এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • খালপাড়ের লোকজনেরা ঃ উন্নতির নামে উচ্ছেদ (প্রথম পর্ব)

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ০১ মে ২০১০ | ৪৪৪ বার পঠিত
  • পটভূমি

    কলকাতা পরিবেশ উন্নতি প্রকল্প : এডিবি'র একটি বহুমুখী কার্য্যক্রম


    ১৯৯৮ সালে ভারত সরকার দেশের বড় শহর গুলোতে পরিবেশ দূষণের প্রতিকারের জন্য এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবি'র ( ADB ) কাছে অর্থনৈতিক সাহায্য চান। ভারত সরকার আর এডিবি দুজনেরই মত ছিলো যে কলকাতার জন্য একটা কার্য্যক্রম গড়ে তোলা দরকার যার নাম দেওয়া হয় "মিউনিসিপ্যাল কলকাতা এনভায়র্নমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম' বা "এমকেইআইপি' ( MKEIP )। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে এডিবি এই প্রকল্পের কাজে সাহায্য করার জন্য বিদেশী উপদেষ্টাদের নিয়োগ করেছিলেন। উপদেষ্টাদের কাজ ছিলো মিউনিসিপ্যাল কলকাতা কর্পোরেশন ( KMC ) এর কাজে সাহায্য করা আর "এমকেইআইপি'র জন্য নানা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা। "এমকেইআইপি'র থেকেই আরেকটি প্রকল্পের পরিকল্পনা উঠে আসে, তার নাম কলকাতা "কলকাতা এনভায়র্নমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম' বা "কেইআইপি'( KEIP )। ২০০১ সালে এডিবি এই প্রকল্পের কাজের জন্য লোন-চুক্তিতে সই করেন, ২০০২ এর ষোলই এপ্রিল থেকে সে চুক্তির কার্য্যকারীতা শুরু হয়।
    ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিসেব করে দেখা যায় যে এই প্রকল্পের মোট খরচ ১৮০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবির অবদান ৬৪.২ শতাংশ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ১৮.৫ শতাংশ ও "কেইআইপি'র ১৭.৩ শতাংশ। এছাড়া "ডিএফ্‌আইডি আরো ১৮৯ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে এডিবি'র অংশের ৩০ শতাংশ তাঁরা দিচ্ছেন অনুদান হিসেবে আর বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ হিসেবে। এই ফান্ডের টাকা নর্দমা ও জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবহার করা হবে, তাছাড়া জঞ্জাল পরিষ্কার ব্যবস্থা আর বস্তিগুলোর উন্নতি প্রকল্পেও ব্যবহার হবে। এডিবি মিউনিসিপ্যাল কলকাতা কর্পোরেশনকে ঋণ দেবার ওপরে যে পাঁচটি শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে তিনটি আবশ্যকীয় শর্ত হলো - ১) যাঁরা যাঁরা জল ব্যবহার করবেন তাঁদের সবাইকার জন্যই "মিটার' বসানো হবে। ২) এতে প্রপার্টি ট্যাক্স রিফর্ম বসানো হবে এবং ৩) এই প্রকল্পের কাজের খতিয়ানের জন্য যে "বেনিফিট মনিটরিং প্রোগ্র্যাম' চলবে তা এডিবির স্থির করে দেওয়া নিয়ম মেনেই করতে হবে।

    কলকাতার আশে পাশে যেমন জোকা (ঠাকুরপুকুর), শম্পা মির্জানগর, কুদঘাট, রাজডাঙা, সন্তোষপুর,কালিকাপুর (বাইপাস)এর নানা এলাকায় খালের ধারে ধারে অনেক বসতি গড়ে উঠেছে। বহু বছর ধরে এই কেওড়াপুকুর, বেগোর, নয়া মনিখালি,জিঞ্জিরা, ব্রিজি, অজয়নগর, গুনিয়াগাছি ইত্যাদি খালপাড় অঞ্চলে লোকজনেরা বাস করছেন। খালের সংস্কার আর উন্নতির জন্য এই সব বসতির উচ্ছেদে নেমেছে "কেইআইপি'। বলা হয়েছে যে পরিবেশের অবনতি রোখার জন্য আর কলকাতার জনজীবন আরো উন্নত করার জন্যই ওঁদের এই চেষ্টা 1 । এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৩৪৬৮টি পরিবারকে এই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে এবং নোনাডাঙা (রুবি হাসপাতালের পেছনে),কসবা, পূর্ব পুঁটিয়ারী, শম্পা মির্জানগর, পূর্ব বড়িশা এলাকায় তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এই সাতটি অঞ্চলেরই খালপাড়ের মানুষ এক হয়ে এর প্রতিবাদে নেমেছেন। ওঁরা "বৃহত্তর কলকাতা খালপাড় বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি' ( greater Kolkata resist eviction of canal bank slums committee ) নামে একটি কমিটিও গড়ে তুলেছেন 2 ।

    কিন্তু ..... পুনর্বাসন কি সত্যিই হচ্ছে?

    খালপাড়ের বস্তি উচ্ছেদ আর বস্তিবাসীদের অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগে যা যা করেছেন সবের ক্ষেত্রেই নজির অতি ভয়াবহ। ২০০২ সালে টালি নালা আর বেলেঘাটা খালের ধার থেকে হাজারের ওপর বস্তিবাসীকে স্রেফ মারধোর করে উৎখাত করা হয়েছিলো তো বটেই। এমনকি তাঁদের থাকার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা বা কোন রকম ক্ষতিপূরণও দেওয়ার ব্যবস্থাও বামফ্রন্ট সরকার করেননি। এবারে অবশ্য ঐরকম মারধোর করে কাউকে উচ্ছেদ করা হয়নি,হয়তো সেটা এডিবির ফান্ড থাকার কারণে। এডিবি'র "ইনভলান্টারী রি-সেট্‌ল্‌মেন্টের পলিসী'তে বলাই আছে যে সারা দুনিয়াতেই এই ব্যাংকের কোনো প্রকল্পের কারণে যদি স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ির ক্ষতি হয় তাহলে তাঁদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে 3 । সত্যি বলতে কি এই এডিবির পলিসির জন্যই আজ বামফ্রন্টের মুখরক্ষা হচ্ছে, সরকারের কোনো নীতির জন্য নয়। এই পলিসির কারণেই অসংখ্য গরিব মানুষের থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে ..... মানে, হচ্ছে তা কাগজে কলমে।

    এডিবি'র পলিসি এখানে তুলে দেওয়া হলো :

    Most will broadly agree that the policy governing development projects should aim to avoid involuntary resettlement wherever feasible, and minimize resettlement where population displacement is unavoidable by exploring all viable project options. If, nonetheless, individuals or communities must lose their land, means of livelihood, social support systems, or way of life they should be compensated for lost assets and loss of income and livelihood; assisted for relocation; assisted so that their economic and social future will generally be at least as favorable with the project as without it; provided with appropriate land, housing, infrastructure, and other compensation, comparable to the without-project situation; fully informed and closely consulted on resettlement and compensation options. The Policy should also specify that lack of formal legal title to land is not a bar to compensation and other assistance. Appropriate assistance should be provided to address the needs of the poorest affected persons such as female-headed households, and other vulnerable groups such as indigenous peoples and help them to improve their status.

    তাহলে দেখা যাচ্ছে পলিসিটিতে যা লেখা আছে তা আপাতপক্ষে খুবই গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বাস্তবে একে কিভাবে একটি প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে তাই আমরা দেখবো দ্বিতীয় পর্বে।



                                                    খালপাড়ের বস্তি -১



                                                    খালপাড়ের বস্তি -২

    **নাগরিক মঞ্চের এই প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন সুদেবী রায়।

    তথ্যসূত্র :

    ১। KEIP ওয়েবসাইট : http://www.keip.in/bl3/index.php
    ২। বৃহত্তর কলকাতা খালপাড় বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি, ৪১নং ছিট কালিকাপুর, পো: মুকুন্দপুর, কলকাতা-৭০০০৯৯। যোগাযোগের ঠিকানা : সুনীল মণ্ডল, মোবাইল নং - ৯৭৩৫৩৭৯৮৯২
    ৩। Involuntary Resettlement: Policies and Strategies (On-line edition) on the ADB site: http://www.adb.org/documents/Policies/Involuntary_Resettlement/default.asp

    ১লা মে, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ০১ মে ২০১০ | ৪৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন