জুলিয়াস ওলুওকুন কদিন ধরে বলছে, রায়, তুমি কি কালোঞ্জি চেনো?
আমি চিনিনা। শুনে জুলিয়াস অবাক হয়। বলে, পাকিস্তানীরা চেনে। ইন্ডিয়ানরাও চেনে। তুমিই চেনো না। এটা কোনো কথা হল?
কথা যাতে হয় সেকারণে কদিন বাঙালী, ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানী গ্রোসারীতে ঘুরে ঘুরে কালোঞ্জি খুঁজলাম। সবজি মাণ্ডিতে বোন বেনকে জিজ্ঞেস করতেই সে একটা বোতল বের করে দিল। বলল, এই নেও তোমার কালোঞ্জি।
বোতলের চেহারাটা ভালই। মুখটা ভালো করে আটকানো। বাইরে লেবেল আটো। পরিস্কার ইংরেজীতে লেখা কালোঞ্জি। এই জিনিসটি জুলিয়াস খেতে চায়। হাসি পেল। ... ...
মোদীকে আমি চিনি না। চেনার দরকারও নাই। পৃথিবীতে সকল মানুষকে চেনা যায় না। আর আমি বরিশালের মনু। যেখানে বরিশালের সবারেই চিনি না—সেখানে ভারত নামের একটা রাষ্ট্রের গুজরাতের নরেন্দ্র মোদিকে চিনতে যাব কোন দূঃখে।
তবে আমার পাড়ার নরেন মুদিকে চিনতাম। বেচারা নরেন মুদি। তার মুদি খানায় বিস্তর কেনাবেচা হত। হিন্দুদের চেয়ে মুসলমান খদ্দের ছিল বেশি। তারা বিশ্বাস করেন নরেন মোদি নামের এই হিন্দু লোকটা মালে ভেজাল দেবে না। আর দাম লাগাম ছাড়া নেবে না। আমাদের পাড়ার সৈয়াদুল হক চাচা এই ব্যাপারে বড় করে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ... ...
কুলদা রায়
গোলরুটির চেয়ে গোলারুটিই বেশি মজার। বড় মামী এ ব্যাপারে ফার্স্টক্লাশ। নানারকমের গোলারুটি বানাতে তার জুড়ি নেই। আটা গুলে তার মধ্যে পিঁয়াজ কুচি দিয়ে পিয়াজ রুটি। কাঁচা মরিচ দিয়ে মরিচ রুটি। আর কালো জিরা দিলে বেশ টোস্ট টোস্ট ভাব আসে।
আজিমার পছন্দ শুকনো মরিচ। এটা ছোটোদের জন্য একেবারে নো। তাদের জন্য গুড়ের ঢেলা। না পেলে ছেঁচকি শাক। কখনো পুঁই রুটি। পুঁইশাক কেটে গোলা রুটির মধ্যে ছেড়ে দেবেন। ভাপে সিদ্দ হবে। তার বর্ণ দেখে দেখে, ওগো মা, আঁখি না ফেরে।
এ বাড়ির পুরন ... ...
কুলদা রায়
স্বপ্নময়কে প্রথম দেখি কুইনস লাইব্রেরীতে। নিউ ইয়র্কে। ম্যারিক বুলেভার্ডে। সামনে বাস স্ট্যান্ড। সারি দিয়ে বাস ঢুকছে। বের হচ্ছে। একটুও শব্দ নেই। ঠিক সামনেই লাইব্রেরী। শান্ত। সৌম্য। দাঁড়িয়ে আছে।
স্বপ্নময়ের নাম এর আগে শুনিনি। আমার শোনার কথা নয়। আমি বাংলাদেশের গাঁ-গেরামের মানুষ। খুব বেশি হলে হামেদ খাঁকে চিনি। তাঁর বাপজানের নাম আসমত আলি খাঁ। গ্রাম লাহুড়ি। শঙ্করপাশা। হামেদ খাঁ তার জেব থেকে পুরনো একটা ছোট্ট নোটবুক বের করেন। তার পৃষ্ঠার একপাশে লেখা ধান-পানের হিসাবপাতি। আরেকপাশ ... ...
কুলদা রায়
১.
ছেলেবেলা থেকেই রোগা পটকা ছিলাম। ঠাকুরদা এ কারণের খেলার মাঠে যেতে দেননি খুব বেশী। শহরের নজরুল পাবলিক লাইব্রেরীর সিঁড়িতে বসিয়ে নিজে খেলা দেখতে যেতেন। তখন আমার ক্লাশ টু। আমি নিতান্তই নিরীহ মানুষ। ভেতরে লাইব্রেরীয়ান ময়েন স্যার বসে আছেন। শাদা পা-জামা পাঞ্জাবী পরা। খুব গম্ভীর। আমার ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই।
বারান্দায় একা বসে থাকি। পাশে পুলিশের ট্রেজারী। মাঝে মাঝে ঘণ্টা বাজে। শালগাছের পাতা ঝরে পড়ে। লাইব্রেরীর বাগানে ফুল ফোটে। কটা প্রজাপতি ঘুর ঘুর করে। মাঝে মাঝে ... ...
সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি হয়েছে। এখনো জলের গন্ধ আসছে।
মফস্বলের ছোটো একটি শহরের একপ্রান্তে টিনের ঘর। তার বারান্দার বসে আছে মথি উদয় ও হারাধন। এই দুজনকে পণ্ডিত স্যার বিশেষ স্নেহ করেন। একা মানুষ তিনি। স্কুল শেষে তার বাড়িতে এ রকম দুটি-একটি ছেলেকে পড়ান। ... ...
কুলদা রায়
বাল্যকালে পরীরদের দেখেছি। সামনের রিজিয়া আপুদের বাসায়। ফরিদা আপুর বাসায়। আমেনা আপুদের বাসায়। তারা তিন বোন। আরেকটি বোন হয়েছিল। হামাগুড়ি দিত। জানালা দিয়ে আলোর রেখা দেখলে আবাক হয়ে চেয়ে থাকত। এই আলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিত। বলত, আ আ আ। সবাই বলত রিজিয়াদের এই বোনটি সত্যি সত্যি পরীর মত ছিল। তাকে পরে একদিন তালতলায় পাওয়া গিয়েছিল। সায়েম কবিরাজ বলেছিল—এটা পরীদের কাজ। এই ছোটো শিশুটিকে পরীরা ঘর থেকে নিয়ে গিয়েছে। ফেলে রেখে গিয়েছে আমাদের পুকুর পাড়ের তালগাছটির নিচে। ওই তালগাছটির নিচে তখনো ছায়ার ম ... ...
কুলদা রায়
বাড়িটির নাম চিলেকোঠা। চারিদিকে বাগান। মাঝখানে ছোটো বাংলো ধরনের টিনের ঘর। কোনো চিলেকোঠা নেই এই ঘরটিতে। মধ্য পাড়ার প্রবীণ মোক্তার অসিতবরণ সরকার মফস্বলের ইতিহাস নামে একটি রচনায় লিখেছেন—এই এলাকায় গ্রেগরী চিলম্যান নামে এক ইংরেজ এসেছিলেন ১৮০৩ সালে। শুরু করেছিলেন নীলচাষ। এই নীলচাষের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি মাঠের নাম আজও জারী আছে। নাম–নীলার মাঠ। এই নীলার মাঠে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে ঘোড়-দৌঁড় হয়। অসিতবরণ বাবু আরও লিখেছেন—এই চিলম্যান সাহেব মধুমতী নদীর তীরে পাঁচ বিঘা জমির উপরে এই ... ...
কুলদা রায়
দেশ থেকে পালিয়েই এসেছিলাম। সে সময়ে মনে হয়েছিল পালিয়ে এলেই বাঁচা যাবে। জীবনে বেঁচে থাকাটাই জরুরী।
মা এসেছিল তার মাস খানেক আগে। কিছু দিন থেকে গিয়েছে আমার কাছে। আমার শার্টের একটা বোতাম লাগিয়েছে। দুএকবার মাথায় তেল ডলে দিয়েছে। পাখা দিয়ে মাঝে মধ্যে বাতাসও করেছে ঘুমের মধ্যে। আমার মেয়েদের চোখে কাজল টেনেছে। তারপর নিয়ে গেছে বাইরে—বগুড়া রোডের পাশে যে চার্চবাড়িটি রয়েছে, তার পুকুর পাড়ে হেঁটে গিয়ে তুলে এনেছে হেলেঞ্চা শাক। তিঁত পুঁটি মাছ দিয়ে রেঁধেছে। আমার বড় মেয়ে খেয ... ...