এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • Igloos, Yurts, and Totem Poles

    Tim
    বইপত্তর | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ | ৯৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১০:৫৪407873
  • "" ছোট্টো বন্ধুরা,
    ভূগোলের ক্লাসে তোমরা নিশ্চই মানচিত্র দেখেছো। একের পর একে গায়ে গায়ে আঁকা দেশ, সরু সুতোর মত সেসব দেশ চিরে যাওয়া নদী বা ঘন সবুজে ঢাকা জঙ্গল দেখেছো নির্ঘাৎ। এসবই মানচিত্রে দেখা যায়। বলতে কি, এখন তো শহর-গ্রামের অন্ধিসন্ধি বা বিশাল সব হাইওয়ের ছবিও ম্যাপে দেখা যায়। কিন্তু একটা কথা খেয়াল করে দেখো, ম্যাপে তন্নতন্ন করে খুঁজলেও তোমরা দেখতে পাবেনা সেখানে যারা থাকে তাদের।..............
    ............ ওরা কেউ এখনও তাঁবুতে থাকে, কেউবা বানায় ইগলু। প্রস্তর যুগে যেভাবে মানুষ বেঁচে থাকতো, ওদের জীবন এখনও সেখানেই থেমে আছে। মৃত্যুও।
    ......।""
    এভাবেই বইটির ভূমিকা শুরু করেছেন সম্পাদক ফ্রেডরিক বোর, যেখানে তেরোজন ছেলেমেয়ে নিজেদের কথা বলেছে। বিশ্বের দুর্গমতম প্রান্তের তেরোজন বালক-বালিকা। সামোয়ার মেয়ে আনিভা বা একরত্তি এসকিমো ছেলেটির মত আরো অনেকে তাদের গল্পের ঝাঁপি উপুড় করে দিয়েছে। ওদের রোজকার জীবনের কথা, যা কোনো রোমাঞ্চকর শিকারের গল্পে লেখা হবে না। অতি সাধারণ আটপৌরে কথাবার্তা, ইশকুল থেকে ফিরে আমাদের চেনাশোনা শিশুরা যেভাবে মায়ের কাছে গল্প করে, অবিকল সেই ভঙ্গীতে লেখা। যদিও এ বইয়ের লেখক বলে কেউ নেই। আছে কথক। এবার আমরা একে একে সেই তেরোজনের গল্প শুনবো। হয়ত ভবিষ্যতে কেউ ম্যাপ দেখতে দেখতে মনে করবে ওদের কথা। সেই ""ওরা"", যাদের কথার উল্লেখমাত্রেই আমরা সন্তর্পণে মনে মনে আওড়াই, ভেবে স্বস্তি পাওয়ার ভান করি -""ওরাও আমাদের মত মানুষ।"" নিজেদের সভ্য ভাবার এই অসুস্থ ও অসৎ প্রয়াস ( বা অভ্যেস) যদিও প্রতি পদক্ষেপেই ব্যর্থ হয়।
    তাই, স্রেফ অন্য প্রজন্মের জন্যই নাহয় তোলা থাক এই রত্নখনি। আজকের ছোটোরা কেউ যদি কোনো লাল দরজা পেরিয়ে ওদের দেখতে পেয়ে যায়, এই দুরাশায় ভর করেই লেখা থাক তেরোটা সত্যি গল্প।

    সম্পাদকের নাম আগেই বলেছি। মূল বইটির ভাষা জার্মান, প্রকাশ ১৯৫৫ সালে। এর কিছুদিন পরে ইরেজী অনুবাদ বেরোয় নিউ ইয়র্কের Pantheon থেকে।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:২৩407884
  • দারুন শুরু করেছিস টিম
  • Arijit | 61.95.144.123 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৩৯407895
  • কেনার ইচ্ছে করছে।
  • d | 203.143.184.11 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:১৩407897
  • বা: বেশ।
  • Arijit | 61.95.144.123 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৫১407898
  • সরি টিম - এই টেস্টটা করতেই হচ্ছে।
  • dri | 75.3.201.181 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১২:৫৯407899
  • টিম! থামলে ক্যানো? লেখো, লেখো।
  • I | 59.93.198.7 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২২:০২407900
  • কোথায় পাবো তারে?
  • Tim | 198.82.16.245 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ২৩:৫৯407901
  • পাবলিশারের সাইটে গিয়ে সার্চ মেরে দেখলাম। নেই।
    আমারটা পুরোনো বইয়ের দোকানে কেনা। মাত্তর এক ডলার দাম নিয়েছিলো। অনলাইন খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে।
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ১১:৪৪407902
  • একটা কথা শুরুতেই জানিয়ে রাখা ভালো। তেরোজনের জবানীর খুব সামান্য অংশই এখানে তুলে দিচ্ছি। সুতরাং এই লেখা বইটার বিকল্প কখনই নয়। টুকরো-টাকরা যা অনুবাদ করা হবে, সেও মূল কাহিনীর নগণ্য অংশ। এর বাইরে পড়ে থাকবে আরো অনেকটাই।
    যাক, এবার গল্প শুরু হোক। প্রথমেই আসছে অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমির বাসিন্দা এক খুদে ছেলের কথা। পরনে তার সুতোর একফালি অ্যাপ্রনের মত, সারা গায়ে রঙের কারুকাজ, তার ওপরে আবার পালক সাঁটা। অবশ্য সবদিন এরকম রঙ আর পালকে সেজে থাকেনা ওরা। শুধু উৎসবের রাতে, সেদিন নাচের আসর বসে ওদের গ্রামে, ওরা সেজে ওঠে।
    "".... তখন বিকেলের আলো নিভে আসছিলো, দূরে দিকচক্রবালে আবছা হয়ে আসছিলো সামনের লোকগুলোর চেহারা। এমন সময় হঠাৎই ওদের একজন চিৎকার করে উঠলো - জল! জল! আমরা ক্লান্ত, ভারি পা-গুলোকে কোনোমতে টেনে টেনে এগিয়ে গেলাম। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম নোংরা, ঘোলা জলের কুন্ডটার ধারে। এভাবেই প্রতিবার আমরা মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে আসতাম- বেঁচে যেতাম আরো একবার। ...""

    "" কে যেন একবার বলেছিলো, আমাদের দেশের চারদিকেই নাকি জল। বিশ্বাস হয়নি আমার। সবদিকেই বহুদূর অবধি আমি দেখেছি- ছিঁটেফোঁটা জলও নেই কোত্থাও।
    এবছর যেন শুখাটা একটু বেশিদিন ধরে চলছে। তারার হিসেবে এতদিনে বৃষ্টি নেমে যাওয়ার কথা। আমাদের গুণিন অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। আগে কখনও গুণিনকে ব্যর্থ হতে দেখিনি। ...""

    আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজ। নিরাপত্তা । মাইক্রোস্কোপের তলায় ফেললে আমাদের সমস্যারা কিলবিল করে ওঠে কীটের মতন। সমাজ- সংস্কৃতি, দুর্নীতি, অতীত - ভবিষ্যৎ, তেলের দাম বা অবদমিত কাম, সমস্যার শেষ নেই আমাদের। অথচ ওদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। জীবনটাই ওদের মূল সমস্যা। অখন্ড ও কর্কশ । এর মধ্যে কোনো রোমান্টিকতা, কোনো কবিতা নেই। এর শুধু দুটো পিঠ। একটা একটা করে দিন বেঁচে চলা। অথবা না বাঁচা।

    ".... আমরা যে তোমাদের মত বাড়ি বানাই না সেটা তোমরা লক্ষ করেছো নিশ্চই। আমাদের কোনো নির্দিষ্ট বাড়ি লাগেনা - কয়েক দিন পর পরই আমরা সমস্ত জিনিস নিয়ে স্তেপের অন্য নোনো প্রান্তে গিয়ে ঘাঁটি বানাই। অস্থায়ী বন্দোবস্ত সেটাও। জল ফুরিয়ে এলেই আবার অন্য কোথাও যেতে হয়। ""
    এইভাবে বৃত্তাকারে চলে ওদের জীবন। কখনও একটা ক্যাঙ্গারু শিকার করে আনলে আনন্দে মেতে ওঠা, জলের খোঁজ পেলে খানিক জিরিয়ে নেওয়া। লাল-সাদা রং মেখে আগুন ঘিরে নাচ চলে , বাজতে থাকে বুমেরাঙের বাদ্যি।
    নয়ত ধুঁকতে ধুঁকতে দিন গুজরান, জলের অপেক্ষায়।
  • d | 117.195.41.171 | ০৫ মার্চ ২০০৯ ২৩:৪১407874
  • ওরে .......................
  • b | 203.199.255.110 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ০৯:৩২407875
  • "বুমেরাঙের বাদ্যি'-টা কি জিনিস? একটু ব্যাখ্যা করুন।
  • Tim | 71.62.2.93 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ২৩:১০407876
  • b
    অনেকটা তরোয়ালের বাদ্যির মত। অবিশ্যি ভুলও হতি পারে। :)
    দমদি,
    ঘুরে এসে লিকচি।
  • dd | 122.167.5.217 | ০৬ মার্চ ২০০৯ ২৩:১৮407877
  • টিম, ভাইডি
    আমাজন রেইন ফরেস্টের কোনো বাচ্চা আইছিলো নি? এট্টু তাড়াতাড়ি লিখবা ? হ্যাঁ ?
  • Tim | 71.62.2.93 | ১০ মার্চ ২০০৯ ১১:০৪407878
  • সামোয়ার সবসেরা নৌকার কারিগরের মেয়ে আনিভার গল্প বলি। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে সামোয়ার দ্বীপপুঞ্জ। সেখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ উপোলুর বাসিন্দা আনিভা। নারকেল গাছে ঘেরা উপোলুর গর্ব নৌকাশিল্পী তুফুঙ্গা। সেখানে তার কদর প্রায় সরপঞ্চের সমান। আরো অনেক দ্বীপের মত উপোলুতেও নৌকো বানানো অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পের মধ্যে পড়ে।
    পাহাড় আর সমুদ্রঘেরা দ্বীপ। খুশিয়াল মানুষজন। আনিভা বলে, ওদের পূর্বপুরুষেরা সব দুর্ধর্ষ নাবিক ছিলো। পশ্চিমের দেশ থেকে সাগর ডিঙ্গিয়ে হাজার বছর আগে এসে ঘাঁটি গেড়েছে এখানে। পলিনেশিয়ান ডায়লেক্টে কথা বলা এই দ্বীপবাসীরা মূলত: মৎস্যজীবী। ছেলেদের খুব অল্পবয়সেই সমুদ্র অভিযানে হাতেখড়ি হয়ে যায়। তারও আগে, শৈশবেই ওরা চিনতে শেখে সমুদ্রকে। মাছের রকমফের, জলের হালহকিকৎ, সব ওদের শ্বাসপ্রশ্বাসে বইতে থাকে। আনিভার দু:খ, সে ওর বাবার তৈরী অপূর্ব ক্যানোটা করে মাছ ধরতে যেতে পারে না। মেয়ে বলে।
    সামোয়ার মেয়েরা রোজ ফুলের সাজ পরে। উঙ্কÄল আর সুগন্ধি সব ফুল ফোটে ওখানে। মরিচগাছের শিকড় থেতো করে সেই নির্যাস থেকে তৈরী হয় কাভা, সামোয়ার সেরা পানীয়। নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে অর্ধবৃত্তাকারে বসে নাচিয়েরা, সামনে থাকে দলের রানী তাওপো।
    বয়:সন্ধির কোনো এক নির্দিষ্ট ধাপে সামোয়ার ছেলেমেয়েদের সারা শরীরে উল্কি এঁকে দেওয়া হয়। অভিজ্ঞ, বয়সে প্রবীণ কোনো উল্কিশিল্পী আসে দূর থেকে। তারপর ধাতব চিরুনীর মত একটা যন্ত্র দিয়ে চামড়া ফুটো করে আল্পনা দেওয়া চলে। আনিভার যেদিন উল্কি আঁকা দিন, সেদিন গ্রামপ্রধানের ছেলেরও উল্কি হয়েছিলো। ব্যাপারটা খুব যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু সেটা হাসিমুখে মেনে নিলে বেশ বাহবা পাওয়া যায়। তাই কেউ টুঁ শব্দটি করেনা। বাদামী শরীরে কালো কারুকাজ কেটে বসছে, রক্তে মিশছে বিষাক্ত রং, কিন্তু....
    "" ছেলেটার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো যন্ত্রণায়। কিন্তু একটা শব্দও ওর ঠোঁট ভেদ করে এলো না। যারা দেখাশোনা করছিলো তারা প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো। ....
    তারপর আমার পালা এলো। আমাকে খুব কাঁদতে দেখে বান্ধবীরা তখন উল্কি আঁকার গান গাইছিলো। ...""
    উল্কি আঁকার পারিশ্রমিক বেশ ভালোই। দক্ষিণা দেওয়ার সময় জাঁকিয়ে উৎসব হয়। নাচগান চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তারপর একসময় সবাই ঘরে ফেরে। জেগে থাকে শুধু ঝিঁঝির ডাক আর পথ ভুলে আসা ঢেউ ভাঙ্গার শব্দ।
  • Tim | 71.62.2.93 | ১০ মার্চ ২০০৯ ১১:৪৩407879
  • ডীডীদা,
    আরো যারা আছে :
    কাজাখ্‌স্তান: আবদুল্লা
    আফ্রিকান বুশম্যান: ফাফোদি
    জিভারো (ইন্ডিয়ান) উপজাতি: কুনাবি
    সাইবেরিয়া: মাশা
    সুদান: কাল
    ফ্যুজিয়া: কোষ্‌তেলেন
    নিউগিনি: কোকেল্‌
    কঙ্গো: মাঙ্গু
    হাইদা ইন্ডিয়ান্স : নান গিদাস
    সাহারা : এলাত্তু
    কানাডা (এসকিমো) : কুকিকুলুক
  • Tim | 71.62.2.93 | ১১ মার্চ ২০০৯ ০৯:২৫407880
  • আবদুল্লার গল্প :
    কাস্পিয়ান সাগর আর অল্টাই পর্বতমালার মাঝে আবদুল্লার দেশ কাজাখ্‌স্তান। কিরঘিজরা যাযাবর জাতি। শীতকাল ছাড়া বাকি সময় ঘুরে বেড়ায় ওরা। অবশ্য এখন অনেক কিরঘিজ পরিবারই থিতু হয়েছে সুবিধেমত জায়গা দেখে, তবু সেটা ব্যতিক্রমই।

    "" বছরের বেশিরভাগ সময়টাই আমরা তাঁবুতে থাকি। একটা গোলমত তাঁবু উটের পিঠে চাপিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁবুগুলোর দরজা সব সময় মক্কার দিকে ফেরানো থাকে।
    ......
    আমাদের সচরাচর আসবাব বলতে কিছু থাকেনা। কয়েকটা খাটো টেবিল, কিছু বাক্স-প্যাঁটরা আর সিন্দুক নিয়ে আমাদের কারবার। মোদ্দা কথা, উটের পিঠে তোলা যাবেনা এমন কিছুই আমাদের নেই।""
    ............................
    "" আমাদের সেরা পানীয় কামিস্‌। ঘোড়ার দুধ থেকে তৈরী হয় এটা। তাঁবুর মধ্যে চামড়ার থলেতে দুধ গেঁজিয়ে তৈরী হয় কামিস্‌। অবশ্য আমরা চা-ও বানাই প্রায় রোজ। আমার মা ছাগলের চর্বিতে আনুষঙ্গিক খাবার ভেজে দেয়। ""
    ................................
    গড়পড়তা কিরঘিজের জীবনের অর্ধেক কেটে যায় জিনে বসেই। ঘোড়া বা উটের পিঠে চেপেই তাদের জীবন ও জীবিকা। আবদুল্লার খুব সখ, সেও ওর বাবার মত কাঁধে বাজপাখি নিয়ে শিকারে যাবে। যদিও ওদের মূল জীবিকা পশুপালন, তবু, বাজ আর ঈগল নিয়ে শিকারে যাওয়ার স্বপ্ন সব ছেলেরাই দেখে।
    ""ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া আর উট, এরাই আমাদের কাছে সবথেকে দামী। বিশেষ করে ভেড়া। ওদের কোনোকিছুই ফ্যালনা না। ""

    একেক জায়গায় দু'হপ্তার বেশি থাকেনা আবদুল্লারা।

    "" তারপর সবাই তাঁবুগুলো উটের পিঠে চড়িয়ে পোষা জন্তুদের নিয়ে রওনা হয়ে যাই। লটবহর নিয়ে এগিয়ে চলি সামনের দিকে, পেছনে পড়ে থাকে ঢেউখেলানো বিস্তীর্ণ প্রান্তর, যেখানে গত কয়েকদিন ধরে আমাদের বাড়ি ছিলো। ""
  • SS | 67.175.214.99 | ১৪ মার্চ ২০০৯ ০৮:২৩407881
  • অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বইটা যোগাড় করলাম। পুরোনো, হলুদ হয়ে যাওয়া পাতাগুলোর দিকে তকিয়েই কেমন যেন ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সে সময়টায় যেকোনো গল্পের বই পেলেই গোগ্রাসে গিলতাম (পড়তাম), আর এখন একগুচ্ছ বই লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছে কখন আমার হাতে একটু সময় হবে তার জন্য।

    অবশ্য টিম এর লেখার গুণে আর থাকতে না পেরে বইটা পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছি। এক একটা গল্প শেষ করছি আর এই থ্রেডে এসে তার বাংলা গল্পটাও পড়ছি বারবার। পড়ার পরে মনে হচ্ছে Florence McHugh (ইংরেজী অনুবাদক) এর ইংরেজী র চেয়ে টিম এর বাংলা য় যেন গল্পগুলো অনেক বেশী প্রাণবন্ত .... হয়ত আমি বাঙালী বলে বাংলার উপর টানটা একটু বেশী।
  • SS | 67.175.214.99 | ১৫ মার্চ ২০০৯ ০৬:২১407882
  • সাইবেরিয়ার অস্টিয়াক উপজাতির ছোট্টো মেয়ে মাশা র গল্প :

    উত্তর পূর্ব সাইবেরিয়ার কাজিম নদীর ধারে বসবাস আমাদের এবং এই নদীর নামেই আমাদের গ্রামের নাম। এখানকার সবচেয়ে সুন্দর ঋতু হল বসন্ত যদিও তা খুবই ক্ষণস্থায়ী। এইটুকু সময়ের মধ্যেই গাছেদের ফুল ফোটানো এবং ফল ফলানোর পালা সেরে ফেলতে হয়।
    এইসময় বেশীরভাগ গাছেরা এক উগ্র গন্ধ ছড়ায় যা আমদের পোষা বল্গাহরিণ গুলোকে কেমন অস্থির করে তোলে আর তারা শীতল আবহাওয়ার খোঁজে উত্তর দিকে চলে যেতে চায়। অগত্যা আমাদেরও তল্পিতল্পা গুটিয়ে তাদের পিছনে যেতে হয় কারণ এদের ছাড়া আমাদের জীবন একেবারেই অচল।

    ---------------

    বল্গাহরিণেরা যখন দিনের শেষে ভরাপেটে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয় তখন আমরা তাঁবু খাটাতে আরম্ভ করি। গত বছরের পুরোনো খুঁটির উপরেই বার্চ গাছের ছাল বিছিয়ে তৈরী হয় নতুন তাঁবু। তাঁবুর চারিপাশে ছোটো একটা নালাও খোঁড়া হয় যাতে তাঁবুর ভিতরে জল জমে না যায়। শেষে বার্চ গাছের ছালের উপর কিছু ভারী খুঁটি চাপিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা যথাস্থানে থাকে। ব্যস, তাঁবুর কাজ শেষ এবং রাতের খাবারের প্রস্তুতি শুরু। প্রথম যেদিন আমরা উত্তরে যাত্রা আরম্ভ করি সেদিন এক মস্ত ভোজ হয়। আমার বাবা প্রত্যেকের জন্য একটুকরো করে সত্যিকারের রাশিয়ান পাঁউরুটি নিয়ে আসেন, আর নিজের জন্য, তার সঙ্গে থাকে ভদকা।

    ----------------

    আগস্টে, রাতের শীতল হাওয়া বল্গাহরিণদের সাবধান করে দেয় যে আর উত্তরে এগোনো ঠিক নয়, তুষার ঝড় শুরু হবার আগে মাথা গোঁজার বন্দোবস্ত করা উচিত। অতএব শুরু হয় ফেরার পালা।

    প্রবল শীতে মাছ ই আমাদের প্রধান খাদ্য। মাছ কাটার কত নিয়মকানুন আছে জানো কি? ছুরি দিয়ে মাছের কাঁটার উপর থেকে যখন শুধু মাংস টুকু বার করা হয় তখন যেন একবারের জন্যও ছুরির ফলা কাঁটা না ছোঁয়। কারণ নদীর আত্মা, যিনি আমাদের জালে এইসব মাছেদের পাঠান, তিনি এতে অসন্তুষ্ট হয়ে মাছ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন।
    যদি কখনো দুর্ভগ্যবশত: এরকম ঘটনা ঘটেই যায় তাহলে আমাদের গুণিন বা 'শামান' কে ডাকতে হয় যিনি আত্মাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। শামান নাকি সবরকম আত্মাদের দেখতে পান, তবে সবসময় নয়, শুধু যখন উনি অনেকক্ষণ ধরে ঢোল বাজিয়ে নাচেন, তখনই। মাঝে মাঝে শামান এর আত্মাকে স্বর্গে গিয়ে সবচাইতে ক্ষমতাবান ভগবানের সঙ্গে কথা বলে আসতে হয়, কারণ তিনি নাকি শামান এর ডাকেও নিচে নেমে আসেন না, কাজেই কি আর কর যায়!

    আত্মারা শামান কে বলে দেন কিভাবে এই ভয়ংকর পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। কঠিন শাস্তি হিসাবে কখনো তাঁরা একটি ছোটো বল্গাহরিণ ও বলি চেয়ে পাঠান।
    স্কুলে আমাকে বলা হয়েছে এসব নাকি কুসংস্কার, রাশিয়ানদের দেখো, তারা তো দিব্যি বেঁচে আছে শামান দের ছাড়াই! কিন্তু এতদিন ধরে যে এঁরা আমাদের লোকেদের সাহায্য করে আসছে তা কি সবই মিথ্যা? আমার মনে হয় এঁদের না চটানো ই বুদ্ধিমানের কাজ।

    ----------------

    এই প্রবল শীতের মধ্যেও বাবাকে মাঝে মাঝে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শিকারে যেতে হয় অনেকদূরে, কারণ আমাদের রসদ ফুরিয়ে আসে শীতের শেষে। ভাবতে পারো হিমাংকের চল্লিশ ডিগ্রী নিচে বাইরে রাত কাটানোর কথা! অবশ্য যতটা ভাবছো ততটা কষ্ট হয়না। বাবা বরফ দিয়ে প্রথমে একটা ছোটোখাটো ঢিবি বানান, তারপর জুতো দিয়ে নিজের শোবার মতন একটা গর্ত তৈরী করে তার মধ্যে কিছুক্ষণ আগুন জ্বালিয়ে রাখেন। এতে হয় কি, গর্তের ভিতর দিকের দেওয়াল গলে গিয়ে জমাট বরফে পরিণত হয়। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে ভিতরে ঢুকে গর্তের মুখটা বন্ধ করে দিলেই হল, কিছুক্ষণের মধ্যে নিজের শরীরের তাপেই ভিতরের তাপমাত্রা এতো বেড়ে যায় যে গায়ে আর ফার-কোটটাও পরে থাকা যায়না।

  • Tim | 71.62.2.93 | ১৫ মার্চ ২০০৯ ০৬:৫৯407883
  • SS
    দারুণ হচ্ছে। চালিয়ে যান। অনুবাদকের নাম উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ। ভুলে গেছিলাম।
  • SS | 67.175.214.99 | ১৫ মার্চ ২০০৯ ০৭:৫৪407885
  • Tim, আপনার জন্য মাঝখানে ফাফোদি আর কুনাবি র গল্প দুটো বাদ রেখেছি। সময় পেলে লিখবেন কিন্তু। আমিও চেষ্টা করছি অন্যগুলো লেখার, এই সপ্তাহান্তে না হলেও পরে কখনো ........

    উৎসাহ দেবার জন্য ধন্যবাদ। আমার অবশ্য নিজের চেয়ে আপনার লেখা গল্পগুলো পড়তেই বেশী ভালো লাগছে।
  • Du | 74.7.148.7 | ১৭ মার্চ ২০০৯ ০২:৫৮407887
  • 'একটা একটা দিন করে বেঁচে চলা - অথবা না বাঁচা" - ক্লাসিক ! দুজনেই আরো লেখো/লিখুন।
  • SS | 67.175.214.99 | ২০ মার্চ ২০০৯ ০৯:০৩407888
  • সুদানের ন্যুয়ের উপজাতির ছেলে কাল (Kul) :

    ন্যুয়ের উপজাতির প্রতিটি ছেলে ও মেয়ের নিজস্ব গরু কিংবা বলদ থাকে।
    আমাদের খামারে যত পশু আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দেখতে আমার বলদ 'কাল'। সাদা ছোপওয়ালা বাদামী রংএর বলদ দের বলা হয় কাল। আমার বন্ধুরাও আমাকে এই নামেই ডাকে যদিও ছোটোবেলায় আমার একটা আলাদা নাম ছিল, সবাই সেটা ভুলে গেছে।

    -------------

    আমি ভাবতেই পারিনা যে পৃথিবীর আর কোনো দেশ আমার দেশের চেয়ে সুন্দর। যেদিকে তাকাও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ঘাস, কখনো দূরে দেখা যায় নীলনদ বয়ে চলেছে। ওদিকেই যদি আরও অনেক দূরে যাও তাহলে দেখতে পাবে ভূমধ্যসাগর আর তারও পরে ইওরোপ। ওখনকার লোকেরা নাকি আমাদের মত ছিপছিপে, লম্বা, সুন্দর বাদামী রঙ ওয়ালা নয়। না আছে তাদের কাজল কালো চোখ না পুরু ঠোঁট। শুনেছি তাদের গয়ের রঙ নাকি পাংশুটে সাদা আর তারা আমদের চেয়ে লম্বাতেও খাটো। তারা অনেক জামকাপড় পরে, আমাদের মত কোমরে একফালি পুঁতির মালা জড়ালে তাদের কাজ চলেনা। না জানি কি উদ্ভট ই না তাদের দেখতে!

    ------------

    আমার দেশে কোনো পুরুষ মানুষের বলদ না থাকলে তাকে কেউ পছন্দ করেনা। তার বিয়ে হবার আশাও ছেড়ে দাও, কারণ বিয়ে করতে গেলে মেয়ের বাড়িতে পণ বাবদ কুড়ি থেকে চল্লিশটা বলদ দিতে হয়। ভগবানও এমন লোককে সাহায্য করবেনা কারণ বলি হিসাবে তারও সেই একটি বলদই চাই। শেষ অবধি গাঁয়ের মোড়লকেই মধ্যস্থতা করতে হয় কিন্তু তিনিও পারিশ্রমিক হিসাবে একটি বলদ নেন। দেখেছো, বলদ না থাকার কি জ্বালা!

    -------------

    সন্ধ্যেবেলা সব কাজকর্ম্ম সেরে আমি আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাই। বন্ধুরা সব আমারই বয়সী। তিন বর্ষাকাল আগে আমি যখন এতটা লম্বা ছিলাম না তখন একদিন আমাদের কপাল চিরে ছ'টা দাগ কাটা হয়। এই কাটা দাগই ছোটোদের থেকে বড়দের আলাদা করে। আমার এক বয়স্ক আত্মীয় এসে আমাদের সকলের কপালে দাগ কেটে দেবার পর আমাদের এই দলটার নাম দেওয়া হয় রুওব। যদিও সেই সময় খুবই যন্ত্রণা হয়েছিল কিন্তু পৌরুষত্ব দেখাবার জন্য কেউ মুখে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করিনি।

    -------------

    প্রত্যেক সন্ধ্যেয় আমাদের দলের সবাই মিলে একসাথে নাচের মহড়া দিই কারণ আমরা চাই সবাই আমাদের প্রশংসা করুক। এছাড়াও সকলে জোরদার বর্শা ছোঁড়া অভ্যেস করছি কারণ কিছুদিনের মধ্যেই আমরা পাশের শত্রুদের গরু-বাছুর লুঠ করতে যাবো। শুনেছি সাদা চামড়ার মানুষরা বলেছে এইসমস্ত লুঠপাট বন্ধ করতে, তবুও।

  • SS | 67.175.214.99 | ২০ মার্চ ২০০৯ ০৯:১১407889
  • Kul এর উচ্চারণ যতদূর মনে হয় কুল হবে। কিন্তু সেটা কেমন যেন ইংরেজী Cool এর মত শোনাচ্ছে তাই ছেলেটির নাম কাল ই লিখলাম।
  • arjo | 168.26.215.13 | ২০ মার্চ ২০০৯ ২১:৪০407890
  • দিব্য হচ্ছে। হোক হোক আরও হোক।
  • Tim | 71.62.2.93 | ২৩ মার্চ ২০০৯ ১১:৫০407891
  • আফ্রিকার ছেলে ফাফোদির গায়ের রং হলদেটে বাদামী, মাথার চুল কোঁকড়ানো। ওরা বুশম্যান, হ্যাঁ সেই বুশম্যান যাদের নিয়ে আস্ত একটা ফিল্মের সিরিজই হয়ে গেছে। ফাফোদি অবশ্য সেকথা জানে বলে মনে হয় না।
    ্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌
    ওদের দেশে যেতে হলে প্রথমে একটা বিশাল ""বাড়িতে"" চড়ে সমুদ্র পেরোতে হয়। সমুদ্র কেমন হয় ফাফোদি দেখেনি, তবে শুনেছে সেটা ওদের নোনা জলের হ্রদটার থেকেও বড়ো। এরপর ডাঙ্গায় উঠে সায়েবদের একটা সিড়িঙ্গেমতন পোকার মধ্যে করে বাকি পথটা আসতে হয়। পোকাটা ঘন ঘন ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে একসময় এসে পৌঁছায় শুকনো ঘাস, আগাছা আর ক্যাকটাসের রাজ্যে। অবশ্য কিছু কিছু গাছও হয় কালাহারি মরুভূমির এখানে সেখানে। এই বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরই বুশম্যানদের ঘর।
    ------------------
    "" বাবা আর কাকা আমায় শিখিয়েছে অচেনাদের লোকেদের, বিশেষত: শ্বেতাঙ্গদের বিশ্বাস না করতে। আমাদের গ্রামের আসেপাশে আমরা বিষাক্ত তীরসমেত ফাঁদ পেতে রাখি তাই। একটা সামান্য আঁচড়ই যথেষ্ট হয় অনেক সময়, আমাদের সেরা ওঝাও কিছু করতে পারেনা তখন।.....
    আমি জানি কিভাবে ঐ বিষ বানাতে হয়।""
    কঠোর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার জন্য বহু কৌশল আয়ত্ত করতে হয়েছে বুশম্যানদের। জন্তুদের গতিবিধির খবর রাখা, তাদের অভ্যাস সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকা - এসব ওদের থেকে ভালো কেউ জানেনা। না জানলে অবশ্য বহু আগেই বুশম্যানরা ফুরিয়ে যেত - কেউ খিদে-তেষ্টায়, কেউ বা অন্য কোনোভাবে। ফাফোদিদের কাছে বেঁচে থাকাটাই বিস্ময়ের, জীবনকে প্রতি পদক্ষেপে আবিষ্কার করে ওরা চমৎকৃত হয়। হয়ত তাই প্রতি সন্ধ্যায় উৎসবের আগুন জ্বলে বুশম্যানদের ডেরায়।
    জল আর আগুন, এই নিয়েই ফাফোদিদের উৎসব। রোদে খাঁ খাঁ উপত্যকার গভীরতম অংশে গর্ত করে কয়েক ফোঁটা জল পাওয়া যায়, কপাল মন্দ হলে সেও জোটে না। শুকনো কাঠে ফুটো করে হাড় দিয়ে ঘষে আগুন জ্বালানো হয়।
    ফাফোদির গল্পে আরো আছে ওদের শিকারের কথা। ওদের অপূর্ব সুন্দর মায়াময় মরু-প্রান্তর আর বনানীর কথা, ওদের বাড়ির কথা। কিভাবে ছোট্টো ফাফোদি জীবনের প্রথমবার শিকারে গিয়েছিলো সেই গল্প। জিরাফের পালের পিছু ধাওয়া করা, ধারালো বর্শা দিয়ে একটাকে ঘায়েল করার সেই ঘটনা ফাফোদিকে বিখ্যাত করে দেয় রাতারাতি। কৈশোর-যৌবনের এরকম কোনো সন্ধিক্ষণেই বুশম্যানদের প্রাপ্তবয়স্ক ঘোষণা করা হয়ে এসেছে চিরকাল। ফাফোদিদের ক্ষেত্রে দুই ভ্রু'র মাঝে একটা কাটা দাগ সেই গৌরব ঘোষণা করে।

  • SS | 67.175.214.99 | ২৭ মার্চ ২০০৯ ০৯:২৩407892
  • :)
    এরপর কুনাবি...

    আরেকটা টইতে Tim এর কিছু ছোটোগল্প ছিল, সেটা কি করে খুঁজে পাবো? কদিন আগেই টইটা দেখলাম তারপর সেটা অন্যদের ভিড়ে হারিয়ে গেল।
  • Tim | 71.62.2.93 | ২৭ মার্চ ২০০৯ ১১:২৯407893
  • SS
    সার্চ ব্যবহার করুন। উপরে ডানদিকে আছে। ""খড়কুটো"" লিখলেই পেয়ে যাওয়া উচিত।

    কুনাবি পরে লিখবো। ততদিনে বাকিগুলো নামিয়ে ফেলুন।
  • SS | 67.167.215.208 | ১৮ এপ্রিল ২০০৯ ০৬:১৮407894
  • দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে একটি তেকোণা দ্বীপে বাস কোশ্‌তেলেন এর। দ্বীপের নাম 'তিয়েরা দেল ফ্যুয়েগো' যার পূর্বদিক আর্জেন্টিনার দখলে আর পশ্চিমদিক চিলির, কোশ্‌তেলেন থাকে চিলির দিকে। তাদের বলা হয় সেল্ক্‌নাম উপজাতি।

    বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই তাদের দেশ বরফে ঢাকা থাকে, এরই সঙ্গে বইতে থাকে সমুদ্রের ঝোড়ো হাওয়া। এমনিতে তাদের পোষাক বলতে শুধু লাল মাটি মেশানো গুয়ানাকো'র চর্বির প্রলেপ হলেও খুব ঠান্ডায় এর সঙ্গে গুয়ানাকো'র চামড়াও পরতে হয়। সেল্কনাম দের প্রধান খাবার হল গুয়ানাকো'র মাংস, সুতরাং বুঝতেই পারছো এই প্রাণীটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    * গুয়ানাকো, ঊট জাতীয় প্রাণী তবে কুঁজ নেই, এদের কিছুটা Llama 'র মত দেখতে।

    --------------

    কোশ্‌তেলেনদের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, গুয়ানাকো'র পালের পিছনে ঘুরে বেড়ানোই তাদের একমাত্র কাজ। দিনের শেষে তারা পছন্দমত একটি জায়গায় তাঁবু খাটায়। কয়েকটা সরু গাছের ডাল গোল করে মাটিতে পুঁতে তাদের মাথার দিক একসঙ্গে ঝুঁটির মতো বেঁধে দেওয়া হয়, তারপর কিছু ছোটো ছোটো ডাল দিয়ে তাঁবুর দেওয়ালের ফাঁকা অংশগুলো ভরাট করে এর উপরে এক মস্ত বড় গুয়ানাকো'র চামড়া ঢাকা দেওয়া হয়। তাঁবুর ঢাকা তৈরী করতে প্রায় চোদ্দোটা গুয়ানাকো'র চামড়া একসঙ্গে সেলাই করতে হয়।

    রাতে তাঁবুর ভিতরে সবসময় আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয় নইলে প্রচন্ড ঠান্ডায় ঘুমোনো যায়না। তাদের বিছানা বলতে কিছু শুকনো ডালপালার উপর মস্‌ জাতীয় নরম আস্তরণ আর গায়ে ঢাকা দেবার জন্য একটি গুয়ানাকো'র চামড়া। তবুও রাতে মাঝে মাঝেই পাশ বদল করে শুতে হয় নইলে দেহের সবদিক আগুনের তাপ পায়না।

    -------------

    মাঝে মাঝে প্রচন্ড ঝড়ের পরে মরা তিমি ভেসে আসে সমুদ্রের তীরে। আর কি করে যেন চারিদিকে তার খবর ছড়িয়ে পড়ে। অনেক দূর থেকে লোকজন ভিড় করে আসে মাংস নিতে। সেল্ক্‌নাম দের প্রতিটি গোষ্ঠীর শিকার করার জায়গা ভাগ করা আছে। বহুদিন আগে অচেনা লোককে নিজেদের শিকারের জায়গায় দেখলে মেরে ফেলাই নিয়ম ছিল। তবে এখন আর তার চল নেই। এমনিতেও একটা পাড়ার পক্ষে গোটা তিমি মাছ খেয়ে শেষ করা সম্ভব নয় তাই অন্য পাড়ার লোকেরা এসে তা ভাগ করে নিলে তারা খুশিই হয় কিন্তু মাংস নেবার পরে তাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতে হয়।

    --------------

    সেল্ক্‌নাম দের প্রধান উৎসব হল ক্লোক্‌টেন। কয়েকমাস ধরে চলা এই উৎসবে দূর দূরান্ত থেকে লোকের এসে একজায়গায় তাঁবু খাটায়। কোশ্‌তেলেন এর আগে কখনো এতো লোক একসঙ্গে দেখেনি। ওর বাবা অবশ্য বলেছেন যে আগে এর থেকেও বেশি লোক হত এই উৎসবে। সাদা চামড়ার লোকেরা এসে যখন থেকে তাদের জমি দখল করে চাষবাস, পশুপালন করা আরম্ভ করল তখন থেকেই শুরু হল তাদের দুর্দিন। নিজেদের স্বার্থে নির্বিচারে সেল্ক্‌নামদের হত্যা, অভুক্ত লোকেদের বিষাক্ত মাংসের টোপ দেওয়া, ক্রীতদাস প্রথা ইত্যাদির জেরে আজ এদের সংখ্যা মাত্র দু'শয় এসে ঠেকেছে।

    -------------

    কিন্তু আজ কোশ্‌তেলেন একেবারেই এসব কথা ভেবে মনখারাপ করতে চায়না। কারণ আগামীকাল সে প্রথমবারের জন্য ক্লোক্‌টেন এর সেই রহস্যময় কুঁড়েঘরে পা দেবে। এই ঘরে নাকি তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মারা নেমে আসে। শুধুমাত্র পুরুষ দেরই ঐ ঘরে ঢোকার অধিকার আছে, মহিলা এবং শিশুদের ভিতরে আসা মানা। এমনিতে কোশ্‌তেলেন কে এখনো ছোটো বলেই ধরা হয় কিন্তু এর পরের ক্লোক্‌টেন উৎসব আসতে বেশ কয়েবছর দেরী হবে তাই সে এই বছরই বড়দের দলে জায়গা পেয়েছে। এছাড়াও তীর ধনুকে সে বিশেষ পারদর্শী হওয়ায় বড়রা তাতে আপত্তিও করেনি। আত্মারা মাঝে মাঝে বাইরে বেরিয়ে এসেও নাচে তারপর আবার ঘরের মধ্যে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে যায়। সে কি তাদের গর্জন, কোশ্‌তেলেন এর কালকের কথা ভেবে একটু ভয়ই করছে। তবুও সে ঠিক করেছে সাহসের সঙ্গে তার গুয়ানাকো চামড়ার তৈরী ফেট্টি বেঁধে আত্মাদের সাথে দেখা করতে যাবে। বড় হবার এমন সুযোগ সে কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায়না।

  • SS | 67.167.215.208 | ১৮ এপ্রিল ২০০৯ ০৬:২০407896
  • সকলের জন্য, দেরীতে হলেও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন