এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  টাটকা খবর

  • একটি আবেদন

    admin লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | টাটকা খবর | ২৭ এপ্রিল ২০১০ | ৪৩৫ বার পঠিত
  • উত্তরবঙ্গের রাভা জনজাতির উপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে, আদিবাসী অরণ্যবাসীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রীয় বন-জন সংগঠন প্রকাশ করলেন হল এই বয়ানটি।

    বন্ধু

    আদিবাসী-অরণ্যবাসীদের সর্বভারতীয় সংগঠন রাষ্ট্রীয় বন-জন শ্রমজীবী মঞ্চের (National Forum of Forest People and Forest Workers—NFFPFW) উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক সমিতির পক্ষ থেকে আপনার/আপনাদের কাছে এই আবেদন।

    গত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে আমাদের সংগঠন আদিবাসী-অরণ্যবাসী মানুষের মধ্যে কাজ করছে। উত্তরবঙ্গে পর্বত এবং সমতলের বিভিন্ন বনবস্তিতে বসবাসরত আদিবাসী-বনবাসী মানুষ বাস্তুজমি-কৃষিজমির মালিকানা অধিকার সহ অরণ্যের অধিকারের বিভিন্ন দাবীতে যে দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন গড়ে তোলেন, তা আমাদের সংগঠনের উদ্যোগেই। উত্তরবঙ্গ সহ দেশের সর্বত্র যে গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে, তার ফলে ২০০৬-এর ডিসেম্বরে ঐতিহাসিক বনাধিকার আইনটি পাশ হয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের আদিবাসী-অরণ্যবাসীরা এই আইনের যথাযথ রূপায়ণের দাবী তুলে, শান্তিপূর্ন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, আইন রূপায়ণে যথেচ্ছ সরকারী বেনিয়ম নিয়েও প্রতিবাদ তীব্রতর হয়েছে।

    এই আন্দোলনের অংশ হিসাবে এবং বনাধিকার আইনের ৫ নং ধারা অনুয়ায়ী উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসী-অরণ্যবাসী নিজেদের এলাকায় গ্রাম-সভা বানিয়ে এক গণ বন-পরিচালন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেন।অবিশেষত জলপাইগুড়ি জেলার চিলাপাতা বনাঞ্চলের আদি অধিবাসী রাভা জনজাতির মানুষ এলাকার বনাঞ্চলে বনলুঠ এবং দুর্বৃত্তদের যথেচ্ছ প্রবেশ রুখতে যে ব্যবস্থা ইত্যাদি নেন তা সরকারী বনবিভাগের এবং স্থানীয় কাঠ-মাফিয়াদের কাছে বিপদসংকেত হিসাবে যায়। ২০০৮-এর ১১ই নভেম্বর সংগঠনের বর্তমান সহ-আহ্বায়ক আলিপুরদুয়ার কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সুন্দর সিং রাভা ও অন্যান্যরা স্থানীয় গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। এর পর থেকেই সুন্দর ও সংগঠনের অন্যান্য কর্মীদের নানা ভাবে ভয় দেখানো হতে থাকে।

    এতদসত্ত্বেও চিলাপাতা এলাকায় বন-আন্দোলন ক্রমশ তীব্রতর হয়, এবং গ্রামবাসীরা বনবিভাদের জঙ্গল-কাটাই বন্ধ করে দেন।

    চিরকাল পায়ের-তলা-থাকা রাভা বনবস্তিবাসীদের এই উত্থান বনবিভাগের সাহেবদের সহ্য হয় নি। ২০১০-এর ৮ই এপ্রিল, মধ্যরাত্রে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ কুরমাই বনবস্তিতে ঢুকে সুন্দর সিং-এর বাড়িতে হানা দেয়। কোনো কারণ না দেখিয়ে, তাঁর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা না বলে তাঁকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়। সুন্দরের চেঁচামেচিতে এলাকার লোক জড় হয়ে যায়, এবং পুলিশ সুন্দরকে নিয়ে যেতে পারেনা। সুন্দরকে পুলিশ ধরতে এসেছিলো ২০০৮-এর ১১ই নভেম্বরের ঘটনায়, যে ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ সুন্দরকে বেপরোয়া মারধোর করে তাদেরই অভিযোগের ভিত্তিতে(কেস নং ৫০৪/০৮--ধারা ৩৪১,৩২৩,৫০৬)। এই কেসে আলিপুরদুয়ার এসডিজীম আদালত থেকে সুন্দরের জামিন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ সুন্দরের(সেই সঙ্গে সুন্দরের বাবা মণীন্দ্র রাভা ও অন্যান্য গ্রামবাসী,যাদের নাম নেই) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার আটকানোর চেষ্টা, পুলিশের কাজে বাধাদান ইত্যাদি অভিযোগে আবার নতুন মামলা দায়ের করে(কেস নং ১০৪/১০ তারিখ ৮/৪/১০--ধারা ১৪৩,১৮৬,৩৫৩,৫০৬)। ২৪শে এপ্রিল বিকেলে আলিপুরদুয়ার থানার আইসি আবার সুন্দরের বাড়িতে ঢোকেন,সুন্দর ধরা না দিলে গ্রামে সিআরপি নামানোর হুমকি দেওয়া হয়,আলিপুরদুয়ারের এসডিপিও আমাদের সংগঠনকে জানান,তাঁরা(পুলিশ) সুন্দরকে ধরতে বদ্ধপরিকর,এটা পুলিশের সম্মানের প্রশ্ন, সুন্দরকে তাঁরা অন্তত পাঁচ বছর জেল খাটাবেন, দেখে নেবেন ইত্যাদি,পুলিশকে জ্ঞচ্যালেঞ্জঞ্চ করার ফল তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

    ক্রমশ দেখা যায়, সুন্দর ছাড়াও সংগঠনের আরো নানান নেতৃস্থানীয় রাভা কর্মীর বিরুদ্ধে নানান মিথ্যা মামলা করে রাখা হয়েছে। ১১ই নভেম্বর ২০০৮-এ, সুন্দরের উপর হামলার ঠিক আগে কোদাল বস্তি গ্রামসভার পক্ষ থেকে জংঙ্গলে বে-আইনী প্রবেশের অভিযোগে একটি বালি-ভর্তি ট্রাককে(ট্রাক্টির কাছে বনবিভাগের ট্রানসিট পাস বা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিলো না) আটকানো হয়,যার মালিক অনিল কার্জি,যে স্বয়ং পরবর্তী হামলার নেতৃত্ব দেয়। এই ট্রাক আটকানোর ঘটনাটিকে জ্ঞঅপরাধঞ্চ বানিয়ে কোদাল বস্তির অজয় রাভা ও শ্যামল রাভার নামে জামিন-অযোগ্য ধারা সহ একাধিক ধারায় মামলা আনা হয়েছে(কেস নং--২১৪/০৮--ধারা ৩৪১,৩৫৩,৫০৬)। ২০০৯-এর আর একটি ঘটনায় আন্দু বস্তির কানাই রাভা, রবি রাভা এবং কাজিব রাভার নামে ঐ রকমই এক মামলা দায়ের করা হয়েছে(কেস নং--৫১৮/০৮ ধারা ৩৪১,৩৫৩,৩৭৯,৩৪৯)। এঁদের জ্ঞঅপরাধঞ্চ কি তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়াও আরো মামলা থাকতে পারে। পুলিশ এবং বনবিভাগ যেহেতু বনাধিকার আইন অনুযায়ী কৃত গ্রামসভার যে কোন কাজকেই জ্ঞঅপরাধঞ্চ বানিয়ে ফেলতে পারে, এ জাতীয় অগুন্তি মামলা থাকাই সম্ভব।

    প্রশ্ন এই,পুলিশের কাজ কি? দায়িত্বশীল সমাজকর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা সাজানো, তাঁদের নানাভাবে শাসানো, উত্যক্ত করা? আদিবাসী-অরণ্যবাসীদের আক্রমণ করা, তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার হনন? দীর্ঘদিনের বঞ্চনার পর যখন অবশেষে অরণ্যের অধিকার আইনস্বীকৃত, তা জোর করে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, অস্বীকার করা?

    চিলাপাতার পাশের বক্সা এলাকায় বনবিভাগের কর্মীদের বেপরোয়া এবং বে-আইনী একের পর এক রাভা মারা গেছেন। গত কয়েক বছর ধরে এই হত্যাকান্ড চলছে,জঙ্গল বাঁচানোর জন্য নাকি এই হত্যাকান্ড জরুরী। চিলাপাতায় যখন স্থানীয় রাভা মানুষ অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়ে জঙ্গল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, তাঁদের উপর পুলিশী হামলা চলছে। এই আক্রমণ কার স্বার্থে?

    উত্তরবঙ্গের জঙ্গলের প্রকৃত মালিকদের অন্যতম, এই এলাকার আদি অধিবাসী রাভা জনজাতির উপর, দীর্ঘদিন ধরে শোষিত ও বঞ্চিত নিরীহ বনবস্তিবাসীদের উপর, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর এই সুপরিকল্পিত পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠন দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে যেতে চায়। হাজার প্ররোচনা সত্ত্বেও এই আন্দোলন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ থাকবে।

    এই আন্দোলনে আমরা আপনার/আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা চাইছি।

    ধন্যবাদান্তে

    লালসিং ভুজেল
    সুন্দর সিং রাভা

    আহ্বায়ক

    রাষ্ট্রীয় বন-জন শ্রমজীবী মঞ্চ
    উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক সমিতি

    উত্তরবঙ্গের রাভা জনজাতির উপর পুলিশী আক্রমণের প্রতিবাদ করুন!
    আদিবাসী-অরণ্যবাসীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান!


    ২৭শে এপ্রিল, ২০১০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ২৭ এপ্রিল ২০১০ | ৪৩৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন