এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২১৪২২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:২৬652183
  • চাগ্রীর গপ্পোগুনো সব এখেনেই লিখে ফেলবো। অ্যাতো চাগ্রী করা হোলো। গপ্পোও অনেক। তবে পরপর হবে না। এখান থেকে ওখান থেকে খামচা খামচা করে তুলে, কুশীলবেদের নাম ধাম ওলোট পালোট করে গপ্পোগুনো এখানে রেখে দেবার মতলোব ভেঁজেছি।
  • Abhyu | 85.137.13.34 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৪৫652294
  • সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ২০:৫৯652405
  • এই চাকরিটা কিন্তু প্রথম চাকরি নয়। কেমন করে পেয়েছিলাম সেটা বলতে গেলে আরেকটা গল্প হয়ে যাবে। কিন্তু চাকরিটা পেয়েছিলাম।
    কোলকাতা শহরটাকে তখন চিনছি। আগে একরকম চিনতাম, তখন চাকরি করতে গিয়ে অন্যরকম করে চিনছিলাম। রাস্তাঘাট গলিঘুঁজি বাসরুট মানুষজন আবহাওয়া। মাঝেমাঝে মনে হোতো স্বপ্ন দেখছি। তা আমার সেই চাকরিটা হয়েছিলো মধ্যকোলকাতায়। লোটাস সিনেমা চেনেন? ইন্ডিয়ান মীরর স্ট্রীট? সুরেন বাঁড়ুজ্জে রোডের উত্তর দিকে। কোলাহলে ভর্তি রাস্তাঘাট (কলরব নয়; শব্দটা এখন ব্যবহার করতে সাহস পেলাম না কপিরাইট ভায়োলেশনের ভয়ে) এবং সমান্তরালে বয়ে চলেছে ধর্মতলা স্ট্রীট - লেনিন সরণী। অমন জমজমাট জায়গার মধ্যিখানে আমার অফিস একটি শান্ত মতন বাড়ীতে। গলির ভেতরে। বাঁকাচোরা গলি। কখনো চওড়া কখনো সরু হয়ে যাচ্ছে। গলির রাস্তায় মেরামতের জন্যে প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে থাকে। ঘষা ঘষা তোবড়ানো রংচটা বডি। তাতে স্প্রে পেন্টিং করে মেকানিক। এদের দোকান পাট কোথায় আমার জানা নেই। শুধু রঙের গন্ধটায় গা গুলোয়। তাই তাড়াতাড়ি অফিসে ঢুকে যাই।
    অফিসটা আসলে আরেকটা অফিসের ভেতরে। একটা এয়ারকন্ডিশনিং কোম্পানীর অফিসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তাদের কারখানা কোথায় ঠিক করে জানি না। কে যেন বলেছিলো সিলভাসায়। সেটা কোথায়? জানিনা। তখনো গুগুল জন্মায় নি।
    সেই এয়ারকন্ডিশানিং কোম্পানীর রিসেপশানিস্ট কাম টেলিফোন অপারেটার মেয়েটি আমায় দেখলেই হাসে। মনে হয় আমরা হয়্ত সমবয়সীই হবো। ওর সঙ্গে দুটো কথা বলে পাশ দিয়ে আমি চলে যাই আমার অফিসে। এর মালিক অন্য। এটা একটা সদ্য সদ্য বানানো ট্র্যাভেলিং এজেন্সী।
  • PM | 233.223.159.253 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১২:০৫652516
  • তাপ্পর?
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১২:৫০652627
  • লিখবো। কিন্তু একটা কথা। এখানে সব চরিত্রই কাল্পনিক।
  • de | 24.139.119.173 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৫:০৯652738
  • পড়ছি!
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৬:৩৯652834
  • আসলে এই কোম্পানী শুরুই হয়েছে কয়েকদিন আগে। আমি যেদিন প্রথম এলাম তখনো টেবিল চেয়ার কাগজপত্র কিছুই গুছোনো হয় নি। একপাশে একটা পুরোনো ভাঙা মতো কাঠের আলমারি, তার নীচের দুটো তাকে চারটে দেরাজ। একটা দেরাজের ভেতর থেকে বেরোলো মরা ইঁদুর।
    একটাই ঘর। এল আকারের। ঢুকেই ডানপাশে কাঠের ফ্রেমে কাচ দেওয়া পার্টিশানের মধ্যে একটা সবুজ রেক্সিন দেওয়া সেক্রেটারি ডেস্ক। সেটাও পুরোনো এবং রংচটা। এটাই মালিকের টেবিল। তার পেছনে একটা হাতলওয়ালা গদি দেওয়া চেয়ার, তাতে তোয়ালে ঝুলছে।
    অন্যপাশে ঐ কাঠের আলমারি ছাড়া একটা নড়বড়ে শেল্ফ, যেখানে নানান দেশের রঙীন ছবিওয়ালা ছবিসহ এয়ারলাইন্সের লিফলেট সাজানো হবে। ছবিগুলোয় সামনের দিকে থাকে হাসিমুখে এয়ারহোস্টেস পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ডে নীল আকাশে অল্প সাদা মেঘ তার মধ্যে দিয়ে উড়ে যায় বিমান। সবগুলোই প্রায় একইরকম। যদিও এয়ারইন্ডিয়ার জন্যে রয়েছেন মহারাজা, কিন্তু তাদের লিফলেট এই অফিসে নেই। এই সবই গুছিয়ে রাখা আমার কাজ। পাশেই দুটো ছোটোছোটো টেবিল জুড়ে রাখা, দেরাজহীন। পাশাপাশি দুটো কাঠের চেয়ার, গদিহীন।
    আমরা তিনজন চাকরি করি অথচ চেয়ার মোটে দুটো। একটায় আমি বসি, পাশেরটায় ভিকাস। ভিকাসের খুড়তুতোভাই সন্তোষ হচ্ছে পিওন-কাম-দারোয়ান। ঐ একটি ঘরের অফিসের দরজার সামনে সে দারোয়ানি করে। গোটা ঘরে আরো একটি দরজা আছে, সেটা দিয়ে টয়লেটে যাওয়া যায়।
    মালিকের টেবিলে আছে একটা টেলিফোন, যদিও ডিরেক্ট লাইন নয়। ফোন তুলে অপারেটর সেই মেয়েটিকে বলতে হয় নম্বর। তখন সে লাইন লাগিয়ে দেয়।
    মেয়েটার নাম হচ্ছে পুষ্পিতা।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:০৬652845
  • মুশকিল হচ্ছে যে এই ঘরটা বাড়ীটার কীরকম যেন ভেতরের দিকে। একটা মাত্র জানলা আছে, নোংরা কাচের শার্সিওয়ালা। সেটা সবসময় বন্ধই থাকে। খুললে নাকি ওপাশে একটা বাড়ীর ইঁটের দেওয়াল ও শ্যাওলাধরা ফাটা পাইপ দেখা যাবে। সেই পাইপ থেকে জল ছিটকোয়। সন্তোষের ধারণা ওটা পাইখানার পাইপ। ফলে বাইরের দুনিয়ার থেকে এই ঘরের সম্পর্ক অনেকটাই কাটা। তা সত্ত্বেও অসম্ভব ধুলো, দিনের বেলাতেই মশার উৎপাত এবং অ্যাতোবড়ো একটা এয়ারকন্ডিশনিং অফিসের ভেতরের একটা অংশ হয়েও এই ঘরে কোনো এসি নেই। আছে একটিমাত্র সিলিংফ্যান- কিন্তু সেটা ঘরের মধ্যিখানে নয়, মালিকের পার্টিশানওয়ালা বসবার জায়গাটার ওপরে।
    আমরা এন্তার ঘামি, মশার কামড় খাই, আর সর্বক্ষণ ঘুম পায় আমার।
    ভিকাস লম্বা চওড়া ছেলে। ওরা আসে শোভাবাজারের দিক থেকে। ভিকাস খুব হুকুম করতে জানে।
    - এই সন্তোষ! ইধার আও! টেব্‌ল্‌ সাফ নিয়া কিয়া? কিঁউ?
    সন্তোষ দৌড়ে বাথরুম থেকে ন্যাকড়া ভিজিয়ে এনে টেবিলে ঘষতে থাকে।

    অন্যদিকে নির্বিকার মালিক মিস্টার ভৈশ, টেলিফোন তুলে বলে - হালো পুষ্পিতা। প্লীজ নোট ডাউন দীজ থ্রী নাম্বার্স্‌। দ্য ফার্স্ট ওয়ান ইজ আর্জেন্ট, অ্যান্ড আদার টু .. হাঁ হাঁ .. আরামসে।
    আমি চেষ্টা করি কিছু করতে। কিন্তু সেরকম কিছুই করবার নেই হাঁ করে পটের বিবিটির মতো বসে থাকা ছাড়া।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:০২652856
  • এপ্রিলমাস তো, তাই খুব গরম, আর সেইজন্যেই আমি খুব সকাল সকাল চলে আসি অফিসে। যদিও কাজ কর্ম তেমন কিছুই থাকে না। কিন্তু বাসের ভীড় এড়ানো যায়, সেইসঙ্গে সন্তোষের সঙ্গে আড্ডা মারা যায়।
    সন্তোষ যেহেতু দারোয়ান এবং পিওন, তাই ওকে সকলের আগে আসতেই হবে। ভোরবেলা পুরী তরকারি খেয়ে ফিটফাট হয়ে সেজেগুজে ও পৌঁছে যায় অফিসে। অধিকাংশ দিনই আমি আগে পৌঁছই, কিন্তু এই অফিসঘরের দরজায় কোনো তালা নেই তাই ঢুকতে ঝামেলা নেই।
    সকালের দিকে আমরা মনখুলে গল্প করি। সন্তোষের একটা ডাকনাম আছে - ভিকি। ঐ নামটাই ওর বেশি পছন্দ। ও আমাকে আড়ালে দিদি বলে ডাকে, কিন্তু ভিকাস এসে গেলেই তখন ম্যাডাম ম্যাডাম করে।
    ভিকাসের বদ ব্যবহারের কারণে সকালের দিকে তার খুব নিন্দে মন্দ করি আমরা। ভিকির চুলের ছাঁট অজন দেবগনের মতো। শুধু তাই নয়, ও আমাকে হেঁটে দেখিয়েছে একটু মাথা সরিয়ে এক ঝলক একদিকে তাকিয়ে কীরকম অজয় দেবগন হওয়া যায়। এই হাঁটাটার এতগুলো এনকোর হয়েছে যে আর করতে বললে ও ক্ষেপে যায়।
    আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি, এ কেমনধারা কোম্পানীরে বাবা? কোনো কাস্টমার নেই, কেউ আসেও না। মাইনে দেবে তো মালিক?
    দিদি, আমার মাইনে কত এখনো বলেনি কিন্তু স্যার। আপকো বাতায়া?
    নারে, আমিও জানিনা।
    আমাদের খুব টাকার দরকার দিদি, নইলে ভিকাসের এই ব্যবহার মেনে আমি এই কাজ করতাম না। ঘরে গিয়ে মাকে বলেছি। মা বলছে অ্যাডজাস্ট করে নিতে। ভিকাস আমার থেকে চার সাল বড়ো, কিন্তু এ কী ব্যবহার! আচ্ছা, আমার কাজটা ঠিক কী দিদি? পিওন? নৌকর? চাকরের কাজ?
    ভিকি ফোঁশ্‌ ফোঁশ্‌ করে কাঁদে।
    -হ্যালো মিস্টার দেবগন। আরে হিরো!
    আমি ভিকিকে ভোলাতে চেষ্টা করি বলি, ঐ দ্যাখ ভ্যাঁয়স্‌ আসছে।
    মিস্টার ভৈশ এর নাম। যেটা আমরা দিয়েছি আড়ালে।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ২০:২৮652184
  • একদিন সকালে একটা কাণ্ড হয়ে গেল।
    সক্কাল সক্কাল যেমন আসি, এসে ফ্যান চালিয়ে বসেছি। ভিকি গেছে কয়েকটা খালি বোতল নিয়ে ঐ এয়ারকন্ডিশনিং এর অফিসে খাবার জল ভরতে, হঠাৎ দেখি দৌড়ে ছুটে আসছে। হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে বলল, দিদি হিজড়া আসছে এদিকে! পয়সা চাইবে।
    আমি থতমত। পয়সা কোত্থেকে দেবো?
    ভিকির হাতের বোতলগুলো খালি। জল ভরতে পারেনি। ভয় পেয়ে রয়েছে।
    প্রায় তক্ষুনি ঘরে ঢুকলেন আমাদের মালিক ও সঙ্গে একজন বয়স্ক মহিলা, প্রকাণ্ড লম্বা ও চওড়া।
    হ্যাঁ তাঁর চেহারায় চলনে বেশ পুরুষালি ভাব এবং ঝলমলে ব্রাইট রঙের শাড়ি পরণে, কিন্তু ভিকি ভুল ভেবেছে।
    মিস্টার ভৈশ চেঁচিয়ে উঠলেন, এ সন্তোষ! ইধার আও! চেয়ার লাও!
    আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম। তাড়াতাড়ি আমার চেয়ারটাই ঐ ভদ্রমহিলাকে দেওয়া হলো। তিনি বসলেন এবং আগে বলা হয়নি চেয়ারটার দুটো পায়া অল্প নড়বড়ে ছিলো, তাই উনি বসবার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই চেয়ারটা কাৎ হয়ে মুচড়ে হেলে গেল একদিকে, এবং ভদ্রমহিলাও পড়ে গেলেন মেঝেয়।
    আমরা দুজনেই দৌড়ে গিয়ে ওঁকে তুলবার চেষ্টা করতে লাগলাম এবং তখনই দেখলাম দরজা দিয়ে ঢুকছে ভিকাস ও তার সঙ্গে একজন পুরুৎ।
    ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়াতেই মিস্টার ভৈশ ওঁকে ধরে ধরে হাঁঠিয়ে নিজের সেই গদিমোড়া চেয়ারে বসালেন।
    মাম্মি, আর ইউ হার্ট?
    নেহি, ঠিক হ্যায়। পূজা করো।

    এবারে দেখলাম পুজোর সরঞ্জাম, ঠাকুর দেবতার মূর্তি সিংহাসন সমস্ত এক এক করে বেরোলো একটা থলি থেকে। দরজার বাঁহাতে দেয়ালে (আলমারির চেয়েও বেশি উঁচুতে) পেরেক ঠুকে সেখানে সিংহাসন সমেত ঠাকুরের মূর্তি এবং আনুষঙ্গিক যা যা থাকে, যেমন জরি লাগানো গোলাপী সিল্কের কাপড় দিয়ে সাজানোর ব্যবস্থা, ইত্যাদি সহযোগে মিনিট পনেরোর মধ্যে ঘন্টা নেড়ে নেড়ে পুজো শুরু হয়ে গেল। ঠাকুরের মূর্তি এত উঁচুতে ও সাইজে এতই ছোটো যে, তিনি গনেশ না লক্ষ্মীনারায়ন সেটা জানা হলো না। ইতিমধ্যে সকলেই পায়ের জুতো/চটি খুলে ফেলেছি।

    আরো আধাঘন্টা কি তারো বেশি সময় ধরে পুজো হবার পরে, প্রথমে মাম্মিজি ও মিস্টার ভৈশ প্রণাম করলেন মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে। এর আগে অবশ্য হাতজোড় করেছিলেন।
    এঁদের প্রণাম হয়ে যাবার পরে ভিকাস ও সন্তোষ প্রণাম করবার পার্মিশান পেলো।
    ঠাকুরমশায় খুব অসন্তুষ্ট হয়ে বিদায় নিলেন। দক্ষিণা খুবই কম পেয়েছেন। গাঁইগুঁই করছিলেন, তখন মিস্টার ভৈশ চেঞ্জ নেহি হ্যায়, বাদ্‌মে লে লিজিয়ে বলে ওঁকে বিদায় করলেন।

    তারপরে একটু পরিবর্তন হলো ওঁর বসার অ্যারেঞ্জমেন্টের। অ্যাকর্ডিং টু ভাস্তু ওঁর পেছনে একটা ওয়াটার সোর্স থাকতে হবে (অর্থাৎ সেই নোংরা টয়লেটটা), বাঁ হাতে দরজা, আরি কী কী যেন। মোটকথা টেবিলটা নব্বই ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিয়েই সমস্ত কন্ডিশন ফুলফিল করছে।
    সন্তোষ ও ভিকাস হাত লাগালো। আমিও।
    এখন ব্যবসায়ে উন্নতি ঠেকায় কে?
    আমাদের অল্প অল্প প্রসাদ দিয়ে মিস্টার ভৈশ মাম্মিজিকে বাড়ীতে পৌঁছে দিতে চলে গেলেন।

    ওঁরা বেরিয়ে যেতেই ভিকাস ভিকির ওপরে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। বেওকুফ! আক্কল নেহি হ্যায়? টুটা চেয়ার কেন দিয়েছিলি মাম্মিজিকে? থাপ্পড় খাবি তুই। যা! ঝাড়ু লাগা অফিস রুমে।
    ভিকি চুপ করে থাকে। তারপরে জলের বোতলগুলো হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বহুক্ষণ সে ফেরে না।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ২১:২১652195
  • এই সময়টায় আমি একটু একটু করে আইয়াটার নানারকমের কোড, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের নাম, কোড, ভিসার নিয়মাবলী, পাসপোর্ট ফর্ম ভর্তি করবার কায়দা এইসমস্ত একা একাই জেনে বুঝে নিচ্ছিলাম।
    মিস্টার ভৈশের নিজের কোনো গাড়ী ছিলো না। একটা গাড়ী ভাড়া করা হোতো ড্রাইভারসমেত, সেইটা রাখা থাকত বাড়ীটার সামনে রাস্তায় যেখানে নিয়মিত অন্যান্য গাড়ীর বডির কাজ হোতো।

    প্রায় রোজই দুপুরের দিকে আমরা অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজতে বেরোতাম ঐ গাড়ীটায় চেপে। সামনে ড্রাইভারের পাশে সন্তোষ পেছনের সীটে আমরা তিনজনে। মাঝে মাঝে আমি সামনে গিয়ে বসতাম। সারা দক্ষিণ কলকাতা চষে ফেলা হোতো ফ্ল্যাট খুঁজতে খুঁজতে। তারই মধ্যে আরো কয়েকটা ট্র্যাভেলিং এজেন্সীর অফিসে ঝটিকা সফর, দুয়েকজন ক্লায়েন্টের অফিসে গিয়ে হেঁ হেঁ করা, রাস্তার রোল কর্ণার থেকে লাঞ্চ।

    প্রথমদিকে আমার ধারণা ছিলো যে অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজা হচ্ছে অফিসের কারণে। এই অফিসের লোকেশান এতটাই রিমোট যে কাস্টমারের পক্ষে খুঁজে বের করা খুব শক্ত।
    মিস্টার ভৈশ পছন্দসই অ্যাপার্টমেন্ট কিছুতেই পাচ্ছিলেন না। অধিকাংশ বাড়ীতেই কমন এন্ট্রান্স। ওঁর চাই সেপারেট এন্ট্রান্স। যাদবপুর, সেলিমপুর, আরো দক্ষিণে, আরো আরো কত জায়গা খুঁজেও পছন্দসই সেপারেট এন্ট্রান্সওয়ালা ফ্ল্যাট ওঁর বাজেটের মধ্যে পাওয়া গেল না। ঘুরতে আমাদের সবার বেশ ভালো ই লাগত, যদিও এসি গাড়ী নয়। প্লাস ভিকাস ও সন্তোষ বাইরে খেতে খুব ভালোবাসত। বিল চোকাচ্ছে যখন মালিক, তখন ওরা এগরোল বা চিকেন রোল নয়, ডবল এগ্‌চিকেন রোল অর্ডার করত।
    বিকেলের মধ্যে আমরা ফিরে আসতাম, কারণ বিকেলের দিকটাতেই কাজ আসতে থাকত। চলত সন্ধ্যে রাত্রি অবধি। কোনোদিন আটটা, কোনোদিন নটা, সাড়ে নটা।
    ঝপাঝপ ব্লক ক্যাপিটাল লেটারে পাসপোর্ট ফর্ম ফিলাপ করা, ভিসার অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ফিলাপ, কোনো গ্রুপ বা একটা গোটা ফ্যামিলির জন্যে। একই কাজ একনগাড়ে, ভুল করবার অপশন নেই।
    এই কাজগুলো নিয়ে আসত চেনা জানা লোক অন্য ট্রাভেল এজেন্সী থেকে।
    তারপরে টিকেটিং, যদিও সেটাও বানাতে হতো অন্য জায়গায় গিয়ে। এই অফিসে কোনো কম্পিউটারই নেই।
    বিকেলের দিকে কয়েকদিন সিঙাড়া আনানো হয়েছিলো লোটাস সিনেমার উল্টোফুটের তেলেভাজার দোকান থেকে। আরেকটা দোকান ছিলো বাইকের অ্যাক্সেসরীর দোকানগুলোর ফুটে। সেটা পেরিয়ে আরেকটু এগোলে চিনে দাঁতের ডাক্তারের চেম্বার। দুটো দোকানের সিঙ্গাড়ার সাইজ, স্বাদ , দাম, সব আলাদা।
    সন্তোষ সিঙ্গাড়া নিয়ে ফিরলে মিস্টার ভৈশ আদেশ করতেন - পহলে আট দশ সমোসে ইধার লেকে আ।
    সেইগুলো দেবার পরে বাকি যা বাঁচত তাতে থাবা বসাত ভিকাস। সন্তোষ বেশি রেগে গেলে নিজে আর সিঙ্গাড়া খেতো না, ফেলে দিতো।
    এমনি এক বিকেলে, সিঙাড়া খেয়েই মিস্টার ভৈশ বেরিয়ে গেলেন, সেদিন আর ফিরবেন না জানিয়ে। আমরা যেন অন্ততঃ ছটা সাড়ে ছটা অবধি থাকি। যদি কোনো ক্লায়েন্ট আসে! যদি ফোন বাজে।
    একটু পরেই ভিকাস চলে গেল।
    ভিকি ও আমি ফন্দি করছি এবার আস্তে আস্তে কেটে পড়লে কেমন হয়, তখন ভিকি হঠাৎ কেমন অন্যমনষ্ক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
    - কীরে? যাবি না? চল বেরিয়ে পড়ি এবার।
    ভিকি ধীরে ধীরে বলেছিলো, দিদি একটা কথা বলি? কিসিকো নেহি বাতানা। আমার কসম।
    কী কথা?
    আমি আপনাকে নিজের দিদির মতো দেখি, রেসপেক্ট করি। ভ্যাঁয়স্‌ সে বাচকে রেহ্‌না।
    মানে? একথা বললি কেন? বল!
    না এর থেকে বেশি বলতে পারবো না।
    তোকে বলতেই হবে। কী জানিস তুই আমাকে বল।
    না দিদি আমার চাকরি চলে যাবে।
    বেশ। বলিস না, তুই যা। আমি এখন যাবো না।
    আচ্ছা বলছি। রাস্তায় গিয়ে বলছি।

    আমরা আলো নিভিয়ে অফিসের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে সিঁড়ির দিকে হাঁটতে থাকি।
    ঐ অফিসের পুষ্পিতাও তার ইপিয়েবিএক্স বন্ধ করে চাবি ইত্যদি গোছায় দেখতে পাই।

    কী অফিস হয়ে গেল?
    হ্যাঁ।
    কোনদিকে যাবে তুমি? আমি সাউথের দিকে যাবো।
    আমরা আসলে এখন একটু নর্থের দিকে যাচ্ছি।
    ওকে, বাই।

    রাস্তায় বেরিয়ে ভিকিকে চেপে ধরি। এবার বল, কী জানিস তুই।
    এখানে নয় চলুন চলতে চলতে বলছি।
    আমরা নিউমার্কেটের দিকে হাঁটতে থাকি।
  • সে | 203.108.233.65 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০১652206
  • সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে।
    অফিস ফেরতা মানুষের ভীড় তার সঙ্গে শপিং ও করে যাচ্ছে লোকে। চৈত্র সেল এখন এ পাড়াতেও। ফুটপাথ বলে তো এমনিতেই কিছু ছিলো না, কিন্তু রাস্তাতেও হাঁটবার পথ নেই। কেবলই ধাক্কা খাচ্ছি, এভাবে কথা বলব কেমন করে?
    সন্তোষ ওরফে ভিকি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে আবার কখনো কখনো অজয় দেবগনকে নকল করতে থাকে। লিন্ডসে স্ট্রীটের কাছটায় পৌঁছবার পরে ভিকি বলল - দিদি একটা জিনিস দেখাবো। এদিকে আসুন।
    একটা দোকানের শোকেসে কয়েকটা মেল ম্যানেকুইন। তাদের একটাকে দেখিয়ে বলে, ঐ টার গায়ে একটা খুব সুন্দর শার্ট ছিলো। লাস্ট পুজোয় আমার বন্ধুর সঙ্গে পূজা শপিং করতে এসেছিলাম। সাড়ে তিনশো টাকা ছিলো সাথে শার্ট প্যান্ট কেনার জন্যে। এই খানে এসে ঐ শার্টটা দেখে মাথা ঘুরে গেল। আমার বন্ধু, ওর নাম প্রিন্স, ও বলল ভিক্কি এই শার্টটা তোকে খুব সুট করবে। দোকানে গিয়ে শার্টটা দেখাতে বললাম, প্রাইস থ্রি নাইনটি ফাইভ। প্রিন্সের থেকে বাকি টাকাটা নিয়ে শার্টটা কিনে ফেললাম। প্যান্ট কেনা হলো না।

    দিদি, কাল আমি ঐ শার্টটা পরে আসবো, দেখবেন।
    তুই কিন্তু আমাকে বলছিস না আসল কথাটা।
    ও হাঁ। কাল ঘরে ফিরতে ফিরতে ভিকাস বলছিলো কি ভ্যাঁয়স্‌ ফ্ল্যাট দেখছে আপনার জন্যে।
    তার মানে?
    ও লোকটা বহুৎ বদমাশ আছে। এক নম্বর কা হারামি। আমি আপনাকে সব বলতে পারবো না। দিদি, আপনি এই চাকরি ছেড়ে দিন।
    তারপর?
    আপনি তো পড়ালিখা জানেন, ইংলিস জানেন, আরেকটা চাকরি পেয়ে যাবেন।
    কোথায় খুঁজবো? আমি তো কারোকেই চিনি না।
    কেন? আপনার কোনো রিলেটিভ নেই, মা বাপ ভাই বোন?
    না
    এ কী কোরে হয়? নিশ্চই আছে। ফ্রেন্ড্‌স্‌?
    দেখি ভেবে কী করা যায়।
    আপনি ঐ ম্যাডামকে বলুন। পুষ্পিতা ম্যাডাম।
    ঠিকাছে, কালকে কথা বলব।
  • arindam | 127.194.38.198 | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:৫৮652217
  • দুর্দান্ত। একটানা চলুক। না থেমে।
  • Stuti Biswas | ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৩৭652228
  • চাকরির গল্প বেশ জমে উঠেছে ...............আগে আশাকরি রহস্য আছে ।
    খুব ভাল লাগছে । রেলগাড়ি এগিয়ে চলুক ।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:৩৩652239
  • কিন্তু পরদিন সন্তোষ এলো না।
    আমি সকালে বেশ তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছলাম কিন্তু একা একা বসেই রইলাম। নটা বেজে গেল ভিকি আসেনি। আমি একা। ঠাকুরের সামনে ধূপ জ্বালিয়ে দিত ভিকি, একবার ভাবলাম আমিই জ্বালিয়ে দিই - কিন্তু দেশলাই খুঁজে পেলাম না।
    এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে ভাবলাম পুষ্পিতার সঙ্গে একটু গল্প করে এলে কেমন হয়?
    চলে গেলাম ওদের অফিসে রিসেপশানে।
    পুষ্পিতা প্রচণ্ড ব্যস্ত। একের পর এক লাইন ট্রান্সফার করছে ইপিয়েবিএক্সে। তার সামনে আবার রাখা রয়েছে হাজিরার খাতা। এমপ্লয়িরা ঢুকছে সেই খাতায় টাইম লিখে সই করে করে। আড়চোখে পুষ্পিতা নজর রাখছে সেদিকেও। আমায় দেখে চোখের ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল, তারপরে একটু ফাঁকা হতেই বললাম তোমার কখন সময় হবে? একটু কথা ছিলো।
    তুমি চলে যাও, আমি পরে তোমাকে ফোন করছি।

    অফিসঘরে ফিরে ঢুকতে না ঢুকতেই ফোন বেজে উঠলো।
    হ্যালো
    আরে আমি। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করলে কে কোথা থেকে লাগিয়ে দেবে স্যারের কানে, তার থেকে এটাই ভালো। তোমাদের মালিক যখন এখান দিয়ে যাবে আমি দেখতে পাবো, সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দেবো।
    থ্যাঙ্ক্‌স্‌।
    থ্যাঙ্ক্‌স্‌ দেবার কিছুই নেই। চাকরি কেমন লাগছে বলো।
    ভালো লাগছে না। তোমার চেনা কোনো জায়গা আছে?
    সেকী! ভালো লাগছে না কেন? তোমাদের তো কাজের কোনো চাপই নেই। অবশ্য কোনো ডেফিনিট অফিস আওয়ার নেই সেটাও ঠিক। অনেকক্ষণ থাকতে হয়। স্যালারী কেমন দিচ্ছে?
    জানিনা।
    আহা, ন্যাকামি হচ্ছে। স্যালারী কত না জেনেই বুঝি চাকরিতে ঢুকেছো?
    সত্যি জানি না, কিছু বলেনি।
    এ বাবা! তাই নাকি? জেনে নাও তাহলে। জিগ্যেস করো বসকে। ভালো স্যালারী দিলে চাকরি ছাড়বার কথা ভুলে যাও।
    জিগ্যেস করব, কিন্তু আমার এখানে ভালো লাগে না।
    কেন? কাজে মন বসছে না? লাঞ্চ ব্রেকে আমার এখানে চলে এসো। আড্ডা মারলেই আস্তে আস্তে ভালো লাগবে।
    তোমার মতো একটা চাকরি কোথাও পাওয়া যায় না?
    আমার মতো? মানে আমার চাকরিটা? সেটা তো আমি এখন করছি? বলছো ছেড়ে দিতে?
    না! না না, তা বলিনি। বলছিলাম কি, যদি কোথাও তোমার জানা থাকে।
    পুষ্পিতা হেসে ওঠে।
    ঠিক আছে দেখবো। পরে কথা হবে। তুমি গ্র্যাজুয়েট তো? না হলেও চলবে, কিন্তু ইপিয়েবিএক্সটা বোধয় জানো না, না?
    না। ওটা শিখতে হবে?
    হ্যাঁ ওটা জানতেই হবে। সে আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবো, শক্ত কিছু নয়। কেটে দিচ্ছি। তোমার বস ঢুকছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৭:৪৬652250
  • ভিকাস এলো সময়মতোই। জানালো সন্তোষ অসুস্থ তাই আজ আসতে পারবে না। বুখার আয়া।

    সমস্তদিনটা আমার প্রচণ্ড অস্বস্তিতে কাটছে, দুটো চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করছে, একটা সেই ফ্ল্যাট ভাড়া নেবার কথাটা, অন্যটা স্যালারী। বারবার ভাবছি স্যালারীর ব্যাপারটা জিগ্যেস করে নিই, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছি না। হয় মিস্টার ভৈশ টেলিফোনে, নয় ভিকাসের সঙ্গে কীসব আলোচনা করে চলেছে। আমি সুযোগ খুঁজছি কথা বলবার।
    এভাবে হবে না। বসেই রইলাম। বসে বসে বিরক্ত হয়ে উঠছি।
    ভিকাস তো আমাকে মানুষ বলেই গন্য করে না। কথাও বলে না।
    করবার মতো কাজও হাতে নেই।
    আমি একটা ফাঁকা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে তাতে আঁকিবুকি কাটতে থাকি। তারপরে একটা দুটো অক্ষর। শব্দ। কথা। বাক্য। সমস্ত বাংলায়।
    তারপরে সমস্তটা হিজিবিজি কেটে দিই, যাতে কেউ পড়তে না পারে।
    তারপরে মাথায় ফন্দি খেলে যায়।
    এরা চেষ্টা করলেও বুঝতে পারবে না এমন ভাষায় লিখে চলি। মনের কথা। পাতার পর পাতা।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৫৬652261
  • পরদিন সকালে আসতেই দেখি ভিকি অফিসঘর ঝাঁট দিচ্ছে। আমাকে দেখেই হাসে। ওর পরেছে একটা ক্রীম রঙের সিন্থেটিক শার্ট। ফুলহাতা। শার্টের ডানদিকে বুকের ওপরে লম্বালম্বিভাবে ডিজাইন করা লাল ব্রাউন কালো দিয়ে লতাপাতা ফুল। বুঝে যাই এই সেই শখ করে কেনা শার্ট।
    তোর জ্বর সেরে গেছে?
    আমার বুখার হয় নি। মা বিমার হ্যায়।
    ও! কেমন আছেন মা?
    অভি ভি বুখার হ্যায়, লেকিন কাম তো করনা হি পড়েগা।
    ঠিক।

    শোন্‌ আজ স্যালারীর ব্যাপারটা জিগ্যেস করব।
    ও চুপ করে থকে।

    একটু পরে ফোন বাজে। পুষ্পিতা।
    হ্যাঁ বলো।
    তোমার বসের ফোন।
    হ্যালো, গুড মর্ণিং।
    টুডে আইল বি বিট লেট, ভিকাস আয়া?
    না এখনো আসেনি।
    সন্তোষ?
    এসেছে। আমরা দুজনেই আছি।
    ভিকাস আসলে টেল হিম টু কল মি।
    ইয়েস স্যার।

    বিকেলের দিকে মিস্টার ভৈশ আসে। সঙ্গে সদ্য কেনা মোটর গাড়ী, সেকেন্ডহ্যান্ড।

    আমরা নীচে গিয়ে দেখে আসি গাড়িটা। মেরুন রঙের ফিয়াট। বেশ পুরোনো।

    ভিকাস খুব প্রশংসা করতে থাকে গাড়িটার। অল্পদূরে বড়োরাস্তার দিক থেকে হুব জোরে আওয়াজ করে কোনো গাড়ির টায়ার ফাটে। ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রীটের পুরোনো বাড়ীগুলোর খাঁজে খাঁজে বসে থাকা কাক আর পায়রাগুলো ডানা ঝাপটে উড়ে ওঠে প্রায় একসঙ্গে।

    হঠাৎ মিস্টার ভৈশ আমার দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে একশটা টাকা বের করে। তারপরে সেটা আমার হাতে দিয়ে বলে, বাই সাম গিফ্‌ট্‌ ফর পুষ্পিতা।
    আমি টাকাটা হাতে করে নিয়ে বলি, কী কিনব?
    বাই সামথিং। অন্‌ দি অকেশন অফ বেঙ্গলি নিউ ইয়ার। ও ফটাফট ফোন লাগিয়ে দেয়। এনিথিং, লাইক পারফিউম অর লিপ্স্‌টিক। ওর সাথে দোস্তি করো। ওকে হাতে রাখতে হবে। বাই ওয়ান গ্রীটিং কার্ড, বেঙ্গলি নিউ ইয়ারওয়ালা।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:১৯652272
  • একশটাকায় কোনো পারফিউম পাওয়া যায় না। অনেক দোকান ঘুরেও কোথাও পাই না। লিপস্টিক পাওয়া যায়, কিন্তু কোন রং কিনব বুঝে উঠতে পারি না। রেভ্‌লন পাওয়া যায়, একশো টাকা দাম, কিন্তু তাহলে কার্ড কেনা হবে না।
    শেষে নব্বই টাকা দিয়ে একটা ওডিকোলোন কিনি। দশটাকা বাঁচে। কার্ড হবে না। গরমে মাথা ঘুরছে। লাইটহাউসের উল্টোদিকের একটা দোকান থেকে কোল্ড ড্রিঙ্ক নিই এক বোতোল। আটটাকা।
    তারপরে ফিরে আসি অফিসে।
    পুষ্পিতা সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিলো।
    চলে যাচ্ছো?
    কিছু বলবে? আজ আমার একটু তাড়া আছে।
    এই নাও।
    আমি ওডিকোলোনের বাক্সটা ওকে দিই।
    আমাদের অফিসের তরফ থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
    ও বাক্সটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে কীরকম রেগে যায়।
    এটা কে পাঠিয়েছে? তোমাদের মালিক।
    হ্যাঁ।
    আমাকে এত চীপ ভেবেছে? ও ভেবেছেটা কী? এত বড়ো সাহস!
    তুমি নেবে না? নাও না। আমি নিজে কিনেছি।
    তোমাকে দিয়ে কিনিয়েছে? এত সস্তার গিফ্‌ট দিয়ে আমাকে ইনসাল্ট করতে চায়?
    আমি জানিনা। তুমি প্লীজ নাও।
    না! আমি নেব না। তোমার বস কে গিয়ে বোলো যে এসব চীপ জিনিস আমি টাচ্‌ করি না। ও কী মনে করে নিজেকে? ওর মতো দশটা লোককে আমি পায়ের নীচে রাখতে পারি।
    পুষ্পিতা রেগে গজগজ করতে থাকে। আরো কতো কি বলে যায়।
    আমি অফিসে চলে যাই, সবাই চলে গেছে। দরজা ভেজানো। আলো জ্বালিয়ে আলমারির দেরাজে রেখে দিই ওডিকোলোনটা।

    পুষ্পিতা রেগে গেলে আমায় ইপিয়েবিএক্স শেখাবে কে? ও বলেছিলো সবচেয়ে ডিফিকাল্ট হচ্ছে কন্‌ফারেন্স্‌ কল। ওটা না জানলে টেলিফোন অপারেটরের কাজ কেউ দেয় না।
  • ranjan roy | 132.176.160.89 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ১৯:২৬652283
  • অসম্ভব জমে গেছে। চলুক, না থেমে!
  • AS | 125.187.43.7 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ২০:১৫652295
  • তারপর?
  • সে | 188.83.87.102 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ২০:৩০652306
  • চিন্তা হয়, কাল সকালে মিস্টার ভৈশ্‌ কে কী বলব?
    আটটাকার কোল্ডড্রিঙ্ক খাওয়াটা কি ভুল হোলো? তারচেয়ে একশটাকা দিয়ে রেভ্‌লন কিনে দিলে পুষ্পিতা হয়ত রেগে যেত না। ওডিকোলোনের বাক্সটার ওপরে কিন্তু লেখা আছে M.R.P Rs.120/- only.
    এত চিন্তা মাথায় নিতে ইচ্ছে করে না। এখন ফিরতে হবে। কিন্তু ফেরাটা কি এক্ষুনি সত্যিই এত জরুরি?
    একটু দেরি করে ফিরি বরং? কিংবা যদি না ই ফিরি?
    এই অফিসঘরেই ঘুমিয়ে থাকি সারাটা রাত?
    কে জানবে? কেউ তো আসে না এদিকে। আলো নিভিয়ে এই টেবিলদুটোর ওপরে শুয়ে থাকব। ফ্যান চলবে।

    আলো নিভিয়ে দিলাম।

    ওমা! সেই একটিমাত্র কাচের শার্সিওয়ালা জানলার ওপারে সেই ইঁটবেরোনো দেয়াল, সেই নোংরা ফাটা পাইপের একটু পাশেই একটা জানলা দেখা যাচ্ছে, এই ঘরের লেভেলে নয়, সামান্য ওপরে। সেখানে আলো জ্বলছে, একটা বাচ্চা ছেলে পড়ার টেবিলের সামনে চেয়ারে পড়তে বসেছে। পুরোনো আমলের বাড়ী, দরজার সাইজের জানলা।
    এই ঘর অন্ধকার হলেও, বাইরে থেকে আলো এসে ছায়া ছায়া অন্ধকারে আস্তে আস্তে সব দেখতে পাচ্ছি।
    ঠাকুরের ঝুলন্ত সিংহাসনটাও চক্‌চক্‌ করছে, তারপরে মিস্টার ভৈশের টেবিলের ওপরেও পেপার ওয়েট, আর ওটা কী?
    এগিয়ে গিয়ে দেখলাম সিগারেটের প্যাকেট, গোল্ডফ্লেক্স্‌ কিংসাইজ। প্যাকেটে একটাই সিগারেট অবশিষ্ট রয়েছে। খাবো? দেশলাই কোথায় জানি না। টেবিলের দেরাজ খুললাম। যদি দেশলাই থাকে। এখানটা খুব অন্ধকার, কিছুই দেখা যায় না। আলো জ্বালাবো? নাহ্‌ থাক। এইত্তো পেয়ে গেছি লাইটার।
    সিগারেটটা জ্বালিয়ে ঐ বাক্সটাকেই অ্যাশ্‌ট্রে বানিয়ে ফেলি।
    তারপরে ভাবতে থাকি।
    কী করব কালকে?
    ফ্ল্যাট, স্যালারী, ওডিকোলোন, ইপিয়েবিএক্স - এত সবের মধ্যে কোনটা দিয়ে শুরু করব?
    সিগারেট দ্রুত জ্বলে শেষ হয়ে আসছে।
    নাঃ, বেরিয়েই পড়ি। এখন হাঁটতে হবে। বাস ধরবার কোনো তাড়া নেই আমার। ভাবতে ভাবতে মাইল কে মাইল হাঁটা যায়।
  • byaang | 37.57.103.94 | ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ২২:০৫652317
  • মন দিয়ে পড়ছি। অপেক্ষায় রইলাম।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৫:০৫652328
  • খুব ভয় ছিলো মনে, এই গিফ্‌ট্‌ দেয়া নিয়ে। পরদিন আবার শনিবার, তারপরেই পয়লা বৈশাখ। পুষ্পিতাদের শনিবার হাফ ডে, আর আমাদের অফিসে তো কোনো টাইমের ঠিক নেই, বস যতক্ষণ থাকতে বলবে থাকতে হবে।
    অফিসে ঢোকার সময় পুষ্পিতাকে দেখতে পেলাম না, তখনো আসেনি। বাঁচা গেল। ওকে অজান্তে অপমান করে ফেলেছি, আজ দেখা হলে কী বলতাম ? হয়তো আজও রেগেই থাকবে।
    ভিকিকে দেখালাম ওডিকোলোনটা।
    আরে! খুব ভালো গিফ্‌ট্‌ তো!
    ও আবার শুঁকে দেখতে চায়।
    খুলিস না, খুলিস না। বসের টেবিলে রেখে দে বরং।

    মিস্টার ভৈশ তো অফিসে ঢুকেই "পানি পিলাও" বলেই টেবিলের ওপর ওডিকোলোনটা দেখে ফেললেন।
    এ ক্যা হ্যায়?
    ওটা কালকে কিনেছি।
    পুষ্পিতা ম্যাডাম কে লিয়ে। (ভিকি সংযোজন করে)
    আচ্ছা। তো দিয়ে দাও।
    ম্যাডাম কে তো সকালে দেখলাম না।
    ওকে ওকে, আই উইল গিভ হার। দেয়ার ইজ নো র‌্যাপিং পেপার? নো কার্ড?
    নো কার্ড।
    ভৈশ ওডিকোলোন নিয়ে ধাঁ করে বেরিয়ে যায়।

    আমার বুক ঢিপ ঢিপ, এবার কী ঝামেলা চেঁচামেচি হবে কে জানে।

    পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায়, ফেরার নামটি নেই।

    ভিকি বলে, দেখে আসবো?
    যাবি? যদি তোকে দেখে ফ্যালে?
    বলব, জল আনতে যাচ্ছি।

    জল নিয়ে ফিরে আসে ভিকি।

    কী দেখলি?
    স্যার ঔর ম্যাডাম খুব হাসছে। কথা করছে।
    আর গিফটটা?
    ম্যাডামের টেবিলে আছে।

    দুপুরের দিকে ওদের রিসেপশানে গেলাম। পুষ্পিতা নিজেই আমাকে ডাকল।
    শোনো, তোমাকে একটাকথা জিগ্যেস করব ভাবি রোজ।
    কী কথা?
    তুমি কী খাও বলোতো? এত রোগা স্লিম থাকো কীকরে? বলোনা।
    খেয়ে কি আর রোগা হওয়া যায়?
    এই না, সত্যি সত্যি বলো না।

    আচ্ছা তুমি কোনদিকে থাকো যেন?
    বললাম কোথায় থাকি।
    ও আচ্ছা, আমিও সাউথে, গাঙ্গুলীবাগানে।
    ওদিকটা আমি চিনি না।
    তোমার ঠিকানা দাও, পয়লা বৈশাখ তোমার ওখানে যদি যাই?
    আমার ওখানে! সত্যি?
    হ্যাঁ। কেন তোমার কোনো প্রোগ্রাম আছে?
    এক্কেবারেই না। তুমি পারবে চিনে আসতে? আমি বরং তোমায় কোনো একটা জায়গা থেকে তুলে নেবো।
    সেই ভালো।
    শখের বাজার চেনো? চৌরাস্তা? ব্লাইন্ড স্কুল?
    শখের বাজার। বিকেল তিনটে থেকে সাড়ে তিনটে। অসুবিধে হবে?
    আরে না না! আমি অপেক্ষা করব। খুব মজা হবে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৫:৩০652339
  • ব্যবসায়ীরা পয়লা বৈশাখ হালখাতা করে, পুজো করে জানতাম। কিন্তু সে সম্ভবতঃ বাঙালীরা। আমাদের ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর কোম্পানীতে সেরকম কিছু হোলো না। অন্ততঃ অফিসে তো নয়ই। ছুটি ছিলো সেদিন, রবিবারের মতো।

    বিকেলে পুষ্পিতাকে আনতে গেলাম। খুব পাঙ্কচুয়াল মেয়ে। সময়মতো এসেছিলো, সঙ্গে এক ভদ্রলোক। বয়্সে আমাদের থেকে অনেকটা বড়ো, তা দেখে মনে হচ্ছিলো চল্লিশের কাছাকাছি তো হবেই। বললো ওর বন্ধু। দেখলাম বেশ ঘনিষ্ঠ দুজনে। ভদ্রলোক বিশেষ কথা বলেননি। চুপচাপই ছিলেন। চা ছাড়া আর কিছুই খাওয়াই নি ওদের।

    ফেরার সময়ও ওদের পৌঁছে দিতে গেছি বড়ো রাস্তায়। তখন পুষ্পশ্রী সিনেমায় মাসের পর মাস চলতে থাকা দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে চলে গিয়ে নতুন বই এসেছে। ইংরিজি।

    ভাবছিলাম ওদের সিনেমা দেখাই একটা। ওরাও চাইছিলো। কিন্তু তারপরেই বললো এসবদিকের হলে কি আর পুরোটা থাকবে? আসল সীনগুলোই সব কেটে দিয়েছে হয়ত।
    আসল সীনগুলো মানে?
    এই মেয়েটা না ভীষণ ন্যাকা। যেন কিছু বোঝে না।
    হলের বাইরে বড়ো পোস্টার নেই, আমি হলের কাছে গিয়ে কাগজের পোস্টারটা দেখি। একটা বাঁদরের ছবি, পাশে কয়েকটা বাচ্চা। এটা তো বাচ্চাদের ফিল্ম। ডান্স্‌টন্‌ চেক্‌স্‌ ইন্‌।
    টিকিট কাউন্টারে গিয়ে জিগ্যেস করলাম, দাদা টিকিট হবে ইভ্‌নিং শোয়ের?
    কটা বলুন? হল ফাঁকা যাচ্ছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:০৫652350
  • পয়লা বৈশাখের পর থেকে আরেকটু বেড়ে গেল ব্যবসা। সব কাগজপত্র রেডি করা হোতো অফিসেই, কেবল টিকিটগুলো প্রিন্ট হয়ে আসতো (যেটাকে এরা টিকেটিং বলে) অন্য একটা কোম্পানীর থেকে। সেই পরিকাঠামো তখনো চালু হয় নি।
    কোনো কোনো দিন এক দেড় লাখের ব্যবসা হয়েছে, কোনোদিন তারো বেশি।
    ভিকাসের কাজ ছিলো ঘোরাঘুরি করা, মূলতঃ প্রিন্টেড টিকিটগুলো নিয়ে আসা। কোনো ক্যাশ লেনদেন হতো না ঐ অফিসে।
    তাছাড়া অনেক সময়েই আমরা ঘুরে ঘুরে টিকিট পৌঁছে দিতাম কাস্টমারের কাছে। ঐ নতুন কেনা মেরুন ফিয়াটে করে।
    মধ্যে একদিন গাড়ীটা স্টার্ট নিচ্ছিলো না। মেকানিক ফেরৎ দিলো একদিন পরে।
    ঐ সাংঘাতিক গরমের দিনগুলোয় চাইতাম একটু দেরী করে অফিস ছুটি হোক, ফিরবার বাসে ভীড় কম থাকবে, গরমটাও কমবে যত রাত হবে।
    মধ্যে একদিন পুষ্পিতার কাছে গিয়ে দেখলম ইপিয়েবিএক্স বোর্ড কেমন করে ব্যবহার করতে হয়। আরেকটা নাকি অন্যরকমের বোর্ড হয়, তবে তার মেকানিজমও প্রায় একইরকম।
    শুধু কন্‌ফারেন্সটা শেখা হচ্ছে না। সুযোগই হচ্ছে না। যখন কন্‌ফারেন্স থাকে তখন আমি অফিসঘর ছেড়ে বেরোতে পারি না। তবু মোটামুটি জিনিসটা বুঝে নিয়েছি। সামনাসামনি একবার যদি দেখে নিই ঠিক পেরে যাবো।
    তারপরে একটা ভালো চাকরি খুঁজতে হবে।
    ভৈশ্‌কে একবার স্যালারীর কথা জিগ্যেস করেছিলাম।
    বলল, এখন বিজি আছি। উই ক্যান ডিস্‌কাস্‌ ইট লেটার।
    আচ্ছা, একজন টেলিফোন অপারেটার কাম রিসেপশানিস্টের চাকরিতে স্টার্টিং স্যালারী কেমন হতে পারে?
    পুষ্পিতাকে জিগ্যেস করেছিলাম।
    এটা কোম্পানী টু কোম্পানী ভ্যারী করে।
    তা হলেও, মিনিমাম কীরকম দিতে পারে?
    এটা খুব মুশকিলের প্রশ্ন। আর তুমি এত ঘাবড়াচ্ছো কেন? তোমার বস তো বেশ ভালো লোক। খুব জলি টাইপ। আমাদের স্যার কে দেখলে বুঝতে। খুব গম্ভীর আর রাশভারী। অবশ্য ভীষণ ভালো লোক। জানোতো? খুব রেসপেক্টেড।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:২৮652361
  • আস্তে আস্তে মাস শেষ হয়ে আসছে। ভিকি সকালবেলা খুব খুশি খুশি লাজুক মুখে জিগ্যেস করে, দিদি, পগার কব মিলেগা, স্যার কিছু বলল?

    সেদিন এপ্রিলমাসের শেষ শুক্রবার। দুপুর থেকেই একনাগাড়ে তৈরী হয়ে আসছে টিকিট। সেইসঙ্গে একগোছা পাসপোর্ট ফর্ম ফিলাপ হয়েছে। গাদাগাদা শেঙ্গেন ভিসার ফর্ম ফিলাপ করা চলছে, নামে মানুষে মিলিয়ে মিলিয়ে ফোটো সাঁটা হচ্ছে।
    হোটেলের বুকিং ও নাকি এখন থেকে করা যাবে এরকম আলোচনা চলছিলো।
    ভিকাস বিকেলের দিকটায় গিয়ে আবার কয়েকটা পেমেন্টের চেকও নিয়ে এলো।
    বীভৎস গরম। দরজাটা হাট করে খুলে রেখেও কোনো সুবিধে হচ্ছে না। তাও ভাগ্য ভালো এদের জেনারেটার আছে, লোডশেডিং কখন হয় টেরও পাওয়া যায় না।
    আমি এমনিতেই টিফিন খাই না পয়সার টানাটানির কারনে, তাই দুপুরে খিদে পাবার অভ্যেসটাই চলে গেছে। বিকেলে কোনোদিন সিঙ্গাড়া এলো তো খেলাম, না খেলেও কোনো অসুবিধে হয় না।
    মিস্টার ভৈশ্‌ দুপুরে দহি আনিয়ে খেলেন; ঢাইসো ঢাইসো করে দুটো পৃথক ভাঁড়ে। ভিকাস বাইরে খায়, সন্তোষ সময়বুঝে আলমারির আড়ালে গিয়ে টিফিনকৌটো খুলে খেয়ে নেয়।
    সন্ধ্যে সাতটা সাড়ে সাতটা নাগাদ, মিস্টার ভৈশ্‌ হাঁকলেন - প্যাক্‌আপ!

    এই শব্দটার মানে আজকের মতো কাজ বন্ধ।
    কিন্তু এখানেই শেষ নয়, কিছু টিকিট আজ রাতেই ডেলিভারী দিতে হবে।
    সন্তোষের ছুটি হয়ে গেল। সে বাড়ী চলে যাবে।
    বাকি রইলাম আমরা তিনজন। মালিক, ভিকাস ও আমি।
    টিকিটপত্র নিয়ে নড়বড়ে ফিয়াটে ছুটে চলাম আমরা ল্যান্স্‌ডাউন অ্যাভিনিউয়ের দিকে।
  • byaang | 132.178.199.97 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:৩৩652372
  • তারপর?
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৬:৫৪652383
  • হ্যাভ ইউ এভার বিইন তো উইন্ড্‌সর?
    উইন্ড্‌সর?
    ইয়েস উইন্ড্‌সর।

    মনে করতে চেষ্টা করলাম। নাঃ যাইনি। ইংল্যান্ডে গিয়েছি ঠিকই, কিন্তু লন্ডন কেম্ব্রিজ দেখেই সময়ে কুলোয় নি তো আলাদা করে আবার উইন্ডসর ক্যাসেল।

    নো, আই হ্যাড নট ভিজিটেড।
    তো চলো, অভি উইন্ড্‌সর চলেঁ। লোয়ার সার্কুলার রোড। উইন্ড্‌সর। লেট আস সেলিব্রেট নাউ। লাঞ্চ নেহি কিয়া। বহৎ ভুখ লগি হ্যায়। ভিকাস ক্যা পিয়েগা?
    বাকার্ডি স্যার।
    আর্‌রে! ভেরি গুড। বাকার্ডি উইথ তন্দুরী চিকেন?
    ইয়েস স্যার।
    উই হ্যাভ মেড ভেরী গুড বিজনেস। আভি পেমেন্ট মিলনা বাকি হ্যায়, ফির ভি। ইট্‌স্‌ টাইম ফর সেলিব্রেশান।

    আমি ভেবে দেখি এত রাতে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলে আমি বাড়ি ফিরব কেমন করে?

    মিস্টার ভৈশ্‌, আই শুড লীভ নাউ, ইফ ইয়ু কুড ড্রপ মী হিয়ার...
    নো ওয়ে! ইউ মাস্ট জয়েন আস। আরে বাবা, হ্যাভ অ্যা ড্রিঙ্ক অ্যাটলিস্ট, ইফ ইউ ডু নট ওয়ান্ট টু হ্যাভ ডিনার, আই ওন্ট ফোর্স ইউ।

    এতো মহা মুশকিলে পড়া গেল।
    নটা বাজে প্রায়। ল্যান্সডাউন রোডে কাস্টমারের ওখানে টিকিট ড্রপ করবার সময় আমিতো গাড়িতেই ছিলাম। কেন যে জোর করে নিয়ে বেরোলো আমাকে। এতরাতে বাড়ী ফিরে কখন রাঁধবো? টায়ার্ড লাগছে।

    আমার প্রতিবাদ মিস্টার ভৈশ শুনলেন না। উপরন্তু ভিকাস বাকার্ডি ও তন্দুরী চিকেনের লোভে ভৈশের বেয়াড়া আবদারে ক্রমাগত সায় দিয়ে গেল।
    চুড়ান্ত লোভী একটা।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৭:৩১652394
  • ওয়ান ড্রিঙ্ক ওনলি। ব্যস্‌! দেন টেক অ্যা ক্যাব অ্যান্ড গো।

    কী অদ্ভুত! টেক অ্যা ক্যাব অ্যান্ড গো? এখান থেকে ট্যাক্সিতে ফিরতে গেলে একশ টাকার ওপরে লেগে যাবে। কত লাগবে আদৌ সে সম্বন্দে আমার কোনো ধারনা নেই। অত টাকা আমার সঙ্গেও নেই। আমার সঙ্গে বড়োজোর কুড়ি পঁচিশ টাকা থাকে।

    উইন্ডসর বারটা একটা প্রকান্ড উঠোন মতো জায়গা, কতকটা ছাদ আছে, কতকটা খোলা আকাশ। ঠিক মনে নেই। ঢুকলেই মনে হয় যেন সবাই কেবল মদ খাবে বলেই এসেছে। বড়ো বড়ো টেবিল, একগাদা চেয়ার। কোনো সৌন্দর্য নেই। চারপাশে টিউবলাইট জ্বলছে, নাকি নিয়ন, কেমন একটা চাঁছাছোলা পরিবেশ। মহিলা খুব কম। আমায় নিয়ে হয়ত তিনজন।
    খাবারের গন্ধ ছাপিয়ে চারদিকে শুধু মদের গন্ধ।
    একটা টেবিল পেলাম একটু ভেতরের দিকে। এখানে এসে অবশ্য একটু গরম কম লাগছে। সানমাইকা দেয়া টেবিলের ওপর অল্প পরেই এসে গেল ড্রিঙ্ক। ওদের জন্যে বাকার্ডি। আমি লেমনেড চেয়েছিলাম, কিন্তু জোর করে আনানো হলো লেমনেড মেশানো মদ।
    লম্বা একটা গ্লাস।
    গ্লাসের গায়ে বিন্দু বিন্দু জল জমছে। ঠান্ডা ড্রিঙ্ক।
    তাড়াতাড়ি শেষ করে উঠতে যাবো, ওরি মধ্যে অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে আরেকটা।
    আরে! হ্যাভ ওয়ান মোর।
    দ্বিতীয় গ্লাসটা শেষ করে আমি সোজা উঠে দাঁড়ালাম।
    মাথা ঘুরে যাচ্ছে, বুঝতে চেষ্টা করছি বেরোবার দরজাটা কোনদিকে। চারিদিকে সবাই কথা বলে চলেছে। এত লোক, এত কথা, কাঁটা ছুরির টুংটাং, গ্লাসের আওয়াজ, খিলখিল হোহো হাসি, সব কেমন যেন কানের পাশে হয়ে চলেছে, আলোগুলো হেজি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
    তবু আমি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে বেরোবার দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
    ভিকাস সম্ভবতঃ পেছন পেছন আসছে, কিছু বলছে, সেটা ট্যাক্সি না তন্দুরী চিকেনের ব্যাপারে স্পষ্ট বুঝতে পারছি না।
    দরজাটা কেমন আপনা আপনি খুলে গেল। আসলে একজন দারোয়ান থাকে যে অনবরত দরজা খুলে দেয়।

    বার থেকে বেরিয়ে ফুটপাথের ওপরে দাঁড়িয়ে আমি বুঝতে চেষ্টা করছি কোথা দিয়ে গেলে বাসস্টপটা পাবো।
    না। এখানে তো আমার বাস দাঁড়াবে না। আমায় যেতে হবে চৌরঙ্গী। চৌরঙ্গী যেতে হলে প্রথমেই দরকার থিয়েটার রোড। সেটা কোনদিকে আমি বুঝে উঠতে পারছি না।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০৭:৫৮652406
  • একটু দাঁড়িয়ে বুঝে নিতে চাই আর এমনি সময়েই হড়হড় করে বমি করে ফেলি। তারপর একটু হেঁটে দক্ষিণমুখো গিয়ে আবারো খানিকটা।
    কয়েকটা লোক দেখলো মনে হয়।
    দেখুকগে।
    আরো হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণ পরে চোখে পড়ে জিমিস কিচেন। ঐ তো আরেকটু গিয়ে শের-এ-পাঞ্জাব ধাবা।
    একবার থিয়েটার রোডে এসে পড়া গেছে, আর চিন্তা নেই।
    নাটক বলে নাটক? থিয়েটার রোডের নাটক। এখন অনেক হাল্কা লাগছে। শুধু সোজা পায়ে হেঁটে যেতে হবে পশ্চিমমুখো। যতক্ষণ না চৌরঙ্গী অবধি পৌঁছই। থিয়েটার রোডের নাম এরা শেক্স্‌পীয়ার সরণী দিয়েছে কেন? শেক্সপীয়ার নাটক লিখত বলে? সেই নাটকের রাস্তায় আরো নাটক হচ্ছে, নাটকের মধ্যে নাটক।
    শেক্সপীয়ারের কোন নাটকের মধ্যে আরেকটা নাটক আছে? হ্যামলেট। হ্যামলেট দেখেছি ছোটোবেলায় লাইটহাউসে লরেন্স অলিভিয়ের। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। ওসব হচ্ছে অতীত। অতীত বিশেষ মনে রাখতে নেই। এইতো সামনে একটা ক্রসিং। এটা চৌরঙ্গী নয়, এটাতো ক্যামাক স্ট্রীটের রাস্তা, এটা পেরিয়ে আরো হাঁটতে হবে সামনের দিকে। মাথা সোজা রেখে। কারণ এখন রাত হয়ে যাচ্ছে তো, রাস্তায় অনেক লোক আছে যারা বিপদে ফেলতে পারে। এই যেমন কয়েকটা গাড়ী আমার পাশ দিয়ে যাবার সময় আস্তে হয়ে গেল। কাচ নামিয়ে কিছু বলেওছে, আমি শুনতে পাই নি ভালো করে।
    অবশ্য চৌরঙ্গী পৌঁছলেও আমি গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না, সেটার জন্যে বাস ধরতে হবে। সমস্তই স্টেপ বাই স্টেপ। ঠিক নম্বরের বাসে উঠে ঠিক স্টপে নামতে হবে।
    আহ্‌ ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল একটা। আরেকটু এগোই। এইতো ডানদিকে একটা গলি, কী নাম যেন? রাসেল স্ট্রীট নাকি লিটল রাসেল স্ট্রীট? এই গলিটার মধ্যে কেনিলওয়র্থ হোটেল আছে। কেনিলওয়র্থ হোটেল নাকি নিউ কেনিলওয়র্থ হোটেল? একটা নতুন, একটা পুরোনো মনে হয়। কিন্তু ওদিকে তো আমি যাবো না। আমি সোজা যাবো, টাটা সেন্টার হিমালয় হাইসের মতো উঁচু উঁচু বাড়ী থাকতে রাস্তা ভুলবার কোনো উপায় নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন