এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প: আবার ফিরে আসা

    shrabani
    অন্যান্য | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৭৮২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৪৪408362
  • দারোগাবাবু নীলমনিকে বললেন লাশ থানায় পাঠাতে, সেইমত কাজ হতে থাকল। ভীড়টা ছড়িয়ে হালকা হয়ে গেল। সবাই নীচু স্বরে জটলা করতে থাকল তবে দারোগা আর জমিদারের উপস্থিতিতে কেউ প্রকাশ্যে কোনো গোলমাল করতে সাহস করলনা। লাশ নিয়ে পুলিশ চলে গেল।
    বিজয়ও নীলমনি আর অমরের সঙ্গে চলল সদরের থানায়। এখন তার পরিচয় সবাই জেনেই গেছে। মহেন্দ্রবাবু এতটাই অসন্তুষ্ট যে উনি বিজয়কে আর কিছু বললেন না। যাবার আগে বিজয় আড়ালে নীলমনির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করল, হরি আর একটা কনস্টেবল চুপিচুপি সবার চোখ এড়িয়ে গিয়ে পুরনো ভিটের দিকে নজর রাখবে। আর হরিকে বলে দিল মিশিরকে বুঝিয়ে বলে রাত্রে বাড়ির গেটের তালা খুলে রেখে সজাগ পাহারায় থাকতে। মিশির যেন নিজের কুঠরি তেই থাকে, পুলিশের নির্দেশ ছাড়া কাউকে ধরেনা। মিশির প্রথমে হরির কথায় গররাজী হলেও পুলিশের নির্দেশ শুনে আর হরিও পুলিশের লোক এটা জেনে রাজী হয়ে গেল।

    সদরে পৌঁছে লাশের বন্দোবস্ত করে ওরা থানায় এল। অমর দারোগা নীলমনিকে খুবই বিশ্বাস করেন তাই তার কথামত বিজয়ের কাজ করতে রাজী হলেও একটু সন্দেহ ছিল কাজটা ঠিক হচ্ছে কিনা। কিছু গড়বড় হলে জমিদার বাড়ির ব্যাপার, পুলিশের বড়কর্তাদের রোষনজরে পড়ার সম্ভাবনা। নীলমনি অবশ্য দারোগাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল। তার মনে কোনো সন্দেহ জাগলেও সে সেটা বাইরে কাউকে বুঝতে দিচ্ছিলনা।
    বিজয় চুপ করে বসেছিল। যতক্ষণ না পোস্টমর্টেমের ফল আসছে, সে কাউকে কিছু বোঝাতে পারবেনা তবে তার মনের মধ্যে একটা থিওরি দানা বাঁধছে, শুধু কিছু প্রমানের অপেক্ষা।
    রাত প্রায় দশটা বাজে। ওরা অল্প খাবার আনিয়ে খেয়েছে, দারোগাবাবুও উত্তেজনায় বাড়ি যাওয়ার নাম করেননি। ময়নাতদন্তের কাগজ নিয়ে একজন এসে অমরবাবুর হাতে দিল। বিজয়ের ও নীলমনির একটু ঝিমুনি এসেছিল ফাঁকা থানায় বসে বসে, এখন টান টান হয়ে উঠে বসল। অমরবাবু রিপোর্টটাতে চোখ বুলিয়েই বললেন,
    -"একি কান্ড! এরকম বাপের জম্মে শুনিনি!"
    বিজয় আর নীলমনি একসাথে উঠে অমরবাবুর টেবিলের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল,
    -"কি হয়েছে স্যর?"
    -"এ নাও, পড় তোমরা। বিজয়ের কথাই ঠিক। লাশের পায়ে সাপের দাঁতের দাগ নয়, কোনো সিরিঞ্জ জাতীয় কিছুর ছুঁচের দাগ। দেহে অতিমাত্রায় সাপের বিষের ওষুধ পাওয়া গেছে যা সাপের বিষের মতই ক্ষতিকর। মাথায় ভারী কিছু দিয়ে মারাও হয়েছে তবে সেটা বিষ দেওয়ার আগে না পরে বলা মুশকিল!"
    বিজয়রা এক নি:শ্বাসে পড়ল রিপোর্টটা। অমরবাবু বিজয়ের দিকে বেশ প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকালেন, নীলমনিরও একটা গর্ব গর্ব ভাব। শুধু বিজয় নির্বিকার। তার এখন অনেক কাজ, এখন শুধু আর চুরির মামলা নয়, খুনও জড়িয়ে গেছে এই মামলায়। সে তার কিছু ধারনার কথা ওদের বলল। তিনজনে মিলে ভাবনা চিন্তা করে তৈরী হয়ে রওনা দিল চাঁদপুরের দিকে।

  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৪৯408363
  • চাঁদপুরে পৌঁছে, ওরা যখন চৌধুরীবাবুর গেটের কাছে যখন এল, গেটের তালা খোলা ছিল। মিশির জেগে অন্ধকারে নিজের কুঠরিতে ছিল। বিজয় তাকে কোনোরকম শব্দ না করে গেট খুলতে বলল।
    অতিথিশালায় বিজয়ের ঘরের দরজা ভেজানো ছিল, হরি এখনো বোধহয় জঙ্গলে পাহারায়। বিজয়রা অন্ধকারে অপেক্ষা করতে লাগল। কতক্ষণ এভাবে কেটেছিল জানেনা, একটু বোধহয় ঘুম এসে গিয়েছিল তিনজনেরই, খুট করে একটা শব্দে বিজয়ের হুঁশ হল। পাশের ঘরে কেউ মনে হয় চলাফেরা করছে। বিজয় বাকী দুজনকে জাগিয়ে দ্রুত বাইরে চলে এল, বারান্দায় একপাশে থামের আড়ালে অপেক্ষা করতে থাকল। একটা ছায়ামূর্তি হাতে দুটো ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এল পাশের ঘর থেকে। বারান্দায় এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে নীচে নেমে গেটের দিকে যেতে লাগল। এরা তিনজন নি:শব্দে দ্রুতগতিতে নেমে তিনদিক দিয়ে ঘিরে ধরল লোকটিকে। তিনটে ভারী টর্চ জ্বলে উঠে জোরালো আলো পড়ল হতভম্ব মানুষটির মুখে। বিজয়দের দেখে তার হাতের দুটো ভারী ব্যাগ পড়ে গেল মাটিতে, বিজয় বলল,
    -"এত রাত্রে কোথায় চললেন শিবতোষবাবু, এসব মালপত্র নিয়ে? বন্ধুর বাড়ি থেকে বিদায় নেবার এই কি সময় নাকি?"

    শিবতোষ স্তম্ভিত। কোনো কথা বললেন না। বিজয়ই আবার বলল,
    -"নিন দারোগাবাবু, মন্দিরের চোর আর বাঁটুর খুনীকে গ্রেফতার করুন।"
    অমরবাবু এগিয়ে এলেন। ঠিক সেইসময় দুটো টর্চের আলো দেখা গেল, হরি আর তার সঙ্গীটি পড়িমড়ি করে আসছে। হরি কাছে এসে আর কাউকে না খেয়াল করে বিজয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"বাবু একটু আগে একজন এসে পুরনো ভিটের ওখানে ইঁট সরিয়ে সরিয়ে একটা বাক্স মত বার করল। তারপর সেটা খুলে তার মধ্যের জিনিসপত্র একটা ব্যাগে পুরে নিয়ে এল। অন্ধকারে মুখ ভাল বুঝতে পারিনি, আপনার মানা ছিল তাই ধরিওনি। একটু দুর থেকে পিছু নিয়ে ছিলাম। টর্চ জ্বালাইনি, অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আসছিলাম দুজনে, কিছুটা আগে লোকটাকে হারিয়ে ফেললুম।
    বিজয় মাটিতে পড়ে থাকা শিবতোষবাবুর একটা ব্যাগের দিকে আলো ফেলে বলল,
    -"দ্যাখ তো ঐরকম ব্যাগ কিনা?"
    হরি এতক্ষনে চারপাশের অন্যান্যদের খেয়াল করল। তারপর কি বুঝে বলল,
    -"এইরকমই বাবু। তবে তো ঐ লোকটাই এই বাবু ছিল, তাই বল!"
    অমরবাবুর ইশারায় নীলমনি আর কনস্টেবলটি পকেটের দড়ি দিয়ে শিবতোষের হাত দুটো বেঁধে ফেলল। শিবতোষ জ্বলন্ত চোখে বলল,
    -"আপনারা পুলিশ হয়ে এই বেসরকারী গোয়েন্দার কথায় আমার মত লোককে অপমান করছেন?"
    বিজয় একটূ ব্যাগটা খুলে দেখে বলল,
    -"তা আপনার মত গণ্যমান্য লোক বুঝি এই রাত দুপুরে সোনাদানায় ভরা ব্যাগ নিয়ে বন্ধুর বাড়ি থেকে পালায় নাকি শিবতোষবাবু? এখন আপাতত জেলে যান, যা বলার আদালতে জজের কাছে বলবেন।"
    নীলমনি শিবতোষকে কনস্টেবলের পাহারায় অতিথিশালায় তার ঘরে বসিয়ে রাখল। তারপরে তিনজনে অন্য ঘরের ভেতরে বসে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। ভোরের আভাস হতেই হরিকে পাঠাল পুরনো ভিটের যে জায়গায় শিবতোষ গেছিল সেখানে। হরি ফিরে এল একটা রুপোর ভারী বাক্স নিয়ে। ভেতরে কিছু নেই, গাতালা খোলা। বিজয় দেখাল অন্যদের চৌধুরীদের রুপোর বেদী ও গুপ্তধনের বাক্স।
    শিবতোষের দুটো ব্যাগে মন্দিরের অন্যান্য চুরি যাওয়া জিনিসের সাথে প্রচুর সোনার গহনা ও মোহর পাওয়া গেল। থানায় বলা ছিল, ভোর হতেই আরো পুলিশ এসে গেল। তাদের জিম্মায় শিবতোষবাবুকে সদরে পাঠিয়ে দেওয়া হল।

  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫০408364
  • চৌধুরীবাড়িতে একজন দুজন করে জাগছিল। কিভাবে যেন শিবতোষবাবুকে পুলিশে নিয়ে গেছে খবরটা চারদিকে রটে গেল। বিজয়রা তখনো বাইরে দাঁড়িয়ে, মহেন্দ্রবাবু এলেন ভেতর থেকে, পিছন পিছন রঘু, গিরীশ, হারাধন ও অন্যান্যরা।
    মহেন্দ্রবাবু বিজয়কে অগ্রাহ্য করে অমরবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
    -"কি শুনছি দারোগা? আপনি নাকি শিবতোষকে গ্রেফতার করেছেন। আগে আমার সঙ্গে একবার কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না? আমি এক্ষুনি সদরে যাব, পুলিশসাহেবকে বলে আপনার চাকরি আমি শেষ করে দেব। কি পেয়েছেন আপনারা, এত সাহস হয় কি করে?"
    অমর দারোগা এবারে ধৈর্য্য হারাল। হুঙ্কার দিয়ে উঠল,
    -"অনেক হয়েছে আপনার এই জমিদারী হম্বিতম্বি। এবার চুপ করে আমার কথা শুনুন। আপনার বন্ধুর কাছে আপনার মন্দিরের চুরি যাওয়া জিনিস ও আরো অনেক সোনাদানা পাওয়া গেছে। সেসব নিয়ে সে রাতের বেলা চুপচাপ কেটে পড়ছিল, তখন তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি বামাল সমেত। আপনার কিছু বলার থাকলে পরে আদালতে বলবেন।"
    দারোগার কথায় যেন জোঁকের মুখে নুন পড়ল। মহেন্দ্র একেবারে চুপ, এমন করে চারিদিকে তাকালেন যেন আর কথা খুঁজে পাচ্ছেননা। বিজয় এইসময় বলল,
    -"আমরা এমনি এমনি কিছু করবনা। আপনি সবাইকে নিয়ে বৈঠকখানা ঘরে চলুন। আমরা আসছি। সবার যা জিজ্ঞাস্য, যত প্রশ্ন, মনে হয় সব কথা শুনলে সেসব ধাঁধা পরিস্কার হয়ে যাবে। "
    মহেন্দ্রবাবু আর কথা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে বৈঠকখানার দিকে হাঁটা দিলেন। একটু অপেক্ষা করে বিজয়রাও ওনাকে অনুসরণ করল। বাড়ির সদস্যরা আর রঘু, সরকারমশাই ও পুরুতমশায় এসে ঢুকল। সবাই এদিক সেদিকে বসল। হারাধন আর গিরীশ দাঁড়িয়ে রইল। সকলকে অবাক করে দিয়ে ভারতীদেবী এসে ঢুকলেন। হারাধন মাকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলে। উনি কোনোদিকে না তাকিয়ে তাতে গিয়ে বসলেন। বিজয়ের কৃতজ্ঞ দৃষ্টির জবাবে একটু ঘাড় নেড়ে শক্ত হয়ে বসে রইলেন। মহেন্দ্রবাবু বোনের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন। সবার চোখ বিজয়ের দিকে।
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫৩408365
  • -------------------------------------------
    বিজয় উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে শুরু করল,

    -" এই কেসে প্রথমেই যেটা আমার অদ্ভুত লাগে মন্দির চুরির মত একটা সাধারণ ব্যাপারে সদরের থানা যেখানে তদন্ত করছে সেখানে আমাদের বড়বাবুর সাহায্য চেয়ে পাঠান চৌধুরী মশায়। এসে যখন দেখি সেরকম দুস্পাপ্য কিছু চুরি যায়নি তখন এই প্রশ্নটা আরও বেশী করে আমাকে ভাবায়। মহেন্দ্রবাবুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি বিগ্রহের গলার হারের কাহিনী। এ সংসারের মঙ্গলের চিহ্ন, তার খোয়ানোতে অমঙ্গল আশঙ্কায় উনি এই হার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরত চান। ভারতী দেবী ও এই বিশ্বাস সমর্থন করেন। যেটা মহেন্দ্রবাবু বলেননা আর ভারতীদেবী জানেননা, তা আমি জানতে পারি পুরোহিত মশায়ের কাছে। ঐ হারের লকেট এই পরিবারের গুপ্তধনের চাবিকাঠি।
    এই গুপ্তধনের গল্পে প্রথমে আমি খুব একটা ভরসা করিনা, কারণ প্রাচীন পরিবারে এ ধরণের কাহিনী অনেক চালু থাকে। সেসব সবসময় সত্যি হয়না। হয়ত সঞইত ধন কিছু ছিল তবে এই পরিবার ইতিমধ্যেই একবার দু:সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছে, সেই ধন থাকলে কি আর তখন ব্যবহার হয়নি! জিতেন্দ্র চৌধুরী পরিবারের হাল ফিরিয়েছিলেন, সে হয়ত এই গুপ্তধনেরই সাহায্যে। তিনি লোক লাগিয়ে, নদীতে জঙ্গলে খুঁজে ঠাকুরের হার সিন্দুক এসব উদ্ধার করেছিলেন আর এই কথিত গুপ্তধন খুঁজে পাননি, তা আবার হয় নাকি!

    এখন এই চুরি প্রসঙ্গে আসি। আমি সবার কথায় কিছু না কিছু সূত্র পাই। এতবছরের মন্দিরে কোনোদিন চুরি হয়নি। এই মন্দিরের দেবতাকে এদিককার সাতগাঁয়ে অত্যন্ত জাগ্রত মানা হয়, স্থানীয় লোকের এই চুরিতে জড়িত থাকার সম্ভাবনা কম। চুরি দেখে এও মনে হয়না বাইরের পেশাদারী মন্দির চোরেরা করেছে। তা যদি হত,অষ্টধাতুর মূর্তি তারা ফেলে যেতনা। মন্দিরে সবচেয়ে দামী জিনিস ঐ মূর্তিই। আর একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখযোগ্য যে ঠাকুরের রুপোর বেদীটি যা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো ছিল তা চোরেরা শাবল দিয়ে ভেঙে তুলে নিয়ে গেছে। আর রাতের নি:শব্দতাতেও কেউই এমনকি পাশে অতিথিশালার বাসিন্দা শিবতোষবাবুও সে শাবলের আওয়াজ শোনেননি। তবে কি এ চুরিতে ঘরের লোকের হাত আছে?
    সবচেয়ে যেটা ধন্দের ব্যাপার তা হল কর্তার তিনতলার ঘর থেকে মন্দিরের চাবি চুরি যাওয়া। বাইরের চোর নীচে সদরের, দোতলার ও তিনতলার সিঁড়ির বন্ধ দরজা পেরিয়ে চাবি চুরি করল তাও কেউ টের পেলনা। কর্তা ও রঘু আফিম খেয়ে ঘুমোন কিন্তু গিন্নীমার তো বাতের কষ্টে ভাল ঘুম হয়না। ওদের ছেলেও সেরাতে বাড়ি ছিল, তবে? মন্দির চুরির তদন্তের প্রথম ধাপ হল চাবি চুরির রহস্য।

    হারাধন আমাকে বলে যে সত্যিকারের চোর অনায়াসে বৃষ্টির জলের পাইপ বেয়ে ছাতে উঠে ওখান থেকে সহজেই তিনতলার বারান্দায় নামতে পারে। এটা খুব ভুল নয়, বারান্দার দিকের দরজা খোলাই থাকে। এছাড়া কথায় কথায় জানলাম মেরামতির জন্য মিস্ত্রী মজুরেরা বড় বাঁশের সিঁড়ি ব্যবহার করে। খামারে এই সিঁড়ি আমি সচক্ষে দেখেওছি। তাহলে চোরের তিনতলায় উঠে চাবি নেওয়াটা খুব একটা মুশকিল কিছু নয়। এইভাবেই কি চাবি চুরি হয়েছে? তাহলে কি এ কাজ কোনো পেশাদারী চোরের? কিন্তু সেক্ষেত্রে আবার সেই প্রশ্ন জাগে। পেশাদারী চোর স্থানীয় হলে মন্দিরের চুরি করবে কি, আর বাইরের হলে মূর্তি ফেলে যাবে কেন?
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫৬408366
  • বাড়ির লোকের মধ্যে চাবি সরাতে অনেকেই সহজে পারে। কিন্তু কর্তা ও রঘুর বক্তব্য যে সে রাতে শোবার আগে কর্তা চাবি ঘরে চাবির জায়গায় রাখেন। তারপরে সে ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। চাবি তার আগে কেউ সরিয়ে নিলে ওদের নজরে পড়ত। বাড়ির মধ্যে পাইপ বা সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় ওঠার মত দক্ষতা একজনেরই আছে সে হল ব্যায়ামবীর হারাধন। আবার সেই আমার মাথায় ঢোকায় যে ঐভাবে ওপরে ওঠা যায়। একটা বড় প্রশ্ন যে আফিমের ঝোঁকে রঘু বা মহেন্দ্রবাবু শোবার আগে ঠিক দেখেছেন কিনা, তবে বাবুর হাতে চাবি পুরুতমশায় নিজে দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে তিনি নি:সন্দেহ।

    এইসব প্রশ্ন নিয়ে আমি তদন্তে এগোই । আমি পুলিশের লোক, পুলিশকে লোকে যাই বলুক তাদের তদন্ততল্লাশে আমার আস্থা প্রচুর। কিন্তু সদরের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ আমি করতে পারবনা। নীলমনি বাবুর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করি। কিছু অদ্ভুত তথ্য সেখান থেকে পাই।
    প্রথম হল মন্দির চুরির চোরাই মাল বাজারে এখনও আসেনি যদিও প্রায় দশদিন হয়ে গেছে। সদরের পুলিশেরও মতে বাড়ির কারুর হাত আছে, আর সে কথা মহেন্দ্রবাবুকে জানানোর পরেই উনি সদরের পুলিশের সঙ্গে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আর তারপর থেকেই সদর থানাও এই তদন্তে ঢিলেমি দেখায়। মহেন্দ্রবাবু আমাকে বলেছিলেন ওরা রঘুকে ধরে নিয়ে যেতেই উনি ওদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। আর একটা ব্যাপার হল ঢিলে দেওয়ার আগে সদর পুলিশ খোঁজখবর করে জানে যে সৌভাগ্যের প্রতীক হার চুরি যাওয়ার আগেই গত একবছর মহেন্দ্রবাবু ফাটকাবাজারে টাকা লাগিয়ে ভারী লোকসান গুনেছেন। তার ব্যবসার অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। তবে এ ব্যাপারে মহেন্দ্রবাবু নিজে ও তার ব্যবসার দেখাশুনা করেন যিনি সেই মহিমবাবু ছাড়া আর কেউ জানেনা।

    মিশরিলাল ওদিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। সে রোজই অল্প ভাং দেওয়া ঠান্ডাই খায়, তাতে তার রাত জাগতে সুবিধা হয়। কোনোভাবে সে নিজে বা অন্য কেউ ঐদিন তার ঠান্ডাইয়ে ভাং বেশী পরিমানে দিয়ে দেয় যার ফলে সে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। যদি অন্য কেউ মেশায় তাহলে সে এ বাড়িরই কেউ হবে, বাইরের কেউ মিশরির চোখ এড়িয়ে গেট দিয়ে ঢুকে তার ঠান্ডাইয়ে কিছু মেশাবে কি করে? বাঁটু, রঘু হারু প্রভৃতি চাকরেরা তার কাছে নিয়মিত ঠান্ডাই নিতে আসে। তারা কেউ অনায়াসে ছল করে মিশিরের ঠান্ডাইয়ে বেশী পরিমাণ ভাঙ মিশিয়ে দিতে পারে।
    আর একটি খটকার কথা বলে আমি সমাধানের প্রসঙ্গে যাব। শিবতোষবাবুকে নিয়ে আসেন মহেন্দ্রবাবু এ বাড়ির ইতিহাস লিখতে। শিবতোষবাবুর নিজের কথা অনুযায়ী এটা নিছকই বন্ধুকে বাড়িতে রাখার অজুহাত। আমি খোঁজ করে দেখেছি তিনি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন, সেরকম পরিবারের কোনো দায়িত্ব নেই, ধনী না হতে পারেন একেবারে গরীব ভবঘুরেও নন। তবুও হয়ত তিনি একজায়গায় বেশীদিন থাকেননা, তাই থাকে ধরে রাখতে মহেন্দ্র বাবু পরিবারের ইতিহাস চর্চার সাহায্য নেন। কিন্তু আমরা দেখছি, ব্যবসায় লোকসানে টাকাপয়সার টানাটানির সময়েও মহেন্দ্র বাবু শিবতোষবাবুর জন্য পুরনো ভিটের সংস্কারে বেশ কিছু পয়সা খরচ করেছেন। এতটা বদান্যতা শুধু বন্ধুকৃত্যের জন্য? তবে কি আসলে এই দু:সময়ে তিনি শিবতোষবাবুর সাহায্যে পারিবারিক গুপ্তধন খুঁজতে চান?

  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৫৮408367
  • মহিমবাবু আর সরকারবাবু আমাকে এ বাড়ীর এক অদ্ভুত নিয়মের কথা বলে। বংশ পরম্পরায় এ বাড়ীতে ছেলেরা ও মেয়েরা সমানভাবে জমিজমার দাবীদার হয়। কর্তারা সেইভাবেই পাকা লেখাপড়া দানপত্র করে যান। পরে মনোহর উকিল আমাকে ভাগাভাগীর হিসেবও দেখান। চৌধুরীদের জমিজায়গাতে মহেন্দ্রবাবু ও ভারতীদেবী দুজনের আধাআধি ভাগ। সেই হিসেবে পুরনো ভিটে আর জঙ্গলের অংশ মহেন্দ্রবাবুর ভাগে। নতুন বাড়ির ভাগ আধাআধি বসবাসের জন্য। আরও জানতে পারি যে ব্যবসার বেশীরভাগ অংশ মহেন্দ্রবাবুর বাবা মারা যাওয়ার আগে মেয়ের ছেলে ও ছেলের ছেলে, তাঁর দুই নাতির নামে করে দিয়ে যান, বাকিটা মহেন্দ্রবাবুর। ভারতীদেবী জমিদারবাড়ির মেয়ে, জমিদারবাড়ির বউ। স্বামীর অসুস্থতায় ও অন্যান্য শরীকদের অসহযোগীতায় শ্বশুরবাড়ির তরফে যা ছিল খুইয়ে বসেছেন। ওনার ছেলে সাদাসিধে সরল। তাই এখানকার সম্পত্তির হিসেব নিকেশ উনি রাখতে চেষ্টা করেন, যাতে তার কিছু হলে হারাধন বঞইত না হয়। ব্যবসা বোঝেননা তবে জমিজমার হিসেবটিসেব উনি দেখেন সরকারবাবু আর নিজের ভাইয়ের সঙ্গে মিলে। ব্যবসার এই ভরাডুবির কথা বেশীদিন সবার কাছে লুকনো যাবেনা, তাতে হারাধনের অংশও আছে। সামাল দিতে এখন গুপ্তধনের খোঁজ পড়েছে। তা যদি হয় তবে পুরনো ভিটেতে পয়সা খরচ করার একটা মানে হয়!

    যা হয়েছে তা আমি ঠিক বলছি কিনা একটু খেয়াল করবেন চৌধুরী মশাই। গুপ্তধন পুরনো ভিটেতে ছিলনা। যা ছিল সেখানে সেসব জিতেন্দ্রই খুঁজে পেতে তুলে আনেন আর তার সাহায্যে সংসারের অবস্থা ফেরান। প্রাচীন পরিবারের নিয়ম অনুযায়ীই এই ধনসম্পদ একটি রুপোর বাক্সে রাখা থাকত যার চাবি ছিল হারের লকেটে। অবস্থা ফেরার পরে জিতেন্দ্র আবার ধন জমা করেন ভবিষ্যতে দু:সময়ের মোকাবিলার কথা ভেবে পরিবারের নিয়ম অনুসারে । উনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলেন। জানাজানি বা চুরি এড়াতে সেইসব সোনাদানা ঐ রুপোর বাক্সে ভরে ঠাকুরঘরের মেঝেতে চারকোণা গর্ত করে তার মধ্যে ঢুকিয়ে সিমেন্ট দিয়ে চারধার বাঁধিয়ে দেন একটি বেদীর আকারে যার ওপরটা রুপোর। ঠাকুর থাকেন বেদীর ওপরে আর তার গলায় থাকে হার। পরিবারের নিয়মেই এর হদিশ থাকে বাড়ির কর্তা অর্থাৎ মহেন্দ্রবাবুর কাছে।
    উনি দেখলেন যদি সবাইকে জানিয়ে এই সম্পদ নিয়ে ব্যবসার ভাগ্য ফেরাতে যান, ভারতী দেবী ওঁকে ছেড়ে দেবেননা। একে তো তাঁর ছেলের প্রাপ্য অংশ মহেন্দ্রবাবু ফাটকায় উড়িয়েছেন। এই পারিবারিক সম্পদেও তার ভাগ আছে যা উনি কখনই ভাইয়ের হাতে তুলে দিতে রাজী হতেননা। সুতরাং এমনভাবে সমস্ত ব্যাপারটাকে সাজাতে হবে যাতে গুপ্তধনের অংশ পুরোটাই মহেন্দ্রবাবুর তা নিশ্চিত হয়। কি করে?

  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:০০408368
  • শিবতোষ ওঁর প্রাণের বন্ধু, তার কাছে সব কথা খুলে বলে সাহায্য চাইলেন। দুজনে মিলে ঠিক করলেন প্রথমে পুরনো ভিটে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করবেন। যাতে লোকে প্রশ্ন না তোলে তাই শিবতোষের ইতিহাস লেখার গল্প। জমানো ধনের বাক্স কেউ চোখে দেখেনি। সুযোগ বুঝে একদিন মন্দির থেকে বাক্স বার করে নেবেন আর তারপরে ঐ বাক্স বেরোবে পুরনো ভিটে থেকে। শিবতোষ খুঁজে পাবেন। যেহেতু ভিটের মালিকানা মহেন্দ্রবাবুর, বাক্সেও তাই তারই অধিকার। ভারতী দেবী মেয়েমানুষ, হারাধন ছেলেমানুষ। আইনকানুন দিয়ে বোঝালে তারা এ নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবেনা। এমনিতেও ভারতীদেবীর বাপের বাড়ির সম্পত্তিতে ততটুকুই অধিকার যতটুকু তার বাবা লেখাপড়া করে দিয়ে গেছে।
    সমস্যা হল মন্দির থেকে বাক্স বার করতে গেলে বেদী ভাঙতে হবে, এমনি করা যাবেনা কোনো অজুহাতেই, তাই চুরির নাটক!

    আমার প্রথম থেকেই এই চুরি একটা সাধারণ মন্দির চুরির মত লাগছিল না। শিবতোষবাবু যে এই চুরির ব্যাপারে কোনো ভাবে জড়িত সেটা আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল। মন্দির আর অতিথিশালার দুরত্ব এমনই যে মন্দিরে একটু হাঁটাচলা করলেও অতিথিশালায় ঘরে বসে শোনা, আমি আমার ঘরের থেকে শুনেছি। আর অতবড় তালা খোলা হল, শাবল দিয়ে বেদী ভাঙা হল, শিবতোষ বাবু টের পেলেন না! তবে তার সাথে পরিবারের কেউ আছে এসম্বন্ধে আমি নিশ্চিত ছিলাম। তবে সে জন যে মহেন্দ্রবাবু নিজে এ সন্দেহ প্রথমে হয়নি। হারাধন সবল ব্যায়ামবীর, তিনতলায় পাইপ বেয়ে উঠে চাবি চুরি করতে পারে! গিরীশ ওনার প্রাক্তন ছাত্র, সেও অধ্যাপকের সাথে মিলে পরিকল্পনা করতে পারে! এদের দুজনেরই টাকার দরকার আছে। মহেন্দ্রবাবুর ভূমিকাটা আমার কাছে স্পষ্ট হল তখনই যখন ওর ব্যবসা আর এবাড়ির সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা সম্পর্কে জানলাম! এছাড়া বাড়ির কর্তার সাহায্য ছাড়া গুপ্তধন খুঁজে বার করা সহজ হত না!

    সবকিছু দুই বয়স্ক মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়, তাই চৌধুরীমশায় অনেক ভেবেচিন্তে পরিকল্পনা বানালেন। শিবতোষ বাঁটুকে নিয়ে পুরনো ভিটে তে যেতেন, বাঁটু তার দেখাশোনা করত। তাকে একটু লোভী প্রকৃতির দেখে উনি তাকে লোভ দেখিয়ে দলে নিলেন। তবে আমার মনে হয় বাঁটু জানতনা যে এতে তার কর্তাবাবুও যুক্ত। মহেন্দ্র নিজে রাত্রে শিবতোষকে চাবি দেন। সে রাতে বৈঠকখানায় শেষ অবধি দুই বন্ধুতে বসে ছিলেন। রঘু আফিমের ঝোঁকে চাবি ঘরে টাঙানো দেখেছে কিনা ঠিক নেই, কর্তাবাবুর কথাতেই সে সায় দিয়েছে। চাবি নিয়ে শিবতোষ বাঁটুকে দেন। বাঁটুই মিশিরের ঠান্ডাইয়ে বেশী করে ভাঙ মিশিয়ে দেয়। সবাই শুয়ে পড়লে মন্দির খুলে শিবতোষের কথায় বাঁটু মন্দিরের জিনিসপত্র চুরি করে, শাবলের চাড়ে বেদী ভেঙে বাক্স বার করে। তারপরে চোরাই মাল মায় বাক্স সহ নিয়ে যায় পুরনো ভিটের নীচে আগে থেকে খোঁড়া গর্তয় পুঁতে রাখতে। তার ওপরে ভাঙা ইঁটের স্তুপ জড়ো করে রাখে। যাবার পথে বাগানের ধারে বিগ্রহকে ফেলে রাখে। সেটা হয়ত বাঁটু না করে শিবতোষই করেন, কারণ বাঁটু অশিক্ষিত গ্রাম্য লোক, বিগ্রহকে রাস্তায় ফেলতে সাহস পাবে না।
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:০৪408369
  • পুলিশ চোরাই মালের জন্য বাড়িতে খুঁজলেও পুরনো ভিটেতে খোঁজার কথা তাদের মনে আসেনা, স্বভাবতই। আমার মনে হয় বাঁটু জানতনা যে মহেন্দ্রবাবু আর শিবতোষবাবু পরে ঐ বাক্স পুরনো ভিটে খুঁড়ে পাওয়ার ভান করবে। আর এদেরও বাঁটুকে পুরো পরিকল্পনাটার সঙ্গী করার ইচ্ছে ছিলনা। সদরের থানার লোকেদের হাত করা একটু ঝুঁকি হয়ে যেত, তাই উনি চেনা পুলিশের খোঁজ করলেন। এছাড়া পুলিশ ওনার ব্যবসাপত্তর নিয়েও তদন্ত করতে শুরু করেছিল, তারা সন্দেহ করতে পারে। ভাবলেন মুকুন্দপুরের বড়বাবু নিজে বা অন্য কেউ এলে তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে বাঁটুকে চোর সাজাবেন আর বাঁটুকে টাকাপয়সা দিয়ে ভয় দেখিয়ে হার আর বাক্স ছাড়া অন্যান্য জিনিস নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করবেন। তারপরে সময় সুযোগ বুঝে গুপ্তধন পাওয়া যাবে পুরনো ভিটে থেকে।
    এই হিসেবে প্রথম গন্ডগোল হল, বড়বাবু আমাকে পাঠালেন। আর আমি এসে প্রথমেই ওদের পরিকল্পনার সবচেয়ে দুর্বল অংশ অর্থাৎ চাবি চুরির ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে লাগলাম। বিলিতী তালা ভাঙায় যে আওয়াজ আর সময় লাগত তাতে ওদের চুরিতে অনেক অসুবিধে আর ঝুঁকি হত। তাই ওরা চাবি দিয়ে খুললেন, কিন্তু চাবি চুরির ব্যাপারটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেন না। এদিকে আমার তদন্তের রকম দেখে মহেন্দ্রবাবু ঠিক করতে পারছিলেননা কিভাবে আমাকে ঘোরাবেন। উনি গুপ্তধনের ব্যাপারটা চেপে গেলেন। সর্বোপরি আমি পুরনো ভিটেতে গিয়ে খোঁজখবর করতে দুই বন্ধুই বেশ ঘাবড়ে গেলেন!

    এদিকে আমার জেরায় বাঁটুও ভয় পেতে শুরু করল। মনে হয় ও শিবতোষবাবুকে ব্ল্যাকমেল করছিল আমাকে সব বলে দেবে বলে। এই বয়সে বদনাম, পুলিশের ভয়, শিবতোষ মরিয়া হয়ে গেলেন। বাঁটু সাক্ষ্য দিলে উনিই দোষী হবেন, সে মহেন্দ্রবাবুর ভূমিকা জানেনা তাই তার নাম আনবেনা। মহেন্দ্রবাবু যে কোনো সময়ে সমস্ত অস্বীকার করে বলতে পারেন যে ইতিহাস লেখার জন্য উনি শিবতোষবাবুকে পারিবারিক জমানো সম্পদের খবর দিয়েছেন আর শিবতোষবাবু সেই সুযোগে বাঁটুর সাহায্যে এই চুরির পরিকল্পনা করেছেন।

    সেই রাতে আমার সঙ্গে বাঁটুর কথোপকথন শুনে উনি আর দেরী করলেননা। কোনো একটা অজুহাতে উনি বাঁটুকে নিয়ে পুরনো ভিটের দিকে গেলেন, গায়ের জোর না থাকলেও বুদ্ধি ওনার প্রচুর। হয়ত কোনো ভাবে তাকে অন্যমনস্ক করে মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে,সাপের বিষওয়ালা সিরিঞ্জ ওর পায়ে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সাপের বিষের ওষুধও বিষ, যদি বেশী পরিমাণে দেওয়া হয়। জঙ্গলে কাজ করার জন্য এই ওষুধ মহেন্দ্রবাবুই আনিয়ে শিবতোষকে দিয়েছিলেন। আমি জোর না করলে বাঁটুর ময়নাতদন্তও হতনা আর সে যে সাপের কামড়ে মারা যায়নি এটাও প্রমাণ হতনা।
    বাঁটুর মৃত্যুতেই আমার কাছে পুরো ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেছিল। শিবতোষবাবুও আন্দাজ করছিলেন যে আমি ওনাকে সন্দেহ করছি। ওনার কথায় আমার এও মনে হচ্ছিল যে উনি আমার আসল পরিচয় জানেন। এই কারনেও মহেন্দ্রবাবুকে আমার সন্দেহ হয়। যেহেতু দুজনে মিলে সব প্ল্যান করেছিলেন, বন্ধুর কাছে উনি আমার পরিচয় লুকোননি।

  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:১৫408370
  • উনি জানতেন পোস্টমর্টেমের ফল জানলে বাঁটুর মৃত্যু যে খুন তা পুলিশ জেনে যাবে। উনি ভয় পেলে গেলেন। মহেন্দ্রবাবুর ওপরও আর ভরসা করতে পারলেননা। যতদুর অনুমান, মহেন্দ্রবাবু খুনের ব্যাপারে জানতেননা। জানলে উনি হয়ত বন্ধুর এই গুরুতর অপরাধ থেকে হাত ধুয়ে ফেলতেন।

    ঠিক না জানলেও, আমার ধারনা ছিল সব মাল পুরনো ভিটেতেই লুকনো আছে। ওখান থেকে একটা রুপোর ধুপদানীও পাই যা পুরুত মশাইকে দেখাতে উনি শনাক্ত করেন যে ওটা মন্দিরের চুরি যাওয়া জিনিস। বাঁটুর আদি ভিটের জঙ্গলে মৃত্যুতে আমার ধারনাটা আরও বদ্ধমূল হল। আমি হরিদের ওখানে পাহারায় রাখলাম। ময়নাতদন্তের ফল আসতেই সব জানা হয়ে গেছিল, বাকী ছিল শিবতোষকে হাতেনাতে ধরা। আমরা রাত্রে এসে অতিথিশালায় আমার ঘরে চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকলাম। তারপরের কাহিনী তো সবার জানা।"

    মহেন্দ্রবাবু এতক্ষণ চুপ করে বিজয়ের কথা শুনছিলেন, দু একবার কিছু বলতে গেলে সদরের দারোগা অমরবাবু থামিয়ে দিয়েছেন। বিজয় থামতেই এবার গর্জে উঠলেন,
    -"তাতে কি প্রমাণিত হয় আমি শিবতোষকে দিয়ে চুরি করিয়েছি? তোমার যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা!"
    -"হয় কি না হয় সেটা আপনি আদালতে বলবেন। আপনার বাড়ির গুপ্তধন কোথায় আছে সে আপনি ছাড়া বাইরের লোক জানে কি করে? মন্দিরের চাবি যে আপনি না দিলে কেউ পেতেই পারেনা তা আমি প্রমাণ করে দেব। আপাতত শিবতোষবাবুর জবানবন্দির ভিত্তিতে আপনাকে পুলিশ ধরবে। পারলে উকিল দিয়ে নিজেকে ছাড়াবেন, তবে আমার কাছে চুরি ছাড়াও বাঁটুর খুনের জন্যও আপনি সমান অপরাধী।"

    মহেন্দ্র চৌধুরী সরোষে কি একটা বলতে গিয়ে আশেপাশের লোকজনের ভাব দেখে চুপ করে গেলেন। সবাই হতবাক হয়ে এ ওর দিকে তাকাচ্ছিল। বিজয় অমর নীলমনির দিকে তাকাতে, তারা এগিয়ে গেল শিবতোষের দিকে। ঘরের আর সব লোক প্রস্তরবৎ দাঁড়িয়ে ছিল, শুধু ভারতী দেবী তীব্র দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন ভাইয়ের দিকে।
    বিজয় দরজায় দাঁড়ানো হরিকে ইশারায় ডেকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। ওদের জিনিসপত্র সব বেঁধেই রেখেছিল হরি। নীলমনি কে বলে সদরে যাবার জন্য একটা আলাদা গাড়ীর ব্যবস্থা করে রেখেছিল বিজয়। দেরী না করে দুজনে গিয়ে গাড়ীতে উঠল, দুপুরের বাসটা ধরতে হবে। এখানের যা করণীয় এবার পুলিশই করবে। গাড়ী যখন চলতে শুরু করেছে দেখল পুলিশের দলটা মহেন্দ্রবাবুকে নিয়ে বাইরে আসছে। বিজয় জঙ্গলকে পিছনে রেখে হিরনের ধার দিয়ে যেতে যেতে অনুভব করল, এই নদীর দুধারের শান্ত প্রকৃতি কত সুন্দর, তা এই প্রথম সে ভাল করে দেখছে। তার সঙ্গীর ও বোধহয় একই অনুভূতি হয়, হরি বলে,
    -"জায়গাটা বেশ সুন্দর না বাবু? ভাল করে তেমন দেখাই হলনি, কেস নিয়েই দিন কেটে গেল।"
    বিজয় উত্তর দেয়না, হাসে। ভালয় ভালয় কেস তো মিটে গেছে, তবে সামনে এখন সবচেয়ে বড় কাজ, বড়বাবুকে সব বুঝিয়ে শান্ত করা। মনে মনে তারই মহড়া দিতে থাকে,কখন গাড়ী চাঁদপুর ছাড়িয়ে সদরের পথে চলে সে খেয়ালও করেনা।

    (শেষ)
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:১৭408372
  • ****মহেন্দ্রর দিকে
  • d | 117.195.45.50 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:২৫408373
  • বা: বেশ।
  • Du | 67.111.229.98 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:৪০408374
  • দারুন বোনা, আর দারুন গোটানো।
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০৯:৩৬408375
  • Du, শুরু তোমার জন্য করেছিলাম, সময়ে শেষ করতে পারিনি, সরি!
  • Blank | 203.99.212.224 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১০:৫৮408376
  • দারুন জমেছিল কিন্তু এবারে নতুন আর এক খানা শুরু করে দাও :)
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:০৭408377
  • এ কি কারখানা নাকি?
  • kanti | 125.20.11.34 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৩৮408378
  • গল্পটা পড়লাম।তবে আশা ভংগ হোল। ছকটা খুব মজবুত নয়।মাঝপথেই প্রায় সব রহস্যের কুয়াশা কেটে যায়।গল্পের চলনটাও ব্‌ড় ঢিলেঢালা । এটা অবশ্য একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। আশা হয়তো একটু বেশী ছিল, তাও হতে পারে।তবু বলব, আরো লিখুন, তবে আরো একটু গুছিয়ে, আরো একটু নতুন ছকে। কান্তি
  • bhuto | 203.91.207.30 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:২৭408379
  • ফাস্টো কেলাস, রুদ্ধশ্বাসে পড়েছি। এবার একটু কাজ করি নইলে রেসেশনের বাজারে...

    ব্রাভো শ্রাবনীদি।
  • Du | 71.164.133.7 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০০:৪৯408380
  • শ্রাবণী তাতে কি, পড়তে তো পেলাম। থ্যাংকু। সিনেমার মত দেখা যায় তোমার লেখায়।
  • m | 12.217.30.133 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:০৭408381
  • শ্রাবণী পরের টা কবে শুরু হবে,অপেক্ষায় আছি:)
  • Soma | 203.77.211.146 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:০০408383
  • গল্প খুব সুন্দর, ঝরঝরে লেখা। কিন্তু আমার ঘটনাকাল নিয়ে প্রশ্নআছে। মানে ধুতি-শার্ট শুনলে পুরনো দিনের গল্পই মনে হয়, কিন্তু সেকালে কি 'হেল্‌থ সেন্টার' কথাটার চল ছিল? আর একালে কে কোথায় ধুতি-শার্ট পরে বা কোন জমিদার বাড়ী তে ইলেকট্রিসিটি থাকে না?
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:০২408384
  • আমি বুঝতে পারছিনা বাড় খাব না বিজয় সিরিজ একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে বন্ধ করে দেব!
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:০৬408385
  • সোমা,
    আপনি আগের দুটো গল্প পড়লে বুঝতে পারবেন গল্পকাল পুরনো আমলের। আসলে প্রথম গল্পটার কিছুটা আমার এক দাদুর অভিজ্ঞতা, বাবার কাছে শোনা। দাদু ব্রিটিশ আমলে পুলিশে ছিলেন!
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:০৯408386
  • গ্রামে গ্রামে হেলথ সেন্টার ব্রিটিশ আমল থেকেই ছিল।
  • Soma | 203.77.211.146 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৫:৪৯408387
  • আমি 'হেলথ সেন্টার' কথা ট মানে 'term' টা ব্যবহৃত হত কিন জিগ্গেস করেছিলাম, বোধহয় গ্রামের লোকেরা ওগুলোকে 'হাসপাতাল' ই বলতো।
    যাই হোক 'বিজয় সিরিজ' চালিয়ে যান, পরের লেখার অপেক্ষায় থাকব।
  • Arpan | 65.194.243.232 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৬:২৬408388
  • কিন্তু শিবতোষ বা বাঁটু বিগ্রহকে বাগানের ধারে ফেলে গেল কেন? কোন যুক্তিতে?

    ডি: আরেকবার ভালো করে পড়তে হবে। কিছু মিস করে যেতেও পারি।
  • shrabani | 124.30.233.104 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৬:২৭408389
  • সোমা, সেটা বোধহয় আমি লিখেছি যে হেলথ সেন্টারকে গৌরবে লোকে হাসপাতাল বলে। তবে পোশাকী নাম হেলথ সেন্টার বা হেলথ অফিস ই ছিল। মুকুন্দপুর আসলে আমার পুর্বপুরুষের গ্রামের নিকটবর্তী একটি জায়গা (নাম বদলে)। তখনকার দিনে বড় অসুখে লোকে জেলায় হাসপাতালে যেত। সেখানে জবাব দিলে গরীবরা বাড়ি, ধনীরা কলকাতায় - রুটটা এরকম ছিল।
  • ranjan roy | 122.168.79.165 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:৪২408390
  • মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে। কিস্‌সু ভালো লাগছে না। ঘরে বক্‌বক্‌ শোনার জন্যে কেউ নেই। ৮৫বছরের মা কানে ভালো শুনতে পান না। গিন্নি গেছে সাতদিনের জন্যে সদলবলে শিরডি,-- কেন যে শখ করে নিজেকে নাস্তিক ডিক্লেয়ার করেছিলাম তা ভগাই জানে।
    হটাৎ মনে হল-- রহস্যকাহিনী লেখার হাত মক্সো করলে কেমন হয়? হিন্দি জাসুসী কহানীর স্বপনকুমারের দল, অর্থাৎ কর্নেল রঞ্জিত, ওমপ্রকাশ শর্মা ,সুরেন্দ্রমোহন পাঠক --সবাইকে ঈশ্বর কাছে টেনে নিয়েছেন।
    ফলে মার্কেটের খালি জায়গায় ঢুকে পরতে পারলে হেব্বি পয়সা! একের পর এক পেপারব্যাক রেলস্টেশন গুলোতে হৈ-হৈ করে বিক্কিরি হবে। জালফেলে ঠিক মত গুটিয়ে নিতে পারলে--- বাড়ি-গাড়ি-নারী! ( আই বাপ! এযে শালা জ্যাকপট্‌)।
    তালে দুগ্গা বলে আম্মো গুরুর পাতায় হাত মক্সো শুরু করি।
    কিন্তু শ্রাবণী-টিম এর প্রশ্নাতীত সাফল্যের পরে? আমার সাধ্যে কুলোবে?
    যাকগে, যদি আপনাদের মনে হয় কিস্‌সু হচ্ছে না, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বলবেন---- রঞ্জনদা, এবার ক্ষ্যামা দিন, হচ্ছে-টচ্ছে না!
    আমি মাইরি কিস্যু মনে করবো না। দাঁত বের করে গুরুর দামী পাতা নষ্ট করার জন্যে ক্ষমা চেয়ে বাঁশদ্রোনী বাজারে পালং শাকের আঁটি বাঁধবো বা খাগড়ার দু:খুলাল নিবারণচন্দ্র কলেজের লাইব্রেরিতে দফতরি কাজের জন্যে ইন্টারভিউ দেবো।
    লজ্জা-লজ্জা ভাবটা কাটাতে অনেক ভ্যান্তারা করলাম। এবার শুরু করছি ভয়ানক, গায়ে কাঁটা দেয়া রহস্যগল্প---- কোচ নং ৬।
    ( নামটা ঘ্যামা! আমার গুরু বিশ্বচক্র সিরিজের লেখক স্বপনকুমার এর স্টাইলে।)
  • ranjan roy | 122.168.79.165 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:২৯408391
  • কোচ নম্বর ৬
    -----------
    ঘড়ির কাঁটা বোধহয় সাড়ে আটটার ঘর ছাড়িয়েছে। ভাবতে ভাবতে রঞ্জন হিরো হোন্ডার অ্যাকসিলেটর সামান্য কমিয়ে বাঁহাতের কব্জি মুড়ে ঘড়ি দেখার চেষ্টা করলো।
    হ্যাঁ, আটটা বেয়াল্লিশ, আর দুটো মোড় পেরোলেই---।
    পিলেচমকানো প্রেসার হর্ন বাজিয়ে গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেলো দুটো বাইক আর বিচ্ছিরি ব্রেক কষে পাশে থামলো এক মারুতি সুইফ্‌ট।
    ---- ক্যা আংকল, তব সে সাইড মাংগ রহা হুঁ, কান পে জু নহী রেঙ্গা? বাদ মে শিকায়ত করোগে কি পিছেসে ঠোক দিয়া!
    রঞ্জন কিছু বলার আগেই পেছনে বসা চৌহান বলে উঠলো--- সরি বেটে! গলতী হো গয়ী। অব জানে দো। চলিয়ে রায় সাব্‌, অব গাড়ি আগে বঢ়াইয়ে।
    এবার ও নীচু গলায় রঞ্জনকে বোঝাতে লাগলো।
    ---- কিঁউ ফালতু পঙ্গা লেনা? অব হম কালেজ কী স্টুডেন্ট থোড়ে হী হ্যায়?
    অরে বাবা, ভাইজাগ- কোরবা লিংক এক্স্‌প্রেস এতক্ষণে একনম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে গেছে, এখানে ছেলে- ছোকরার সঙ্গে মুহ্‌ লাগলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে। আমার কাছে ব্যাংকের ক্যাশের চাবি। দেরি হলে কেউ না কেউ ঠিক কমপ্লেন করে দেবে।
    গাড়ি সাঁইমন্দিরের গায়েলাগা সাইকেল স্ট্যান্ডে রেখে ওরা লাগেজরুমের পাশ দিয়ে স্টেশনে ঢুকে দেখলো-- গাড়ি আসবে দু'নম্বরে। ওভারব্রিজ পেরুনোর সময় মহা ঝামেলা। তিননম্বরে থামা লোক্যাল ট্রেন থেকে পিলপিল করে নামছে অসংখ্য যাত্রী। আর তারা ওভারব্রিজের ওপর ঠ্যালাঠেলি করতে করতে বানিয়ে ফেলেছে অন্তত: চার-চারটে লাইন। ছেলে-মেয়ে-বুড়ো- বুড়ি--আন্ডাবাচ্চা, কুলির মাথায় লাগেজ। রেলিংয়ের গায়ে পানের পিকের দাগ। তার স্পর্শ বাঁচাতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হল একটি বেঢপ টিনের তোরঙ্গের সঙ্গে।
    কনুইয়ের কাছটা ছিঁড়ে গেছে। কিন্তু বাক্সো বইতে থাকা কুলি না হোক , ওর মালিকতো সরি বলতে পারতো, কিন্তু বলেনি। আজকাল লোকজনের সামান্য সৌজন্যবোধও ভোঁতা হয়ে গেছে।
    রঞ্জন ভাবলো মালিককে আচ্ছা করে দু'কথা শোনাবে। কিন্তু মালিক কোন লোকটা? সামনের জিনসের প্যান্ট আর স্প্যাঘেট্টি স্ট্র্যাপ দেয়া টপ পরা ঐ অহংকারী কিশোরি? নাকি তোরঙ্গের পেছন হেঁটে চলা কালো সাভারকরমার্কা টুপি পরা আধবুড়ো মারাঠি? অথবা বৌ-বাচ্চা শুদ্ধু একগাদা মাল নিয়ে ব্যতিবস্ত ছত্তিশগড়ি নওজোয়ান? ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। না:, কুলিকেই জিজ্ঞেস করতে হবে।
    --- এ কুলি, তেরা মালিক কিধর? আবে কৌন হ্যায় তেরা শেঠ?
    কিন্তু কুলি কোথায়? তোরঙ্গ শুদ্ধু সক্কাল পৌনে নটায় আগস্ট মাসের এই চড়া ঝলমলে রোদ্দূরে লোকটা কি করে স্রেফ হাওয়া হয়ে গেল? কোনদিকে গেল?
    এ যেন "কোথায় বা কি, ভূতের ফাঁকি, মিলিয়ে গেল চট করে।''( চলবে)
  • Riju | 121.241.164.22 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১৪:৩৩408392
  • শ্রাবনীদি ফাটাফাটি হয়েছে।
    রঞ্জন দা কি কুলিকে খুঁজতে গিয়ে নিয়েই হারিয়ে গেল?
  • ranjan roy | 122.168.68.191 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ০১:৩৩408394
  • তাড়াহুড়োতে ছয় নম্বর কোচ ছাড়িয়ে প্রায় চার নম্বরের সামনে এসে গেছে ওরা। এমন সময় পেছন থেকে ডাক-- এইযে রায়দা, হন্‌হনিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন যে বড়! বলি আজ কি ইঞ্জিনড্রাইভারের পাশে বসে যাওয়ার প্ল্যান নাকি?
    ব্যাক্‌ গীয়ার মারুন, আপনার জন্যে জায়গা ঠিক করা আছে।
    অশোক সোনীর হাসি হাসি হাঁড়িমুখ ফোকাসে এল।
    রঞ্জন ফিরল ছয় নম্বর কোচের দিকে।
    আসলে এক্স্‌প্রেস ট্রেনের অন্য কোচ গুলোতে মান্থলি পাস ওলা ডেইলি প্যাসেঞ্জারের ওঠার পারমিশন নেই। না মানলে কড়া ফাইন। কিন্তু দৈনিক রেল যাত্রী সংঘের চেঁচামেচিতে রফা হয়েছে যে শুধু ৬নং কোচে ওরা কোরবা অব্দি ট্র্যভেল করতে পারবে, অন্য কোচে চড়লে আগের মতই পেনাল্টি লাগবে।
    উঠতেই আগে থেকে বসা ক'জন হৈ-হৈ করে উঠলো-- এদিকে এদিকে ! আপনার জন্যে আজকে স্পেশাল বন্দোবস্ত।
    --- মানে?
    -- মানে আজ দাদা-দিদি পাশাপাশি।
    অশোক ফিস্‌ফিস্‌ করে-- চাইনিজ খাওয়াতে হবে কিন্তু! আমিই আপনার জায়গা দিদির পাশে ফিট করলাম।
    সুরেন চন্দ্রা ব্যাখ্যা করে--- আসলে আজকে দিদি সাউথ বিহার এক্সপ্রেস মিস্‌ করেছে। অগত্যা আমাদের লিংক একস্‌প্রেস ভরসা। আমাদের রিকোয়েস্ট করলো বসার জন্যে একটু জায়গা ম্যানেজ করতে। আমরা একেবারে আপনার পাশে ফিট করেছি। আপনার কি? দিদির পাশে বসে বিদেশি সেন্টের গন্ধ নিন, বাংলায় যতখুশি বকবক বা বকবকম যা ইচ্ছে করুন, আমরা কানে তুলো দিয়ে থাকবো।
    -- এই বয়সে এছাড়া আর কি করতে পারে দাদা? খালি "" আভি তো ম্যয় জোয়ান হুঁ'' গাইলেই কি বয়েস লুকোনো যায়?
    মণীন্দ্র ফুট কাটে।
    চৌহান সায় দেয়-- তবে
    কখন যে একঘন্টা কেটে গিয়ে চাঁপা স্টেশন এসে গেছে টের পাবেন না। কফি আর সামোসা আমরাই সাপ্লাই দেবো। কিন্তু ছোটভাইদের ভুলে যাবেন না যেন!
    অস্বস্তি এড়াতে ও ভদ্রমহিলাটির পাশে খালি জায়গায় বসে পড়ে।
    মহিলাটি হেসে বাংলায় বল্লেন-- অনেকদিন পরে, তাই না?ভালো আছেন তো? আর বৌদি? মেয়েরা?
    রঞ্জন সদর্থক মাথা নাড়ে। স্টেটব্যাংকের অফিসার মাঝবয়েসী এই বাঙালী মহিলার জন্যে রঞ্জনের সামান্য দুর্বলতা আছে। এটা নিত্যযাত্রীদের ছোট্ট গ্রুপে অনেকেই জানে। ভদ্রমহিলা বিয়ে-থা করেন নি। ঝাড়া হাত পা'। একসময় অনেক গুণমুগ্‌ধ ঘিরে থাকতো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের সংখ্যাও হাতে গোণায় দাঁড়িয়েছে। কাছাকাছি বয়সের এই গপ্পবাজ দাদাটির মুগ্‌ধতা মহিলার ভালই লাগে। একটু যেন প্রশ্রয়ের ছোঁয়া।
    --- কি হল? আজ চুপচাপ যে! মনমেজাজ ভালো নেই? নাকি বৌদি বাপের বাড়ি গেছে? চৌহান কিছু জান নাকি?
    --- মত বোলিয়ে দিদি। আজতো দাদা অ্যাক্সিডেন্ট করনেওয়ালে থে। থোড়ি সি চুক হোনেপর আর-পার মামলা থা।
    --- সেকি? ব্যাপারটাকি? অন্যমনস্ক ছিলেন? খুলে বলুন তো?
    --- আর বলবেন না। আমার ছোটোমেয়ে এসেছে দিল্লি থেকে, দিনদশেকের ছুটি নিয়ে। আর জানেন তো, ওর সঙ্গে আমার প্রায় বন্ধুর মত রিলেশন। আমরা নতুন কোন বই পড়লে এক্সচেন্‌জ করি, অফিসের গসিপ জোকস্‌ - সব একজন আরেকজনকে শোনাই। ওর বয়ফ্রেন্ডের সব কথা, সমস্যা ও মাকে ছেড়ে আমার সঙ্গেই শেয়র করে। এনিয়ে ওর মার একটু হিংসে মত আছে।
    -- তা এর মধ্যে সমস্যা কিসের! ও এসেছে এতো সুখের কথা।
    -- তাতো বটেই! কিন্তু সমস্যাটা হল ও আসা ইস্তক ওর মার ঘরে চাদর মুর্শালা! আমি ২০-২০ দেখে ১১-৩০ থেকে রাত দেড়টা পর্য্যন্ত লিখে একটা ক্লাইম্যাক্সে এনে আজকের মত শেষ করলাম। সেন্ট করার পর উড়ে গেল। মুড অফ। কল রাত্তিরে আবার চেষ্টা করবো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন