এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • তেলের দামের আর্থ রাজনীতি - শেষ পর্ব

    দেবর্ষি দাস, দীপঙ্কর বসু, পানাইয়োটিস টাকি, শিব শেঠী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৭ আগস্ট ২০১০ | ১২৮২ বার পঠিত
  • Under recoveries -এর মানে কী?

    এই পরিপ্রেক্ষিতকে মনে রেখে আমরা এখন under recoveries বিষয়টিকে দেখতে পারি। রঙ্গরাজন কমিটি রিপোর্টের মতে OMC গুলো 'রিফাইনারিগুলো থেকে import parity price -এ তাদের পণ্য কিনছে, এই দামই তাদের ব্যয়। Realized price ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্যকে OMC গুলোর under recovery বলা হচ্ছে।' (রঙ্গরাজন কমিটি রিপোর্ট, ২০০৬) অর্থাৎ under recovery = import parity price – realized price .

    সরকারের কিন্তু realized price -এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আছে, মানে এতোদিন ছিল। যদি এর মূল্য import parity price -এর থেকে কম হয় তাহলে under recovery দেখা দেবে (১)। তবে under recovery আর লোকসান এক জিনিষ নয়। বিষয়টি বুঝতে গেলে import parity price -এর সংজ্ঞা দেখা যাক। রঙ্গরাজন রিপোর্ট (পৃ: ৫) জানাচ্ছে,

    'দাম নিয়ন্ত্রণ বা সীমা শুল্ক বসানোর ক্ষেত্রে import parity pricing একটি সাধারনভাবে ব্যবহৃত পন্থা। এই পদ্ধতিটির পক্ষে যুক্তি হল, যখন দেশে একটি বিশেষ পণ্যের উৎপাদন হয় না তখন তার যোগানের জন্য বিদেশ থেকে কিনতে হয়, আমদানীর দাম বা import parity price -ই দেশের বাজারে দাম হয়। যখন দেশের মধ্যে দ্রব্যটির উৎপাদন হয় তখনও কিন্তু import parity price -কে দেশের আভ্যন্তরীন দামের উর্ধসীমা ধরে নেওয়া যায়। যদি দেশের রিফাইনারিগুলো তেল বেচে এই import parity price পান তাহলে তারা একটা উপরি আয় (rent) লাভ করছেন, যা পরিবহন খরচ, অপরিশোধিত তেল ও রিফাইন করা তেলের মধ্যের খরচের পার্থক্যের সমান। এই অবস্থায় জনস্বার্থে রিফাইনারিগুলোকে উপরি আয়ের একটা অংশ সরকারের সাথে ভাগ করতে বলা যেতে পারে।'

    মানে হল এই, যদি তেল আমদানী করা হত তাহলে import parity price দিতে হত। ভারতে এই পরিস্থিতি বিরাজ করে না, পেট্রোÌলিয়াম দ্রব্যের চাহিদা দেশের রিফাইনারিগুলোই মেটাতে পারে। আসলে আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়েও তার ওপরে ৩৫% উদ্বৃত্ত রিফাইনিং ক্যাপাসিটি রিফাইনারিগুলোর আছে (সূর্য সেঠি, ২০১০)। যে দামে দেশের রিফাইনারিগুলো পেট্রোÌলিয়াম দ্রব্য যোগান দিতে পারে (export parity price) তার মূল্য import parity price -এর থেকে কম। ২০০৫ সালের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে ডিজেলের ক্ষেত্রে এই ফারাক ছিল ১.৭১ টাকা প্রতি লিটার (রঙ্গরাজন রিপোর্ট, পৃ: ৪)। Under recovery যদি সঠিকভাবে মাপতে হয় import parity price -এর বদলে export parity price নেওয়া শ্রেয় হবে। Import parity price নিলে under recovery নামে কল্পিত বস্তুটির পরিমান বেড়ে যায়। এবং তখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়া একে সরকারী OMC -গুলোর লোকসান বলে প্রচার করতে থাকে। দ্বিতীয়ত, মনে রাখা ভাল রিফাইনারিগুলো স্থাপনে প্রভূত সরকারী সাহায্য, ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যাশা করা ভুল হবে না যে সামান্য কম দামে বাজারে তেল ছাড়লে তেলের ভারের খানিকটা রিফাইনারিগুলো বহন করবে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারী রিফাইনারিগুলোকে সরকার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে যাতে import parity price -এ OMC -গুলোকে তেল বিক্রী করতে পারে (রঙ্গরাজন রিপোর্ট, পৃ: ৩০)। কেন under recovery মূলত কল্পনা তার তিন নম্বর কারণ, তেল কম্পানিগুলোর প্রকাশিত লাভ-লোকসান আর under recovery এক জিনিষ নয়, 'লাভ লোকসান বিভিন্ন আয়ের স্রোতকেও হিসেবের মধ্যে রাখে: যেমন ডিভিডেন্ড আয়, পাইপলাইন থেকে আয়, মজুত মালের পরিবর্তন, মুক্ত বাজারে বিক্রী করা পণ্যের থেকে লাভ, যদি এক কম্পানি হয় তাহলে রিফাইনিং থেকে লাভ।' (রঙ্গরাজন রিপোর্ট, ৎ)। সরকারী কম্পানিগুলো একই মালিকের অধীন, তাই তাদের একটাই কম্পানি ধরা যেতে পারে। সেই কারণেই কিন্তু OMC -গুলোর under recovery ONGC, GAIL -এর মত upstream কম্পানিগুলো বহন করে। এই কম্পানিগুলো দেশের সবচেয়ে বড় লাভজনক সংস্থার মধ্যে পড়ে (২) । যাঁরা মৃত্যুঘাতী ভর্তুকির কথা বলেন তাঁরা সত্যের অপলাপ করছেন।

    সংক্ষেপে: প্রথমত, under recovery তখনই হয় যদি OMC -গুলো যে দামে বেচে তার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে। OMC -গুলোকে দাম ঠিক করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিলে তারা তেমন দাম নেবে যাতে under recovery না হয়। দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ OMC কিন্তু পেট্রোÌপণ্য (মানে পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, এলপিজি) আমদানী করে না, দেশের রিফাইনারিগুলো থেকে কেনে, যারা ক্রুড তেল বাইরের থেকে কেনে। Import parity price ব্যবহার করে একটা কল্পিত খরচের কথা ধরা হচ্ছে, যার সাথে বাস্তবিক লাভ লোকসানের সম্পর্ক নেই। তাই OMC -গুলোর under recovery একটি কল্পনা, এর প্রতিফলন কম্পানিগুলোর ব্যালান্স শীটে পড়ে না। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া under recovery -কে লোকসানের সাথে এক করে ভুল করে। আমরা দেখব যদি বেসরকারী কম্পানিকে আনা যায় তাহলে কিন্তু under recovery একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করতে শুরু করে।

    মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যেমন under recovery -কে লোকসান হিসেবে দেখাতে ব্যস্ত, সরকারী আমলারা ও নীতি বিশেষজ্ঞরাও under recovery -কে ভর্তুকি বা 'কার্যত ভর্তুকি' নাম দিয়ে থাকেন ( IEA Report , ২০০৯, পারিখ কমিটি দুটো সাম্প্রতিক উদাহরণ)। এর কারণ কী?

    সরকারী ভর্তুকি?

    সরকারী ভর্তুকির কথা তখনই আসে যদি কোনো একটি দ্রব্যের সরকারী করের পরিমান সেই দ্রব্যে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির পরিমানের থেকে কম হয়। অর্থাৎ, যে জিনিষটার প্রতি নজর রাখতে হবে তা হল 'নেট ভর্তুকি' – সরকারী করসংগ্রহ যদি সেই দ্রব্যে সরকারী ভর্তুকির থেকে বেশি হয় তাহলে নেট হিসেবে ভর্তুকির পরিমান ঋণাত্মক। এই অবস্থায় সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে বলা ভুল হবে।

    ভারতীয় সরকার কি পেট্রোÌলিয়াম পণ্যে নেট ভর্তুকি দিচ্ছে? এর উত্তর দেওয়ার সহজ রাস্তা হচ্ছে পেট্রোÌপণ্য থেকে সরকারের মোট করসংগ্রহকে under recovery ও প্রত্যক্ষ ভর্তুকির যোগফলের সাথে তুলনা করা। চিত্র ৩-এ আমরা গত কয়েক বছরের হিসেব দিয়েছি। তথ্যসূত্র, (ক) Under recovery , কর (বিক্রয়), ডিউটি (এক্সাইজ, কাস্টমস), মোট আয়ের তথ্য নেওয়া হয়েছে Petroleum Planning and Analysis Cell (PPAC), Ministry of Petroleum and Natural Gas , ভারত সরকারের ওয়েবসাইট ও কিরিত পারিখ কমিটি রিপোর্ট থেকে। (খ) প্রত্যক্ষ করের তথ্য নেওয়া হয়েছে Table 26, Basic Statistics on Indian Petrol and Natural Gas থেকে (৩) ।

    ৩নং চিত্র থেকে কয়েকটি মনোজ্ঞ উপসংহার বেরিয়ে আসে। এক, সরকারের প্রত্যক্ষ ভর্তুকির পরিমান অত্যন্ত কম। তেলক্ষেত্র থেকে মোট আয়সংগ্রহের প্রায় ১%। দুই, ২০০৪ আর্থ বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে তেল ক্ষেত্র থেকে সরকারী করসংগ্রহ OMC -গুলোর under recovery ও প্রত্যক্ষ ভর্তুকির থেকে বেশি। তিন, শুধু বিক্রয় কর ও বিভিন্ন ডিউটির যোগফল (যা তেল ক্ষেত্র থেকে সরকারের মোট আয়ের থেকে কম) OMC -গুলোর under recovery ও প্রত্যক্ষ ভর্তুকির যোগফল থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ থেকেই। অতএব এই উপসংহার টানা যায় যে ভারতে পেট্রোপণ্যে ঋণাত্মক নেট ভর্তুকি রয়েছে। অন্যভাবে বললে, সরকার পেট্রপণ্য থেকে নেট কর সংগ্রহ করছে। আমরা আকছার যে শুনি, পেট্রোপণ্যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তা আদৌ সত্যি নয়। Under recovery -র তাৎপর্য

    আমরা দেখলাম সরকারী OMC -গুলোর under recovery -কে আর্থিক ক্ষতি হিসেবে ধরা যায় না কেননা under recovery -র হিসেবের পেছনে বাস্তব নয়, কল্পিত মূল্য নেওয়া হয়েছে। আবার একে ভর্তুকি হিসেবে ধরাও ভুল হবে কেননা নেট অর্থে ঋণাত্মক ভর্তুকি পেট্রোÌপণ্যে দেওয়া হচ্ছে।

    তাহলে under recovery -র গুরুত্ব কী? বেসরকারী ক্ষেত্র ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়া under recovery নিয়ে এতো উদ্বিগ্ন কেন?

    বিষয়টিকে সম্যক বোঝার জন্য একটি সরকারী মালিকানাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ (vertically integrated) তেল কম্পানি কল্পনা করুন। কম্পানিটি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে, পরিশোধন করে বাজারে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে। অর্থাৎ একই কম্পানির মধ্যে রিফাইনারি ও খুচরো বিক্রির দোকান আছে। যদি ক্রেতার কাছে যে দামে বিক্রি করা হচ্ছে তার মূল্য অপরিশোধিত তেলের দাম, রিফাইন ও বিতরণের খরচ (যে পুঁজী লগ্নি হয়েছে তার আয়ও ধরতে হবে), কর ও ডিউটির যোগফলের থেকে বেশি হয় তাহলে কম্পানিটি মুনাফা কামাচ্ছে বলতে পারি।

    এখন ধরে নিই যে এই একক সরকারী কম্পানিটিকে দুটো ভাগে টুকরো করে দেওয়া হল। একটিতে শুধুমাত্র রিফাইন হয়, দ্বিতীয়টিতে বিতরণ ও বিপণন। দুটোই সরকারের মালিকানায় আছে। এই অবস্থায় দুটো আলাদা ব্যালান্স শীটের অবতারনা হবে, আগে যে লেনদেনগুলো বড় কম্পানিটির অভ্যন্তরীন ব্যাপার ছিল এখন দুই আলাদা ছোট কম্পানির কেনা বেচার হিসেব খাতায় তার দাগ পড়বে। এই অবস্থাতেও দুটো কম্পানিকে একসাথে অভিন্ন কম্পানি করলে সেই কম্পানিটি মুনাফা করছে কিনা আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পারি: যদি শেষ খুচরো দাম অপরিশোধিত তেলের দাম, রিফাইন ও বিতরণের খরচ (পুঁজির আয়ের আগের হারই ব্যবহার করব যদিও দুটো আলাদা কম্পানির জন্য), কর-ডিউটির যোগফলের থেকে বেশি হয় তাহলে ব্যবস্থাটি মুনাফাজনক। যদি এই যৌথ ব্যালান্স শীটে লোকসান দেখা যায়ও, কম্পানির থেকে সরকারের সংগ্রহিত করের পরিমান লোকসানের থেকে বেশি হলে বলতে হবে সারা দেশের জনগণের পরিপ্রেক্ষিত থেকে নেট অর্থে কোনো লোকসান হচ্ছে না।

    অর্থাৎ, সরকার একটা দাম বেঁধে দিল যার ফলে বিপণন কম্পানিগুলো under recovery দেখাতে শুরু করল তাতে খুব একটা এসে যায় না কারণ, (ক) সরকারের কর সংগ্রহ হয়তো under recovery র থেকে অনেক বেশি (চিত্র ৩ দ্রষ্টব্য)। (খ) রিফাইনারি বা upstream কম্পানিগুলো এতো মুনাফা করতে পারে যে বিপণন কম্পানিগুলোর under recovery পুষিয়ে গেল। ভারতে সরকারী upstream ও downstream কম্পানিগুলোকে একটি অভিন্ন কম্পানি ভাবলে এই ছবিটিই ফুটে ওঠে। যেহেতু তেল ক্ষেত্রের গোটা আয়, সরকারী করসংগ্রহ কতিপয় কম্পানির 'লোকসান'-এর চেয়ে বেশি তাই ভারতীয় জনগণের পরিপ্রেক্ষিত থেকে কোন নেট লোকসান হচ্ছে না।

    অনুশীলনীর শেষ ও জরুরি পদক্ষেপটি এখন নেওয়া যাক। ধরে নিই একটি বেসরকারী কম্পানি তেল ক্ষেত্রে ঢুকেছে। অর্থাৎ দুটো সরকারী কম্পানি তো আছেই, আরেকটা বেসরকারী কম্পানিও আছে। বেসরকারী কম্পানিটি রিফাইন ও বিতরণ, বিপণনের কাজে রয়েছে। তেলের দামের ওপর যে সরকারী নিয়ন্ত্রণ under recovery -র জন্ম দিয়েছিল এখন কিন্তু বেসরকারী কম্পানিটির জন্য সত্যিকারের লোকসান বা কম মুনাফার জন্ম দিতে পারে। Realized price যদি import parity price -এর থেকে কম হয়, বেসরকারী OMC -টির লোকসান হতে থাকবে -- যদি ধরি OMC টি import parity price -কে লাভ লোকসান হিসেবের জন্য ধরবে। তবে মনে রাখা ভাল প্রাইভেট কম্পানিটির রিফাইনারিও আছে, রিলায়েন্সের মত, তাই OMC লোকসান করলে কম্পানিটি মুনাফা করতে পারে কেননা import parity price -কে বেচার দাম ধরলে রিফাইনারির মুনাফার পরিমান বহু বেড়ে যাবে। এছাড়াও কম্পানিটি মোটের ওপর মুনাফা করতে পারে যদি রিফাইনারির মুনাফার পরিমান OMC -র লোকসানের তুলনায় বেশি হয়। এতদসঙ্কেÄও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে realized price -কে বিনিয়ন্ত্রণ করলে under recovery বলে কিছু থাকে না, মুনাফা কামানোর রাস্তা আরো প্রশস্ত হয়ে যায়।

    এর থেকে under recovery -র আসল তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়। OMC গুলোর under recovery -র বিশেষ মানে থাকে না যদি তা করসংগ্রহ ও অন্য upstream কম্পানির মুনাফা দিয়ে পুষিয়ে যায়। কিন্তু এটা তখনই সত্যি যদি কোনো বেসরকারী কম্পানি বাজারে না থাকে। বেসরকারি OMC বাজারে ঢুকলে OMC -র under recovery -কে তার লোকসানের পরিমান হিসেবে নেওয়া যায়। যেহেতু বেসরকারী পুঁজী তেলের ব্যবসায় ঢুকে বিপুল মুনাফা কামাতে উৎসুক, under recovery -গুলোকে বড় আকারে প্রচার করা হয়, সরকারী নীতি বিশেষজ্ঞরা একে বোঝা বলে আখ্যা দেন, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সেই বাণী ছড়িয়ে দেয়। Under recovery -র হাত থেকে বাঁচার উপায় হল এর মূলকে উপড়ে ফেলা, মানে পেট্রোÌলিয়ামের দামের ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ হঠিয়ে দেওয়া। তাই গবেষকদের নিদান হল তেলের দামকে মুক্ত করে দিন, এবং সরকার বাহাদুরও এই সুপরামর্শকে গ্রহণ করে বলবৎ করতে উদ্যোগী হয়েছেন।

    শেষ করার আগে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিচ্ছি, হয়তো চিন্তার খোরাক যোগাবে। মুরলী দেওরা জানিয়েছিলেন প্রাক-কর পেট্রলের দাম দিল্লীতে ২০০৯-এর জুলাই মাসে ২৩.৪৪ টাকা ছিল। রিলায়েন্স, এসার যদি দিল্লীতে পেট্রল বেচত তো এক লিটারে এতটাই কর-পরবর্তী আয় কামাতে পারত। এক লিটারে ওদের খরচ কত পড়ত? জুলাই মাসে আমরা দেখেছি আন্তর্জাতিক অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১৯.৮৭ টাকা প্রতি লিটার। বিতরণ, বিপণন, রিফাইন ইত্যাদি খরচের জন্য এর ওপর কতখানি মার্জিন থাকে? গ্যাসোলিনের প্রাক-কর আন্তর্জাতিক দাম ঐ সময় ছিল ২.৩৩ মার্কিন ডলার প্রতি গ্যালন। যেহেতু অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১ .৫৩৮ ডলার প্রতি গ্যালন, মার্জিন দাড়াচ্ছে প্রায় ১.৫১৫ (২.৩৩/১.৫৩৮)। ভারতীয় কম্পানিগুলো আশা করা যায় অন্তত এতোখানি মার্জিন রেখেই বাজারে তেল ছাড়তে চাইবে। অর্থাৎ দিল্লীতে তেল বিক্রি করতে হলে অপরিশোধিত তেলের দামের ওপর রিলায়েন্স বা এসাররা ১৫২% মার্জিন রাখবে। ১৯.৮৭ টাকার ওপর ৫২% যোগ করলে পাচ্ছি ৩০.২০ টাকা (=১৯.৮৭ * ১.৫২)।

    অর্থাৎ গল্পটা এরকম দাঁড়াচ্ছে: পেট্রোÌলিয়াম মন্ত্রী বলছেন জুলাই ২০০৯-এ দিল্লীতে প্রাক-কর পেট্রলের দাম ছিল ২৩.৪৪ টাকা প্রতি লিটার। যদি রিলায়েন্সরা ঐ দামে তেল বেচতে নামত আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনা করলে প্রতি লিটারে ৬.৭৫ টাকার কম মুনাফা হত। অতএব, আমরা under recovery নামক চিড়িয়াকে নিয়ে হাহুতাশ শুনলাম, অসহনীয় সরকারী খরচের আখ্যান শুনলাম, সরকার শশব্যস্ত হয়ে কিরিত পারিখের কমিটি বসালেন, যিনি পেট্রল ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ করে দিলেন। আমার কথাটি ফুরোলো। জয় মুনাফা বাবার জয়।

    সূত্র:

    (১)লক্ষ্য করুন OMC গুলো রিফাইনারি থেকে IMPORT PARITY PRICE এ পণ্য কেনে। ধরি এর মূল্য ২৫ টাকা লিটার। এর সাথে বিতরণ, বিপনন ইত্যাদি খরচ যোগ হবে, কর যোগ হবে, তারপর খুচরো দাম পাব। ধরে নিই এইসব মিলিয়ে আরো ৩০ টাকা প্রতি লিটারে যোগ করা হল, ফলে খুচরো দাম দাঁড়াল ৫৫ টাকা প্রতি লিটার। কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণ আছে, তাই সরকার অন্য একটা দাম ঘোষণা করল। ধরা যাক ৫০ টাকা। এই ৫০ টাকাই কিন্তু OMC গুলোর REALIZED PRICE নির্ধারন করে দিল, যার মূল্য এক্ষেত্রে ৫০ - ৩০ (নানান খরচ ও করবাবদ মার্জিন) = ২০ টাকা। অর্থাৎ IMPORT PARITY PRICE ও REALIZED PRICE এর ফারাক হল ২৫-২০ = ৫ টাকা প্রতি লিটার, যাকে UNDER RECOVERY বলা হচ্ছে।

    (২) http://en.wikipedia.org/wiki/List_of_companies_of_India

    (৩) http://petroleum.nic.in/petstat.pdf

    আরো পড়ার জন্য:

    Rangarajan Committee Report: http://petroleum.nic.in/Report1.pdf

    Kirit Parikh Committee Report: http://petroleum.nic.in/reportprice.pdf

    Surya Sethi: “Analysing the Parikh Committee Report on Pricing of Petroleum Products,” Economic and Political Weekly, March 27, 2010.

    চিত্র ৩ ৯ই অগস্ট, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৭ আগস্ট ২০১০ | ১২৮২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন