এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • দারিদ্র্য কমছে ভাল কথা; অপুষ্টি বাড়ছে কেন?

    দীপঙ্কর বসু ও দেবর্ষি দাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ | ১৫১১ বার পঠিত
  • দারিদ্র্য বা গরীবি আমাদের দেশে মাপা হয় ব্যয়ক্ষমতা দিয়ে। কত টাকা খরচ করলে ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো মেটানো যায় প্রথমে তার একটা হিসেব করা হয়। তারপর সমীক্ষা করে দেখা হয় ক’জন সেই পরিমাণের বা তার বেশি টাকা খরচ করতে সক্ষম। যারা পারেন না তারা দরিদ্র। দরিদ্রেরা দেশের জনসংখ্যার কত শতাংশ তার হিসেব করলে গোটা দেশের গরীবির ধারণা পাওয়া যায়। এই সংখ্যাকে বলে হেড কাউন্ট রেশিও (HCR)।   

    গত দু’দশকে ভারতের HCR দ্রুত কমে এসেছে। আর্থিক সংস্কার (মানে ১৯৯১-এর পর থেকে নয়াউদারনীতির প্রয়োগ) যে সফল হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে প্রায়শ এই HCR কমে আসার কথা বলা হয়। কী রকম কমেছে একটা ধারণা করে নেওয়া যাক। শহর অঞ্চলগুলোতে HCR কমেছে ৩২% (১৯৯৩-৯৪) থেকে ২১%-এ (২০০৯-১০)। গ্রামীণ এলাকায় কমেছে আরো দ্রুত হারেঃ  ৫০% থেকে ৩৪%, একই সময়সীমায়। প্ল্যানিং কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০-এর পরের দু’বছরে সারা দেশের HCR আরো ৮% কমেছে। ফলে ২০১১-১২-তে দারিদ্র্যের হার ২২%-এ নেমে এসেছে। সরকারি নীতি যারা ঠিক করেন তাঁরা, এবং তাঁদের সেনাপতি কাগজ-টিভিওয়ালারা, গরীবির ওপর জোরদার ধাক্কা নিয়ে প্রভূত আপ্লুত। অর্থাৎ, খুব তো শাইনিং ইন্ডিয়া শাইনিং ইন্ডিয়া করে গালমন্দ দিলে। এই দেখ প্রমাণ, আর্থিক সংস্কার সত্যি সত্যি ভাল কাজ করছে। না না, জনপ্রতি আয়-ফায় বাড়ার কথা বলছি না। সে তো মুকেশদা, রতনকাকুরা বেশি কামালে দেশের জনপ্রতি আয় বেড়ে যাবে, তাতে রামা কৈবর্তের কী এল গেল। ওসব ছেঁদো তর্ক থাক। সংস্কারের সুফল এক্কেবার নিচুতলায় পৌঁছোচ্ছে, বুঝেছ? 

    গরীবি কমা নিয়ে এই তক্কো কিন্তু আরেক প্রস্থ তথ্যের সামনে পড়ে কিঞ্চিৎ সমস্যায় পড়ে। এই তথ্য হ’ল ভারতের অপুষ্টি ও খিদে সংক্রান্ত (আমরা এই প্রবন্ধে ক্যালরির অপ্রতুলতা = অপুষ্টি ধরে এগোচ্ছি)। সচরাচর আমাদের দেশে শহর ও গ্রামে ন্যূনতম ক্যালরির প্রয়োজন ধরা হয় জনপ্রতি ২১০০ ও ২৪০০, যথাক্রমে।  সংখ্যাগুলোকে পুষ্টি ও অপুষ্টির বিভাজিকা রেখা ধরে নিলে নিচের উদ্বেগজনক ছবি ফুটে ওঠে। ১৯৯৩-৯৪ সালে শহরাঞ্চলে ৫৮% লোক অপুষ্টিতে ভুগতেন। ২০০৯-১০ সালে সংখ্যাটা ৭০%-এ গিয়ে পৌঁছোয়। গ্রামের অবস্থা আরো আশঙ্কাজনক। ১৯৯৩-৯৪ সালেই ৭১% লোক অপুষ্টিতে ভুগতেন। ২০০৯-১০ সালে বেড়ে হয় ৯০%।

    তথ্যগুলো নিঃসন্দেহে ধাঁধার মত। এক আর দুই নম্বর ছবিতে সময়ের সাথে সাথে গরীবি আর অপুষ্টির হার কীভাবে বদলেছে তার গ্রাফ দেওয়া হয়েছে। সময়সীমা ১৯৮৩ থেকে ২০০৯-১০। প্রথমেই যা অবাক করে তা হল গরীবি আর অপুষ্টি একেবারে উল্টোদিকে দৌড় দিয়েছে। প্রথমটা কমেছে, কিন্তু দ্বিতীয়টা বেড়েছে। এই বিপরীতগতি বা ডাইভার্জেন্স বেশি দেখা গেছে আর্থিক সংস্কারের সময়ে। মজার ব্যাপার হল বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে বিশেষ উচ্চবাচ্য শোনা যায় নি। অথচ এই বিপরীতগতি কোনো নতুন আবিষ্কার নয়। যে অর্থনীতিবিদরা এর ওপর লেখালিখি করেছেন তার মধ্যে জয়া মেহতা (২০০৪), রঞ্জন রায় (২০০৫), উৎসা পট্টনায়েক (২০০৭), সুব্রামানিয়ান (২০১৩) অন্যতম। কেন বিপরীতগতি প্রশ্নে ঢোকার আগে কী পাওয়া গেল একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাকঃ তথ্য বলছে ভারতে ব্যয়ভিত্তিক গরীবি কমেছে, অথচ ক্যালরির নিরিখে মাপা অপুষ্টি বেড়েছে।

     

    ছবি একঃ ভারতের গ্রামাঞ্চলে গরীবি ও অপুষ্টি, ১৯৮৩ থেকে ২০০৯-১০। (সূত্রঃ Deaton and Drèze, 2009; GOI, 2009, এবং প্ল্যানিং কমিশনের ওয়েবসাইটঃ http://planningcommission.nic.in/news/press_pov1903.pdf)


    ছবি দুইঃ  ভারতের শহরাঞ্চলে গরীবি ও অপুষ্টি, ১৯৮৩ থেকে ২০০৯-১০। (সূত্রঃ Deaton and Drèze, 2009; GOI, 2009, এবং প্ল্যানিং কমিশনের ওয়েবসাইটঃ http://planningcommission.nic.in/news/press_pov1903.pdf)

    স্বেচ্ছা না শোষণ?

    গরীবি ও অপুষ্টির বিপরীতগতি প্ল্যানিং কমিশনের গরীবি মাপার পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। আমরা এই প্রবন্ধে সে আলোচনাতে যাচ্ছি না। বরং গরীবি ও অপুষ্টির উল্টোদিকে যাত্রার রহস্য নিয়ে কয়েকটা কথা বলা যাক। ব্যয়ভিত্তিক গরীবি কমেছে। এর মানে লোকের হাতে বেশি ক্রয়ক্ষমতা এসেছে। গড়পরতা খরচ বেশি হচ্ছে। এটা ঠিক যে সময়ের সাথে সাথে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। তবে দাম বাড়া ধরে নিয়েই হিসেবগুলো করা হয়েছে। অর্থাৎ তথ্য বলছে লোকে মূল্যবৃদ্ধির জন্য বেশি টাকা খরচ করছে তো বটেই, কিন্তু তার ওপরও বেশি খরচ করছে। 

    কিন্তু, গড়পরতা খরচ বাড়লেও ক্যালরি গ্রহণ কমেছে। লোকে বেশি খরচ করছে তবে পুষ্টিকর খাবারে খরচ করছে না। তাই খিদে হয়তো বেড়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ নরেনভাইয়ের বক্তব্য  অনুযায়ী মেয়েরা নাকি দেহসৌষ্ঠবের জন্য ডায়েটিং করে ভুখা থাকছে। সেসব থাক। আপাতত, আমরা এই রহস্যের নাম দিচ্ছি ক্যালরি হেঁয়ালি। এর একটা পোষাকি ইংরিজি নাম আছে, ক্যালরি কনসাম্পসন পাজ়ল।

    ক্যালরি হেঁয়ালিকে বোঝার জন্য দুটো আলাদা বিষয়কে শনাক্ত করে নেওয়া যাক। এক, লোকে কি কম খাবার খাচ্ছে যদিও তারা বেশি খেতে আর্থিকভাবে সক্ষম? দুই, লোকে কি কম পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে যদিও তারা বেশি পুষ্টিকর খাবার খেতে সক্ষম? লক্ষ্য করুন প্রশ্নদুটো একধরনের মনে হলেও আসলে আলাদা। এরকম হতে পারে একজন লোক বেশি খাবার খাচ্ছে, কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্নের উত্তর না হবে, কিন্তু দ্বিতীয়টার উত্তর হ্যাঁ হবে। 

    এ্যাঙ্গাস ডিটন ও জঁ দ্রেজ়ের মত গবেষকরা প্রথম প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। ওনাদের মতে, লোকে কম ক্যালরি খাচ্ছে কেননা ক্যালরির প্রয়োজন কমে আসছে (Deaton and Drèze, 2009)। ক্যালরির প্রয়োজন কেন কমেছে? এক, পেশার বিন্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। কৃষির মত খাটাখাটনির পেশার থেকে অন্য পেশায় লোকে চলে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কৃষিতে কায়িক শ্রমের বদলে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। তিন, এপিডেমোলজিকাল এনভায়রনমের্ন্ট, মানে রোগভোগের বাতাবরণে উন্নতি ঘটেছে। লোকে কম ভুগছে, ফলে কম ক্যালরি দরকার হচ্ছে। চার, ফার্টিলিটি কমছে, মহিলাদের কম বাচ্চা মানুষ করতে হচ্ছে। ঘরোয়া কাজকম্মে যন্ত্র চলে আসছে (ধরুন ওয়াশিং মেশিন)। এগুলোও ক্যালরির প্রয়োজন কমিয়ে দিয়েছে। মোটমাট, লোকে স্বেচ্ছায় কম খাবার খাচ্ছে তাই জনপ্রতি কম ক্যালরি খাওয়া হচ্ছে।

    দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলোর মত অর্থনীতিবিদরা বলছেন লোকে দামি ও মুখরোচক খাবার কিনছে। বিস্বাদ কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্য কিনছে না। পুওর ইকনমিকস নামে বইয়ে ওনারা লিখছেন, “অত্যন্ত গরীব মানুষ যখন খাবারের পেছনে একটু বেশি খরচ করার সুযোগ পায়, সে আরো বেশি ক্যালরি পাওয়ার জন্য পুরো টাকাটা খরচ করে না। বরং আরেকটু ভাল খাবার জন্য, বেশি দামি ক্যালরির পেছনে খরচ করে” (Banerjee and Duflo, 2011, pp. 23)। ৪ জানুয়ারি ২০১২-এর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে অভিজিৎবাবু একই ধরনের কথা বলেছেন (Banerjee, 2012)।

    আমরা এই দুই ধরনের জবাব নিয়ে ঈষৎ সন্দিহান। সচরাচর কোনো দেশে বেশি আয় আসার সাথে পেশার বিন্যাসে পরিবর্তন আসে। কৃষি থেকে বড় পরিমাণ লোক শিল্প বা পরিষেবাতে চলে যায়। সাথে সাথে রোগভোগের বাতাবরণের উন্নতি ঘটে, ফলে কলেরাজাতীয় আন্ত্রিক রোগের প্রকোপ কমে আসে। মহিলাপিছু সন্তানের সংখ্যা কমে, ঘরকন্নার কাজের যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ে। কিন্তু এইসবের সাথে সাথে ক্যালরিগ্রহণের হার কমে না। বরঞ্চ বাড়ে। ভারতে যদি উলটো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, এখানে ব্যতিক্রমী কিছু একটা ঘটছে। স্বেচ্ছায় কম ক্যালরি খাওয়ার দ্রেজ়দের ব্যাখ্যাকে আরো যত্নের সাথে পরীক্ষা করা উচিত এইটুকু অন্তত বলা যায়।

    সাম্প্রতিক গবেষণায় দীপঙ্কর তার সহগবেষক অমিত বাসোলের সাথে এই পরীক্ষাটা করেছে (Basu and Basole, 2012)। এই গবেষণা ক্যালরি হেঁয়ালির বিকল্প ব্যাখ্যা দিচ্ছে। বলছে, কম ক্যালরি গ্রহণের মূলে রয়েছে অর্থনীতির কাঠামোগত কারণ। স্বেচ্ছায় না, গরীব কম ক্যালরির খাবার খাচ্ছে কারণ সে খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় অ-খাদ্যের (মানে যা খাদ্য নয় ) ওপর খরচ করতে হচ্ছে। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, জ্বালানী, বিদ্যুৎ। ফলে খাদ্যের পেছনে খরচ করার টাকা থাকছে না। গত তিন দশকের তথ্য থেকে দেখতে পাচ্ছি লোকে ওপরে উল্লেখিত জিনিসপত্রের পেছনে আয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ খরচ করছে। খরচ এতটাই বেড়েছে যে, আয়ের যা বৃদ্ধি হয়েছিল গোটাটা এদের পেছনে চলে গেছে। এই ঘটনার নাম দেওয়া যায় ‘খাওয়া খরচে চাপ’ (‘food budget squeeze’), যার ফলে খাদ্যের পেছনে খরচ গত দু’দশকে মোটামুটি স্থির, অনড় হয়ে গেছে। খাওয়া খরচে চাপের পেছনের কারণগুলো কী? নিচে কয়েকটার আলোচনা করে নেব। লক্ষ্য করবেন কিছু কারণ শুধু চাপের পেছনে নেই, চাপ বাড়িয়েওছে।

    প্রথমত, মার্ক্সকথিত পুঁজির প্রাথমিক সঞ্চয়ের (primitive accumulation of capital) প্রক্রিয়া এই দেশে চলছে। চাষির হাত থেকে জমি কিনে নেওয়া হচ্ছে বা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। উচ্ছিন্ন করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন, পুকুর, চারণভূমি, নদীর মত সবার জন্য ব্যবহারের প্রাকৃতিক সম্পদকে (common property resources) ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিবর্তিত করে ফেলা হচ্ছে। লোকের ভূমিহীনতা যত বাড়ছে খাদ্যের ওপর অধিকার কমছে। আবার সাধারণ সম্পদের ব্যক্তিগতকরণের ফলেও কিন্তু গরীবের পক্ষে খাদ্য আহরণ করা কঠিণ হয়ে উঠছে। এমন খাদ্য যা বাজারের পরিধির বাইরে থেকেই পাওয়া যেত, মুদ্রামূল্যে কিনতে হত না, হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।

    দুই, পেশার বিন্যাসে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। গ্রামের থেকে শহরে বা অন্য গ্রামের দিকে শ্রমিকের স্রোত বেড়েছে। কাজের খোঁজে এই প্রব্রজন প্রায়শই হয় কয়েক মাসের জন্য, সাময়িক। লম্বা লম্বা দূরত্ব শ্রমিকদের পার হতে হচ্ছে। দেশজুড়ে দিনমজুরদের ঘূর্ণিপাক তাদের খরচের ওপর প্রভাব ফেলে। যত বেশি দিনমজুর এই মিছিলে যোগ দিচ্ছে, পরিবহণের পেছনে খরচ বেশি হচ্ছে। ঠিক কখন যেতে হবে ক’জন লাগবে এরকম গুরুত্বপূর্ণ খবর জানার জন্য মোবাইল ফোনে কাজের জায়গার সাথে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে। আবার, যখন কাজের জন্য ঘুরে বেরাচ্ছে, নিজের গ্রামের অ-বাজারীয় খাদ্যের উৎস পাচ্ছে না।  

    তিন, সামাজিক খাতে সরকারি খরচ কমে আসছে। ফলে গ্রামে বা শহরের গরীবদের বহু অতি-প্রয়োজনীয়  পরিষেবার জন্য বাজারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বাজারে দাম সাধারণত বেশি। আশির দশকের মাঝ থেকে আর্থিক সংস্কার শুরু হয়েছিল, নব্বুই দশকের প্রথম থেকে তার জোর বাড়ে। সংস্কারের সমর্থকেরা অনেক সময় স্বীকার করেন না যে সংস্কারের পর অতি-প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর তুলনামূলক দাম কমে নি। উদাহরণ হিসেবে চিকিৎসা, শিক্ষা, পরিবহণ নিতে পারি। ১৯৮৩ থেকে ২০১০-এর তথ্য বলছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম এই পরিষেবাগুলোর তুলনায় খানিকটা কমেছে – পরিষেবাগুলো বেশি দামি হয়ে পড়ছে (কৃষিশ্রমিকের ক্রেতামূল্য সূচক বা CPIAL, consumer price index of agricultural labourers ব্যবহার করা হচ্ছে)। গরীবকে অতি-প্রয়োজনীয় বস্তু বা পরিষেবা বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, যার ফলে খাবার খরচে চাপ পড়ছে।

    চার, টিভি, রেডিও, খবরের কাগজে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের প্রভাবকে খাটো করে দেখা উচিত নয়। বিত্তবানের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবি মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। আগে সহজলভ্য ছিল না এরকম খাদ্যসামগ্রী বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। ফলত, গরীবের খাদ্যে বৈচিত্র্য এসেছে। শস্তা ক্যালরির (শস্য) তুলনায় দামি ক্যালরি কেনা হচ্ছে (মাংস, ডিম, দুধ, মাছ)।

    সংক্ষেপে,  কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণ বহুবিধ। খাবার খরচের ওপর চাপ পড়েছে, বাজার-বহির্ভূত খাদ্যের উৎস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খাবারে বৈচিত্র্য আসছে। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রথমটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, অভিজিৎ ব্যানার্জী ও এস্থার ডুফলো যা বলেছেন তা সত্যি, দামি কিন্তু কম ক্যালরির খাবারে খরচ বাড়ছে। কিন্তু ক্যালরি হেঁয়ালি সমাধানে ওনাদের ব্যাখ্যা ‘খাবার খরচে চাপ’ (food budget squeeze) ব্যাখ্যার তুলনায় কমজোরি। দীপঙ্কর ও অমিতের প্রবন্ধ (Basole and Basu, 2012) বলছে খাবারে বৈচিত্র্যের প্রভাব কখনোই সংখ্যাতাত্বিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ (statistically significant) নয়। অন্যদিকে খাবার খরচ কমে যাওয়ার প্রভাব যে গুরুত্বপূর্ণ এটা সব ধরনের মডেল স্পেসিফিশনেই পাওয়া যাচ্ছে।  অর্থাৎ গত দুই দশকে আয় ও ব্যয় বেড়েছে সত্যি; কিন্তু সেই বৃদ্ধি একসাথে পুষ্টিকর খাবারের খরচ এবং অন্যান্য অতি-প্রয়োজনীয় পরিষেবা কেনার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

    শেষ করার আগে খাদ্য বৈচিত্র্য নিয়ে দু’খান কথা হয়ে যাক। ধরে নিলাম, অভিজিৎবাবুরা যা বলছেন সত্যি। গরীব মানুষ পুষ্টিকর স্বাদহীন খাবার বাদ দিয়ে মুখরোচক কম পুষ্টির খাবার কিনছে। যদি তাই হয়, ঠিকঠাক সরকারি নীতি কী হওয়া উচিত? বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা বলে লোকে প্রায়শ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। হয়তো তাদের কাছে ঠিক খবর নেই, তারা জানে না কোন খাবারে কী গুণ। বা, অনেক সময় দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা করার ক্ষমতাও থাকে না। এসব ক্ষেত্রে সঠিক দিকে খানিকটা ঠেলে দিলে কিন্তু সুফল পাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিকর খাদ্য মুখরোচক খাবারের থেকে কম দামে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা যায়। এই দুই খাবারের মধ্যে দামের পার্থক্য রাখা দরকার। ফারাক থাকলে গরীব লোক কমদামি পুষ্টিকর খাবারের দিকে ঝুঁকবে। অর্থাৎ দাম কম রেখে সরকার লোককে ইনসেন্টিভ দিচ্ছে, একটু ঠেলে দিচ্ছে, যাতে তারা পুষ্টিকর খাবার খায়। এই ব্যবস্থাকে কাজ করাতে গেলে সবল ও সার্বজনীন (universal) গণবন্টন ব্যবস্থা চাই। হালে কেন্দ্র সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইন পাস করল, খুব হইচই শোনা গেল। আইনে গণবন্টনকে কিন্তু সার্বজনীন করা হয় নি। ভোটের চোঙা ফুঁকতে কাজে লাগতে পারে, নতুন আইনে অপুষ্টির সমস্যার সুরাহা হবে না। 


    প্রবন্ধ, বইয়ের সূত্রঃ

    Banerjee, A (2012): "দু'টাকায় চাল দিলেই অপুষ্টি কমবে না, গরীব মানুষের জন্য আর একটু যত্ন নিয়ে ভাবতে হবে' আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ জানুয়ারী।

    Banerjee, A., and Duflo, E (2011): Poor Economics: A Radical Rethinking of the Way to Fight Global Poverty. Public Affairs: New York.

    Basu, D., and Basole, A (2012): “The Calorie Consumption Puzzle in India: An Empirical Investigation”, Working Paper 285, Political Economy Research Institute, University of Massachusetts, Amherst. ডাউনলোড করুন:

    http://www.peri.umass.edu/fileadmin/pdf/working_papers/working_papers_251-300/WP285.pdf 

    Deaton, A., and Drèze, J (2009): “Food and Nutrition in India: Facts and Interpretations”, Economic and Political Weekly, Feb 14.

    Government of India (GOI) (2009): Nutritional Intake in India. NSS 66th Round. July 2009 – June 2010. Government of India . Ministry of Statistics and Programme Implementation. National Sample Survey Office.

    Mehta, J (2004): “Poverty in India”, in Alternative Economic Survey 2003-04. ডাউনলোড করুনঃ http://www.saunalahti.fi/otammile/povindia.htm

    Patnaik, U (2007): “Neoliberalism and Rural Poverty in India”, Economic and Political Weekly, July 28 – August 3.

    Ray, R (2005): “Changes in Food Consumption and the Implication for Food Security and Undernourishment: India in the 1990s”, Development and Change, 38(2): 321-343.

    Subramanian, S (2013): The Poverty Line. Oxford India Short Introductions. Oxford University Press: New Delhi. 

    (লেখাটি EPW তে প্রকাশিত প্রবন্ধের অনূদিত ও পরিবর্তিত রূপ )


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ | ১৫১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pinaki | 93.180.243.109 (*) | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৮:২৪88750
  • ভীষণ ভালো আর জরুরী কাজ। দীপংকর, অমিত, দেবর্ষিকে অনেক অনেক কুর্নিশ।
  • pinaki | 93.180.243.109 (*) | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৮:২৬88751
  • দ্রেজের সাথে এটা নিয়ে কি কোনো আলোচনা হয়েছে? খোলা মনের লোক হলে ওনার নিজের থিওরি রিভিউ করার কথা ভাববেন আশা করা যায়।
  • Blank | 69.93.255.161 (*) | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ০৮:৩৬88752
  • “The Calorie Consumption Puzzle in India: An Empirical Investigation”, পেপারটি ডাউনলোড করা যাচ্ছেনা। লিংক কাজ করছেনা।
  • a x | 138.249.1.194 (*) | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১০:০৫88753
  • মেইল আইডি দিলে পাঠায়ে দিচ্ছি।
  • sosen | 111.63.130.115 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০২:৪০88754
  • জরুরি, কিন্তু ছোট লেখা।
    আবছা মনে পড়ে ২০১৩র মাঝামাঝি কোনো একটা স্টাডি পড়েছিলাম যেখানে এই ইন্ডিয়ান ক্যালরি ডিবেটের মধ্যে " ফুড কনসিউমড আউটসাইড হোম" কম্পোনেন্ট নিয়ে কিছু কথা ছিল- গ্রামীণ ভারতের মানুষ বাড়ির বাইরে যে খাবার খায় তা প্রপারলি রেকর্ড করা হয় নি এখনো পর্যন্ত এবং এটা বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রেও সত্যি। এই নিয়ে কিছু জানতে পারলে ভালো লাগত।
  • Arpan | 126.202.114.140 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৩:৩৮88755
  • জরুরি লেখা এবং সুলিখিত।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৬:০৬88756
  • পার ক্যাপিটা ক্যালোরি ইনটেক


    কার্ব কমছে, প্রোটিন বাড়ছে -
  • blank | 122.79.37.65 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ ০৬:১৮88757
  • dwaipayan.basu জিমেল
  • h | 24.96.13.203 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৪ ০৪:০৪88759
  • খুব ভালো লেগেছে। অনেক কিছু শিখলাম।

    ক - কালে কালে যেন এ এমন পত্রিকা হয়ে ওঠে , যেখানে অর্থনীতিবিদ রা তাঁদের মূল ভাবনা গুলো মূল প্রবন্ধ করে লিখবেন, এবং অনুবাদ/পরিবর্তিত অনুবাদ বা রিপ্রিন্ট এর দরকার হবে না।

    খ - খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি , উৎপাদিত খাদ্যশস্যের উপরে বাড়তে থাকা বাজারের নিয়ন্ত্রন এর কথা যে বলছেন, আমি জানতে আগ্রহী, যে সাবসিস্টেন্স ফার্মিং কি কমে যাচ্ছে? এই প্রবন্ধের যুক্তি তে মনে হচ্ছে যাচ্ছে, তাহলে সেটা কি শুধু পুষ্টি হ্রাসের অন্যতম কারণ না, এক ই সংগে কৃষি জমির নতুন কনসোলিডেশন এর দিকে ইঙ্গিত করছে, বিশেষতঃ যেখানে আগে, জমির হোল্ডিং ছোটো হয়েছিল? রাজ্য/অঞ্চল বা শস্য-ভিত্তিক ডেটা কি আছে?

    গ - খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি কে বড় রিটেলার রা একটা স্তরে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, তো পৃথিবী তে অন্যত্র , যেখানে বড় রিটেলার আছে, সেখানে, পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে কি কি কাজ পড়বো?

    ঘ- অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এর আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রবন্ধ্টির মূল যৌক্তিক এম্ফাসিস ছিল, গরীব মানুষের বদভ্যাস সমূহ, তাই ওনার ঐ প্রবন্ধ টিকে যে আদৌ গুরুত্ত্ব দিয়েছেন সেটাই বিস্ময়কর। আর ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারের যে যুক্তি কে এখন আধার কার্ড ভিত্তিক গ্যাস বা অন্যান্য প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে রাখা হচ্ছে, তার ও নানা দুর্বলতার জায়গা রয়েছে। আনন্দবাজার রাজনইতিক কারণে এম্ফাসিস কে বদল করে দিয়েছে, সেটাও সম্ভব। তবে তাঁর অন্যত্র প্রকাশিত আকাদেমিক প্রবন্ধে ধরেই নেওয়া যায় এইসব ছেঁদো যুক্তি ব্যবহৃত হয় নি, এবং অন্যান্য প্রামান্য যুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।

    ঙ - নিম্ন মানের কম দামী খাবারের জগতে বৈচিত্র কতটা বা তার পুষ্টি গত গুণ কতটা, সেইটা সম্পর্কে কি কাজ হয়েছে জানতে পারলে ভালো হত।
  • ddt | 135.20.82.164 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:২৬88760
  • "...খাদ্যশস্যের উপরে বাড়তে থাকা বাজারের নিয়ন্ত্রন এর কথা যে বলছেন, আমি জানতে আগ্রহী, যে সাবসিস্টেন্স ফার্মিং কি কমে যাচ্ছে? এই প্রবন্ধের যুক্তি তে মনে হচ্ছে যাচ্ছে, তাহলে সেটা কি শুধু পুষ্টি হ্রাসের অন্যতম কারণ না, এক ই সংগে কৃষি জমির নতুন কনসোলিডেশন এর দিকে ইঙ্গিত করছে, বিশেষতঃ যেখানে আগে, জমির হোল্ডিং ছোটো হয়েছিল? রাজ্য/অঞ্চল বা শস্য-ভিত্তিক ডেটা কি আছে?"

    সাবসিসটেন্স ফার্মিং-এর সংজ্ঞা কী সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

    তথ্য অনুযায়ী, (১) কৃষি জমির পরিমান ভারতে কমে যাচ্ছে। (২) প্রান্তিক চাষিদের হাতে (এদের মাথাপিছু ১-২ হেক্টর জমি, সব চাষিদের ৮০% এরা) টোটাল জমির বর্ধিত পরিমান জমি আসছে (২৩%); কিন্তু এদের মাথাপিছু জমির পরিমান বাড়েনি। (৩) এই প্রান্তিক চাষিদের সাবসিস্টেন্স চাষি ধরে নিলে দেখা যাচ্ছে খালি চাষবাস দিয়ে এদের ঘর চলে না। মোট আয়ের <৫০% চাষ থেকে আসে। বাকি মজুরি, পশুপালন, ব্যবসা ইত্যাদি।

    অর্থাৎ, বলা যায়, সাবসিস্টেন্স চাষিরা মাটি কামড়ে টিঁকে আছে (যদিও ভূমিহীনের পরিমান বাড়ছে)। কিন্তু চাষ তাদের ভরণপোষণ করতে পারছে না। সেই অর্থে সাবসিস্টেন্স ফার্মিং-এর গুরুত্ব কমে আসছে। এক কারণে কমে আসছে পুষ্টিকর খাদ্যের পরিমানও (উদাঃ সিসনাল মাইগ্রেশন জনীত)। জমি কনসলিডেশনের ওভারঅল ট্রেন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো রাজ্যে, যেমন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট, খানিকটা কনসলিডেশন দেখা গেলেও সর্বভারতীয় প্রবণতা জোত ভাঙার দিকে।

    "গ - খাদ্য দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি কে বড় রিটেলার রা একটা স্তরে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, তো পৃথিবী তে অন্যত্র , যেখানে বড় রিটেলার আছে, সেখানে, পুষ্টির অবস্থা সম্পর্কে কি কি কাজ পড়বো?"

    এই প্রবন্ধে এরম কিছু ধরা হয় নি।

    "ঘ- অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এর আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রবন্ধ্টির মূল যৌক্তিক এম্ফাসিস ছিল, গরীব মানুষের বদভ্যাস সমূহ, তাই ওনার ঐ প্রবন্ধ টিকে যে আদৌ গুরুত্ত্ব দিয়েছেন সেটাই বিস্ময়কর। আর ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারের যে যুক্তি কে এখন আধার কার্ড ভিত্তিক গ্যাস বা অন্যান্য প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে রাখা হচ্ছে, তার ও নানা দুর্বলতার জায়গা রয়েছে। আনন্দবাজার রাজনইতিক কারণে এম্ফাসিস কে বদল করে দিয়েছে, সেটাও সম্ভব। তবে তাঁর অন্যত্র প্রকাশিত আকাদেমিক প্রবন্ধে ধরেই নেওয়া যায় এইসব ছেঁদো যুক্তি ব্যবহৃত হয় নি, এবং অন্যান্য প্রামান্য যুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।"

    অভিজিৎবাবুদের বক্তব্য রেশনে চাল গম দিলেই লোকে তা পুষ্টিকর খাদ্য বিবেচনা করে খেয়ে নেবে এরকম মনে করার কারণ নেই। লোকে স্বাদ চায়। যদি তার জন্য পুষ্টি বিসর্জন দিতে হয় দেয়ও। বদ-ফদ বলার কারণ নেই। বরং সরকারি নীতি মানুষের চয়নের ধরনের সাথে খাপ খাইয়ে তৈরি করার দিকে জোর দিতে বলছেন ওনারা। এই যুক্তির মধ্যে ছেঁদোমি কী আছে বুঝলুম না। পুওর ইকনমিক্সে ('অন্যত্র প্রকাশিত আকাদেমিক...') একই কথা বলেছেন তো। ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফারে গোলমাল আছে এই বিষয়ে একমত।

    "ঙ - নিম্ন মানের কম দামী খাবারের জগতে বৈচিত্র কতটা বা তার পুষ্টি গত গুণ কতটা, সেইটা সম্পর্কে কি কাজ হয়েছে জানতে পারলে ভালো হত।"

    নো আইডিয়া।
    মন্তব্যসমূহের জন্য থ্যাঙ্কু। :)
  • ddt | 135.20.82.164 (*) | ৩০ জানুয়ারি ২০১৪ ০৭:২৮88761
  • সংশোধনঃ
    "এদের মাথাপিছু 0-১ হেক্টর জমি"
    হবে।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১১ আগস্ট ২০১৫ ০৭:২৫88762
  • ফেসবুকে এই লেখাটি নিয়ে কিছু আলোচনা হয়। তারপর স্মিতা মিশ্র এই পোস্টটি করেন, এখানে দিতে অসুবিধে হওয়ায় ওঁর হয়ে আমি দিয়ে দিলাম। উনি জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল লেখা বাংলায় লিখতে স্বচ্ছন্দ নন, তাই অগত্যা ইংলিশেই।

    Smita Mishra: Calorie-consumption puzzle in India: a critical rejoinder (part 1)
    This is, initially, in response to this popular-level note in Bengali: দারিদ্র্য কমছে ভাল কথা; অপুষ্টি বাড়ছে কেন?(http://www.guruchandali.com/…/2014/01/23/1390500936907.html…) by Deepankar Basu and Debarshi Das. However, this plans to go beyond this popular-level piece.
    Let us first make a couple of comments on this note (in Bengali). It addresses the well-known calorie-consumption puzzle and makes a rather tall claim: namely, "কম ক্যালরি গ্রহণের মূলে রয়েছে অর্থনীতির কাঠামোগত কারণ। স্বেচ্ছায় না, গরীব কম ক্যালরির খাবার খাচ্ছে কারণ সে খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় অ-খাদ্যের (মানে যা খাদ্য নয় ) ওপর খরচ করতে হচ্ছে। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, জ্বালানী, বিদ্যুৎ। ফলে খাদ্যের পেছনে খরচ করার টাকা থাকছে না। ... কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণ বহুবিধ। খাবার খরচের ওপর চাপ পড়েছে, বাজার-বহির্ভূত খাদ্যের উৎস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খাবারে বৈচিত্র্য আসছে। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রথমটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।" As the authors explicitly state, this bold conclusion--that the structural changes in Indian economy has been COMPELLING PEOPLE INVOLUNTARILY to diminished consumption of caloties--is not a product of their original researh. This is based, by their own admission, on the following paper: "Basu, D., and Basole, A (2012): “The Calorie Consumption Puzzle in India: An Empirical Investigation”, Working Paper 285, Political Economy Research Institute, University of Massachusetts, Amherst."
    However, the Basu and Basole (2012) is technically deficient to ACTUALLY DEMONSTRATE such a conclusion. Since in a current and substantially altered published version of their paper (Basole and Basu, 2015) the authors admit this candidly, I have little to add. I merely quote them with a couple of brief comments.
    Quote 1: "Basu and Basole (2012) had used a state-level pseudo-panel dataset to investigate the calorie consumption puzzle. ... But the empirical analysis had two shortcomings. First, by using state-level aggregation, they were not using information available at the household level. Second, the empirical model did not allow them to cleanly identify the effect of non-food expenditures on calorie intake. Since expenditure on food and non-food items are jointly determined by households, their key explanatory variable of interest is potentially endogenous." (Basole and Basu (2015), p. 83).
    Any person who has studied quantitative social science even at advanced undergraduate level would realize how damaging the second admission is. It simply says that Basole and Basu (2012) COULD NOT CLAIM the conclusion quoted above in Bengali. I intended to have a comment on their sample construction as well, but since they have dumped it altogether in the altered version of their research that is redundant.
    But the question arises whether in the altered version of their paper they are able to show that "কম ক্যালরি গ্রহণের মূলে রয়েছে অর্থনীতির কাঠামোগত কারণ। স্বেচ্ছায় না, গরীব কম ক্যালরির খাবার খাচ্ছে কারণ সে খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় অ-খাদ্যের (মানে যা খাদ্য নয় ) ওপর খরচ করতে হচ্ছে। যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, জ্বালানী, বিদ্যুৎ। ফলে খাদ্যের পেছনে খরচ করার টাকা থাকছে না। ... কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণের কারণ বহুবিধ। খাবার খরচের ওপর চাপ পড়েছে, বাজার-বহির্ভূত খাদ্যের উৎস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, খাবারে বৈচিত্র্য আসছে। এই কারণগুলোর মধ্যে প্রথমটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।" etc ?
    Unfortunately, no.
    First, Basole and Basu give up on analyzing the effect of any essential items of consumption other than fuel (on which I plan to dwell in detail in a second part) and concentrate on the impact of expenditure on fuel only.
    Quote 2: "It is also worth emphasizing that we focus on fuel expenditure because the data allow us to identify its causal effect more cleanly than the effect of other types of expenditures." (ibid, p. 92)
    In plain English, they still did not find a way to establish their intended thesis that EXOGENOUS increase in expenditure in non-food ESSENTIAL CONSUMABLES is COMPELLING people INVOLUNTARILY to lower their calorie intake.
    Quote 3: "We have interpreted the negative impact of real fuel expenditure on calorie intake as evidence for a squeeze on the food budget that prevents people from consuming the required amount of calories. But it could also be argued that stagnant spending on food and increased spending on non-food items is voluntary. On the basis of our analysis we cannot rule out voluntary factors..." (ibid, p. 93)
    In plain English: they cannot still establish "গরীব কম ক্যালরির খাবার খাচ্ছে কারণ সে খেতে বাধ্য হচ্ছে। "!
    Quote 4: "Without discounting the possible role of voluntary factors, we suggest that structural factors that are beyond the control of households are also important drivers of the observed calorie intake decline." (ibid, p. 94)
    Notice that what was forwarded as a conclusion before has become a mere suggestion.
    This suffices to show that this popular piece is misleading.
    In a second part of this note I plan to take up the deficiencies in Basole and Basu (2015), the revised and "improved" version of the original paper. In addition I plan to provide a set of concrete workable suggestion to explore whether "food budget squeeze" is actually working.
    References cited:
    Basu, D., and Basole, A (2012): “The Calorie Consumption Puzzle in India: An Empirical Investigation”, Working Paper 285, Political Economy Research Institute,
    University of Massachusetts, Amherst.
    Basole, A. and D. Basu (2015): "Fueling Calorie Intake Decline: Household Level Evidence from Rural India". WORLD DEVELOPMENT · APRIL 2015
  • smish | 186.12.107.140 (*) | ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:৫৫88763
  • Calorie-consumption puzzle in India: a critical rejoinder (part 2)

    Recall that in the previous part of this piece we dealt with the deficiencies present in Basole and Basu (2015) which were admitted by the authors themselves. In this part we get onto the shortcomings in the revised and published version of their work which they themselves failed to acknowledge (at least overtly).

    1. In the ostensible analysis of food budget squeeze, household budget itself is neglected:

    Recall that the goal of the authors was to explore the possibility of, if not to demonstrate, an involuntary squeeze on food BUDGET (owing to the penetration of neoliberal structural changes in the Indian economy). That is, their desired goal seemed to be to establish a story BEYOND the realm of household choices. Of course, then the first thing one should do toward that end is to look at the budget sets of the households themselves. Quite incredibly, the authors seem not to have done so (or at least seem to have avoided reporting the results). What I write below is, while limited by the facts that neither have I had access to their raw data, nor am I familiar with the nitty-gritties of the NSS datasets they have used, induced by what they have reported in their paper themselves.

    What could/should they have done at the very outset? Identify a set of consumption items which are non-food NON-ESSENTIALS. The immediate candidates to be included in this set are a. items of durable consumption (like TV, motorbike, cassette/cd/vcd players, items of furniture (and this might even include using LPG)), b. items of temptation goods (like alcohol, tobacco, meals eaten out, etc) (see e.g., Banerjee et al, 2014 and Banerjee-Mullainathan, 2010). For the durables compute a conservative monthly value for the consumption flow. And then test whether the fraction of spending in such non-food-non-essentials could compensate for a well-defined short-fall in calory intake. If such a hypothesis--that spending in non-food-non-essentials is sufficient to cover the required incremental calory intake--cannot be rejected, then the postulate of involuntary food-budget squeeze is belied immediately. (Of course, there are obvious minor variants of this idea). Next, suppose the result is otherwise. Then take the following as a (more inclusive) measure of expenditure on non-food NON-ESSENTIALS: ENN=total consumption spending (which may be obtained by summing over the values of consumption flows for the different items) minus spending on food minus spending on the non-food ESSENTIALS (identified by the authors themselves in constructing Figure 2b of their paper). Then again, test whether a well-defined shortfall in calorie-consumption could be made up by this ENN. If the answer is yes, then again, their postulate of involuntary food-budget squeeze becomes dubious. Only if these two elementary preliminary tests show the possibility of a food budget squeeze, should one get into the realm of choice.

    It is quite surprising that they have not discussed these necessary preliminary checks.

    2. Their regression specification does not tally with their intended conclusion:

    The next surprising thing is the regression specification they used (Equation 1 in the paper). Given the equation, and their collation of data points over years, a
    negative and significant beta implies that IRRESPECTIVE OF THE TIME PERIODS--BE IT BEFORE THE EXOGENOUS NEOLIBERAL CHANGES OR AFTER IT, and irrespective of any variation in the intensity of structural changes, increased expenditure on fuel decreases calorie intake. That has nothing, upfront, to do with any involuntary food budget squeeze caused by neoliberal structural changes.

    3. And the IV used has a transparent defect:

    And Point 2 above immediately leads us to the defective instrumental variable (IV hereafter) that Basole and Basu have used--namely whether the fuel source of the household is from "market" or otherwise--for the (endogenous) fuel expenditure of the household. They have not considered the possibility of the following omitted variable--namely, that of the "taste" of a household--irrespective of time, space and structural changes. It is eminently conceivable that a household may have "taste"
    for lethargy/indolence (it may value leisure a lot) and/or gadgets and this induces its members to use labour-saving devices (like LPG ovens or electric heaters) in cooking as well as leads to their low calorie spending and intake. In such a scenario, the IV Basole and Basu used itself suffers from endogeneity. While there are some remedies for tackling this problem (see, e.g., Nevo and Rosen, 2012), the authors did not reckon this defect at all which may have made their IV regression meaningless. I think, a priori, a MORE useful IV for fuel expenditure is the relevant (average) price to be paid (i.e., prevalent in the respective spatial zones) by the households for the respective household, but of course, the relevant data are much harder to obtain.

    I myself do believe (at least from direct observations) that food budget squeeze and resultant involuntary undernutrition do exist for the poors in India. And there are ways for its identification. But Basole and Basu (2015) is too defective to have been able to do so.

    References cited:

    Banerjee, A., E. Duflo, Glennerster, R., Kinnan, C. (2014): "Miracle of Microfinance?" http://economics.mit.edu/files/9832

    Banerjee, A., Mullainathan, S. (2010): "The Shape of Temptation: Implications for the Economic Lives of the Poor". http://economics.mit.edu/files/5575

    Basole, A. and D. Basu (2015): "Fueling Calorie Intake Decline: Household Level Evidence from Rural India". WORLD DEVELOPMENT · APRIL 2015

    Nevo, A., Rosen, A. M. (2012): "Identification with imperfect instruments". Review of Economics and Statistics.

    (Many thanks to Purandar Bhat for his criticisms. This has been revised in light of those.)
  • ... | 193.90.37.106 (*) | ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৪88765
  • এখন আবার কম পয়সায় গরু খাওয়াও বন্ধ করে দিল। কি করে আর পুষ্টি বাড়বে।
  • pi | 236712.158.786712.67 (*) | ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০৮:২২88766
  • তুললাম। এখানে অভিজিত বিনায়ক ব্যানার্জি, এস্থাল ডুফারের পুওর ইকনমিক্সের ফুড চয়েজ থিওরি নিয়ে অনেক আলোচনা,
    তর্ক হয়েছিল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন