এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভ্যান গগ ও একটি কুৎসিত তৈলচিত্র

    Nirmalya Bachhar লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ জুলাই ২০১৯ | ২৬৭৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • রঙ! শব্দটা শুনলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগে মনে। হঠাৎ যেন মনে হয় কেউ এক মুঠো লাল - হলুদ আবির ছড়িয়ে দিল হাওয়ায়। রঙ শুনলে আমার কেন জানি মনে হয়, একটা ক্যানভাসে খুব পাৎলা করে কেউ ক্রিমসন রেডের একটা শেডের উপরে ক্রোম ইয়োলোর এক পোঁচ ভেজা রঙ লাগিয়েছে। আপনাদের কি মনে হয়? নিশ্চই অন্য কিছুর সাথে আপনারা রঙকে রিলেট করেন। রঙ শুধু একটা শব্দ, একটা বিশেষ্য পদ, যা দিয়ে সব রকম রঙের কথা বলা যায়। শব্দটি সাবজেক্টিভ নয় কোয়ালিটেটিভ। কিন্তু আমি যদি বলি আপেল কিম্বা স্ট্রবেরী? অমনি আপনার মনের মধ্যে লাল রঙের একটা ছবি ভেসে ওঠে তাই না! কিন্তু আপনার দেখা লাল আর আমার দেখা লাল কি একই? রঙ কিন্তু আসলে একটা ইলিউশান মাত্র। রঙ আপনার পরিচিত কোন বস্তু বা ফিজিক্যাল কিছু নয়। এমনকি এটা একটা ফিজিক্যাল নিয়মও নয়। রঙ আছে শুধু আপনার মাথার ভেতরেই। আসলে ভিজিবল ওয়েভলেন্থের কিছু অংশকে আমাদের ব্রেন যেভাবে ইন্ট্রারপ্রেট করে তাই হল রঙ। সেইজন্যেই আপনি যে রঙ দেখেন আমি সেই রঙ দেখি কিনা কেউ বলতে পারে না। ঠিক একই ভাবে গন্ধও কোন সাবজেক্টিভ ফিলিং নয়। কোন স্পেসিফিক মলিকুল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে যেভাবে এফেক্ট করে তাই আমাদের গন্ধ চেনায়। দার্শনিকরা বা মনবৈজ্ঞানিকরা আমাদের মনের মধ্যের এই সাবজেক্টিভ ফিলিং এর নাম দিয়েছেন "কোয়ালিয়া"। এবং আমাদের সীমাবদ্ধতা যা আমাদের অন্তর্লীন চিন্তাভাবনাকে যুক্ত করতে পারে না, তার নাম " এক্সপ্লেনেটোরি গ্যাপ"। আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন এই গ্যাপকে পূর্ণ করতে পারি না, এই সীমাবদ্ধতা আমাদের চিরকালীন।

    উনিশ শতকের শেষের দিকে একদল শিল্পী কিন্তু এই গ্যাপ খানিকটা হলেও পূর্ণ করেছিলেন। ইমপ্রেশানিজম আর পোস্ট বা নিও ইমপ্রেশানিজম হল এমনই একটি পদ্ধতি যখন আর্টিস্টরা শুধু প্রাকৃতিক রঙ নয়, বাস্তবতা নয় বরং বাস্তবতার সাথে যুক্ত সব ইমোশানকেও ছবির সাথে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তারা চেয়েছিলেন এমন কিছু সৃষ্টি করতে যা আমাদের ত্রিমাত্রিক দুনিয়ার বাইরে বার করে আমাদের মনোজগতের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে। এমনই এক টালমাটাল সময় এক অদ্ভুত চিত্রকরের আবির্ভাব হয় যার নাম ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। না ভিনসেন্টের সম্বন্ধে বলার জন্যে এই প্রবন্ধের অবতারনা নয়। সত্যি কথা বলতে এইটুকু পরিসরে তার সম্বন্ধে বলার মত ধৃষ্টতা দেখানোই যায় না। আমি শুধু তার একটা ছবি সম্বন্ধে কথা বলব যার নাম "দ্য নাইট ক্যাফে" বা "ল্য ক্যাফে দে ন্যু"। ভিনসেন্ট এ ছবির বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁর আঁকা কুৎসিততম ছবি বলে। আর্ট ক্রিটিকরা এই ছবিটিকে বলেন ভিনসেন্টের একটি মাস্টারপিস। কিন্তু কি সেই ছবি?

    ১৮৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাই থেওর সাথে তীব্র মতানৈক্য ও নতুন আর্ট কলোনী খোলার আশায় ভিনসেন্ট আর্লে আসেন। অত্যধিক মদ্যপানে ও স্মোকার্স কাফ'এ আক্রান্ত হয়ে ততদিনে তিনি খুবই অসুস্থ। বার দুয়েক জটিল রোগেও ভুগেছেন তিনি। প্যারিসে থেওর সাথে থাকাকালীন তাঁর স্টেপল ডায়েটই ছিল রুটি, কফি ও সিগারেট। আর্লের শান্ত পরিবেশে ভিনসেন্ট নতুন প্রাণ পেলেন। প্যারিসে থাকতে মন্টেচেলির আঁকা তাকে খুবই আকৃষ্ট করেছিল। এর আগে যেমন তার প্যালেটে ঘোর মেটে রঙের প্রাবল্য থাকত তার থেকে বেরিয়ে আরো ভাইব্র্যান্ট হলুদ, আল্ট্রামেরিন ও মভের মত আরো উজ্জ্বল রঙের প্রকাশ হতে থাকে তার ছবিতে। জাপানি উডকাট ইউকিয়ো পেইন্টিং-এর প্রভাবও দেখা যেতে থাকে তার ছবিতে। প্যারিসে থাকার শেষের দিকে তাঁর আলাপ হয় জর্জ সাওরাত আর পল সিনিয়াকের সাথে। এই সময় ভিনসেন্ট পয়েন্টিলিজম আর নিও ইম্প্রেশানিজমএর উপরে খুবই আকর্ষিত হয়ে পড়েন। রঙের ব্যপারে মিশেল শেভ্রলের কালার থিয়োরির উপরে চার্লস ব্ল্যাঙ্কের এ্যানালিসিসকে তিনি খুবই গুরুত্ব দিতেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে ইউজিন ডেলাক্যোয়া
    এক নতুন দিশা দেন অয়েল পেইন্টিংকে। তার এক্সপ্রেসিভ ব্রাশস্ট্রোক, অপ্টিক্যাল ইমপ্রেশানিজম ভিনসেন্টকে রঙের ব্যবহারের এক ভিন্ন মানে শেখায়। এখানে ভ্যান গগ simultaneous contrast নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন। simultaneous contrast আমাদের শেখায় যে যখন দুটো কমপ্লিমেন্টারি রঙ পাশাপাশি আসে তারা রঙের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দেয়। সাওরাত ও সিনিয়াক নিজেদের পয়েন্টিলিসম পদ্ধতিতে অপ্টিক্যাল মিক্সিং করতেন যা পুরোনো মিশ্র ও স্মুথ রঙের ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসে পাশাপাশি দুটি সলিড কালারকে রেখে বাকিটা দর্শকের চোখের উপরে ছেড়ে দিতেন। দূর থেকে মানুষের চোখই ঐ রঙ মিশিয়ে নিত। যেমন আপনারা আগেকার দিনের তিনরঙা কার্টুন দেখেছেন শুকতারায়। কাছ থেকে দেখলে প্রতিটি রঙের ডট আলাদা করে বোঝা যায়, কিন্তু দূর থেকে একটাই রঙ মনে হয়। ডট মেট্রিক্স প্রিন্টারেও একইভাবে প্রিন্ট তৈরী হত আগেকার দিনে। বস্তুত চলমান চিত্র টিভিতেও ঐ একই ভাবে দেখানো হত শুরুর দিকে। পেইন্টিং-এ এই পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে ছবির আরো একটা আঙ্গিক সহসা খুলে গেল দর্শকদের কাছে। সাওরাত বা সিনিয়াক ছবি আঁকার জন্য ব্যবহার করতেন পয়েন্টিলিজম পদ্ধতি যা বিন্দু বিন্দু সলিড রঙকে একটা ভলুম দিত, ভিনসেন্ট শুরু করলেন ছোট ছোট ব্রাশস্ট্রোক দেওয়া, যেমন চারকোল বা পেন্সিল ড্রইং এর পদ্ধতিতে লাইট এন্ড শেডস আঁকা হয়। এতে ছবি দ্বিমাত্রিকতা ছেড়ে বহুমাত্রিক বহুবর্ণের এক নতুন ধারা পেল।

    আর্লে এসে ভিনসেন্টের ছবিতে ক্রমশ এই প্রভাব বেড়ে যেতে থাকে। ল্যান্ডস্কেপ পোর্ট্রেট সবযায়গায় উজ্জ্বল ইমপ্যাস্টো এমনভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি যা কেবল ইমপ্রেশানিস্ট চিত্ররূপের থেকে বেরিয়ে দর্শকদের মনোজগতেও এক স্থায়ী প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। নতুন যায়গায় এসে ভিনসেন্ট খুব খুশি ছিলেন, এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, যায়গাটা তার এক অচেনা গ্রহের মত লাগছে। এখানকার জুয়াব সৈন্য, বেশ্যালয়, অল্পবয়সী প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রথম ডেটের ছটফটানি, লোকেদের কাঁড়ি কাঁড়ি আঁবস্যাত খাওয়া দেখতে তিনি একেবারেই অভ্যস্ত নন। সারপ্লাস পরা যাজকদের দেখলেও তার মনে হচ্ছে যেন গন্ডারেরা ছুটে আসছে। মনের দিক থেকে ভিনসেন্ট ছিলেন এই অদ্ভুত চরিত্র। ছোট থেকেই মানসিক ভাবে অত্যন্ত অসুখী ছিলেন তিনি। তার রাগ, দুঃখ, অভিমানের যত ইমোশান সব যেন তিনি ক্যানভাসেই ছেড়ে দিতেন।

    ৭ই মে নাগাদ ভিনসেন্ট ক্যাফে দে লা গেয়ারে চলে আসেন। এই ক্যাফের মালিক জোসেফ আর মারি জেনৌ'র সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। ১৮৮৮ আগস্ট মাস নাগাদ তিনি ভাইকে লেখেন, আমি ভাবছি রাতের ক্যাফের অন্দরমহল নিয়ে একটা ছবি আঁকবো। এটাকে এরা ক্যাফে দে ন্যু বলে ডাকে। রাত্রিবেলা যেসব ভবঘুরেদের থাকার যায়গা জোটে না, সামান্য কিছু পয়সার বদলে এরা মদে ডুবে গিয়ে এখানেই রাত কাটিয়ে দেয়। ক্যাফেটিতে ভ্যান গগ পরপর তিন রাত কাটান। দিনের বেলা তিনি নিজের ঘরেই থাকতেন। রাতের দিকে নেমে তিনি ক্যাফের লোকদের লক্ষ্য করতেন। এই তিনদিনে তিনি এই ছবিটি আঁকেন।

    "এটি আমার আঁকা সবচেয়ে কুৎসিত ছবি" নিজের চিঠিতে ভাই থেওকে তাই লেখেন তিনি। সত্যি কথা বলতে কি ছবিটা সত্যি বেশ অস্বতিকর। এমনকি ভ্যন গগ যে এমন একটা ছবি আঁকবেন তা আশা করা যায় না, যদি আপনি ওনার আঁকা আর্লের অন্য ক্যাফের ছবিগুলি দেখেন। যেমন ধরুন ক্যাফে টেরেস এ্যাট নাইট। নাইট ক্যাফে আঁকার সপ্তাহ খানিক পরেই এই ছবিটি আঁকেন তিনি। এখানে দেখবেন ভিনসেন্ট ফুটিয়ে তুলেছেন একটি গ্রীষ্মকালীন সন্ধ্যার ছবি যা ইয়োরোপীয়ান রাস্তার ধারে দেখা যায়। রাতের তারাভরা নীল আকাশ, নিচের হলদে কমলা গ্যাসলাইটের মায়াবী আলোয় মাখা শহরতলির ক্যাফে টেরেস। সেই আলো খানিক যেন উপচে এসেছে বেগুনী-গোলাপী পাথুরে রাস্তায়। যদি বাইরের এই ছবির সাথে নাইট ক্যাফের তুলনা করেন, তবে দেখবেন বাইরের ছবিটা যদি আর্লের আলস্যভরা স্বপ্নের গলি হয়, তবে ভেতরের ছবিটা যেন একটা ভয়ানক দুঃস্বপ্ন। বাইরে যারা আছে তারা হাসছে, কথা বলছে, কিন্তু ভিতরে যারা আছে তারা যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেন তারা পাগল হয়ে যাবে, বা কোন ষড়যন্ত্রের ছক কষছে। ভাইকে তিনি লেখেন, যে এই অসহ্য ঝাঁকি দেওয়া রঙের ব্যবহার তার ইচ্ছাকৃত। এই সস্তার ক্যাফের আবহাওয়া তার মনে যেভাবে প্রভাব ফেলেছিল, তাই যেন ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে। নিজের চিঠিতে ভাইকে তিনি লেখেন এই ছবিতে মানুষের বীভৎস প্যাশানকে আমি লাল আর সবুজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাইছি। সব যায়গায় যেন একটা যুদ্ধ, একটা প্রকট বৈপরীত্য চলেছে এই লাল আর সবুজের।



    ইম্প্রেশানিস্ট এবং পোস্ট ইম্প্রেশানিস্ট আর্টিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখিয়েছেন কিভাবে পাশাপাশি থাকা দুটি রঙ একে অন্যকে প্রভাবিত করে। কমপ্লিমেন্টারি কালার সার্কেলে, লালের বিপরীতে থাকে সবুজ, কমলার বিপরীতে নীল, হলুদের বিপরীতে বেগুনী। কিন্তু নীল আর কমলার যেমন একটা সুখকর ফিলিং আছে, সবুজ আর লালের কিন্তু ঠিক তার বিপরীত অবস্থান। ভ্যন গগ এই থিয়োরি বাস্তবে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখেছেন এর আগেই, যখন তিনি এক জুয়াব সৈন্যের পোর্ট্রেট আঁকেন। নিজের চিঠিতে তিনি লেখেন "এটি একটি মোটাদাগের দুটি বৈপরীত্যমূলক রঙের ব্যবহার, যা সামলাতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।



    প্রবলেম কিন্তু শুধু রঙের তীব্রতায় নয়, প্রবলেম আছে ব্যালেন্সেও। নাইট ক্যাফের তিন মাস পরে, অর্থাৎ ভ্যান গগের নার্ভাস ব্রেকডাউনের পরে (যখন তিনি নিজের কান কেটে ফেলেন) তার নিজের সেল্ফ পোর্ট্রেটে কিন্তু তিনি এই সবুজ ও লাল রঙকে পাশাপাশি রেখেছেন, যা চোখকে পীড়া দেয় না। খেয়াল করে দেখুন ছবিতে উপরের অংশে কমলা-হলুদ ও নীলচে বেগুনী, নিচের অংশে সবুজ ও লাল। সবুজ ও লালের নেগেটিভ এফেক্ট যেন কমলা নীলের পজেটিভ এফেক্টকে খানিক ব্যালেন্স দিয়েছে।



    সুতারাং দেখা যাচ্ছে, জুয়াবের ছবিটায় অনিচ্ছায় আসা ইমব্যালেন্স আর নিজের পোর্ট্রেটে ইচ্ছাকৃত ব্যালেন্সের পুরোপুরি বিপ্রতীপে আসে নাইট ক্যাফে, যা কিনা ইচ্ছাকৃত ভাবে আনব্যালেন্সড। নাইট ক্যাফের অপ্রেসিভ রক্তরঙা মেটে লাল দেয়াল তার সিলিং-এর সবুজের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলে। এখানে ভ্যান গগ কোন কম্পোজিশানাল ব্যালেন্স রাখতে চান নি। মেটে লাল রঙ সবুজ সিলিংকে থেঁৎলে দিয়ে ছবি উপরের তৃতীয়াংশে আটকে আছে। ছবির বাকী অংশটা খালি অরিওলিন (Aureolin) হলদে রঙ যেন সব কিছুর সাথে মিশে গেছে। পুলটেবিলটার সবুজ ভেলভেটে, বার কাউন্টারের যা আবার দেয়ালের লালের সাথে লড়াই লাগিয়েছে, নীলচে কাঁচের কাউন্টারটপের মধ্যে, এমনকি বারমালিকের সাদা জামাতেও সে মিশে আছে। সমস্ত ছবিটাতে ক্যাটকেটে রঙের ব্যবহার দেখে দর্শকদের চোখ যে ঐ সামান্য ঐ সাদা যায়গাটুকুতে এসেএকটু শান্তি পেতে চায়, ভিনসেন্ট সেটাও তাকে দেবেন না। এমনকি, তিনি এই সব একাকী পান্থদের ছায়াও মাটিতে পড়তে দেন নি, শুধুমাত্র অরিওলিনের অপ্রেসিভ ব্রাইটনেস না কমাতে চেয়ে। শুধু মাত্র একটি অমিনাস ছায়া যা অনেকটা নেগেটিভ স্পেস জুড়ে আছে সেটা ঐ পুলটেবিলটা। সে কথায় একটু পরে আসছি।



    ছবিটার দিকে তাকালেই সবার প্রথমে যেটা চোখে লাগে সেটা ঐ লাইটগুলো। লাইটগুলোর দিকে দেখুন, গভীর রাতের নাইট ক্যাফের নিয়নের দপদপানি টের পাবেন। লাইটের দপদপানি বোঝাতে ভাঙা ভাঙা লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ভিনসেন্টের একটি সিগনেচার ইম্প্রেশানিস্ট ব্রাশস্ট্রোক। ভিনসেন্টের ছবি বলতে সবার প্রথমেই যে সব ছবির কথা সকলের মনে আসে তা হল স্টারি নাইট সিরিজ। সেখানেও দেখবেন আকাশের তারার, চাঁদের, আকাশগঙ্গার গতিময়তা বোঝাতে এই ভাঙা ভাঙা লাইনের ব্যবহার। ওনার ছবি যদি খেয়াল করে দেখেন তবে খেয়াল করবেন যে তিনি কাঁচা রঙ বিন্দুমাত্র পাতলা না করেই থুপে থুপে ব্যবহার করতেন। এই পদ্ধতির নাম ইমপ্যাস্টো, এটিও একটি ইমপ্রেশানিস্ট স্টাইল। এতটাই এক্সট্রা রঙ লাগাতেন তিনি যে পরবর্তীকালে যারা তার ছবিকে কন্সার্ভ করার চেষ্টা করেছে তারা ভারি বিপদে পড়ে গেছে। এই রঙের মোটা লেয়ার সময়ের সাথে সাথে ক্যানভাস থেকে আলগা হয়ে আসে। যেহেতু লেয়ারগুলি অন্য লেয়ারের সাথে মেশানো হয় নি, ফলে ফলে মোল্ড বা পেইন্টিং এর উপরে লাগা ময়লা তুলতে গেলে ঐ রঙ বার বার উঠে আসে। এই ছবিতেও আপনি ইমপ্যাস্টো দেখতে পাবেন বার বার। দরজার বাইরেটা খেয়াল করুন, ফুলদানিটার গায়ে লক্ষ্য করুন। কাঁচা রঙ ফ্ল্যাট ব্রাশ দিয়ে থাবড়ে লাগানো হয়েছে, কোন ফিনেস ছাড়াই।



    চলে আসুন এবারে ছবির মাঝখানে। অনেকখানি খালি যায়গা রয়ে গেছে পুল টেবিলের বাঁপাশে। এই রকম নেগেটিভ স্পেসের ব্যবহার আসে জাপানি ছবির প্রভাব থেকে। এই ধরনের এফেক্ট দেখতে পাবেন দেগা বা সমসাময়িক ইম্প্রেশানিস্ট পেইন্টারদের মধ্যে। জাপানি প্রিন্টে এই ধরনের পার্স্পেক্টিভ ব্যবহার করা হত, সামুরাইদের যুদ্ধের গতিময়তাকে ধরতে, বা গেইশাদের লাস্যকে ফুটিয়ে তুলতে। এই সময় জাপানি ছবির প্রিন্ট আসতে শুরু করে ইউরোপে। ফলে সমসাময়িক ইউরোপের ছবিতে এই ধরনের এফেক্ট ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়। এখানে আরো একটা ব্যপার আছে, ছবিটা যেন খানিক কাত হয়ে আছে। এই টিল্টেড পার্স্পেক্টিভ ইচ্ছে করেই ব্যবহার করা হয়েছে। ছবিটা আনইজিনেস যেন শুধু ঐ টেবিল দিয়েই বোঝা যায়। যেন ছবির থেকে খুলে টেবিলটা এক্ষুনি আপনার গায়ে এসে পড়বে। একলা খানিক নেগেটিভ স্পেসের ছায়া আগলে আটকে আছে মাঝের বিশাল পুলটেবিলটা। ভবঘুরে গুলো দুইহাতের মধ্যে করে মাথা নামিয়ে আছে, চেয়ার গুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, মদের গ্লাস টেবিলগুলো অপরিষ্কার, এবং পার্স্পেকটিভটাও বেগতিকভাবে ঝুঁকে আছে। লাইন অব ডেপথগুলো একই হরাইজেনে মিট করে না, শুধু তাই না, তারা এমন ভাবে ফেঁদে আছে যেন ছবিটা আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। যখন আপনি ঘরের মধ্যে এসে পড়েন তখন যেন এই পুলটেবিলের পাশের রাস্তাটা আপনাকে বাইরের রাস্তা দেখাচ্ছে। যা কিনা হয়তো একটা পেছনের ঘর কিম্বা বাইরে নিয়ে যাবে, যে যায়গাটাও সেই অপ্রেসিভ হলুদ। ঐ নাছোড়বান্দা ক্যাটকেটে নাইট ক্যাফে থেকে আপনার মুক্তি নেই। যারা পেইন্টিং এ আটকে আছে তাদেরও নেই, যে দেখছে তারও নেই। ভিনসেন্ট আপনাকে খাঁচায় বন্দী করে ফেলেছেন, আর অজগরের হলদে দুই চোখের মত ছবিটা আপনাকে গিলে খেতে চলেছে।

    এই ছবিতে ইম্প্রেশানিজম ও পোস্ট ইম্প্রেশানিজম এই দুই এফেক্টকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন ভিনসেন্ট। এইবারে আসি ছবি পোস্ট ইম্প্রেশানিস্ট এফেক্টগুলোয়। ছবির বিভিন্ন যায়গায় ঘোর রঙের মোটা আউটলাইনগুলো দেখছেন। এটা একটা পোস্ট ইম্প্রেশানিস্ট এফেক্ট। এইসময়কার চিত্রকররা মনে করতেন ইম্প্রেশানিজম খুব বেশি ফর্মলেস হয়ে গেছে। তাই তারা শুধু আবেগের বশে রঙের ব্যবহার না করে একটা আউটলাইনের সাহায্যে এই ফর্মকে তৈরী করে দিতেন।
    আরও একটা এফেক্ট যা ভিনসেন্টের ছবিকে পোস্ট ইমপ্রেশানিস্ট করে তুলেছে তার নাম fin de siecle। এই ফন দ্য সিয়েক্ল-র লিটারল মিনিং হল শতাব্দী শেষের অস্বস্তি, স্পেশালি উনিশ শতকের শেষে ইউরোপের সমাজব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফলে লোকেদের মধ্যে একটা ভীতি তৈরি হয় অনাগত ভবিষ্যতের জন্যে। এই অস্বস্তি, এই উদ্বেগ যেন ফুটে উঠেছে এই ছবির মধ্যে। এই ফন দ্য সিয়েক্ল স্পেশালি পোস্ট ইপ্রেশানিস্মকে ইম্প্রেশানিস্ম-এর থেকে আলাদা করে। ইম্প্রেশানিজম এর রঙে বর্ণে ফুটে ওঠে পরিবেশের বৈচিত্র্য,ভাইব্রেন্সি, কিন্তু পোস্ট ইম্প্রেশানে আমরা দেখি সেই ভাইব্রেন্সিকে খানিক পালটে ছবির ইমোশান তৈরী করা হয়েছে। ইমোশানকে প্রাধান্য দিয়ে রিয়ালিসমকে দূরে সরানোর এই এন্টি-একাডেমিক বা আভাগার্দ টেকনিক ভ্যনগগ তৈরি করেছিলেন। ছবিতে দেখুন লাইটগুলো যেন কেমন অপার্থিব চোখে করে চেয়ে আছে। বেশিক্ষণ তাকালে ঐ ক্যাটকেটে রঙে খুব একটা অস্বস্তিকর ইরি ফিলিং হয়। ছবিটা যতই দেখা যায় ততই যেন আগ্রহ লাগে। কিন্তু সাহস করে ঘরে এনে রাখা যায় না।

    এই ছবি আঁকার দু মাস পরে অক্টোবর মাসে বন্ধু পল গগ্যাঁ আসেন তার কাছে। তিনি লিখেছেন এই একাকীত্ব ও বন্ধন তিনি তার বন্ধুর মধ্যে ফিল করতে পেরেছেন। ভ্যান গগ ভেবেছিলেন তিনি বন্ধুর সাথে একটা আর্ট স্কুল খুলবেন, কিন্তু পলের সাথে পয়সাকড়ি নিয়ে যে বিরোধ গগ ভাইদের সাথে শুরু হয় প্যারিসে তার জের যে তাদের বন্ধুত্বে পড়ছে তা ভিনসেন্ট বেশ বুঝতে পারছিলেন। এই বিচ্ছেদের ভার, জোর করে একাকীত্বে ফিরে আসার চেষ্টা যেন ফুটে ওঠে এই নাইট ক্যাফের ছবিটিতে। ভ্যান গগ যা ফিল করতেন তাই আঁকতেন। তার আঁকা তার মোহবাস্তবতার সাথে একদম সম্পৃক্ত, যাকে আলাদা করা যায় না। তাই তার আঁকা কুৎসিততম ছবিও শুধু ইমোশানের উপরে ভর করে একটা মাস্টারপিস হয়ে যায়।

    রঙের কথা দিয়ে এ লেখা শুরু করেছিলাম। এ ছবিগুলি থেকে রঙ যদি সরিয়ে নেওয়া যায় তবে হয়তো ছবির মধ্যে কিছুই বেঁচে থাকে না। তাই ভাবি, সত্যি রঙ হয়তো সকলের জীবনে এক নয়, কিন্তু যখন আর্টিস্টের তুলি দিয়ে যখন রঙের মাধ্যমে ইমোশান বেরিয়ে আসে তখন হয়তো আমাদের চিন্তাও একই খাতে বইতে শুরু করে আর আমাদের অন্তর্জগতের যে এক্সপ্ল্যানেটোরি গ্যাপ তা হয়তো কিছুক্ষণের জন্যেও বুঁজে গিয়ে আমাদের সেই মহান চিত্রকরদের সাথে একই চিন্তায় মিলিয়ে দিয়ে যায়। মানব চেতনার অগ্রগতিতে আর্টের তাই খানিক অবদান থেকেই যায়।

    নিরমাল্লো
    ৫ জুন ২০১৯
    --------------
    তথ্যঋণঃ উইকি আর মাইকেলের ভিসস আর নার্ডরাইটার১
    চিত্রঋণঃ উইকি
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ জুলাই ২০১৯ | ২৬৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 237812.69.453412.170 (*) | ২১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪২50626
  • খুব ইন্টারেস্টিঙ লেখা!
  • নৈঋত | 236712.158.455612.174 (*) | ২১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫৯50627
  • ছবিটা অস্বস্তিদায়ক - তবে সেজন্যই মনে হয় এটা মাস্টারপিস হয়েছে। পুলটেবিলটা খুবই অদ্ভুত
  • নৈঋত | 236712.158.455612.174 (*) | ২১ জুলাই ২০১৯ ০৩:৫৯50628
  • ছবিটা অস্বস্তিদায়ক - তবে সেজন্যই মনে হয় এটা মাস্টারপিস হয়েছে। পুলটেবিলটা খুবই অদ্ভুত
  • Atoz | 237812.69.4545.143 (*) | ২১ জুলাই ২০১৯ ১০:৫২50629
  • হরর ছবি। ঘরের মাঝখানে একটা চৌকো কাঠের জলপাত্র, কানায় কানায় জল ভরা, তাতে একটা লালমাথা মাছ সাঁতার দিচ্ছে। আর উপরে তিনটে কাটামুন্ডু শূন্যে ভাসছে।
    আমি তো এইরকমই দেখতে পেলাম। ঃ-)
  • Ela | 236712.158.782323.33 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০১:৫৩50630
  • বড় ভাল লেখা।

    ভ্যান গগ আমার অন্যতম প্রিয় শিল্পী। যদিও আমি কিছু শিল্পবোদ্ধা নই, একজন সাধারণ দর্শকমাত্র। লাস্ট ফর লাইফ যে কতবার পড়েছি!

    এই ছবিতে আমি দেখতে পেলাম শিল্পীর সেই মায়া-জড়ানো হাত, পোট্যাটো ইটারের কষ্টের পরশটুকু যেন এখানেও পেলাম। ধন্যবাদ নির্মাল্য আপনাকে।
  • PM | 236712.158.895612.80 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০৪:০২50631
  • একটা অনুরোধ। একটা নতুন টই খুলুন। বিভিন্ন মাস্টার্পিস গুলো নিয়ে আলোচনা হোক এইভাবে। গুরুতে এটার ই কমতি ছিলো

    নির্মল্য বাবুকে ছাড়া উচিত নয় এতো অল্পে
  • নিরমাল্লো | 237812.68.565623.79 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০৫:১৫50632
  • সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ছবিটা আমাকে খুবই হন্ট করে মেটের একটা মস্তো ব্লো আউটে দেখার পর থেকে। সত্যি বলতে কি আমি ছবি সম্বন্ধে তেমন কিছু জানি না। একসময় মেট মিউজিয়ামে গিয়ে বসে বসে খানিক আগ্রহ বেড়েছিল। আর এই ছবিটা নিয়ে একটু পড়াশুনো করেই শিখেছি। এসব আমার নিজের এ্যনালিসিস না। ইম্প্রেশানিজম ব্যপারটা আমার খুব প্রিয় তাই পড়ে পড়ে যা শিখেছি তাই লিখে ফেললাম। অন্যদের কাছ থেকেও শিখতে চাই বিভিন্ন জঁরের কাজগুলো।
  • নিরমাল্লো | 236712.158.011223.105 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০৬:২৮50633
  • Ela - কে বলি, পোট্যাটো ইটারের ভ্যান গগ আর নাইট ক্যাফের ভ্যান গগ কিন্তু একদম এক নন। ভ্যান গগের জীবন অদ্ভুতভাবে নানান ফেজে বিভক্ত। তার শুরুর দিকে পেইন্টিং আর পরের দিকের পেইন্টিং কিন্তু খুব আলাদা। রঙের ব্যবহারে, কম্পোজিশানের ব্যবহারে। ইমোশানটা হয়তো একই রকম সত্য, কিন্তু পদ্ধতির ফারাক ছবিগুলোকে আলাদা আঙ্গিক দিয়েছে। পোট্যাটো ইটারে আপনি দেখবেন ঘোর মেটে রঙের সাথে ফ্ল্যাট কালার মিক্সিং। এখানে দেখুন উজ্জ্বল রঙেই অস্বস্তিকর পরিবেশের ছবি। পরের দিকে যখন ইউজিন ডেল্যাকোয়ার পিয়েতা নকল করেন ১৮৮৯ এ তখনো দেখবেন অনুজ্জ্বল রঙ কিভাবে অপটিক্যাল মিক্সিং করেছেন। ভিনসেন্টের ট্রানজিশানটা এই সময়েই খুব বড় হয়ে দেখা দেয়।
  • Ela | 237812.68.674512.55 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০৮:৪৬50634
  • অবশ্যই, তবে আমি ঐ ইমোশনটুকুর কথাই বলছিলাম, আঙ্গিক বা পদ্ধতির কথা নয়। বা আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে ছবি দেখে আমার কী মনে হচ্ছে সেটা।
  • কল্লোল | 236712.158.455612.186 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ০৯:৫২50635
  • অনেক আগে ভার্মিয়ের নিয়ে এমনতরো লেখা হয়েছিলো।
    সেটার লিংক কি পাওয়া যাবে?
  • Sumit Roy | 236712.158.891212.177 (*) | ২২ জুলাই ২০১৯ ১০:২৭50637
  • আপনার এই লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। এর পূর্বে আমি ভ্যান গগ, তার পোস্ট ইমপ্রেশনিস্ট শৈলি নিয়ে পড়েছি, কিন্তু আপনি যেভাবে এত সুন্দর করে এত কম পরিসরের মধ্যে বিষয়টা নিয়ে আসলেন, এভাবে আগে কখনও পড়া হয়নি। এই ইমপ্রেশনিজম ও পোস্ট ইমপ্রেশনিজম নিয়ে আমার আগ্রহ এতটাই বেশি যে, যারা শিল্পের এই ধারা সম্পর্কে খুব একটা অবগত নন, তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য এই ধারাগুলোর উদ্ভব নিয়ে কটা কথা যোগ করতে চাই।

    লেখক এখানে রঙ নিয়ে প্রথমে যে কথাগুলো বললেন তা একেবারে যথার্থ। ইমপ্রেশনিজম ধারা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে রঙ এর সাথে এই বিজ্ঞানগত দিকটা অবশ্যই আনতে হবে। ইমপ্রেশনিজমের শুরুটাই এরকম। ঊনবিংশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে যে পজিটিভিজমের দর্শন ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হয় তার প্রতিফলন ঘটেছে এখানে। এই সময়ে হার্মান ভন হেলমহোলজ দৃষ্টিভিত্তিক ধারণার বৈজ্ঞানিক সূত্র ও ব্যাখ্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন (যা অপটিক্স নামে পরিচিত)। সিকেন ইউজেঁ গোভঁরিউন রঙের ব্যবহার ও সেই সম্পর্কিত সূত্রের গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন একই সময়ে। পজিটিভ দর্শনের প্রবক্তা অগাস্ট কতেঁর মতে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা যায় না প্রাকৃতিক ঘটনার বা বাস্তবতার এমন কোন ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি এও বলেছেন যে মানুষের অনুভবভিত্তিক উপলব্ধিই জ্ঞানের উৎস্য। এই সব ধারণা ও তত্ত্বের ভিত্তিতেই রিয়েলিস্ট স্কুলের শিল্পীরা অতীত ও ভবিষ্যতের বিষয়কে শিল্পে প্রতিফলনের বিরোধিতা করে বলেছিলেন যে পরিপার্শ্বের বাস্তবতাই শিল্পে স্থান পেতে পারে। কোন কিছু উদ্ভাবন না করে শিল্পীকে তাদের চারিদিকের দৃশ্যের বাস্তবতা দেখে তার প্রতিফলন করতে হবে শিল্পকর্মে। সমকালীন জীবনে যা কিছু সত্য ও বাস্তব তাই হল শিল্পকর্মের বিষয়। ইমপ্রেশনিস্ট ধারা আসে রিয়েলিস্ট ধারার পরেই। আবার অনেক সময় ইমপ্রেশনিস্ট ধারাকে রিয়েলিস্ট ধারার অন্তিম পর্যায়ও বলা হয়। এই ইমপ্রেশনিস্টরা রিয়েলিস্টদের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে যায়। ইমপ্রেশনিস্ট ধারার শিল্পীরা বললেন, দৃষ্টির সামনে তাৎক্ষণিকভাবে যা ধরা পড়ছে শুধু তাই তাদের ছবির বিষয় হতে পারে। তারা দৈনন্দিন জীবন ও পরিবেশের বস্তুগত প্রতিফলন দেখানোর জন্য শহরের স্টুডিও থেকে বের হয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে বাস্তবের তাৎক্ষণিক ও অপস্রিয়মান দৃশ্য দেখার ধারণা বা উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যতদূর সম্ভব বিশ্বস্ততার সাথে ছবি আঁকতে চেয়েছেন। সচেতনতার তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতাই তাদের কাছে ছিল বর্তমান। বোদলেয়ারের দেয়া আধুনিকতার সংজ্ঞার সাথে যেন তাদের দর্শনটি মিলে যায় - "আধুনিকতা হল অস্থায়ী, সাময়িক ও অপস্রিয়মান বাস্তব"।

    ইমপ্রেশনিজমে ঘরের স্টুডিওর বাইরে বিষয়ের কাছে দাঁড়িয়ে হাইটোনের প্রাঞ্জল ও উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে ব্রাশের ছোট ও বিচ্ছিন্ন টান দিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকা হয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় রঙগুলো মিশে যাচ্ছে। আলো ও বিচিত্র সব রঙ এর পারস্পরিক খেলার প্রক্রিয়া দূর থেকে দেখলে যেন অদৃশ্য ও অভিন্ন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। আলোর পরিবর্তনশীলতা এখানে প্রধান ভূমিকা লাভ করে। পরিবর্তনশীল আলোর জন্যই তো রঙ এর পরিবর্তন হয়। একাডেমিতে শিক্ষিত শিল্পীরা এতদিন শিখে এসেছে আলো ও ছায়ার খেলার সাহায্যে রঙ পরিস্ফুট করতে। ফলে আঁকা ছবিতে রঙের যে গ্রেডেশন বা মাত্রার ক্রমিকতা তা আলোছায়ার সন্নিবেশে তৈরি হয়নি এতদিন। সূর্যালোকের পরিবর্তনশীল অভিঘাতে দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর প্রতিফলনের মাত্রায় যে ভিন্নতা দেখা যায় ও রঙ এর সৃষ্টি হয়, স্টুডিওতে আঁকতে আঁকতে শেখা একাডেমিক শিল্পীরা তার মূল্য ঘোড়ার ডিম বুঝবে। তাই তো ইমপ্রেশনিজম নিয়ে ছিল রাজ্যের সমালোচনা। একটা উদাহরণ দিলেই বুঝবেন যে একাডেমিক ও ক্রিটিকদের মধ্যে ইমপ্রেশনিজম কিরকম তোলপাড় শুরু করেছিল -

    এক সাপ্তাহিকে একজন শিল্প-সমালোচক ব্যঙ্গ করে লেখে - "প্রদর্শনীর ছবি দেখে দর্শকরা হেসে প্রায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ছবি দেখার পর আমার বুকের ভেতর যেন রক্তক্ষরণ শুরু হল। তথাকথিত বিপ্লবী ও ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীরা হাতে ব্রাশ নিয়ে রঙ মাখিয়ে ক্যানভাসে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত প্রলেপ দেবার পর ছবির নিচে নিজেদের নাম লিখে দিয়েছে। পাগলরা যদি রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে এনে ভাবে সেটা হীরা, এই সব শিল্পীর চিন্তাও একই।" মজার কথা হল "ইমপ্রেশনিজম" নামটাও এসেছে একজন সমালোচকের থেকেই।

    পোস্ট ইমপ্রেশনিজমের পটভূমি ছিল ইমপ্রেশনিজমের ধারার প্রতি ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদেরই ক্রমবর্ধমান আস্থাহীনতা ও অনাকর্ষণ। ইমপ্রেশনিজমে আলোর খেলার উপর অতিরিক্ত গুরুত্বারোপের কারণে তারা সেই ধারা থেকে সরে যেতে চান। ইমপ্রেশনিজমের স্থায়ী ও বিষ্ময়করভাবে বিশালাকারের পরিবর্তে অপসৃয়মাণ ও তুচ্ছ ধরণের দৃশ্যের জন্য স্কেচের আকারে ফর্মবিহীন ছবি আঁকা ও নিগূঢ় অর্থ ছাড়াই অতি সাধারণ বিষয় বেছে নেয়ায় স্ব-আরোপিত সীমাবদ্ধতা শিল্পীদের ক্রমেই হতাশায় নিয়ে যায়। এছাড়া ইমপ্রেশনিজমের উদ্দেশ্যও ছিল দ্ব্যর্থবোধক, একই সঙ্গে এটি ছিল অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ। এরকম সময়েই ১৮৮৬ সালে ইমপ্রেশনিস্টদের শেষ প্রদর্শনীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন জর্জ সউরাঁ। "A Sunday Afternoon on the Island of La Grande Jatte" নামে তিনি একটি ছবি এঁকেছেন(নিচে ইমেজ লিংক দিয়ে দেয়া হয়েছে)।


    এই ছবিটা এর পূর্বের ছবিগুলোর মত করে আঁকা ছিল না, এটি ছিল অনেকগুলো ছোট ছোট রঙিন বিন্দুর সাহায্যে। লেখক এটাকেই পয়েন্টালিজম বলেছেন। ছবিতে রঙগুলোকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখানোর জন্য একে ডিভিশনিজমও বলা হয়। ইমপ্রেশনিস্টরা যেখানে অপস্রিয়মাণ ও অস্থায়ী মুহূর্তকে তুলে ধরতে চান, সেখানে তিনি চাচ্ছেন সময়হীন বিশালতার ধারণা দিতে। এরপর ক্রমেই তিনি ও তার অনুসারী কয়েকজন শিল্পী এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে পোষণ করতে থাকেন যে, তাদেরকে শুধু সামনে দ্ররশ্যমান প্রকৃতির হুবহু ছবিতে প্রতিফলিত করার অতিরিক্ত কিছু করতে হবে। তাই তারা আনতে চাইলেন দৃষ্টিবিজ্ঞানভিত্তিক (অপটিক্স) রঙের ব্যবহারে আরও কঠোর শৃঙ্খলা। সেজাঁ, গগাঁ ও ভ্যান গগঁরা যেখানে আগে ইমপ্রেশনিস্ট ধারায় ছবি আঁকতেন তারা সবাই সউরাঁর নতুন শিল্পচেতনার ধারায় প্রভাবিত হলেন। সেজাঁ শুরু করলেন রেনেসাঁ শিল্পে পারস্পেকটিভের নতুন ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও জ্যামিতিক ফর্মভিত্তিক ছবি আঁকার সম্ভাবনা যাচাই। এদিকে ভ্যান গঁগ ও গগাঁ ন্যাচারালিস্টিক আর্টের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন শিল্পচর্চায় মনোনিবেশ করেছিলেন যার মাধ্যমে অনুভূতি ও আবেগকে আরও বেশি গুরুত্ব ও ভূমিকা দেয়া যায়। এভাবে শিল্পগুরু সউরাঁর নেতৃত্বে এভাবে শিল্পকলার নতুন যে ধারার সূচনা হল তা পরিচিত হয়ে উঠল পোস্ট-ইমপ্রেশনিজম নামে।

    গুরুতে এইরকম লেখা আগে কখনও দেখিনি, সেটা আমারই ব্যর্থতা। এমন একটি অসাধারণ বিষয়কে তিনি সামনে নিয়ে এসেছেন বলে তার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা। বিষয়ে আগ্রহ থাকায় লেখাটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও কোন ইমপ্রেশনিস্ট বা পোস্ট ইমপ্রেশনিস্ট ধারার কোন শিল্পীর কাজ নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু লিখতে পারি এখানে। লেখক ভ্যান গঁগ নিয়ে লিখলেন, আমি হয়তো ম্যানেঁ দিয়েই শুরু করব।
  • Ela | 236712.158.786712.141 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ০১:১৩50640
  • অ্যালমণ্ড না, আমণ্ড @ডিসি
  • নিরমাল্লো | 124512.101.450112.140 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ০১:২৭50641
  • সুমিত রায়-কে অনেক ধন্যবাদ এই বিষয়ে আরো লেখার জন্যে। এই যুগের সম্বন্ধে আরো লিখুন না, পড়ে দেখি। বাংলায় এই নিয়ে খুব বেশি লেখা দেখি নি। তুলনামূলক লেখা হলে আরো ভালো লাগে। যেমন এই নাইট ক্যাফের মালকিন মাদাম জেনৌ-এর একটা ছবি আঁকেন গগ্যাঁ, যেটা খুবই অন্যরকম। সম্ভবত এটি সন্ধ্যেবেলার ছবি, যখন ভবঘুরের দল এসে মাতাল হয়ে ওঠে নি। ঐ মাদামের অনেকগুলো ছবি আঁকেন দুই বন্ধু মিলে। এটি তারই একটা। ছবিটা নিচে দিলুম

  • dc | 236712.158.565612.163 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৮50642
  • হ্যাঁ আমন্ড ঃ-)
  • dc | 236712.158.565612.19 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৮50638
  • ভ্যান গগের "অ্যালমন্ড ব্লসম" আমার খুব ভাল্লাগে। তার প্রধান কারন ছবিটা জটিল না, পাতি একটা গাছের ডালে ফুল ফুটছে। খুব বেশী ভাবতে হয়না, তাই মাথাও ধরেনা। আর দ্বিতীয় কারন আমার ছোটেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা আমগাছ ছিল, সেটা আমাদের শোবার ঘর থেকে দেখা যেত। এই ছবির গাছটার মতো ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো আর আমি কতো কি কল্পনা করতাম। আবার রাত্রে ভুতের ভয়ও পেতাম। এই তো হলো ব্যপার।
  • জ্যোতিষ্ক | 890112.162.671223.123 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪২50643
  • নিরমাল্লোর লেখাটা আগে পড়েছি, গুরু-তে আবার একবার পড়লাম, সত্যি দুর্দান্ত ... সুমিতবাবুর লেখাটিও অসাধারণ ... এই বিষয়ে আরো লেখা হোক, আমরা হাঁ করে বসে আছি :)
  • Nilanjan Bardhan | 236712.158.565612.163 (*) | ২৩ জুলাই ২০১৯ ১০:১৮50639
  • ছবিটা যেভাবে নিখুঁত বর্ণনা করেছেন তা এক কথায় অসাধারণ। সব চেয়ে বড় কথা ভ্যান গগ বা সে সময়ের আর্ট ফর্মকে একটা জটিল দুর্বোধ্য এই ধারণা থেকে মুক্তি দিয়ে সাধারণ মানুষের বোধের নাগালের বা সাধারণের আবেগের বস্তুতে রুপান্তরিত করেছেন।
  • Arka | 237812.69.01900.39 (*) | ২৪ জুলাই ২০১৯ ১১:১৪50644
  • নির্মাল্য, লেখাটা বেড়ে নামিয়েছিস। চালিয়ে যাও বন্ধু । মাঝে মধ্যে এরকম টুকরো-টাকরা গবেষণা-লব্ধ মণিমুক্তো ছাড়িস। তাহলে বেঁচে থাকাটা বেশি ভোঁতা লাগেনা।
  • শঙ্খ | 237812.68.674512.97 (*) | ২৬ জুলাই ২০১৯ ০৯:০৪50645
  • খুব ভালো লেখা ও আলোচনা। দারুণ লাগলো। আরো লেখা আসুক।
  • kk | 2601:14a:500:e780:4f65:80cb:e86c:40ae | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৪518922
  • এই লেখাটা কোনোভাবে চোখ এড়িয়ে গেছিলো (বা এই সময়ে আমি আসতামনা)। আপনার পিকাসোর যুদ্ধ আর ছবি নিয়ে লেখার থেকে লিংক পেয়ে এটা আজ পড়লাম। অসম্ভব ভালো লেখা। অনেক ধন্যবাদ নেবেন এমনি লেখার জন্য।
  • Nirmalya Bachhar | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫৩518925
  •  এটা বেড়ে কল হয়েছে। পুরোনো লেখায় কমেন্ট এলে নোটি আসে। 
     
    থ্যাঙ্কিউ kk, শঙ্খ, Arka, Nilanjan, জ্যোতিষ্ক, dc. 
     
     
  • অমিতরূপ চক্রবর্তী। | 2401:4900:3a0b:fd62:a47:dfa1:85b1:8bc2 | ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৫৯519035
  • খুব ভাল লাগল। খুব মনোগ্রাহী আলোচনা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন