বছর আগে থেকেই তিনি রীতিমতো সক্রিয়। দুরন্ত সব সুর করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। আমি তখন থেকেই অভিজিৎবাবুর গানের অনুগত। পরে জেনেছি তিনি ১৯৫১ সাল থেকেই সুর করছেন।

    গানটি প্রকাশিত হবার দিন পনেরো পরে অভিজিৎ গেছেন হেমন্তের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ঘুম ভেঙে এসে অভিজিৎবাবুকে দেখেই বললেন, 'ও তুমি এসেছো? তোমার গান খুব ভালো। দশ বছর।' অভিজিৎ চমৎকৃত। পনেরো দিনও হয়নি গানটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই তিনি বলে দিলেন 'দশ বছর'? সেই 'দশ বছর' পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। এখনও ঐ গান রিমেক হয়। একজন অনুজ শিল্পীকে কীভাবে উৎসাহিত করতে হয়, গভীর সঙ্গীতবোধ থেকে হেমন্তর সেই উপলব্ধি ছিলো। তাঁর মূল্যায়ণকে সার্থক করে দুটি গানই চিরকালীন বাংলা গানের মাইলফলক হয়ে রয়ে গেছে।

    উল্লেখ্য, ঐ বছরই পুজোর সময় সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে হেমন্ত গেয়েছিলেন, 'শোনো কোনো এক দিন' এবং 'আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা'।
  • Du | 47.184.21.53 | ১৯ জুন ২০২০ ০০:৩৮94448
  • এখানে এক ভদ্রলোক সাউথ এশিয়ান রেডিওতে গান এর অনুষ্ঠান করেন বোম্বের মানুষ, নাম এ জি চিনি। ঊনি হেমন্তকে নিয়ে একটা শোতে বলেছিলেন -ঐশ্বরিক বিশেষণ তো ইউজ করেইছিলেন আরো বলেছিলেন লোকে যদি বাড়িতে গান চালিয়ে গল্পগুজব করে আর তার মধ্যে হেমন্তর গলায় গান শুরু হয় সবাই চুপ করে যায়, ওনার গানের মধ্যে কথা বলা যায় না।
  • anandaB | 50.35.122.121 | ১৯ জুন ২০২০ ০১:৪৬94449
  • "বম্বেতে একটাই শর্ত আছে। গুণমানের শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।"

    শিবাংশু এই কথাটি কি কোনো নিদির্ষ্ট সময়কালের সাপেক্ষে বল্লেন (ধরা যাক ষাটের দশক, উদাহরণ স্বরূপ)? যদি তা না হয় তাহলে দ্বিমত আছে "গুণমানের শ্রেষ্ঠত্ব" অংশটি নিয়ে

    গুরুত্বপূর্ণ শর্ত? মানতে রাজি... এমনকি অন্যতম প্রধান শর্ত? তাতেও (নিম)রাজি.... কিন্তু "একটাই শর্ত?" মানা গেল না
  • শিবাংশু | ১৯ জুন ২০২০ ১৬:৩২94457
  • @ anandaB,
    এই লেখাটিতে যেসব প্রসঙ্গ এসেছে, সবই সময়সাপেক্ষ। গত শতকের পাঁচের দশক থেকে এই শতক পৌঁছোনো পর্যন্ত। শূন্য দশক পৌঁছোবার অনেক আগেই বম্বের ফিলম সঙ্গীতে যান্ত্রিক কারিকুরির প্রভাব সাঙ্ঘাতিক বেড়ে যায়। গায়কের কণ্ঠ একটি অন্যতম 'বাদ্যযন্ত্র' হয়ে দাঁড়ায়। ঐ সময়ের একটা সেরা কণ্ঠ সোনু নিগমও টিকে থাকতে পারেননি। টিউন ব্যাংক বা ট্র্যাক রেকর্ডিং ব্যাপারটা পঞ্চমের সময়েও ছিলো। কিন্তু পরের দিকে সেটা একটা 'হাস্যকর' অবস্থায় পৌঁছে যায়। আসরানির গানও কিশোরকুমারের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়ে যায়। বাজার ব্যাপারটা চিরকালই আছে। কিন্তু ঐ সময়টায় সঙ্গীতের প্রাথমিকতাটি প্রশ্নহীন ছিলো। বাজারের 'চাহিদা'য় শিল্প ও শিল্পীর সমগ্রতা ব্যাপারটা চুলোয় গেছে। পঞ্চাশ-নব্বই দশকের গানের সঙ্গে এই মুহূর্তের গান কি কোনও ভাবে তুলনা করা যায়?
  • anandaB | 50.35.122.121 | ১৯ জুন ২০২০ ২০:৩৩94467
  • শিবাংশু, সময় করে উত্তর দেবার জন্য ধন্যবাদ
    "কিন্তু ঐ সময়টায় সঙ্গীতের প্রাথমিকতাটি প্রশ্নহীন ছিলো" - এর পরে আর কোন কথা হয় না বা দ্বিমত থাকে না :)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন