এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শীতের গপ্প---পৌষের সেই অন্যরকম দিন গুলো

    shrabani
    অন্যান্য | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ৯৬৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • M | 59.93.160.38 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৪:৫৬432608
  • আহ! সেই মিঠি টই টা, তিতির খুব ভালো লাগছে, আচ্ছা, থালায় করে কি বড়ি দেওয়া যায়? আর মিক্সিতে বেটে?তালে একবার টেরাই নেবো।
  • Bratin | 122.248.183.1 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৫:০৭432609
  • না না মিক্সি তে হবে কেন? আগে কার দিনে মিক্সি ছিল না তখন দিব্যি ঠাকুমা কে বড়ি দিতে দেখেছি। মনে হয় কিছু একটা ফান্ডা আছে!!
  • hu | 12.34.246.72 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৯:৪৬432610
  • বাহ তিতির! আপনি গয়না বড়িও বানাতে জানেন? সত্যজিৎ রায়ের 'আগন্তুক' সিনেমার প্রথম শোনা এই গয়না বড়ির কথা। হাতে নিয়ে তো দেখি নি কখনও। মুচমুচে একখান সর্ষেবাটা লিখুন দেখি গয়না বড়ি নিয়ে।
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ২১:৩৬432611
  • তিতির, কি সুন্দর লিখেছ--গয়না বড়ি মুগ্‌ধ হয়ে দেখেছি, তৃপ্তি করে খেয়েছি--কিন্তু এই গয়না-গড়ার প্রসেসটা আজ জানলুম---সত্যি সর্ষেতে সাজিয়ে দাও এটা, কোনও গুণি হাতে পড়ে এরা আবার বেঁচে ঠুক--এও তো আমাদের বাংলা-হস্তশিল্পের এক অসাধারণ নমুনা।
  • titir | 24.12.5.31 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ০৬:৫১432612
  • গৃহস্থের গোলায় ধান ওঠার পর একদল লোক আসত হাতি নিয়ে। সেই হাতি নাকি লক্ষ্মীর বাহন, তাই তাকে কিছু ধান খেতে দিতে হবে। বেশ কয়েক ধামা ধান না হলে মাহুত বাবাজী খুব রাগ করতেন। এই মাহুত বাবাজীরা ভিনদেশী, মানে পাশের রাজ্য বিহার থেকে আসতেন। কম ধান দিলে রেগে কাঁই। বলত, লক্ষ্মী দেবী এতো বেশী ধান দিয়েছেন, অথচ তাঁর বাহনের জন্য এই টুকু। লক্ষ্মী দেবী মোটেও খুশি হবে না সেই গৃহস্থের উপর। তাই লোকেরা চেষ্টা করত তাকে তুষ্ট রাখার। হাতির মুখে কয়েক খাবলা ধান ছুঁড়ে দিয়ে বেশীর ভাগ ধান ঢুকে যেত হাতির পিঠের বস্তাতে। বাড়িতে কোন রোগা বাচ্চা থাকলে তাকে হাতির পায়ের তলা দিয়ে ঘোরান হত, সেই ঘোরার ফলে সে নাকি মোটা হয়ে যাবে। তাদের সেই বুজরুকি বেশ চলত গ্রামে ঘরে।

    আর আসত যাত্রাপালা ও পুতুলনাচ। গ্রামের আর বাইরের দুই দলই যাত্রা করত। খোলা যাত্রা আর টিকিট সেল এই ছিল তাদের নাম। খোলা যাত্রা মানে যে যাত্রা দেখতে পয়সা লাগে না। এই পয়সার জোগান আসত গ্রামের সব বাড়ি থেকে। সবাই চাল, ডাল, মাছ আর নগদ পয়সা কড়ি দিয়ে সাহায্য করত। আর টিকিট সেলের বেলায় টিকিট কিনে যাত্রা দেখতে হত। গ্রামেই একটা যাত্রা দলের আখড়া ছিল। পালার অধিকারির নাম নগেন দাশ। পেশায় চর্মকার। লোকে বলত নগেন মুচির যাত্রা। প্রথম দিকে খুব কম মেয়ে পাওয়া যেত যাত্রা করার জন্য। তাই কত পুরুষকে যে দাঁড়ি গোঁফ কামিয়ে সহৃদয়া বড় বৌ বা দজ্জাল মেজ বৌএর ভুমিকায় অভিনয় করতে দেখেছি, তার সংখা নেই। আর আসত বালিঘাই এর দল। বা কাঁটাপুকুরের দল।

    টিকিট সেল যাত্রার আসার বসত খোলা মাঠে (ধান তুলে নেবার পর) প্যাণ্ডেল টাঙিয়ে। বড় পোস্টার পড়ত গাছের গুঁড়িতে বা দোকান ঘরের দেওয়ালে। সাইকেল রিক্‌শা করে প্রচারে বেরত মাইক হাঁকিয়ে। প্রথম ঘোষনা ছিল, আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাব আনন্দ সংবাদ। আগামী অমুক তারিখে অমুক ক্লাবের পরিচালানায় তিনদিন ব্যাপি বিরাট যাত্রা অনুষ্ঠান। বলে, কোন দিন কি পালা তার ঘোষনা করত। আর সবান্ধবে যোগদানের জন্য সাদর আমন্ত্রন থাকত। এই সংগে ছোট ছোট পোষ্টার ছড়িতে দিত রাস্তার পাশে। কতবার যে সেই পোস্তার পাবার আশায় রিকশার পিছনে ছুতে গেছি। তিনদিনের যাত্রাতে সামাজিক, পৌরানিক আর ঐতিহাসিক পালা হত। ক্বার পালা গুলো এমনি ছিল বলে লোকে ছড়া বানিয়ে ফেলেছিল।
    "লক্ষ্মী এলো ঘরে",
    "অচল পয়সা"র তরে,
    "কংস" গেল মরে।
    শান্তিগোপাল আর শিবদাস মুখারজী সব সময় ঐতিহাসিক যাত্রা করতেন। একবার শান্তিগোপালের "আটঘণ্টার লড়াই" দেখে লোকের কি আফশোস। এটা কি ধরনের যাত্রা! জ্যোৎস্না দত্ত, গুরুদাস ধাড়া, অরুণ দাশগুপ্ত, বীণা দাশগুপ্তা, স্বপন কুমার, স্বপ্না কুমারী, মোহন কুমার, মিতা কুমারী এমনই কত নাম।

    টিকিট হত বিভিন্ন দামের। আর থকত সিজিন টিকিট, মানে তিনদিন বেশী দামের টিকিট কিনে যাত্রা দেখতে যা খরচ, তার থেকে কম দামে এই টিকিট পওয়া যেত। বেশীর ভাগ বাড়ি থেকে এই টিকিট কেনা হত। এই যাত্রাতে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা। আত্মীয় স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হত যাত্রা শোনার জন্য। প্রতি বাড়িতে আত্মীয়ের ঢল। সে এক উৎসব শুরু হয়ে যেত প্রতিবাড়িতে।
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৭:৫৮432613
  • এই টইটা কি ভাবে মিস করে গেছিলাম। অসাধারন লেখা । হাত চালিয়ে।
  • titir | 24.12.5.31 | ০২ মার্চ ২০১১ ০৮:৫৬432614
  • M,
    মিক্সিতে বেটে বিউলি ডালের বড়ি দেওয়া যায় কিনা জানি না, তবে ছোলা বা মটর ডালের বড়ি দেওয়া যাবে। আমার ননদ প্রায় মিক্সিতে বেটে করে। আর আমাদের বাড়িতে সেই সাবেকি শিলে ডাল বেটে বড়ি দেওয়া হয়।

    নিনা,
    সর্ষেতে কি করে এই গয়না বড়ি তৈরীর কথা জানাব বুঝতে পারছি না। একটু কঠিন আছে, যেমন ডালটা ঐ বছরের ডাল হতে হবে, পুরনো ডাল হলে হবে না। বড়ি শক্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া বেশ মিহি করে বাটতে হবে। একটুও দানা থকবে না। আর সেই কাপড় যার ছিদ্র দিয়ে বড়ির নকশা হবে, সেই কাপড় বেশ মজবুত হতে হবে। ছিদ্রটি সুন্দর করে সেলাই করতে হয়। ছিদ্র যদি গোল ও সুন্দর না হয় তাহলে ভালো নকশা বানানো যাবে না। ছবি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে ভালো করে বোঝনো যেত।

    hu,
    সে এককালে বানাতাম বইকি। এমনকি আমার ছোটভাই, সে ও এই গয়না বড়ি বানাতে জানে। আসলে দেখে দেখে আমরা এই সব জিনিস শিখে নিতাম। বড়ি ভাজা যতই মুচমুচে হোক না কেন টই তে লিখতে আমি মিইয়ে যাব।
  • Nina | 64.56.33.254 | ০২ মার্চ ২০১১ ২২:২৭432615
  • তিতির, গপ্পই শোনাও তাহলে আরও---
  • titir | 128.210.80.42 | ০৩ মার্চ ২০১১ ০০:৪৮432616
  • পৌষ সংক্রান্তির আগে ভাবেই ধান ঝাড়াই মাড়াই হয়ে হামার ঘরে ঢুকে যেত। তাই বেশ কদিন হাত চালিয়ে কাজ করত মজুরেরা। তাদের ও তো সংক্রান্তির আগে ফিরতে হবে ঘরে। মজুর বিদায় মানে চাষের কাজ শেষ করে মজুরদের ঘরে ফেরার দিনটাকে মজুর বিদায় বল হত। চাষীকে বেশ কিছু ধান বিক্রি করতে হত মজুরদের নগদ টাকা দেবার জন্য। নতুন ধান খুব বেশি দামে বিক্রি হবে না, কিন্তু না বেচলে ও উপায় নেই। এই মজুর বিদায়ের দিন খুব ঘটা করে মজুরদের খাওয়ানো হত। এদিনের সব খরচ গৃহস্থের। জাল দেওয়া হত পুকুরে বড় মাছ ধরার জন্য। মাছভাত না হলে হবে না। আর ছিল নতুন গুড়ের পায়েস শেষপাতে। হাপুস হুপুস করে তারা যে কি পরিমান ভাত খেত, তা দেখে ছোটদের চোখ গোল গোল হয়ে যেত। তাদের বৌরা গরম জলে সোডা দিয়ে জামাকাপড় পরিষ্কার করত। পুরানো অথচ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে মাথায় ফুল গুঁজে বৌগুলি গান করত নিজেদের মধ্যে। পুরুষেরা বাজাত কেন্দ্রা বা বাঁশি।

    নিজেদের মজুরি ছাড়াও মালিকবাড়ি একটু বেশি টাকা নিত হাঁড়িয়া বা দেশি মদ খাওয়ার জন্য। আর পথে খাওয়ার জন্য মুড়ি। সেই অস্থাবর সম্পত্তি প্যাটরা আর পুঁটুলি নিয়ে দলে দলে ফিরে যেত নিজের গাঁয়ে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেত পরের বছর ফিরে আশার, কিন্তু কখনই ফিরে আসেনি। পরের বছর নতুন দল নতুন মুখ। আমরা সঙ্গীদের হারিয়ে কদিন একটু মনমরা হয়ে যেতাম।

    সংক্রান্তিতে অঢেল কাজ প্রতি বাড়িতে। বাইরের বড় খামারে হবে লক্ষ্মীপুজো। গোবর দিয়ে নিকানো হত পুরো জায়গা। খামারের মধ্যিখানে সেই যে পতিল মাড়ার বড় খুঁটি পোঁতা হয়েছিল , তাকে ঘিরেই হবে পুজো। সেই খুঁটির চারপাশে সুন্দর সব আল্পনা আঁকা হত চাল বাটার গোলা দিয়ে। সাদা ধপধপে নকশাগুলি ফুটে উঠত শুকিয়ে গেলে। লক্ষ্মী এসে বসতেন মধ্যিখানে। তাঁকে ঘিরে উপাচার। শাকালু, রাঙালু, আঁখ, নারকেল কুল, তিলকুট আর নতুন চাল ও গুড় এবং দুধ দিয়ে মেখে হত মকর।

    পিঠে হল মকর সংক্রন্তির অন্যতম আকর্ষন। গাদা গাদা চাল ভিজিয়ে গুঁড়ো করে আনা হত ঢেঁকিশাল থেকে। পাড় দিত পাড়ার বৌ ঝিরা। সেই চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরী হত নানারকম পিঠে। আর কিছু হোক বা না হোক পুলি পিঠে হবেই হবে। নারকেলের পুর আর তরকারির পুর দিয়ে মিষ্টি ও ঝাল দুই রকম পুলি। পাটিসাপ্টা ও সরুচাকলি চাহিদা অনুসারে। সবাইকে দেওয়ার জন্য অনেক বেশি পিঠে বানানো হত প্রতিবাড়িতে। প্রতিবেশীদের দিতে হবে। এ ছাড়াও পরের দিন যে বাড়িতে আসবে তাকেও পিঠে খাওয়াতে হবে।
  • Shibanshu | 59.97.232.88 | ০৩ মার্চ ২০১১ ১৩:০৭432488
  • আমাদের ছোটোবেলায় আব্দুল জব্বার লিখতেন 'বাংলার চালচিত্র'। প্রায় পয়ঁত্রিশ চল্লিশ বছর আগের কথা। এখনও বাল্য বয়েসে পড়া লেখাগুলো স্মৃতিতে জেগে থাকে। তিতিরের লেখার মেটেরিয়ল সেই সুগন্ধ বয়ে আনছে।
  • dd | 124.247.203.12 | ০৩ মার্চ ২০১১ ১৪:৪৩432489
  • এগজ্যাক্টলি।
    আব্দুল। জব্বর লিখতেন। গ্রামের সব খুঁটি নাটি ,আর আরো থাকতো নিতান্ত চাষাদের কথা বার্ত্তা। তাদের জীবনের গল্প। তাদের মুখের কথা।

    আরেকবার পেলে, আবার ফিরে পড়তাম।
  • pagla baba | 121.245.49.142 | ০৩ মার্চ ২০১১ ১৭:৪৯432490
  • পৌষ সংক্রান্তিতে ঐ খুঁটি পূজোর আর এক অঙ্গ ছিল সন্ধেবেলায় শেয়াল ডাকলে তখন ই পুকুর থেকে পূজোর জল তুলে রাখা। আর সেইদিন ই কোনো শেয়াল ডাকতো না। তাই একটা গ্রাম্য প্রবাদ আছে 'সংক্রান্তির দিন শেয়ালের লেজ মোটা'। অনেকে শেয়ালের ডাকের জন্য অপেক্ষা করে রাত ১১/১২ টায় পূজো করতো। আমরা ছোটোরা অনেক বার সন্ধেবেলায় বাড়ির সামনে উদোম ফাঁকা মাঠে গিয়ে শেয়ালের ডাক ডাকতাম। পরে খবর নিতাম কোন কোন বাড়িতে আমাদের ডাকের সময় জল তুলেছে। সে এক দিন ছিল !!!
  • kumudini | 59.178.140.201 | ০৩ মার্চ ২০১১ ১৭:৫৫432491
  • আব্দুল জব্বারের বাংলার চালচিত্র কিছুদিন আগেও আমি নবকল্লোলে বেরোতে দেখেছি তো।
    বই হিসেবেও বেরিয়েছে,বোধ হয় লাইব্রেরীতে দেখেছি।
  • M | 59.93.245.135 | ০৩ মার্চ ২০১১ ১৯:৩৪432492
  • তিতির,
    থ্যাঙ্কু...........মন দিয়ে পড়ছি, ভালো লাগছে।
  • PM | 58.8.80.91 | ০৩ মার্চ ২০১১ ২১:১০432493
  • শ্রাবনী আর তিতির-এর লেখা অনবদ্য। আমি দুর্ভাগ্য ক্রম-এ কলকাতার বাসিন্দা। এতো চমৎকার অভিঙ্‌গ্‌তা আমার নেই। কিন্তু কলকাতার শীতের-ও এক অন্য আমেজ ছিলো।

    বার্ষিক পরীক্‌খা শেষ-এ ছুটি। সক্কাল সক্কাল বন্ধুদের ডাক...... ব্যাট হাতে বেড়িয়ে পড়া। সারা দিন বল পেটানো। সন্ধ্যাবেলা পাড়ার মাঠে ব্যডি্‌মন্টন খেলা... চমৎকার ব্যাপার স্যাপার। সব থেকে ভালো ব্যপার হলো। পড়াশোনার কোনো বালাই ছিলো না ঐ কদিন।

    কিন্তু সব ভালো জিনিস-ই একদিন শেষ হয়। অবশেষ-এ আস্তো সেই ভয়াল ভয়ংকর দিন.... মানে 24th Dec.... ২২ তারীখ থেকেই পেট কন্‌কন , মাথা ভনভন কর্ত। খেলাধুলো কমিয়ে good boy হয়ে যেতাম।

    বাবা আগে থেকেই 25th Dec একটা english movieর টিকিট কেটে রাখতো। Result খারাপ হলে তো কপালে লান্‌ছনা, গন্‌জনা তো ছিলো-ই , তার ওপর চুড়ান্ত অপদস্থ হয়ে করুণ মুখে বাবার সাথে সিনেমা দেখে্‌ত যাওয়া ... সে এক tragedy
  • d | 14.96.174.161 | ০৩ মার্চ ২০১১ ২২:৪২432494
  • আমাদের সেই উমনো ঝুমনো ছেলেবেলায় শীত আসত রাজার মত| চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যেত দুর্গাপুজোর পর থেকেই| লক্ষ্মীপুজোর ভোগ রান্নার সময় একপ্রস্থ আলোচনা হত শীতের আগমন কিম্বা অনুপস্থিতির কারণে ফুলকপির স্বাদের তারতম্য নিয়ে| শীতের কপির স্বাদ যে না-শীতের কপির থেকে একেবারে আলাদা সে নিয়ে কারো কোন সন্দেহ ছিল না| ইস্কুলের পুজোর ছুটি খোলার আগেই বাগানে কোদাল পড়ে যেত| আশ্বিনমাসে ভাল রোদ্দুর পেলে বাগানের মাটি একেবারে সাদাটে রঙ ধরে থাকে| অ্যাই বড় বড় ফাট, তাতে সরু মোটা কালো কালো ইকড়ি মিকড়ি| ধাঁই ধপাধপ ধাঁই ধপাধপ সে মাটি কুপিয়ে, জল দিয়ে, খুরপি দিয়ে মিহি করে নিড়িয়ে শুকনো গোবরগুঁড়ো আর বর্ষাকাল থেকে বাগানে পচানো পাতা, তরকারির খোলা, কয়েকগাছি খড় মেশানো কম্পোস্ট সার মিশিয়ে এক সপ্তাহ ফেলে রাখা হবে| এক সপ্তাহ জমিটুকুনি রোদ্দুর খাবে, ভিজে ভাব আস্তে আস্তে শুকিয়ে কালচে মাটি ধুলোটে রঙ ধরবে তারপর তাতে সরু সরু ফাট ধরবে| এ ফাট কিন্তু আশ্বিনের রোদে জ্বলা মস্ত মস্ত ফাট নয়, এ হল মিহিমত ফাট, যেন বা সুনীতিপিসী চুল শুকাতে বসে হিলিকিলি করে বিলি কেটে এলিয়ে রেখেছে কাঁচাপাকা চুলের রাশি| এবারে সরু খুরপি দিয়ে নিড়িয়ে খোল পচানো জল দেওয়া হবে| আহা তার কি গন্ধ!! পুবের জানলা সবসময় বন্ধ রাখতে হয় প্রায়| দুদিন, তিনদিন দুবেলা করে খোল পচানো জল দেবার পর একদিন বিকেলের রোদ পশ্চিমে ঢললে এইটুকু টুকু ফুলকপি, ওলকপি, শালগম আর বেগুনের চারা বসানো হবে| কচি কচি চারাগুলো এক্‌দম ঘাড় নুইয়ে নেতিয়ে পড়ে থাকে, যেন আর বাঁচবেই না| এইবারে তাতে ঝাঁঝরি করে জল দিয়ে রাতের মত রেখে দেওয়া, এরমধ্যে খবরের কাগজের টুকরো আর ঝাঁটার কাঠি দিয়ে বানানো হয়েছে ছোট ছোট টোপর| পরদিন বেলা ন'টা বাজলেই সব চারাগাছে টোপর পরানো হয়ে যাবে, নাহলে অত কচিচারা সারাদিনের রোদ্দুরে শুকিয়েই মরে যাবে যে! বিকেল চারটেয় আবার তারা টোপর খুলে নেতিয়ে শুয়ে থাকবে,ঝাঁঝরিতে চান করবে| এই চলবে যতদিন না চারাগুলো একটু ডাঁটো হয়ে রোদ্দুরের সাথে খেলতে শিখে যায়|

    ওদিকে আমাদের মর্নিং স্কুল আধঘন্টা পরে শুরু হয়। আর সক্কাল সাড়ে ছটার মধ্যে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পৌঁছাতে হয় না, সাতটা বাজার ৫-১০ মিনিট বাদে গেলেও দিদিমনিরা তেমন কিছু বলেন না। স্কুল ছুটি হয় কিন্তু সেই একই সময়, সাড়ে দশটা। ক্লাসের সময় এমনিভাবে কমে যাওয়াটা ভারী ভাল লাগত। যেন একটা মুক্তির স্বাদ, রুটিন পড়াশোনা থেকে খানিক আলগা হওয়া। আর সেসময় তো নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই বার্ষিক পরীক্ষা হত। দিদিমনিরা যাতে খাতা দেখার জন্য বেশীদিন সময় পান, তাইজন্য নভেম্বরেই পরীক্ষা শেষ করার চেষ্টা থাকত স্কুলগুলোর। তাছাড়া ডিসেম্বারে আবার ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষাও হবে। সে ভারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার। তাই আমরা ছোটরা ডিসেম্বারটা বেশীরভাগ পুরৈ ছুটি পেতাম।
  • M | 59.93.246.49 | ০৪ মার্চ ২০১১ ০৮:২২432495
  • দমের দাঁড়িরা অত বড় বড় কেন?
  • Nina | 68.84.239.41 | ০৪ মার্চ ২০১১ ০৮:৪২432496
  • :-)))) দাঁড়িতে দম বেশি বলে।

    দমদিদি লেখে এত ভাল--অদ্ভুত একটা নিজস্ব ছন্দ --কিন্তু বড্ড কম লেখে।
    মার্চমাস এলেই অমর মনে পড়ে যায় ইরম শর্মিলা চানুর কথা----দমদিদি র কাছেই আমি প্রথম জেনেছিলাম!
  • Manish | 59.90.135.107 | ০৪ মার্চ ২০১১ ১৩:০২432497
  • অসাধারন ভাবে চিত্রিত হচ্ছে অমাদের গ্রামবাংলার রুপ।সবকটা লেখাই খুব ভালো হচ্ছে।
  • dd | 124.247.203.12 | ০৪ মার্চ ২০১১ ১৪:১৯432499
  • এখনকার বাচ্চারা জানেই না। তারা শপিং মলে গিয়ে সম্বচ্ছর সব রকমের তরকারী আর ফল পায়।

    ঐটি সে যুগে ছিলো না। মটরশুঁটি, কমলালেবু,মায় ফুলকপিও পাওয়া যেতো টেনেটুনে এক মাস। তাই শীতকালের মেনু ও থাকতো আলাদা। আর পাতি তরকারী যেমন লাউ,শাক এরাও অনেক সুস্বাদু হতো।

    আপেল ও ছিলো কিন্তু সেটি এতো মহার্ঘ্য ছিলো যে ১০৫ ডিগ্রী জ্বর না হলে ওটি গেরস্ত বাড়ীতে ঢুকতো না। জ্বরজ্বারি হলে কেনো জানি সবাই আপেল খাওয়াতো। হাসপাতালে রোগীদের দেখতে গেলেও আপেল নিয়ে যাওয়াটাই দস্তুর ছিলো।

    আর বাড়ীতে মায়েরা খুব উল বুনতো। ঘটাং ঘটাং করে উলের কাঁটা চলতো ই। রেডিমেড সোয়েটার গরীবেরা কিনতো, যেমতি রেডিমেড শার্ট লোকে কিনতো পয়সা না থাকলে। উলের খুব বড় বড় দোকান ছিলো সব শহরে।

    এইসব।
  • a x | 99.188.84.89 | ০৪ মার্চ ২০১১ ১৪:২৪432500
  • আপেল নিয়ে যেত? মুসাম্বি না?
  • dd | 124.247.203.12 | ০৪ মার্চ ২০১১ ১৪:৩৪432501
  • আপেল ছিলো মরসুমী, আমাদের কালে। ওটা খেলেই হুলিয়ে স্বাস্থ্য ভালো হতো। তাই ওটা earn করতে হলে শুধু শীতকালেই অসুস্থ হতে হতো।

    মুসাম্বী আরেকটু পরের প্রজন্মের রোগীফল। আর তখন ও মুসাম্বী পাওয়াও যেতো অনেকটা সময় জুড়ে।
  • d | 14.96.175.150 | ০৪ মার্চ ২০১১ ২২:৫৮432502
  • তরকারীরা এখনও সুস্বাদু হয় ডিডি। কেমিক্যাল সার ছাড়া ফলিয়ে দেখুন না। জৈব সার দিয়ে ফলানো সরল গোলগাল তরকারীভাইয়েদের সে স্বাদ তো নয় ... তাকে বলি সোয়াদ।
  • ranjan roy | 122.168.218.199 | ০৭ মার্চ ২০১১ ০৭:৫০432503
  • ক্লাস থ্রিতে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা-- বাংলা রচনা এল শীতকাল।
    রঞ্জনের পেয়ে গেছে খিদে। তাই প্রশ্নপত্রের শেষেরটির উত্তর না দিয়ে খাতা জমা করে সোজা বাড়ি ফিরে এল।
    জয়েন্ট ফ্যামিলি; কাকা-পিসিদের প্রভাতী চায়ের আসরে প্রশ্নপত্র হাতে রঞ্জনের পুলিসি ইন্টারোগেশন শুরু।
    -- কি রে, এত সহজ প্রশ্ন ছেড়ে দিলি! তুই ব্যাটা একেবারে অলম্বুশ।
    -- খিদে পেয়েছিল, খেয়ে যাসনি কেন?
    রঞ্জন কাকিমার দিকে তাকায়।
    অপরাধী মুখ করে উনি বলেন-- কাকডাকা ভোরে দুটো মোয়া তো দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিয়ে এসে দুধচিঁড়ে খাবে।
    পিসি বল্লেন-- যাই হোক, এত সহজ প্রশ্ন ছেড়ে আসা ঠিক হয় নি। বল দেখি-- শীতকালে কি কি ভাল লাগে?
    -- ভোরবেলা লেপ ছেড়ে উঠে ইস্কুল যেতে ভাল লাগে না।
    -- ধ্যেৎ, খালি নেগেটিভ কথা। খাবার জিনিস কত রকম পাওয়া যায়। দু'রকম কপি, টম্যাটো, নানারকম শাক। কতরকম ফল। ধর আপেল, নাসপাতি, কমলালেবু।
    রঞ্জনের ডিফেন্সিভ মেকানিজম ওই বয়সেই পোক্ত।
    -- পাওয়া যায়? কি করে জানবো? কিন্তু দাদু তো আনে না।
    অন্যেরা লিস্টি বড় করতে থাকেন।
    নানারকমের চাটনির উপকরণ, উৎসবের সময় খেজুর গুড়ের পায়েস, সন্দেশ, ফুলকপির সিঙাড়া সবার কথা ওঠে।
    কিন্তু বাচ্চাটার এঁড়ে তক্কো থামে না।
    যাই বলা হোক--- কিন্তু দাদু আনে না।,
    শেষে এক কাকা বিরক্ত হয়ে বলেন - যা, খেয়ে নিয়ে ছাদে খেলতে যা!
    কিন্তু যার বিরুদ্ধে বাচ্চাটার অভিযোগ, সেই দাদু, প্রিয় নাতির- যে কি না ওনার সঙ্গে শোয়, এ হেন পাব্লিক ইম্পীচমেন্ট দেখে কেমন এক ভাবে নাতির দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারপর আস্তে আস্তে ক্লান্ত পায়ে নিজের ঘরে যান।
    মুখে আঁকা থাকে বছর আটেক আগে উস্বাস্তু হয়ে আসা বাড়ির কর্তার কঠোর দারিদ্রের সঙ্গে মোকাবিলার যন্ত্রণা।
  • titir | 128.210.80.42 | ২৫ মার্চ ২০১১ ২৩:০০432504
  • নারকেলি কুল, টোপা কুল, কান কুল আর ও অনেক কুল
    --------------------------
    শীতে পাওয়া যেত অজস্র রকম কুল। প্রায় ছয় সাতজনের বাড়িতে এইরকম কুল গাছ ছিল। তাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল বড় বাবুর বাড়ি, অন্যটি ছোট পিসিদের আর অন্যটি বারিণ বাবুর। যাদের বাড়িতে এই গাছ থাকত, আমাদের
    চোখে তারা প্রবল ঈর্ষার পাত্র। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের একটিও কুল গাছ ছিল না। সহজ পথে কুল পাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল কুল চুরি। সহজে কেউ নিজের বাড়ির কুলগুলিকে হাতছাড়া করতে চাইত না। এই চুরি আবার একা একা হত না। সবসময় দলবেঁধে।

    সেবার দলবেঁধে চার পাঁচজন কুল চুরি করতে
    গেছি বাবুদের বাগানে। আমাদের গ্রামে দুই বাবু বাড়ি ছিল, একজন বড়বাবু, অন্যজন ছোটবাবু। ছোটবাবু আমাদের জন্মের আগেই মারা
    গেছেন আর বড়বাবু বেঁচে। বাবুদের বিরাট বড় বাগান ছিল। সেখানে
    আম, জাম, পেয়ারা জামরুলের সঙ্গে ওদের একটা বিরাট বড় নারকেলিকুলের গাছ ছিল। এই কুলের লোভ এড়ানো বেশ মুস্কিল । তা চুপিসাড়ে চুরি চলছে, কেমন করে জানতে পেরে ওর হাবুদের ডালকুকুরের মতো দুই কুকুর লেলিয়ে দিয়েছে। বাবুদের ভয় পাই বা নাই পাই, কিন্তু এই কুকুরদুটিকে বড্ড ভয় পেতাম। কি ভয়ানক ছিল তাদের চেহারা!
    ভয়ে পড়ি কি মরি করে দে দৌড়। ভাগ্যি ভাল পাশেই ছিল আমাদের আর একটা বাড়ি। সব কটা দৌড়ে গিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছি। এদিকে দলের ছোট্টটি ঘরে ঢুকতে না পেরে দৌড়ে পুকুরের ঠাণ্ডা জলে ঝাঁপ। কুকুর দুটির বিভ্রান্ত দশা, মানে ঘরের লোকগুলির পিছনে না পুকুরের পাড়ে বসে ঘেউ ঘেউ করবে বুঝে উঠতে না পেরে কিছুক্ষণ পরে ভগ্ন মনোরথে বাড়ি ফিরে গেল। তারা চলে যাবার পর কি ফুর্তি ছোটটির ভেজা চেহারা দেখে। তাই দেখে সে রেগে কাঁই। বাড়িতে বলে দেবে, বলে হুমকি দেয়। বলে দিলে তার ও বিপদ আছে, পরের চুরিতে সঙ্গী হতে পারবে না। তাই সাপের ছুঁচো গেলার মতো করে সামলে নেয়।

    পিসিদের ছিল দুই রকম কুল গাছ। একটা টোপা কুলের আর অন্যটা কান কুলের। টোপা কুলের গাছটি মাঝারি সাইজের। এটা ছিল পুকুরের ধারে। মানে কুল পেড়ে খেতে হলে জলে নামতে হবে। জামা প্যান্ট গুটিয়ে তুলে লেগে পড়তাম কুল পাড়তে। কান কুলের গাছটি ছিল ঝোপের মতো। মানে বড় গাছের মতো শক্তপোক্ত কান্ড হত না, কেমন একটু লতানো ধরনের, বেশ কাঁটা। কুল হত ছোট্ট ছোট্ট পুঁতির দানা। কচি অবস্থায় সবুজ আর পেকে গেলে ঘন কালো বা ঘন বেগুনি। স্বাদ টকমিষ্টি।

    আর একরকম কুল হত খালের ধারে। গাছগুলো ছোট্ট ছোট্ট, লঙ্কা বা বেগুন গাছের সাইজের। এই কুলের খুব একটা আভিজাত্য ছিল না। মানে অন্য কুল না পেলে এই কুলগুলির দিকে নজর যেত আমাদের মতো অপোগণ্ডদের।
    এইসব কুল খাওয়ার জন্য মাইল দুয়েক হেঁটে বেড়ানো, বা কুকুরের তাড়া খাওয়া কিছুই দমিয়ে দিতে পারে নি শৈশবের সেই দিনগুলিকে। কোন মতে একটু নুন জোগাড় করতে পারলেই কেল্লা ফতে। কুল খেয়ে খেয়ে গলা বসা বা দাঁত টকে যাওয়া অদ্ভুত কিছু ছিল না। আর ছিল অম্বল হয়ে যাওয়া। বমি করতে দেখলেই মা শুরু করত গজরানি। আর খাবি ঐ সব কুল। পরের দিন সব কিছু ভুলে আবার দে দৌড় সেই গাছ তলায়।
  • pharida | 122.163.95.199 | ২৫ মার্চ ২০১১ ২৩:১৫432505
  • কুল cool

    আমি কুলথেঁতো খেতাম। নোড়াতে বীজশুদ্ধু টোপা কুল আর কাঁচালঙ্কা থেঁতো করে তাতে নুন অল্প সর্ষের তেল দিয়ে শীত রোদ্দুরে আধ ঘন্টা।

    তারপর বেশ খানিক্ষণের স্বর্গলাভ।
  • titir | 128.210.80.42 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ২২:০৪432506
  • পরবদিনে মেলায় যাব, ধামসা মাদল সঙ্গে লিব-------

    মকর সংক্রান্তির দিনেই আমাদের বাড়ি থেকে পাঁচ ছয় ক্রোশ দুরে কেদারমেলা বলে এক জায়গায় মেলা বসত। কেদার অর্থাৎ ভোলানাথের মেলা। এক মাস ধরে এই মেলা চলত। সংক্রান্তির ভোর থেকে শুরু হত মেলা। যাতায়াতের জন্য বাস, সাইকেল ভরষা। তবে আমরা বেশীরভাগ সময় গোরুর গাড়ি চড়ে মেলা দেখতে যেতাম। সেই গোরুর গাড়িতে বসার জন্য খড় দিয়ে উঁচু গদি করে তার উপর তোশক পেতে দেওয়া হত। আর গাড়ির উপরে ছিল ঢ্যাঁচা বাঁধা ছাউনি। কুচোকাঁচা আর বৌ-ঝিদের জন্য এর চেয়ে ভালো বাহন সেই সময়ে সুলভ ছিল না। গাড়োয়ান হত কাদে হাসদা বা টিনা মাণ্ডি। এই দুজন গোরুর গাড়ি চালানোতে বেশ দক্ষ ছিল। আসলে গোরু গুলি মাঝে মাঝে একটু ঝামেলা করত। গাড়িসুদ্ধ লোক নিয়ে অন্যদিকে পালিয়ে যাবার চেস্টা করত। একবার পিসি বাড়ি যাচ্ছি। বাস থেকে নেমে অনেকখানি হাঁটা পথ। তাই পিসি বাড়ি থেকে গাড়ি এসেছে নিয়ে যাবার জন্য। তা সবাই মিলে গাড়িতে চড়ে বসেছি, হঠাৎ করে বলদদুটি গাড়ি নিয়ে একদম পুকুরের জলে নামিয়ে দিয়েছে। আমরা তো সব ভয়ে চিৎকার শুরু করে দিয়েছি। তারপর গাড়োয়ান অনেক কষ্টে অনেক কসরত করে সেই গাড়িকে জল থেকে তুলে আনল।

    মেলা যাবার দিন সকাল সকাল সবাই তৈরী হয়ে নিত। সকাল সকাল না গেলে মেলা দেখে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে, তাই এই ব্যবস্থা।
    বাবা, কাকা বা বড় ছেলেরা কেউ গোরুরগাড়ি চড়ত না। এটা শুধুমাত্র কুচোকাঁচা আর বৌ ঝিদের। সঙ্গে থাকত পিসি, মাসি, মামী ছাড়া পাড়া প্রতিবেশীরা। মেলায় পৌছে গাড়োয়ান গাড়িটাকে এক জায়গায় রেখে বলদদুটিকে গাছের ছায়ায় বেঁধে দিত। মুখের সামনে দিয়ে দিত দু তিন আঁটি খড়। আর আমরা বেরিয়ে পড়তাম মেলা দেখতে। এই মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলো, পুণ্যাশ্রয়ের জন্য সকাল বেলা কুণ্ডের জলে স্নান। কিন্তু আমাদের মতো পাষণ্ডদের পুণ্য অর্জনের জন্য কোনদিন ও স্নান করা হয়ে ওঠেনি। সেই পুণ্য বঞ্চিত হবার ফল এখন হাতে নাতে পাচ্ছি। আমাদের আনন্দ ছিল নাগরদোলায় চড়ে, সার্কাস দেখে বা পুতুল নাচে। ছিল নিলামবালা ছ আনা, যা লিবে সব ছ আনা। আর ছিল হরেক রকম খাবার। মা রা কিনত সব দরকারি জিনিসপত্র হাতা, খুন্তি, বঁটি, বেলুন চাক্কি আর আমরা কিনতাম বাঁশি, চরকি,বেলুন এইসব। এই মেলাতে বড় বড় কচ্ছপ ও চাঁচড় সেই সময় বিক্রি হতে দেখেছি। পাঁপড়,বেগুনী ছাড়াও কাঠি বরফ খেতাম অনেকগুলি। জিভ লাল বা সবুজ করে অন্য সঙ্গীদের দেখাতাম। এছাড়া বেশী করে খাওয়া হত দোকানে বসে। পাওয়া যেত গরম পরোটা (বেশ বড় বড় পাতলা পাতলা, চাপড় দিয়ে দিয়ে ভাজত আর ওজন হিসাবে বিক্রি করত), খাওয়ার জন্য টুকরো করে দিত,সঙ্গে থাকত ঝাল ঝাল বাঁধাকপির তরকারি আর গরম জিলাপি। বাড়িতে যতই সুস্বাদু করে বাঁধাকপি রান্না করা হোক না কেন এই তরকারির সঙ্গে কেউ পাল্লা দিতে পারত না। বাড়ি ফেরার সময় একরাশ তেলে ভাজা আর গরম গরম জিলাপি বাড়ি আসত সবার জন্য।
  • M | 59.93.204.240 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ২২:২৪432507
  • দারুন।

    আচ্ছা একটা প্রশ্ন, তিতির আর তৃপ্তি কি একই জন?
  • Nina | 68.84.239.41 | ২৩ এপ্রিল ২০১১ ০০:৫০432508
  • :-))))))
  • titit | 128.210.80.42 | ২৫ এপ্রিল ২০১১ ২১:০৯432510
  • M
    সেই যে গান আছে না,
    তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা, ও মন জানো না।
    এও সেইরকম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন